গল্পটা উপন্যাসের নয়

ছোটগল্প: গল্পটি উপন্যাসের নয়
লেখিকা: ইশরাত জাহান সুপ্তি

রাতের নিকষ কালো অন্ধকারকে ভেদ করে সামনে এগিয়ে চলা সোহেলের কালো রঙের সাইকেলটি হঠাৎ থেমে গেল।শহর এলাকায় রাত দশটা কিছু না হলেও এই মফস্বল এলাকায় রাত দশটা বলতেই সব নিঝুম।তাছাড়াও এই এলাকা বিশেষ সুবিধার নয়।আর এই রাত্রি বেলা ফাঁকা রেল স্টেশনে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একলা একটি মেয়েকে দেখে সোহেল কৌতূহলবশতই সাইকেল না থামিয়ে পারলো না।দু তিনটে টিউশনি শেষ করে বাড়ির উদ্দেশ্যেই যাত্রা দিয়েছিল সে।এমনিতে আরো আগেই বাড়ি ফেরে তবে আজ সন্ধ্যা মুখে প্রবল বৃষ্টিতে আটকা পড়েই ফিরতে এতটা রাত হয়ে গেল।বৃষ্টির জন্যই হয়তো আজ স্টেশন এতটা ফাঁকা।সোহেল সাইকেল থেকে নেমে একটি গাছের সাথে দাঁড় করিয়ে ধীর পায়ে মেয়েটির দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।
মাঝে মাঝে ডেকে উঠা ঝি ঝি পোকার ডাক যেন রাতের নিস্তব্ধতাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে।গাছের পাতা থেকে টুপটুপ করে ঝড়ে পড়া বৃষ্টির জলের শব্দও যেন কানের গভীরে গিয়ে বারি খাচ্ছে।গা ছমছমে এমন পরিবেশে নিজের দিকে অগ্রসরমান একজন অচেনা পুরুষকে দেখেই হয়তো মেয়েটি অনাকাঙ্ক্ষিত আশঙ্কায় আরো জড়সড় হয়ে রইলো।তবুও মুখভঙ্গিতে তা প্রকাশ করলো না।মেয়েটির দিকে সামান্য এগোতেই সোহেলের চোখে পড়ল মেয়েটির থেকে খানিক দূরত্বে দু তিনটে ছেলে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে কানাকানি করছে আর এদিকটাতেই টিপটিপ পায়ে এগিয়ে আসছে।সোহেলকে দেখেই তারা থেমে গেল তবে সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।ব্যাপারটি সুবিধাজনক না লাগাতে সোহেল গিয়ে মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করলো,

-‘কিছু মনে করবেন না।আপনি এত রাতে এখানে একা একা,যতদূর আমি জানি সন্ধ্যার পর এই স্টেশনে কোনো ট্রেন আসেও না আর ছাড়েও না।আপনার সাথে কি আর কেউ নেই?’

সোহেলের কথায় মেয়েটি একটু চমকে উঠলো।মাথা নিচু করে খানিক কাচুমাচু করে বলল,
-‘জ্বি নেই,মানে…আছে,এখনো আসেনি।’

মেয়েটির কথার কোনো আগা মাথা বুঝতে না পেরে সোহেল কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।তবে এতটুকু ঠিকই বুঝতে পারছে যে মেয়েটি বেশ ঘাবড়ে আছে।বৃষ্টি না থাকলেও এখনো আকাশ মাঝে মাঝে মৃদু গর্জে উঠে চারপাশ মুহুর্তের জন্য ঈষৎ আলোকিত করে দিচ্ছে।সেই আলোতেই সোহেল এতক্ষণে খেয়াল করে বুঝলো মেয়েটি মোটামুটি ভালোই সুন্দরী।মাঝে মাঝে শীতল হাওয়া বয়ে পরিবেশটাকে আরো ঠান্ডা বানিয়ে দিচ্ছে।পাশের ঝোপ থেকে একটি কোলা ব্যাঙ গলা ছেড়ে ডেকে উঠলো আর হঠাৎ করেই ঝোপ টি নড়ে উঠে দ্রুত সেখান দিয়ে কিছু সড়ে যাওয়ার শব্দ হলো।মেয়েটি এতে মৃদু কেঁপে উঠলো।কোলা ব্যাঙটি পরপর কয়েকটা চাপা আতর্নাদের আওয়াজ তুলে নিশ্চুপ হয়ে পড়লো।
-‘আপনার নাম কি?’
-‘তা..তানহা।’
-‘আপনি কি এখানে এই প্রথম এসেছেন?’
মেয়েটি কোনো জবাব না দিয়ে চুপ করে রইলো।সোহেল স্পষ্ট বুঝতে পারছে মেয়েটি তার উপর বিশেষ ভরসা পাচ্ছে না।অপরিচিত কাউকে এত কথা কেই বা বলতে চায়।তবুও আশেপাশে আরেকবার চোখ বুলিয়ে সোহেল আগ বাড়িয়েই বললো,

-‘দেখুন আপনার সাথে যদি কেউ থেকে থাকে তবে তাকে আসতে বলুন।এই জায়গাটা বিশেষ সুবিধাজনক নয়,বিশেষ করে এত রাতে মেয়েদের জন্য।কিছু মনে করবেন না একটা কথা বলবো,আপনাকে দেখে আমার মনে হচ্ছে আপনি কোনো বিপদে পড়েছেন।’

আগন্তক কাউকে এত কথা জানানো তানহার ভালো লাগছে না।চেনা নেই জানা নেই হুট করে একটা অপরিচিত লোককে গড় গড় করে সব বলে দেওয়াটাও কি ঠিক হবে?তবুও তানহার বিধ্বস্ত মন যেন এই মুহুর্তে তার সকল ভয়,আশঙ্কা কাউকে জানিয়ে একটু হালকা হতেই চায়।গত পাঁচ ঘন্টা ধরে তানহা এই স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে।বিকেলের দিকে তবুও কিছু লোকজন ছিল কিন্তু সন্ধ্যার পর ধীরে ধীরে কমে যেতে লাগলো।আর বৃষ্টির পর তো পুরোই জনশূন্য।অচেনা এই জায়গায় জনশূন্য রেলস্টেশনে ঝুম বৃষ্টি আর ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে একা দাঁড়িয়ে থাকা তানহার ভেতরে যে কি ঝড় বয়ে গেছে তা কেবল সে নিজেই জানে।কিছুক্ষণ আগে নিজের দিকে ঐ বখাটে ছেলেগুলোকে এগিয়ে আসতে দেখে ওর তো প্রাণই যায় যায় অবস্থা।তারপর সোহেলের আগমনে ভয়ের পাশাপাশি কিঞ্চিৎ সাহসও পায়।অন্তত সেই ছেলেদের আগানো বন্ধ দেখেই।জীবনটা যে হুট করে এভাবে মিথ্যা হয়ে গিয়ে এই পরিস্থিতিতে এনে দাঁড় করিয়ে দেবে তা তানহা কখনো কল্পনাও করেনি।
শীতল হাওয়ায় হাত পা গুলো হিম হয়ে আসলেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠছে।কম্পিত হাতে কপালের ঘাম মুছে একটু ঢোক গিলে আমতা আমতা করে তানহা যা বললো তা থেকে সোহেল যতটুকু জানতে পারলো তা হলো এই,
দুই বছরের সম্পর্কের টানেই ঘর ছেড়ে ভালোবাসার মানুষটির হাত ধরে তানহা আজ পালিয়ে এসেছিল এই দূরদেশের অচেনা জায়গায়।দুপুরের পরেই এই স্টেশনে নামে তারা।ঘন্টা খানিক পর ছেলেটি খাবার কিনতে যাওয়ার নাম করে সেই যে গিয়েছে আর ফেরেনি।তবে যাওয়ার আগে সাথে করে তানহার ব্যাগ যেখানে তানহার এই পর্যন্ত জমানো হাজার খানেক টাকা,কিছু সোনার গয়না আর ফোন ছিলো সেটাও সাথে করে নিয়ে গেছে।
-‘আমার তো মনে হয়ে সে আপনার জিনিসপত্র নিয়ে ভেগে গেছে।আর ফিরে আসবে না।’
কথাটি শোনামাত্রই তানহা একটা বড় রকমের ধাক্কা খাওয়ার মতো দৃষ্টিতে সোহেলের দিকে তাকিয়ে রইলো।সে যে আর ফিরে আসবে না এটা তানহার অবচেতন মনে এতক্ষণে অবগত হলেও পুরোপুরি স্বীকৃতি পাচ্ছিলো না।সোহেলের মুখের কথাটি শুনেই যেনো মুহুর্তের মধ্যে সবকিছু উলটপালট করে সত্যটা ভয়ংকর ভাবে তানহার মনে ধরা দিল।সাথে সাথে নিরব প্রকট শব্দে একটি জিনিস খুব নিষ্ঠুর ভাবে ভেঙে গেল,বিশ্বাস।
-‘আপনার কি মনে হয়ে সে আসবে?’
-‘হ্যাঁ।’
অবিশ্বাস্য এই শব্দটি কোনোমতে ব্যবহার করে তানহা হঠাৎ ফুফিয়ে কেঁদে উঠল।বিশ্বাস ভাঙা এই কান্না কিছুতেই সে আর দমিয়ে রাখতে রাখতে পারছে না।ছেলেটির নাম ছিল রাকিব।কলেজের যাওয়ার পথে রোজ ভ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে থাকতো তানহাকে শুধু একটিবার দেখার জন্য।একদিন হুট করে সামনে এসে মাথা নিচু করে লাজুক মুখে তার ভালোবাসার কথা বলে।তানহা না করে দেয়।আশেপাশের নিষ্ঠুরতা দেখে আধুনিকতা মাখানো এই ভালোবাসা শব্দটিকে তখন সে আর ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলো না।তবুও যখন রাকিব দিনের পর দিন কিছু না বলে তার যাওয়ার পথে অহেতুক কাঠ ফাটা রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতো তখন তানহাকে একমুহূর্তের জন্য হলেও পিছু ফেরে তা ভাবাতে বাধ্য করতো তারপরও সে নিজেকে সংযত করে এসব ভাবনা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলো।বোন সমতুল্য পাশের বাসার মিনা আপুর একটি কথা কানে খুব বাজতো,’ছেলেরা যখন প্রথম প্রেমে পড়ে তখন সেই প্রেমের জন্য সর্বোচ্চ কষ্টও করতে পারে।কিন্তু অদ্ভুত হলেও সত্যি,হুট করে একদিন সেই প্রেমই ওদের কাছে ফ্যাকাসে হয়ে পড়ে।সিগারেটে চরম আসক্ত হয়ে পড়া নেশাখোরও কিন্তু পাগলের মতো সিগারেটের তাড়না করে তা হাসিল করে কিছুক্ষণের মধ্যে ধোঁয়া বানিয়ে ছেড়ে দেয়,যতনে রেখে দেয় না।’
এত এত সাবধানতা,সচেতনতার পরেও তানহার মন আর বাধ্য হয়ে থাকতে পারলো না।অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছিলো সেদিন।বৃষ্টিতে আটকা পড়েই বাড়ি ফেরার নির্দিষ্ট সময়ের থেকে দু ঘন্টা দেরি করে সে কর্দমাক্ত রাস্তায় ছাতা মাথায় ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরছিল।রোজকার মতো পথে রাকিবকে সেদিনও দেখে থমকে যায় তানহা।রাকিবের টকটকে লাল চক্ষু দুটিই বলে দিচ্ছিলো তার দীর্ঘক্ষণ ধরে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভেজার কথা।তানহার আর করার কিছু রইলো না।আনমনে গড়িয়ে পড়া অশ্রুর শীতল স্পর্শ গালে অনুভব হতেই তানহা বুঝে গেলো ভালোবাসা শেষপর্যন্ত তাকে ছুঁয়েই ফেলেছে।
সেই ভালোবাসাই সময়ের সাথে ধীরে ধীরে এতটা গাঢ় হয়ে গেল যে মাত্র দু বছরের সম্পর্কের টানে ঘর ছেড়ে পালাতেও এক বিন্দু দ্বিধা হলো না তার।মাঝে রাকিবের আচরণের পরিবর্তন আর আড়ালে শোনা বিভিন্ন কানাঘুষোও তানহার বিশ্বাসের টানে সবকিছু ছেড়ে রাকিবের সাথে ঘর ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্তকে নড়াতে পারেনি।তানহার বিশ্বাস ছিলো রাকিব আর যাই করুক তানহাকে কখনো কষ্ট দিতে পারবে না।কারণ নিজের ভালোবাসার অভিজ্ঞতা থেকেই তানহা বুঝেছিলো ভালোবাসা ভালো রাখতে শেখায়।ট্রেনে উঠার পরও যখন তানহা রাকিবকে চিন্তিত মুখে জিজ্ঞাসা করে ‘তারা কোথায় যাচ্ছে?’
তখন রাকিব শুধু তাকে একটা কথাই বলে,’আমাকে বিশ্বাস করো?’
তানহা তখন শুধু মৃদু হেঁসে কোনো জবাব না দিয়ে রাকিবের কাঁধে মাথা রেখে পরম নিশ্চিন্তে সারা রাস্তা ঘুমিয়ে থাকে।যেই ভালোবাসার উপর বিশ্বাস করে তানহা এতকিছু করলো এখন শুধু তানহার মনে একটিই কথাই ভাসছে,তা কি আদৌ ভালোবাসা ছিলো?
ভেতর থেকে ডুকরে কান্না আসলেও একজন অচেনা ব্যাক্তির সামনে তানহার নিজেকে সামলে অশ্রু মুছে ফেলতে হলো।সোহেল বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।ভালোবাসার মানুষটি এভাবে এই অবস্থায় একা ফেলে চলে যাওয়ার পর সেই মানুষটিকে আর কিভাবে স্বান্তনা দেওয়া যায় তা সোহেলের জানা নেই।পাশের সেই বখাটে ছেলেগুলো আবারও এক দু পা এগোচ্ছে আবার থমকে যাচ্ছে।তাদের মতিগতি ভালো ঠেকছে না।
-‘এখানে যাওয়ার মতো কোথাও জায়গা আছে আপনার?’
অশ্রুসিক্ত চোখে তানহা দ্রুত মাথা নাড়িয়ে না বলল।
-‘আমি এই এলাকায় ছোটোখাটো কয়েকটা টিউশনি করি।সাথে অন্য কাজও টুকটাক করি।পাঁচ ছয় বছর যাবত এখানে আছি,আপনি চাইলে আজকের রাতের জন্য আপনার থাকার ব্যবস্থা আমি করে দিতে পারি।খানিক এগোলেই আমার এক দূর সম্পর্কের খালার বাড়ি আছে সেখানে।’
তানহা চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।সে সত্যিই জানে না সে এখন কোথায় যাবে।এই রাতের মধ্যে এখান থেকে ফেরত যাওয়ার মতো কোনো পথও নেই।তাছাড়া তানহার হাতে কোনো টাকাও নেই।ভয়ে তানহার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে।বাইরের একটি রাতই যে একটি মেয়ের জীবন সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ঠ।
-‘কি হলো যাবেন?’
তানহা আগের মতোই নির্বাক হয়ে রইলো।কিছুক্ষণ আগেই মেয়েটির দু বছরের গড়া বিশ্বাস ভেঙ্গেছে আর এখন আবার একজন অচেনা যুবক ছেলের উপর বিশ্বাস করা কি আসলেই সম্ভব!যদিও ছেলেটিকে দেখে ভদ্রই মনে হচ্ছে,তবুও….
সোহেল বুঝতে পারলো মেয়েটি অনিশ্চয়তায় ভুগছে।তাই একটু মৃদু হেঁসে বললো,
-‘সমস্যা নেই,বিশ্বাস করতে পারেন।’
তানহার কোনো প্রতিউত্তর না পেয়ে সোহেল একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই তানহা পাশের বখাটে ছেলেগুলোর দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে সোহেলকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-‘ধন্যবাদ।’
সোহেল মৃদু হেসে বলল,
-‘সেটা না হয় সাহায্য করার পরই দিবেন।’
রাস্তার কাঁদা পানিতে ছপছপ পায়ের আওয়াজ তুলে সোহেল তার কালো রঙের সাইকেলটি টেনে বাটন ফোনের টর্চের মৃদু আলোতে হেঁটে চলছে।পাশে মুখ কাচুমাচু করে হাঁটছে তানহা।কিছুক্ষণ পর একটি সরু গলির ভেতর ঝুপড়ি দোতলা ঘরের সামনে তানহাকে দাঁড় করিয়ে সোহেল ভেতরে প্রবেশ করলো।খানিকবাদে বেড়িয়ে এসে তানহাকে বলল,
-‘যান,আমি খালাকে সব বলে এসেছি।’
তানহা গুটিগুটি পায়ে ঘরের মধ্যে ঢোকার আগে একবার পেছনে ফিরে সোহেলের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে গেল।হঠাৎ কর্কশ শব্দ করে সোহেলের বাটন ফোনটা বেঁজে উঠলো।ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরেই সোহেল বলে উঠলো,
-‘কমলা খালা,মালডা কিন্তু কচি আর সুন্দরী।ডিলটা জানি দশ হাজারের নিচে না হয়।’

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here