অবুঝ বেলার তুমি পর্ব ১

অবুঝ বেলার তুমি
সূচনা পর্ব

সম্ভবত তখন আমি চতুর্থ শ্রেনীতে পড়তাম।নতুন ভাড়াটিয়া এসেছিলো বাড়িতে।স্কুল থেকে ফিরেই ছোট বাচ্ছার কান্নার আওয়াজ শুনে দৌড়ে উপর তলায় গিয়েছিলাম। অনেকদিন ধরে মায়ের সাথে বায়না করছিলাম বোন বাবু এনে দিতে কিন্তু মা শুনছেই না।

কিন্তু সেখানে ও কাউকে দেখতে পেলাম না।পরে বুঝতে পারলাম কান্না টা আসলে ছাদ থেকে আসছে।এক দৌড়ে একেবারে ছাদে গিয়ে থামলাম।দেখলাম ছোট্র একটা মেয়ে কেমন গুলুমুলু দেখতে কান্না করেই যাচ্ছে থামছেই না।

আমি কৌতুহল নিয়ে দেখতে গেলাম। কিন্তু ক্লাস ফোরে ছিলাম যখন বুঝ জ্ঞান একেবারেই কম ছিলো না। একটু আধটু লজ্জা ও পেতাম। কি না কি ভাববে ওই আন্টি টা।তবুও মেয়েটাকে এতো মিষ্টি দেখে আমি লজ্জা টা চেপে রেখে ছাদের কার্নিশে গিয়ে এদিক ওদিক ঘুরছিলাম।বাবাকে বলে আমি কয়েকটা গোলাপ, গাঁদা, হাসনাহেনার চারা লাগিয়েছিলাম।ফুল আমার অনেক ভালো লাগতো, তাই ছোটবেলা থেকেই আমার গাছ নিয়ে শখপ্রীতি ছিলো।

আন্টি টা আমাকে দেখে মেয়েটাকে নিয়ে আমার কাছে আসলেন।তারপর আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন।আমি বললাম “অঙ্কুর”।আমি প্রিম্যাচিউর বেবি ছিলাম।সাত মাসের সময় নাকি জন্ম নিয়েছিলাম তাই আমার নাম রাখা হয়েছিলো অঙ্কুর।আমি আন্টিটাকে বললাম মা আমাকে “বাবুন” বলে ডাকে।আপনি ও চাইলে বাবুন ই ডাকতে পারেন

আন্টি হেসে ফেললেন।গাল টিপে দিয়ে বলেছিলেন বড্ড পাকনা তুমি।মেয়েটা ও কেমন খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।ওর হাসি দেখে আমার মুখের হাসি টা আপনা আপনিই চলে এলো।আমিও একটু সুযোগ পেয়ে মেয়েটাকে কোলে নিতে চাইলাম।কেমন তুলতুলে দেখতে।আমি আন্টি কে জিজ্ঞেস করলাম
____কি নাম ওর?
____”গুঞ্জন”।
আমি ওর মুখ ধরে একটু গুলুমুলু করে দিতেই ও কেমন গাল ফুলিয়ে কেঁদে উঠলো।
ও কাঁদছিলো কিন্তু আমি কেমন জানি ওর কান্নায় মজা পাচ্ছিলাম।

ওর কান্না টা আরো বাড়তেই লাগলো।এক্ষুনি যদি কান্না না থামানো যায় তাহলে আন্টি যে ওকে নিয়ে নিবে।কি করা যায় ভাবতে ভাবতে আমি ওকে আমার গোলাপ গাছ টার কাছে নিয়ে গেলাম।সকালেই যে গোলাপ টা ফুটেছিলো সেটা ছিড়ে ওর কানে গুজে দিলাম কিন্তু দুষ্ট মেয়েটা সেটা হাতে নিয়ে কচলাচ্ছে আর খিল খিল করে হাসছে।তখন ই বুঝে গিয়েছিলাম আস্ত একটা বানরনি হবে বড় হলে।আমার শখের গোলাপ গাছ থেকে আজ অবদি কাউকে আমি একটা গোলাপ ও ছিড়তে দেই নি। প্রয়োজনে ঝরে পড়ে যাক তবুও ছেড়া বারণ।

একবার বাবা, মায়ের রাগ ভাঙাতে আমার গোলাপ গাছ থেকে ফুল ছিড়ে ছিলো বলে বাবাকে দিয়ে পরদিনই সাত সাত টা ফুল সমেত গোলাপ গাছ এনে লাগিয়েছিলাম।বাবা মুখ ফুলিয়ে মা কে বললো দেখলে তো তোমার রাগের জন্যই আমার এতো টাকা গোচ্ছা গেলো।একটা গোলাপ বাজারে গেলে আমি দশটাকায় পেতাম তাও বড় সাইজের আর সেখানে এখন আমার একটা গাছ চল্লিশ টাকা করে মোট সাড়ে চারশো টাকা গেলো।

মা রেগেমেগে বললেন একটা ফুলের জন্য এতো কথা শোনাচ্ছো যখন তখন দিয়েছিলো কেনো। এদিকে আমার বাপের বাড়ি যাওয়া টা ও হলো না।আমি নাহয় কদিন গিয়ে মায়ের বাড়ি আরামে আয়েসে কাটিয়ে আসতে পারতাম।মায়ের কথা শুনে মুহুর্তেই বাবা কেমন মিইয়ে গেলো।

মা যেমন বাবাকে শাষাতো এখন দেখছি এই পিচ্ছি টা ও আমাকে শাষালো।
কিছুক্ষন পর মা আমাকে খুজতে খুজতে ছাদে চলে এলেন। মা আমাকে ধমকাতে গিয়ে আন্টিকে দেখে চুপ করে গেলেন।তারপর বললেন দেখেছেন,
___সেই কখন থেকে খুজে যাচ্ছি।গেইট খোলার আওয়াজ শুনেই বুঝে গিয়েছিলাম ও এসেছে।কিন্তু খুজে দেখি নেই।টেবলে কোন ও রকম ব্যাগ টাকে ছুড়ে ফেলে এখানে এসে বসে আছে।

যত দোষ এই গাছগুলো।খাওয়া নেই ঘুম নেই স্কুল থেকে ফিরেই গাছ নিয়ে পড়ে থাকে।কিন্তু গাছ তো পরের কথা আগে এসেই টিভি র রিমোট নিয়ে বসে বসে একেকটা চ্যানেল পাল্টাবে আর কার্টুন দেখবে।
মা আমার কোল থেকে গুঞ্জন কে নিজের কোলে নিলেন।তারপর আদর দিলেন অনেক।ওই দাঁত বিহীন মুখে দু একটা দাঁত দেখতে অনেকটাই মিষ্টি দেখাচ্ছে।কেমন খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।

বলতে গেলে আমাকে একপ্রকার টেনে নিয়ে গেলেন মা।কিন্তু এই মুহুর্তে আমার খাওয়া ঘুম সব বাদ। আমার খালি গুঞ্জন কে দেখতে ইচ্ছে করছে।মায়ের কথায় যেতে রাজি হলাম এক শর্তে যদি আবার গুঞ্জনের কাছে যেতে দেয়া হয় তবেই আমি খেতে যাবো।আন্টিকে বললাম আন্টি আমি কি গুঞ্জন কে “তুলতুল” ডাকতে পারি।

আন্টি হেসে উঠে বললেন, হ্যা রে বাবুন পারিস।এক দৌড়ে দুটো কিভাবে মুখে পুরলাম আমি নিজেই জানি না।আবার চলে গেলাম তুলতুলদের বাসায়।গিয়ে দেখলাম তুলতুল ঘুমাচ্ছে।ওর হাতে এখনো কচলানো গোলাপ টা রয়ে গেছে।

মা আমার কান্ড দেখে অবাক হয়ে বাবাকে বললেন।আজ আমি সব খাবার তাড়াতাড়ি ফিনিশ করে ফেলেছি পাঁচমিনিট ও সময় লাগেনি। আর প্রত্যেকদিন খেতে খেতে কমপক্ষে আধা ঘন্টা চল্লিশ মিনিট তো লাগাতামই।এরপর মা বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন আমাদের ঘরে ও একটা বেবি নিয়ে এলে আমি সবকিছু ঠিকঠাক নিয়ম মতো করবো হয়তো সেটা ভেবেই।
ধীরে ধীরে তুলতুল কে নিয়ে আমার খেলাদুলা চলতে লাগলো।রোজ স্কুল থেকে কিভাবে আগে এসে তুলতুলকে দেখবো ওর সাথে খেলবো সেটাই ভাবতাম।আন্টি ও অনেক টা ফ্রি হতে পারতেন ওকে আমার কাছে রেখে।

স্কুল থেকে ফিরে অনেক টা সময়ই আমি তুলতুলকে আমাদের নিচতলায় এনে রাখতাম।এরপর টিউশনি পড়াতে স্যার আসতো আমি স্যারের সব পড়া দ্রুত শেষ করে কিভাবে তুলতুলের সাথে খেলবো সেটাই ভাবতাম।সবাই আমার পরিবর্তন দেখে অবাক হতে লাগলেন।আগে যে আমি খারাপ ছাত্র ছিলাম তেমন টা নয়।কিন্তু তুলতুলকে পাবার আশায় সবসময় মন মেজাজ ফুরফুরে থাকতো বলে সব কাজ অবলিলায় করে ফেলতাম।

আমার বাবা মা ও তুলতুলের প্রতি আমার এতো ভালোবাসা দেখায় বেবি কনসিভ করলেন।একদিন আমি ছাদে উঠে তুলতুলকে নিয়ে খেলতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম।তুলতুলের সবে মাত্র দাঁত উঠা শুরু হলো।দাঁত গিয়ে ঠোঁটে গেথে অনেক খানিক কেটে গেলো।রক্ত বেরোতে দেখে আমি নিজেই কান্না করে ফেললাম।আন্টি তুলতুলের কান্নার আওয়াজ পেয়ে দৌড়ে এলেন।তিনি তুলতুলকে কোলে নিয়ে ভেতরে চলে গেলেন।আমাকে কিছুই বললেন না।

আমি অনেক টা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।ঘরে এসে কান্না করতে লাগলাম মা আমার কান্না শুনে জিজ্ঞেস করলে আমি সব টা বললাম মা গিয়ে তক্ষুনি তুলতুল কে দেখে আসলেন বেশি কেটে গিয়েছিলো কি না তা দেখতে।
এরপর থেকে আমি ছাদে এসে বা দোতলায় গিয়ে দরজার পাশে দাড়িয়ে ওকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম কিন্তু কাছে যেতে কেমন জানি কুন্ঠাবোধ করতো ইশ!আমার জন্যই তো সেদিন তুলতুল এতোটা কষ্ট পেলো।

আমার আসা যাওয়া না দেখে আন্টি হুট করে একদিন রাতের বেলায় তুলতুলকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসলেন।এর আগে ও কয়েকবার আসলে ও আমি তখন হয় স্কুলে থাকতাম নয় বিকেলে স্যার আসলে পড়ার টেবিলে থাকতাম।ইচ্ছে করেই স্যার কে বলতাম এটা বুঝিনি ওটা বুঝিনি।যাতে করে আন্টি তুলতুলকে নিয়ে বেশিক্ষন না থাকতে পারে।

তার কয়েকমাস পর আবার সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়।সেদিন শুক্রবার ছিলো।তখন তো আর স্কুল বা টিউশনি ও নেই।আমি একটু লুকিয়ে ছাদে গিয়েছিলাম।আর তখনি আন্টি তুলতুলকে নিয়ে আসে।তুলতুল সেদিন ও কান্না করছিলো।তুলতুল সবে হাটতে শুরু করলো।এক পা এগোয় তো দুপা করে পেছোয় দেখতাম আমি সব কিন্তু লুকিয়ে।আন্টি কাজ করছিলো বলে তুলতুলে পা পিছলে পড়ে গিয়ে কপালে অনেক খানি কেটে যায়।আর আবারো দাঁত লেগে ঠোঁট কেটে যায়।তাই খেতে চাইছে না।

আমাকে দেখেই তুলতুল মিষ্টি করে একটা হাসি দেয়।আর সাথে হাত দুটো বাড়িয়ে দেয়।আমি সংকোচ করছিলাম ওকে কোলে নিতে যদি আবার ফেলে দেই!কিন্তু আন্টি জোর পূর্বক আমার কোলে দিয়েদিলেন।আর বললেন,
___তুমি কেনো এতো সংকোচ করছো বাবুন।আমি জানি তুমি গুঞ্জন কে নিয়ে কতোটা কেয়ারিং।তাই বলে ওকে তো আর তুমি নিজ ইচ্চায় ফেলো নি!এই যে আজ ও পড়ে গিয়ে আরো বেশি ব্যাথা পেলো।এতে কার দোষ দেয়া যায়।এখন এসব একটু আধটু চোট ও পাবেই।

আমি ওকে কোলে নিতেই তুলতুল ওর নরম তুলতুলে দুহাতে আমার চোখ মুখ গাল ধরতে লাগলো।তারপর আমার চুলে হাত দিয়ে জোরে জোরে টানতে লাগলো।আমার ব্যাথা লাগছে।কিন্তু বেশ আরাম পাচ্ছি।কতদিন পর ওকে কোলে নিলাম।ও নিজে ও মনে হয় আমাকে মিস করেছে।তাইতো প্রথমে দুহাতে একটু ছুয়ে ছুয়ে দেখলো এরপর চুল গুলো টেনে টেনে যেনো বুঝাচ্ছে এতোদিন কেনো আসো নি তুমি বাবুন ভাইয়া।
ভাবতেই আমার মন টা খুশিতে ভরে উঠে।

কয়েকমাস যেতেই আমাদের ঘরে ও ছোট্র একটা বাবু আসে।কিন্তু সে ও আমার মতোই ছেলে বাবু।মা আর বাবা ও অনেক শখ করেছিলো আমার মতো, যেনো একটা বোন বাবু আসে।কিন্তু সেটা আর হলো কই।তুলতুলের আসা যাওয়া আমাদের ফ্যামিলিতে চলতেই থাকলো।আর ওকে নিয়ে আমার অনুভূতি বাড়তে লাগলো।

দেখতে দেখতে দশটা বছর কেটে গেলো।তুলতুল এখন স্কুলে যায় ক্লাস ফোরে পড়ে।আর আমি ক্লাস টুয়েলভে উঠলাম সবে মাত্র।পড়াশোনার চাপ বাড়তে লাগলো।প্রাইভেট কোচিং কলেজ শেষে খুব একটা সময় হয়ে উঠতো না।কিন্তু তুলতুলের জন্য রোজ আমাকে একটা করে কিটক্যাট নিয়ে আসতে হতো।ও যখন কিটক্যাট টা খাওয়ার সময় গালে মুখে লাগিয়ে ফেলোতো ওকে দেখতে ঠিক একটা মিনি ক্যাট এর মতোই লাগলো।আমি আজ ও জোরে জোরে তুলতুলের গাল দুটো টেনে দেই।ও ব্যাথা পেয়ে আহ করে উঠতেই আমি অট্রহাসিতে ফেটে পড়তাম।
ও তখন মুখ ফুলিয়ে রাগ দেখিয়ে বলতো
____আবার যদি এইরকম আমার গাল টানো তবে খুব খারাপ হয়ে যাবে বাবুন ভাই।

আমার হাসির শব্দ তখন আরো বেড়ে যেতো।কারণ আমি তো জানতামই ও ঠিকই আবার আমার কাছে আসবেই সে যতোই রাগ করুক না কেনো।কখনো কখনো রাগ করে আমার গাছের সব ফুল ও ছিড়ে ফেলতো।কিন্তু আমার এতো টুকু ও রাগ হতো না।মনে মনে বলতাম আমার সব ফুল আমি তোর করে দিলাম “তুলতুল!”

আর ওদিকে আমার ভাই টা হয়েছে মহা শয়তান।ইচ্ছে করেই আমার সাথে লেগে গিয়ে আমার সব ফুল ছিড়ে মাঝে মাঝে তুলতুলের নামে চালিয়ে দিতো।আর আমি বুঝে যেতাম।কারণ তুলতুল যতোই রাগ দেখাক না কেন সে আস্তে করে বড় ফুল গুলোই ছিড়তো শুধু। কখনো গাছে র পাতা কিংবা কলিতে ভুলে ও হাত দিতো না।মাঝে মাঝে আমি পানি দিতে ভুলে গেলে বা সময় না পেলে ও নিজেই পানি দিয়ে দিতো।আগাছা পরিষ্কার করে দিতো।

আর আমাদের বিহান বাবুর রাগ তো আকাশ ছোঁয়া।একেবারে রেগে গিয়ে কলি থেকে পাতা অবদি ছিড়ে ফেলতো।তুলতুল আর বিহান এক ক্লাস আগে পিছে ছিলো।তুলতুলে যখন ক্লাস ফোরে পড়তো বিহান তখন থ্রিতে।বিহান এর একটাই সমস্যা ওর মতে আমি ওর চেয়ে তুলতুলকে বেশি পছন্দ করি।তাই ওর সব রাগ আমাকে নিয়ে নয় তুলতুল কে নিয়ে।আমি কখনোই ওকে এরকম ও কিছু বুঝাতে চাইনি যে বিহানের চেয়ে তুলতুলকে আমার বেশি ভালোলাগে। যখনই কিছু কিনতাম দুজনের জন্যি সেইম সেইম নিয়ে আসতাম।শুধু তুলতুলের জন্য মেয়েদের খেলনা আর বিহানের জন্য ছেলেদের।

কিন্তু তুলতুলে সেদিক দিয়ে একদমই আলাদা ছিলো।ও কখনোই এসব নিয়ে বিহানেএ সাথে ঝগড়া বাধাতো না।বরং ও বিহানের প্রতি অনেকটাই কেয়ারিং ছিলো।একদিন বিহানের সাথে ক্লাসের এক ছেলের বনিবনা না হওয়ায় ছেলেটা নাকি বিহান কে থাপ্পড় মেরেছিলো।আবার ছেলেটার ভাই এসে ও নাকি বিহান কে বকে দিয়েছিলো।

তাই বিহান ও এসে আমাকে বলতে লাগলো আমি গিয়ে যেনো ছেলেটাকে বকে দেই।যেমন টা ওর ভাই এসে বিহান কে বকে ছিলো।আমি ওকে বুঝিয়ে বললাম যে “দেখ বিহান এসব ঝগড়া ঝাটি একদমই খারাপ জিনিস।যা হওয়ার হয়ে গেছে।ছেলে টা অন্যায় করেছে বলে তুমি ও সেইম কাজ করলে কি করে হবে।তাহলে তো আর তোমার আর ওর মাঝে পার্থক্যই রইলো না দুজন ই সমান অপরাধি হয়ে যাবে।তার চেয়ে বরং ক্ষমা করে দাও সেটাই বেটার।সেটাই মহত্ব।

কিন্তু না এবার ও বিহান বাবু আমার উপর ক্ষেপে রইলেন।আমার আর কি করার আমি তো বুঝালাম।না বুঝলে পরে বুঝে যাবে।

সেদিম স্কুল থেকে ফিরে আমি ভুত দেখার মতো চমকে উঠলাম।এ কি দেখছি আমি!স্বপ্ন নয়তো!বিহান বাবু তার সব খেলনা পাটি নয়ে তুলতুলের সাথে শেয়ার করলো!একি আমাদের বিহান বাবু বলে চোখ দুটো কচকালাম।আর ওমনিই দুজন খিটখিটিয়ে হেসে দিলো।বললো ওদের ভাব হয়ে গেছে।বিহান বাবু আর তার গুঞ্জন আপুর সাথে ঝগড়া বাধাবে না।
কারণ তার গুঞ্জন আপু আজ স্কুলে গিয়ে ইচ্ছেমতো ওই ছেলেটাকে বকে দিয়েছে আর ম্যাম কে বলে স্যরি ও বলিয়ে নিয়েছে।

আমি অবাক হলাম তুলতুলের বিহানের প্রতি দায়িত্ব বোধ দেখে।
ওদের তো ভাব হয়েই গেলো।কিন্তু বিচ্ছেদ ঘটলো আমার আর তুলতুলের।সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিলো।তুলতুল যখন ক্লাস ফাইভে উঠলো আমি তখন সামনে এইচ.এস.সি পরিক্ষার্থী। তুলতুলের সমাপনি শেষ হতেই আঙ্কেলের ট্রান্সপার হলো ঢাকাতে।

ওরা চলে গেলো অন্যত্র।কিন্তু আমার জীবনের সব কিছুই ধীরে ধীরে উলট পালট হতে লাগলো।বুকের মাঝে সবসময়।কনকনে ব্যাথা হতো তুলতুলময়
ব্যাথা।সেই ছাদ ছাদের কার্নিশ যেখানে তুলতুল বসে কিটক্যাট খেয়ে মিনি বিড়াল হয়ে যেতো সেই সব মুহুর্ত আমাকে একে একে কুড়ে কুড়ে খেতে লাগলো। সেই ফুল গাছের সব ফুল যেগুলো দেখলেই এখন আমার মনটা ভালোলাগার বদলে বিষিয়ে উঠে মন টাকে বিষাক্ত ছোবল এর মত কামড়াতে থাকে।

আস্তে আস্তে আমি নিজেকে সব কিছু থেকে গুটিয়ে নিতে লাগলাম।বাবা মা আমার এ অবস্থা দেখে বুঝে উঠতে পারছেন না কি হয়েছে আমার।সবার সাথে কেমন রূঢ বিহেভ করতে লাগলাম।যে আমি কখনো কাউকে এতটুকুও কটু করে কথা বলেছি বলে মনে পড়ছে না।আজ কাল সে আমি ই কেউ ভালো কিছু বলতে গেলে ও অযথাই তাদের কথা শুনিয়ে দিতাম।
বাবা মা আমাকে ডাক্তার দেখালেন।ডাক্তার কোন সমস্যাই ধরতে পারলেন না।কি করে ধরবেন একমাত্র আমি ই তো জানি আমার ঠিক কি অসুখ হয়েছে”তুলতুলময় অসুখ”।
ডাক্তারের সাজেস্ট অনুযায়ী আমাকে বাইরে কিছুদিন ধুরে আসার সাজেস্ট করেন।আর তাই বাবা মা আর বিহান কে নিয়ে কিছুদিন বাইরে ঘুরে ও আসা হয়।সে কয়েক টা দিন আমার ভালো কাটলে ও এক মুহুর্তের জন্য ও আমি তুলতুলকে চোখের পাতা থেকে সরাতে পারিনি।

ঘোরাঘুরি শেষে যখন বাড়ি আসলাম আবার আমার সব অসহ্য লাগতে শুরু করলো।সেই পড়ার টেবিল সেই ছাদ সেই বারান্দা যেখানে তুলতুলকে নিয়ে পড়ে আছে কত কত কাহিনী।সব চোখে পড়তেই আবার পুরো পরিবেশ টা বিষাক্ত লাগা শুরু হলো। নাহ্ আমাকে এখান থেকে দূরে থাকতে হবে।নাহয় এখানে আমাক দম বন্ধ হয়ে মরতে হবে।

এইচ.এস.সি র রেজাল্ট বেরোতেই বাবাকে জানালাম আমি অন্য কোথাও ভালো একটা ভার্সিটিতে ভর্তিহতে চাই।যেহেতু ভালো রেজাল্ট করেছি।তাই ভালো একটা কলেজে ভর্তি হওয়াটাই বেটার হবে বাবা ও সম্মতি জানালো।কিন্তু মা আমার কেঁদে কেটে শেষ।কখনো এক মুহুর্তের জন্য ও মা কে ছেড়ে পরিবার ছেড়ে থাকা হয় নি।কষ্ট যে আমার ও হচ্ছে।কিন্তু বিশ্বাস করুন।এই কষ্টের চেয়ে সেই কষ্ট টা দ্বিগুন নয় চারগুণ।যেটা চোখের পলকে আমাকেই শেষ করে দিতে সক্ষম।

চলবে।

ভুলত্রুটি গুলো সংশোধন করে দিয়ে পাশে থাকবেন🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here