গল্প :- গোধূলী বেলায় তুমি
পর্ব :- ০৫
লেখিকা :- তাসনিম রাইসা
.
.
.
-: জয়া হসপিটালে গেলে নার্স একটা রোগীর সামনে নিয়ে যায়। বিছানায় শুয়ে আছে মুখে অক্সিজেন মাক্স থাকা সত্ত্বেও লোকটাকে চিনতে ভুল হয় না জয়ার, এটা আপুর ফেন্ড হাবীব!
– জয়াকে দেখেই হাবীব বললো,’ আমি আর বাঁচবো না হয়ত। তাই সত্যিটা বলে যেতে চাই। তোমার আপু সুসাইড করিনি, আমি ধর্ষণ করে মেরেছি।
– কি বলছেন এসব!
– আপু যে সুসাইড নোট লিখেছিল। রাজ যদি তাকে ভালো না বাসে তাহলে সে সুসাইড করবে? আর আপু তাই করেছিল!
– হ্যাঁ সুসাইড নোট লিখেছিল কিন্তু সেটা মিথ্যা ছিল। আমি জানতাম অদ্বিতীয়া রাজকে নিজের থেবে বেশি ভালোবাসতো। তাই আমি ওর সাথে প্ল্যান করে বলি রাজকে সুসাইডের হুমকি দিয়ে চিরকুট লিখে সুসাইড করার অভিনয় করবি। তখন দেখবি রাজ সত্যি তোকে ভালোবাসবে।
– অদ্বিতীয়া সরল মনে রাজি হয়ে যায়। আর সুসাইড নোট লিখে ফেলে। আর তখনি অদ্বিতীয়াকে ধর্ষণ করে মেলে ফেলি। যেন রাজ ফেঁসে যায়। কিন্তু তুমি সুমাইড নোট পুলিশের কাছে দাওনি। সেদিন আমার বিচার না হলেও প্রকৃতি আমাকে ছাড়েনি। হসপিটালে এসে মৃত্যুর প্রহর গুনছি। শরীরে মরন ব্যাধি ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে।
– হাবীব আর কথা শেষ করতে পারলো না। কথা বলতে বলতেই সে মারা গেল।
– এদিকে জয়ার সামনে সত্যিটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। রাজ ফুলের মতো নিষ্পাপ। এতোটা ভালোবাসার পরও রাজকে জয়া চিনতে পারলো না। নিজের প্রতি নিজেরই ঘৃণা লাগছে।
– হসপিটালের বেঞ্চে জয়া বসে পড়ল। চোখের পানি টলমল টলমল করছে। খুব সুন্দর করে সেজেছিল আজ জারিফের জন্য। কালো পাড়ের নীল শাড়ি। খোঁপায় বেলীফুলের মালা। কপালে ছোট্ট করে বিন্দুর মতো কালো টিপ!
– সুচয়না চোখ জুড়াতে সরু করে কাজল দিয়েছিল সে। কিন্তু সে কাজলগুলো মনে হয় আর ধরে রাখতে পারবে না। হসপিটালের বেঞ্চে বসে বসে রাজের কথা ভাবছে এমন সময় একটা নার্স বললো,’ আপু আপনি কেমন আছেন?”
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?
– জি ভালো। আপু কয়েকদিন আগে আপনি আসছিলেন না জ্বর নিয়ে এ হসপিটালে?
– হ্যাঁ আপু। কেন কি হয়েছে?
– কিছু না আপু। আপু আপনার হাসবেন্ড আসেনি?
– না ওই আজ বাসায়।
– আপু একটা কথা বলি?
– হ্যাঁ বলো।
– আপি আপনি কি এমন ভালো কাজ করছেন যার জন্য এমন স্বামী পেয়েছেন?
– কি বলছো আপু?
– আপু আপনি সত্যি অনেক ভাগ্যবতী। হসপিটালে চারবছরে কত কাপল দেখেছি। কতত ক্রিটিক্যাল মুহূর্ত পার করেছি। কিন্তু আপনার স্বামীর মতো কাউকে দেখেনি। সারারাত আপনার জন্য নামায পড়ে কান্না করছে। যেন আপনি সুস্থ হয়ে যান। একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে এতটা ভালোবাসতে আপনার স্বামীকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। দিনের বেলাতে আপনার মুখে তুলে খাইয়ে দিল। আপু আমার জন্য দোআ করবেন। আমার স্বামীটা নেশা করে। তবুও ছেড়ে যেতে পারি না। আল্লাহ যেন আমার স্বামীকে আপনার স্বামীর মতো ভালো বানিয়ে দেয়।
– জয়া নার্সকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। সে ভাবতে পারছে না সে কোথায় যাবে।
– জয়ার জড়িয়ে ধরা দেখে নার্স হতভম্ব হয়ে যায়! জয়া নার্সকে বিদায় জানিয়ে তাড়াহুড়া করে বাসায় এসে পড়ে। বাসায় আসতেই শুনতে পায় কে যেন ডাকছে,’ এই কলিজা বেলী ফুলের মালা এনেছি! খোঁপায় জড়াবে না। জয়া দৌড়ে ডেসিংটেবিলের সামনে যায়। কিন্তু না রুমে কেউ নেই। জয়া রাজের দেওয়া ফেলে রাখা চিরকুট বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। রাজের মুখটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। বুকের ভেতরটা কেমন যেন দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে হৃদপিন্ডে কেউ ছুরি চালিয়ে দিয়েছে। জয়া তার ফোন থেকে বারবার রাজের নাম্বারেরে ফোন দেয়। নাম্বারটা বারবার বন্ধ শুনাচ্ছে। বাসায় ফোন করে রাজের মা’কে রাজের কথা বললে তারা বললো,’ রাজ তো বাসায় আসেনি মা। ‘
– জয়া ফোন কাটতেই ডির্ভোস লেটারটা চোখে পড়ল। ডির্ভোস লেটারটা হাতে নিয়ে বুঝতে পারলো ডির্ভোস লেটারে ফোঁটায় ফোঁটায় জলের ছাপ। জয়ার আর বুঝতে বাকি রইল না রাজ ডির্ভোস লেটারে সাইন করতে গিয়ে কান্না করছে। জয়া আর একমুহূর্ত দেরী না করে ডির্ভোস লেটারটা ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে। এবং
বিকেলের টিকেট করে বাসে করে রাজের বাসায় এসে পড়ে। বাসায় এসে রাজের মাকে বললো,’ মা রাজ এখনো বাসায় ফিরেনি?
– না তো মা। আরেকটা কথা তোমাকে যে কিভাবে বলি?
– মা কি বলবেন বলেন। আমি কিছু মনে করবো না।
– মা রাজ আমার সাথে সব শেয়ার করেছে। এবং
তোমাকে ডির্ভোস দেওয়ার আগের দিন ফোন করে অনেক কান্না করেছিল। আমিই প্রথমে না করেছিলাম। কিন্তু যখন শুনলাম ডির্ভোস তোমার ইচ্ছাতেই হচ্ছে তখন আর আকটাইনি। তোমাকে নিজের মেয়ের মতো ভেবেছিলাম। মানছি বিয়ের আগে রাজ একটা সিনক্রিয়েট করেছিল। সেজন্য আমিও ক্ষমা চাচ্ছি। আমাদের ক্ষমা করে দিয়ো মা। আমার ছেলেটা তোমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে। দো’আ করি তুমি সুখী হও। তোমাকে চাইলেও আর এ বাড়িতে রাখতে পারবো না। আরেকটা কথা আমার ছেলেটা তোমাকে বড্ডবেশি ভালোবাসতো। আচ্ছা এসব বাদ দাও মা । তুমি ভালো থেকো।
– মা কি বলছেন? আপনি ক্ষমা চাচ্ছেন কেন?
মা আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দেন। আমি অনেক বড় ভুল করছি। আপনাদের ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না।
এমন সময় জয়ার বাবা আসলো। জয়া তার বাবাকে দেখে ক্ষানিকটা অবাক হয়ে যায়। বাবা তুমি কেন আসছো?
– শুনলাম রাজ নাকি তোকে ডির্ভোস দিয়েছে। তাই তোকে নিতে আসলাম।
– জয়া আর তার বাবাকে কিছু বলতে পারলো না। বাসায় আসার পর রাজের সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি। পরিচিত একজনের কাছে শুনেছে রাজ নাকি আমেরিকা চলে যাবে কিছুদিনের মধ্যে।
– জয়া ভাবতে পারছে না এ মুখ নিয়ে কিভাবে রাজের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে। যতই দিন যাচ্ছে রাজের স্মৃতিগুলো ততই মনে পড়ছে। রাজের খাইয়ে দেওয়া অফিস শেষ করে বেলী ফুলের মালা নিয়ে আসা সবকিছু!
– একদিন হঠাৎ শুনতে পেল রাজের বিয়ে। তাও জয়ারই বান্ধবী জেনিফার সাথে। জয়া বিশ্বাস করতে পারছে না। রাজের বিয়ে! কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছে তার। না এ বিয়ে যেভাবেই হোক আঁকটাতে হবে। রাজকে ছাড়া সে বাঁচবে কিভাবে।
.
.
চলবে……………….♥.
.