গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া পর্ব ৩১+৩২

#গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া
#লেখায়_ফারহানা_ছবি
#পর্ব_৩১
.
.
🦋
স্মরণ ডোন্ট কেয়ার হয়ে প্রাণোকে কোলে নিয়েই বেড়িয়ে গেল বিয়ে বাড়ি থেকে সাথে পেছন পেছন প্রিয়া সাগর স্মিতা নিলয় সাফা আকাশ ঐশী চলে গেল৷

এদিকে প্রাণোর বাবার চোখে মুখে রাগ উপচে পড়ছে তো জীবন মাহমুদ এর চোখে মুখে চিন্তার ছাপ ……

____________

নানা রকমের ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় বসে আছে প্রাণো৷ পুরো রুমটায় প্রাণো চোখ বুলিয়ে নিলো৷ স্মরণের রুমটা বেশ বড় ৷ দেওয়ালের এক সাইডে স্মরণের হাস্যজ্জ্বল সুন্দর একটা ছবি৷ স্মরণের ডান গালের টোলটার জন্য স্মরণকে আরো আকর্ষণীয় লাগছে৷ প্রাণো চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখছে৷ ছোট ছোট মরিচ বাতি সাথে রঙিন ফুল দিয়ে সাজানো৷ রুমে কোন লাইট জ্বলছে না চারিদিকের মোমবাতির আলোয় সব কিছু যেন আরো মহোনীয় লাগছে৷ হঠাৎ কারোর পায়ের আওয়াজ শুনতে প্রাণো চুপ হয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে স্মরণের অপেক্ষায়৷

স্মরণ তার রুমের দিকে যেতেই সাগর নিলয় আকাশ স্মিতা ঐশী সাফা সাথে প্রিয়া স্মরণের পথ আটকে দাড়িয়ে আছে৷ এভাবে ওদের দাড়িয়ে থাকতে দেখে স্মরণ ভ্রুযুগল কুচকে সবার দিকে তাকিয়ে বলে,” কি ব্যাপার তোরা এভাবে আমার পথ আটকে দাড়িয়ে আছিস কেন?”

” টাকা দে তাহলে তোর পথ ছেড়ে দাড়াবো আমরা কি গাইজ তাই তো?”(সাগর)

” একদম” সবাই একসাথে বলে উঠলো ..

” টাকা কিসের টাকা? কোন টাকা হবে না৷”

” উহু তা বললে তো হবে না চান্দু ৷ এতো কষ্ট করে তোর বাসর সাজিয়েছি তার দাম তো তোকে দিতেই হবে দোস্ত৷”

স্মরণ দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো ,” কতো টাকা চাই তোদের?”

” বেশি না মাত্র পঞ্চাশ হাজার “(নিলয়)

নিলয়ের কথা শুনে সবাই নিলয়ের দিকে তাকিয়ে ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে রইল৷ নিলয় সবার মুখের রিয়েকশন দেখে বলতে লাগলো,” এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? টাকার এম্যাউন্ট কি কম বলে ফেলেছি নাকি?”

” না ভাইয়া আপনি কম বলেন নি বরং অনেক কম বলে ফেলেছেন ৷ আমি তো ভেবেছি এক লাখ টাকা চাইবো৷”(প্রিয়া)

প্রিয়ার কথা শুনে সাফা নিলয় আকাশ স্মিতা ঐশী সাগর সবাই প্রিয়ার দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে থেকে বলতে লাগলো,” বইন তুমি কি আমাদের খুন করতে চাও? “(আকাশ)

“তাই হবে আকাশ নাহলে এতো বড় এমাউন্টের কথা এভাবে অনায়াসে বলতে পারতো না প্রিয়া৷”(স্মিতা)

সবার ভাবনার মাঝে ভারি রাগি কন্ঠস্বরে বলে উঠলো ,” তোদের টাকা চাই না সাগর নিলয় আকাশ?”

স্মরণের গলা শুনে সবাই চুপ হয়ে স্মরণের দিকে তাকাতে প্রত্যেকে ভয় পেয়ে গেল৷ কারণ স্মরণ এর হাতে মোটা লাঠি আর সেটা ঘুড়াতে ঘুড়াতে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে৷

” কি হলো তোদের মুখের কথা ফুস ৷ টাকা চাই না তোদের?”

স্মরণের কথা শুনে সবাই একসাথে বলে উঠলো , ” হি হি আরে দোস্ত আমরা তো মজা করছিলাম৷ আমাদের কোন টাকা লাগবে না ৷ তুই এখানে না দাড়িয়ে রুমে যা ভাবি তোর জন্য অপেক্ষা করছে৷” ভয়ে অনেক কষ্ট করে মুখে হাসি টেনে কথা গুলো বললো নিলয়…

” তা কি করে হয় দোস্ত? তোরা এতো কষ্ট করলি তার পারিশ্রমিক নিবি না তা কি করে হয়? না না এটা অন্যায় আমি কিছুতেই এই অন্যায় করতে পারবো না৷ চল তোদের টাকা দিয়ে দি৷ ”

স্মরণের কথা শুনে নিলয় আকাশ সাগর সাফা ঐশী স্মিতা প্রিয়া আর এক মুহূর্ত না দাড়িয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল৷ ওদের এভাবে পালিয়ে যেতে দেখে স্মরণ বাঁকা হেসে রুমে চলে গেল৷

দরজার খোলার আওয়াজ হতে প্রাণোর হার্টবিট যেন বেড়ে গেল৷ এর আগেও স্মরণের সাথে একি রুমে থেকেছে কিন্তু এমন টা লাগেনি কখনো, কিন্তু আজ যেন সব কিছু নতুন নতুন লাগছে প্রাণোর কাছে; স্মরণ রুমে ঢুকে চোখ পড়ে ফুলের বিছানায় বসে থাকা একটা ছোট্ট পরীর দিকে, মোমবাতির আলোয় প্রাণোর মুখটা আরো মোহনীয় লাগছে স্মরণের কাছে৷ স্মরণ শেরওয়ানী বোতাম খুলতে খুলতে প্রাণোর পাশে বসে প্রাণোর হাত জোড়া নিজের দু’হাতের মুঠোয় নিয়ে চুমু খেয়ে বলে,” প্রাণ আমার জীবনের সব থেকে প্রিয় এবং ভালোবাসার মানুষটা তুমি ৷ তোমাকে ঘিরে আমার সব অনুভূতি ৷ তোমার ভালোবাসায় আমি বিমোহিত সম্মোহিত ৷ আমি সারাটা জীবন এমন ভাবে তোমার ভালোবাসায় সম্মোহিত হয়ে থাকতে চাই প্রাণ৷ ভালোবাসায় জরিয়ে রাখতে চাই তোমায়, ”

প্রাণো চোখ মেলে স্মরণের দিকে তাকাতে স্মরণ প্রাণোর হাতে আরো দুটো চুমু দিয়ে বলে ,” প্রাণ ফ্রেস হয়ে নেও তারপর দুজনে নামাজ পড়বো৷ ”

প্রাণো মিষ্টি করে হেসে দিয়ে বিছানা থেকে নেমে আয়নার সামনে বসে একে একে গহনা খুলতে থাকে৷ স্মরণ মুচকি হেসে প্রাণোর কাছে গিয়ে গহনা খুলতে সাহায্য করতে লাগলো৷ প্রাণো মাথার টিকলি , কানের দুল, গলার হার, নথ, চুড়ি খুলে দিলো৷ প্রাণো চুল খুলতে নিলে স্মরণ বাধা দেয়৷

” প্রাণ তুমি চুল খুলতে যেও না তাহলে ব্যাথা পাবে৷”

” তাহলে কি করবো ? ”

” আমি আছি তো জান৷ যাস্ট ওয়েট৷” স্মরণ তৈলের শিশি নিয়ে প্রাণোর চুলে দিয়ে আস্তে আস্তে চুলের জট খুলে দিয়ে ব্রাস করে দিলো৷ প্রাণো শুধু অবাক হয়ে আয়নায় স্মরণকে দেখে যাচ্ছে কিন্তু হঠাৎ করে স্মরণ বলে উঠলো , ” সুইটহার্ট এভাবে হা করে তাকিয়ে না দেখে দ্রুত ফ্রেস হয়ে ওজু করে এসো৷ তারপর না দেখা যাবে কে কাকে চোখ দিয়ে ঠোঁট হাত দিয়ে গিলতে পারে৷” বলে চোখ মারলো স্মরণ…

প্রাণো লজ্জা পেয়ে উঠে ওয়াশরুমে যেতে গিয়েও থেমে যায়৷

” কি হলো প্রাণ কোন প্রব্লেম?”

” চেন্জ করে কি পড়বো? আমি তো সাথে করে কিছু নিয়ে আসি নি৷”

” সুইটহার্ট একবার কার্বাড টা খুলে দেখো ৷”

প্রাণো স্মরণের কথা মতো কাবার্ড খুলে দেখে অবাক৷ কারণ কাবার্ডের উপরের ভাগে পুরো জায়গাটায় শাড়ি সালোয়ার কামিজ চুড়িদার সাথে প্রয়োজনীয় জিনিস যা লাগে৷ প্রাণো মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে স্মরণের মতো এমন হাসবেন্ট পেয়ে যে কিনা পাগল প্রেমিক কেও হার মানাতে বাধ্য….

প্রাণো গাঢ় পোলাপি রঙের জরজেট শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়৷ লম্বা শাওয়ার নিয়ে শাড়ি পরে ওজু করে বের হয়ে দেখে স্মরণ বিছানা থেকে ফুলের পাপড়ি গুলো ঝেরে ফেলে সেগুলো ফেলে দিয়ে ৷ নিচে জায়নামাজ বিছিয়ে রেখেছে৷

প্রাণো কে দেখে স্মরণ নামাজের জন্য তাড়া দিলো৷ প্রাণো তার শাড়ি মাথায় দিতে স্মরণ কাবার্ড থেকে একটা রেডিমেট হিজাব বের প্রাণোকে পড়িয়ে দিয়ে বলে, ” মাশাআল্লাহ খুব সুন্দর লাগছে হিজাবে৷ চলো নামাজ টা আদায় করে নি৷”

প্রাণো মিষ্টি করে হেসে দিয়ে বললো,” যথা আজ্ঞা জনাব…”

এদিকে সবাই দৌড়ে ড্রইংরুমে এসে হাজির হয়৷

” আল্লাহ মার খাওয়ার হাত থেকে আজ বেঁচে গেলাম৷”

” আকাশ তোমার বন্ধু এমন হিটলার কেন বলোতো?”

” ঐশী আস্তে বলো ৷ স্মরণ যদি জানতে পারে ওর পিছে তুমি ওকে হিটলার বলেছো তাহলে নির্ঘাত তোমাকে ছাঁদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে৷”

” এই এই আকাশ ভাইয়া খবরদার আমার ভাই+জিজুকে নিয়ে একদম উল্টা পাল্টা কোন কথা বলবে না৷ আমার জিজু মোটেও হিটলার নয়৷”

” ওরে জিজুর চামচি বিয়ে করে এবাড়ি আসতে না আসতে শশুড়বাড়ির চামচা গিরি শুরু করে দিছিস৷” (সাবা)

” আপুউউউ ভালো হবে না বলে দিচ্ছি৷ আমি কিন্তু আপুকে বলে দিবো তুমি তার বোন+জা কে চামচা বলছো হু৷”

” এই তোরা দেখেছিস প্রিয়ার বিয়ে হওয়ার পর থেকে কেমন শশুড় বাড়ির ঝোল টেনে কথা বলছে?”(স্মিতা)

” কেন বলবো না ? দুদিন পর তো তোমরাও এই ভাইয়াদের বাড়ি মানে তোমাদের শশুড় বাড়ির ঝোল টেনে কথা বলবে তো আমি বললে দোষ তাই না?”

“এই তোদের ঝগড়া বন্ধ করে চল রাত তো অনেক হলো বাড়ি ফিরি এবার?”

” না ভাইয়া এখন আপনারা কোথাও যাবেন না৷ গেস্ট রুম তৈরি আপনারা গেস্ট রুমে চলে যান ওখানে রেস্ট করুন৷ ”

” ঠিক আছে৷”

সবাই গেস্ট রুমে চলে যেতে কলিংবেল বেজে ওঠে ৷ প্রিয়া বুঝতে পারে তার শশুড় শাশুড়ি ননদ জামাই এসেছে৷ প্রিয়া গিয়ে দ্রুত দরজা খুলে দেয়৷ জীবন মাহমুদ কোন কথা না বলে গট গট করে নিজের রুমে চলে যায়৷ প্রিয়া সাজিতের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে সাজিত একদম নরমাল হয়ে আছে ৷ মুখে না আছে কোন রাগ আর না আছে কোন আনন্দ৷ সাজিত মিহুকে ধরে ওর রুমে নিয়ে চলে যায়৷ সাহারা বেগম প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলে, ” সব ঠিক ঠাক হয়েছে তো?”

” হ্যা মামুনি সব ঠিকঠাক হয়েছে তুমি এখন রুমে গিয়ে রেস্ট করো আর আমি তোমার ছোট ছেলেকে দেখছি৷”

” ঠিক আছে ”

সাহারা বেগম নিজের রুমে চলে যায়৷ প্রিয়া দরজা আটকে নিজের রুমে এসে দেখে সাজিত ওয়াশরুম চেন্জ করে বেড়িয়ে আসতে৷ সাজিত প্রিয়াকে কিছু না বলে বিছানায় উল্টো মুখ করে শুয়ে পড়ে৷ তা দেখেই প্রিয়া মনে মনে বলে ওঠে ,” এমা এটা কি হলো? ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে গেলো ব্যাটা তা রাগ করবে কান্না কাটি করবে তা না করে ঘুমিয়ে পড়লো? ধ্যাত কতো কি ভেবে ছিলাম ৷ কান্না কাটি করলে শান্তনা দিবো৷ তা আর হলো না ৷ ”

হঠাৎ প্রিয়ার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে সাজিত বলে উঠলো ,” এতো আকাশ কুসুম চিন্তা না করে ঘুমিয়ে পড়ো প্রিয়ু৷ গুড নাইট৷”

সাজিতের কথা শুনে প্রিয়া চোখ বড় বড় করে সাজিতের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সাজিতের পাশে শুয়ে পড়লো৷

_______

স্মরণ প্রাণো দু’জনে নামাজ পড়া শেষ হওয়ার পর প্রাণো জায়নামাজ উঠাতে উঠাতে বলে, স্মরণ তুমি ব্যালকনিতে যাও আমি এখুনি আসছি৷”

” ওকে সুইটহার্ট ” স্মরণ ব্যালকনিতে যেতে প্রাণো ভিজে চুল মেলে দিয়ে শাড়ি ঠিক করে নিয়ে নিজের ফোনটা টেবিলের উপর থেকে নিয়ে কাউকে একটা মেসেজ করতে তার কয়েক সেকেন্ড পর ফিরতি মেসেজ আসতে প্রাণোর ঠোঁটের কোনে রহস্যময় হাসি ফুটে ওঠে৷ প্রাণো তার ফোনটা লক করে ব্যালকনিতে গিয়ে পেছন থেকে স্মরণকে জড়িয়ে ধরে বলে , ” আজ থেকে আর কোন বাধা রইল না জান আমাদের একসাথে থাকার৷ আই লাভ ইউ স্মরণ৷ ”

স্মরণ কিছু না বলে হুট করে পেছনে প্রানোর হাত ধরে ঘুড়িয়ে প্রাণোকে সামনে এনে স্মরণ তার হাত দুটো প্রাণোর পাতলা শাড়ি ভেদ করে কোমড় স্পর্শ করতে প্রাণো কেঁপে ওঠে৷ লজ্জায় স্মরণের বুকে মুখ গুজে ৷

” বাহ আমার বেগম তো দেখছি লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছে ৷ তো প্রাণ এটা তো আর আমাদের প্রথম বাসর নয় আমারা এতো এর আগেও বাসর ক…” বাকিটা বলার আগেই প্রাণো স্মরণের বুক থেকে মাথা তুলে স্মরণের মুখ চেপে ধরে বলে,” বিন্দুমাত্র লজ্জা সরম নেই তোমার তাই না?”

স্মরণ প্রাণোর হাতটা মুখ থেকে সরিয়ে বলল,” একদম বউয়ের কাছে নো লজ্জা নো সরম অনলি রোমান্স চলবে বুঝেছো প্রাণ৷”

” ধ্যাত! স্মরণ তুমি কিন্তু দিনকে দিন আরো অসভ্য নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছো৷”

” শোন বউয়ের কাছে সব স্বামীরাই অসভ্য নির্লজ্জ হতে চায় যেমন টা আমি … ”

” তাই নাকি?”

” হুম তাই”

আকাশে পূর্ন চাঁদ তার আলো প্রাণোর মুখে পড়তে প্রাণোর নাকের নাকফুলটা চাঁদের আলোয় চিকচিক করতে লাগলো৷ গোলাপি শাড়িতে প্রাণোকে আজ আরো বেশি এট্রাকটিভ লাগছে৷ বাইরের মৃদু বাতাসে প্রাণোর চুল গুলো বাতাসে উড়ে মুখে পড়ছে ৷ প্রাণো সেটা বিরক্ত হয়ে বার বার সরিয়ে দিচ্ছে৷ স্মরণের চোখ জোড়া আজ প্রাণোর উপর থেকে যেন সরছে না৷ প্রাণো ভেজা ঠোঁট জোড়া আজ ভিষণ রকমের টানছে স্মরণকে , হুট করে স্মরণ প্রাণোর ভেজা চুলের ভাজে হাত দিয়ে প্রাণোর ঠোঁট জোড়া ঠোঁটের ভাজে ডুবিয়ে দেয়৷

স্মরণে এমন কান্ডে প্রথমে প্রাণো চমকে গেলেও পরে নিজেকে সামলে নিয়ে স্মরণের তালে তাল মেলাতে লাগে ৷ দুটো হৃদয়ের স্পন্দন যেন দুটো মানুষ অনুভব করতে পারছে৷ একে অন্যের ভালোবাসার নেশায় একটু একটু করে ডুবে যেতে লাগলো দুটো মানুষ৷

স্মরণ হুট করে প্রাণো কে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো৷

অর্ধেক শেষ হওয়া মোমের আলোয় নিজেদের পবিত্র ভালোবাসায় নিজেদের রাঙিয়ে নিতে ব্যস্ত দুটো হৃদয়৷

________

শান বাড়িতে ফিরতেই নিজের রুমে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে৷ জীবনের প্রথমবার চ্যালেন্জে হেরে গেছে শান৷ এই পরাজয় মেনে নিতে নারাজ শান৷ এদিকে ড্রইংরুমে কমিশনার আর সিমি বসে আছে ৷ আশিক খান মেয়ের সাথে এবাড়িতে আসতে চেয়েছিলো কিন্তু সিমি বারণ করে দেয়৷

কিছুক্ষণ পর ভাঙচুরের শব্দ বন্ধ হতেই কমিশনার আর সিমি দুজনে হাফ ছেড়ে বাঁচে৷ কিন্তু হঠাৎ করে শানকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে সিমি ঘাবড়ে যায়৷

ছেড়া শেরওয়ানী এলোমেলো চুল ভয়ংকর দুটো লাল টকটকে চোখ নিয়ে সিমির সামনে দাড়িয়ে হুট করে সিমি ঘাড় ধরে উপরে নিয়ে যেতে নিলে কমিশনার কিছু বলতে যাবে তখনি শান বলে ওঠে,…..
.
.
.
#চলবে…………#গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া
#লেখায়_ফারহানা_ছবি
#পর্ব_৩২
.
.
🦋
ছেড়া শেরওয়ানী এলোমেলো চুল ভয়ংকর দুটো লাল টকটকে চোখ নিয়ে সিমির সামনে দাড়িয়ে হুট করে সিমি ঘাড় ধরে উপরে নিয়ে যেতে নিলে কমিশনার কিছু বলতে যাবে তখনি শান বলে ওঠে,” ডোন্ট ইউ ডেয়ার ড্যাড৷ তুমি এখন এমন কিছু বলো না যেটা সিমির জীবনের কাল হয়ে দাড়ায়৷” ছেলের এমন কথা শুনে আব্বাস আলী আর কোন কথা বলার সাহস পেল না৷

শান সিমির ঘাড় ধরে সিঁড়ি পর্যন্ত নিয়ে হাত শক্ত করে চেপে ধরে উপরে নিজের ঘরে নেটে নিয়ে যাচ্ছে ৷ সিমি চুপচাপ শানের সাথে যাচ্ছে ৷ সিমি চাইলে এখন শানের কথার বিপরীতে কথা বলতে পারে কিন্তু তা সিমি করবে না ৷ স্বামী স্ত্রীর ঝগড়া মান অভিমান ভালোবাসা সবটাই নিজেদের ঘড়ের চার দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকাটাই শ্রেয় মনে করে সিমি৷

শান সিমিকে নিজের রুমে টেনে নিয়ে ভাঙা আসবাবপত্রের উপর ছুড়ে মেরে সিমির গলা চেপে ধরে শান৷

” তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড হয়ে আমারই সাথে বেইমানি করলি কেন? তোর জন্য এই শান আজ প্রথমবার চ্যালেন্জে হেরে গেলো ওই ওই স্মরণ এর কাছে; প্রাণোকে আবারও কেরে নিলো ৷ শুধু মাত্র তোর জন্য হ্যাঁ শুধু মাত্র তোর জন্য , তুই দায়ি সব কিছুর জন্য শুধু তুই দায়ি সিমি৷”

সিমি কথা বলার জন্য হাসঁফাস করতে লাগলো কিন্তু এতো শক্ত করে শান ওর গলা চেপে ধরে ছিলো বিধায় সিমি কথা বলা তো দুরে থাক শ্বাসটাই পযর্ন্ত নিতে পারছিলো না৷ এক প্রকার বাধ্য হয়েই সিমি তার শরীরের সমস্থ শক্তি দিয়ে শানকে ধাক্কা মারে৷ শান ধাক্কা সামলাতে না পেরে উল্টে পরে পিঠে ব্যাথা পায়৷ সে মুহূর্তে সিমি দ্রুত বেগে শানের বুকের উপর উঠে বসে শান এর গলা চেপে ধরে বলে,” তোর সাহস দেখে আমি সত্যি স্পিচলেস শান ৷ তুই ভাবলি কি করে তোর মতো কাওয়ার্ড এর হাতে এই সিমি মরবে? আর তুই কি করে আশা করিস তোর ফালতু চ্যালেন্জের জন্য আমি আমার একমাত্র ভাইয়ের ভালোবাসা প্রাণোকে তোর হতে দিবো? একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ শান ৷ প্রাণো শুধু স্মরণের আর আমি বেঁচে থাকতে প্রাণোকে তুই কখনো নিজের করতে পারবি না কারণ প্রাণো শুধুমাত্র স্মরণের, আর একটা কথা আমাকে কোন অবলা নারী ভেবে টর্চার করার কথা ভুলেও ভাবিস না৷ তুই আমাকে ছোট বেলা থেকে চিনিস আমি রেগে গেলে ঠিক কি কি করতে পারি ৷ তুই তো বলিস আমি নাকি রেগে গেলে তোর থেকেও ভয়ংকর হয়ে যাই৷ তুই নিজেই আমার সেই রাগ সামলাতে হিমসিম খেতিস৷ তাহলে পুরনো সে সব কথা ভেবে নিজেকে সামলে নে ৷৷ এন্ড লাস্ট কথা আমি এখন তোর বিবাহিত স্ত্রী ভুলেও আমার ভাইয়ের বউয়ের দিকে নজর দেওয়ার কথা চিন্তাও করবি না তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না৷ ” কথা গুলো বলে সিমি শানের উপর থেকে উঠে সরে এসে আয়নার সামনে দাড়িয়ে ঘোমটা খুলতে লাগলো৷

শান এখন ফ্লোরে ওভাবে শুয়ে আছে৷ সিমির কথা বলার ধরন রাগ জেদ দেখে শান নিজের রাগ টা দমে গেল হঠাৎ , সিমি যে এভাবে পাল্টা আক্রমন করে নিজের কথা গুলো উপস্থাপন করবে তার বিন্দুমাত্র ধারণা ছিলো না শানের; শান পিঠে ব্যাথা নিয়ে ধিরে ধিরে ফ্লোর থেকে উঠে সিমির পেছনে দাড়াতে সিমি বলে ওঠে ,” রুমটা নোংড়া তুই করেছিস তাই পরিষ্কার তুই করবি শান৷ আর একটা কথা আমাকে তোর সারভেন্ট নই বউ তাই এমন কিছু বলার দুঃসাহস করতে যাস না৷ ”

শান সিমির কথায় পাত্তা না দিয়ে বলে উঠলো ,” স্মরণ তোর ভাই?”

শানের এমন প্রশ্ন শুনে সিমি কানের দুল গলার হার নথ টিকলি খুলতে খুলতে বলে উঠলো ,” হ্যাঁ, স্মরণ আমার ভাই৷ আমার একি মায়ের পেটের তবে আমরা একি বাবার ঔরসজাত সন্তান নয় স্মরণ হলো জীবন মাহমুদ এর ছেলে ৷ ”

সিমির কথা শুনে শান অবাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ৷ সিমি নির্ধিদ্বায় কথা গুলো স্বাভাবিক ভঙ্গিতে শান কে কথা গুলো বললো৷ কয়েক মুহূর্ত সব নিস্তব্ধ থাকলেও দরজায় নক পড়তে সিমি বলে উঠলো ,” দরজা খোলা আছে ভেতরে আসুন ৷”

সিমির অনুমতি নিয়ে একজন সারভেন্ট সিমির লাগেজ নিয়ে রুমে ঢুকে বলে,” ম্যাম আপনার লাগেজ৷”

” রেখে যান ৷ ”

সারভেন্ট লাগেজ রেখে চলে যেতে সিমি লাগেজ খুলে একটা কলা পাতা রঙের শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে যেতে যেতে শানের উদ্দেশ্য বলে উঠলো ,” আমি চেন্জ করে আসার পূর্বে রুমটা ক্লিন দেখতে চাই শান৷ আর আমি যদি চেন্জ করে এসে রুম ক্লিন না দেখি তাহলে কিন্তু আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না মাইন্ড ইট৷”

কথাটা বলে দরজাটা শব্দ করে বন্ধ করে দিলো সিমি৷ শান এখনো হতবিহ্বল হয়ে দাড়িয়ে আছে৷ সিমির কথা গুলো শানের মাথার উপর দিয়ে গেল ৷ তবে এটা সত্যি শানে রাগ জেদ এর থেকে সিমির রাগ জেদ হাজার গুন বেশি৷ সিমি কতোটা ডেসপারেট সেটা শান খুব ভালো করেই জানে তাই সময় নষ্ট না করে দ্রুত রুম পরিষ্কার করা শুরু করলো৷

________

রাত তিনটা বেজে দশ মিনিট , জীবন মাহমুদ তার রুমের ব্যালকনিতে ইজি চেয়ারে বসে দামি সিগারেটের ধৌয়া উড়াচ্ছে৷ ঘুম যেন কিছুতেই চোখে ধরা দিচ্ছে না তার, স্মরণ যে প্রাণোকে বিয়ে করেছে তাতে জীবন মাহমুদ এর বিশেষ কিছু যায় আসে না৷ জীবন মাহমুদ মাথায় শুধু একটা চিন্তাই ঘুরছে ৷ আশিক যে আসল মানুষটার কথা বলেছে সে কে? কে এই মানুষটা যে তার সম্রাজ্ঞ্য নিমেশেই ধ্বংস করে দিতে পারে? টেনশনে জীবন মাহমুদ এর নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে ৷ আশিক কে খুনের হুমকি দিয়েও কোন লাভ হয়নি ৷ তার মানে আশিক খান কোন মিথ্যে বানোয়াট কথা বলেনি৷

” আশিক কার কথা বলেছে আমি জানি না কিন্তু যেই হোক না কেন এই জীবন মাহমুদ তাকে ছাড়বে না৷ খুজে বের করে আমি নিজের হাতে খুন করবো তাকে, হাহ! জীবন মাহমুদকে শেষ করা এতো সহজ নয়৷ কিন্তু তার আগে আশিক কে নজরে রাখতে হবে ৷ যদি আশিক কোন কলকাঠি পেছন থেকে নেড়ে থাকে তাহলে ওকে ও শেষ করে দিতে আমি দ্বিতীয় বার ভাববো না৷ ” কথা গুলো নিজে নিজে বলতে বলতে শূন্যে ধোয়া উড়াতে লাগলো৷

অন্যদিকে জুনাইদ কবির রাগে নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে বসে আছে৷ প্রাণো যে এমন কিছু আজ করবে সেটা বিন্দুমাত্র ধারণা ছিলো না জুনাইদের… প্রাণো তাকে না জানিয়ে আগে স্মরণ কে বিয়ে করেছে বিষয় টা জুনাইদ কবির কিছুতেই মানতে পারছে না৷ স্মরণকে জুনাইদ কবির অপছন্দ করে ঠিক তা নয় কিন্তু এভাবে বিয়ের আসরে পাত্রি বদল তারপর স্মরণের এভাবে বর বেসে এসে প্রাণোকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করা৷ কারোর ইচ্ছের সন্মান না করে আবারও প্রাণোকে বিয়ে করে নিয়ে যাওয়া৷ জুনাইদ কবির এর ইচ্ছে করছে স্মরণ কে মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে কিন্তু তা সে করতে পারবে না কারণ স্মরণ আর কেউ নয় তার একমাত্র বন্ধু + বেয়াই এখন যদি স্মরণ কোন ক্ষতি করে ফেলে তাহলে জীবন মাহমুদ তাকে ছাড়বে না৷ তবে জুনাইদ কবির মনে মনে স্থির করে নিলেন যে প্রাণো বা স্মরণ কাউকে তিনি ক্ষমা করবেন না আর না সম্পর্ক রাখবেন৷

সাদমান আর তার মা দুজনে ড্রইংরুমে বসে আছে৷ মেহমানরা রাতেই চলে গিয়েছে শুধু মাত্র কাজিনরা থেকে গেছে তারা আগামিকাল চলে যাবে৷

নিশিতা বেগম সাদমানের কাছে প্রাণোর প্রথম বিয়ের কথা শুনে প্রথমে প্রচন্ড কষ্ট পায় ৷ কিন্তু সাদমান তার মাকে সবটা বুঝিয়ে বলাতে তার রাগ অভিমান কিছুটা হালকা হয়৷ তবুও আদরের বড় মেয়ে না জানিয়ে বিয়ে করেছে শুনলে সব বাবা মা কষ্ট পায়৷ নিশিতা বেগম তার ব্যতিক্রম নয়৷

জুনাইদ কবির আজ রাতে আর রুমের দরজা খুলবে না বুঝে নিশিতা বেগম গেস্ট রুমে গিয়ে শুয়ে পরেন আর সাদমান তার নিজের রুমে চলে যায়৷

________

ভোরের সিগ্ধ রোদের ঝলকানিতে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায় প্রাণো ৷ নিজেকে স্মরণের উম্মুক্ত নগ্ন বুকের সাথে লেপ্টে থাকতে দেখে ঠোঁটের কোনে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো৷ এই মানুষটাকেই পাওয়ার জন্যই প্রাণো এতো কিছু করলো৷ সিমি আপুকে শানকে বিয়ে করার জন্য রাজি করানো তার বাবা আশিক খান কমিশনার কে প্লানে সামিল করা ৷ সবকিছুই শুধু মাত্র এই রাগি ঘাড় তেরা সাইকো পাগল প্রেমিক কে নিজের করে পাওয়ার জন্য; বাতাসে স্মরণের এলোমেলো সিল্কি চুল গুলো স্মরণের ভরাট কপাল বার বার ছুঁয়ে দিচ্ছে৷ প্রাণোর হঠাৎ চোখ পড়ে স্মরণের চিবুকে খোচা খোচা দাড়ির মধ্যে কালো তিলটা৷ প্রাণোকে প্রচন্ড রকমের টানছে ওই তিলটা৷ প্রাণো হুট করে স্মরণের চিবুকে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল৷ চুমু খেয়ে প্রাণো নিজে নিজে ভিষণ লজ্জা পেল আর এখন যদি স্মরণ জেগে থাকতো তাহলে আরো বেশি লজ্জা পেতে হতো তাকে৷

প্রাণো খুব সাবধানে স্মরণের বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে এলোমেলো শাড়ি কোন ভাবে পেচিয়ে উঠে পড়লো৷ ওয়াশরুমে ঢুকতেই প্রাণোর মনে পড়লো আসার সময় লাগেজ টা সাথে করে আনেনি৷ এখন গোছল করে কি পড়বে ? ভাবতে ভাবতে স্মরণের কাপবোর্ড খুলে স্মরণের ট্রাউজার আর শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো৷

শাওয়ার নিয়ে বার হয়ে ভেজা চুল তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে চুলে পানি স্মরণের মুখে গিয়ে পড়ে তাতেই স্মরণের ঘুম ভেঙে যায়৷ চোখ মেলে তাকিয়ে প্রথমে প্রাণোর সিগ্ধময় রুপ টা নজরে পড়ে ৷ স্মরণ হ্যাঁ হয়ে প্রাণোকে দেখে যাচ্ছে৷ প্রাণোর মুখে বিন্দু বিন্দু পানি ৷ চুলের পানিতে সাদা শার্টটা পিঠের দিকটা অর্ধেক ভিজে গেছে ৷ কয়েকটা চুল গলায় লেপ্টে আছে৷ স্মরণ যেন কয়েক মুহূর্তে এক ঘোরে চলে গেল৷ প্রাণো চুল মুছায় এতোটাই ব্যস্ত ছিলো যে স্মরণ যে ঘুম থেকে উঠে গেছে তা টের পায়নি৷

হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে শিউরে ওঠে প্রাণো ৷ আয়নায় স্মরণের প্রতিবিম্ব দেখে মুচকি হাসলো প্রাণো৷ প্রাণোর গলায় কয়েকটা চুমু খেয়ে স্মরণ প্রাণোর ভেজা চুলে মুখ গুজে বিড়বিড় করে বলে উঠলো ,” প্রাণ এই সাতসকালে আমায় পাগল না করলে চলছে না তোমার? আমি যতোবার তোমায় দেখি ঠিক ততোবার মুগ্ধ হয়ে যাই৷ ভালোবাসি প্রাণ বড্ড বেশি ভালোবাসি তোমায়”

” আমিও তোমায় ভালোবাসি ৷ যে ভালোবাসার কোন মাপ কাঠি হয় না৷ না হয় কোন আকার ৷ শুধু বলবো এক আকাশ ভালোবাসি তোমায়৷ যে ভালোবাসায় নেই কোন ক্ষুদ নেই কোন সন্ধেহ আছে শুধু ভালোবাসা ৷”

প্রণোর কথা শুনে স্মরণের ছোঁয়া গুলো যেন আরো গভির হতে লাগলো তখনি প্রাণো বলে উঠলো ,” স্মরণ সকাল হয়েছে যাও ফ্রেস হয়ে এসো ততোখনে আমি চেন্জ করে শাড়ি পড়ে নিচ্ছি৷ তারপর নিচে যেতে হবে বেলা অনেক হলো৷”

স্মরণ সত্যি প্রাণোকে ভালো করে দেখে বলে

সুইটহার্ট চলো না তুমি আমার সাথে আর একবার শাওয়ার নিয়ে না হয় শাড়ি পড়ো”

” ইস কি শখ জনাবের, দেখো স্মরণ গতকাল রাত আমাকে ভিষণ জ্বলিয়েছো ৷ এখন জ্বালানোর চেষ্টা করলে কিন্তু আমি চিৎকার করবো৷”

” চিৎকার করবে করো ৷ উল্টো লজ্জা তুমি পাবে ৷ আমরা নিউ ম্যারেড কাপেল এখন তুমি যদি চিৎকার করো আর বাইরে….” বাকিটা বলার আগে প্রাণো স্মরণের মুখটা চেপে ধরে বলে, ” ফর গট সেক তোমার এই নির্লজ্জ মুখটা বন্ধ রাখো প্লিজ৷ ”

স্মরণ প্রাণোর হাতে চুমু খেয়ে বলে তাহলে মরনিং কিসি দেও৷

” ব্রাশ করে এসো তারপর দিবো৷”

” ইস আমার এখন চাই ৷ দিবে কিনা বলো?”

” বললাম তো ব্রাশ করে আসলে দিবো৷”

” বুঝেছি ভালো কথায় কাজ হবে না৷” বলতে বলতে প্রাণোর ভেজা চুলের ভাজে হাত দিয়ে প্রাণোর ঠোঁটের ভাজে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় স্মরণ৷

চার মিনিট পর স্মরণ প্রাণোর ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দিতে প্রাণো স্মরণের বুকে মুখ লুকায়৷ তা দেখে স্মরণ বলে উঠলো…

” আল্লাহ দুই দুইবার বিয়ে করা বউ এখনো একটা চুমুতে এতো লজ্জা পায় তাহলে এর পর আরো যা যা করবো তারপর কি হবে তোমার ? ও বউ বলো বলো?” বলে হাসতে লাগলো স্মরণ আর এদিকে প্রাণো লজ্জা পেয়ে স্মরণের বুকে দুম দাম কিল মারতে লাগলো…

” অসভ্য নির্লজ্জ ছেলে মুখে কিছু আটকায় না তাই না?”

স্মরণ আরো কিছু প্রাণোকে বলতে যায় তার আগে দরজায় নক পরে , তখন স্মরণ প্রাণোকে ছেড়ে দিয়ে বলে ,” আমি ওয়াশরুমে যাচ্ছি৷”

স্মরণ ওয়াশরুমে তার কাপড় নিয়ে চলে যাওয়ার পর প্রাণো গিয়ে দরজা খুলতে দেখে প্রিয়া হাতে শাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে৷

” ভিতরে আয়”

” আপু একি তুই কি পড়েছিস?”

” দেখতে পাচ্ছিস না ট্রাউজার আর শার্ট৷” বিরক্ত হয়ে বললো প্রাণো…

” আপু মামুনি তোর জন্য এই শাড়িটা পাঠিয়েছে৷ আর আপু তুই কি আমার উপর বিরক্ত?”

” বুঝেছিস তাহলে! প্রিয়ু তোর কি মাথায় একটুও বুদ্ধি নেই৷ কাল যখন আসলি তখন আমার লাগেজ টা নিয়ে আসলি না কেন? লাগেজ টা যদি কাল নিয়ে আসতি তাহলে এখন আমাকে এগুলো পড়তে হতো?”

” স্যরিরে আপু আমার মাথায় ছিলো না৷ সকালে দাভাই আমাকে কল করে বলেছে ড্রাইভার কে দিয়ে তোর লাগেজ টা পাঠিয়ে দিবে৷”

” ঠিক আছে শাড়িটা আমায় দে আমি পড়েনি আগে৷”

” ঠিক আছে তুই শাড়িটা পরে নে আমি বাই দাড়াচ্ছি ৷”

” ঠিক আছে”

প্রিয়া বাইরে দাড়ানোর পরে প্রাণো দ্রুত ব্লাউজ পেটিকোট পড়ে শাড়িটা পড়ে নেয়৷ লাল টকটকে জামদানি শাড়ি ৷ ফর্সা শরীরে শাড়িটা যেন আরো ফুটে উঠেছে৷ শাড়ি পড়া শেষ হতেই প্রিয়াকে রুমে আসতে বলে ৷ প্রিয়া রুমে ঢুকার সময় হাতে একটা বক্স নিয়ে ঢুকে৷

” তোর হাতে এটা কিসের বক্স?”

” সব জানবি তার আগে এখানে বস প্লিজ অনেক দেরি হয়ে গেছে ৷ মামুনি তোকে রেডি করিয়ে নিচে নিয়ে যেতে বললো৷”

প্রাণো আর কথা বাড়ায় না৷ ঝটপট প্রাণোর দু’হাতে স্বর্নের কয়েক গোছা চুড়ি পড়িয়ে দিলো গলায় একটা হার সাথে সোনার চেইন৷ কানে ঝুমকো ৷ শাড়ির সাথে গহনা গুলো বেশ সুন্দর দেখতে লাগছে৷ প্রিয়া দ্রুত প্রাণোর চুল গুলো ভালো করে তোয়ালে দিয়ে মুছে দিয়ে চুলের মাঝখানে সিঁথি কেটে দিয়ে চুল আচড়ে দিলো৷ তারপর বক্স থেকে নিজের কাজল টা বের করে সুন্দর করে প্রাণোর নীল চোখ জোড়ায় পড়িয়ে দিয়ে ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপগ্লোস লাগিয়ে দিলো৷ প্রাণো এমনিতে সুন্দর তাই আর মুখে কোন মেকাপ দিলো না৷ প্রাণো মুখে কোন ক্রিম ইউজ করে না তাই আর ক্রিম লাগিয়ে দিলো না প্রিয়া ৷

” আপুরে তোরে যা লাগছে না ৷ আমি নিজেই তো ফিদা হয়ে গেছি৷”

” প্রিয়ু ফাজলামি রাখ আর নিচে চল৷”

” দুলাভাই?”

” ওয়াশরুমে! মানে শাওয়ার নিচ্ছে? আপু তোদের বাসর টা কেমন কাটলো? রোমান্স হলো খুব তাই না?” দাতঁ কেলিয়ে বললো প্রিয়া…

” মার খাবি ফাজিল মেয়ে৷ আমি তোর বড় বোন ভুলে যাচ্ছিস কেন?”

” হু শুধু বোন নয় বড় জা ও ”

” তাহলে !এই প্রশ্ন আমি তোকে করতে পারি তুই না গাধি কথাকার৷”

” হু” মুখ ভার করে জবাব দিলো প্রিয়া..

” হয়েছে আর ড্রামা করতে হবে না নিচে চল৷”

” ঠিক আছে চল নিচে যাই সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে৷”

“হুম চল”

সাজিত মিহু সাগর নিলয় আকাশ স্মিতা ঐশী সাফা ডাইনিং টেবিলে বসে বাকিদের জন্য অপেক্ষা করছিলো৷ প্রিয়া প্রাণোকে নিয়ে নিচে নামতে নামতে বলে উঠলো , ” মামুনি তোমার বড় ছেলের বউকে নিয়ে এসেছি কই গো তুমি?”

প্রিয়ার কথা প্রত্যেকের কানে পৌছানো মাত্রই সবাই সিঁড়ির দিকে তাকাতে প্রাণোকে দেখে হ্যাঁ হয়ে গেল৷ মিহু সাজিত সাথে বাকি ছেলেদের তো প্রাণোর উপর থেকে চোখ সরছেই না৷ তা দেখে প্রিয়া গলা খাকাড়ি দিয়ে বলে উঠলো ……….
.
.
.
#চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here