গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া পর্ব ৪৪+শেষ পর্ব

#গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া
#লেখায়_ফারহানা_ছবি
#পর্ব_৪৪
[শেষ পর্বের ১ম অংশ]
.
.
🦋
এলিনার জ্ঞান ফিরে আসতে চোখ মেলে তাকিয়ে নিজেকে শক্ত দরি ধারা বাধা অবস্থায় আবিষ্কার করে নিজেকে, এলিনা নিজেকে এমন বাধা অবস্থায় দেখে হিংস্রতা চোখে মুখে ফুটে ওঠে৷ এলিনা চারিদিকে তাকিয়ে নিজেকে ল্যাবে দেখে চমকে ওঠে এলিনা ৷ এলিনার বুঝতে আর বাকি নেই তাকে এয়ারপোর্ট থেকে কে কিডন্যাপ করেছে….

এলিনা ক্ষিপ্ত হয়ে হুংকার ছেড়ে বলে,” স্মরণণণণ…….”

হুট করে স্মরণ এলিনার সামনে দাড়িয়ে বলে, ” স্যাটয়াপ ইউ ইডিয়ট গার্ল ৷ ”

” হাউ ডেয়ার ইউ স্মরণ! আমাকে কিডন্যাপ করার সাহস কি করে হয় তোমার? আমি তোমার সাথে ঠিক কি কি করতে পারি তুমি জানো?”

” ইউ নো ওয়াট মিস এলিনা ৷ আই এ্যাভ সিন ম্যানি লাইক ইউ , বাট ইউ ডোন্ট নো মি ইউ সিলি গার্ল৷ ইফতেকার মাহমুদ স্মরণ এর ক্ষতি করা তোমার মতো সামান্য টেরোরিস্টের পক্ষে সম্ভব বলে মনে হয় মিস এলিনা?”

” আই উইল কিল ইউ স্মরণ৷ তুমি আমার ভাইকে মার্ডার করেছো ৷ ”

এলিনা একটু দম নিয়ে আবার বলে উঠলো, ” স্মরণ আমি তোমাকে ছেড়ে দিবো যদি তুমি ওই ফর্মূলাটা আমার হাতে তুলে দেও৷ আই গড প্রমিজ তুমি একজন বিজনেসম্যান এর আড়ালে একজন গবেষক আমি সেটা কাউকে জানাবো না৷ যদি তুমি ফর্মূলাটা আমার হাতে তুলে দেও৷”

এলিনার কথা শুনে স্মরণ পাগলের মতো হাসতে থাকে৷ এলিনা যেন কোন মজার জোকস বলেছে৷ এলিনা বিরক্তি চোখে তাকিয়ে আছে স্মরণের দিকে, স্মরণ হুট করে হাসি থামিয়ে এলিনার দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে বলল, ” ইফতেকার মাহমুদ স্মরণ কখণো দেশের সাথে বেইমানী করবে না এলিনা ৷ মিস এলিনা এবার মৃত্যুর জন্য তৈরি হও৷ নিজের ভাই এলর্ভাট এর কাছে তোমাকে নিজ দায়িত্বে পৌছে দিচ্ছি ৷ আর বাকি রইল তোর দলের! ওদের কে শেষ করার জন্য আমার টিম তৈরি শুধু মাত্র ওদের দেশে পা রাখার অপেক্ষায় আছি৷ তারপর………”

” হা হা হা আমাকে শেষ করবে করো স্মরণ কিন্তু ওদের কে শেষ করা তোমার পক্ষে সম্ভব নয়৷ ওরা এই বিডি ধ্বংস করে দিবে৷ আর তোমার তৈরি ফর্মূলা ওটাও ওদের হাতে চলে যাবে৷ ”

স্মরণ এলিনার ফালতু বক বক শোনার মতো বিন্দুমাত্র আগ্রহ না থাকায় কোমর থেকে রিভলবার বের করে এলিনার কপালে তাক করে শুট করে দেয়৷ এলিনা শেষ হতেই কয়েকজন লোক ল্যাবে ঢুকে এলিনার লাশটা তুলে নেয়৷ তখন স্মরণ বলে ওঠে ….

” লাশটার এতো ছোট ছোট টুকরো করবে যেন হাত পায়ের ফেস কোনটাই যেন চেনা না যায়৷”

” স্যার আপনি কোন চিন্তা করবেন না৷ মেয়েটার লাশ টুকরো টুকরো করে কুকুরদের খাইয়ে দিবো৷ ”

” দ্যাট’স গ্রেট৷”

” আসছি স্যার!”

” হুম”

স্মরণ চাইলে এলিনাকে টর্চার করে তার দলের বাকিদের নাম জানার চেষ্টা করতে পারে৷ কিন্তু স্মরণ তা করে নি কারণ এলিনা তার দলের বিরুদ্ধে একটা শব্দ বের করবে না৷ এলিনা টেরোরিস্ট দলের একটা গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে আছে ৷ আর তার উপর মহল থেকে এলিনার উপর দায়িত্ব পড়েছিলো স্মরণের থেকে যে কোন মূল্যে ফর্মূলাটা ছিনিয়ে নিতে৷ কিন্তু এলিনা তার বোকামির জন্য আজ নিজের প্রাণ হাড়ালো৷ কোন টেরোরিস্ট প্রতিশোধের নেশায় এতোটা বোকার মতো তার পাতা ফাঁদে পা দিবে এতোটাও এস্পেক্টেড ছিলো না৷

স্মরণ এলিনার ট্রলিব্যাগ থেকে তার ল্যাপটপ আর দু’টো ফোন বের করে নিয়ে চেক করতে থাকে৷ স্মরণ যে আজ টেরোরিস্টের গোপণ সব তথ্য জানতে পারবে এটা নিশ্চিত ৷

অন্যদিকে হসপিটালের বেডে জীবন মাহমুদ শরীরের হাড় সব গলতে শুরু করে দিতে যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকে জীবন মাহমুদ ৷ ডক্টর নার্স কোন ভাবে জীবন মাহমুদ এর শরীরের হাড় গলে যাওয়ার কারণ বুঝতে না পেরে হতবিহ্বল হয়ে জীবন মাহমুদ কে দেখছে৷ কয়েক মিনিটে জীবন মাহমুদ এর শরীর গলে ছোট একটা দলা পেকে গেল৷ বেড শিটে শরীরে শুধু মাত্র কুচকানো চামড়া পড়ে আছে ৷ ডক্টর নার্স তাদের চাকরী জীবনে এই প্রথমবার এমন কোন পেশেন্টকে এভাবে হাড় মাংস গলে মরতে দেখলো৷ তারা প্রত্যেকে যেন শক্টডের ভিতরে আছে৷ তখনি মিহু কেভিনে প্রবেশ করে জীবন মাহমুদ এর এমন করুণ অবস্থা দেখে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেনি ৷ হাউমাউ করে কাদঁতে থাকে ৷ মিহু জীবন মাহমুদ এর কাছে যেতে নিলে নার্স আটকে দেয় মিহুকে….

” ম্যাম ওনার ডেড বডি স্পর্শ করবেন না৷ ওনার পোস্টমোর্টেম হওয়ার পর আপনারা টাচ করতে পারবেন৷”

মিহু আর কিছু বললো না৷ কেভিন থেকে বের হয়ে সাজিত কে কল করে সবটা জানায় ৷ সাজিত নির্বিকার হয়ে সবটা শুনে বলে, ” যে মারা গেছে তাকে নিয়ে এতো ভাবার কিছু নেই মিহু৷ লোকটা মরে গেছে বেঁচে গেছে নয়তো আমি নিজের হাতে খুন করতাম৷”

” ভাইয়া….” চিৎকার করে বললো মিহু৷

” মিহু আমি ব্যাস্ত আছি তোর ভাবির সাথে তাই এই সব ফালতু বিষয় নিয়ে আমাকে ফোন করে বিরক্ত করিস না ৷ পুলিশ আছে তারা সবটা বুঝে নিবে৷”

” স্বার্থপর একটা ” বলে কল কেটে দেয় মিহু৷

জীবন মাহমুদ এর মৃত্যুর খবর নিউজে টেলিকাষ্ট হচ্ছে বিধায় সবাই কিছুক্ষনের মধ্যে সবটা জেনে গেল৷ সাহারা বেগম সকাল থেকে দরজা বন্ধ করে আছে ৷

প্রাণো তার অফিসে বসে খবর টা শুনে তার ঠোঁটের কোনে তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে৷ সিমি RV কণা প্রাণোর ঠোঁটে হাসি দেখে বলে ,” তুই হাসছিস প্রাণো?”(কণা)

প্রাণো কণার কথার উওর না দিয়ে হাসি মুখে বলে ওঠে , ” আগামিকাল তোদের বিয়ে কণা৷ আজ যা শপিং করার করে নে৷ আর সিমি আপু জিজুকে নিয়ে কাজি অফিসে চলে আসবে৷ আগামিকাল ওদের বিয়ে হবে৷ ”

” বিয়ে!” তিনজনে অবাক হয়ে এক সাথে বলে ওঠে৷

” হুম , আগামিকাল বিকেল চারটায় কাজি অফিসে চলে আসবে৷ আর RV কণা তৈরি থাকবে সময় মতো৷”

” কিন্তু আগামিকাল কেন? কণা ফ্যামিলিকে তো জানাতে হবে?”

” ওটা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না RV . ”

” প্রাণো আমার ভিষণ ভয় করছে৷ ”

” ভয়ের কিছু নেই কণা ৷ দেখবি সব ঠিক ঠাক হয়ে যাবে৷”

” দেখা যাক৷”

________________

রাতে প্রাণো বাড়িতে ফিরে দেখে বাড়িতে পুলিশ ৷ সাহারা বেগম পাথরের মতো সোফার এক কোনে বসে আছে৷ প্রাণোর মা নিশিতা বেগম এর ও একি অবস্থা ৷ সাজিত মিহু প্রিয়ার চোখে পানি টলমল করছে ৷ যেন এখুনি টুপ করে পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়বে৷ স্মরণ পুলিশের সাথে কথা বলে জীবন মাহমুদ এর লাশ তাদের মতো করে দাফন কাফনের ব্যবস্থা করতে বলেছে৷ আর কথাটা সাহারা বেগম স্মরণকে বলেছে৷

স্মরণের কথা মতো পুলিশ জীবন মাহমুদ এর অবশিষ্ট শরীরের চামড়া মুখমন্ডল নিয়ে চলে যায়৷

বাড়ি ফাঁকা হতে প্রাণো তার মায়ের পাশে বসে ৷ নিশিতা বেগম প্রাণোর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে ওঠে, ” প্রাণো কাল সকাল হলে আমি ও বাড়িতে ফিরে যাবো৷”

” ঠিক আছে আম্মু তুমি যা চাইবে কিন্তু তার আগে তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে৷ তুমি আমার সাথে তোমার রুমে চলো ওখানে বলবো৷”

” হুম”

প্রাণো তার মা’কে ধরে গেস্ট রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়৷

” আম্মু আমি তোমার কাছে একটা অনুমতি চাই?”

” বলে ফেলো প্রাণো৷”

” আম্মু তুমি তো এখন বাড়ির পরিবেশটা দেখছো? দাভাই কিন্তু প্রচন্ড ভেঙে পড়েছে ৷ আর ওবাড়িতে এখন আমি বা প্রাণো কেউ যেতে পারবো না তাই বলছিলাম দাভাই যে মেয়েটাকে ভালোবাসে তার সাথে যদি দাভাইয়ের বিয়েটা দিয়ে দেও তাহলে আমার মনে হয় দাভাই ভাবির জন্য হলেও নিজেকে সামলে নিবে৷”

” সাদ কি রাজি হবে এখন বিয়ে করতে? আর এই পরিস্তিতিতে বিয়ে কি করে সম্ভব?”

” আম্মু চাইলে সব সম্ভব ৷ দাভাই মৌ নামের একটি মেয়েকে ভালোবাসে ৷ আম্মু বিশ্বাস করো মেয়েটা খুব ভালো দাভাই কে ভিষণ ভালোবাসে ৷ আমি চাইছিলাম আগামিকাল ওদের কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে দিতে৷ ”

” মেয়ে বাবা মা কি রাজি হবে? যখন জানতে পারবে একজন দেশদ্রোহীর ছেলে সাদ৷”

” তারা সবটাই জানে , আর এটাও জানে সাদ এই সবের মাঝে জড়িত নেই৷ আর আমি ওনাদের সাথে কথা বলেছি ওনাদের কোন আপত্তি নেই৷”

” তাহলে দেরি না করে বিয়েটা দিয়ে দেও৷”

” তুমিও কাল থাকবে আম্মু নাহলে দাভাই বিয়ে করবে না এটা আমি খুব ভালো করে জানি৷”

” চিন্তা নেই আমি থাকবো কাল৷ ”

” থ্যান্কিউ আম্মু ৷ তুমি বসো আমি চেন্জ করে এসে ডিনার রেডি করছি ৷”

” ঠিক আছে৷”

রাতে ফোন করে সব এরেন্জমেন্ট করে রাখে প্রাণো তবে তা সাদমানের অজান্তে, সাদমান এখনো জানে না আগামিকাল কি হতে যাচ্ছে তার সাথে,

পরের দিন প্রাণো সাদমান কে জোর করে পাজ্ঞাবি পড়িয়ে রেডি করিয়ে নিয়ে স্মরণের বন্ধুর সাথে ঐশী স্মিতা সাফা কে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে৷ প্রিয়া সাজিত মিহু নিশিতা বেগম আলাদা গাড়িতে প্রাণোদের পেছনে আসতে লাগে৷

গাড়ি কাজী অফিসের সামনে দাড় করাতে স্মরণ সাগর নিলয় আকাশ স্মিতা সাফা ঐশী চমকে যায়৷

” প্রাণো আমরা কাজী অফিসে যাচ্ছি কেন?”(সাফা)

” বলদের মতো কথা বলিস না সাফা ৷ কাজী অফিসে মানুষ কি করতে আসে? ”

” বিয়ে করতে৷”

” রাইট, এখন চুপ কর আর ভিতরে চল৷”

কাজী অফিসে ঢুকে প্রাণো সাগর আর স্মিতাকে চেয়ারে বসিয়ে কাজীকে বলে, ” আঙ্কেল এই যে প্রথম কনে বউ এদের প্রথমে বিয়ে হবে৷”

প্রাণোর কথা শুনে প্রত্যেকে ভয়ংকর ভাবে চমকে ওঠে৷

” বিয়ে! ভাবি কি হচ্ছে এই সব?”(সাগর)

” বিয়ে হবে ৷ কথা কম বলে দ্রুত বিয়েটা কম্পিলিট করুন ৷ আর আপনাদের ফ্যামিলি নিয়ে চিন্তা নেইকারণ ওইদিকে তাকিয়ে দেখুন একবার,”

প্রাণোর কথা মতো সবার চোখ দরজার দিকে তাকাতে দেখে সবার ফ্যামিলি থেকে কেউ না কেউ এসেছে৷ প্রত্যেকের বুঝতে আর বাকি নেই এই সব কার প্লান৷ স্মরণ সত্যি আজ ভিষণ রকমের অবাক হয়েছে৷ প্রাণো একা হাতে সবটা খুব সুন্দর ভাবে ম্যানেজ করেছে৷

একে একে সাগর স্মিতা, নিলয় সাফা, আকাশ ঐশী , বিয়েটা হয়ে গেল৷ প্রাণো সব শেষে সাদমানকে চেয়ারে বসাতে সাদমান বড় বড় চোখ করে তাকায় প্রাণোর দিকে , সাদমান প্রাণোকে চোখ রাঙানিতে এতোটাই ব্যস্ত ছিলো যে তার পাশের চেয়ারে লাল টুকটুকে বেনারসী শাড়ি পড়ে নতুন বধু সেজে বসে আছে কেউ সেদিকে সাদমানের নজর নেই৷

প্রাণো তার দাঁত গুলো বের করে দিয়ে বলে, ” দাভাই একবার তোর পাশের চেয়ারে তাকিয়ে দেখ কে বসে আছে ৷ যদি তোর পছন্দ না হয় কথা দিচ্ছি তোর বিয়ে আমি হতে দিবো না৷ আর প্লিজ এতো বড় বড় চোখ করে তাকাস না প্লিজ জানিস তো আমার চুড়ুই পাখির মতো কলিজা ”

সাদমান প্রাণোর পিঞ্চ মারা করা শুনে বিরক্ত হয়ে পাশে ঘুরে তাকিয়ে মৌ কে দেখে হতবাক সাদমান৷ তার পাশে মৌকে বিয়ের সাজে এভাবে দেখবে তা একদমি আশা করেনি৷ মৌ সাদের দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে দিয়ে উরন্ত চুমু ছুড়ে দিলো তা দেখে সাদমানের কাশি উঠে গেল৷

সাদমানের অবস্থা দেখে মিটি মিটি হাসছে সবাই৷ সাদমান প্রাণোর দিকে তাকিয়ে প্রাণোর গাল দুটো টেনে দিয়ে বলে, ” থ্যান্কিউ বনু ৷”

“হয়েছে হয়েছে আর থ্যান্কিউ দিতে হবে না দ্রুত বিয়ে করে আমাদের উদ্ধার কর প্লিজ সবাই অপেক্ষা করছে ৷”

সাদমান মৌয়ের দিকে বাঁকা হাসি দিয়ে তিন বার কবুল বলে কাবিন নামায় সাইন করে দিলো একটুও সময় নষ্ট না করে৷

এদিকে মৌ কিছুটা সময় নিয়ে কবুল বলে সাইন করে দেয়৷

কিছুক্ষণ পর সিমি শান RV কণা আর তাদের ফ্যামিলি এসে হাজির হয়৷ সাদমান আর মৌয়ের পর RV আর কণার বিয়েটা হয়ে যায়৷

সুন্দর ভাবে বিয়েটা সম্পূর্ন হয়ে যেতে প্রাণো যেতে নিলে স্মরণ প্রাণোর হাতটা ধরে কাজীর সামনে বসে বলে, ” কাজী সাহেব আমরাও বিয়ে করবো৷”

স্মরণের কথা শুনে প্রাণো চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে, ” আর কতোবার আমাকে বিয়ে করবে স্মরণ?”

” হাজার বার করবো ৷ ভালোবেসে এক বউকে তিন তিনবার বিয়ে করেছি ৷ এটা ইতিহাসের পাতায় যাতে জ্বল জ্বল করে লেখা হয়ে থাকে সেটারই ব্যবস্থা করছি প্রাণপাখি৷”

স্মরণ আর প্রাণোর বিয়েটা তৃতীয় বারের মতো আবার হয়ে গেল৷ তখন সাজিত প্রিয়ার হাত টেনে ধরে নিয়ে যায় স্মরণ আর প্রাণোর কাছে….

” ভাইয়া এটা কিন্তু ঠিক হলো না৷ সবাই বিয়ে করে নিলো তুমি তো তোমার বউকে তিন তিনবার বিয়ে করলে আমি কেন বাদ যাবো?”

স্মরণ সাজিতের মাথায় হাত রেখে বলে, ” তোকে কে বারণ করেছে বিয়ে করতে হু? তুই ও আর একবার আমার সালি কাম বোনকে বিয়ে করে নে ৷ কাজী সাহেব এদের ও আজ আবার বিয়ে হবে৷ ”

এর মাঝে শান বলে ওঠে, “স্মরণ তোমরা যখন তৃতীয় আর সাজিত দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারে তাহলে আমি কেন পারবো না?”

” হু শখ কতো ঢং যত্যসব” ভেংচি কেটে মুখ ঘুড়িয়ে ফেলে সিমি৷ সিমির কথা শুনে শান বাঁকা হেসে সিমির হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে কাজীকে বিয়ে পড়াতে বলে ৷

কাজী সাহেব এক গ্লাস পানি খেয়ে বলে, ” বাবা এমন বিয়ে আমি কখনো দেখেনি আর না করিয়েছি৷ এক সাথে আট খানা বিয়ে আল্লাহ৷ আপনারা বসুন বসুন ৷”

সাজিত প্রিয়া আর শান সিমি চারজনে নতুন করে শুরু করার জন্য আজ আবারও বিয়ে করতে চাইছে ৷ প্রিয়াও প্রচন্ড খুশি সবটা এতো সুন্দর ভাবে হবে কখনো ভাবেনি ৷ সাজিত তার ভালোবাসা তার কাছে ফিরে এসেছে ৷ আজ দ্বিতীয়বারের মতো তারা আবার বিয়ে করছে৷

সাজিত প্রিয়া দুজনের বিয়েটা হওয়ার পর পর প্রাণো সবার উদ্দেশ্য বলে , গাইজ সবার জন্য সারপ্রাইজ আছে ৷ আর সারপ্রাইজ টা পেতে হলে সবাইকে রয়্যালহোটেলে যেতে হবে ৷ সো গাইজ দেরি না করে যে যার নতুন বউকে নিয়ে বেড়িয়ে পড় আর শ্রদ্ধেয় আঙ্কেল আন্টি গন আপনারা আমার সাথে আসুন৷

তিনটে গাড়ি করে সাদমান মৌ , সাজিত মিহু, সাগর স্মিতা , সাফা নিলয় , আকাশ ঐশী RV কণা চলে গেল৷ আর বাকি গাড়ি গুলো স্মরণ প্রাণো সবাইকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট নিয়ে গিয়ে খাইয়ে পাঠিয়ে দেয়৷ সবাই চলে যেতে স্মরণ হুট করে প্রাণো চোখ দুটো পেছন থেকে কালো কাপড় দিয়ে বেধে দেয়৷ প্রাণো কিছু বলতে নিলে স্মরণ প্রাণোর ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে থামিয়ে বলে,” হুসসস কোন কথা নয়৷ সবাইকে তো সারপ্রাইজ দিলে এখন আমার তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার পালা৷” কথাটা বলে প্রাণোকে কোলে তুলে নেয় স্মরণ…….
.
.#গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া
#লেখায়_ফারহানা_ছবি
#পর্ব_৪৪
[শেষ পর্বের ১ম অংশ]
.
.
🦋
এলিনার জ্ঞান ফিরে আসতে চোখ মেলে তাকিয়ে নিজেকে শক্ত দরি ধারা বাধা অবস্থায় আবিষ্কার করে নিজেকে, এলিনা নিজেকে এমন বাধা অবস্থায় দেখে হিংস্রতা চোখে মুখে ফুটে ওঠে৷ এলিনা চারিদিকে তাকিয়ে নিজেকে ল্যাবে দেখে চমকে ওঠে এলিনা ৷ এলিনার বুঝতে আর বাকি নেই তাকে এয়ারপোর্ট থেকে কে কিডন্যাপ করেছে….

এলিনা ক্ষিপ্ত হয়ে হুংকার ছেড়ে বলে,” স্মরণণণণ…….”

হুট করে স্মরণ এলিনার সামনে দাড়িয়ে বলে, ” স্যাটয়াপ ইউ ইডিয়ট গার্ল ৷ ”

” হাউ ডেয়ার ইউ স্মরণ! আমাকে কিডন্যাপ করার সাহস কি করে হয় তোমার? আমি তোমার সাথে ঠিক কি কি করতে পারি তুমি জানো?”

” ইউ নো ওয়াট মিস এলিনা ৷ আই এ্যাভ সিন ম্যানি লাইক ইউ , বাট ইউ ডোন্ট নো মি ইউ সিলি গার্ল৷ ইফতেকার মাহমুদ স্মরণ এর ক্ষতি করা তোমার মতো সামান্য টেরোরিস্টের পক্ষে সম্ভব বলে মনে হয় মিস এলিনা?”

” আই উইল কিল ইউ স্মরণ৷ তুমি আমার ভাইকে মার্ডার করেছো ৷ ”

এলিনা একটু দম নিয়ে আবার বলে উঠলো, ” স্মরণ আমি তোমাকে ছেড়ে দিবো যদি তুমি ওই ফর্মূলাটা আমার হাতে তুলে দেও৷ আই গড প্রমিজ তুমি একজন বিজনেসম্যান এর আড়ালে একজন গবেষক আমি সেটা কাউকে জানাবো না৷ যদি তুমি ফর্মূলাটা আমার হাতে তুলে দেও৷”

এলিনার কথা শুনে স্মরণ পাগলের মতো হাসতে থাকে৷ এলিনা যেন কোন মজার জোকস বলেছে৷ এলিনা বিরক্তি চোখে তাকিয়ে আছে স্মরণের দিকে, স্মরণ হুট করে হাসি থামিয়ে এলিনার দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে বলল, ” ইফতেকার মাহমুদ স্মরণ কখণো দেশের সাথে বেইমানী করবে না এলিনা ৷ মিস এলিনা এবার মৃত্যুর জন্য তৈরি হও৷ নিজের ভাই এলর্ভাট এর কাছে তোমাকে নিজ দায়িত্বে পৌছে দিচ্ছি ৷ আর বাকি রইল তোর দলের! ওদের কে শেষ করার জন্য আমার টিম তৈরি শুধু মাত্র ওদের দেশে পা রাখার অপেক্ষায় আছি৷ তারপর………”

” হা হা হা আমাকে শেষ করবে করো স্মরণ কিন্তু ওদের কে শেষ করা তোমার পক্ষে সম্ভব নয়৷ ওরা এই বিডি ধ্বংস করে দিবে৷ আর তোমার তৈরি ফর্মূলা ওটাও ওদের হাতে চলে যাবে৷ ”

স্মরণ এলিনার ফালতু বক বক শোনার মতো বিন্দুমাত্র আগ্রহ না থাকায় কোমর থেকে রিভলবার বের করে এলিনার কপালে তাক করে শুট করে দেয়৷ এলিনা শেষ হতেই কয়েকজন লোক ল্যাবে ঢুকে এলিনার লাশটা তুলে নেয়৷ তখন স্মরণ বলে ওঠে ….

” লাশটার এতো ছোট ছোট টুকরো করবে যেন হাত পায়ের ফেস কোনটাই যেন চেনা না যায়৷”

” স্যার আপনি কোন চিন্তা করবেন না৷ মেয়েটার লাশ টুকরো টুকরো করে কুকুরদের খাইয়ে দিবো৷ ”

” দ্যাট’স গ্রেট৷”

” আসছি স্যার!”

” হুম”

স্মরণ চাইলে এলিনাকে টর্চার করে তার দলের বাকিদের নাম জানার চেষ্টা করতে পারে৷ কিন্তু স্মরণ তা করে নি কারণ এলিনা তার দলের বিরুদ্ধে একটা শব্দ বের করবে না৷ এলিনা টেরোরিস্ট দলের একটা গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে আছে ৷ আর তার উপর মহল থেকে এলিনার উপর দায়িত্ব পড়েছিলো স্মরণের থেকে যে কোন মূল্যে ফর্মূলাটা ছিনিয়ে নিতে৷ কিন্তু এলিনা তার বোকামির জন্য আজ নিজের প্রাণ হাড়ালো৷ কোন টেরোরিস্ট প্রতিশোধের নেশায় এতোটা বোকার মতো তার পাতা ফাঁদে পা দিবে এতোটাও এস্পেক্টেড ছিলো না৷

স্মরণ এলিনার ট্রলিব্যাগ থেকে তার ল্যাপটপ আর দু’টো ফোন বের করে নিয়ে চেক করতে থাকে৷ স্মরণ যে আজ টেরোরিস্টের গোপণ সব তথ্য জানতে পারবে এটা নিশ্চিত ৷

অন্যদিকে হসপিটালের বেডে জীবন মাহমুদ শরীরের হাড় সব গলতে শুরু করে দিতে যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকে জীবন মাহমুদ ৷ ডক্টর নার্স কোন ভাবে জীবন মাহমুদ এর শরীরের হাড় গলে যাওয়ার কারণ বুঝতে না পেরে হতবিহ্বল হয়ে জীবন মাহমুদ কে দেখছে৷ কয়েক মিনিটে জীবন মাহমুদ এর শরীর গলে ছোট একটা দলা পেকে গেল৷ বেড শিটে শরীরে শুধু মাত্র কুচকানো চামড়া পড়ে আছে ৷ ডক্টর নার্স তাদের চাকরী জীবনে এই প্রথমবার এমন কোন পেশেন্টকে এভাবে হাড় মাংস গলে মরতে দেখলো৷ তারা প্রত্যেকে যেন শক্টডের ভিতরে আছে৷ তখনি মিহু কেভিনে প্রবেশ করে জীবন মাহমুদ এর এমন করুণ অবস্থা দেখে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেনি ৷ হাউমাউ করে কাদঁতে থাকে ৷ মিহু জীবন মাহমুদ এর কাছে যেতে নিলে নার্স আটকে দেয় মিহুকে….

” ম্যাম ওনার ডেড বডি স্পর্শ করবেন না৷ ওনার পোস্টমোর্টেম হওয়ার পর আপনারা টাচ করতে পারবেন৷”

মিহু আর কিছু বললো না৷ কেভিন থেকে বের হয়ে সাজিত কে কল করে সবটা জানায় ৷ সাজিত নির্বিকার হয়ে সবটা শুনে বলে, ” যে মারা গেছে তাকে নিয়ে এতো ভাবার কিছু নেই মিহু৷ লোকটা মরে গেছে বেঁচে গেছে নয়তো আমি নিজের হাতে খুন করতাম৷”

” ভাইয়া….” চিৎকার করে বললো মিহু৷

” মিহু আমি ব্যাস্ত আছি তোর ভাবির সাথে তাই এই সব ফালতু বিষয় নিয়ে আমাকে ফোন করে বিরক্ত করিস না ৷ পুলিশ আছে তারা সবটা বুঝে নিবে৷”

” স্বার্থপর একটা ” বলে কল কেটে দেয় মিহু৷

জীবন মাহমুদ এর মৃত্যুর খবর নিউজে টেলিকাষ্ট হচ্ছে বিধায় সবাই কিছুক্ষনের মধ্যে সবটা জেনে গেল৷ সাহারা বেগম সকাল থেকে দরজা বন্ধ করে আছে ৷

প্রাণো তার অফিসে বসে খবর টা শুনে তার ঠোঁটের কোনে তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে৷ সিমি RV কণা প্রাণোর ঠোঁটে হাসি দেখে বলে ,” তুই হাসছিস প্রাণো?”(কণা)

প্রাণো কণার কথার উওর না দিয়ে হাসি মুখে বলে ওঠে , ” আগামিকাল তোদের বিয়ে কণা৷ আজ যা শপিং করার করে নে৷ আর সিমি আপু জিজুকে নিয়ে কাজি অফিসে চলে আসবে৷ আগামিকাল ওদের বিয়ে হবে৷ ”

” বিয়ে!” তিনজনে অবাক হয়ে এক সাথে বলে ওঠে৷

” হুম , আগামিকাল বিকেল চারটায় কাজি অফিসে চলে আসবে৷ আর RV কণা তৈরি থাকবে সময় মতো৷”

” কিন্তু আগামিকাল কেন? কণা ফ্যামিলিকে তো জানাতে হবে?”

” ওটা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না RV . ”

” প্রাণো আমার ভিষণ ভয় করছে৷ ”

” ভয়ের কিছু নেই কণা ৷ দেখবি সব ঠিক ঠাক হয়ে যাবে৷”

” দেখা যাক৷”

________________

রাতে প্রাণো বাড়িতে ফিরে দেখে বাড়িতে পুলিশ ৷ সাহারা বেগম পাথরের মতো সোফার এক কোনে বসে আছে৷ প্রাণোর মা নিশিতা বেগম এর ও একি অবস্থা ৷ সাজিত মিহু প্রিয়ার চোখে পানি টলমল করছে ৷ যেন এখুনি টুপ করে পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়বে৷ স্মরণ পুলিশের সাথে কথা বলে জীবন মাহমুদ এর লাশ তাদের মতো করে দাফন কাফনের ব্যবস্থা করতে বলেছে৷ আর কথাটা সাহারা বেগম স্মরণকে বলেছে৷

স্মরণের কথা মতো পুলিশ জীবন মাহমুদ এর অবশিষ্ট শরীরের চামড়া মুখমন্ডল নিয়ে চলে যায়৷

বাড়ি ফাঁকা হতে প্রাণো তার মায়ের পাশে বসে ৷ নিশিতা বেগম প্রাণোর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে ওঠে, ” প্রাণো কাল সকাল হলে আমি ও বাড়িতে ফিরে যাবো৷”

” ঠিক আছে আম্মু তুমি যা চাইবে কিন্তু তার আগে তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে৷ তুমি আমার সাথে তোমার রুমে চলো ওখানে বলবো৷”

” হুম”

প্রাণো তার মা’কে ধরে গেস্ট রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়৷

” আম্মু আমি তোমার কাছে একটা অনুমতি চাই?”

” বলে ফেলো প্রাণো৷”

” আম্মু তুমি তো এখন বাড়ির পরিবেশটা দেখছো? দাভাই কিন্তু প্রচন্ড ভেঙে পড়েছে ৷ আর ওবাড়িতে এখন আমি বা প্রাণো কেউ যেতে পারবো না তাই বলছিলাম দাভাই যে মেয়েটাকে ভালোবাসে তার সাথে যদি দাভাইয়ের বিয়েটা দিয়ে দেও তাহলে আমার মনে হয় দাভাই ভাবির জন্য হলেও নিজেকে সামলে নিবে৷”

” সাদ কি রাজি হবে এখন বিয়ে করতে? আর এই পরিস্তিতিতে বিয়ে কি করে সম্ভব?”

” আম্মু চাইলে সব সম্ভব ৷ দাভাই মৌ নামের একটি মেয়েকে ভালোবাসে ৷ আম্মু বিশ্বাস করো মেয়েটা খুব ভালো দাভাই কে ভিষণ ভালোবাসে ৷ আমি চাইছিলাম আগামিকাল ওদের কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে দিতে৷ ”

” মেয়ে বাবা মা কি রাজি হবে? যখন জানতে পারবে একজন দেশদ্রোহীর ছেলে সাদ৷”

” তারা সবটাই জানে , আর এটাও জানে সাদ এই সবের মাঝে জড়িত নেই৷ আর আমি ওনাদের সাথে কথা বলেছি ওনাদের কোন আপত্তি নেই৷”

” তাহলে দেরি না করে বিয়েটা দিয়ে দেও৷”

” তুমিও কাল থাকবে আম্মু নাহলে দাভাই বিয়ে করবে না এটা আমি খুব ভালো করে জানি৷”

” চিন্তা নেই আমি থাকবো কাল৷ ”

” থ্যান্কিউ আম্মু ৷ তুমি বসো আমি চেন্জ করে এসে ডিনার রেডি করছি ৷”

” ঠিক আছে৷”

রাতে ফোন করে সব এরেন্জমেন্ট করে রাখে প্রাণো তবে তা সাদমানের অজান্তে, সাদমান এখনো জানে না আগামিকাল কি হতে যাচ্ছে তার সাথে,

পরের দিন প্রাণো সাদমান কে জোর করে পাজ্ঞাবি পড়িয়ে রেডি করিয়ে নিয়ে স্মরণের বন্ধুর সাথে ঐশী স্মিতা সাফা কে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে৷ প্রিয়া সাজিত মিহু নিশিতা বেগম আলাদা গাড়িতে প্রাণোদের পেছনে আসতে লাগে৷

গাড়ি কাজী অফিসের সামনে দাড় করাতে স্মরণ সাগর নিলয় আকাশ স্মিতা সাফা ঐশী চমকে যায়৷

” প্রাণো আমরা কাজী অফিসে যাচ্ছি কেন?”(সাফা)

” বলদের মতো কথা বলিস না সাফা ৷ কাজী অফিসে মানুষ কি করতে আসে? ”

” বিয়ে করতে৷”

” রাইট, এখন চুপ কর আর ভিতরে চল৷”

কাজী অফিসে ঢুকে প্রাণো সাগর আর স্মিতাকে চেয়ারে বসিয়ে কাজীকে বলে, ” আঙ্কেল এই যে প্রথম কনে বউ এদের প্রথমে বিয়ে হবে৷”

প্রাণোর কথা শুনে প্রত্যেকে ভয়ংকর ভাবে চমকে ওঠে৷

” বিয়ে! ভাবি কি হচ্ছে এই সব?”(সাগর)

” বিয়ে হবে ৷ কথা কম বলে দ্রুত বিয়েটা কম্পিলিট করুন ৷ আর আপনাদের ফ্যামিলি নিয়ে চিন্তা নেইকারণ ওইদিকে তাকিয়ে দেখুন একবার,”

প্রাণোর কথা মতো সবার চোখ দরজার দিকে তাকাতে দেখে সবার ফ্যামিলি থেকে কেউ না কেউ এসেছে৷ প্রত্যেকের বুঝতে আর বাকি নেই এই সব কার প্লান৷ স্মরণ সত্যি আজ ভিষণ রকমের অবাক হয়েছে৷ প্রাণো একা হাতে সবটা খুব সুন্দর ভাবে ম্যানেজ করেছে৷

একে একে সাগর স্মিতা, নিলয় সাফা, আকাশ ঐশী , বিয়েটা হয়ে গেল৷ প্রাণো সব শেষে সাদমানকে চেয়ারে বসাতে সাদমান বড় বড় চোখ করে তাকায় প্রাণোর দিকে , সাদমান প্রাণোকে চোখ রাঙানিতে এতোটাই ব্যস্ত ছিলো যে তার পাশের চেয়ারে লাল টুকটুকে বেনারসী শাড়ি পড়ে নতুন বধু সেজে বসে আছে কেউ সেদিকে সাদমানের নজর নেই৷

প্রাণো তার দাঁত গুলো বের করে দিয়ে বলে, ” দাভাই একবার তোর পাশের চেয়ারে তাকিয়ে দেখ কে বসে আছে ৷ যদি তোর পছন্দ না হয় কথা দিচ্ছি তোর বিয়ে আমি হতে দিবো না৷ আর প্লিজ এতো বড় বড় চোখ করে তাকাস না প্লিজ জানিস তো আমার চুড়ুই পাখির মতো কলিজা ”

সাদমান প্রাণোর পিঞ্চ মারা করা শুনে বিরক্ত হয়ে পাশে ঘুরে তাকিয়ে মৌ কে দেখে হতবাক সাদমান৷ তার পাশে মৌকে বিয়ের সাজে এভাবে দেখবে তা একদমি আশা করেনি৷ মৌ সাদের দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে দিয়ে উরন্ত চুমু ছুড়ে দিলো তা দেখে সাদমানের কাশি উঠে গেল৷

সাদমানের অবস্থা দেখে মিটি মিটি হাসছে সবাই৷ সাদমান প্রাণোর দিকে তাকিয়ে প্রাণোর গাল দুটো টেনে দিয়ে বলে, ” থ্যান্কিউ বনু ৷”

“হয়েছে হয়েছে আর থ্যান্কিউ দিতে হবে না দ্রুত বিয়ে করে আমাদের উদ্ধার কর প্লিজ সবাই অপেক্ষা করছে ৷”

সাদমান মৌয়ের দিকে বাঁকা হাসি দিয়ে তিন বার কবুল বলে কাবিন নামায় সাইন করে দিলো একটুও সময় নষ্ট না করে৷

এদিকে মৌ কিছুটা সময় নিয়ে কবুল বলে সাইন করে দেয়৷

কিছুক্ষণ পর সিমি শান RV কণা আর তাদের ফ্যামিলি এসে হাজির হয়৷ সাদমান আর মৌয়ের পর RV আর কণার বিয়েটা হয়ে যায়৷

সুন্দর ভাবে বিয়েটা সম্পূর্ন হয়ে যেতে প্রাণো যেতে নিলে স্মরণ প্রাণোর হাতটা ধরে কাজীর সামনে বসে বলে, ” কাজী সাহেব আমরাও বিয়ে করবো৷”

স্মরণের কথা শুনে প্রাণো চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে, ” আর কতোবার আমাকে বিয়ে করবে স্মরণ?”

” হাজার বার করবো ৷ ভালোবেসে এক বউকে তিন তিনবার বিয়ে করেছি ৷ এটা ইতিহাসের পাতায় যাতে জ্বল জ্বল করে লেখা হয়ে থাকে সেটারই ব্যবস্থা করছি প্রাণপাখি৷”

স্মরণ আর প্রাণোর বিয়েটা তৃতীয় বারের মতো আবার হয়ে গেল৷ তখন সাজিত প্রিয়ার হাত টেনে ধরে নিয়ে যায় স্মরণ আর প্রাণোর কাছে….

” ভাইয়া এটা কিন্তু ঠিক হলো না৷ সবাই বিয়ে করে নিলো তুমি তো তোমার বউকে তিন তিনবার বিয়ে করলে আমি কেন বাদ যাবো?”

স্মরণ সাজিতের মাথায় হাত রেখে বলে, ” তোকে কে বারণ করেছে বিয়ে করতে হু? তুই ও আর একবার আমার সালি কাম বোনকে বিয়ে করে নে ৷ কাজী সাহেব এদের ও আজ আবার বিয়ে হবে৷ ”

এর মাঝে শান বলে ওঠে, “স্মরণ তোমরা যখন তৃতীয় আর সাজিত দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারে তাহলে আমি কেন পারবো না?”

” হু শখ কতো ঢং যত্যসব” ভেংচি কেটে মুখ ঘুড়িয়ে ফেলে সিমি৷ সিমির কথা শুনে শান বাঁকা হেসে সিমির হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে কাজীকে বিয়ে পড়াতে বলে ৷

কাজী সাহেব এক গ্লাস পানি খেয়ে বলে, ” বাবা এমন বিয়ে আমি কখনো দেখেনি আর না করিয়েছি৷ এক সাথে আট খানা বিয়ে আল্লাহ৷ আপনারা বসুন বসুন ৷”

সাজিত প্রিয়া আর শান সিমি চারজনে নতুন করে শুরু করার জন্য আজ আবারও বিয়ে করতে চাইছে ৷ প্রিয়াও প্রচন্ড খুশি সবটা এতো সুন্দর ভাবে হবে কখনো ভাবেনি ৷ সাজিত তার ভালোবাসা তার কাছে ফিরে এসেছে ৷ আজ দ্বিতীয়বারের মতো তারা আবার বিয়ে করছে৷

সাজিত প্রিয়া দুজনের বিয়েটা হওয়ার পর পর প্রাণো সবার উদ্দেশ্য বলে , গাইজ সবার জন্য সারপ্রাইজ আছে ৷ আর সারপ্রাইজ টা পেতে হলে সবাইকে রয়্যালহোটেলে যেতে হবে ৷ সো গাইজ দেরি না করে যে যার নতুন বউকে নিয়ে বেড়িয়ে পড় আর শ্রদ্ধেয় আঙ্কেল আন্টি গন আপনারা আমার সাথে আসুন৷

তিনটে গাড়ি করে সাদমান মৌ , সাজিত মিহু, সাগর স্মিতা , সাফা নিলয় , আকাশ ঐশী RV কণা চলে গেল৷ আর বাকি গাড়ি গুলো স্মরণ প্রাণো সবাইকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট নিয়ে গিয়ে খাইয়ে পাঠিয়ে দেয়৷ সবাই চলে যেতে স্মরণ হুট করে প্রাণো চোখ দুটো পেছন থেকে কালো কাপড় দিয়ে বেধে দেয়৷ প্রাণো কিছু বলতে নিলে স্মরণ প্রাণোর ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে থামিয়ে বলে,” হুসসস কোন কথা নয়৷ সবাইকে তো সারপ্রাইজ দিলে এখন আমার তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার পালা৷” কথাটা বলে প্রাণোকে কোলে তুলে নেয় স্মরণ…….
.
.
.
#চলবে………….
.
#চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here