গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া পর্ব ৪৩

#গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া
#লেখায়_ফারহানা_ছবি
#পর্ব_৪৩
.
.
🦋
______

হাওয়ার গতিতে এলভার্টের মৃত্যুর খবর এলিনার কানে এসে পৌছায় ৷ খবর টা শোনার পর এলিনা ক্ষিপ্ত হয়ে বিডিতে আসার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে৷ প্রচন্ড রেগে ওয়াইনের গ্লাস ফ্লোরে আচরে ফেলে বলতে লাগলো .” আ’ম কামিং মিস্টার স্মরণ ৷ এলর্ভাট এর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে আমি আসছি ৷”

রাগে ফুসতে ফুসতে এলিনা কিছু ফাইল নিয়ে বেড়িয়ে যায়৷

______

স্মরণ বাড়িতে ফিরে রুমে গিয়ে দেখে প্রাণো চুপ চাপ বেডে বসে কিছু একটা ভাবছে৷ স্মরণের উপস্থিতি এখনো প্রাণো টের পায়নি৷ প্রাণো তার চিন্তায় মগ্ন ৷ স্মরণ শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে প্রাণোর সামনে গিয়ে দাড়াতে প্রাণো স্মরণের শরীরের পারফিউমের ঘ্রাণ পেতে প্রাণো মাথা তুলে স্মরণের দিকে তাকাতে স্মরণ মিষ্টি করে হেসে প্রাণোর গাল দুটো স্পর্শ করে স্মরণ প্রাণোর ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে, ” আমার প্রাণটা এতো চিন্তিত কেন? কি হয়েছে আমার প্রাণের?”

প্রাণো স্মরণের চোখের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে ধির কন্ঠে বলে উঠলো , ” তোমার প্রাণ প্রচন্ড দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে আছে স্মরণ৷ তোমার প্রাণ তার মা বোন কে ঠকাচ্ছে সত্যিটা না বলে৷ তারা যখন জানতে পারবে তখন , তখন কি ওরা আমাকে ক্ষমা করবে স্মরণ? নাকি আমাকে সারা জীবন প্রিয় মানুষের ঘৃনা নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে? তুমি জানো স্মরণ আজ আমি প্রিয়ু চোখে আমার জন্য সন্ধেহ আর অবিশ্বাসের বীজ বুনতে দেখেছি৷ সেই দৃষ্টিতে ছিল আমার প্রতি ওর অবিশ্বাস ৷”

স্মরণ বুঝতে পারছে প্রাণোর উপর দিয়ে মানুষিক চাপ যাচ্ছে৷ উপরে নিজেকে শক্ত করে রাখলেও ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড ভেঙে পড়েছে প্রাণো৷ তার উপর আজ নিজের দাড়িয়ে থেকে নিজের জন্মদাতাকে তার প্রাপ্য শাস্তি দেওয়া থেকে নিজেকে আটকাতে পারেনি৷ যাকে সৎ আদর্শ বাবা মনে করতো তার এমন জঘন্য রুপ দেখে প্রাণো ভেতরে ভেতরে একদম ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে৷

স্মরণ প্রাণোকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, ” ডোন্ট ওয়ারি প্রাণ আগামিকাল থেকে তোমাকে প্রিয়ু আর অবিশ্বাস করবে না৷ আর না তোমায় ঘৃনা করবে৷ ঘৃনা তাদের করবে যারা ঘৃনার যোগ্য৷

প্রাণো স্মরণের বুক থেকে মাথা তুলে জিজ্ঞাসা করলো,” মানে! তু,, তুমি কি করতে চাইছো স্মরণ?”

” সেটা না হয় আগামিকাল জানতে পারবে প্রাণ৷ নাও আ’ম সো ট্যায়ার্ড সাথে প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে প্রাণ৷”

প্রাণো স্মরণের মুখে ক্ষিদের কথা শুনতেই প্রাণো তাড়া হুড়ো করে বেড থেকে নেমে ওড়নাটা গায়ে চেপে স্মরণ কে বলে , ” তুমি ফ্রেস হয়ে এসো আমি এখুনি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি জান৷”

প্রাণো যেতে নিলে স্মরণ প্রাণোকে আটকে দিয়ে বলে , প্রাণ তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসবে নাহলে আমার পুরো খাবারটাই তোমাকে খাইয়ে দিবো ৷”

” তুমি জানলে কি করে আমি না খেয়ে আছি?”

” বিয়ের পর থেকে তুমি আমাকে ছাড়া একবারও খেয়েছো প্রাণ?”

প্রাণো মাথা নেরে না বুঝায়৷

” তাহলে! যাই হোক চারিদিক খেয়াল রেখে নিচে যাবে ওকে?”

” হুম”

স্মরণের থেকে মুক্তি পেতে প্রাণো ধিরে সুস্থে রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে কিচেনে ঢুকে ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে ওভেনে গরম করে নিয়ে খাবার প্লেটে সাজিয়ে উপরে রুমে নিয়ে যেতে প্রাণো ফিল করে কেউ ওকে দেখছে হয়তো লুকিয়ে! প্রাণো একটু থেকে আবার যেতে লাগলো৷ প্রাণো খাবার নিয়ে উপরে রুমে যেতে আড়াল থেকে প্রিয়া বেড়িয়ে আসে৷

প্রাণোর রুমের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো ,” আমি জানি আপু তুমি সবটা জানো৷ আব্বু কোথায় আছে ? আর আমি এটাও জানি সাজিতের বাবার এই অবস্থা তুই করেছিস কিন্তু কেন আপু? কেন করলি এটা? আমাকে তো জানতেই হবে৷ তুই আসলে কি চাইছিস! আর কেন এই সব করছিস? সব প্রশ্নের উওর আমি বের করবোই আপু এন্ড ইট’স মাই প্রমিস টু ইউ৷ ”

প্রিয়ার চোখে মুখে রাগের আভাস ফুটে আছে এখনো, সাজিত সন্ধেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রিয়ার দিকে, তাতে প্রিয়ার বিশেষ কিছু যায় আসে বলে মনে হয় না৷ প্রিয়ার চোখ হঠাৎ সাজিতের উপর পড়তে দেখে সাজিত তার দিকে তাকিয়ে আছে ৷ প্রিয়া যেহেতু তার কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের উওর খুজে পায়নি সেহেতু সে নিজে প্রচন্ড বিরক্ত ৷

” প্রিয়ু তোমার কি কিছু হয়েছে?”

” না কিছু হয়নি তুমি ঘুমিয়ে পড়ো আমারও ঘুম পেয়েছে৷ ”

প্রিয়া বেডে শুয়ে পড়ে সাজিত কে গুড নাইট বলে অন্য দিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে ফেলে৷

!
!
!

স্মরণ নিজের হাতে প্রাণোকে খাবার খাইয়ে দিয়ে নিজে খেয়ে নিয়ে প্রাণোকে বুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে স্মরণ৷

সকাল সকাল টিভিতে নিউজ দেখে প্রিয়া ,নিশিতা বেগম, সাজিত ,সাহারা বেগম , মিহু,সাগর , স্মিতা, আকাশ, , নিলয়, ঐশী, সাফা অবাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাড়িয়ে আছে ৷ কারোর মুখ থেকে কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না৷ সবাই এতোটাই শক্টড যে চোখের পলক ফেলতেই ভুলে গেছে সবাই;

জীবন মাহমুদ , জুনাইদ কবির এবং তাদের পিএ রানার বিরুদ্ধে সমস্থ বৈআইনী কর্মকান্ড প্রমান সহ নিউজে টেলিকাষ্ট হচ্ছে ৷ পুলিশ জুনাইদ কবির এবং রানাকে হন্য হয়ে খুজছে৷ আর জীবন মাহমুদকে এরেস্ট করেনি কারণ জীবন মাহমুদ এখনো আই সি ইউতে ভর্তি তাই সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ জীবন মাহমুদকে এরেস্ট করতে পারছে না৷

জীবন মাহমুদ এবং জুনাইদ কবির এর প্রত্যেকটা কর্মকান্ড তাদের দুই নাম্বারি বিজনেস সাথে নারী শিশু পাচার , দেশের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার , বৈআইনী আগ্নেয় অস্ত্র পাচার, হিরোইন কোকো ব্যবসায়ীদের সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে জরীত আছে তার ফুল প্রুফ প্রমান পুলিশের হাতে এসেছে এবং এই প্রমান গুলো কেউ ছদ্মবেশে এসে অফিসারের হাতে তুলে দিয়েছে ৷ অফিসার সেই মানুষটির নাম জানতে চাইলে ছদ্মবেশী জানায় ব্লাকরোজ ৷

পুলিশ অফিসারের বক্তব্য শুনে টিভির পর্দার এপাশে প্রিয়া ধপ করে সোফায় বসে পড়ে৷ প্রিয়া যেন কাঁদতেই ভুলে গেছে৷ প্রিয়া নিজেকে ধিক্কার জানাচ্ছে প্রাণোকে অবিশ্বাস করার জন্য , লজ্জায় প্রাণোর মুখের দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারছে না৷

সাহারা বেগম আর নিশিতা বেগম চুপচাপ নিজেদের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়৷ সাজিত মিহুর মুখে কোন কথা নেই ৷ সাজিত মিহু দুজনে প্রচন্ড রকমের শক্টড তাদের বাবা যে এমন কিছু করতে পারে এমন ধারণা দু’ভাই বোনের কেউ বিন্দুমাত্র বুঝতে পারেনি৷ মিহুর চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে৷ সাজিত দম মেরে বসে আছে ৷

এদিকে প্রাণো স্মরণের মুখের দিকে তাকাতে স্মরণ টেডি স্মাইল দিয়ে প্রাণোর কানে কানে বলে ওঠে,” কি ম্যাডাম আমার কথা মিললো তো? তোমার বা তোমার মা কেউ তোমাকে আর ভুল বুঝবে না আর না ঘৃনা করবে৷” কথাটা বলে আবারো ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে প্রাণোকে চোখ মারে, প্রাণো স্মরণের পেটে গুতো মেরে বলে, ” তোমার ঠোঁটের কোনে এই টেডি স্মাইল টা মানাচ্ছে না একদম, কিন্তু এটা বলো ফাইল গুলো তুমি কোথায় পেলে? এই ফাইল গুলো তো আ… ” বাকিটা বলার পূর্বে স্মরণ বলে ওঠে ” ইউ নো প্রাণ তুমি এখনো তোমার হাসবেন্ট এবং তার পাওয়ার সম্পর্কে জানো না৷ তবে জানবে খুব শীগ্রই জানতে পেরে যাবে ততোক্ষণ না হয় এই ছোট্ট মাথাটাকে না খাটিয়ে তুমি তোমার কাজ গুলো করে দেশকে রক্ষা করো ৷ ”

প্রাণো চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে, ” সুইটহার্ট তুমি এবার তোমার বউয়ের পাওয়ার দেখবে ৷ তুমি যেহেতু বলছো না তোমার নিজের গড়ে তোলা তোমার চারপাশের রহস্যময় ৷ সেহেতু এবার আমি খুজে বের করবো ওকে৷”

” ট্রাই ইট বেইব ৷ এন্ড এন্ড এন্ড যদি রহস্য ভেদ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ো তখন না হয় এই আমি তোমার বর নিজ দ্বায়িত্বে তোমাকে রহস্য ভেদ করতে সাহায্য করবে৷”

” ঘাড় ত্যাড়া জামাই একটা , শোন আমাকে বের হতে হবে আমি আসছি৷”

” হুম তবে সাবধানে করবে যা করার আর একটা কথা ওনাদের কে পুলিশ খুজে পেয়েছে যেখানে ড্যা.. জীবন মাহমুদ কে খুজে পেয়েছিলো৷”

” তুমি জানলে কি করে?”

” ম্যাজিক!”

“যাও তৈরি হয়ে নেও ৷ আমি তোমাকে ড্রপ করে দিবো৷”

” ওকে”

__________

একি হসপিটালে জীবন মাহমুদ এর সাথে জুনাইদ কবিরকেও আই সি ইউতে এডমিট করা হয়েছে৷ পুরো হসপিটাল জুড়ে রিপোটার্র ঘিরে আছে৷ পুলিশ রিপোটারদের সামলাতে এক প্রকার হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে ৷

নিশিতা বেগম এবং সাহারা বেগম কেউ কারো রুম থেকে বের হয়নি৷ জুনাইদ কবিরকে খুজে পাওয়া গিয়েছে এবং তাকে হসপিটালে এডমিট করা হয়েছে৷

পুলিশ জুনাইদ কবিরকে খুজে পাওয়ার পাশে জীবন মাহমুদ এর পিএ কাটা মাথাটাই পেয়েছে বাকি শরীরের অংশ খুজে পায়নি৷ এমন নৃশংস ভাবে হত্যা কে করলো? কেন করলো ? আর একই ভাবে জীবন মাহমুদ এর মতো জুনাইদ কবিরকেও মারা হয়েছে ৷ তাহলে কি একই ব্যক্তি এদেরকে কিডন্যাপ করেছে? কিন্তু কেন ?

এমন ধরনের প্রশ্ন রিপোর্টার করে যাচ্ছে৷ নানা ধরনের প্রশ্ন পুলিশকে করে যাচ্ছে রিপোর্টার ৷

_________

স্মরণ প্রাণোকে অফিসে ড্রপ করে দিয়ে চলে যেতে RV কণা সিমি এসে উপস্থিত হয়৷

তিন মূর্তিমানের চোখে মুখে একরাশ বিস্ময় ৷ প্রাণো যে এতোটা কঠিন হৃদয়ের মানুষ হতে পারে এমন কঠিন সত্য ধারণা তিন জন ব্যক্তির কেউ করতে পারেনি৷ প্রাণো RV কণা এবং সিমির দৃষ্টি ভঙ্গি দেখে তার ঠোঁটের কোনে কিঞ্চিৎ হাসি ফুটে উঠলো ৷

” গাইজ এখানে না দাড়িয়ে ভিতরে চলো ৷ নেক্সট মিশন নিয়ে তোমাদের সাথে ডিসকাস করা দরকার ৷ ”

কথাটা বলে প্রাণো ভিতরে চলে গেল৷ এদিকে সিমি RV কণা একে অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে RV কণাকে ধরে ভিতরে নিয়ে যেতে লাগলো৷

দুপুর একটায় কানাডার ফ্লাইট ল্যান্ড করে৷ এলিনা তার ট্রলি নিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে তার কোটি টাকার বিশাল গাড়িতে উঠে বসতে পেছন থেকে কেউ একজন এলিনার মুখে রুমাল চেপে ধরতে এলিনা বেহুস হয়ে পড়ে৷

এলিনার জ্ঞান ফিরে আসতে চোখ মেলে তাকিয়ে নিজেকে শক্ত দরি ধারা বাধা অবস্থায় আবিষ্কার করে নিজেকে, এলিনা নিজেকে এমন বাধা অবস্থায় দেখে হিংস্রতা চোখে মুখে ফুটে ওঠে৷ এলিনা চারিদিকে তাকিয়ে নিজেকে ল্যাবে দেখে চমকে ওঠে এলিনা ৷ এলিনার বুঝতে আর বাকি নেই তাকে এয়ারপোর্ট থেকে কে কিডন্যাপ করেছে….

এলিনা ক্ষিপ্ত হয়ে হুংকার ছেড়ে বলে,” স্মরণণণণ…….”
.
.
.
#চলবে………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here