#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব- ২০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আমি যেনো স্তব্ধ হয়ে গেলাম এতোবছর ‘তনয় ভাই’ মানুষটি দেখে। সে-ই’ মানুষটি যখন অন্যকারো হয়ে গেলো তখন বোধহয় আমার গোটা পৃথিবীটা-ই’ যেনো থমকে গিয়েছিলো। যাকে একসময় আমি খুব করে ভালোবাসতাম। খুব করে চাইতাম। তনয় ভাই মানুষটার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে-ই’ তো সেই সিলেট থেকে ঢাকায় চলে এসেছিলাম। কখনো ভাবিনি জীবনের এই পর্যায়ে এসে, ‘তনয় ভাই’ নামক মানুষটির সাথে আবারো মুখোমুখি হতে হবে।
তনয় ভাইয়ের পিছন থেকে নিতিয়া ‘সারপ্রাইজ ‘ বলে আমার কাছে ছুটে এসে, আমার কপালে চুমু খেয়ে বলল,
“এইসময় তুই আমাকে এবং তনয় ভাইয়াকে আশা করিসনি তাইনা? হুম বুঝেছি। আসলে আমরা তোকে না জানিয়ে-ই’ সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।
আংকেল এন্ড আন্টিকেও আগে থেকে সব জানিয়ে রেখেছিলাম শুধুমাত্র তোকে ছাড়া। কেননা আমরা তোকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সারপ্রাইজ দিতে এসে,তোর এই অবস্হার কথা শুনে
আমরা কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম জানিস? সত্যি তনয়া ভাইয়া ঠিক-ই’ বলে তুই সত্যি বেখায়ালী। ”
_____________
এদিকে,
জেনির ভয়ে হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। জেনির বুঝতে বাকি রইলো নাহ রুদ্রিক সবকিছু-ই’ জানে।
রুদ্রিক জেনির দিকে এগিয়ে এসে বলে উঠলো,
“কি হলো ডার্লিং হঠাৎ ভয় পেয়ে গেলে কেন?
আমাকে দেখে তুমি ভয় পাচ্ছো। হাও স্ট্রেঞ্জ! ”
জেনি কিছুটা ভিতুস্বরে বলল,
“আসলে তোমাকে এইসময় আমি আশা করিনি। তাই আর কি। ”
রুদ্রিক জেনির হাতদুটো চেপে ধরে বলে,
“আচ্ছা জেনি কাজলকে যখন পাওয়া যাচ্ছিলো নাহ। তখন কোথায় ছিলে তুমি? ”
জেনি থমথমে গলায় বলে,
“আমজ আবার কোথায় থাকবো? তোমাদের সাথে-ই’ ছিলাম। ”
রুদ্রিক জেনির চুলের মুঠি ধরে কানে ফিসফিস করে বলে,
“একদম মিথ্যে বলবেনা জেনি। তুমি যদি ভেবে থাকো। মিথ্যে বলে আমার হাত থেকে ছাড়া পেয়ে যাবে তাহলে তুমি সবথেকে বোকা। ইথানকে দিয়ে আমি সিসিটিভি ক্যামেরা চেক করিয়েছি। যে ছোট ছেলে কাজলকে আমার নাম বলে ফার্স্ট ফ্লোরে নিয়ে গিয়েছিলো, সেই ছেলেকে খুঁজে বের করা হয়েছে। সেই ছেলে কার কথাতে এই কাজ করেছে জানো? তোমার কথাতে। ”
জেনি নিজের চুল ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,
“রুদ্রিক প্লিয আমাকে ছেড়ে দাও। আমি এইসব কিচ্ছু জানিনা। ”
রুদ্রিক এইবার ঠাস করে জেনির গালে চর বসিয়ে দেয়। চরের তীব্রতা এতোটা-ই’ ছিলো যার জন্যে জেনির ঠোট বেয়ে ফিনকি রক্ত গড়িয়ে পড়ে।
জেনি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। রুদ্রিক জেনিকে ছেড়ে, চিৎকার করে বলে উঠে,
“একদম মিথ্যে বলবেনা জেনি। আগেরবার কাজলকে অপমান করেছিলে তখন তোমাকে ওয়ার্ন করেছিলাম,কিন্তু তুমি শুনোনি জেনি। তোমার জন্যে আমার কাজল এতোটা কষ্ট ভোগ করেছে। তোমাকে
আমি সহজে ছাড়বো নাহ। ”
রুদ্রিকের বলা ‘আমার কাজল ‘ শব্দটি এখনো কানে ভাজছে জেনির। রুদ্রিক আবারো চিৎকার করে বলে উঠে,
“এইবার তুমি দেখবে আমার কাজলকে কষ্ট দেওয়ার
কি ভয়ংকর শাস্তি হতে পারে। তোমার মডেলিং করার ইচ্ছে? ওকে ফাইন। তোমার গোটা মডেলিং ক্যারিয়ার আমি ডিস্ট্রয় করে দিবো। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ। ”
রুদ্রিকের কথা শুনে জেনি কাঁদতে কাঁদতে রুদ্রিকরে পা ধরে বলে,
“দয়া করো রুদ্রিক প্লিয এমনটা করোনা। আমাকে দয়া করো। আমরা দরকার পরলে কাজলের কাছে ক্ষমা চাইবো। তবুও এমনটা করোনা। ”
রুদ্রিক জেনির কথা শুনে জোড়ে জোড়ে হেঁসে উঠে।
রুদ্রিক হাটু গেড়ে বসে জেনির গাল জোড়ে চেপে ধরে বলে,
“একদম আমার কাজলের আশেপাশে থাকার চেস্টা করবেনা। এইসব করার আগে তোমার ভাবার উচিৎ ছিলো। এইবার রাফসিন শেখ রুদ্রিকের ভয়ংকর রুপ দেখার জন্যে প্রস্তুত হও। তোমার গোটা জীবন নরক করে তুলবো মাইন্ড ইট।”
কথাটি বলে-ই’ রুদ্রিকে জেনিকে ধাক্কা দিয়ে, গটগট করে বেড়িয়ে যায়। জেনি ছিটকে ফ্লোরে পড়ে যায়।
_________
অন্যদিকে,,
আমি কিছুটা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে বাবা-মার দিকে তাঁকিয়ে রইলাম। যার অর্থ তনয় ভাইয়ার এমন হঠাৎ আগমনের কথা আমি ঠিক বুঝতে পারছি নাহ।
মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“কি এতো ভাবছিস মা? ”
আমি বাবার দিকে তাঁকিয়ে কিছুটা সংকচে নিয়ে বললাম,
“বাবা আমি সত্যি কিছু বুঝতে পারছিনা। মানে এখানে ঠিক কি হচ্ছে? ”
——“কাজলরেখা! আপাতত তুমি রেস্ট নাও। আস্তেধীরে সবকিছু জানতে-ই’ পাবে। ”
কথাটি বলে-ই’ তনয়া ভাইয়া এগিয়ে হাঁসলেন হাঁসিমুখে। ‘কাজলরেখা ‘ নাম শুনে বুক থেকে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো।
বাবা ও উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
“আমাদের এখন যাওয়া উচিৎ। মা তুই বরং রেস্ট নে।
বাসায় গিয়ে তোর সব প্রশ্নের উত্তর দিবো। ”
কথাটি বলে বাবা, মা ও ছুটকি বেড়িয়ে গেলো।
তনয় ভাই ও আমার দিকে খানিক্টা মিষ্টি হেঁসে নিতিয়ার সাথে চলে গেলেন।
আমার মাথা যেনো হ্যাং হয়ে আসছে। নিতিয়ার কথা অনুযায়ী তো তনয় ভাই তার স্ত্রী ও সন্তানের সাথে ভালো ছিলেন। তাহলে কিসের জন্যে উনি এখানে এলেন?
আমার ভাবনার মাঝে-ই’ সাদি ভাইয়া ও সিথি চলে আসলো। সিথি কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলল,
“কাজল! আংকেল আন্টির সাথে একজন ভদ্র লোক ছিলো এবং একটা মেয়ে ছিলো। কারা তারা? তুই চিনিস তাদের? ”
আমি সিথির দিকে একপলক তাঁকিয়ে খানিক্টা দম নেওয়া গলায় বললাম,
“যদি বলি একসময় সেই ভদ্র লোককে আমি ভালোবাসতাম? ”
আমার কথা শুনে সাদি ভাইয়া ও সিথি যেনো আকাশ থেকে পড়লো।
সাদি ভাইয়া খানিক্টা নিচু গলায় বললেন,
“এইসব কি বলছো কাজল?”
আমি ওদের দিকে তাঁকিয়ে স্থির চোখে তাঁকিয়ে বললাম,
“সবকিছু-ই’ সত্যি বলছি। জানতে চান আমার সেই বিষাদময় অতীত? তাহলে শুনুন।”
—“আমি সিলেটে মামা-মামির সাথে থাকতাম। সিলেটের এক কলেজে-ই’ পড়াশুনা করতাম আমি। কলেজে নিতিয়া ছিলো আমার বেস্টফ্রেন্ড। নিতিয়ার মামাতো ভাই ছিলো ‘তনয় ভাই’। নিতিয়াদের বাড়িতে গেলে-ই’ তনয় ভাইয়ের সাথে আমার দেখা হতো। তখন তিনি সবে মাত্র মাস্টার্স শেষ করে একটি কম্পানিতে জয়েম করছিলেন। উনি ছিলেন যথেষ্ট স্মার্ট ও জ্ঞানী। সব বিষয়ে-ই’ উনার টুকটাক জ্ঞান ছিলো। যা আমার সবথেকে ভালো লাগতো। সময় পেরিয়ে গেলো। কখন যেনো নিজের অজান্তে-ই’ আমি তনয় ভাই নামক মানুষটাকে ভালোবাসতে শুরু করে দিলাম,কিন্তু তনয় ভাইয়ের মনের খবর আমি জানতাম নাহ। তাই আমি ঠিক করলাম নিজের মনের কথা আমি ‘তনয় ভাই ‘কে জানিয়ে দিবো। আবেগের বয়স ছিলো তখন এতো ভেবে চিন্তা কিছু করেনি। কিন্তু প্রপোজ করার দিনে এমনভাবে সারপ্রাইজড হয়ে গিয়েছিলাম। সেদিন..
সবুজ রংয়ের শাড়ি পড়ে আয়নায় নিজেক্র খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিলাম। তখনি আমার মামি এসে আমার থুতনিতে চুমু খেয়ে বললেন,
“কি সুন্দর লাগছে আমার মেয়েটাকে।”
আমি হেঁসে উঠি। আমার মামা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“বেস্ট অফ লাক মা! আল্লাহ যেনো তোর সব মনের ইচ্ছে পূরন করুক। ”
তনয় ভাইয়ার ব্যাপারে আমার মামা-মামি সবকিছু-ই’ জানতো। আমি মুঁচকি হেঁসে বললাম,
“দোয়া করো আমাকে।”
আমাদের কথার মাঝে-ই’ কলিং বেল বেজে উঠে।
মামি গিয়ে দরজা খুলে দেখে তনয় ভাই। সাথে একজন মেয়েও আছে।
আমি এগিয়ে আসলাম। তনয় ভাইয়ের সাথে অন্য একজন মেয়েকে দেখে কিছুটা অবাক হলাম বটে।
তনয় ভাই এগিয়ে এসে বললে,
“কাজল মিট মাই ফিয়ন্সি তানিয়া।
আমরা একে-অপরের সাথে প্রায় ৩বছর ধরে রিলেশনশিপে ছিলাম। এতোদিন আমার জব ছিলো নাহ বলে আমরা বিয়েটা করতে পারছিলাম নাহ। এইবার আমরা ঠিক করেছি সামনে মাসে-ই’ বিয়েটা করে ফেলবো।”
কথাটি শুনে যেনো আমি থমকে গেলাম এক মুহুর্তের জন্যে।
তনয় কিছু একটা ইশারা করলো তানিয়াকে। তানিয়ে হাঁসিমুখে এসে কাজলের হাত একটি কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“টেক ইট। আমাদের বিয়েতে কিন্তু তোমাকে আসতে-ই’ হবে। ”
______বর্তমানে,
অতীতের কথা মনে পড়তে-ই’ আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। সাদি ভাইয়া ও সিথি উৎসুক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে। আমি আবারোও দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
এদিকে,,,
রুদ্রিক গাড়ি থেকে বেড়িয়ে হসপিটালের দিকে পা বাড়ায়। হাতে তার লাল টকটকে বেলী ফুল। কাজলর খুব পছন্দ। রুদ্রিক মুচকি হেঁসে কাজলের কেবিনের সামনে গিয়ে, এমন কিছু শুনে…… #গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব- ২১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
কাজল অন্যকাউকে ভালোবাসতো। কথাটি শুনে রুদ্রিকের বুকে অজানা এক ব্যাথা শুরু হয়ে যায়।কথাটি এখনো কানে বাজছে রুদ্রিকের। রুদ্রিকের নিয়ে আসা লাল টকটকে গোলাপফুল হাত থেকে পড়ে গেলো। রুদ্রিক কিছুক্ষন থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। কাজলের কেবিনের সামনে আসতে-ই’ কাজলের বলা প্রতিটি কথা রুদ্রিক শুনে ফেলেছে। রুদ্রিক এখনো বিশ্বাস করতে পারছে নাহ কাজল কাউকে ভালোবাসে। রুদ্রিক বাইরে-ই’ দাঁড়িয়ে রইলো।
আমি সাদি ভাইয়া ও সিথির দিকে তাঁকিয়ে বললাম,
“আমি সেদিন মেনে নিতে পারেনি জানিস? খুব কষ্ট হয়েছিলো আমার। তনয় ভাইকে কখনো বলতে পারেনি তাকে খুব করে ভালোবাসি। তাই হয়তো সে আমার থেকে সেদিন দূরে সরে গিয়েছিলো। তনয় ভাইকে ভালোবাসতাম বলে-ই’তাকে অন্যকারো হতে দেখতে পারেনি। তাই সেদিন বিয়ের দিন সিলেট থেকে ঢাকায় চলে এসেছিলাম। ”
আমার অতীতের কথাগুলো শুনে নিজের অজান্তে-ই’ সিথি কেঁদে উঠলো। সিথি আমার কাছে এসে বলল,
” কাজল তুই এতোটা কষ্ট চাপা রেখে দিব্যি আমাদের সামনে ছিলি,কিন্তু আমরা কিচ্ছু বুঝতে পারেনি বাহ।”
আমি হাঁসলাম।
সাদি ভাইয়াও হয়তো বুঝতে পারছেনা। আমাকে ঠিক কী বলে আমি শান্তনা দিবেন।
সাদি কিছু বলবে তখনি তার চোখ যায় দরজা দাঁড়িয়ে থাকা রুদ্রিকের দিকে।
সাদি অবাকের সুরে বলে,
“রুদ্রিক তুই কখন এলি? “,
সাদি ভাইয়ার কথা শুনে আমরা দরজার দিকে তাঁকালাম। ছোট সাহেবকে দেখে আমার বুকে অজানা ভয় ঢুকে গেলো। তাহলে কী ছোট সাহেব সবকিছু শুনে ফেলেছেন?
রুদ্রিক দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থেকে-ই’ বলল,
“নাহ মানে কিছুক্ষন হলো এসেছি। ”
সাদি ভাইয়া ও সিথি একেঅপরের দিকে তাঁকিয়ে কিছু একটা ইশারা করলো। সাদি ভাইয়া ও সিথি বেড়িয়ে গেলো। ওরা চলে যেতে-ই’ ছোট সাহেব আমার কাছে এসে খানিক্টা স্লান গলায় বললেন,
“তনয় নামক ভদ্রলোককে তুই ভালোবাসতি? ”
—–“হুম খুব করে ভালোবাসতাম। ”
কাজলের সোজা কথা শুনে যেনো রুদ্রিকের হজম হলো নাহ। রুদ্রিক কাজলের দিকে আরেকটু এগিয়ে কাজলের চোখের দিকে মায়াভরা দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বলল,
“এখনো কী তাকে ভালোবাসিস? ”
আমি কাঠকাঠ গলায় বললাম,
—–“এইসব কথা অযৌক্তিক! আমি যতটুকু জানি তনয় ভাইয়া বিবাহিত এবং তার একটি ছোট্ট সন্তান ও রয়েছে। সুতরাং এইসব প্রশ্নের উত্তর বোধহয় না দিলেও চলবে। ”
আমাদের কথার মাঝে-ই’ তনয় ভাইয়া প্রবেশ করে বললেন,
“ওহ সরি। আমি ভুল করে নক না করে-ই’ চলে এসেছি। উনাকে তো ঠিক চিনলাম নাহ ( রুদ্রিককে উদ্দেশ্য করে)
তনয়কে দেখে রুদ্রিক হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। এই লোক আসার সময় পেলো নাহ।
আমার বাবা ও ভিতরে প্রবেশ করে বললেন,
” আমাদের বড় সাহেবের ছেলে রুদ্রিক বাবা।”
তনয় এগিয়ে গিয়ে, রুদ্রিকের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে,
“হ্যালো আমি তনয় আহিল।
রুদ্রিক হাত না বাড়িয়ে-ই’ বলে,
” আমি রাফসিন শেখ রুদ্রিক। ”
হাত না বাড়ানোর জন্যে কিছু’টা মাইন্ড করে তনয়।
রুদ্রিক পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলে,
—-“আসলে কিছু মনে করবেন নাহ। এই রাফসিন শেখ রুদ্রিক আবার যার-তার সাথে হাত মিলায় নাহ।
হাত মিলানো হলো বন্ধুত্বের প্রতিক। আমি যাকে -তাকে বন্ধু মনে করিনা।
বিশেষ করে কেউ যদি আমার অতি আপনজনের দিকে হাত বাড়াতে চায়। তাহলে তো তাদের নিজের
শত্রু ছাড়া আর কিছু-ই’ ভাবতে পারিনা। ”
রুদ্রিকের কথা সবার কাছে-ই’ বেশ অদ্ভুদ লাগলো। কেউ হয়তো বুঝতে পারছে নাহ তার কথা, কিন্তু কাজল খানিক্টা নিশব্দে হাঁসে।
ছোট সাহেবের প্রতিটি কথা-ই’ নিপুনভাবে আমি বুঝতে পেরেছি।
তনয় ভাই নিজের হাত নামিয়ে সৌজন্যমূলক হাঁসি দেয়।
আমি তনয় ভাইয়ের দিকে তাঁকিয়ে বললাম,
“তানিয়া ভাবি কোথায়? আমি নিতিয়ার কাছে যতটুকু শুনেছিলাম আপনার একটি সন্তান ও আছে। সে বা কোথায়?”
বাবা এইবার এগিয়ে এসে বললেন,
“মা আমি জানি তোর মনে অনেক প্রশ্ন। তনয় বাবা
ডক্টরদের সাথে কথা বলে নিয়েছে। তোকে বাসায় আজকে-ই’ নিয়ে যাবো তখন না হয়….
আমি বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
“বাবা আমার সবকিছু জানার প্রয়োজন আছে। ”
আমার কথা শুনে তনয় ভাই বলে উঠেন,
“ঠিক আছে তোমাকে আমি সবকিছু-ই’ বলবো,কিন্ত আলাদা ভাবে। আশা করি উপস্হিত সবাই কিছুক্ষন এর জন্যে সবাই বাইরে যাবেন। ”
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসী রিমি)
রুদ্রিক দাঁতে চেপে মনে মনে বলে,
“কত্ত বড় সাহস এই ছেলের। এই রাফসিন শেখ রুদ্রিককে বাইরে যেতে বলছে তাও কিনা’ আমার কাজলের ‘ সাথে কথা বলার জন্যে। ”
আমি ছোট সাহেবের অবস্হা বুঝতে পেরে কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বললাম,
“নাহ। আমি আপনার সাথে পারসোনালি কথা বলতে প্রস্তুত নই। এখানে যা কথা হবে সব সবার সামনে-ই’ হবে। আশা করি আপনি দ্বিমত পোষন করবেন নাহ।
কাজলের কথা শুনে রুদ্রিক মনে মনে খুশি হয়।
তনয় ভাই কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বললেন,
” ওকে যা তোমার ইচ্ছে।
তানিয়াকে আমি সত্যি ভালোবাসতাম বিশ্বাস করো। কিন্তু বিয়ের দিন তানিয়া আমার-ই’ বন্ধুর হাত ধরে পালিয়ে যায়। কেননা আমার বন্ধুর টাকার পাহাড় ছিলো। বড়লোক বাপের ছেলে বলে কথা। অন্যদিকে আমি সবে মাত্র অফিস জয়েন করেছি। এতোটাকার লোভ তানিয়া সামলিয়ে উঠতে পারেনি। তাই সে
চলে গেলো আমার বড়লোক বন্ধুর হাত ধরে।
সেদিন আমিও পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলাম। তখনি নিতিয়া আমাকে তোমার কথা বলে জানো। নিতিয়ার কাছে জানতে পারি কীভাবে তুমি আমাকে নিঃশ্বার্থহীনভাবে ভালোবেসে গিয়েছো। আমি প্রায় ২বছরে সময় নেই সবটুকু ঠিকভাবে বুঝার জন্যে। নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্যে। এন্ড ফাইনালি আমি বুঝতে পারি হ্যা কাজলরেখা তুমি আমার মনে অনেকটুকু জায়গা করে নিয়েছো। তাইতো আমি তোমার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছি। ”
কথাটি বলে থামলো তনয়। রুদ্রিক ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। তার স্হীর দৃষ্টি কাজলের দিকে। রুদ্রিক ঠিক বুঝতে চাইছে কাজলের মনে ঠিক কী চলছে কিন্তু রুদ্রিক ব্যার্থ।
পিছন থেকে নিতিয়া বলে উঠলো,
“তুই হয়তো ভাবছিস কাজল। আমি কেনো তোকে বললাম তনয় ভাইয়ের একটি সন্তান ও আছে। আসলে আমি জাস্ট তোর সাথে মজা করছিলাম। জাস্ট তোকে এখানে এসে সারপ্রাইজড করার জন্যে। ”
নিতিয়ার কথা শুনে এই মুহুর্তে ঠিক কি বলবো বুঝতে পারছি নাহ।
বাবা এইবার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
—-“তনয় খুব ভালো ছেলে। এখন যখন সব ভুলবুঝাবুখি মিটে-ই’ গেছে। তখন আমি চাইছিলাম তোর এবং তয়নের বিয়েটা দিয়ে দিতে। ”
কথাটি শুনে রুদ্রিক ‘না ‘ বলে চিল্লিয়ে উঠে।
সবাই রুদ্রিকের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাঁকায়।
কাজলের বাবা বললেন,
“কি হয়েছে রুদ্রিক বাবা? ”
রুদ্রিক কাজলের দিকে তাঁকিয়ে খানিক্টা জোড়ালো কন্ঠে বলে,
“আপাতত বিয়েটা না হওয়া কী ভালো নয়? না মানে
এখন তো কাজল অসুস্হ। বিয়ের কথাটা পরেও বলা যাবে। আশা করি আপনার কথাটি বুঝবেন। ”
কথাটি বলে রুদ্রিক এক সেকেন্ড ও দাঁড়ায়না। দ্রুত পা বাড়িয়ে বেড়িয়ে যায়। রাগে তার হাত-পা কাঁপছে। আর কিছুক্ষন সেখানে থাকলে বোধহয় সে রাগের মাথায় খারাপ কিছু করে ফেলতো।
______এদিকে,
আফজাল শেখ ও ইশানি শেখ আজকে
শিকদার ইন্ড্রাস্টিতে এসেছেন। উদ্দেশ্য ইকবাল শিকদারের সাথে জরুরী মিটিং।
ইকবাল সাহেব আফজাল শেখ ও ইশানি শেখের সাথে হাত মিলিয়ে বললেন,
” আশা করি আমাদের সামনের প্রযেক্টগুলো ভালোভাবে-ই’ হয়ে যাবে। ”
ইশানি শেখ হেঁসে বললেন,
“অবশ্যই। তো ইকবাল সাহেব যে কথার জন্যে আমাদের ডেকেছিলেন তা বলুন। ”
ইকবাল শেখ এইবার কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বললেন,
“আসলে আমি চেয়েছিলাম আমাদের বিসনেজ এর সম্পর্কটা আত্বীয়তার সম্পর্কে পরিনত করতে। ”
আফজাল শেখ ভ্রু কুচকে বললেন,
“আমি ঠিক ব্যাপারটা বুঝলাম নাহ।”
—–“মিস ইশানির থেকে যতটুকু শুনেছি আপনি রুদ্রিকের অতি শ্রীগই বিয়ে দিতে চাইছেন। সুতরাং
আমি চাই আমার মেয়ের সাথে রুদ্রিকের বিয়ের সনন্ধ করতে। ”
_______
লাজুকের হঠাৎ করে-ই’ প্রচন্ড মাথা ধরেছে ।
খানিক্টা ঠান্ডা ও লেগে গিয়েছে। তাই লাজুক আজ ভেবেছে সে অফিসে যাবেনা। যেই ভাবা সে-ই’ কাজ।
লাজুক কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তখনি কলিং বেল বেজে উঠে। লাজুক বিরক্তি হয়ে দরজা খুলে দেখে দিয়া হাঁসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। দিয়াকে দেখে লাজুক ভ্রু কুচকে বলে,
“আপনি হঠাৎ এইসময় এলেন যে? ”
দিয়া কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,
“শুনলাম আপনি নাকি অসুস্হ। তাছাড়া বাসায় একা থাকেন। আপনার তো সেবা-যত্ন প্রয়োজন তাইনা? যত-ই’ হোক আমি আপনার বস। আমার একটা দায়িত্ব আছেনা? ”
লাজুক মাথা নাড়িয়ে বলে,
“হুম তা তো আছে। ”
দিয়া এইবার খানিক্টা রাগারান্বিত
“আমাকে এখানে দাঁড় করিয়ে-ই’ রাখবেন হুহ?
লাজুক দ্রুত সরে পড়লো। দিয়া এইবার চারদিকে তাঁকিয়ে বলে,
” ঘরে এই অবস্হা কেন? এতো অগোছালো কেনো আপনি? ”
লাজুক মাথা চুলকে বলে,
“অবিবাহিত ছেলেদের ঘর এর থেকে ভালো অবস্হাতে থাকেনা? ”
দিয়া ভ্রু কুচকে বলে,
“তো বিয়ে করেন নিন। ”
লাজুক কেঁশে উঠে। দিয়া লাজুকের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“আপনি তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ুন। আমি বরং গিয়ে আপনার জন্যে কফিটা করে আসি। বাই দ্যা ওয়ে আমরা দুজন একটা সেল্ফি তুলে নেয় ওকে?.
লাজুক কিছু বলবে তার আগে-ই’ দিয়া বলে উঠে,
” আচ্ছা একটু পরে সেল্ফি তুলবো। আগে আপনার জন্যে এককাপ কফি নিয়ে আসি। আপনার অবস্হা দেখে ভালো মনে হচ্ছেনা।”
কথাটি বলে দিয়া রান্নাঘরের দিকে ছুটে যায়।
লাজুক মুঁচকি হেঁসে বলে,
“এইজন্যে-ই’ আপনাকে এতোটা চাই দিয়াম্যাম। ”
____
সবে মাত্র বাসায় আমাকে নিয়ে আসা হলো।
ঘড়িতে প্রায় ১১টা বাজে। জানালার কাছে ঘেষে দাঁড়িয়ে আছি আমি।
কি থেকে কি যেনো হয়ে গেলো। তখনি দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজ কানে আসলো। আমি পিছনে তাঁকিয়ে দেখি ‘ছোট সাহেব। ‘ উনি এতো রাতে কেন?
বাকীটা আগামী পর্বে….
চলবে কী?
(
চলবে কী?
(সারাদিন আজ বাসায় ছিলাম নাহ। ক্লান্ত শরীর নিয়ে কোনোরকম হাবিজাবি লিখেছি)