গোধূলী_বেলার_স্মৃতি পর্ব ২২+২৩

#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব- ২২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
–“কাজল তুই কী সত্যি তনয়কে ভালোবাসিস?উত্তরটা দে প্লিয। আমি আর পারছি নাহ। আমার ভিতরে ঠিক কি হচ্ছে আমি তোকে বলে বুঝাতে পারবো নাহ।”
ছোট সাহেবের অসহায়মাখা কন্ঠ শুনে আমার চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো।
দেখে-ই’ বুঝা যাচ্ছে সারাদিন কিচ্ছু খায়নি।
আমি বলে উঠলাম,
—“কিছু খেয়েছেন? ”
ছোট সাহেব মুখটা যেনো বাংলার পাঁচের মতো হয়ে গিয়েছে। কেননা তিনি হয়তো ভাবেননি তার সিরিয়াস প্রশ্নের ঠিক এইরকম পাল্টা প্রশ্ন করবো।

আমি উনার দিকে তাঁকিয়ে রইলাম। মুখটা কেমন শুকিয়ে গিয়েছে। উনি শুকনো মুখে জবাব দিলেন,

—“আমার খাওয়া-দাওয়া তোকে এতো ভাবতে হবেনা। ”

আমি উনার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,

“আপনি হঠাৎ এইসময়? ”

—–“কেনো এখন কাকে আশা করেছিলি? নিশ্চই ওই তনয় নামক লোকটাকে? ”

—-“আমি যাকে ইচ্ছে স্বরণ করি তাতে আপনার কী?”

উনি কিছু বলতে যাবে আমি আবারোও বলে উঠলাম,

—“বাসায় তো আব্বু-আম্মু সবাই নেই। তারা বাইরে গিয়েছেন। তাহলে আপনি আমাদের বাড়িতে ঢুকলেন কীভাবে? ”

ছোট সাহেব আমাদের বাড়ির এক্সটা চাবি বের করে দেখিয়ে বললেন,

—“তোদের বাড়ির এক্সট্রা একটি চাবি আছে আমার কাছে? ”

আমি ছোট্ট করে ‘ওহ ‘ বলে উঠলাম।

—-“তুই কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর এখনো দিচ্ছিস না কেন বলতো? ”

উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন। উনার চোখমুখ দেখে কেমন যেনো লাগছিলো তাই আমিও পিছিয়ে গেলাম।

আমি আমতা আমতা করে বলে উঠলাম,

“কিসের উত্তর? ”
উনি আমার আরো কাছে এসে খানিক্টা তাচ্ছিল্যের হাঁসি দিয়ে বললেন,

“আজকাল তুই আমার প্রশ্নের উত্তর দিতেও দ্বিধায় পড়ে যাচ্ছিস ওয়াও। ”

আমি নিজেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে-ই’ উনি আমার কোমড় চেপে আমাকে নিজের মধ্যে আবদ্ধ করে ফেললেন।

আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেস্টা করতে-ই’, উনি কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললেন,

“যতক্ষন পর্যন্ত আমি নিজের প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছিনা
তোকে আমি ছাড়ছি নাহ। ”

উনি আমার হাতটা ধরে নিজের বুকে বা পাশ টায় রাখেন। আমি চমকে উঠলাম।আমার মনের মধ্যে যেনো উনার প্রতিটি হৃদস্পন্দনের প্রতিধ্বনি অতিবাহিত হচ্ছে। উনি প্রশ্ন করে বলেন,

“এই বুকে অসম্ভব ব্যাথা হচ্ছে রে কাজল। তুই কী কিছু বুঝতে পারছিস? কতটা যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে আমি যাচ্ছি তা কী তুই বুঝতে পারছিস?”

আমি উনার থেকে নিজের হাতদুটো ছাড়িয়ে বললাম,

“আপনার ব্যাথা তো আপনি-ই’ ঠিক করে বুঝে উঠতে পারেন নাহ ছোটসাহেব। আমি কী করে বুঝবো? একটা কথা সবসময়-ই’ মনে রাখবেন। নিজের ব্যাথাটুকু অন্যকে উপলব্ধি করানোর জন্যে
নিজেকে সেই ব্যাথাটুকু ভালো করে উপলদ্ধি করতে হয়। ”

ছোট সাহেব আমাকে ছেড়ে দিয়ে,বিছানায় বসে নিজের চুল খামচে ধরে বললেন,

” একটা সত্যি কথা বলি? আজকে যখন শুনলাম তুই
অন্যকাউকে ভালোবাসতি তখন নিজের মধ্যে আমার কতটা কষ্ট হচ্ছিলো তোকে ঠিক বুঝাতে পারবো নাহ। সব তো ঠিক-ই’ ছিলো কাজল তাহলে
কেনো ওই তনয় নামক লোক তোর জীবনে ফিরে এলো?”

আমি মলিন হেঁসে বললাম,

—“আপনাকে আমি বলেছিলাম ছোটসাহেব। মানুষের জীবন বড়-ই’ অদ্ভুদ। কখন কি হয়ে যায় তা কেউ বুঝতে পারেনা। ”

বাইরে থেকে তীব্র বাতাস অতিবাহিত হচ্ছে। বাতাসগুলো জানালা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে আমার চুলগুলোকে যেনো আলতো করে ছুয়ে দিয়ে যাচ্ছে।

ছোট সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে আমার চুলগুলো আলতো হাতে পরম যত্নে কানের পিছনে গুজে দিতে দিতে বলছেন,

“বিশ্বাস কর কাজল। যখন শুনলাম তোর বাবা ওই লোকটার সাথে তোর বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে তখন আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দেই। ”

আমি অসহায় দৃষ্টিতে উনার দিকে তাঁকিয়ে বললাম,

“আপনার ভিতরে এমন এক দহন হচ্ছে। যার পরিনতি খুব ভয়ংকর। ”

উনি আচমকা আমার গালচেপে ধরে বললাম,

—–“আমার ভিতরে এই দহনের সৃষ্টি কে করেছে?
তুই করেছিস? তুই যদি ভেবে থাকিস তুই এই বিয়েতে রাজি হয়ে যাবি। তাহলে একটা কথা কান দিয়ে শুনে রাখ। আমি থাকতে তা কখনো-ই’ হবে নাহ। তোকে অন্য কেউ পেতে পারেনা। তোর উপর শুধু আমার অধিকার। ”

—–“কিসের অধিকার আপনার আমার উপর? কে আমি আপনার? ”

উনি খানিকক্ষণ চুপ থেকে বললেন,
—–”
“হ্যা তোর উপর আমার সবথেকে বেশি অধিকার।
কেননা তোকে আমি…

কথাটি বলতে গিয়েও থেমে যায় রুদ্রিক।

আমি জোড়ে হেঁসে উঠলাম। ছোট সাহেব অবাক হয়।

আমি হেঁসে-ই’ বলে উঠলাম,

—-“আপনার তো নিজের অনুভুতিটুকু ও প্রকাশ করার ক্ষমতা নেই। তাহলে কিসের জোড়ে আমার উপর অধিকার ফলাচ্ছেন বলতে পারেন? ”

আমার কন্ঠে ছিলো একরাশ রাগ। উনি কিছু বলতে নিলে-ই’ আমি উনার হাত ধরে ঘরের বাইরে নিয়ে গিয়ে, আমি নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম।

(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

উনি দরজা ধাক্কিয়ে বলে,

—-“এইসব কি অসভ্যতামি কাজল? দরজা খোল বলছি। ”

আমি দরজার ওপরপাশ থেকে কড়া কন্ঠে বললাম,

—“যখন নিজের অনুভুতিগুলো বুঝার ক্ষমতা অর্জন করবেন। তখনি আমার সামনে এসে এইসব অধিকার ফলানোর কথা বলবেন। ”

রুদ্রিক রাগ হয় নিজের উপর। সে দেয়ালে জোড়ে পাঞ্চ মারে। রুদ্রিক অনেককিছু-ই’ বলতে চায় কাজলকে,কিন্তু ঠিক গুছিয়ে বলে উঠতে পারেনা।
রুদ্রিক গটগট করে বেড়িয়ে চলে যায়।

‘ছোট সাহেব ‘ চলে যেতে-ই’ আমি বিছানায় বসে পড়ি। আমার মনের মধ্যে যে ঝড় চলছে তা আমি কী করে বুঝাবো? একদিকে ‘তনয় ভাই ‘ যাকে একসময় আমি খুব করে ভালোবাসতাম। অন্যদিকে ‘ছোট সাহেব’ যাকে আমি আকড়ে ধরে থাকতে চাই। কিন্তু উনি তো নিজেত অনুভুতি-ই’ ঠিক করে বুঝে উঠতে পারছেন নাহ।

আকাশের দিকে তাঁকিয়ে বললাম,

“ছোট সাহেব সময় থাকতে নিজের অনুভুতি প্রকাশ করে ফেলুন। নাহয় বড্ড দেরী হয়ে যাবে। ”

__________

লাজুক সোফায় বসে দিয়ার কার্যকলাপ দেখছে। দিয়া বেশ মনোযোগ দিয়ে-ই’ কফি বানাচ্ছে। দিয়া কফিটা নিয়ে এসে লাজুকের হাতে ধরিয়ে দেয়। লাজুক কফি কাপটা হাতে নিয়ে এক চুমুক দেয়। বেশ ভালো-ই’ হয়েছে খেতে। দিয়া উৎসুক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে লাজুকের দিকে। লাজুক মুঁচকি হেঁসে বলে,
—“খুব ভালো হয়েছে কফিটা। ”

দিয়া খুশি হয়ে বলে,

–“নাকবোচা হ্যান্ডসাম এসিসটেন্ট আপনার ভালো লেগেছে? ওয়াও এই খুশিতে একটা সেল্ফি হয়ে যাক?

লাজুক মাথা নাড়ায়। দিয়া লাজুকের সাথে একটা সেল্ফি তুলে পোস্ট করে দেয়।

দিয়া লাজুকের পাশে বসে বলে,

“আচ্ছা আপনি কয়দিন এইভাবে অবিবাহিত থাকবেন? আজকে নাহয় আমি আপনার যত্ন করলাম কালকে কে করবে? ”

লাজুল বিড়বিড় করে বলে,

“আপনি ছাড়া আবার কে করবে? ‘

দিয়া ভ্রু কুচকে বলে,

—” কি বিড়বিড় করছেন? ”

লাজুক মাথা নাড়িয়ে বলে,

—“তেমন কিছু- ই’ নাহ। হুম আপনি কথাটা ঠিক বলেছেন এইবার একটি বিয়ে করে নাও খুব দরকার,কিন্তু আপনি বিয়ে করবেন নাহ? ”

লাজুকের প্রশ্নে দিয়া হেঁসে বলে,

—“এইসব বিয়ে মানে-ই’ঝামেলা। আমি আবার হেব্বি রিলাক্স। নিজের লাইফ নিয়ে ভালো-ই’ আছি। সেফ্লি তুলি মজা করি ব্যাস। লাইফে আর কি লাগে?”

লাজুক খানিক্টা ধরা গলায় বলে,

—-“দিয়া ম্যাম কাউকে ভালোবেসে দেখুন। লাইফটা আরো সুন্দর হবে। ”

লাজুকের প্রশ্নে দিয়া দমে যায়। লাজুক দিয়ার দিকে গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

——“একজন আপনাকে এক সমুদ্রের সমান ভালোবাসে সেই খবর কী আপনি রাখেন? ”

দিয়া কথাটি শুনে চমকে উঠে। দিয়া বলে উঠে,

—-“আমাকে যেতে হবে। রাত হয়েছে বেশ। ”

কথাটি বলে-ই’ দিয়া কোনোরকম বেড়িয়ে যায়। লাজুক জানে দিয়া সবকিছু-ই’ বুঝতে পারে। তবুও শুধু তার পালাই পালাই করে।

___________________
আফজাল শেখ আপাতত ইশানি শেকের সাথে জরুরী কথা বলতে চাইছেন। তাই ইশানি শেখকে ডেকে পাঠিয়েছেন। ইশানি শেখ রুমে প্রবেশ করে বললেন,

“কিছু বলবি? ”

আফজাল শেখ ইশানিকে বসতে বলে নিজেও সোফায় বসে খানিক্টা চিন্তিত গলায় বলে,

“ইকবাল সাহেবের প্রস্তাবের কথা আমি ভেবেচিন্তে দেখলাম। উনার মেয়ে যথেষ্ট ভালো্। রুদ্রিকের সাথে বিয়ে হলে মন্দ হবেনা,কিন্তু আমার চিন্তা একজায়গায় রুদ্রিক রাজি হবে তো? ”

ইশানি শেখ বললেন,

—“অবশ্যই হবে। তাছাড়া এতে আমাদের বিসনেজেরও বেশ বেনিফিটস হবে। আমাদের বিসনেজ এখন বেশ একটা ভালো হচ্ছে নাহ। এই মুহুর্তে ইকবাল শেখ যদি আমাদের বিয়াই হয়ে আমাদের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে এর থেকে ভালো আর কী হবে? ”

—-“আমার মনে হয়না রুদ্রিকের সাথে আলোচনা না করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে। আমার ছেলেকে আমি যতটুকু জানি তাকে না জানিয়ে বিয়ের কাজ এগোলে হিতে বিপরীত হবে। ”

জেসমিন শেখ রুমে প্রবেশ করতে করতে কথাটি বললেন।

ইশানি শেখ বাঁকা হেঁসে বললেন,

“জেসমিন তুমি অন্তত এইটা তো জানো? ছেলেটা তোমার হলেক রুদ্রিক আমার কথার বাইরে একটি কাজ ও করবেনা। আমি যদি তাকে বলি তাহলে সে কিছুতে-ই’ দ্বিমত পোষণ করবে নাহ। ওয়েট আমি এখুনি রুদ্রিককে ফোন করে বাসায় আসতে বলছি । তারপর না হয় সব কথা সামনাসামনি হবে। ”

কথাটি বলে ইশানি রুদ্রিকের নাম্বারে কল করে।

ক্লাবে বসে ওয়াইনের গ্লাস হাতে নিয়ে বসে আছে রুদ্রিক। অনেক্ষন ধরে তার ফোন বেজে চলেছে। রুদ্রিক ফোনের ক্রিনে তাঁকিয়ে দেখে ‘ইশানি শেখের নাম ‘ রুদ্রিক ফোন কেটে দেয়।অনেক কিছু-ই’ তার মাথায় ঘুড়পাক খাচ্ছে।

তখনি তার কাঁধে সাদি হাত রাখে। সাদিকে দেখে রুদ্রিক দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

—-“তুই এখানে কি করছিস? ”

সাদি রুদ্রিকের পাশে বসে বলে উঠে,

—” শান্ত হও রুদ্রিক।আমি জানি তোর মনে এখন কী চলছে। কাজল যাকে ভালোবাসতো সে হঠাৎ চলে আসাটা তুই ঠিক মেনে নিতে পারছিস না তাইতো?
সোজাসোজি কাজলকল নিজের মনের কথা বলে দে ভাই। ”

রুদ্রিক অবাক হয়ে বলে,

—-“তুই এইসব আমাকে বলছিস কেন? তুই ও তো কাজলকে ভালোবাসতি তাইনা? ”

সাদি খানিক্টা হেঁসে বলে,

—“সত্যি তুই বড্ড অবুঝ রুদ্রিক। তোকে জেলাস করানোর জন্যে এতোকিছু করেছি অথচ তুই বুঝতে ও পারলিনা। ”

রুদ্রিক বলে উঠে–

“তার মানে তুই এতোদিন আমার সাথে নাটক করেছিস? ”

সাদি ভ্রু কুচকে বলে,

—“হুম তাই,কিন্তু যে কাজের জন্যে এতোকিছু করলাম সেই কাজটা-ই’ তো হলো নাহ। সময় থাকতে নিজের মনের কথা খুলে বল কাজলকে রুদ্রিক। একটা কথা মাথায় রাখবি কাজলের মতো মেয়ে পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। তাছাড়া কাজলের মনেও তোর জন্যে জায়গা আছে রুদ্রিক। ”

রুদ্রিক কিছুটা অভিমানি সুরে বলল,

—-“সব অনুভুতিগুলো কেনো খুলে বলতে হবে? কাজলের তো বুঝে নেওয়া উচিৎ তাইনা? ”

সাদি রুদ্রিকের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠে,

—-” কাজল তোর অনুভুতি গুলো বুঝতে পারেনা। এমন কিন্তু নয়। সে ঠিক-ই’ বুঝে। ”

—–“তবুও কেনো অবুঝ হয়ে থাকে? ”
সাদি রুদ্রিকের প্রশ্নে মুচকি হেঁসে বলে,

“রুদ্রিক ভাই আমার। মেয়েরা সবসময়-ই’ অনুভুতিপ্রবন হয়। তারা সবসময় চায় তাদের প্রিয়জনের মুখে ‘ভালোবাসি ‘ কথাটি শুনতে। ভালোবাসি কথাটিতে একপ্রকার মায়ামিশ্রিত আবেগ মিশানো রয়েছে। আই লাভ ইউ কথাটির থেকে ‘ভালোবাসি’ কথাটি অধিক সুন্দর।”,

সাদির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে রুদ্রিক। এতোদিন সে সাদির মতো একজন ভালো বন্ধুকে ভুল বুঝেছে।কথাটি ভেবে-ই’ রুদ্রিক খারাপ লাগছে। রুদ্রিক কিছু না ভেবে সাদিকে জড়িয়ে ধরলো। সাদি ও তার বন্ধুকে জড়িয়ে ধরলো।

____রাত প্রায় ২টো। অন্ধকারে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভেবে মুঁচকি হাঁসছে রুদ্রিক। সে কিছু একটা ভেবে কাজলকে মেসেজ দিলো।#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
#পর্ব- ২৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
—“তোর মতো মেয়ে রাফসিন শেখ রুদ্রিকের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে ভাবা যায়? যার পিছনে সারাদিনে মেয়েরা ঘুড়ঘুড় করে সেই ছেলের ঘুম তুই কেড়েছিস। কত্ত বড় সাহস তোর। ছোট সাহেবের এমন মেসেজে আমি চমকে উঠলাম। সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি মেসেজ এলো,
“নিশ্চই তুই খুব ভালো করে ঘুমাচ্ছিলি তাইনা? ঘুম ভালো হওয়ার-ই’ কথা নিজের আগের ভালোবাসা ফিরে এসেছে তাইনা । ”

রুদ্রিক মেসেজটি দিয়ে হাঁসলো। রুদ্রিক জানে এখন কাজল তাকে নিয়ে ভাব্বে। রুদ্রিকের ভাবনার মাঝে-ই’ একজন লোক এসে বললেন,

—“স্যার আপনার কথামতো আমরা সব রেডি করে ফেলেছি। ”

রুদ্রিক লোকটির দিকে তাঁকিয়ে বললেন,

—-“যেভাবে করতে বলেছিলাম সেভাবে-ই’ করেছেন তো? ”

লোকটি মিষ্টি হেঁসে বললেন,

—“অবশ্যই স্যার। আপনি ঠিক যেমনভাবে সবকিছুর আয়োজন করেছিলেন ঠিক সেভাবে-ই’ সবকিছু করেছি। ”

রুদ্রিক ‘ধন্যবাদ ‘ বলে লোকটিত হাতে এক হাজার একটি নোট বের করে দেয়। লোকটি নোট টা নিয়ে চলে যায়। রুদ্রিক দৃষ্টি সামনের দিকে।

সে পকেটে হাত গুজে একটি সিগারেটের প্যাকেট বের করে সিগারেটটা ধরাতে যায় কিন্তু সে ধরায় নাহ। পা দিয়ে পিষে ফেলে। রুদ্রিক গাড়ি বের করে বেড়িয়ে পড়ে।

অন্যদিকে,

রুদ্রিকের নাম্বার কালকে থেকে বন্ধ। ইশানি শেখ চারদিকে পাইচারি করে যাচ্ছে। এই বিয়ের প্রস্তাব হাতছাড়া করা যাবে নাহ। কম্পানির অনেক লাভ হবে, যদি এই বিয়েটা হয়। ইশানি শেখ মনে মনে স্হির করে ফেলেন। যেকরে-ই’ হোক এই বিয়েতে রুদ্রিককে রাজি করাতে হবে। কথাটি ভেবে ইশানি শেখ
ইকবাল শিকদারের নাম্বারে ফোন করেন।

ইকবাল শিকদার বলে উঠেন,

—“জ্বী মিস ইশানি বলুন। ”

—-“আসলে আমি আপনাকে এবং আপনার মেয়েকে কালকে আমাদের বাড়িতে রাতের ডিনারের জন্যে ইনভাইট করতে চাই। তখন না হয় বিয়ের ব্যাপারটা এগিয়ে নেওয়ার যাবে।তখন রুদ্রিক ও উপস্হিত থাকবে। এতে সবথেকে ভালো দিকটি হচ্ছে ছেলে মেয়ে একে-অপরকে দেখে নিবে। ”

ইকবাল শিকদার হেঁসে বললেন,

—“অবশ্যই আমার আপনার প্রস্তাব পছন্দ হয়েছে। ”

_______এদিকে,
উনার মেসেজের ঠিল কিরকম উত্তর দিবো আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি নাহ। আমি কোনো উত্তর না দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। বেশ বেলা হয়ে গেছে। ঘড়িতে এখন বাজে ১০টা। পাশে রাখা কফিটা মুখে দিয়ে রেখে দিলাম। আমার এখন কিছু-ই’ ভালো লাগছেনা। কিন্তু হুট করে ‘তনয় ‘ভাইয়ের ফিরে আসাটা আমি ঠিক মেনে নিতে পারছি নাহ।
নিতিয়া ও তনয় ভাই এখানে তনয় ভাইয়ের আপন খালামনির বাসায় থাকছেন। তারা এখনো এখানে আছেন নাকি সিলেটে ফিরে গিয়েছেন? প্রশ্ন জাগলো মনের ভিতর আমার।
—-“কাজল এখন কেমন আছিস তুই?”

নিতিয়া রুমে ঢুকে আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে ফেলল।

আমি কোনরকম শুকনো গলায় বলে,

—“আছি ভালো-ই’। তা তোদের তো সিলেটে ফিরে যাওয়ার কথা। যাবিনা? ”

নিতিয়া মুখ ফুলিয়ে বলে,

—“কেনো আমরা চলে গেলে বুঝি ভালো হবে? ”

আমি বলে উঠলাম,

—-“নাহ । আসলে আমি শুধু একটু জিজ্ঞাসা করলাম। ”
মা রুমে ঢুকে বলে,

—“এইসব কি প্রশ্ন কাজল? তোর বাবা তোর সাথে এখন তনয়ের বিয়ের কথা ঠিক করছেন। সুতরাং নিতিয়াদের এখন সিলেটে যাওয়ার প্রশ্ন-ই’ উঠেনা।”

আমি বলে উঠলাম,

—“বিয়েতে তো আমি এখনো ‘হ্যা ‘বলেনি। ”

—–“তুই তো দ্বিমত ও পোষন করেসনি। ”

—-“কিন্তু মা….

আমার কথার মাঝে মা বলে উঠে,
—-কিসের কিন্তু তুই যাকে ভালোবাসিস তার সাথে-ই’ তো তোর বিয়েটা হচ্ছে। তাহলে সমস্যা টা কী? ”

আমি মায়ের দিকে স্হির দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বলে উঠলাম,

—-“অনেকসময় ভালোবাসা ফিকে হয়ে যায়।। কিছু ভালোবাসা আড়ালে থাকতে থাকতে তা একসময় হারিয়ে যায় অন্য কারো ভালোবাসার মায়াজাল। ”

হ্যা ছোট সাহেবের মায়াজালে আমি পড়ে গিয়েছি। মনে মনে কথাটি বললাম আমি।

তনয় রুমে ঢুকে কাজলের এমন কথায় কিছুটা থেমে যায়। ভালোবাসা ফিকে হয়ে যায় মানে কি? তারমানে কী কাজলরেখা এখন তাকে ভালোবাসা না? মনে মনে প্রশ্ন করলো নিজেকে তনয়।

আমার কথা শুনে নিতিয়া আমার পাশে এসে বলে উঠলো,

—-“তোর কথা আমি সত্যি বুঝতে পারছি নাহ কাজল। তোর মনে হঠাৎ কি চলছে।”

নিতিয়ার প্রশ্নে আমি জানালার আকাশে দিকে তাঁকালাম। আমার মা কিছু বলবে তখনি কলিং বেল বেজে উঠে। মা তড়িঘড়ি করে দরজা খুলে দেখে
‘রুদ্রিক ‘। রুদ্রিককে দেখে মা বলে উঠেন,

—-“আরে ছোট সাহেব এসো ভিতরে এসো বাবা। ”

রুদ্রিক ভিতরে ঢুকে-ই’ বলে,

—“আসলে কাজলের শরীরের অবস্হা জানার জন্যে এসেছিলাম। ”

রুদ্রিকের কথা শুনে কাজলের মা এসে বলে উঠলেন,

—-“। তোমার জন্যে আমার মেয়েটি এইরকম একটা বিপদ রক্ষা পেলো তারমধ্যে তুমি আমাদের বাড়িতে এসেও খবর নিচ্ছো। সত্যি ছোট সাহেব তুমি খুব দায়িত্ববান ছেলে। ”

রুদ্রিক হাঁসে।

কাজলের মা বলে উঠলেন,

—“তুমি চাইলে কাজলের ঘরে যেতে পারো।
তনয় ও নিতিয়াও আছে। ”

তনয়ের কথা শুনে রাগ উঠলো রুদ্রিকের। এই লোকটা এতো কাজলের আশেপাশে ঘুড়ঘুড় করে। ইচ্ছে করে মাথাটা ফাটিয়ে দিতে। কথাটি ভেবে রুদ্রিক ও কাজলের রুমের দিকে পা বাড়ায়।

তনয় ভাই এগিয়ে এসে বললেন,

—-“কাজল তোমার সাথে আমার কিছুটা পারসোনালি কথা বলাটা প্রয়োজন। কিছু কথা ক্লিয়ার করতে চাই। ”

তখনি ছোট সাহেব শুকনো মুখে দরজায় নক করে বলে উঠে-

“ভিতরে আসবো? ”

তনয় রুদ্রিককে দেখে বলে,

—“আপনি হঠাৎ এইসময়? ”

রুদ্রিক তনয়ের দিকে তাঁকিয়ে ক্ষিপ্ত গলায় বলে,

—“কাজলকে দেখতে এসেছিলাম। আপনার কোনো সমস্যা? ”

তনয় হাত ভাজ করে বলে,

—“আমার সমস্যা হবে কেনো? কোনো সমস্যা নেই।”

ছোট সাহেবকে দেখে আমি পিছনে ঘুড়ে তাঁকিয়ে দেখি উনি স্হীর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে। হয়তো অনেক কিছু আমাকে বলতে চায়। আমি মুখ ঘুড়িয়ে ফেলে তনয় ভাইকে উদ্দেশ্য করে খানিক্টা জোড়ে-ই’ বলি,

—-“তনয় ভাই আপনি আমার সাথে পারসোনালি কথা বলতে চান তাইতো? ঠিক আছে আমিও প্রস্তুত।
বিকালে আমি আপনাকে রেস্টুরেন্টে এর লোকেশন সেন্ট করে দিবো। তখন না হয় আমাদের ভিতেরের সব পারসোনাল কথা বলে নিবো। ”

কাজলের কথা শুনে রুদ্রিকের রাগ করা স্বাভাবিক হলেও সে রাগ করলো নাহ। বরং হাঁসলো খানিক্টা। কেননা রুদ্রিক জানে কাজল তাকে জেলাস ফিল করানোর জন্যে এইসব বলছে কিন্তু রুদ্রিকের মাথায় তো অন্য চিন্তা চলছে।

______________

বিকেল প্রায় ৪টা। ভাবলাম আজকে একটি শাড়ি পড়বো। যে-ই’ ভাবা সেই কাজ হুট করে একটি শুভ্র রংয়ের শাড়ি চুজ করলাম। শুভ্র রংটা ছোট সাহেবের খুব পছন্দের। যদিও ‘তনয় ভাইয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি,কিন্তু তবুও ছোট সাহেবের পছন্দটা-ই’ আমার কাছে সব।

হাতের পার্সটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম নিজের গন্তব্যে।

বাড়ি থেকে বের হতে-ই’ ছোট সাহেবকে আমার নজর পড়লো। উনি গাড়ির সাথে হেলান দাঁড়িয়ে আছেন। বরাবরের মতো নিজের এক্টা ড্র্বেশিং লুক নিয়ে। উনি আমার দিকে একপলক তাঁকিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাত টা ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন। ব্যাপারটা এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো যে, আমি তাজ্জব বনে গেলাম। উনিও ফ্রন্ট সিটে বসে সানগ্লাসটা পড়ে গাঠি স্টার্ট দিলেন। আমি কিছু বলবে উনি আমার ঠোটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়ে, আমার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলেন,

“ডোন্ট সাউট। একজায়গা যাবো সেখানে গেলে-ই’ সব জানতে পারবি। ”

কথাটি বলে উনি দূরে সরে আসেন । আমি শুকনো ঢুক গিললাম। উনি আমাকে ঠিক কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? উনার মুখে বাঁকা হাঁসি ঝুলছে।

বাকীটা আগামী পর্বে….

চলবে কী?

(কালকের পর্বটা স্পেশাল হবে 🤭)

বি দ্রঃ আজকের পর্ব হাবিজাবি লাগলে সরি। তাড়াহুড়োর ফল। 🤐এমনিতেও আজকে লিখার ইচ্ছে ছিলো নাহ)

বাকীটা আগামী পর্বে….

চলবে কী?

(অনেক বড় পর্ব দিছি। ঘটনমূলক কমেন্ত করে দিয়েন ওখে?)

লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here