#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
#পর্ব- ১৪
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
–“ছোট সাহেব! জানেন ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়।” কথাটি আমি লিখে দ্রুততার সাথে উনাকে মেসেজ করে পাঠিয়ে দিলাম। রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে রুদ্রিক। গাঁয়ে তার ফরমাল সাদা শার্ট গলায় ঝুলে থাকা টাইয়ের নাট টা খুলে ফেললো। প্রচন্ড গরম লাগছে। একটিবার ‘মায়া কুঞ্জ’ বাড়িতে যেতে হবে। রুদ্রিকের এই গেট-আপ চেঞ্জ করে, নরমাল ড্রেস-আপ করতে হবে। রুদ্রিকের ভাবনার মাঝে-ই’ তার ফোনের মেসেজ টন বেঁজে উঠলো। কাজলের মেসেজ পেয়ে। কিছুক্ষন সেদিকে তাঁকিয়ে রইলো রুদ্রিক।
“ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার অধ্যায় শুরু? কীভাবে? ”
কথাটা আনমনে বিড়বিড় করলো রুদ্রিক। নাহ কাজলের থেকে-ই’ জানতে হবে।
কথাটি ভেবেই রুদ্রিক রাস্তের এক কিনারে গিয়ে, নিজের ফোনটা বের করে কাজলের নাম্বারে ফোন করলো।
আমার মেসেজ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছোট সাহেবকে আমাকে ফোন দিলেন। উনার নাম্বার দেখে আমার নিজের অজান্তেই মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো।
ছুটকি একবার আমার আমার ফোনের দিকে তাঁকালো আরেকবার আমার দিকে। তারপর ভ্রু কুচকে বলল,
“কীরে আপাই? তোকে কে এমন ফোন দিলো? যে তোর মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো?”
ছোট সাহেবের ভাবনায় এতোটাই মগ্ন ছুটকি যে এত্তোক্ষন এই রুমে ছিলো তার আমি খেয়াল করেনি। তাড়াতাড়ি আমি ছোট সাহেবের ফোন কেটে দিলাম।
কাজল এইভাবে হুট করে কল কেটে দেওয়ায় রুদ্রিক কিছুটা রেগে গেলো। এই মেয়ের এত্তো সাহস? রাফসিন শেখ রুদ্রিকের ফোন কেটে দেয়?
আমি ছুটকির দিকে তাঁকিয়ে বললাম,
“এই তুই এখন নিজের রুমে যা? পড়া নেই তোর? ”
ছুটকি আমার কথা শুনে মুখটা বেকিয়ে বইগুলো হাতে গিয়ে দ্রুতপায়ে বেড়িয়ে গেলো। আমার দিকে এমনভাবে তাঁকিয়ে ছিলো, মনে হয় এখুনি চোখ দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলবে। ছুটকি বেড়িয়ে যেতেই, আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে, দরজা আটকে ছোট সাহেবকে কল দিলাম।
কাজলের কল পেতেই রুদ্রিক কিছুক্ষন তাঁকিয়ে রইলো। তারপর কিছু একটা ভেবে ফোনটা রিসিভ করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কাজল বলল,
“ছোট সাহেব! আমি জানি আপনি আমাকে এখন বকা দিবেন। বলবেন তুই সামান্য ড্রাইভারের মেয়ে হয় এই ‘রাফসিন শেখ রুদ্রিকের’ ফোন কেটে দিলি? এত্তো বড় সাহস তোর? যদি এইসব বলার মুড আপনার থেকেও থাকে,কিন্ত প্লিয এখন এইসব বকা শুনার মুড অন্তত আমার নেই। ”
কাজলের কথা শুনে রুদ্রিক হাঁসলো। যাকে বলে নিশব্দ হাঁসি। ফোনের অপার থেকেও কাজল রুদ্রিকের হাঁসির শব্দ পাচ্ছে।
রুদ্রিকের আশেপাশে গাড়ি চলাচল করছে। কেননা রুদ্রিক রাস্তায় মোড়ের কিনারে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
গাড়ির শব্দ পেয়ে আমি বলে উঠলাম,
“ছোট সাহেব আপনি কী রাস্তায়? ”
—“হু। রাস্তায় আছি। ”
——“আপনার তো এখন ক্লাবে থাকার কথা। ”
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
“আসলে আমি কিছু কাজে গিয়ছিলাম। আর এইটা বল তুই হঠাৎ এই মেসেজ দিলি কেন? ”
কথাটা ঘুড়ানোর জন্যে বলল রুদ্রিক।
আমি মুচকি হেঁসে বললাম,
“কেন বুঝিন নি আমার কথা? আপনার তো এত্তোগুলো গার্লফ্রেন্ড কিন্ত ভালোবাসা ঠিক কী দিয়ে শুরু হয় তা জানেন নাহ? ”
কাজলের এমন প্রশ্নে রুদ্রিক কিছুটা ইতহস্ত হয়ে পড়েন। আমি কিছুক্ষন চুপ থেকে কিছুটা আবেগময় কন্ঠে বললাম,
“ভালোলাগা থেকেই ভালোবাসার সৃষ্টি। কাউকে যদি আপনার ভালোলেগে যায় তাহলে সেখান থেকেই ভালোবাসার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।”
—–“এইসব কথা আমার মাথায় ঠিক ঢুকে নাহ।
এইসব ভালোবাসার কথা আমাকে দিয়ে হবে নাহ।”
কাজল হাঁসলো। রুদ্রিকের কথা শুনলে তার হাঁসি-ই’ পায়। বড্ড অবুঝ রুদ্রিক। কাজল খানিক্টা জড়ানো কন্ঠে বলল,
“ভালোলাগার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা থেকে’ই ভালোবাসার নামক নামক বিশাল সমুদ্রের সৃষ্টি হয়। ”
কথাটি শুনে আপনমনে হাঁসলো রুদ্রিক। সে অনেককিছুই’ বুঝে,কিন্তু ঠিক তা প্রকাশ করতে চায়না।
—-” মনে হচ্ছে ভালোবাসা নিয়ে তুই পিএইচডি করে ফেলেছিস। কাউকে আগে ভালোবেসে ফেলেছিস নাকি? ”
কথাড়ি শুনে আমার বুকটা ধক করে উঠে। অতীতের সেই বিষাদময় স্মৃতি মনে পড়লেও, আমার কান্না পাচ্ছে নাহ। বরং অন্যরকম ভালো লাগছে।
আমি হেঁসে বললাম,
“হুম আমি তো একজনকে অনেক ভালোবাসতাম। বলতে গেলে এখনো ভালোবাসি। ”
কথাটি শুনে-ই’ রুদ্রিকের মনে হয় জান যায় যায় অবস্হা। রুদ্রিক শুকনো ঢুক গিলে বলল,
“কাজল তুই সাদিকে ভালোবাসিস? দেখ তুই কিন্তু সাদিকে ভালোবাসতে পারিস না। তুই সাদিকে কেন? তুই কাউকে ভালোবাসতে পারিস নাহ। বুঝেছিস? ”
আমি শুধু ভাবতে পারছিনা। এইসময় উনার ফেসটা ঠিক কিরকম ফানি হতে পারে। আমি শুধু বললাম,
“সত্যি ছোট সাহেব। আপনি মজা ও বুঝতে পারেন নাহ। রাখছি। ”
কথাটি বলেই আমি কট করে ফোন কেটে দেই। কাজলের কথায় রুদ্রিক বোধহয় সস্হি পেলো। এই মেয়েটা কারণে অকারণে তাকে ভয় দেখিয়ে দেয়। কিন্তু এই কথাটা তো ঠিক সে এক মুহুর্তের জন্যে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। যাকে বলে কাজলকে হারানোর ভয়। আচ্ছে এমনটা হয় কেন?
রুদ্রিক এইসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে। আজকে এমনিতে সেই অনেক টায়ার্ড। কালকে আবার ভার্সিটির ফাংশনের সব আয়োজন করতে হবে। কথাটি ভেবেই রুদ্রিক নিজের কাঁধের ব্যাগ টা ঠিক করে হাঁটা শুরু করে
এদিকে আমি ফোনটা রেখে হাঁসছি৷ সত্যি উনি অদ্ভুদ! হাঁসতে হাঁসতে কখন যেনো চোখ থেকে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। মানুষ যতই চেস্টা করুক না কেন? অতীতের বিষাদমন স্মৃতি হুট করে ভেঁসে উঠলে,চোখ থেকে অনাচ্ছাকৃতভাবে কান্না আসবেই। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের চোখের সামনে অন্য কারো হতে দেখেছি। এর থেকে যন্ত্রনাময় স্মৃতি আর একটা হতে পারে বলে আমি মনে করিনা। কিন্তু ছোট সাহেবের কথা মনে পড়তেই আমার মনে, এক অন্যরকম শান্তি অনুভব হয়।
আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যে-ই’ করে। কথাটা ভেবেই আমি নিজের ফোনে উনার ছবি বের করি। কালো শার্টে এটিটিউড স্টাইলে দাঁড়িয়ে আছেন।মুখে রয়েছে উনার বাঁকা দাঁতের হাঁসি। আমি ছবিটা দেখে আনমনে বলে উঠলাম,
“আচ্ছা আমি কী আপনাকে ভালোবাসি? ”
উহু বলবো নাহ। আগে আপনার মনে আমার জন্যে যে সুপ্ত অনুভুতি রয়েছে তা আপনার মুখ দিয়ে স্বীকার করাবো হুহ। ”
তখনি আমার মা এসে বললেন,
“কিরে কাজল কি এতো ভাবছিস? কখন থেকে খেতে ডাকছি তোকে। আয় খেতে।
আমি তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,
” তেমন কিছু ভাবছিলাম নাহ মা!”
মা আমার আরেকটু কাছে এসে বললেন,
“কয়েকদিন ধরে-ই’ তোকে খেয়াল করছি কাজল। তুই কি নিয়ে যেনো চিন্তা করিস। ”
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
“আমি আবার কি নিয়ে চিন্তা করবো?”
মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“তুই যতই লুকিয়ে রাখার চেস্টা করিস না কেন? আমি তো তোর মা আমি বুঝি তুই কিছু নিয়ে তো চিন্তা করছিস। ”
আমি জানিনা মা তোর মাথায় এখন কী ঘুড়পাক খাচ্ছে, কিন্তু একটা কথা-ই’ বলবো। যা করবি ভেবে চিন্তে করবি কিন্তু।
আরেকটা কথা জীবনে সবসময় নিজের সকল কথা আবেগ আমার কাছে শেয়ার করবি। তোর মা অতোটাও খারাপ নয় যে মেয়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাবে।”
মা এর কথা শুনে আমি মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। মায়ের কাছ থেকে কখনো-ই’ কিছু লুকানো যায়না।
__________________
ইশানী শেখ ক্লান্ত হয়ে সোফায় মাথা এলিয়ে দিলেন।
ইশানী শেখকে দেখে একজন সার্ভেন্ট এসে, গরম ধোয়া উঠা কফি নিয়ে আসে। ইশানী শেখ কফির মুখ
আফজাল শেখ নিজের বোনকে দেখে এগিয়ে এসে বললেন,
“তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিলো?
ইশানি শেখ কফির কাপে চুমুক দিয়েই বললেন,
” বল কী বলবি? ”
—-“ব্যাংক থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো ক্যাস তুলেছিস তুই। কিজন্যে জানতে পারি? ”
ইশানি শেখ গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“এই কম্পোনিতে আমারাও শেয়ার আছে। তাই আমি চাইবো তুই আমাকে অন্তত ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবি নাহ। ”
আফজাল শেখ খানিক্টা গলা খাকারি দিয়ে বললেন,
“আচ্ছা। সেসব কথা বাদ দে। আমি যেজন্যে তোর সাথে তোর কথা বলতে এসেছি। তা হলো রুদ্রিকের বিয়ের ব্যাপারে৷ ”
ইশানি শেখ ভ্রু কুচকে বললেন,
“রুদ্রিক সবে মাত্র ভার্সিটিতে এখুনি বিয়ের ব্যাপারটা বেশ তাড়াহুড়ো হয়ে যাবেনা? ”
—-“আমি চাইছিলাম রুদ্রিককে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা দিতে। এতেই ভালো হবে। তাছাড়া এই বিয়ের মাধ্যমে যদি রুদ্রিক ও আমার মধ্যে দুরত্ব কমে যায়। তাতে ক্ষতি কী? ”
সদর দরজার কাছে আসতেই রুদ্রিকের কানে আফজাল শেখের কথা ভেসে উঠে।#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব- ১৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
—” আমার লাইফ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিংবা চর্চা করার অধিকার আমি আপনাকে কবে থেকে দেওয়া শুরু করলাম। তাতে তো আমার ঠিক মনে পড়ছে নাহ। ” কথাটা বলে’ই রুদ্রিক পকেটে হাত ঢুকিয়ে ড্রইং রুমে বসে গেলো। রুদ্রিককে দেখে আফজাল শেখ উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
“রুদ্রিক তুমি আমাকে যত-ই’ ঘৃণা না করো, কিন্তু একটা কথা তো মানবে আমি তোমার জন্মদাত্রি পিতা। তোমার লাইফের কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার রাইট আমারও আছে।
রুদ্রিক হাঁসলো। যাকে বলে বিদ্রুপ হাঁসি।
অন্যদিকে,
আমি ছুটকির পাশে বসে মাকে ডেকে বললাম,
” মা ক্ষিদে পেয়েছে। তাড়াতাড়ি খেতে দাও।
মা রান্নাঘর থেকে খাবার এনে টেবিলে সাঁজিয়ে রেখে বাবাকে ডাক দিলেন। বাবা এসে খাবার টেবিলে বসে পড়লেন। বাবা শুধু বার বার খাবার নাড়ছেন হয়তো কিছু বলতে চাইছেন কিন্তু বলতে গিয়েও বলতে পারছেন নাহ। বাবার অবস্হা বুঝতে পেরে আমি বললাম,
“বাবা কিছু বলবে?
বাবা এইবার গলাটা পরিষ্কার করে বললেন,
” আসলে তোমার বিয়ে নিয়ে কথাটা বলতে চেয়েছিলাম। ”
—-“কিন্তু বাবা! ”
আমার কথার মাঝে-ই’ বাবা বললেন,
—-“আমি জানি তুমি কী বলবে। তুমি এখন রেডি নয় কিন্তু মা একটা ব্যাপার ভেবে দেখো,তোমার তিন তিনবার বিয়ে ভেঙেছে। পাড়া-প্রতিবেশি নানান কথা রটাচ্ছে। এদের এছাড়া তো আর কোনো কাজ নেই। তাই আমি চাইছিলাম খুব তাড়াতাড়ি তোমার সাথে যোগ্য এক পাত্রের সাথে বিয়ে দিতে। ”
আমি মাথা নিচু করে-ই’ বলি,
“বাবা সত্যি আমি এখন এইসব এর জন্যে রেডি নই।”
বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“তোমার কী কাউকে পছন্দ মা? ”
বাবার কথা শুনে আমার চোখের সামনে ‘ছোট সাহেবের ‘ মুখখানা ভেসে উঠে।
“আমার কাউকে পছন্দ নয় বাবা কিন্তু আমি এখন এইসব বিষয় কিন্তু প্রস্তুত নই। আমি এখন পড়াশোনায় কিছুটা সিরিয়াস হতে চাই। ”
কথাটা বলে আমি হাত টা ধুয়ে উঠে চলে গেলাম। এইসব বিয়ের কথা শুনলে সত্যি বিরক্তি ছাড়া আর কিচ্ছু লাগেনা।
কাজল চলে যেতেই কাজলের মা কাজলের বাবার কাছে গিয়ে বললেন,
“কাজল যখন বলছে বাদ দাও নাহ।”
কাজলের বাবা বললেন,
“আমি কাজলের বাবা। ওর খারাপ চাইবো নাহ।
যোগ্য পাত্রের সন্ধান পেয়েছি আমাদের মেয়েকে ভালো রাখবে। এইবার সেই যোগ্য পাত্রের সাথে আমার মেয়েকে বিয়ে দিয়ে পাড়া-প্রতিবেশীদের দেখিয়ে দিবো। তাছাড়া সেই পাত্রকে দেখলে তোমার মেয়ে মানা করতে পারবে নাহ বরং আরো খুশি হবে।”
কাজলের মা কিছুক্ষন ভেবে বললেন,
“তুমি আবার ওর কথা বলছো না তো?”
কাজলের বাবা রহস্যময়ী হাঁসি হাঁসলেন।
অন্যদিকে,
হাঁসের মাঝেই রুদ্রিক চোখ-মুখ শক্ত করে বলল,
” মিঃ আফজাল শেখ আমার জীবনের থেকে অধিকারবোধ, সেই ১৫ বছর আগেই হাঁরিয়ে ফেলেছেন। আপনার মতো ঘৃণীত লোকের ছেলের পরিচয় নিয়ে আমাকে সমাজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এইটাই সব থেকে বড় লজ্জাজনক ব্যাপার আমার কাছে। আপনার থেকে বোধহয় সবথেকে বেশি ঘৃণা আমি কাউকে করিনা। হুম কাউকে করিনা। ”
রুদ্রিক খানিক্টা চিৎকারের সুরেই কথাগুলো বলছিলো। রাগে তার নাক লাল হয়ে গিয়েছে।
রুদ্রিকের চিৎকার শুনে জেসমিন শেখ, সিথি ও দিয়া নীচে নেমে আসে।
আফজাল শেখ এইবার চুপ থাকতে পারলেন নাহ। তিনি বলে উঠলেন,
“আমাকে ঘৃণা ঠিক আছে। কিন্তু যার জন্যে তুমি আমাকে ঘৃনা করো সে ঠিক কী কী করেছিলো সে সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা আছে? ”
রুদ্রিক বলে উঠে,
“আফজাল শেখ মুখ সামলে কথা বলুন। আপনার কার সম্পর্কে কী বলছেন?”
—–“আমি যা বলছি তা সবকিছুই সত্যি। জানতে চাও সেসব সত্য? ”
রুদ্রিক কড়া জবাব দিয়ে বলে,
“বলুন আমিও শুনতে চাই আপনার সেই সত্য। বলার সাহস আছে আপনার? ”
আফজাল শেখের কিছু বলতে যাবে তার আগেই, জেসমিন শেখ উনার হাত ধরে কিছুটা আস্তে বললেন,
“আপনি এইসব কী বলছেন? আচ্ছা ও না হয় অবুঝ। তাই বলে আপনি এইসব কী শুরু করেছো?”
ইশানী শেখ ভাবছেন এইবার আর চুপ করে থাকা যাবে নাহ। রুদ্রিককে থামাতে হবে। নাহলে অনেক-কিছু’ই হাতের বাইরে চলে যাবে
কফির কাপ উপরে রেখে। ইশানি শেখ রুদ্রিকের হাত ধরে বলে,
“রুদ্রিক আমার বাচ্ছাটা! এইসব কথা এখন বাদ দাও। এইসব কথা বলে এখন কী লাভ বলো?”
—–“কিন্তু পিপি আগে উনাকে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে বলো। উনি যে এত্তো বড় বড় কথা বললেন তার কী উত্তর আছে উনার কাছে?”
—–“এইসব কথা অপ্রাসঙ্গিক। তোমাকে দেখে টায়ার্ড লাগছে রুদ্রিক। আপতত তুমি নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।”
ইশানি শেখের কথা শুনে রুদ্রিক দমে গিয়ে বলল,
“ঠিক আছে পিপি আমি যাচ্ছি,কিন্তু উনাকে এই কথাটা বলে দিও উনি যেনো কখনো আমার লাইফে ইন্টারফেয়ার না করেন। ”
কথাটা বলেই, রুদ্রিক ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
রুদ্রিক চলে যেতেই দিয়া যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
দিয়া। সিথিও শুকনো ঢুক গিলে দিয়ার কানে ফিসফিস করপ বলল,
“বাড়িতে প্রত্যেকটা দিন একটা না একটা ব্যাপার নিয়ে ড্যাড আর ভাইয়ুর মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকবে।”
দিয়াও ফিসফিস করে বলে,
“এইসব বিষয়ে আমাদের আপাতত না ঢুকা-ই’ ভালো।আমি ভাই হেব্বি রিলাক্স ঘরে গিয়ে, টুক করে একটা সেল্ফি তুলে নিবো। ”
সিথি মুখ বেঁকায়। তখনি সিথির ফোন বেজে উঠে।
সাদির মেসেজ–
“কালকে যে নোটস গুলো কম্পলিট করতে বলেছিলাম। করেছো? না করলেও এখুনি করে ফেলো কোনো ফাঁকিবাজি যেনো না হয়। ”
সিথি মেসেজ টা পড়ে বিড়বিড় করে বলল,
“ভাইয়ু ঠিক-ই’ বলে আস্ত একটা পড়ুয়া। শুধু পড়ুয়াও নাহ মাস্টারমশাই ও। সারাদিন শুধু পড়া আর পড়া। আমাকে এখন পড়া অত্যাচার সহ্য করতে হবে দূর। ”
দিয়া ভ্রু কুচকে বলে,
“কি এতো বিড়বিড় করছিস বলতো? ”
সিথি বিরক্তির সুরে বলল,
“কিচ্ছু নাহ। ”
কথাটা বলে সিথি উপরে চলে গেলো।
_____ঘরে ঢুকে আমার কেনো যেনো একটিবার ইচ্ছে হলো ছোট সাহেবকে কল করতে। কি মনে করে যেনো আমি উনার নাম্বারে ফোন দিলাম কিন্তু হুট করে আমার ফোনটা পড়ে গেলো। যাহ বাবা ফোনটার অবস্হা তো খারাপ।
নিতিয়া বার বার কাজলকে ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু ফোন ধরছেই। নিতিয়া হতাশার সুরে বলল,
“কাজল ফোন ধরছে নাহ এখন কী হবে? আমরা যে পরশু আসছি। তা ওকে কীভাবে জানাবো ভাইয়া? ”
নিতিয়ার কথা শুনে কেউ মুচকি হেঁসে বলে,
“ভালো হয়েছে কাজল ধরেনি। পরশুদিন আমরা যখন কাজলের সামনে উপস্হিত হবো। তখন কাজল শুধু হা হয়ে থাকবে। ”
নিতিয়াও তাল মিলিয়ে বলে,
“হ্যা ভাইয়া এমনভাবে উপস্হিত হবো। কজাল ভাবতেও পারবে নাহ। ”
_______রুদ্রিক নিজের রুমে কিছু ফাইল চেক করছে। তখনি কেউ তাকে ফোন করে। রুদ্রিক ফোন তুলে বলে,
“ইয়েস স্যার!”
————-
রুদ্রিক হেঁসে বলল,
“জ্বী স্যার ডোন্ট ওয়ারি আমি সব প্যাপার রেডি করে ফেলবো। ”
সিথি রুদ্রিকের রুমের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো। রুদ্রিকের কথা কানে ভাঁসতেই সিথি সেখানে দাঁড়িয়ে যায়। সিথি আপনমনে বলতে থাকে,
“ভাইয়া ঠিক কাকে স্যার বললো? আর কী এমন ফাইল চেক করছে? নাহ ব্যাপারটা কাজলের সাথে শেয়ার করতে হবে। ”
______আজকে আমি খুব তাড়াতাড়ি-ই’ ভার্সিটি চলে এসেছে। সকাল ৮ বাজে। লাইব্রেরি পুরো ফাঁকা। আমি প্রথমে লাইব্রেরিতে ঢুকে-ই’ কিছু বই কালেক্ট করতে এসেছিলাম। বরাবরেরে মতো এইবার ও বইগুলো সব থেকে উপরের তাঁকে। ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আর কি। ‘আল্লাহর ‘নাম পড়ে তাড়াতাড়ি
একটা চেয়ার নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। আগের মতো পরিস্হিতিতে যেনো না পড়তে হয় কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে এইবার ও পা পিছলে পড়ে যেতে নিলে খপ করে নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করলাম। এইবার কোমড় নিশ্চিত যাবে। কিন্তু পড়লাম নাহ। আমি চোখ খুলে তাঁকিয়ে দেখি, ছোট সাহেব আমার কোমড় চেপে ধরে আছেন। আমি যেনো কিছু বলার শক্তি হাঁরিয়ে ফেললাম মুহুর্তে। উনি আমাকে কোলে নিয়ে,
চলবে…..