গোধূলী_বেলার_স্মৃতি পর্ব ১২+১৩

#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব- ১২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ছোট সাহেব গাড়ি থেকে বেড়িয়ে কিছু শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে, একটি বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেলেন। আমরা তিনজনও লুকিয়ে লুকিয়ে উনার পিছন পিছন চলে গেলাম। বাড়ির সামনে আসতেই বাড়ির নাম ‘মায়া কুঞ্জ’ দেখে আমার মনে এক অদ্ভুদ ভালোলাগার সৃষ্টি হলো।
বাড়িটার আশেপাশে গাছপালা দিয়ে পরিপুর্ন। বেশ সুন্দর ভাবে পরিপাটিভাবে এই বাড়িটি সাজানো হয়েছে তা দেখে-ই’ বুঝা যাচ্ছে। সাদি ভাইয়া অবাকের সুরে-ই’ বললেন,
“এই বাড়িতে রুদ্রিক এসেছে কেন? এই বাড়িতে রুদ্রিক আসে তা তো আমরা কেউ জানিনা। ”

—“আমিও তাই ভাবছি সাদি ভাইয়া। ভাইয়ু হঠাৎ এখানে এলো কেন? “,

সিথির কথার মাঝেই আমি বলে উঠলাম,

“এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে-ই’ কী আমরা উত্তর পাবো? আমাদের ভিতরে যেতে হবে এবং দেখতে হবে। আসল ব্যাপারটা।”

আমার কথায় সিথি ও সাদি ভাইয়া দুজনেই মাথা নাড়ালো। তখনি আমাদের কানে বাচ্ছাদের হৈ-হল্লড়ের শব্দ ভেসে উঠলো। আমি তিনজন সজ্ঞে সজ্ঞে সদর দরজা দিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকতেই যেনো তিনজন স্তব্ধ হয়ে গেলাম। বাড়ির দক্ষিন দিকে একটি ছোট্ট বাগানে ছোট সাহেব কিছু ছোট্ট ছোট্ট বাচ্ছাদের সঙ্গে তালমিলিয়ে খেলাধুলো করছেন। শপিং ব্যাগ থেকে নানারকম চকলেট আইস্ক্রিম এনে বাচ্ছাদের মাঝে তিনি বিলিয়ে দিচ্ছেন। বাচ্ছারাও পরম আনন্দে চকলেট আইস্ক্রিম খেয়ে নিচ্ছে।

আমরা তিনজন ঠিক কি রিয়েক্ট করবো তা বুঝতে পারছি নাহ।

আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একজন বয়স্ক করে মহিলা এগিয়ে এসে বলেন,

” তোমরা কে বাবা? ”

সাদি ভাইয়া কিছুটা চমকে বলেন,
“নাহ মানে আসলে আমি রুদ্রিকের বন্ধু.। আপনি কে?”

বৃদ্ধ মহিলাটি থমথমে গলায় বললেন,
“আমি এখানে বাচ্ছাদের দেখাশুনা করি। তোমরা এখানে এসেছো কেন বাবা? যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যাও এখান থেকে।

——-” কিন্তু কেন? ”

সিথির প্রশ্নে উনি বললেন,
“রুদ্রিক বাবা চায়না। কেউ এই বাড়ি সম্পর্কে কিচ্ছু জানুক। রুদ্রিক বাবা বড় ভালোবাসা নিয়ে ছোট ছোট বাচ্ছাদের জন্যে এই বাড়িটি তৈরি করেছে। রুদ্রিক বাবা যদি জানে তোমরা এখানে এসেছো, তাহলে সত্যি খুব রাগ করবে। তাই বলছি চলে যাও।”,

——-” রুদ্রিক এই বাড়ি তৈরি করেছে মানে? এই বাড়ি রুদ্রিকের? ”

—-“হুম বাবা! রুদ্রিক বাবা খুব ভালোবেসে এই বাড়ি তৈরি করেছে। ”

—-“আপনি আমাদের আরো কিছু বলবেন এই বাড়ি সম্পর্কে প্লিয দিদুন। আমাদের জানাটা খুব জরুরী।”

বৃদ্ধ দিদুন হয়তো আমার কথা ফেলতে পারেননি। তাই বললেন,

“কিন্তু আমাকে আগে রুদ্রিক দাদুভাইয়ের কাছে গিয়ে অনুমতিতে নিতে হবে। কিন্তু তোমরা যখন বলছো তাহলে ভিতরে চলো। আশা করি রুদ্রিক বাবাকে তোমরা সামলিয়ে নিবে। ”

সাদি ভাইয়া নিজের চশমাটা ঠিক করতে করতে বলেন,
—-“দিদুন আপনি একদম চিন্তা করবেন নাহ। কাজল এসেছে শুনে রুদ্রিক মানা করতে পারবে নাহ। আপনি আমাদের নিয়ে চলুন। ”

.
.
.—–“ঠিক আছে,তাহলে ভিতরে চলো।”
। সিথি কিছুটা নিচুস্বরে বলল,

“আমি যেতে পারবো নাহ। তুই তো জানিস কাজল ভাইয়ু আমাকে দেখলে-ই’ রেগে যাবে। ”

——“তাহলে এখন কী হবে? ”

আমার কথা শুনে সাদি ভাইয়া কিছুক্ষন ভেবে চট করে বললেন,

“কাজল তুমি বরং দিদুনের সাথে যাও। জেনে নাও এই বাড়ির ঠিক রহস্য। আমরা দুজন বরং বাইরে গাড়িতে-ই’ অপেক্ষা করবো।

আমি সম্মতি দিয়ে বললাম,

“হুম তাহলে ঠিক আছে।”

—-“তাহলে দিদুন আপনি কাজলকে নিয়ে ভিতরে যান আমরা এখানেই অপেক্ষা করবো। “(সাদি ভাইয়া বললেন)

—-“ঠিক আছে,তাহলে দিদিভাই (কাজলকে উদ্দেশ্য কর) ভিতরে চলো।”

কথাটা বলে’ই উনি বাগানের দিকে চলে গেলেন। কিন্তু আমাদের মাথায় ঘুড়ছে বিভিন্ন প্রশ্নে।

এদিকে,

রুদ্রিককে দেখে ছোট্ট মুসকান দৌড়ে এসে রুদ্রিকের কোলে বসে পড়লো। মুসকান আদো আদো গলায় বলল,

” বফেন্ড তুমি এসেছো? আমাল চকলেত কই?”,

রুদ্রিক ছোট্ট মুসকানের গালে চুমু খেয়ে, একটা বড় চকলেটের বক্স দিয়ে বলল,
“,আমি আমার ছোট্ট গার্লফ্রেন্ডের জন্যে চকলেট না এনে কী আমি পারি? ”
মুসকান খিলখিল করে হেঁসে উঠলো। রুদ্রিক মুসকানকে ভালোবেসে ‘ছোট্টগার্লফ্রেন্ড’ মুসকান এই বাড়ির সবথেকে ছোট্ট সদস্য। এখানে সব বাচ্ছাদের বয়স ৫-৮ বছরের মতো হলেও, মুসকানের বয়স ৪ বছর। রুদ্রিকের সব থেকে আদরের মুসকান।

তখনি তিয়াশা (এই বাড়ির সার্ভেন্ট) এসে বলল,

“ভালো হয়েছে স্যার। আপনি এসে পড়েছেন। ওরা তো আপনাকে ছাড়া খাচ্ছিলো-ই’ নাহ। ”

রুদ্রিক হেঁসে বলল,

“তুমি গিয়ে সব খাবার রেডি করো। আমরা একসাথে খাবো কি বলো ছোট্ট
গার্লফ্রেন্ড? ”

মুসকানসহ সকল বাচ্ছারা ‘ইয়াহুু ‘বলে উঠে।

রুদ্রিক মুসকানকে কোলে নিয়ে বলল,

“তো আমরা সবাই এখন খেয়ে তারপর অনেক খেলবো ঠিক আছে? ”

পলটু রুদ্রিকের হাতের আঙ্গুল ধরে বলল,

“ভাইয়া আমাদের সাথে থাকবে তো? ”

রুদ্রিক হেঁসে বলল,।

“অবশ্যই আমার পলটু বাবু যখন বলেছে তখন তো থাকতেই হবে। তার তার আগে সবাই লক্ষি মতো খেয়ে নিবে ওকে?”

সবাই একসাথে ‘ওকে বলে’।

আমি ও দিদুন দূর থেকেই ছোট সাহেব ও বাচ্ছাদের দেখে যাচ্ছি। কত্ত খুশি ছোট সাহেব। এই ছোট সাহেবকে আজকে সত্যি আমার অচেনা লাগছে। রাগি অহংকারী ছোট সাহেব কিনা এই অনাথ বাচ্ছাদের এত্তো ভালেবাসেন। ওদের সাথে এত্তোটা আনন্দ করেন। এ যেনো আমি এক অন্য ‘ছোট সাহেবকে’ আবিষ্কার করলাম। আমি প্রাপ্তির এক হাঁসি হাঁসলাম।

——‘মায়া কুঞ্জ ‘ বাড়িটি একপ্রকার অনাথ আশ্রম ও বলা চলে,কিন্তু এই বাড়ির প্রত্যেকটি শিশুকে রুদ্রিকের পরম আপনজন। নিজের পরিবারের সদস্যর মতো আগলে রাখে রুদ্রিক বাবা। ”

—-“হুম তা তো বুঝতে-ই’ পারছি। ”

দিদুন আবারো বললেন,

“বাচ্ছারা তো রুদ্রিক বাবা বলতে পাগল। মাঝে মাঝে তো এদের জন্যে রুদ্রিক বাবাকে এইখানেই থেকে যেতে হয়। আচ্ছা সেসব বাদ দাও চলো যাবে নাহ রুদ্রিক বাবার কাছে। ”

আমি চটজলদি দিদুনকে থামিয়ে বলি,

“নাহ নাহ দিদুন আজ আমি যাবো নাহ। দূর থেকে দেখলাম এইটাই অনেক। উনি বরং বাচ্ছাদের আনন্দ করুক। উনি যখন চাইছেন নাহ উনার এই আশ্রমের ব্যাপারে কেউ না জানুক। তাহলে তা না জানা-ই’ থাকুক। আরেকটা কথা আপনিও উনাকে বলিয়েন নাহ। আমরা এখানে এসেছিলাম। আমি বরং যাই। ”

দিদুন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

“,তোমার সাথে কথা বলে খুব ভালো লাগলো। তা তোমার নাম কী? ”

—–“কাজলরেখা আফরিন। ”

—-“বাহ খুব সুন্দর নাম। তুমি আর আসবে নাহ এখানে? ”

আমি হাল্কা হেঁসে বললাম,

“আসবো তো। কিন্তু উনি যেদিন নিজের ইচ্ছে আমাকে এই বাড়িতে নিয়ে আসবেন,সেদিন-ই’ আসবো। ”

কথাটি বলে উনার দিকে একপলক তাঁকিয়ে ‘আসছি’ বলে বিদায় নিয়ে চলে এলাম।

গাড়িতে,,

সিথি ও সাদি ভাইয়া সব ঘটনা শুনে কিছুক্ষন যেনো থম মেরে আছেন। সিথি বলল,

“তার মানে ভাইয়া মাঝে মাঝে রাতে বাড়িতে ফিরতো নাহ। বাচ্ছাদের সাথে থাকতো বলে? আমরা তো ভাবতাম ভাইয়ু নাইট ক্লাবে থাকতো। ”

সাদি ভাইয়া ড্রাইভ করতে করতে বললেন,

“রুদ্রিকের ‘মায়া কুঞ্জ ‘নামে একটা আশ্রম আছে। আমরা কেউ জানিনা কেন? ”

সিথিও তাল মিলিয়ে বলল,

“আমারো সেই একি প্রশ্ন ‘ভাইয়োর আশ্রম সম্পর্কে আমরা কেনো জানিনা? ”

——“আশ্রম করার জন্যে রুদ্রিক টাকা কোথায় পেলো?” ( সাদি ভাইয়া বলল)

—–“নিশ্চই ভাইয়া বাপির কাছ থেকে টাকা নেয়নি। তাহলে কী বড় পিপি দিয়েছে। ”

(লেখিকা ঃজান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

“তোমার ইশানী পিপি টাকা দিলে, এই খবর তিনি সারাদেশ ব্যাপি ছড়িয়ে দিতেন। একটাকা দান করলেও মানুষকে মা দেখিয়ে উনি দেননা।”

কথাটি বলেই সাদি ভাইয়া হু হা করে হেঁসে উঠলেন।

অপরদিকে, আমি নিজের মনে আনমনে কিছু ভেবে চলেছি। ছোট সাহেব নিজেকে সকলের সামনে যেভাবে প্রেজেন্ট করেন আসলে উনি তেমন নাহ। উনার আজকের এই ঘটনা জানার পরে, আমার মনে ‘উনার প্রতি অজস্র সম্মান জন্ম নিলো। মনে বয়ে গেলো ভালোলাগার এক সুপ্ত অনুভুতি।’

সিথি অদ্ভুদ গলায় বললো,

“তাহলে ভাইয়ু এতোগুলো টাকা পেলো কোথায়? ”

—–“সেইটাই তো রহস্য, আচ্ছা কাজল তোমার কী মনে হয়? ”

সাদি প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে পিছনে ঘুড়ে দেখে, কাজল আনমনে কি যেনো ভেবে চলেছে। কাজল নিজের আনমনে হেঁসে চলেছে। সিথি কিছুটা চেচিয়ে বলে উঠলো,

“কাজল তুই শুনতে পারছিস? “,

আমি ঘাবড়ে গিয়ে বললাম,

” হুম শুনতে পারছি নাহ। ”

—–“কি এতো ভাবছিস তুই কাজল? ”

—-“না মানে..

আমার কথার মাঝেই সাদি ভাইয়া কিছুটা মজার ছলে বললেন,

“কাজল মনে হয় রুদ্রিকের কথা ভাবছিলো তাইনা? ”

সিথিও হেঁসে বলে,

“আমারো তাই মনে হচ্ছে আচ্ছা কাজল তুই আমার ভাইয়ার ভাবনায় ডুবে ছিলি তার মানে সামথিং…।”

আমি মাথা নিচু করে মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলি,

“নাথিং নাথিং..”

—-“ইউ আর ব্লাশিং…”( সিথি বলল)

—-“আম নট ব্লাশিং ”
কথাটি বলে আমি জানালার দিকে দৃষ্টি ঘুড়িয়ে নিলাম। ছোট সাহেবের হাঁসিমাখা মুখ ভেসে উঠলো।
আমি মুচকি হেঁসে চোখ বন্ধ করে নিলাম।

সাদি ও সিথি একে অপরের দিকে তাঁকিয়ে মিটিমিটি হাঁসলো। যা বুঝার তারা বুঝে গিয়েছে। সাদি কিছুটা আস্তে বলে উঠলো,

—“এইদিক থেকেও সিগনাল পেয়ে গেলাম। এখন দুজনকে এক করাটা বাঁকি। ”

সিথি মারা নাড়ায়।

___________________

অন্যদিকে দিয়া শপিং মলে একটার পর একটা সেলফি তুলে যাচ্ছে। লাজুক পড়েছে মহা জ্বালায়। দিয়া সব শপিং ব্যাগ লাজুকের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। এত্তোগুলো শপিং ব্যাগ হ্যান্ডেল করা লাজুকের পক্ষে মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কী আর করার? তাকে’ই দিয়ার এইসব অত্যাচার সহ্য করতে হয়। তখনি দিয়া বলে উঠে-
“নাকবোচা হ্যান্ডসাম এ্যাসিস্টেন্ট শুনুন?”
লাজুক ক্লান্ত হয়ে বলে,

“জ্বী ম্যাম বলুন ”

দিয়া নিজের গাঁয়ে একটা শাড়ি জড়িয়ে বলে,
“এই শাড়িতে আমাকে কেমন লাগবে?”

লাজুক মুগ্ধ হয়ে বলে,

“অনেক সুন্দর লাগবে। ”

____________

ভার্সিটির গেটে ঢুকতেই সিথি আমার কাছে এসে বলল,
“কাজল কনগ্রেস! কালকে তুই গানের অডিশন দিয়েছিলি নাহ? তুই গানের জন্যে সিলেক্ট হয়ে গিয়েছিস।”

সিথির কথা শুনে আমি খুশি হয়ে বলি,

“সত্যি? ”

—“হুম…”

রুদ্রিক দূর থেকে কাজলের হাঁসিমাখা মুখ দেখে বাঁকা হাঁসছে। তখনি রুদ্রিকের বন্ধুরা এসে বলে,

“কিরে রুদ্রিক ডান্স প্যাক্টিস রুমে যাবি না? ”

আমার দৃষ্টি ছোট সাহেবের দিকে যেতেই আমি মুঁচকি হাঁসি দিলাম।

কাজলের মুচকি হাঁসি-ই’ যেনো রুদ্রিকের বুকের স্পন্দন বাড়ানো জন্যে যথেষ্ট।

রুদ্রিক এক পলক কাজলের দিকে তাঁকিয়ে ডান্স প্যাক্টিস রুমে চলে যায়।

আমাদের কথার মাঝে-ই’ সাদি ভাইয়া এসে বলল,

“তোমরা এখানে কী করছো? ডান্স প্যাক্টিস রুমে চলো। ”

—–“কিন্তু সেখানে গিয়ে কী করবো? ”

আমার প্রশ্নে সিথি বিরক্ত হয়ে বলে,

“এতো প্রশ্ন না করে আমাদের সাথে চল। ”

______
ড্যান্স প্যাক্টিস রুমে রুদ্রিক পড়েছে মহা মস্কিলে। ফাংশনে রুদ্রিক ও জেনির কাপল ডান্স পারফর্মেন্স করতে হবে। কিন্তু জেনি গত তিনদিন ধরে আসেনি।

রুদ্রিক ঝাঝালো কন্ঠে বলে,

“জেনি এতোটা দায়িত্বহীন কীভাবে হতে পারে? জেনি জানে আজকে আমাদের প্যাক্টিস তবুও কেনো আসেনি? ”

তন্ময় বলল,।
“তুই অন্তত এই কথা বলিস নাহ রুদ্রিক৷ তুই ওর যা অবস্হা করেছিলি আমরা সবাই দেখেছি। তাছাড়া ওর মন-মেজাজ ভালো না। ”

—-“কার মন-মেজাজ ভালো নাহ? “( সাদি বলল)

কথাটা বলে-ই’ সাদি, কাজল ও সিথি প্রবেশ করলো।

সাদিকে দেখে রুদ্রিক ভ্রু কুচকে বলল,।

” তোরা এখানে কেনো এসেছিস? ”

সাদি দাঁত বের করে হেঁসে বলল,

“আসলে আমি ভেবেছিলাম আমি আর কাজল ও একটা কাপল ডান্স দিবো কেমন হয়। ”

রুদ্রিক দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“খুব বাজে হয়। “,

সাদি ভাইয়ার কথায় আমি চমকে গেলাম। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই সিথি আমাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে চুপ করার জন্যে।

সাদি ভাইয়া আবারো হেঁসে বলল,

” সত্যি রুদ্রিক! তুই ও খুব ভালো মজা করতে পারিস। ”

“মিউজিক অন কর…”
কথাটি বলে সাদি ভাইয়া আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন,

“লেট’স স্টার্ট কাজল। ”

রুদ্রিক রক্তচক্ষু নিয়ে একবার কাজলের দিকে তাঁকালো আরেকবার সাদির দিকে।

আমি কী করবো বুঝতে পারছি নাহ। তবুও হাত বাড়িয়ে দিতে নিলে পিছন থেকে উনি আমার কোমড় টেনে ধরে আমাকে নিজের মধ্যে নিয়ে নেন। উনি আমার হাতজোড়া নিজের হাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেললেন।

উনি সাদি ভাইয়ের দিকে তাঁকিয়ে বাঁকা হেঁসে বললেন,

“সাদি তুই পড়ুয়া ছেলে। লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়। এইসব ডান্স তোর কাজ নয়।”

কথাটা বলে উনি আমার কোমড় নিজের দিকে আরেকটু টেনে নেন। আমি উনার বুকে গিয়ে পড়ি…।

উনি জোড়ে বল উঠলেন,

“মিউজিক স্টার্ট কর।”

সঙ্গে সঙ্গে গান ভেসে উঠলো কিন্তু তখনি…..#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
#পর্ব- ১৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ছোট সাহেব আমার কোমর টেনে নিজের সাথে আমাকে আবদ্ধ করে ফেলেন। রুদ্রিকের এমন কান্ডে রুদ্রিকের সব বন্ধুরা অবাক। সাদি মিটিমিটি হাঁসছে।কাজলের প্রতি রুদ্রিকের এতোটা জেলাসির কারণ তারা ঠিক বুঝতে পারছে নাহ। শোভন হাতের গিটার টা রেখে বলল,
“সত্যি! রুদ্রিক ঠিক কী চায় তা বুঝতে পারছি নাহ। ”

—“রুদ্রিকের দিনের পর দিন কাজলকে নিয়ে পসেসিভ হয়ে উঠছে ।”

পলকের কথায় তন্ময় সায় দিয়ে বলে,

“আমি জাস্ট অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সেদিন রুদ্রিক কীভাবে জেনির সাথে ব্যবহার করলো। তিনদিন ধরে জেনি ভার্সিটিতেও আসছে নাহ। ”

ইথান কিছুক্ষন ভেবে বলে,

” আমার মনে হয় রুদ্রিক লাইক কাজল।”

শোভন চট করে বলে,

“ইম্পোসিবাল!”

——“রুদ্রিকের যা অবস্হা দেখছি। সব কিছুই পসিবল।”

পলকের কথায়
শোভনার কিছুটা মিয়ে যাওয়া সুরে বলল,

“আমি সত্যি বুঝতে পারছি নাহ। সামনে কী হবে।

স্পিকারে হাল্কা মিউজিকে গান বেজে উঠে,

“Aisa laga mujhe pehli dafaa
Tanha main ho gayi yaara

Ho.. aisa laga mujhe pehli dafaa
Tanha main ho gayi yaara
Hoon pareshan si main
Ab ye kehne ke liye
Tu zaroori sa hai mujhko zinda rehne ke liye
Ho.. tu zaroori (tu zaroori)
sa hai mujhko (sa hai mujhko)
zinda rehne ke liye (zinda rehne ke liye)

ছোটসাহেব আমার হাতের সাথে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে। চারদিকে গানের বিভিন্ন স্টেপ করতে থাকেন। আমিও উনার সাথে তাল মিলিয়ে গানের স্টেপ্স গুলো করার চেস্টা করতে থাকি।

তখনি সেখানে জেনি চলে আসে। রুদ্রিক ও কাজলকে এতোটা কাছে দেখে সে তাড়াতাড়ি দরজার আড়ালের চলে যায়। এই কাজল সামান্য ড্রাইভারের মেয়ের জন্যে-ই’, রুদ্রিক তার গাঁয়ে হাত তুলেছে। জেনি নিজের হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে ফেলে। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার। এইভাবে রুদ্রিক ও কাজলকে একসাথে দেখে। নাহ জেনি এখন কিছুতেই নিজের মাথা গরম করবে নাহ। ঠান্ডা মাথায় যা করার করতে হবে। জেনি দূর থেকে তন্ময়, পলক, শোভন ও ইথানকে ইশারা করে তার সাথে দেখা করতে।

(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

জেনির ইশারায় তারা সবাই আস্তে আস্তে প্যাক্টিস রুম থেকে চলে যায়।

সিথি ও সাদি মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে দুজনের ডান্স দেখে। কত সুন্দরভাবে দুজন গানের প্রতিটি স্টেপ পূরন করে যাচ্ছে।

সাদি সিথিকে মৃদ্যু ধাক্কা দিয়ে বলে,

“তোমাকে এখানে আর থাকতে হবেনা। চলো ওদের আপাতত একা ছেড়ে দেই। ”

সিথি মুখটা ফুলিয়ে বলে,

“ওদের কত্ত ভালো লাগছে। আরেকটু দেখে যাইনা?”

সাদি নিজের চশমা ঠিক করতে করতে বলল,

“সত্যি সিথি তোমার আর বুদ্ধি হবে নাহ। এখানে আর কাবিবের হাড্ডি হতে হবে নাহ। চলো আমার সাথে। লাইব্রেরিতে গিয়ে তোমার কিছু নোটস সমাধান করে দিবো। ”

পড়ার কথা শুনে সিথি মুখ শুকিয়ে ফেলে।

কথাটি বলেই সাদি সিথির হাত ধরে নিয়ে চলে যায়।

প্যাক্টিস রুমে একেবারে ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। রুমে শুধু কাজল ও রুদ্রিক রয়েছে।
Dhadke aankhon mein dil mera
Jab qareeb aaun tere
Mm.. dekhoon main jab bhi aaina
Haan tu hi roobaroo rahe mere

Ishq ki mauj mein aa
Aaja behne ke liye
Tu zaroori (tu zaroori)
sa hai mujhko zinda rehne ke liye
aa.. tu zaroori (tu zaroori)
sa hai mujhko (sa hai mujhko)
zinda rehne ke liye (zinda rehne ke liye)
Tu zaroori..

রুদ্রিক কাজলেকে পিছন দিয়ে ঘুড়িয়ে কাজলের ঘাড়ে নিজের থুত্নি রেখে গানের সাথে তাল মিলিয়ে ডান্স করতে থাকে।

ছোট সাহেবের স্পর্শে আমার বুকের হার্ট ব্রিট থেমে যাবে বলে মনে হচ্ছে। উনি আমার এতোটা কাছে কখনো আসেননি। উনি কী বুঝতে পারছেন আমার আমার ভিতরে এক ঝড় বইয়ে যাচ্ছে। হয়তো উনারাও কিছু কিছু ফিলিংশ হচ্ছে।

গান বেঁজে চলেছে….

Maangu na koi aasmaan do sitaron ka jahaan
Banja tu mera humsafar na mujhe chahiye koi muqaam
Dil hi kaafi hai tera mere rehne ke liye

Tu zaroori sa hai mujhko zinda rehne ke liye
Ho.. tu zaroori (tu zaroori)
aa hai mujhko (sa hai mujhko)
zinda rehne.. (zinda rehne..)
Tu zaroori (tu zaroori)
sa hai mujhko
zinda rehne ke liye
Tu zaroori..

আমি উনার কাঁধে নিজের হাত রেখে গানের সাথে তাল মিলিয়ে ডান্সের স্টেপ করতে থাকি..।

উনি গানের তাল মিলাতে মিলাতে আমার চোখে গভীরভাবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,

“ভালোলাগার অনুভুতির কত রং কাজল তাইনা? ”

—-“যেমন? ”

—–“এইযে ধর তোর কাছে এলে, আমার অদ্ভুদ্ভাবে ভালোলাগা কাজ করে। এর ঠিক কী কারণ কাজল?”

আমি উনার প্রশ্নের ঠিক কী উত্তর দিবো। বুঝতে পারছি নাহ। মাথা নিচু করে আস্তে করে বললাম,

—–“হঠাৎ এই প্রশ্ন?

আমার কথায় ছোট সাহেব নিজের বাঁকা দাঁতের হাঁসি দিয়ে বললেন,

“এই উত্তরগুলো তুই আমাকে জিজ্ঞাসা করছিস কাজল? এই উত্তরগুলে তো তোর জানার কথা। ”

—-“কিছু কিছু উত্তর আমার কাছে থাকেনা। এই যে ধরুন এই উত্তর আমার কাছে নেই। ”

উনি আমার গালে নিজের হাতের আলতো স্পর্শ দিয়ে বললেন,

“আমার চোখের গভীরে অতলভাবে ঢুবে গেলে হয়তো বুঝতে পারবি। তুই-ই’ তো বলিস চোখ কখনো মিথ্যে বলেনা। ”

আমি নিজের দৃষ্টি সরিয়ে ফেলি। উনি আমাকে গানের তালে পিছনে ঘুড়িয়ে আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেললেন। উনার আমার মাথা উনার বুকে গিয়ে ঠেকে যায়।

উনি নিজের ঠোটটা আমার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস কন্ঠে বললেন,

” তোর নজর সরে গেলো কাজল। এর মানে আমি কী ধরে নিবো? তোর আমার চোখে চোখ রাখার সাহস নেই। আর মানুষ তখনি-ই’ চোখে চোখ রাখতে পারেনা। যখন সে কিছু লুকানোর চেস্টা করে। তুই কী লুকানোর চেস্টা করছিস?”

আমি খানিক্ষন চুপ থেকে বললাম,

“হয়তো নিজের অনুভুতি লুকানোর প্রচেস্টা করছি। ”

—-“কেনো এতো বৃথা চেস্টা? ”

—“আপনি কেনো করেন? ”

উনি কিছুটা অস্হিরতা নিয়ে বললেন,

—–“আমি তো নিজের অনুভুতি গুলো ঠিক-ঠাক সাজিয়ে গুছিয়ে-ই’ বলতে পারছি নাহ কাজল। অনেক কিছু বলতে চাই আমি। কিন্তু ঠিক কি চাই? তা নিজেও বুঝতে পারছি নাহ। মাঝে মাঝে এমন কিছু আচরন করে বসি। তার সঠিক কারণ নিজেও জানিনা। ”

কথাটি বলে’ই উনি আমার কানে ঠোটের আলতো স্পর্শ দিলেন। আমি মৃদ্যু কেঁপে উঠলাম।

রুদ্রিক জানেনা এই কাজটি সে কেনো করলো । রুদ্রিকের দ্রুততার সাথে প্যাক্টিস রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।

আমি এখনো সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। উনার কথাগুলো আমার কানে ভাজছে।

________________

দিয়া নিজের গাঁয়ে একটা শাড়ি জড়িয়ে বলে,
“এই শাড়িতে আমাকে কেমন লাগবে?”

লাজুক মুগ্ধ হয়ে বলে,

“অনেক সুন্দর লাগবে। তার সাথে যদি আপনি কানে বড় বড় ঝুমকো এবং ঠোটে ঘাড়ে লিপষ্টিক পড়েন। আপনাকে আরো সুন্দর লাগবে। ”

লাজুকের কথায় দিয়া কিছুটা লজ্জা পেলো। লাজুক এইবার কিছুটা ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,

“লজ্জা পেলে আপনাকে আরো সুন্দর লাগে দিয়া ম্যাম।”

লাজুকের কথায়,দিয়ার নাক যেনো লজ্জায় আরো লাল হয়ে যাচ্ছে। যা লাজুকের চোখে এড়ালো নাহ।লাজুকের মুগ্ধতার দৃষ্টি নিয়ে, দিয়ার লজ্জামাখা মুখখানা পর্যবেক্ষন করছে।

দিয়া কোনোরকম বলে উঠে,

“আমাদের দেরী হচ্ছে। যেতে হবে। ”

কথাটা বলে দিয়া গটগট করে গাড়ির দিকে পা বাড়ালো।

লাজুক হাঁসলো। সত্যি আজকে দিয়াকে সে লজ্জাকর পরিষ্হিতিতে ফেলে দিয়েছে।

—-“আরে সেল্ফি কুইন মেম! আমার জন্যে দাঁড়ান। আমার তো আপনার মতো গাড়ি নেই। আপনার গাড়ি দিয়ে-ই’, আমাকে অফিসে যেতে হবে।”

দিয়া পিছনে ঘুড়ে বলে,
—“তাড়াতাড়ি আসুন। ”
লাজুক মুঁচকি হেঁসে শপিং ব্যাগগুলো হাতে নিয়ে, গাড়ির দিকে পা বাড়ালো।।

______________

জেনি ফাংশনের দিনে কাজলকে অপদস্ত করার একটা বড় প্ল্যান করে ফেলেছে। জেনির এইরকম ভয়ংকর প্ল্যানের কথা শুনে, রুদ্রিকের বন্ধুরা সবাই অবাক হয়। ইথান উঠে দাঁড়িয়ে বলে,

“এইসব আমি করতে পারবো নাহ।”

শোভন ও কিছুটা ভেবে বলে,

“হ্যা এইটা করা অন্যায় হবে। আমরা এইরকম করতে পারবো নাহ। ”
জেনির কিছুটা নরম সুরে বলে,

“ওই মেয়েটির জন্যে রুদ্রিক আমাকে অপমান করলো আর তোরা তার বদলা নিতে আমাকে সাহায্য করবি নাহ। ”

পলক বলে উঠে,

“আমরা মেয়েদের সম্মান করি। তাই কাজলের সম্মান -হানি হোক এমন কাজ আমরা কিছুতে-ই’ করবো নাহ। ”

—-“এই তোরা আমার বেস্ট ফ্রেন্ডস? আমাকে একটু সাহায্য করবি নাহ? ”

জেনির কথায় তন্ময় উঠে দাঁড়িয়ে বলে,

“আমরা তোর ভালো বন্ধু বলে’ই তোকে এই খারাপ কাজে তোকে হেল্প করবো। আর তোকে বলে দিচ্ছি এইসব বাজে কাজ করার কথা তুইও বাদ দিয়ে দেয়।”,

কথাটি বলে তন্ময়, শোভন, ইথান ও পলক চলে যায়।

জেনি নিজের হাতে থাকা ফুলের বাস্কটা টা ছুড়ে ফেলে।

—-” আমাকে জ্ঞান দিচ্ছে দিতে এসেছে। দরকার নেই ওদের সাহায্যের। আমিও আমার প্ল্যানটা সাকসেস করবো। কারো সাহায্য লাগবে নাহ। ”

কথাটি বলেই জেনি শয়তানি হাঁসিতে মেতে উঠে।

________________

অন্যদিকে আমি পড়ার টেবিলে বসে পড়ার মনোযোগ দিতে-ই’, পারছি নাহ। আমার মন শুধু কেমন ‘ছোট সাহেব! ছোট সাহেব ‘ করছে। উনার প্রত্যেকটা কথায় আমার শুধু ভাবাচ্ছে। উনার ঠোটের আলতো স্পর্শে যেনো আমার শরীরে আলাদা শীহরন বয়ে গিয়েছিলো। আচ্ছা আমার কী হয়েছিলো? আমি কেনো উনাকে বাঁধা দেয়নি? তাহলে আমিও কী? নাহ নাহ এইটা হতে পারেনা। কিন্তু একটা কথা তো মানতে হবে,আশ্রমের কথাটা জানার পর থেকে উনার প্রতি আমার যেমন সম্মান বেড়ে গিয়েছিলো তেমনি আমার মনে সৃষ্টি হয়েছিলো এক রাশ ভালোবাসা। তখনি হুট করে ছুটকি হেঁসে বলল,

“আপাই দেখো তোমার গোলাপের মতো গালগুলো কেমন লাল হয়ে গিয়েছে। ”

আমি ছুটকির কথা শুনে তাড়াতাড়ি আয়নায় নিজেকে ভালো করে দেখলাম। আমার গাল সত্যি লাল হয়ে গিয়েছে। তার মানে?

“আম ব্লাশিং। ছোটসাহেবের কথা ভাবলে আমি এতো লজ্জা পাচ্ছি কেন? ”

জানিনা এর উত্তর।
আমি হুট করে ছোট সাহেবকে এমন এক মেসেজ দিলাম, যার কারনে সঙ্গে সঙ্গে ছোট সাহেব আমাকে ফোন দিলেন।

চলবে….কী?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here