#গ্যাংস্টার
#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)
পর্ব : ০৯
।।
রাজ কখন থেকে বসে আছে। সামনে সিঙ্গেল সোফায় বসে আছে তার শ্বশুর। মানে হবু শ্বশুর।
রাজের মনের মাঝে নতুন এক অনুভূতি কাজ করছে। নতুন বিয়ের অপেক্ষারত সবার মনের মাঝে যেই এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি হয়। রাজের এখন তাই হচ্ছে।
অবশেষে রাজের অপেক্ষার তীব্র এক অজানা অনুভূতির অবসান ঘটিয়ে রানি এলো।
সাদা এক বেনারসি গায়ে। সাদা স্টোন গুলি ঝিকঝিক করছে। গায়ে অনেক গয়না। মাথায় কি সুন্দর করে ঘোমটা দেওয়া। মুখের মাঝে হাল্কা মেকআপ। ঠোঁটে গাঢ়ো লাল লিপস্টিক। কাজল কালো চোখ গুলি কলো রঙে রঙ্গিম হয়ে আছে। রানি কে যেন হুর লাগছে। মনে হচ্ছে আকাশ বেদ করে বেহেশতের হুর মাটিতে স্থান নিয়েছে।
চোখ এক মনে এক ধ্যানে রানির দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখের পাতা নড়ছে না। একদম স্থির মায়ামি রানির দিকে তাকিয়ে আছে।
আরমান গলা কাশি দিলে রাজের হুশ ফিরে একটু নড়েচড়ে বসে ঠিক হয়ে।
রানি কে সামিয়া রাজের পাশে এনে বসায়। তবে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে। রানির গা রাগে জ্বলে যাচ্ছে। তো রাজের মন রোমাঞ্চে পুলকিত হচ্ছে। আড় চোখে চোখে রানি কে দেখছে।
কাজি বিয়ে পড়িয়ে চলে যায়। সবাই মিষ্টিমুখ করে।
রাজ তো মনের আনন্দে গপগপ করে কয়েক মিষ্টি পেটে দিয়ে দেয়। শান্তি তে মনে হয় মিষ্টি গুলি পেটে গেল। রানি এই সব দেখে মনে মনে বলতে থাকে,
“খাও বাছাধন বেশি করে খাও। জীবনে কি আর কখনো খাইছিলা? খাও নাই তো। এখন হাতের কব্জি ডুবিয়ে খাও। ভরাসিয়াস একটা।”
সবাই এক সাথে মিলে খাবার খেতে বসে। সিনথিয়া পরিবেশন করছে।
আরমান, রাজ রানি আর সামিয়া বসে নিজেদের মতো খাচ্ছে। রানির এত ভার গয়না নিয়ে খাবার খেতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে। যদিও পাশে বসে থাকা রাজের কারণে রাগে সে খাবার গলা দিয়ে নামাতে পারছে না। তবুও হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করছে।
কম সময়ের মাঝে সিনথিয়া বেশ রান্নাবান্না করে নিয়েছে।
রাজ আরাম আয়েশে খাবার খাচ্ছে। আরমান আর সামিয়াও মন ভরে খাবার খেতে ব্যস্ত। রানি শুধু রাগে ফেটে যাচ্ছে।
“বুঝলে তো রাজ বাবা তোমার কারণে আজ এত কিছু খেতে পারলাম। সিনথিয়া তো আলসেমির কারণে তেমন কিছু রান্নাও করতে চায় না।”
সিনথিয়া রাগে বলে উঠল,
“তবে কি শুধু ময়দা খেয়ে জীবন কাটাও?”
“যাই বলো আজ বেশ রান্না করেছো।”
“….
রাজ চামচ দিয়ে পায়েস মুখে দিতে দিতে নিজের পা দিয়ে রানির পায়ে স্লাইড করছিল।
এমন কাহিনী তে রানি হকচকিয়ে যায়। হঠাৎ বিশম খায় খুব জোরে। রাজ তাড়াতাড়ি তার মুখের সামনে পানি ধরে।
রানি কাশতে কাশতে পানি না নিয়ে চোখ গরম করে রাজের দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে হয়তো এটাই বলছে “ভাব দেখাচ্ছে এখন। নিজের এমন কান্ডে বিশম খেলাম এখন পানি ধরে আদিখ্যেতা দেখানো হচ্ছে। মরণ আমার।”
রানি কাশছে অথচ রাজের হাত থেকে পানি নিচ্ছে না। রাজ রানির থুতনিতে এক হাত ধরে অন্য হাতে পানির গ্লাস তার মুখে তুলে দেয়।
যেন ৪/৫ বছরের কোনো বাচ্চা মেয়ে কে পানি খাওয়ানো হচ্ছে।
তাদের এমন কান্ড দেখে সামিয়া মুচকি হাসে।
রাজ রানির দিকে তাকিয়েই আছে। আরমানও সিনথিয়ার দিকে নজর দেয়। সিনথিয়া মুচকি হাসে। হয়তো দুজনে তাদের সদ্য বিয়ের পুরোনো দিনের মাঝে চলে গিয়েছে।
আরমান আর সিনথিয়ার এমন আবেগপ্রবণ চাওনি দেখে সামিয়া খায় বিশম। খুব জোরে জোরে কাশি পায় তার।
তার কাশির আওয়াজে সবার ধ্যান ভাঙ্গে। সামিয়া নিজেই পানির গ্লাস নিয়ে টগটগ করে পানি খেয়ে নিয়ে নিশ্বাস ছাড়ে। সামিয়া মনে মনে বলে “এ কোথাই আছি আমি?”
খাওয়া দাওয়ার পর সবাই কিছুক্ষণ মিলে কথা বলে। একসময় রাজ রানির মা বাবা কে জানায়,
“আঙ্কেল আমি রানি কে আজ নিয়ে যেতে চাই বাসায়।”
“আজই..”
“হুম।”
“….
রানি আরো রেগে যায়। কটমট করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
“কি? এখন আমাকে উনার সাথে যেতে হবে?”
“ছিঃ রানি এই সব কি কথা? ঠিক করে কথা বল। ও তোর স্বামী হয়।”
“আম্মু..”
“চুপ আর একটা কথাও নয়। রাজ বাবা এখন থেকে তোর সব। ও যা বলবে তাই করতে হবে। ওর কথা শুনে চলাই তোর কাজ এখন। ওর কথার অবাধ্য হবি না কখনো।”
“…
সিনথিয়ার কথায় সবাই যেন থ মেরে যায়। রানি একটু পর বলতে শুরু করে,
“ওকে ফাইন। যা বলবে তাই হবে। আমি খেলার পুতুল না! আমাকে তো সব মানতেই হবে। ঠিক আছে। আমাকে বিদায় করার জন্যে উঠে পড়ে লেগে গিয়েছো না? চলে যাচ্ছি। দেখবে আমি আর আসব না। আসব না তোমাদের এই খানে। আগুনের সামনে নিয়ে গেলে না আমায় খেয়ে ফেলার জন্যে। আমি নিজেই আগুনের কাছে গিয়ে বলছি আমায় শেষ করে দিতে। না হয় ওই নরক কুণ্ডেই ঝাঁপ দিচ্ছি। ভালো থাকো তোমরা। আর কখনো আসব না এখানে।”
রানি কথা গুলি একদমে বলে চলে যায় বাসা থেকে। আর একটুও দাঁড়ায় না সেখানে।
“আঙ্কেল আন্টি আপনারা কিছু মনে করবেন না। ও রাগে বলল কথা গুলি। রাগ কমলে ঠিক হয়ে যাবে। কাল পরশু আমি ওকে নিয়ে আসব।”
আরমান রাজের হাত ধরে কেঁদে দেয়। অস্পষ্ট কন্ঠে বলে,
“আমার মেয়ে টা কে দেখে রেখো বাবা। ও বড্ড ছেলে মানুষি করে।”
“চিন্তা করবেন না। আমি সব সময় ওর পাশে থাকব।”
“…..
আরমান আর কথা বলতে পাড়ে না কান্নার কারণে।
“একটা বাবা ঠিক কত টা কষ্ট করে তার বুকের ধন কে অন্যের হাতে দিয়ে দেয়। তা ‘বাবা’ রা ছাড়া পৃথিবী তে এই কষ্ট টা আর কেউ বুঝে না। হয়তো তাদের কলিজা ছিঁড়ে যায় এমন যন্ত্রণায়। নয়তো বা মনে হয় এই বুঝি দম টা বের হয়ে যাবে। প্রতিটা বাবার কাছে তার ‘মেয়ে’ রাজকন্যার চেয়ে কোনো অংশে কম হয় না। সব বাবা রা চায় আমার মেয়ে টা সব চেয়ে ভালো থাকুক। স্বামীর সাথে খুব সুখে থাকুক। বাবা রা তাদের মেয়েদের কলিজা ভাবে। মেয়ে একটু কষ্ট পেলে মনে হয় বাবাদের বুকে লাগে। বিয়ের পর ঠিক এমন মুহূর্তে বাবাদের কেমন লাগে তা হয়তো কেউ লিখে প্রকাশ করতে বা অন্য কে বলে বুঝাতে পারবে না।”
আরমান সাহেবেরও হয়তো এমন লাগছে এই মুহূর্তে।
রানির মা রাজের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কাঁধো কাঁধো কন্ঠে বলে,
“বাবা ও কিন্তু নিজের খেয়াল একদমি নিতে পাড়ে না। আমার খায়িয়ে দিতে হয়। চুল মুছে দিতে হয়। ওর সব দেখে শুনে দিতে হয়। তুমি একটু সামলে নিও। ওর একটু খেয়াল রেখো। সাবধানে যাও।”
“কোনো চিন্তা করবে না আপনারা ও আল্লাহর রহমতে ভালোই থাকবে। আসছি। দোয়া করবেন।”
রাজ বেড়িয়ে আসে বাসা থেকে।
গিয়ে দেখে রানি পিছনের সিটে বসে রাগে সাপের মতো ফুসফুস করছে।
রাজ পেছনের জানালার সামনে গিয়ে বলছে,
“এই যে ম্যাম আপনি আমার ওয়াইফ। আমি আপনার ড্রাইভার নই। সামনে আসুন।”
“পারব না। আপনার ইচ্ছে হলে সামনে বসে ড্রাইভ করুন। না হলে পিছনে ঠেলতে ঠেলতে আপনার বাসায় নিয়ে যান।”
“হোয়াট?”
“…..
রাজ আর কিছু না বলে দরজা টা খুলে। নিঃশব্দে রানি কে কোলে তুলে নেয়।
রানি অবাক হয়ে বলে,
“আরে আরে করছেন কি?”
“….
রাজ আশেপাশের লোকজন কে তোয়াক্কা না করে রানি কে কোলে নিয়ে সামনে তার পাশের সিটে বসিয়ে দেয়। রানি ফ্যালফ্যাল করে রাজ কে দেখছে।
তখন রাগের মাথায় অনেক কিছু বললেও এখন রানি কান্না করছে নাক টেনে টেনে।
রাজ ড্রাইভ করতে করতে রানির দিকে তাকাচ্ছে। রানি বাহিরের দিকে তাকিয়ে নাক টানছে তো কান্না করছে। রাজ দেখলেও কিছু বলছে না। এখন একটু কান্নার দরকার তার। মন টা ভালো হবে।
রাজও আড় চোখে রানি কে দেখছে। রানির মনের পরিস্থিতি টা সে বুঝতে পারছে। নিজের বাড়ি ছেড়ে চললে সব মেয়েদের এমন হয়।
ড্রাইভ করতে করতে রাজ টিস্যু এগিয়ে দেয় রানির দিকে।
..
রাজ গাড়ি থামিয়ে কোনো কথা ছাড়াই আবার রানি কে কোলে তুলে নেয়।
কান্নায় চোখ লাল হওয়া রানি অবাক হয়ে রাজ কে দেখছে।
রাজ সুন্দর করে রানি কে কোলে নিয়ে তার বেড রুমে চলে যায়। বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলে,
“এখানে থাকো আমি আসছি।”
রাজ চলে যায়। একটু পর এক কাপ কফি হাতে নিয়ে রুমে আসে।
“ধরো।”
“….
“আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে এটা হাতে নাও।”
রাজ আবার বলল,
“কি হলে নাও।”
রানি কথা ছাড়া রাজের হাত থেকে কফির মগ টা নেয়। রাজ চুপ করে রানি কে কোলে তুলে নেয়।
“কি হচ্ছে? একটু পর পর আমায় না বলে কোলে নিচ্ছেন কেন?”
“তোমায় জিজ্ঞেস করতে হবে বুঝি?”
“অবশ্যই করতে হবে।”
“কখনোই নয়। একটু আগে থেকেই তুমি আমার হয়ে গেছো। তুমি সব টাই এখন আমি বা আমার। আর আমার জিনিস কি করব না করব সেটা কাউ কে বলার প্রয়োজন মনে করি না আমি। মাইন্ড ইট।”
“আজব।”
“তাও ঠিক। কারণ তুমি এখন আমার অর্ধাঙ্গিনী। মানে আমার অর্ধেক অংশ।”
“….
পড়ন্ত গোধূলি লগ্ন চলছে তখন। রাজ রানি কে কোলে নিয়ে ব্যালকুনির দিকে চলে যায়।
অপকল রানি কে দেখছে। যেন এটা কোনো হুর কে কোলে নিয়ে রেখেছে সে। রাজ নেশা ধরা চোখ নিয়ে রানি কে দেখছে। রানির এখন বেশ লজ্জা লাগছে।
“কফি টা খাও। মাথা ব্যথা একটু কমবে।”
“….
কান্নার কারণে রানির আসলেই মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে। তাই কিছু না বলেই কফির কাপে চুমুক দেয়। এক হাতে তার কফি অন্য হাতে রাজের কাঁধ আগলে রেখেছে। আড়চোখে আবার দেখছেও।
“তুমি কি মানুষ না? নাকি দয়া মায়া নেই? আমি যে আছি তাও তোমাকে কোলে নিয়ে একটুও বলতে ইচ্ছে কারছে না আমায় আমি কফি খাবো কি না।”
রাজের এমন কথায় রানির লজ্জা পায়। ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,
“এটা তো আপনি আমার জন্যে এনেছেন। আপনার জন্যে তো আপনি আনেন নি। আর এটার মাঝে আমি ঠোঁটও লাগিয়ে দিয়েছে..”
রাজ আকাশের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলে,
“তো কে বলেছে এটা না খাওয়ার কথা। আমি এটার কথাই বলেছি।”
“….
“দিবে না নাকি?”
“এটা?”
রাজ একটু জোর নিয়েই বলে,
“তো আমি অন্যটার কথা বললাম কি?”
“….
রানি কি করবে বুঝে পায় না।
“আপনি কি রাক্ষস?”
“হোয়াট?”
“না আসলে মানে আপনি আমার খাওয়া..”
“এটার হিসাব না হয় পরে নিলাম। আপাদত আমার মুখে কফি দাও। খুব মিষ্টি খেতে ইচ্ছা করছে তোমার ওই ঠোঁ..”
কথাটা বলতে বলতে রাজ রানির দিকে তাকায়। রানি ভ্রু কুঁকচে রাজের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাজ কথা পাল্টিয়ে বলে,
“না মানে আমার খুব কফি কফি পাচ্ছে। তাড়াতাড়ি কফি মুখে মানে আমার ঠোঁটে ধরো।”
রাজ কথাটা বলে মুচকি হাসি দেয়।
রানি আর কথা না বাড়িয়ে রাজের মুখের সামনে কফির মগ ধরে। রাজ চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। তারপর মুখ টা আরো রানির দিকে এগিয়ে দিয়ে কানের কাছে ফিসফিসানি কন্ঠে বলে,
“এই কফি তে দুনিয়ার সেরা মিষ্টত্ব রয়েছে। যা প্রেয়সীর ঠোঁটের স্পর্শে সম্ভব হলো।”
রানি এই কথা শুনে একটা ঢুক গিল। খুব লজ্জায় মাথা নুয়িয়ে নেয়।
রাজের ঠোঁটে এক বাঁকা হাসির আভাস পাওয়া যায়।
রানি কে এই ভাবে কোলে নিয়ে রাজ প্রায় ৩/৪ ঘন্টা দাঁড়িয়ে আছে। রাজ একটুও নড়ছেও না। কখনো রাজের দৃষ্টি বহুদূরের ওই আকাশে স্থির তো কখনো রানির নেশা ধরানো ঝাঁঝালো রূপের দিকে।
আর বেচারা রানির কোমর ব্যথা করছে। মনে মনে বলছে,
“উনার কোলে থেকে আমার কোমর ব্যথা করছে উনার কি হাত পা বা কোমর কোনো টাই ব্যথা করছে না? কি স্টিল বডি মাবুদ। ডাইনোসরের শক্তি রয়েছে এই হাতির মতো জিম বডি তে।”
রাজের মতো লোকের রানি কে ৩/৪ ঘন্টা কেন সারা রাত কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও বোধ হয় হেলবে না। তার যে বডি। অপর দিকে তার কাছে রানি একটা পাটশলা। ওজন বোধ হয় ৪৬ কিংবা ৪৮ হবে।
রাত যখন দশ টা বাজে রাজ তখন রানি কে নিয়ে ঘরে ঢুকে।
“চুপ করে বসে থাকবে একটুও নড়বে না। আসছি আমি।”
রাজ চলে গেলে রানি বিছানায় নড়চড়ে কোমরে হাত দিয়ে বসে। একটু জোরে জোরেই বলে,
“এ্যা বললেই হলো। নড়বে না একটুও। কেন গো? আমি কি আপনার মতো রোবট ম্যান নাকি? কোমরের নাট বল্টু নড়ে যাচ্ছে আর উনি আসছে নড়বে না নিয়ে। আল্লাহ মাবুদ এই গ্যাংস্টারের সাথে থাকব কি করে আমি? একে তো ভয় তারউপর রাগ।”
রাজ ট্রে করে খাবার নিয়ে এলো। রানি বেশ অবাক হয়ে। ভাবে
“উনি কি সত্যিই এলিয়েন? জাদু টাদু জানে নাকি? খাবার নিয়ে এলে কি করে?”
রানি কৌতূহল নিয়ে বলেই বসল,
“আপনি কি এলিয়েন বা ম্যাজিশিয়ান?”
“হোয়াট?”
“না মানে এই ৫ মিনিটে যে খাবার নিয়ে এলেন।”
“তুমি কি ভাবো সবাই তোমার মতো বোকার ডিম? সবাই কি বোকার রাজ্যের বাস করে?”
“কি? কি বললেন আপনি? আমি বোকার ডিম? তাহলে তো আপনি হাতির ডি..”
কথা টা বলতে গিয়েও রানি থেমে যায়। পরে যদি রাজ তাকে এই একা ঘরে পেয়ে কিছু করে বসে।
“খাবার বাহির থেকে আনিয়েছি আরো আগেই। আমি রাজ চৌধুরী। নজর টা একটু আগে আগেই চলে আমার। খুব ফাস্ট।”
রানি মুখ ভেংচিয়ে মনে মনে বলে,
“হুমম তা তো দেখাই আছে। এই কারণেই তো আমার সাথে অভিনয় করলেন। অন্য একজন কে ঠকালেন। আবার আমায় বিয়েও করে নিলেন।”
রানি কে রাজ নিজের হাতে খায়িয়ে দিতে চালইলে রানি বলে,
“আমার হাত আছে আমি খেতে পাড়ি।”
“চুপ পিচ্চি। হা করো।”
“আ আমি পিচ্চি?”
“হা করো না হলে গালে একটা খাবে।”
রানি বড়সড় করে হা করে। রাজ মুচকি হেসে রানি কে খায়িয়ে দিতে থাকে।
রাজ নিজে খেয়ে আবার উপরে রানির কাছে যায়। রানি তখন বসে ছিল। চেয়ারের উপর বসে পা দুলাচ্ছিল। যার কারণে তার সাদা পা গুলি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। রাজ ঘরে ঢুকেই এমন দৃশ্য দেখে কাশতে শুরু করে। শুকনো ঢুল গিলে রানির কাছে যায়।
রানির সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে যায়। রানির হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে রানির দিকে তাকিয়ে থাকে।
রাজের এমন চাওনি দেখে রানি ঘনঘন চোখের কাজল কালো পাঁপড়ি ফেলে। রাজ এটা দেখে একটু অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে মুচকি হাসে। আবার রানির দিকে তাকায়। ঠোঁট চেঁপে হেসে রানি কে কোলে তুলে নেয়।
“আবার কে কো কোলে..”
রাজ রানি কে নিয়ে ব্যালকুনিতে চলে যায়। সেখানে গিয়ে তাকে নামায়।
রানির সামনে হঠাৎ করে হাটু গেড়ে বসে পড়ে।
প্যাকেট থেকে রিং এর বক্স টা বের করে রানির সামনে দেয়। সেখান থেকে চকচক করা ডায়মন্ডের রিং টা রানির বা হাতের তর্জনি আঙ্গুলে পড়িয়ে দেয়। সেই হাতেই চুমু খায় রাজ।
আর রানি অবাক দৃষ্টিতে রাজ কে দেখতে থাকে।
“ভালোবাসি।”
“…
“প্রাণের টুকরো টা কে খুব ভালোবাসি। তুমি আমার বউ। আমার অর্ধাঙ্গিনী। আমার জীবনের সব টা তে তুমি আছো। তুমি ছাড়া আমি আমার জীবন টা চিন্তা করতে পারি না। তুমি বিহীন আমি সত্যিই বাঁচতে পারব না। জীবনে যাই করো আমাকে ছেড়ে কখনো যেও না। আমি মরে যাবো। তুমি চলে গেলে এই দুনিয়াতে একটা নিশ্বাসও হয়তো আমি নিতে পারব না। আমায় প্লিজ তোমার বুকে ঠাই দিও। খুব ভালোবাসি তোমায়। আমি আমার জীবনের অংশ তোমাকে ভালোবাসি। তোমায় খুব বেশিই ভালোবাসি প্রেয়সী।”
রানি শুধু ফ্যালফ্যাল করে রাজ কে দেখছে। তার মনের মাঝে অনেক কথা জাগলেও কিছু বলতে পারছে না এখন। যেন বোবা হয়ে গেছে। গলা দিয়ে আসছেও না কথা।
রাজ বসা থেকে উঠে রানির পিছনে পিঠের দিকে নিজের হাত নিয়ে রানিকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। ঝাপটে জড়িয়ে নেয় নিজের বুকে। বাচ্চাদের মতো কান্না করতে থাকে। রানি কে নিজের বুকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে রাজ।
রানির যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। রাজের কান্না টাও তার সহ্য হচ্ছে না। মনের মণিকোঠায় বড্ড বারি খাচ্ছে।
চলবে….
(