#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-৮
শাফিনের কথা শুনে মিহি ভেবাচেকা খেয়ে গেলো।মনে, মনে বলছে, এই হাফ মেন্টাল আবার কি সব ভুলভাল বকছে!মিহি উঠে এসে,দাঁতে দাঁত চেপে বলে, কি শুরু করেছো?
শাফিন মিহির হাত ধরে বলে, বউ তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবে না। তোমাকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো?
সাথী বেগম বললেন তোমার বউ তোমার কাছেই থাকবে বাবা।তোমার বউকে আমরা কোথাও নিয়ে যাচ্ছি না। কথা শেষ করে রুবেল সাহেবকে ইশরা করে গেস্ট রুমে চলে গেলেন।
মিহির বাবা, মা চলে যেতেই শাফিন মিহির হাত ছেড়ে দিয়ে বলে, যা দূরে যেয়ে ম*র বলেই রুমে চলে গেলো। মিহি পিছু পিছু এসে বলে, এই সব আদিখ্যেতা করার মানে কি ছিলো?
– আরেহহহহ বুঝলে না মিসেস এক্স মাহমুদ। আমি ঠান্ডা মাথায় আপনাকে ডান্ডা দিলাম। আই মিন দেশি ভাষায় যেটাকে বলে বাঁশ দেয়া। এবার ভবিষ্যতে কিছু হলে তোমার বাবা, মা ও তোমার দোষ দেবে।বলবে,আমার জামাই বাবজি তোকে পাগলের মতো ভালোবাসতো। সে কখনো তোকে ছাড়বে না। তুই নিজেই ছেড়েছিস। তাতে সা*পও ম*র*বে না আবার লাঠিও ভাঙ্গবে না।
– আহারে দুধের ধোঁয়া তুলসীপাতা। তা ঘটে এই বুদ্ধি নিয়ে চলেন নাকি মিস্টার মাহমুদ?
– আপনার চেয়ে ঢেররররর বেশি বুদ্ধি আমার মিসেস এক্স মাহমুদ।
– তাতো দেখতেই পাচ্ছি বুদ্বির নমুনা। না মানে আপনার কি মনে হয়! একটা মেয়েকে লুতুপুতু ভালোবাসা দেখালেই তার বাবা,মা আপনার প্রতি মুগ্ধ হয়ে যাবে?
– হবে মানে! আলরেডি হয়ে গেছে।
– রাতে যখন জিজ্ঞেস করবে বাবা কাজ কর্ম কি করো? তখন কি বলবেন মিস্টার মাহমুদ? নিশ্চয়ই বুক ফুলিয়ে এটা বলবেন না আমার বাবা প্রতি মাসে আমাকে হাত খরচ দেয় সেটা দিয়ে আমি আর আপনার মেয়ে চলি? বলেই দাঁত বের করে হেসে ফেললো।
– শাফিন মিহির সামনে এসে বলে, তার মানে? তুমি তোমার বাবা মায়ের কাছে আমাকে খারপ বানানোর জন্য তাদেরকে ইচ্ছে করে আসতে বলেছো? এরজন্যই তো বলি দুই বছরে যাদের চেহারা দেখলাম না। তারা হুট করে আমার বাসায় কি করে?
– একদম বাজে কথা বলবা না দুই বছরে আমার বাবা,মা আরো তিন বার এসেছিলো।
– হুম এসেছিলো কিন্তু সকালের বাসে আসলে বিকেলের বাসেই চলে যেতো।
দরজা বন্ধ করা দরজার সামনে মিনি মিউজিক অন করে রেখেছে মিহি যাতে ওদের কনভার্সন বাহিরে শোনা না যায়।
– দেখো আস্তে ধীরে কথা বলো, তোমার মতো গাধার বাসায় আমার বাবা মাকে আমি জীবনেও আসতে বলতাম না। আমি তো নিজেও জানিনা তারা কেন এসেছেন?
শাফিন বলে যা ইচ্ছে করো তাতে আমার কি? আমি তো খারাপ খারাপি থাকবো। তাই আমি এখন থেকে আমার মতো। তোমার বাবা মা আসছে সেটা ভুলে যেয়ে নিজের মতো চলবো।
মিহি শান্ত কন্ঠে বললো,দেখো সমস্যা তোমার আর আমার মাঝে, আর যেহেতু আমাদের লাভ ম্যারেজ তাই বাবা, মা, কে আমাদের প্রবলেমের কথা জানানো যাবে না। প্লিজ আমার জন্য না হোক অন্তত আমার বাবা,মা যতটুকু সময় আছে একটু সুস্থ মানুষের মতো বিহেভিয়ার করো।
– বলতে কি চাইছো আমি অসুস্থ? তাহলে একজন অসুস্থ মানুষের কাছ থেকে সুস্থ আচরণ কি ভাবে আশা করো। হাউ ফানি।
মিহি নরম স্বরে বললো, দেখো শাফিন আমি আমার বাবা৷ মায়ের একমাত্র মেয়ে, আমি কষ্টে আছি সেটা তারা দেখতে পেলে সহ্য করতে পারবে না।আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি তারা চলে গেলো আমিও চলে যাবো। তবুও একটু ধৈর্য ধরে তাদের সামনে ভালো থাকার নাটকটা করে যাও।
শাফিন কিছু না বলে, বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। মিহি দরজার সাথে হেলান দিয়ে বসে পরলো। হাঁটুতে মুখ গুজে দিয়ে কাঁদতে লাগলো। কাদঁতে, কাদঁতে মনে পরলো অতীতের কিছু কথা।
ফ্লাসব্যাক………
ভার্সিটির এক সিনিয়র মেয়ের সাথে ক্যান্টিনে কথা কা*টা*কা*টি হয়েছিলো মিহির। এক পর্যায়ে হাতাহাতি পর্যন্ত হয়ে যায়। সেদিন প্রিন্সিপালের রুমে মিহিকে দিয়ে সেই সিনিয়র মেয়টার কাছে ক্ষমা চাওয়ানো হয়েছিলো। কিন্তু মিহির সেটা ইগোতে লাগে। তাই বাসায় এসে প্রচুর কাঁদে। শাফিনের কানে খবরটা যেতেই শাফিন দ্রুত মিহির বাসায় পৌঁছে যায়। মিহিকে কাঁদতে দেখে জড়িয়ে ধরে বলে,একদম কাঁদবে না তোমার চোখের পানি এতো সস্তা না। নিজের হাতে মিহির চোখের পানি মুছে দিয়ে মিহির কপালে ভালোবাসা পরশ দিয়ে বলে, এবার যাও চোখ মুখ ধুয়ে আসো। মিহিকে বসে থাকতে দেখে শাফিন নিজেই মিহিকে কোলে তুলে নিয়ে বেসিনের সামনে নিয়ে এসে চোখে মুখে পানি দিয়ে দেয়। নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দিয়ে বলে, কখনো কাঁদবে না। এই শাফিন যতদিন বেঁচে আছে ততদিন তোমার চোখে যেন পানি না আসে।
আগের কথাগুলো মনে পরতেই মিহির কান্নার গতি আরো বেড়ে গেলো। বেশ কিছু সময় কাঁদার পর ওয়াশরুমে এসে নিজেই চোখে মুখে পানি দিয়ে আয়নায় তাকিয়ে বলে, সময় কত দ্রুত বদলে যায়। প্রেমিক হিসেবে যেই মানুষটা এতো এতো পার্ফেক্ট ছিলো আজ হ্যাসবেন্ড হিসেবে সেই একদম আন- পার্ফেক্ট। যার কোন যোগ্যতাই নেই হ্যাসবেন্ড হওয়ার। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বেডে শুয়ে থেকে কিছু সময় রেস্ট নেয়। শোয়া থেকে উঠে,ফাহিন কে কল করে কিছুদিনের ছুটি নিয়ে নেয়। তারপর কিচেনে এসে সন্ধ্যার জন্য নাস্তা বানায়। মিহি নিজের কাজে যখন ব্যস্ত তখন সাথী বেগম পেছনে এসে দাঁড়িয়ে মিহির কাঁধে হাত রাখেতেই মিহি চমকে উঠে পেছনে তাকিয়ে সাথী বেগমকে দেখে জড়িয়ে ধরে। আমরা উপর থেকে নিজেকে যতই স্ট্রং দেখাইনা কেন দিন শেষে নিজের কাছের মানুষদের কাছে দূর্বল হয়েই পরি,না চাইতেও। মিহির চোখ থেকে দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো। মিহি দ্রুত চোখের জল মুছে নিয়ে সাথী বেগমকে ছেড়ে দিলো। কিন্তু সাথী বেগম ছাড়লেন না। মমতা মাখা কন্ঠে বললেন,তুই ঠিক আছিস তো মা? আমাদের কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছিস না তো?
– কি লুকাবো বলো তো? কতদিন পর তোমাকে দেখলাম তাই একটু জড়িয়ে ধরলাম এই আর কি।
– তুই সত্যি বলছিস তো? আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা লুকাচ্ছিস।
– সত্যি, সত্যি, সত্যি মিথ্যে কেন বলবো।
– আচ্ছা তুই বোস আমি নাস্তা বানাচ্ছি।
– তুমি একা কেন বানাবে! আজ দুই মা, মেয়ে মিলে বানাবো।
সাথী বেগমের মনটা কেমন খারাপ হয়ে গেলো। যদিও সেটা তিনি মিহিকে বুঝতে দিতে চাইছেন না। তার মন বলছে, মিহি কিছু লুকাচ্ছে।
শাফিন বাহিরে এসে ইচ্ছে মতো বাজার করলো। সাথে মিহির বাবা, মায়ের জন্য কিছু কেনাকাটাও করলো। শাফিন বাসায় ফিরছিলো তখন দেখা হলো উদয়ের সাথে। উদয় হয়তো অফিস থেকে ফিরছে। শাফিনকে রিক্সায় দেখে বেশ অবাক হয় উদয় নিজের রিকশা থামিয়ে শাফিনের রিক্সায় উঠে বসে বলে, কিরে এতো এতো বাজার করার কারণ?
– বাসায় মেহমান এসেছে তাদের জন্যই বাজার করা।
– মেহমান মানে!
– মানে আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি।
– মানে তুই বলতে চাইছিস, ভাবির বাবা,মা এসেছে!
– হুম তারা ছাড়া কি আমার আরো দু’তিন জোড়া শ্বশুর, শ্বাশুড়ি আছে নাকি।
– ভাইরে বুঝলাম। কিন্তু ভাবি যে বাসায় নেই।
– বাসায় চল তোকে ড্রামাটিক একটা ভাবির সাথে দেখা করাবো।
বাসায় এসে কলিং বেল বাজাতেই মিহি দরজা খুলে দিয়ে সুন্দর করে সালাম দিলো।
শাফিন আর উদয় ভিতরে আসলো। শাফিন বাজারের ব্যাগগুলো কিচেনে রেখে এসে বসতেই মিহি দু’গ্লাস সরবত এনে দু’জনের হাতে দিয়ে, শাফিনের উদ্দেশ্যে বললো, তুমি বাজারে যাবে আমাকে বলবে না। তাহলে লিস্ট করে দিতাম কি, কি আনতে হবে।
– তুমি আবার কষ্ট করে লিস্ট করবে?তাই নিজেই সব কিছু নিয়ে এসেছি। দু’একটা বাকি থাকলে বলে দিও পরে নিয়ে আসবো।
উদয় পুরোই বোকা বনে গেলো। কি হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছে না। শুধু আবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মিহি আর শাফিনের দিকে।
শাফিন আস্তে করে উদয়ের কানের কাছে মুখ এনে বলে,মুখ বন্ধ কর নয়তো মশা ঢুকে যাবে।জানিস তো ঢাকা শহরের মশারা কত চতুর।
#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-৯
মিহি কিচেনে এসে বাজার গুলো সব বেড় করছে,আর অবাক হচ্ছে। সব কিছু নিয়ে এসেছে পার্ফেক্ট ভাবে। অথচ কোনদিনও শাফিনকে বাজারে পাঠাতে পারতো না। হয় মিহি নিজে বাজার করে আনতো নয়তো দারোয়ানকে দিয়ে বাজার করাতো। মনে মনে বলছে,আমি তো এমন একজনকেই চেয়েছিলাম। তুমি চাইলেই সব আগের মতো হতে পারতো। অথচ তোমার কোন ইচ্ছে নেই আমাকে নিজের করে রাখার।
এতো অবহেলিত হয়ে তোমার সাথে থাকতে পারলাম না। তাই চলে গেলাম। ভেবেছিলাম আমার শূন্যতা তোমাকে পোড়াবে।আমার অনুপস্থিতি তোমার হৃদয়ে আমার প্রতি ভালোবাসা জানান দেবে।কিন্তু কি অদ্ভুত বলো, আমার শুন্যতা তুমি অনুভব করতেই পারলে না।
শাফিন কিচেনে এসে বলে,উদয়কে কিছু ফল কে*টে দাও।শাফিনের কথা কর্ণগোচর হতেই মিহি ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে আসে। মৃদু স্বরে বলে,মা।পাটিসাপটা করেছে তুমি যাও আমি ফল আর পাটিসাপটা নিয়ে আসছি। শাফিন বললো, ইশশ আহত বাঘিনীর মতো শোনাচ্ছে তোমার কথা। মিহি কোন উত্তর দিলো না শাফিনের কথার।
মিহি ফল কা*ট*বে এমন সময় মনে হলো, আম্মু তো ছিট রুটি আর কষা মাংসও রান্না করেছে। সেগুলো ট্রেতে সাজিয়ে নিয়ে আসলো বসার রুমে। টেবিলে খাবার সাজিয়ে দিচ্ছে। উদয় আর চোখে একবার মিহির দিকে তাকাতেই বুকের বাম পাশে কেমন ব্যথা অনুভব করলো। মিহির চোখের নিচে হালকা কালি পরেছে। চেহারাও কেমন মলিন হয়ে আছে। শাফিন আর উদয়, খাওয়া শুরু করলো। মিহি খাবার পরিবেশন করে চলে গেলো কিচেনে। মাছ,মাংস,সবজিগুলো ফ্রীজে রেখে। এসে দেখে উদয়,শাফিন আর রুবেল সাহেব গল্প করছেন,
মিহি সাথী বেগমের রুমে এসে, সাথী বেগমের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে বললো, মাথায় হাত বুলিয়ে দাও তো। সাথী বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, কিরে মা আমাদের কে নাতি নাতনির মুখ দেখাবি না।
মিহির মুখটা মলিন হয়ে গেলো।
– কিরে মা মন খারাপ করলি যে? কোন সমস্যা থাকলে আমাকে বল,আমাদের ওইদিকে ভালো কবিরাজ আছে তাদের থেকে তাবিজ কবজ এনে দেই। সারাদিন একা একা তোর ভালো লাগে একটা বাচ্চা থাকলে দেখবি তোরও ভালো লাগবে। সময়ও কেটে যাবে। তোর মন খারাপ ও থাকবে না।
মিহি বলে, মা কি শুরু করলে বলো তো? সময় হলে তোমাদের নাতি নাতনির মুখ ঠিক দেখাবো। মিহি উঠে চলে গেলেন। সাথী বেগম মনে করলেন হয়তো বাচ্চা হচ্ছে না তাই তার মেয়ের মন খারাপ। মনে মনে ঠিক করলেন এবার কোন কবিরাজের কাছ থেকে তাবিজ কবজ এনে দেবেন।
মিহি রুমে চলে আসলো।শাফিনের বেপরোয়া চলাফেরা না হলে, হয়তো তাদের কোল জুড়েও একটা ফুটফুটে বেবি থাকতো। কিন্তু একটা অসুস্থ পরিবেশে সে কথা মিহি মাথায় আনেনি।ঘড়িতে চোখ পড়তেই দেখে রাত দশ-টা পার হয়ে গেছে, মিহি নিজের রুম থেকে বসার রুমে চলে আসলো,ততক্ষণে উদয় চলে গেছে, সবাইকে নিয়ে এক সাথে ডিনার করলো।
সবাই যার যার রুমে চলে আসলো। মিহি সিঙ্গেল সোফায় বসে আছে, শাফিন বেডে। শাফিন বললো, কেউ চাইলে বেডে এসে শুয়ে পরতে পারে, আমি কিছু মনে করবো না।
মিহি কোন উত্তর না দিয়ে সে ভাবেই বসে রইলো।
শাফিন মিহির সাইড ফাঁকা রেখে শুয়ে সেদিকে মুখ করে বলে, বুঝলি ভালো ভাবে বলেছিলাম বেডে এসে শুতে পারে। কিন্তু এ যুগে ভালো মানুষের কোন মূল্য নেই।
শাফিনের কথা জেন মিহি শুনতেই পাচ্ছে না। এমন ভাবে ইগনোর করছে।বসা থেকে উঠে কাভার্ড থেকে একটা চাদর নিয়ে সিঙ্গেল সোফায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে রইলো।
শাফিন একি ভাবে নিজে নিজে বক বক করেই যাচ্ছে।
দৃষ্টি ঘুরিয়ে সোফায় তাকিয়ে দেখে মিহি ঘুমিয়ে আছে। হালকা বাতাসে, মিহির সামনের চুলগুলো উড়ছে। শাফিন উঠে এসে, মিহির দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আলতো হাতে চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে মিহিকে কোলে তুলে বেডে এনে শুয়ে দিয়ে নিজে বারান্দায় চলে আসলো।ইজি চেয়ারে বসে একটার পর একটা সি*গা*রে*ট শেষ করেই যাচ্ছে। এভাবেই কেটে গেলো অর্ধ রাত। শেষ প্রহরে উঠে এসে বেডে শুয়ে পরলো মিহিকে নিজের বাহুতে জড়িয়ে নিয়ে।
_____________________________________________.
মোর্শেদ চৌধুরী ভেবে পাচ্ছেন না। যেই ছেলে তার বিরুদ্ধে যেয়ে মিহিকে বিয়ে করলো সে কি করে সেই মেয়েটাকে ছেড়ে দিতে চাইতে পারে? হিসেবে মেলাতে পারছেনা। নিজের ছেলের ছবির দিকে তাকিয়ে বলে, কেন তুই পাল্টে গেলি? সে কথা আমাকে জানতেই হবে।নিজের মোবাইল বের করে ইমার্জেন্সি টিকেট কেটে নিলেন বাংলাদেশের। মিহিকে আজ অব্দি সরাসরি দেখা হয়নি। তবে মোবাইলে অনেকবার দেখেছে। ভারি মিষ্টি মেয়েটা। ধবধবে সাদা না হলেও উজ্জ্বল শ্যাম বর্নের মেয়েটির মুখশ্রী জুড়ে যেনো মায়ার খেলা। তাকালেই যেন কেমন মায়া হয়। কবি ঠিক বলেছিলেন, শ্যামলা মেয়েরা মায়াবতী হয়।এমন মায়াবতীকে ছেড়ে দেয়ার রহস্য খোঁজা এখন মোর্শেদ চৌধুরীর মূল উদ্দেশ্য।
______________________________________________
রাতের আঁধারকে ভেদ করে ধরণী জুড়ে ফুটে উঠছে নতুন ভোরের আলো। সব অন্ধকারকে গ্রাস করে আলোকিত করছে ধরণী।জানালার সাদা পর্দা ভেদ করে সেই আলোর এক ঝলক চোখে মুখে পরছে মিহির। নড়েচড়ে নিজেকে আর একটু মিশিয়ে নিলো শাফিনের সাথে। ততখনে ঘুম কিছুটা হালকা হয়ে এসেছে মবহির। নিভু নিভু চোখে সামনে তাকিয়ে নিজেকে কারো বাহুতে আবদ্ধ দেখে। পুরো ঘুম উবে গেলো। ভালো ভাবে লক্ষ করতেই নিজেকে শাফিনের বাহুতে দেখতে পেয়ে বেশ চমকে গেলো। দ্রুত সরে আসতে চাইলে আটকে পরলো কারো শক্ত বন্ধনে। নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিতেই, শাফিন ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,কি করছো সুইটহার্ট একটু ঘুমোতে দাও। মিহি চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে মিস্টার মাহমুদ। শাফিন কোন প্রতিত্তোর করলো না। মিহি শাফিনের কানের কাছে মুখ নিয়ে একটু জোড়ে বললো মিস্টার মাহমুদ।
শাফিন লাফিয়ে উঠে বলে, এভাবে কেউ ডাকে।শুধু শুধু তোমাকে আমি আন রোমান্টিক বলি?
মিহি ততক্ষণে দূরে সরে নিজেকে ঠিক করে নিয়ে বলে, আপনি হয়তো ভুলে গেছেন মিস্টার মাহমুদ আমার সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই।
শাফিন চোখ ডলতে ডলতে বলে,যাও কফি নিয়ে আসো প্রতিদিন তোমার এক ডায়ালগ ভালো লাগে না।
মিহি বেড সাইড টেবিল থেকে পানির জগ নিয়ে পুরো পানি শাফিনের মুখে ছুড়ে মারলো। শাফিন মাথা ঝাড়া দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে, কি হচ্ছে এসব?
– সেটাতো আমারও প্রশ্ন? আমি সোফা থেকে বেডে কি করে আসলাম?
শাফিন বলতে নিলো তুমি তো, বলেই থেমে গেলো মনে পরে গেলো এখন আর আগের মতো কিছু নেই। তাই নম্র স্বরে বললো,আমি নিয়ে এসেছি এরজন্য এমন ব্যবহার করতে হয়। তোমাকে মনে হয় প্রথম বার টাচ করছি।
মিহি শাফিনের সামনে আঙ্গুল তুলে বলে,অধিকারহীন ভাবে আজ প্রথম ছুঁয়েছেন। এটাই যেন শেষবার হয়।
শাফিন কিছু না বলে, ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। মিহি রুম থেকে বাহিরে এসে অন্য ওয়াশরুম ব্যবহার করে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা বানাতে কিচেনে যেয়ে দেখে সাথী বেগম নাস্তা বানাচ্ছে। মিহি বললো,মা আমাকে ডাকবে না। তুমি এসব কেন করছো?
– আমি না করলে কে করবে!দু’টো দিন মেয়ের বাসায় থেকে যদি মেয়েটাকে একটু শান্তি না দিতে পারি তবে আমি কেমন মা?
মিহি সাথী বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলে, তুমি হলো পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো ‘মা’।
হয়েছে হয়েছে আর আহ্লাদ করতে হবে না। জামাইকে নিয়ে টেবিলে বোস আমি নাস্তা রেডি করছি। মিহি বললো, আমিও তোমার সাথে সাহায্য করবো।
– যা বলেছি লক্ষী মেয়ের মতো সেটাই করো। যাও টেবিলে যেয়ে চুপটি করে বস আমি নাস্তা নিয়ে আসছি। রান্নাঘর থেকে বের হবে এমন সময় মিহির মাথায় কেমন চক্কর দিলো। সেটাকে পাত্তা না দিয়ে কোনমতে আরো সামনে আসতেই মাথা চক্কর দিয়ে সব কিছু কেমন ঘোলাটে দেখা যাচ্ছে। মিহি দু’হাতে দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে মৃদু স্বরে চিৎকার দিয়ে মা বলল।
#চলবে