ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব -০৬+৭

#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -৬

শাফিন খাবার খেয়ে সেই কখন থেকে ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ঘুম বাবাজি আজ তাকে ধরাই দিচ্ছে না। কতক্ষণ এপাশ ওপাশ করে উঠে বসল।দূর আমি কিনা মিস করছি মিহিকে? না আমি তোমাকে মিস করবো না। মন কি আর কারো জেদ দেখে। সে নিজের মতো চলে। বেড ছেড়ে উঠে বারান্দায় আসলো একটা সি*গা*রে*ট ধরিয়ে নিয়ে দোলনায় বসে মনের সুখে ধোয়া ছাড়ছে। যদিও মনে অশান্তি তবে সে কথা স্বীকার করবে না। সি*গা*রে*টে শেষ টান দেওয়ার সময় বলল তুই ও কি মিহির মতো দূর আরোগ্য ব্যাধি। নিজের প্রতি বিরক্তির হয়ে বলে, তুই মিহির যেয়ে শত গুনে ভালো। আমার মন খারাপের সঙ্গী। নিজের সাথে কথা বলতে বলতে চোখ গেলো দূর আকাশের অর্ধ চন্দ্রের দিকে। চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে, আজ কি? আমার মতো তোরও মন খারাপ? তুইও নিজেকে একা ভাবছিস? শোন একা থাকার মাঝে শান্তি আছে। তবে যাই বল তোকে দেখে ভালোই লাগছে। তুইও অপূর্ণ আমিও অপূর্ণ। একা একা চাঁদের সাথে কথা বলছে পাগলের মতো। কথা শেষ করে বেডে এসে শুয়ে পরলো। শুয়ে শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে করতে কখন যেনো ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে তা হয়তো নিজেও জানেনা।
______________________________________________
মিহি জানালার গ্রীল ধরে দূর আকাশের পানে দৃষ্টি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। না চাইতেও শাফিনের জন্য চিন্তা হচ্ছে। মিহি তো জানে শাফিন নিজে কোন কাজ করতেই পারেনা। মনে মনে ভাবছে কি খাচ্ছে না খাচ্ছে কে জানে?শাফিন উল্টো পাল্টা করতো ঠিকি কিন্তু মিহিকে আবার পাগলের মতো ভালোও বাসতো। যত রাতেই বাড়ি ফিরুক মিহিকে নিজের প্রশস্ত বুকে আগলে নিয়ে ঘুমাতো। শাফিনের খামখেয়ালি মেজাজের আড়ালে মিহির জন্য নিখুঁত ভালোবাসার কাছে বারবার হেরে গেছে মিহি। সুযোগ দিতো শুধু একটু শুধরে যাওয়ার।রাতের আকাশ আর চাঁদ, তারার সাথে রাত জাগা মানুষের এক অদ্ভুত সম্পর্ক আছে। বেশির ভাগ হৃদয় ভাঙা মানুষগুলো নিজেদের কথা গুলো মেলে ধরে তাদের কাছে। যে কথা গুলো দিনের আলোতে লুকিয়ে রাখে মিথ্যে হাসির আড়ালে।

মিহি অনেক সময় নিয়ে চাঁদের পানেই চেয়ে রইলো। হুট করেই গেয়ে উঠলো,আমি পারিনি তোমায় আপন করে রাখতে। এতোটুকু বলে চুপ করে রইলো। চোখের কার্নিশে জমা হওয়া অশ্রুটুকু হাতের উল্টো পিটে মুছে নিয়ে বিছানায় এসে শুয়ে পরলো।

______________________________________________
ব্যস্ত নগরীর ব্যস্ত মানুষ গুলো কাক ডাকা ভোরে উঠেই নিজের কর্মে ব্যস্ত হয়ে পরে। সূর্যি মামা তখন কেবল উঁকি দিচ্ছে। শাফিনের জানালার গোলাপি পর্দা ভেদ করে একটু একটু সোনালি রোদ এসে পরছে শাফিনের মুখে। এপাশ থেকে ওপাশ ঘুরে মাথার উপর বালিশ দিয়ে আবার শুয়ে পরলো।এভাবেই বেলা গড়িয়ে সকাল এগারোটা ছাড়িয়ে গেলো।হঠাৎ ঘুম ঘুম চোখে অর্ধ জাগ্রত মনে বার বার মনে হচ্ছে কেউ কলিং বেল বাজাচ্ছে। কোন মতে টুলতে টুলতে গেটের সামনে এসে তাকিয়ে দেখে মিহির বাবা, মা দাঁড়িয়ে আছে গেটের বাইরে। দ্রুত রুমে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে আবার যেয়ে দরজা খুলে দিয়ে সালাম না দিয়েই বলে, আপনারা এতো সাকালে!

রুবেল সাহেব বললেন, কি বলো বাবা এখন বারোটা বাজে এতো সকাল কোথায়? না মানে বাবা। না শ্বশুর বাবা আসুন ভেতরে আসুন। রুবেল সাহেব ভেতরে আসলেন সাথে সাথী বেগমও আসলেন। রবেল সাহেব ঘরে ঢুকে ঘরের অবস্থা দেখে বলে, এতো অগোছালো কেন বাবা।

সাথী বেগম বললেন কি শুরু করলে মেয়ের বাসায় এসেও দোষ ধরবে নাকি?আচ্ছা বাবা মিহি কোথায়? ওকে তো দেখতে পাচ্ছি না।

– ওতো শপিংয়ে গিয়েছে।

রুবেল সাহেব বললেন, গত দু’দিন ধরে মেয়েটার সাথে কোন যোগাযোগ নেই। কল করলেও রিসিভ করে না।
তুমি মিহিকে কল করে বাসায় চলে আসতে বলো।

সাথী বেগম বললেন, তুমি সাথে কেন গেলেনা বাবা। একা একা ও কি শপিং করবে?

– আমি বলেছিলাম আন্টি আমাকে সাথে নিয়ে যেতে। কিন্তু মিহি বললো ও নাকি ওর কোন ফ্রেন্ডের সাথে যাবে।

– মেয়েটা যে কি করে না।এখনকার দিনকাল ভালো না।

রুবেল সাহেব বললেন,বাবা তুমি মিহিকে চলে আসতে বলো।

– জ্বি শ্বশুর বাবা। আপনারা বসুন আমি রুম থেকে মোবাইল নিয়ে আসছি। রুমে এসে সোজা ওয়াশরুমে যেয়ে দরজা বন্ধ করে আয়নায় তাকিয়ে বলে, বানকে মুসিবত পিছে পারি হ্যা।এখন আমি কি করবো। দু’মিনট পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মিহিকে টেক্সট করলো, তোমার বাবা, মা এসেছে বাসায়। তাদেরকে বলেছি তুমি শপিংয়ে। এখন তুমি কি করবে করো।

মিহি অফিসে কাজ করছিলো। আজকেই অফিসে প্রথম দিন। মোবাইলের মেসেজ টোনে একবার ডিস্টার্ব হলো। কিন্তু মোবাইল হাতে নিলো না। শাফিন ও কম কিসে একি মেসেজ বারবার ফরওয়ার্ড করতে লাগলো। এবার বিরক্ত হয়ে মিহি মোবাইল হাতে নিলো, মেসেজ পরে চোখ কপালে। মিহির বাবা খুব রাগী মানুষ তাইতো এসব কিছু মিহি বাসায় কাউকে বলেনি। নিজের ডেস্ক ছেড়ে দ্রুত ফাহিনের কেবিনে গেলো। ব্যস্ত কন্ঠে বললো ফাহিন একটা ফেবার লাগবে?

– আরে এতো ব্যস্ত না হয়ে বলে ফেল।

– তোর ড্রাইভারকে বলে দে আমাকে মৌচাক দিয়ে আসতে।

– মৌচাক মানে শাফিনের বাসায়?

– হুম তোকে পরে সব বলছি এখন তাড়াতাড়ি ড্রাইভারকে বল।

– ওকে তুই যা আমি বলে দিচ্ছি।

মিহি গাড়িতে বসেই কল করলো শাফিনকে। ওপাশ থেকে রিসিভ করে মধু মাখা কন্ঠে শাফিন বললো,শপিং করা হলো তোমার?

শাফিন কন্ঠ শুনে মিহি বড় রকমের ধাক্কা খেলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, শপিং আর করতে পারলাম কই!এইতো বাসায় ফিরে আসছি।

– একদম মন খারাপ করেনা। আমি নিজে তোমাকে শপিং করাতে নিয়ে যাবো। কেমন।

– আচ্ছা ডিয়ার এখন রাখি। আর হ্যা বাবা, মা কে কিছু খেতে দিও।

– কি বলো ডিয়ার ওয়াইফি, বাসায় তো তেমন কিছুই নেই।

– নেই তা-তো আমি জানি ডিয়ার। তুমি দারোয়ানকে দিয়ে কিছু আনিয়ে নাও।

– আচ্ছা জান আমি আনিয়ে নিচ্ছি। তুমি সেফলি চলে আসো।

– ওকে ডিয়ার।

রুবেল সাহেব এতোক্ষন আড়ালে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিলেন।

শাফিন কল কেটে পেছনে ফিরে বলে, বাবা, না মানে শ্বশুর বাবা আপনি?

– আসলাম তোমার সাথে একটু গল্প করতে। আচ্ছা তুমি থাকো আমি সামনের রুমে যাই।

রুবেল সাহেব চলে যেতেই শাফিন বললো যেমন বাপ তার তেমন মেয়ে। বাপরে কি সাংঘাতিক।

মিহি কল কেটে বলে ড্রামাবাজ কোথাকার।

সাথী বেগম ঘর গুছিয়ে দিচ্ছেন। এমন সময় রুবেল সাহেব এসে বললেন, আমার মেয়ের পছন্দ খারাপ না তাই না সাথী?

– সাথী বেগম বললেন তা যা বলেছো। হিরের টুকরো একটা জামাই পেয়েছি। যেমন রাজপুত্রের মতো দেখতে তেমন আলা-ভোলা।

– ঠিক বলেছে। কি নিষ্পাপ ছেলে। এই যুগে এমন পাওয়া যায় নাকি!

– তুমি তো রাজি হচ্ছিলে না। যদি অমত করতে তাহলে ভালো ছেলে হাত ছাড়া হয়ে যেত।

– মেয়ের গুনে কপাল করে এমন একখান জামাই পেয়েছি। বলছিলাম কি স্বর্নের যে ব্রেসলেট গড়িয়ে রেখেছিলাম জামাইয়ের জন্য তা এবার জামাইকে পরিয়ে দিয়ে যাবো।

-শুধু ব্রেসলেট কেন! পোষাক বানাতে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে যাবে।

– শুধু পঞ্চাশ হাজার কেনো একবারে এক লাক্ষ দিয়ে দেবো। দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র মেয়ের জামাই।

শাফিন অনলাইনে খাবার অর্ডার করলো।খাবার আসতে চল্লিশ মিনিটের মতো সময় লাগবে। শাফিন কাভার্ড থেকে টি শার্ট আর প্যান্ট নিয়ে শাওয়ারে চলে গেলো।

সাথী বেগম ফ্রীজ থেকে মাছ মাংস নামিয়ে সেগুলো ভিজিয়ে রেখে বাকি সব জোগার করে নিলেন। কিচেনে যাচ্ছে তাই অবস্থা। তিনে সব পরিস্কার করে রান্না বসিয়ে দিলেন।

মিহি এসে কলিং বেল বাজাতেই রুবেল সাহেব দরজা খুলে দিলেন। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করে বললেন, তুই যা ফ্রেশ হয়ে আয়।

মিহি রুমে ঢুকেই চিৎকার দেবে তার আগেই শাফিন মিহির মুখে হাত দিয়ে আটকে দেয়।
#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা

পর্ব-৭

মিহি উমম, উমম করছে,শাফিন বলল,ছাড়তে পারি কিন্তু একদম চেঁচাবেনা।মিহি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। শাফিন হাত সরাতেই মিহি শাফিনের হাতে কামড় বসিয়ে দিয়ে বলে,হুশ একদম আওয়াজ করবেন না।নির্লজ্জ, বেহায়া লোক যেই সুযোগ পেয়েছো ওমনি ছুঁয়ে দেওয়ার বাহানা। শাফিন মিহিকে টান দিয়ে নিজের কাছে এনে অধরে অধর মিলিয়ে দিলো। মিহি কোনমতো ঠেলেঠুলে শাফিনকে সরিয়ে দিয়ে বলে,নির্লজ্জ, বেহায়া যখন বলেছো তখন তা প্রমাণ তো করতেই হতো। তাইনা?
মিহি কথা ঘুরিয়ে বলল, অসভ্য লোক বেহায়ার মতো এখনো তোয়ালে পরে দাঁড়িয়ে আছে। যান তাড়াতাড়ি শার্ট,প্যান্ট পড়ুন।

আহারে বেবি তুমি তো আমকে প্রথম বার তোয়ালে পড়া ভেজা শরীরে দেখছো?তাই লজ্জা পাচ্ছো।অভিনয় তো ঠিক সেরকম করছো। আগে তো বলতো জান তুমি শাওয়ার নিয়ে বের হলে তোমাকে দেখতে দারুণ লাগে।

– ও হ্যালো আমি এসব আপনার মতো বাঁদরকে কোন দুঃখে বলতে যাবো? এসব আমি আমার হ্যাসবেন্ডকে বলেছিলাম।

– ওমা তাই নাকি! তাহলে তোমার চোখের সামনো জলজ্যান্ত এই মানুষটা কে গো?

– একটা বাঁদর, অসভ্য, টিকটিকি, তেলাপোকা।

– ইশ হাওয়া ফুরিয়ে গেলো আর কোন প্রানীর নাম মনে পরছে না বুঝি।

– মিস্টার মাহমুদ আপনার সাথে ফাও কথা বলে টাইম ওয়েস্ট করার মতো টাইম আর মেজাজ কোনটাই আমার নেই। সো চুপচাপ শার্ট পরে নিন।

– মিসেস এক্স মাহমুদ, আপনার সাথে তো ফাও বকবক করতে আমার টাইমের অভাব নেই। পড়বো না আমি শার্ট দেখি কি করতে পারো?

– শার্ট পরো নয়তো,,,,,

– নয়তো কি করবে?

– তোয়ালে টেনে খুলে ফেলবো। তখন বুঝবে।

– কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা। কোন জন্মে নাকি এই মেয়ে আমার বউ ছিলো। কথায় না পেরে সোজা ইজ্জতে হাত।

– সাংঘাতিকের কি দেখেছেন মিস্টার মাহমুদ। সুইট,কিউট মিহিকে দেখেছেন। কিন্তু এখন থেকে সাংঘাতিক মিহিকে দেখবেন। বলেই কাভার্ড থেকে ড্রেস বের করতে নিলো। তবে কি আশ্চর্য একটা ড্রেসও নেই। দাঁতে দাঁত চেপে বলে আমার ড্রেস কই?

– মিস সাংঘাতিক, এখানে পূর্বে আমার ওয়াইফের ড্রেস থাকতো। পূর্বে মানে অতীতকালে। বর্তমানে বউ নামের প্যারা থেকে মুক্ত। তাই তার ড্রেস সব বারান্দার এক কোনে ফেলে রেখেছি। বিন্দাস লাইফে উটকো ঝামালে দূর করে দিয়েছি। মিহির সামনে এসে বলে, বিন্দাস হয়ে বাঁচো রে, বিন্দাস হয়ে নাচোরে আল নাইট লং।

মিহি বারান্দা থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেড় হলো।

মিহি বেড় হতেই শাফিন মিহিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। মিহি কিছু বলবে তার আগেই শাফিন বলে,জান তোমার ফ্রেশ হতে এতো সময় লাগলো কেন।সেই কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। থাক আর কিছু বলতে হবে না চলো। মিহি সামনের দিকে ঘুরতেই সাাথী বেগম বলল, বাব তুমি যাও আমি আর মিহি আসছি। শাফিন চলে যেতেই সাথী বেগম নিজের মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলে, মা-রে তোর সুখ দেখে মনটা ভরে গেলো। তুই ঠিকি বলেছিলি এমন ছেলে আমরা পাবো না। জামাইকে যত দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি।

মিহি মনে মনে বলে, ইশ তখন যে কেন এর এতো প্রশংসা করেছিলাম কে জানতো ব্যাটা একটা হিটলার।
সাথী বেগম বললেন, কিরে কি ভাবছিস।

– ভাবছি কপাল করে এমন একটা জামাই পেয়েছি।

-সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি তুই ভিষণ ভাগ্যবতী।

মিহি মনে মনে বলছে,ভাগ্যবতী ছাই।

সাথী বেগম বললেন, এবার চল আমি নিজের হাতে আজ রান্না করেছি। গরুর মাংস ভুনা,সরষে ইলিশ,ঘন ডাল আর তোর জন্য একটু আলু ভাজাও করেছি। সবজি ছিলো না তাই আর কিছু করতে পারিনি।

খাবার টেবিলের এক পাশে শাফিনের অর্ডার করা খাবারের প্যাকেটগুলো পরে আছে।সেদিকে কেউ মুখ তুলেও দেখছে না। সবাই মিলে খাওয়া শেষ করে গল্প করছে। এমন সময় শাফিন উঠে রুমে চলে যায়। রুবেল সাহেব বললেন, কিরে মা জামাই কি রাগ করে চলে গেলো? রুবেল সাহেব হলেন বেশি বোঝার লোক। মানে সব কিছু নিজের মতো ভেবে নেয়।

– না বাবা, ও তোমার সাথে রাগ করবে কেন?

– তুই সত্যি করে বল, আমরা আসাতে জামাইয়ের কি অসুবিধা হচ্ছে?

– আরে বাবা কিসের অসুবিধা।পাঁচ রুমের বিশাল ফ্লাট আমাদের। এতো রুম কি আমাদের লাগে নাকি?সব তো খালি পরে থাকে। তাহলে অসুবিধা কেন হবে।

– আমার মনে হচ্ছে তাই বললাম।

সাথী বেগম বললেন এই বেডার বেশী বোঝার অভ্যাস আর গেলো না। দুপুরে খাবার খেয়ে একটু রেস্ট করবে এইটা তো স্বাভাবিক। আর কি আবাল তাবল বোকছে।

– তুমি সব সময় আমারে অপমান করে কথা বলবা না। ভুলে যেওনা এই বেডা তোমার স্বামী তাই সম্মান দিয়ে কথা বলো।

– এহহহহ আসছে আমার স্বামী। তুমি যে স্বামী নামে আসামী সেইটা কি ভুলে গেছো।

– এরজন্য তোমার সাথে আমি কোথাও আসতে চাইনা। আমারে আসামী বলা। তুমি কি? দুনিয়ার সবচেয়ে ঝগড়ুটে মহিলা। আমার মতো আলা ভোলা মানুষ দেইখা সংসার কইরা গেলা। অন্য মানুষ হইলে এক দরজা দিয়ে ঢুকাতো অন্য দরজা দিয়ে বেড় করে দিতো।

-কি কইলা তুমি? আমি ঝগড়ুটে, এই ছিলো কপালে পঁচিশটা বছর ধইরা এই বেডার সংসার করি। কত কষ্ট সহ্য করছি। কি করি নাই তোমার সংসারের জন্য শেষ পর্যন্ত এই ছিলো কপালে। তোমার মতো বেডার কি যোগ্যতা আছে আমার মত মেয়েরে বিয়ে করার।আমার মতো মেয়ে পাইছো এইটাই তোমার সাত কপালের ভাগ্য।

– কি যে ভাগ্য। এইটা হলো দূরভাগ্য।

– এহন তো দূর ভাগ্য হইবোই এহহহ পুরান হইয়া গেছি তাই আর ভালো লাগেনা। এই ছিলো কপালে এই বয়সে এসে এহন এই কথাও শুনতে হবে। করমু না এই বেডার সংসার। কত ছেলেরা বয়স কালে আমার জন্য পাগল ছিলো। আর এই বেডায় আমারে পাইয়া কদর করলা না।

মিহি বিরক্ত হয়ে বলে, কি শুরু করলা তোমরা। আর মা। তুমি তিল থেকে তাল কেন করছো।

– কিহহহহহ! আমি তিলরে তাল করছি। এইদিনও দেখতে হচ্ছে আমাকে। শেষে কিনা নিজের পেটের মেয়েও আমার বিরুদ্ধে। হায় আল্লাহ। ভাবছি মেয়েটা আমার মতো হইছে। কিন্তু এহন তো দেখতাছি একদম গুষ্টির মতো হইছে। অন্যের মেয়েরা নিজের মায়ের পক্ষ করে আর এই মেয়ে আমার পক্ষ রেখে বাপের পক্ষ করে। মানুষ ঠিকি বলে, রক্ত রক্তের কথাই বলে, নারীর টান কিছুই না।

– মা তোমরা আসছো তোমার মেয়ের বাসায় সেখানে এসে নিজেরা ঝামালে করো?তাহলে তোমাদের জামাই কি শিখবে।

– সব দোষ তো আমার। আমি ঝামেলা করি, তোর বাপ যে আমার ঝগড়ুটে বললো, সে বেলায় কিছু না।

– মা, হইছে তো এবার থামো।

রুবেল সাহেব বললেন,এই অবুঝ মহিলাকে নিয়ে জীবনের পঁচিশটা বছর কাটিয়ে দিয়েছি বোঝ আমার কত ধৈর্য।

মিহি রেগে বলল,তোমরা থামবে না তাইতো! থামতে হবে না। আরো করো দু’জন মিলে তর্কবিতর্ক। জামাইকে দেখাবেনা। তোমরা কত ভালো।

– সব দোষ তোমার। না তুমি বেশি বুঝতে আর না এই ঝগড়া হতো। আচ্ছা এখন এসব বাদ। তুই রাগ করিস না,মা।সাথী বেগমের কথা শুনে মিহি বলে,এতোক্ষণ তোমার এই কথা মনে ছিলোনা।আর বাবা মা-কে সরি বলে নাও।আমি রুমে গেলে নয়তো আবার দু’জনে এটা নিয়ে কথা কা*টা*কা*টি করবে।

– সরি আমাকেই বলতে হবে?

– হুম তোমাকেই বলতে হবে। আচ্ছা বলছি তবে শুধু তোর জন্য নয়তো সরি বলার প্রশ্নই ওঠে না।

– লাগবে না তোমার সরি। তোমার সরি ধুয়ে তুমি পানি খাও।

– দরকার পরলে তাই করবো তাও সরি বলবো না।

মিহি মাথায় হাত দিয়ে বলে, চলো আমি তোমাদের সাথে চলে যাবো।

রুবেল সাহেব বললেন চলে যাবি মানে? কেন যাবি বেড়াতে নাকি?

– না একেবারে চলে যাবো।

শাফিন শুয়েছিলো হঠাৎ শোয়া থেকে উঠে এসেছিলো। এসেই মিহির শেষের কথাটুকু শুনে বলে, বউ, ও বউ তুমি রাগ করেছো কেন। তুমি না থাকলে আমি একা কিভাবে থাকবো। তোমাকে আমি কোথাও যেতে দেবো না। প্রিয় বউ আমার। তুমি গেলে আমিও যাবো। তুমি যেখানে আমি সেখানে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here