ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব -০৫

#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা

পর্ব-৫

উদয় আমতা আমতা করে বলে, আমি কি ভুল বললাম!
শাফিন উদয়কে জড়িয়ে ধরে বলে,ওই মেয়েকে আর ভাবি ডাকবি না। দেখ আমি না হয় একটু উল্টো পাল্টা করি!তাই বলে ছেড়ে চলে যাবে?বুঝলাম ছেড়ে গেছে, তাই বলে ওই ফাহিনের কাছেই যেতে হবে? তুইতো জানিস মিহিকে আমি অন্য কারো সাথে দেখতে পারি না। সেখানে ফাহিন ওর হাত ধরে নিয়ে গেছে।তুই দেখ আমি কি আগে বলেছি আমি মিউচুয়াল ব্রেকআপ চাই?আমি বলেছিলাম ডিভোর্স চাই ডিভোর্স? না সে বললো আগের মতো থাকবে। আইমিন আগে যেমন আমরা ব্রেকআপ করতাম। দেখ তখন কিন্তু ও অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলতো না। যা ঝামেলা করার আমার সাথেই করতো। আর এখন একদিনেই ওই ফাহিনের হাতে হাত!

উদয় বললো, তুই আমাকে একটা কথা বল, আসলে তুই চাস-টা কি?

– আমি আমার মতো থাকতে চাই।
– এখন তো সেরকম আছিস! তাহলে মিহি কি করলো না করলো তাতে তোর কি? ওর সাথে তোর এখন কি সম্পর্ক?

– কি সম্পর্ক মানে! ও আমার বিয়ে করা বউ।

– সেই সম্পর্ক এখনো কি আছে?
– থাকবে না কেন আছে অবশ্যই আছে।
– তাহলে মিহির কাছে সরি বলে তুই মিহিকে ফিরিয়ে নিয়ে আয়।

উদয় কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলে, এবার বুঝলাম তোর আমার চেয়ে মিহির প্রতি দরদ বেশি। ওই মেয়ে নিজেই ঝগড়া করলো নিজেই চলে গেলো। এখানে আমার দোষটা কোথায়?আমি কেন সরি বলবো, ও যদি আমাকে ছাড়া থাকতেই পারে আমিও পারবো।

উদয় বলে, তুই পাগল হয়ে গেছিস।
শাফিন উদয়ের কাছে এসে বলে,সরি, সরি আমি তোকে ব্যথা দিতে চাইনি। আচ্ছা চল ক্লাবে যাই।

– এতো টাকা তুই কোথায় পাবি? আঙ্কেল তো আর কানাকড়িও দেবে না, তোকে।

– আরে এতো চিন্তা করিস না। আমার যে ঘড়িগুলো আছে ওগুলো বিক্রি করে বছর খানিক কেটে যাবে।

– তুই শেষ পর্যন্ত এসব করে খাবি তাও চাকরি বাকরি কিছু করবি না!

– না ওসব নিয়ম নিতির কাজ আমাকে দিয়ে হবে না। তুই গেলে আয় নয়তো আমি একাই চলে যাবো।

– আমি যেতে পারবো নারে।আমি নতুন জব নিয়েছি। তাই সকালে টাইম মতো উঠতে হবে। আর তোর বাসার ডাইনিং টেবিলে টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার রাখা আছে খেয়ে নিস। আম্মু পাঠিয়েছে তোর জন্য।কথা শেষ করেই উদয় চলে গেলো।
শাফিন আর ক্লাবে গেলো না।নিচে এসে নিজের রুমে বেডে শুয়ে চোখ বন্ধ করতেই ভেসে উঠলো মিহির হাসিমাখা মুখ।সাথে সাথে চোখ খুলে, মোবাইল হাতে নিয়ে ফেসবুকে স্টাটাস দিলো,,

“আমি তো এমন একজনকে হারিয়েছি! যে হয়তো কোনদিন আমার ছিলোই না।কিন্তু সে তো এমন একজনকে হারিয়েছে, যে শুধু তার-ই ছিলো”।

মোবাইলটা রেখে আবার চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরলো,নাহহ চোখ বন্ধ করে রাখাই যাচ্ছে না। এই মেয়ে আমার জীবন থেকে যেয়েও আমার মস্তিষ্কে রয়ে গেছে। উঠে এসে খাবার টেবিলে বসলো,উদয়ের দেয়া খাবার প্লেটে তুলে নিলো, চিংড়ি মাছ ভাজা,সরষে ইলিশ,রুই মাছের মাথা দিয়ে মুগডাল,ঝাল চিকেন কারী,পুদিনাপাতার চাটনি, আর বাসন্তী পোলাউ,নলেন গুড়ের পায়েস।মনে হচ্ছে কেউ যত্ন সহকারে শাফিনের জন্যই রান্না করেছে। সব তার পছন্দের খাবার। নলেন গুড়ের পায়েস দেখে চোখ দুটো কেমন ঝাপসা হয়ে এলো। মনে পরলো মিহির কথা।

ফ্লাশব্যাক…….
আচ্ছা মিষ্টিজাতীয় খাবারের মধ্যে তোমার কোনটা সবচেয়ে পছন্দ?

– অনেক কিছুই পছন্দ তবে নলেন গুড়ের পায়েসটা একটু বেশি পছন্দ।

মিহি শাফিন কোলের উপর বসে বলে, এই তুমি আমাকে আগে কেন বলোনি! তোমার নলেন গুড়ের পায়েস পছন্দ।

শাফিন মিহির নাক টেনে দিয়ে বলে, ওরে আমার জুনিয়র বউ দেখি অভিমান করে মুখ ফুলিয়ে রেখেছে।এই জুনিয়র তুমি রাগলে কিন্তু ভালোই দেখায়।

– আগে বলো কেন বলোনি।

– আরে জান এখনতো বললাম। আলতো করে মিহির কপালে অধর ছুঁয়ে দিয়ে বলে,যদি রাগ করো গো আরো সুন্দর লাগে গো। রাগো, রাগো আরো রাগো লাগছে মন্দ না।

মিহি শাফিনের ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে বলে একদম উল্টোপাল্টা গান গাইবে না।

– মিহির হাত সরিয়ে দিয়ে বলে, গাইলে কি করবে মহারানী।

মিহি শাফিনের পেটে শুঁড়শুঁড়ি দিয়ে বলে, দেখো কি করি। সেদিন দুজনেই পুরো ফ্লাট মাথায় তুলেছিলো।
শাফিন ভাবনা থেকে বের হয়ে পায়েসের বাটিটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলে,চাইনা আমার নলেন গুড়ের পায়েস।

আবার মোবাই হাতে নিলোে,এবার সোজা কল করলো মিহিকে, দু’বার রিং হয়ে কেটে গেলো। তৃতীয় বার কল করতেই রিসিভ হলো, মিহি বললো, এতো রাতে মেয়েদের কল করে ডিস্টার্ব করতে লজ্জা লাগে না।

– না লাগেনা। কারণ যাকে কল করেছি সে আমার বউ।

– সো ফানি। আপনি আর বউ দু’টো শব্দই বেমানান। বলুন এক্স বউ।

– এক্স বউ হও আর যাই হও বউ তো আমারি।

-একদম বাজে কথা বলবেন না।নেশা করে উল্টোপাল্টা কথা বলছেন।

– শাফিন একবার বলতে চাইলো আজ সে নেশা করেনি কিন্তু বললো না। বরং বললো, একদিন তুমি নিজেই বলেছিলে ছেলেরা হালকা পাতলা ড্রিংক না করলে চলে।

– তখন তো আর জানা ছিলো না আপনার হালকা পাতলা ড্রিংক মানে অর্ধ রাত বাহিরে কাটিয়ে দেয়া।

শাফিন বললো,বুঝি সবই বুঝি এখন ফাহিনের টাকা হয়েছে তাই আমাকে ছেড়ে তাকে ধরেছো। আসলে তোমাদের মতো মেয়েরা এটাই ভালো পারে। আজ একজন তো কাল একজন।

মিহি কোন কথা না বলে ফোন কেটে দিলো।ফোন কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখলো।

শাফিন সাথে সাথে আমার কল করলো। ওপাস থেকে বন্ধ বলার পরেও বার কয়েক কল করেই গেলো। ফলাফল শুন্য দেখে মোবাইল রেখে দিয়ে বলে,শাফিন মাহমুদ আর চাইহোক সে এক নারীতে আসক্ত ছিলো। তুমি যখন বুঝলেই না আমাকে তখন দেখো আমি কি করি? এবার কল করলো উদয়কে। উদয় কল রিসিভ করতেই বললো, দেখ আমি অনেক খুঁজেও নিজের দোষ পেলাম না। আমি কি এমন করি বল,রাতে না হয় একটু দেরি করে ফিরি, একটু ড্রিংক করি। কিন্তু ওরে তো বিরক্ত করিনি। এগুলো কোন দোষ হলো? দুই বছরে ছয়বার মাত্র ঝগড়া হয়েছে। তাও প্রতিবার ও নিজেই ঝগড়া শুরু করেছে।রাগ সমালাতে না পেরে দু’চারটা চড় না হয় দিয়েছি।তাতে কি?পরে সরি তো আমি-ই বলতাম।

উদয় বললো সিরিয়াসলি এসব তোর কাছে দোষের কিছু মনে হচ্ছে না!

-না মনে হচ্ছে না দোষের কিছু । আমিও তো কত কিছু এডজাস্ট করেছি। প্রথম দিকে ও কোন রান্না পারতো না। আধ সেদ্ধ তরকারি খেয়েছি। কোনদিন নুন বেশি তো কোনদিন কম। তাও কিছু বলিনি। উল্টো ওরে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য মজা মজা বলে সে সব অখাদ্য খেয়ে নিয়েছি।

– থাক ভাই তোরে কিছু বলে লাভ নাই। বলেই উদয় কল কেটে দিলো।

-যাহহহ কেউ আমার কথাই বুঝতে চায়না। দূর একটা মানুষও নেই যে আমার কথা শুনবে।

মিহি স্লো-মোশনে গান ছেড়ে দিয়ে বেডে হেলান দিয়ে আছে,গানের কথাগুলো যেন তার হৃদয় ছিন্ন করে দিচ্ছে।

Bin bole yun

Tera jana shayad na seh paye hum

Itne sare saansein hain

Par ak bhi na le paye hum

Aa bhi jaao
Na aaye toh sachmuch

Hi na mar jaye hum

pehle Pyaar ka pehla gum

pehli baar hai aankhe nam

pehla hai tanhai

Ka ye mausam

Arey aa bhi jao
Varna ro denge hum

চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরছে। বর্ষা রুমে এসেই গানটা অফ করে দিয়ে, লাইট অন করলো নিম্ন স্বরে বললো,তুই না বলেছিলি ওর কথা স্বরণ করে কাঁদবি না।

– মুখে তো কত কিছুই বলা যায়।মন কি সেসব মানে। বর্ষা মিহির চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,কাঁদছিস কেন একট কল করে কথা বল।

– ও কথা শোনার মতো মানুষ না অসুস্থ একটা মানুষ। যে নিজের কোন দোষ দেখেই না।

-তোরা দুটোই এক। ভাঙ্গবি তবুও মচকাবি না।

#চলবে

ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here