চন্দ্রপুকুর পর্ব -২১

#চন্দ্রপুকুর
||২১তম পর্ব||
– ঈপ্সিতা শিকদার
“চন্দ্র শাহের বিয়ে ভাঙা ঢোল দিয়ে! চন্দ্র শাহের বিয়ে ভাঙা ঢোল দিয়ে!”

যামিনী কাঁচা ঘুমের ঘোরে এমন অস্পষ্ট কথা শুনে চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলে। পুনরায় একই বাক্য শুনতেই হতভম্ব হয়ে উঠে বসে। কক্ষের আশেপাশে তাকায়, কোথাও কেউ নেই। অত্যন্ত সূক্ষ্ম ভাবে খেয়াল করে শব্দের উৎস বারান্দায় অবস্থিত।

ভীতিগ্রস্ত হয়। নয়নযুগল স্থির মেহমাদ শাহের নিদ্রারত মুখশ্রীর দিকে। দ্রুতো কম্পিত কণ্ঠে ডাকতে শুরু করে তাকে।

“বাবু মশাই! বাবু মশাই! তাড়াতাড়ি উঠেন না। কে যেন আমাদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে। উঠেন না!”

তন্দ্রাচ্ছন্ন যুবক উঠে বসে। কয়েক মুহূর্ত যায় যামিনীর কথা অনুধাবনে। হো হো করে হেসে উঠে সে।

রমণী বিস্মিত, দুঃখিত, রাগান্বিত। এতো বিশাল এক দুঃসংবাদ ও সতর্কবাণী জানালো আর মানুষটা কি না উপহাস করছো। হাসি থামিয়ে সবচেয়ে অমানানসই কাজটি সম্পন্ন করলো মেহমাদ।

“আমার অবুধ হরিণী” উচ্চারণ করেই কাছে টেনে নিল যুবক। দানবীয় এক চুম্বন করলো নরম অধরজোড়ায়।

ছাড়া পেতেই যামিনী রাগ মিশ্রিত চাহনি নিক্ষেপ করলো যুবকের দিকে। সে হেসে উড়িয়ে দিয়ে নিজে শয্যা ত্যাগ করে উঠে দাঁড়িয়ে প্রেয়সীকেও দাঁড় করালো।

কপট গাম্ভীর্যপূর্ণ ভঙ্গিমা তার এবার।
“খুব ভয়ানক বিষয় এ তো! শত্রুরা আমাদের মহলে তবে আক্রমণ করেছে। এবার কী হবে চন্দ্রমল্লিকা? আমরা সবাই মারা যাবে? তবে যা-ই হোক মোকাবেলা তো করতেই হবে এ শত্রুর।”

যামিনী কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তার শীর্ণ হস্ত খানা আঁকড়ে ধরে বিবস্ত্র অবস্থাতেই বারান্দার দিকে অগ্রসর হয় সে। দ্বারে পৌঁছাতেই যামিনী ভয়ে চোখ-মুখ খিঁচে মাথা নত করে রেখে। নির্ঘাত এখন রক্তপাত হবে।

“আরে তাকাও তো বাচ্চা বাঘিনী। দেখো তোমার শত্রুকে।”

রমণীর ভয়ার্ত মুখশ্রী চিবুক ধরে ধীরে ধীরে উপরে উঠায় তার বাবু মশাই। চোখ তুলে সামনে তাকাতেই। অধরজোড়ার মাঝে বড়ো একটা শূন্যস্থান তৈরি হয়।

আপন মনে বিড়বিড়ায়,
“টিয়া পাখি!”

“হ্যাঁ গো জমিদারনি। এই টিয়া পাখিই তোমার গোপণ শত্রু, যে তোমার তন্দ্রা ব্যাঘাত ঘটিয়ে ছিল।”

“চন্দ্রপুকুরে যাব চন্দ্র শাহের বিয়ে খাব! চন্দ্রপুকুরে যাব চন্দ্র শাহের বিয়ে খাব!”

টিয়া পাখির কণ্ঠ শুনে হতবাক নবাবের বেগম। অবিকল মানব কণ্ঠ।

“এটা কার? কোথা থেকে এলো এখানে? আগে তো দেখিনি। কী সুন্দর দেখতে! কী সুন্দর কথা বলে!”

মেহমাদ শাহ মৃদু হাসে। এগিয়ে যায় সোনালী খাঁচা বন্দী পক্ষীর দিকে।

“এটা তোমার আমার চন্দ্রমল্লিকা। উপহার স্বরূপ। শহর থেকে আনা চন্দনা টিয়া। নাম চাঁদনি। তোমাকে দেওয়া হতো আগেই কিন্তু সুশিক্ষা দানে দেরি হলো। যাকগে উপহার কেমন লাগলো আমার আঁধার রাত্রির রাজকন্যা?”

“অনেক ভালো। এমন যা হৃদয়কে শীতল করে। সবচেয়ে ভালো বিষয় কী জানেন? তার কণ্ঠ অনেকটাই আপনার মতোন। যখন আপনি জমিদারির কাজে দূরে যাবেন, পৃথক হবেন আমার বক্ষ হতে, তখন তার সাথে কথা বলে হৃদয়ের যন্ত্রণা লাঘব করবো। আমার খুব যন্ত্রণা হয়, বারবার মন চায় আপনার সাথে কথা বলতে।”

“বাহ্! বাহ্! এ তো দেখা যাচ্ছে আমি নিজ হাতে নিজ চরণে কুড়াল মারলাম। নিজের সতীন কি না নিজেই আনলাম?”

বুকে অতি ধীরে আঘাত করলো যামিনী। অভিমানের সুরে নাক টেনে জিজ্ঞেস করলো,
“যাহ্! আপনার সব ঠাট্টা! আমাকে কি আপনার মনে পড়ে না?”

“মনে পড়ে, তবে তোমার ন্যায় না। আমি তো তোমায় রোজ দেখি।”

অনেকটা ঘোরের মাঝেই উত্তর দিল মেহমাদ শাহ।নিজের কথায় নিজেই যেন ঘাবড়ে গেল।

“মানে?”

“মানে স্বপনে দেখি তোমায় প্রিয়। এখন আবার আমি আবেগ দেখাই না কিন্তু আজ দেখিয়েছি বলে ঠাট্টা কোরো না আমায় নিয়ে।”

“কখনোই না।”

আরও শক্তভাবে লেপ্টে রইলো যামিনী তার প্রিয়তমের দেহে। দূর থেকে কেউ একজন দেখে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আড়ালে চলে গেল।

___

যামিনীর মন আজ বেশ সতেজ। আঙিনায় নিজের পোষা পক্ষী চাঁদনির সাথে প্রাতরাশ সাড়ার ইচ্ছে তার। তাই দাসীদের আদেশ করেছে শীতলপাটি বিছিয়ে তার বসার ব্যবস্থা করতে।

তৈরি হয়ে আঙিনায় আসতেই অবাক সে। তার বিনা শব্দ ব্যয়েই দাসীরা নিজ উদ্যোগে শরবত, কাবাব ও তালের পিঠার ব্যবস্থা করেছে মনোরঞ্জনের জন্য।

“বাহ্! বেশ মনোরম ব্যবস্থা তো আমার বসার জন্য।”

“ধন্যবাদ, বেগম। আপনার সন্তুষ্টি পেলেই আমি ধন্য।”

“দিলরুবা। আমার থলিটা দাও।”

দিলরুবা সায় জানিয়ে ছোট্ট কাপড়ের থলিটা এগিয়ে দেয়। যামিনী তা থেকে বেশ কিছু অর্থ উপহার দেয় তার জন্য বসার ব্যবস্থা করা দাসীদের।

“ধন্যবাদ, বেগম। ধন্যবাদ। সত্যি আপনি অনেক দয়াময়ী। আল্লাহ আপনাকে সুখী করুক। খুব দ্রুতো শাহাজাদি-শাহাজাদার মাতা করুক।”

“আমিন। এই অর্থ নিজেদের মধ্যে বিলিয়ে নেও। আমি বেগম চন্দ্রমল্লিকা কাউকে শূন্য হস্তে ফিরাই না, হোক সে আমার শত্রু বা শুভাকাঙ্ক্ষী।”

রমণী দিলরুবার সাথে বসে পড়ে আহার করার উদ্দেশ্যে। সুখময় এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে।

আনমনেই ভাবে,
– চিঠিদাতা সত্যই বলেছিল। তার জন্য বড্ড বেশি লাভজনক হয়েছে এই বিবাহ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা। বেগম তো সে পূর্বেই হয়েছিল তবে গতকাল হতে পেয়েছে বেগমের যথার্থ মর্যাদা।

“চন্দ্র-শাহ! চন্দ্র-শাহ! ভালোবাসা! ভালোবাসা!”

চাঁদনির মানবীয় কণ্ঠ প্রেমাবেশ ও লজ্জায় চোখ নত করে হাসে যামিনী। আশেপাশের দাসীরা মিটিমিটি হাসছে ও কানাঘুষা করছে।

“দিলরুবা, বাবু মশাই মানে তোমার জমিদার বাবু দিয়েছে আমাকে এই পক্ষী উপহার স্বরূপ। কী আদুরে না দেখতে!”

অপ্রিয় নারীটিকে আসতে দেখতে পেয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবেই জানানোর ভঙ্গিমায় কথাটি বলে উঠে। সাথে সাথেই দাসীরা নিজেদের মাঝেই কলরব পড়ে যায় তাদের জমিদার ও জমিদারনির মধ্যকার ভালোবাসার প্রসংশা নিয়ে।

শাহাজাদি মেহনূর বাগানের বৈদ্যশালার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে ছিল। ঠিক তখনই এ রূপ দৃশ্য দেখে তার শুভ্র গায়ে যেন অম্লরসের ছিঁটে পড়ে।

ধমক দিয়ে উঠে সে,
“এখানে কী হচ্ছে? এতো কলরব ক্যানো? কাজ নেই তোমাদের? যাও, কাজে যাও।”

“শাহাজাদি, আপনি মেহমান। মেহমানদারী উপভোগ করুন। অন্দরমহলের কোথায় কাজ হচ্ছে বা কারা কাজ করছে না সেটার চাপ আপনার মাথায় নিয়ে ঘুরতে হবে না। দাদীজান আছেন, আম্মিজান আছেন, আমি আছি, এই অন্দরমহলের বেগম। আপনি এসবে মাথা ঘামাবেন না।”

যামিনীর শীতল কণ্ঠের শব্দের আঘাতে রাগে ফোঁসফোঁস করে উঠে যুবতী। অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বড় বড় পা ফেলে স্থান ত্যাগ করে।

বিড়বিড়ায়,
“সুখের দিন কাটিয়ে দাও আর কয়েকদিন। অন্ধকার তোমার আঁধারিয়া দেহের নিকট ধেয়ে আসছে।”

তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে রমণী আহার করায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। দাসীরা তার সুনামে পঞ্চমুখ।

“আমাদের একা ছেড়ে দাও, মেয়েরা। অনেক গল্প-গুজব হয়েছে, এখন কাজে হাত লাগাও।”

সকলে নত হয়ে যামিনীকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। দিলরুবা হেসে বলে,
“বেগম, আপনি তো আজ চমৎকার জবাব দিয়েছে শাহাজাদি মেহনূরকে! ঠিকই আছে, এমনই হওয়া।উচিত ঐ দুষ্টু নারীর সাথে।”

“হু, সবাই তার যোগ্য জবাব পাবে। বুঝবে আমি বেগম নবাবের, বেগম চন্দ্রমল্লিকা।”

“তবে বেগম একটা কথা কিন্তু থেকেই যায়। যে মানুষটা আপনাকে এই তথ্য ও বুদ্ধি দিয়ে সাহায্য করছে তার উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা কী ভেবেছেন?”

“হুম, ভেবেছি। তবে উত্তর পাইনি। তাই এই বৃথা ভাবনায় জলাঞ্জলি দিয়েছি। তাছাড়া তার উপদেশে আমার লাভ বৈকী ক্ষতি তো হচ্ছে না।”

“কিন্তু বেগম… ”

বাধা প্রদান করে যামিনী। বিরক্তির সুরে শুধায়,
“আহা! এখন খাওয়ায় মন দাও দিলরুবা। আমার অনেক ক্ষিধে পেয়েছে। কী মজাদার হয়েছে আজ কাবাব!

মিইয়ে যায় খাঁস বাঁদী। নামিয়ে ফেলে দৃষ্টি মেঝেতে।
“যথা আজ্ঞা, বেগম চন্দ্রমল্লিকা।”

___

মেহমাদ শাহের ব্যবসায়িক সফরে শেরপুরের বাহিরে যেতে হবে আজ। তার তন্দ্রাচ্ছন্ন মুখ খানা গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে যামিনী। আলতো হাতে স্পর্শ করছে তার মুখশ্রী।

ভাবছে, এই মানুষটি কি তার হওয়ার ছিল? নিজের যোগ্যতার চেয়ে বেশিই আল্লাহ তাকে দিয়ে দেয়নি? কোথায় এতো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মেহমাদ শাহ, যে কি না পাড়াগাঁয়েও সকলের স্বপ্নের পুরুষ সে কি না তার মতো পোড়াকপালির স্ত্রী! ভাবতেই বক্ষ খানা কেমন যেন ভার লাগে, অধরজোড়া তিরতির কম্পিত হয়।

ভালোবাসা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তবে আবেগ অনেক ক্ষেত্রেই নয়৷ যামিনী তো কৈশোর কাটাচ্ছে, তার আবেগে ভাসাই স্বাভাবিক। শক্ত করে ঝাপটে ধরে প্রিয়তমে নিজের সবটুকু আবেগ ঢেলে দেয় তার অধরে।

মানুষটির ঘোর ভাঙে তন্দ্রার, তার ঘোর ভাঙে প্রেমের। লজ্জায় সিক্ত তখন রমণী, দ্রুততার সহিত সরে যেতে চায় শয্যা থেকে। তার শীর্ণ দেহ খানা ততক্ষণে বন্দী হয়েছে কঠোর দেহের বন্ধনে।

“প্রেম সব নিদ্রায় ডুবলেই পায়। একটু জাগ্রতচিত্তেও ভালোবাসার রঙ লাগাও, চলেই তো যাব। যদি ফিরে না আস…”

অধরে তর্জনী রাখে যামিনী। বাধাপ্রাপ্ত হয়ে থেমে যায় মেহমাদ শাহের বচন। প্রিয়তমার ভয়ার্ত নয়ন দুটোতে যেন ডুবেই যাচ্ছে যুবক।

“আস্তাগফিরুল্লাহ, বাবু মশাই। এমন অলক্ষণে কথা বলবেন না তো। আপনার কিছু হলে আমি যে সর্বস্বান্ত নয়, নিঃস্ব হয়ে যাব। আপনি একটি বিশালাকার বৃক্ষের ন্যায়, আমি হলাম কি না সেই লতা যে আপনাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচি। আপনি নেই, তো আমি নেই।”

মেহমাদ শাহ কিছু বলে না। তার মুখমণ্ডলে শুধু চওড়া হাসির কলরব।

“ভোর হয়েছে আমার তৈরি হতে হবে। চলো, এবার উঠা যাক।”

“তা তো যাবেনই। আপনার শুধু এই চন্দ্রমল্লিকার হতে পৃথক হওয়ার বাহানা চাই।”

এলোকেশ হাত খোপা করতে করতে উঠে দাঁড়ায় সে। গায়ে তার এলোমেলো শাড়ি। কোনোরকম গুছিয়ে নেয় সে। একবার অমুধাবনও করে না কারো ঘোরলাগা দৃষ্টি তার প্রতিটি কোষে কোষে আবদ্ধ।

“এভাবে কী দেখছেন? আপনি উঠুন৷ আমি আপনার স্নানের ব্যবস্থা করে আছি।”

যামিনী চলে যায়৷ মেহমাদ শাহ যাওয়ার পানে তাকিয়ে আনমনেই আওড়াই,
“ভালোবাসা, ভালোবাসা, অন্যরকম এক নেশা। পোড়ায়, জ্বালায় তবুও রাখি অনুরাগে তাকেই।”

“পুড়তে ভালোবাসেন বলেই তো পোড়েন। তবে দোষটা কেন শুধু আমার ললাটেই দেবেন?”

যুবক তড়িৎগতিতে চোখ তুলে দেখে। তার বাচ্চা বাঘিনী দেওয়ালের সাথে পিঠ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসছে। তার দৃষ্টি ফেলতেই সে নিজ কাজে চলে যায়।

মেহমাদ শাহ তৈরি হচ্ছে যামিনী দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে। ভেজা পোশাক তার গায়ে এঁটে আছে। মানুষটা যাবে মনে পড়তেই এক দণ্ড তার হতে দৃষ্টি সরাতে হৃদয় মানছে না।

মাথার চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে নজর যায় যুবকের প্রেয়সীর দিকে। ভ্রু কুঁচকায় সে।

“তুমি এভাবে কী করছো, চন্দ্রমল্লিকা? যাও, পোশাক বদলে নেও।”

“আপনার যেতেই হবে?” বাচ্চাদের ন্যায় সরল অভিমান প্রকাশ যামিনীর।

মায়া বোধহয় মেহমাদ শাহের। এগিয়ে এসে তার বাচ্চা হরিণীর ছোট্ট মুখ খানা দু’হাতের মাঝে নেয়। আদুরে ভঙ্গি তার।

“আমার বাচ্চা বাঘিনী, মায়াবী হরিণী, রূপকথার রাজকন্যা এভাবে মলিন করে রেখো না মুখ খানা। তোমার হাসি মাখা মুখ খানার কথা ভেবেই তো হৃদয় শীতল করি। এভাবে মলিন মুখে বিদায় দিলে তো হৃদয় পোড়নের যন্ত্রণায় শেষ হয়ে যাব আমি। হেসে দাও এবার।”

অশ্রুসিক্ত চোখেই হাসে যামিনী। দু’জন জড়িয়ে ধরে একে অপরকে। দুজনেরই হৃদয়ের কামনা সময়টা যেন থমকে যায়। তবে সময় তো প্রবাহমান, কারো জন্য থামার তার সময় কোথায়?

একটু বাদেই সকলকে বিদায় জানিয়ে বের হয় মেহমাদ শাহ। যামিনী তার কক্ষে বিষণ্ণ মনে বসে। আজও তার সঙ্গী হয়েছে দিলরুবা ও মোর্শেদা খাতুন।

“চিন্তা করবে না চন্দ্রমল্লিকা। আমার শাহ খুব দ্রুতই সুস্থ ভাবে চলে আসবে এই শেরপুরে।”

“আমিন আম্মাজান। আল্লাহ আপনার পুত্রকে সুস্থ রাখুক, দ্রুত ফিরুক।”

“সুম্মা আমিন। আমার শাহ কিন্তু তোমায় বেশ ভালোবাসে। তাকে রেখো অনুরাগে। আমার পুত্রের মনটা অনেক ভালো। এই আমাকেই দেখো। এই আমার ন্যায় সামান্য সন্তানহারা নারীকে সে তার মায়ের সম্মান দেয়। ছেলেটা তোমার জন্য পুরো পরিবারের সাথে সংগ্রাম করেছে, নিজের জমিদারি ও সিংহাসন হাতছাড়া হতে পারে জেনেও একবিন্দু দ্বিধা করেনি তোমার সঙ্গ দিতে। অনেক কথা বলে ফেললাম, এখন যাই।”

চোখের জল শুভ্র হিজাবে মুছে কক্ষ ত্যাগ করে। যামিনী বিড়বিড়ায়,
“এতো ভালোবাসা আমার ঝুলিতে ছিল বলেই কি এতোটা কষ্ট পেতে হয়েছে আমার জন্মলগ্ন হতে? তবে এই সুখটা স্থায়ী করে আল্লাহ। দূরে রেখো আমায় বিপদ হতে।”

___

বেগম নূর বাহার ও শাহাজাদি মেহনূর আগামীকালের জন্য পরিকল্পনা করতে ব্যস্ত। তাদের মুখশ্রীতে বাঁকা হাসি।

আলোচনা শেষে বেগম নূর বাহার বলে উঠে,
“তোমার তেজ সব চুরমার হবে আঁধারিয়া! আর কাল ভোর থেকে তার শুরুয়াত। তবে আমার চাঁদের টুকরো, নানীজান যদি কিছু জানতে পারেন…?”

“মামিজান, আপনি সে চিন্তা করবেন না। আমরা তো ঐ কন্যাকে এক আঘাতে হত্যা করবো না। ধীরে ধীরে একটু একটু করে অদৃশ্য বিষ মিশাবো তার অন্তরে, হৃদয়ে। তার হৃদয় অন্ধকারে ছেয়ে যাবে, সে নিজেই মরে যাবে ধরা-ছোঁয়া ছাড়া।”
#চন্দ্রপুকুর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here