চলো তবে শূন্যতা ধরে হাঁটি পর্ব ৪+৫

#চল তবে শূন্যতা ধরে হাঁটি
Zannatul ferdaous zannat
part:4

অন্তিকে রুমে রেখেই প্রিয়াকে ছুটে যেতে হলো হলুদ অনুষ্ঠনে।
মেয়েটা রুমে একা একাই হাসফাস করতে লাগলো। এই ছেলেটা বারবার কেনো চোখের সামনে আসছে কে জানে।
অন্তি মুখে পানি ঝাপটা দিয়ে মাথাতেও একটু পানি দিলো। আরশানের চেহারাটা চোখের সামনে ভাসছে।
আরশান যথেষ্ট লম্বা। আগের তুলনায় একটু সাস্থ্যও বেড়েছে। এখন যেনো খুব বেশি আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে। গাল ভরেছে ছোট ছোট দাড়িতে আর সেই রাগী চোখ। অন্তির যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছে।এতোদিন না হয় অন্তি সবটা ভুলে থাকার চেষ্টা করেছে। এখন চোখের সামনে আরশানকে দেখে আবার সব সংযম যেনো হারিয়ে যাচ্ছে।
কিছুক্ষন চোখ বন্ধকরে বসে থাকলো অন্তি। এরপর শাড়িটা খুলতে যাবে এই সময় কলিং বেলটা বেজে উঠলো।

বিয়ে বাড়ি। সবাই গায়ে হলুদের প্রোগ্রাম নিয়ে অনেক ব্যাস্ত। ঘরে এখন শুধু অন্তি।
আচলটা ঠিক করে দরজা খুলেই অন্তি অবাক হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো,

-কাউকে খুজছেন?
-আমি কি ভেতরে আসতে পারি?

অন্তি এবার মেয়েটার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো। জিন্স টিশার্ট পড়া একটা মেয়ে। চুলে বয়কাট দেয়া, বা পাশের কানটাতে কালো এয়াররিং লাগানো, হাতে একগাদা ব্রেসলেট, গলায় চোকার। হাব ভাব পুরোটাই ছেলে ছেলে। অন্তি ভেতরে ঢুকতে দেবে কি দেবে না ভাবতে ভাবতেই মেয়েটা বললো,

-তুমি কি অয়ন্তি?অয়ন্তি হাসনাত?
-হ্যা। আমায় চেনো কিভাবে?
-আমি নুন।

নুন নামটা শুনেই অন্তি কিছুক্ষন মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো,
-ভেতরে আসো।

নুন কোনো ভনিতা ছাড়াই ঘরে ঢুকে গেলো। আরশানের মুখে এই মেয়েটার কতশত গল্প যে শুনেছে অন্তি তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
অন্তি এখনো কিছু বলছে না। ওর যেনো কথা বন্ধ হয়ে গেছে। নুনকে কি আরশান পাঠিয়েছে? নুন ওকে কিভাবে চিনলো? নুন কি কোনো উত্তর চাইবে আজ? আর অন্তি নিজেও নুনকে দেখেনি কোনো দিন। আরশানের কাছে অনেক বার নুনের গল্প শুনেছে শুধু। অন্তি চিন্তা করতে করতে নুনকে বসতে বলার কথাও ভুলে গেছে।

নুন কোনো সংকোচ না করেই বিছানায় বসে গেলো।
অন্তির দিকে তাকিয়ে নুন বলতে শুরু করলো,

-ভাইয়া সবসময় বলতো তোমার চোখ আর ঠোঁটের উপরের তিলটা সুন্দর কিন্তু কখনও তো বলেনি তোমার ডান পাশে একটা গেজ দাঁত আছে। তোমার চেহারাটা কিন্তু মারাত্মক। আমিতো ছবিতে দেখেছিলাম তোমার মুখটা লম্বাটে। কিন্তু বাস্তবে একদমই অন্যরকম। বেশ মিষ্টি দেখতে তুমি(এক দমে কথাটা শেষ করলো নুন)
-অন্তি নুনের কথা শুনে একটু হাসলো।
-তুমি জানো তোমার হাসিটাও সুন্দর। আর তোমার চুলগুলো। আই উইশ আমার যদি এতো এতো চুল থাকতো তোমার গুলার মতো।

অন্তি নুনের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো
-তুমিও অনেক কিউট।কোন ক্লাসে এবার তুমি?
-এস এস সি শেষ করলাম।জানো আমার একটুর জন্য গোল্ডেনটা কেটে গেলো।
-আহা! মন খারাপ করো না।
-আমি সহজে মন খারাপ করি না।
-বাহ! বেশ তো, তা তুমি আমাকে কিভাবে চিনলে?আগে তো কখনও আমাদের দেখা হয় নি।
-বলবো তবে রাগ করবে না তো?
-বলো, রাগ করবো কেনো?

নুন বলতে শুরু করলো
-আসলে তুমি ভাইয়াকে সহ্য করতে পারো নাতো, তাই যদি ভাইয়ার ব্যাপারে বললে রাগ করো তাই।
-আমি রাগ করবো না। তুমি বলো। (অন্তির মনটাও ছটফট করছে আরশানের খরব শুনতে)

নুন অন্তির হাত দুটো ধরে বললো,

-ভাইয়া কাল যখন প্রোগ্রামে ওই গানটা করছিলো তখনই খটকা লেগেছিলো। এমন গান এমন প্রোগ্রামে বেশ বেমানান ছিলো। তার চোখ অনুসরন করে দেখলাম ও তোমাকে দেখছে। এরপর তুমি যখন উঠে চলে গেলে তখন আরও বেশি সন্দেহ হলো।

আচ্ছা তোমাকে তো ভাবি ডাকার অধিকার নেই তাই আপুই ডাকি। জানো আপু তুমি যখন চলে গেলে ভাইয়াকে ছেড়ে ও কেমন যেনো হয়ে গেছিলো। কারো সাথে মিশতো না। বাসার সবার সাথে রাফ ব্যবহার করতো। এমনকি বাবার সাথেও। যখন ওর খুব মন খারাপ থাকতো, আম্মুর কোলে মাথা রেখে কাদতো।আম্মুও কাদতো।

নুনের কথা গুলো সহজ সাবলীল। তবুও অন্তির বুকের মাঝে প্রতিটা কথা খুব করে আঘাত করছে।
অন্তি এবার নুনের হাত ধরে বললো

-আমি অনেক বড় অপরাধী নুন। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি এমন কিছু চাইনি।

নুন আবার বলতে শুরু করলো
-ভাইয়া তোমার চলে যাওয়ার ধাক্কাটা সামলাতে পারে নি। তখন পর পর দুটো সেমিস্টার ড্রপ করেছিলো। আমরা ভেবেছিলাম ভাইয়া এতোদিনে সবটা সামলে উঠতে পেরেছে..কিন্তু কাল যখন তোমার সাথে দেখা হলো এর পর থেকে ভাইয়ার আচরন কেমন যেনো হয়ে গেছে। অনেকদিন পর কাল রাতে ভাইয়া আম্মুর কোলে মাথা রেখে কেদেছে। আম্মু অনেক কারন জিঙ্গেস করেছে কিচ্ছু বলেনি। কাউকে না বলেই মাঝরাতে বাসাথেকে বেড়িয়ে গেছিলো।

ওর রুমে পোড়া গন্ধপেয়ে আমি আর আম্মু যেয়ে দেখি অনেক গুলো চিঠি আর তোমার একটা ছবি অর্ধেক পোড়া অবস্থায় পরে আছে।

অন্তি এখন আর তার চোখের পানি আটকে রাখতে পারলো না।

নুন অন্তির হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো
-আজ আবার ভাইয়াকে দেখলাম তোমার সাথে কথা বলতে। আমার মনে হলো আমার তোমার সাথে কিছু কথা বলা দরকার, আমি জানিনা কেনো তোমার সাথে কথা বলতে আসলাম। শুধু মন বললো তাই। ভাইয়া জানলে হয়তো আমাকে মেরেই ফেলবে।

অন্তি ফুপিয়ে কাদতে লাগলো। আরশানকে দেখে যতোটা স্ট্রং মনে হয়েছিলো অন্তির, ছেলেটা ভেতরে ভেতরে ততটাই ভেঙ্গে আছে। এখনো নিজেকে সামলাতে পারে নি।

নুন অন্তির মুখে হাত দিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো
-কেনো করেছিলে এমনটা বলো আপু? আমার তোমাকে দেখে কেনো যেনো অনেক ইনোসেন্ট লাগছে। বলোনা কেনো করেছিলে? আমার ভাইটাকে একা ফেলে কেনো গেছিলে?

অন্তি চুপটি করেই থাকলো। চোখের পানিটা মুছে নুনের দিকে তাকিয়ে বললো
-থাকনা সেসব কথা, নুন যা চলে গেছে তা নিয়ে না ভাবাই ভালো।
-কিন্তু আপু আজ আমি সবটা জানতে চাই।
-নুন আমি বলতে পারবো না(অন্তি মিনতি করে বললো)
-কিন্তু,

নুন আবার বললো
-বলবে না তো। ভাইয়ার কসম। এবার বলো। আমি জানি তুমি এবার চুপ থাকবে না। বলো।

অন্তি অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকলো নুনের দিকে।

নুন আমি চট্টগ্রাম যাওয়ার পর আমাদের একদমই দেখা করা বন্ধ হয়ে গেলো। আর রোজ ওয়াশরুমে লুকিয়ে দুয়েক মিনিট কথায় যেনো আমরা দুজনই হাপিয়ে উঠেছিলাম। সম্পর্কটা কেমন জানি হয়ে যাচ্ছিলো দিন দিন। টুকিটাকি কথায় ঝগড়া লাগতো। কিন্তু কেউ কাউকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতাম না।
আমাদের মাঝে সেদিনও ঝগড়া হলো। আমি ওকে সময় দিতে পারিনা, ঠিক ভাবে কথা বলতে পারিনা এসব নিয়েই কথা কাটাকাটি।ফোনটা অফ করে টেবিলে বইয়ের নিচে লুকিয়ে রেখেছিলাম। তবে ভাগ্য খারাপ হওয়ার ধরা পরে গেলাম।
জানো নুন সেদিন জীবনের প্রথম আব্বু আমার গায়ে হাত তুললো। অনেক অনেক মেরেছে আমায়।(অন্তির কান্নার জন্য কথা গুলো খুব অস্পষ্ট শোনাচ্ছে)

রাতে আব্বু ফোন অন করে আরশানকে কল দিয়ে লাউড স্পিকার অন করে আমার হাতে ফোন দিলো। আর আরশানকে বলার জন্য শিখিয়ে দিলো কিছু কথা।আমি বলতে চাইনি। তবে আমাকে বাধ্য করা হলো।

আমার এখনো আরশানের বলা কথা গুলো কানে বাজে। ওকে যখন ছেড়ে যাওয়ার কথা বললাম, ওর আকুতি গুলো এখনো আমাকে ঘুমাতে দেয়না নুন।

নুন অন্তিকে হালকা জড়িয়ে ধরলো। অন্তি আবার বলতে শুরু করলো।

-এরপর তিনদিন ফোনটা অন রেখে আব্বুর কাছেই রাখলো। এর মাঝে আরশান হাজার বার কল করেছে। ওই তিনটা দিন আমি ওয়াশরুমে গেলেও আম্মু আমার সাথে থাকতো। আর তিনদিন পর আবার আমাকে দিয়ে আব্বু আরশানকে বলালো “যেনো আমাকে ও আর বিরক্ত না করে”। ফোনটাও আব্বু ভেঙ্গে ফেললো।
তিনদিন ফোন অন থাকলেও রিসিভ না করায় আরশানও এটা ভাবলো না যে আমি ধরা পরে গেছি, বরং এটাই মনে করলো যে আমি ইচ্ছা করে ওকে ছেড়ে এসেছি।

এরপর আব্বু করা গলায় বললো, “আমাকে বাবা ডাকতে হলে সব কিছু ভুলে যেতে হবে। আর সব কিছু নিয়ে থাকতে চাইলে আমাকে মেরে যেতে হবে”।

জানো নুন সেদিন আমার আর কিছু করার ছিলো না। মনটা ছটফট করছিলো আরশানের জন্য, আর শরীরটা বন্দি ছিলো আমার পরিবারে। বাসা থেকে সব ফোন সরিয়ে ফেলা হলো। আর আমাকে বন্দি করে রাখা হলো। কয়েকদিন তো কেউ আমার সাথে কথাও বলে নি। এমনকি আমার ছোট ভাই রুশ্যও না। ওকে কি বলবো আমার আম্মু নিজেও আমায় খাবার জন্যও ডাকে নি।
যখন একদম একা হয়ে গেলাম তখন সব কিছু আমার কাছে অনর্থক লাগছিলো।
আমি সুইসাইড করার চেষ্টা করলাম।
(অন্তি ওর হাতের উপর কাটা দাগটা দেখালো)
কিন্তু ভাগ্য এতোই খারাপ যে মরলাম না।

এরপর অন্তি আর কিছু বলতে পারলো না। হেচকি উঠিয়ে কাদতে লাগলো।

নুন অন্তিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজেও কেদে দিলো। ওর নিজেরও খুব কষ্ট লাগছে। ওর এটা ভেবে খারাপ লাগছে যে, ও ভেবেছিলো আরশান একা কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু অন্তিও কম কষ্ট সহ্য করেনি। আরশানকে সাপোর্ট করার জন্য ওর পরিবারের সবাই ছিলো। বন্ধুরা ছিলো কিন্তু অন্তি ছিলো একা। কতোটা কষ্ট সহ্য করেছে। আর ধৈর্য্যের বাধ ভেঙ্গে যেতেই মরে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।

নুন অন্তিকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
-আমাকে মাফ করো আপু। আমি তোমায় ভুল বুঝেছি।
অন্তিও নিজেকে স্বাভাবিক করে একটু শান্ত হয়ে বসলো।

নুন বললো
-আপু ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে।ভাইয়া রাজি হয়ে গেলেই বিয়ে।

অন্তি মুহূর্তেই কথাটাকে হজম করতে পারলো না।ফেলফেল করে তাকিয়ে থাকলো।

নুন বললো
-আপু আমার মনে হয় ভাইয়ার ভুলটা ভাঙ্গানো উচিত।
-কি হবে এতে? আমি চাই ও আমাকে ভুলে থাকুক।আমার পরিবার কোনোদিনও ওকে মেনে নিবে না। আরশান নামটা আমার বাবা একদম সহ্য করতে পারে না।
-ভাইয়া ভালো জব করলেও না?
-না। সম্পর্ক মেনে নেওয়ার মতো মেন্টালিটি নেই এই ফেমিলিতে। তার থেকে ও যদি দূরে থাকতে পারে থাকুক। আমি চাইনা ওর ভুল ভেঙ্গে যাক।
ও আমাকে মাফ করে দিলে আমি ওর থেকে দূরে থাকার শক্তি পাবো না, তার চেয়ে এই ভালো। নতুন করে কষ্ট বাড়াতে চাই না।

নুন আর কিছু বলতে পারলো না।
অন্তি আবার বললো
-নুন তুমি তো তোমার ভাইয়ার ভালো চাও তাইনা?
-হ্যা।
-আমায় ছুঁয়ে কথা দাও এর একটা কথাও তুমি ওকে জানাবে না। ও যতো দূরে থাকবে ততো ওর জন্য ভালো।
-কিন্তু,
-.ওকে পেতে গেলে আমার পরিবার হারাতে হবে। এটা আমি কখনও পারবো না। আর আমি ওকে ভালোবাসি। ওর খারাপ পরিনতিও আমি সহ্য করতে পারবো না। ও যদি সত্যটা জানে, ও আমাকে আবার চাইবে। তখন ফিরিয়ে দেওয়াটার ক্ষমতাটা আমার থাকবে না। আবার আমার পরিবারও ছাড়তে পারবো না।
অন্তির কথা গুলো নুন চুপচাপ শুনলো।

অন্তির গালে হাত রেখে বললো
-তুমি অনেক ভালো। আমি চাই তোমরা দুজনই যেভাবেই থাকো ভালো থাকো। আমার বন্ধু হবে?
-নুন বন্ধুত্বটা খুবই অনর্থক।
-তবুও।
-হুম।

হঠাৎই প্রিয়া রুমে এসে বললো
-অন্তি আপু মামা তোকে ডাকছে, জলদি আয়।

অন্তি আর নুন দুজনই প্রিয়াকে দেখে চোখ মুখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে বসলো।
প্রিয়া বললো,
-ওই মেয়েটা কে?
-ওকে তুই চিনবি না।আমার এক ফ্রেন্ড এর ছোট বোন।

কেউ আর কিছু বললো না। অন্তি পাঁচ মিনিটের মাঝেই শাড়ি পালটে একটা কালো কামিজ পরে বেড়িয়ে পড়লো প্রিয়া আর নুনের সাথে।

পুনমের কিছু বান্ধবি ডান্স পারফর্ম করছে। বেশ নাচে মেয়ে গুলো। শাড়ি পড়েও এতো ভালো নাচতে পারবে ওরা অন্তি এটা ভাবতেই পাড়ে নি। পুনমের বেশির ভাগ বান্ধবি বেশ মোটা। তাই অন্তি এমনটা ভাবলেও এখন ও ভালো করেই বুঝলো মোটা হলেই যে নাচতে পারবে না এমন কিছু নেই।

অন্তির পাশে এসেই মিসেস আহমেদ দাড়িয়ে বললেন
-মেয়ে গুলো কিন্তু বেশ নাচতে পারে।
-অন্তি মিসেস আহমেদকে দেখে বললো”জ্বী আন্টি”।
-তোমার বিড়াল ছানাটা কোথায়?
-পিহু আজ রুশ্যর কোলে।আমি শাড়ি পড়ে ওকে সামলাতে পারি না তো তাই ওকে দিয়েছিলাম।
-ওহ। তোমার বিড়ালটা খুব সুন্দর।

অন্তির আর মিসেস আহমেদের সাথে কথা বাড়াতে ইচ্ছে করলো না, তাই হ্যা না কিছু না বলেই নাচ দেখতে ব্যাস্ত।

মিসেস আহমেদ আবার বললেন
-এই মেয়ে তুমি কিন্তু বেশ ঘর কুনো। একটু সবার সাথে সাথে থাকবে। দেখবে বেশ লাগছে।

অন্তি কিছু বলতে যাবে এমন সময় অন্তি মা এসে মিসেস আহমেদ কে নিয়ে গেলেন আর অন্তিকে বললেন”অন্তি আমি বাসায় যাচ্ছি, তোমার বাবা রাতের ট্রেনে চট্টগ্রাম ব্যাক করবেন তাই আমি একটু গুছিয়ে দিয়ে আসি। তুমি প্রিয়ার সাথে সাথেই থেকো।”

নাচের কিছুক্ষন বিরতি রেখে সাবাই রাতের খবারটা সেরে নিলো এর মাঝেই। মাঠের একপাশে কিছু টেবিল চেয়ার বিছিয়ে খাবার খাওয়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে।
অন্তি খাওয়ার শেষে প্রিয়ার সাথে এক কোনে দাড়িয়ে আছে। হঠাৎই হাই বিটের গানের সাথে নাচ শুরু করলো কয়েকটা ছেলে। বিটের তালেতালে একবার মরিচবাতি গুলো জলছে আবার নিভছে। মুহূর্তে ই সবটা আলোকিতো হচ্ছে। মুহূর্তেই আধার, সবাই বেশ উপভোগ করছে।

অন্তি আর কিছুক্ষন থেকে প্রিয়াকে বলে বাসায় চলে যাওয়ার জন্য। মাঠ থেকে অনেকটা দূরে এসে বাসার কাছাকাছি আসতেই কেউ যেনো অন্তির হাত টেনে এনে দেয়ালের সাথে অন্তিকে চেপে ধরলো। এদিকটা মোটামুটি অন্ধকার আর বাসার পিছনের সাইড হওয়ায় রোড সাইডের লাইটের আলোও পড়েনা এদিকে। তবে বাসায় সাজানো মরিচ বাতি গুলোর হালকা আলোয় অন্তি ঠিক বুঝতে পারলো মানুষটা আরশান।

অন্তি আরশানের থেকে হাত ছাড়িয়ে চলে আসতে চাইলে আরশান অন্তিকে দেয়ালের সাথে আরও শক্ত করে আটকে ধরলো।

আরশান বললো
-ভয় পাও কেনো আমায়?
-অন্তি স্বাভাবিক গলায় বললো, ভয় পাওয়ার কি আছে।
-চলে যাচ্ছো যে।
-কেনো থাকবো
-আমার কাছে কেনো থাকতে চাওনা?

অন্তি আর কোনো জবাব দিলো না। নিজেকে মনে মনে শক্ত করে নিয়ে জবাব দিলো
-আমার ভালো লাগে না তাই। আর তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আশা করি ওই মেয়েকে নিয়েই সুখি থাকবে। আমাকে যেতে দাও।
-অন্তি আমি তো ভুলে গেছিলাম। কেনো আসলে?কেনো? কেনো কাল ওভাবে আমার দিকে তাকালে। তুমি জানো তোমাকে ভোলার জন্য আমি কতোগুলা রিলেশন করছি। অনেক গুলা। দুই হাত প্রশস্থ করে দেখিয়ে বললো-এত্তোগুলা

অন্তি এতোক্ষনে বুঝে গেছে আরশান মাতাল। ও নেশার ঘোরে এসব বলছে। এতোটা অবনতি হয়েছে ছেলেটার। অবশ্য এর জন্য অন্তি দ্বায়ী তা অন্তি ভালো করেই জানে।

অন্তি কড়া গলায় বললো
-শান সড়ো তুমি। আমাকে যাতে দাও।
-কেনো দেবো?
-শান তোমার হবু বউ দেখলে বাজে ভাববে।
-ও এখানে আসবে কোথা থেকে? জানো অন্তি ও সবসময় তোমার মতো হতে চায়। এই জন্যই সৃজাকে আমার দেখতে ইচ্ছা করে না। ওকে আমি এটাই বোঝাতে পারিনা যে তুই এমা ওয়াটসন হ আমার আপত্তি নাই কিন্তু অন্তি কেনো হতে যাবি? অন্তি তো অন্তি। ওর মতো হতে চাইলেই কি হওয়া যায়? ও তো মেঘবতী, বৃষ্টি কন্যা। জানো ওকে যদি সারাদিন পানিতেও চুবিয়ে রাখা হয় না কেনো ওর মাঝে সেই স্নিগ্ধতা টা আসবে না।

আরশান আবোল তাবোল একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে। আর অন্তির ভয় লাগছে কেউ এভাবে ওদের দেখলে কি ভাববে। তাছাড়া আরশানকে কিভাবে এখান থেকে সরাবে এই সব চিন্তায় যেনো অন্তির মাথা ধরিয়ে দিচ্ছে আর সাথে আছে আরশানের সেই স্পর্শ যা অন্তির স্নায়ুগুলো কে অবশ করে দিচ্ছে। আরশানের এই পাগলামি গুলো অন্তির মনটাকেই না অসংযমী করে তুলে!

বেশ কিছুক্ষন পরই আদ্র আরশানকে দেখে দৌড়ে আসলো। অন্তিও অপ্রস্তুত হয়ে গেছে আদ্রকে দেখে। কেননা এতোক্ষনে আরশান অন্তিকে জড়িয়ে ধরেছিলো। আদ্র আর সাদান আরশানকে ধরে অন্তিকে ছাড়িয়ে নিতেই অন্তি একছুটে বাসায় চলে গেলো।
#চল তবে শূন্যতা ধরে হাঁটি
Zannatul ferdaous zannat
part:5

আরশান মাথা নিচুকরে ওর বাবার সামনে বসে আছে।মাতলামোটা এখন ছেড়ে গেছে। মি.রহমান আরশানের এই অবনতিতে বেশ চটে আছেন। কর্কশ গলায় মি.রহমান বললেন,
-তোমাকে আমার ছেলে পরিচয় দিতেও লজ্জা হচ্ছে আরশান। তুমি শুধু মাতালই হও নি। মাতাল হয়ে একটা মেয়েকে হ্যারেস করেছো। ছি!

আরশান এখনো মাথা নিচু করে আছে।

মি.রহমান আবার বললেন,
-এসব কথা আমার সৃজার মুখে শুনতে হয়, যে মেয়েটার সাথে আর কিছুদিন পর তোমার বিয়ে সেই মেয়ে আমাকে ফোনে জানায় তুমি নেশার ঘোরে অন্য মেয়েকে। ছি ছি ছি আরশান।
-বাবা ও অন্তি(আরশান মাথা নিচু করেই বললো)
-কে অন্তি? (মি.রহমান প্রশ্ন নিয়ে তাকালেন আরশানের দিকে)

নুন বললো
-বাবা ভাইয়া যে মেয়ের সাথে মানে ( একটু কাচুমাচু করে বললো) ওই মেয়েটা অন্তি আপু ছিলো।

মি.রহমান রাগান্বিত চোখে আরশানের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-ছি ছি! আরশান তোমার ছোট বোনও এসব জানে।ছি!লাজ লজ্জা সব শেষ করে ফেলেছো নাকি? কিন্তু অন্তি টা কে, কোন অন্তি?

কড়া গলায় বললেন
-অয়ন্তি নয়তো? যার জন্য তোমার এতো অবনতি।ওই মেয়েটা নয়তো? কি চায় ও? চলে তো গেছেই এই ছেলেটাকে নোংরা বনিয়ে গেছে। আরশান জবাব দাও ওই মেয়েটাই তো?

আরশান কিছু না বললেও নুন অন্তির নামে যেনো কোনো কথা সহ্য করতে পারছিলো না।

নুন বললো,
-বাবা অন্তি আপু মোটেও অমন মেয়ে না। ও তো ভইয়াকে এভোয়েডই করছিলো।

মি.রহমান নুনের কথায় আরো যেনো রেগে যেয়ে বললেন,
-নুন আমি চাইনা তুমি এর মাঝে কথা বলো। চুপচাপ নিজের রুমে যাও। আর ভবিষ্যতেও তুমি এই কথার মাঝে নিজেকে জড়াবে না।

নুন তার বাবার এমন আচরনে কিছুটা ঘাবরে যেয়ে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো।

আরশানের চোখটা খুব জ্বালা করছে। আজ ওর বাড়াবাড়ির জন্যই অন্তিকে ওর বাবা এতোগুলো কথা শুনাতে পারলো। এটা ভাবতেই আরশানের আরও বেশি খারাপ লাগছে। আজ অন্তির তো কোনো দোষ ছিলো না। অন্তিতো নতুন করে আরশানের দিকে হাত বাড়াই নি। পাগলামি যা করার আরশান করেছে।

মি.রহমান আরশানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
-আরশান কিছু জিনিস পেয়ে গেলে জীবনের উত্থান পতনটা অনুভব করা যায় না। বরং না পাওয়া জিনিস গুলো জীবনকে পরিবর্তন করে, কিছু উইশ রেখে যায়। ভালো অথবা খারাপ দুটোর একটি গ্রহন করতে হয় তখন। আশাকরি তুমি ভালোটাই গ্রহন করবে।

আরশান চোখ বন্ধকরে মনে মনে বললো
-আমাকে ও কোনো উইশ দিয়ে যায় নি, তবে একা ছেড়ে গেছে বাবা।

অনেক রাত হলেও ঠিক ভাবে অন্তির ঘুম আসছে না। প্রিয়া অনেক বার নুন এর বেপারে কথা বলতে চাইলেও অন্তির আগ্রহ না পেয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়েছে।

অন্তি বারান্দায় তাকিয়ে আছে। কাল রাতেও এই পথে একজন লোক পাগলের মতো পায়চারি করেছে। অথচ আজ লোকটা নেই। পরপারে চলে গেছে। অন্তি কিছুক্ষন শূন্যে তাকিয়ে থাকলো। পৃথিবীটা কতো অদ্ভুদ।

আরশানের পাগলামিগুলাও অন্তির ভেতর তুলপার করছে। আরশান এভাবে পাগলামি করলে অন্তি নিজেকে কিভাবে ধরে রাখবে। অন্তি যে কিছুতেই আরশানকে বোঝাতে পারছে না। কতোদিন পর ছেলেটার স্পর্শ পেলো অন্তি, ভাবতেই অন্তির খুব জোড় কান্না পাচ্ছে।

একটা সময় এমন হতো যে আরশান ক্লাশে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে একেরপর এক মেসেজ করে যেতো অন্তিকে। আর ক্লাশ শেষ হলে একছুটে বাসা আর বাসায় এসে জামা কাপর না পালটেই অন্তির সাথে কথা বলতে শুরু করতো। তখন অন্তির দিনগুলো ছিলো “শানময়” আর শানের দিনগুলো অন্তিতে মত্ত। দেখা হলেই আরশান অন্তির হাতটা নিজের বুকে ঠেকিয়ে হাসি মুখে বলতো এইখানটায় তুমি থাকো, খুব দামী জায়গায়।

এখন সবই অতীত।
অন্তি মনে মনে প্রতিঞ্জা করলো “ওর আর আরশানের জন্য পিছুটান রাখলে চলবে না। যা কোনোদিন হবার নয় তার জন্য অন্তি আর ভাববে না। ওকে এগিয়ে যেতে হবে। আর আরশানের সামনে নিজেকে অনেক স্ট্রং রাখতে হবে। নিজের জন্য না হোক আরশানের ভালোর জন্য এটা খুব জরুরি”।

অন্তির এতো ভাবনার মাঝে কখন যে ওর মা ওর পাশে এসে দাড়িয়েছে অন্তির সে খেয়ালই নেই। আর হঠাৎ ই অন্তির মা ওর কাধে হাত রাখতেই অন্তি চমকে উঠে ওর মার দিকে তাকালো।

অন্তির মা বললেন
-কিছু ভাবছো?
-না আম্মু। আব্বু কি চট্টগ্রাম পৌঁছেছে?
-না এতো তারাতারি কি আর পৌছাবে, যেতে যেতে সকাল হবে।
-ওহ।
-অন্তি তোমার সাথে কিছু কথা আছে।

অন্তি ওর মার কথায় কিছুটা বিচলিতো হয়ে গেলো। মা কোনো ভাবে আরশানের আজকের ঘটনাটা যেনো গেলো নাতো? আর মিসেস হাসনাতের চেহারাও কিছুটা সিরিয়াস হয়ে আছে। অন্তি তবুও মুখে একটা হাসি ধরে রেখেই বললো,
-জ্বী মা বলো।
-অন্তি তুমি ইন্টারে একটা বছর নষ্ট করেছো অসুস্থ থেকে। আর এর পর এডমিশন এও কোনো ভার্সিটিতে চান্স হলো না। তারমানে দুইটা বছর নষ্ট হলো তোমার জীবন থেকে। অন্তি তোমার বাবা বা আমি আমরা কেউই চাইনা তুমি আরও সময় নষ্ট করো। এখন যদি সেকেন্ড টাইম এডমিশনের আশায় থাকো আর পরের বছরও কিছু না হয় তখন আরও একটা বছর নষ্ট হবে। তাই তোমার বাবা আর আমি ডিসিশন নিয়েছি তোমাকে প্রিয়ার সাথে একই প্রাইভেট ভার্সিটিতে এডমিট করে দিবো। প্রিয়াও এই মাসেই ভর্তি হবে

-আম্মু তোমরা যা ভালো মনে করো তাই হবে। (অন্তি খুব নরম গলায় কথাটা বললো)

মিসেস হাসনাত অন্তি হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন।
-অন্তি পড়ালেখা জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ন জিনিস।এইটা ছাড়া জীবনে কিছুই করতে পারবে না। আমি চাই তুমি নিজ পায়ে দাড়াও। নিজের যোগ্যতায় এগিয়ে যাও। অন্তি তুমি যে ভুলটা করছো তা নাহয় ছোট বয়সের ভুল বলেই আমি আর তোমার বাবা ক্ষমা করে দিয়েছি। আশা করি এখন এসব আর মনে রাখো নি। ভুল যা হয়ে গেছে তা হয়ে গেছে। এখন নতুন করে সব শুরু করো। আমরা আবার ঢাকা শিফট করছি। তোমার আর রুশ্যর পরালেখার জন্য।
আর একটা কথা অন্তি, এভাবে ঘরকুনো হয়ে থেকো না। বি নরমাল। আমাদের প্রথম সন্তান তুমি। তোমাকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন।

অন্তি এখনও চুপচাপ ওর মার কথা গুলো শুনছে। অনেকদিন পর মিসেস হাসনাত মন খুলে মেয়ের সাথে দুটো কথা বললেন।
মিসেস হাসনাত আবার বললেন,
-অন্তি তুমি কেমন যেনো পেনপেনে হয়ে গেছো। চুলগুলো ঠিক একদম শেইপ ছাড়া হয়ে গেছে। বিয়ের ঝামেলা শেষ হলেই তোমাকে নিয়ে পার্লারে যাবো। আর হ্যা তোমার বাবা বলেছেন তোমায় মেডিটেশন ক্লাসে এডমিট করাতে। আর এতো কিছুর মাঝেও যদি তোমার রুটিনে একটু সময় থাকে তবে জিম এ ভর্তি হবে। তোমার নিজেকে গড়ে তুলতে হবে সবদিক থেকে, আরও চতুর হতে হবে অন্তি।

অন্তি ওর মার দিকে তাকিয়ে বললো
-আম্মু আমি কি সব পেরে উঠবো?
-তোমাকে পারতে হবে অন্তি। পড়ালেখার পাশাপাশি সবকিছুতেই পারদর্শী না হও কিন্তু অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আমি আর তোমার বাবার অবর্তমানেও যেনো তুমি তোমার ঢাল হতে পারো অন্তি। এভাবে মনমরা হয়ে ঘরে বসে থাকলে কিচ্ছু হবে না জীবনে। নতুন নতুন চেলেন্জ নিতে হবে তোমাকে।

অন্তি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে ওর মায়ের কথা গুলো শুনছে
মিসেস আহসান আবার বললেন
-রুশ্য যেমন আমাদের ছেলে তুমিও আমাদের মেয়ে। আমাদের দুটো আস্থা, ভরসা, স্বপ্ন। ভুল পথে যেও না মা।

মিসেস হাসনাত অন্তিকে কিছুক্ষন জড়িয়ে ধরে রেখে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।

অন্তি এবার আরও দৃঢ় মনে প্রতিঞ্জা করলো যে, নিজের জন্য না হোক বাবা মার জন্য হলেও সব পিছুটান ও ছাড়িয়ে যাবে।
পিহুকে পাশে নিয়ে অন্তি ঘুমানোর জন্য শুয়ে পড়লো

ঘরে মোটামোটি লাউডে মিক্সটেপের গান চলছে

“পাশাপাশি বসে একসাথে দেখা
একসাথে নয় আসলে যে একা
তোমার আমার ফারাকের নয়া ফন্দি
আহা-হা-হা আহা আহা-হা-হা
আহা আহা-হা-হা………..
(Na Jaane Koi Kaisi Hai Yeh Zindagaani Zindgaani Hamari Adhuri Kahani)… (2) ”

চোখ বন্ধকরে বিছানার এককোনায় জড়সর হয়ে বসে আছে আরসান। মস্তিষ্কের মাঝে গানের লিরিক গুলো আনাগোনা করছে। একটা টু-কুয়াটার প্যান্ট পরে খালিগায়ে বসে আছে। চুলগুলো পুরো এলো মেলো।

এর মাঝেই কড়া পারফিউমের স্মেলই আরশানকে জানান দিলো ঘরে অন্যকেউ প্রবেশ করেছে।
আরশান চোখ খুলে বিরক্তি নিয়ে বললো,
-কি চাই?
-সৃজার এখন তোমাকে চাই।
-তোকে বলেছিনা আমার রুমে অনুমতি ছাড়া আসবি না।
-ওহ শান। কয়েকদিন পর আমাদের বিয়ে। এখনও অনুমতি নিতে হবে?
-জাস্ট সাট আপ। তোকে আগেও বলেছি ভুলেও আমায় শান ডাকবি না। আমার নাম আরশান।
-অন্য কারো মুখে শুনতে বুঝি ভালো লাগে?
-ইউ নো হুয়াট, তোর সাথে কথা বলাই বেকার।

এটুকু বলেই শান বিছানা থেকে উঠে লেপটপের সুইচ অফ করে কাধে টাওয়েল নিতেই সৃজা শানের হাত ধরলো।
শান রাগি চোখে তাকিয়ে বললো
-কি চাই তোর?
-আপাদত গুড মর্নিং কিস্সি।
-হুয়াট?

সৃজা আরশানের অনুমতির অপেক্ষা না করেই আরশানের গলা জড়িয়ে ধরে পা উচু করে আরশানের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যেতেই আরশান নিজেই নিজের দু ঠোট চেপে মাথাটা একটু পিছিয়ে নিয়ে সৃজাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।
এখন যেনো আরশানের চোখে মুখে রাগ ভেসে উঠছে। রাগি গলায় বললো,
-তোকে কতোবার বলছি আমার কাছে ঘেসবি না। কিস তো অনেক দূরের চিন্তা, আমাকে টাচও করবি না।

সৃজা মুখ বাকিয়ে বললো,
-আমার কিস কেনো ভালো লাগবে, কাল রাতে তো অন্য মেয়েকে ঠিকিই
-সৃজা জাস্ট সাট আপ। ওর সাথে কখনও নিজেকে তুলনা করবি না। আর তোর সাহস হলো কি করে এসব বাবাকে বলতে?
-বলবো না? আমার বর অন্য মেয়েকে জড়িয়ে ধরবে আমি বলবো না?
-না। কজ আমি তোর বর না। আর হ্যা তোকে একটা সাজেশন দেই তুই কোনো এক ছেলেকে পচ্ছন্দ কর। আমি নিজে তোদের বিয়ে দিবে। আমার লাইফ থেকে সর। আর চোখের সামনে থেকেও।

সৃজা একটা হাসি দিয়ে বললো
-তোমাকে জালাতে আমার ভালো লাগে। আমার থাকাটাতো জরুরি বলো? আর কাউকে পচ্ছন্দ হলেই কি তোমার লাইফ থেকে সরে যাওয়া এতো সহজ?

স্টুপিড।
বলেই আরশান রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।

বিয়ে বাড়িতে অনেক মানুষের সমাগম। একই বাড়িতে বর বউ। এই জন্য অবশ্য দুই পক্ষের মানুষ এ পুরো সাজানো মাঠটা গিজ গিজ করছে।

আরশান খুব স্বাভাবিক ভাবেই স্টেজের কাছে দাড়িয়ে আছে। আর তার হাত ধরে আছে সৃজা। যে কেউ দেখলেই বলবে খুব সুইট কাপল এরা। ব্লাক ব্লেজার, হোয়াইট টিশার্ট, হোয়াইট স্নিকার্স আর চুল গুলো জেলদিয়ে সেট করা একদম হিরোর মতো লাগছে আরশানকে। যদিও আরশানের বিন্দু মাত্র ইচ্ছা ছিলো না। তবুও নিজের চাচাতো ভাইয়ের বিয়েতে না আসলে বিষয়টা খুবই বাজে দেখায়।

আশেপাশের সবার চোখ আটকে আছে বর বউ এর দিকেই। আর এর পরই সবাই আরশান আর সৃজার দিকে এটেনশন দিচ্ছে। তবে আরশান সানগ্লাসের আরালে তাকিয়ে আছে অন্তির দিকে।

খুব একটা সাজেনি মেয়েটা। রেড প্লেন শাড়ির সাথে ডিজাইনার নেট ব্লাউজ পরেছে আর ঠোটে গাঢ় লিপস্টিক। কোলে একটা ছোট্ট বিড়াল বাচ্চা। আরশান আর অন্তির দিকে মনোজোগ দিলো না। কখনও চোখাচোখি হচ্ছে তো কখনও সামনাসামনি দেখা হচ্ছে।
না কেউ কারোদিকে তাকাচ্ছে না কেউ কাউকে ইম্পর্টেন্ট দিচ্ছে। বরং দুজনই এমন একটা ভাব করছে যেনো কেউ কাওকে চিনেই না।

নুন দুজনকেই দেখছে তখন থেকে। ওর চোখে আজ যেনো মনে হচ্ছে একদম একজন আরেকজনের এক্স। কাল বা পরশুও দুজনের মাঝে যে আবেগটা দেখেছিলো তা যেনো আজ একদম নেই।

চলবে…..
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here