চলো তবে শূন্যতা ধরে হাঁটি পর্ব ১৮+১৯

#চল তবে শূন্যতা ধরে হাঁটি
Zannatul ferdaous zannat
part:18

বয়স যেনো হঠাৎ করেই সবকিছুর সাথে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা তৈরী করে দেয়। আজকের অন্তি চার বছর আগে আরশানের থেকে দূরে যেতে বাধ্য হয়ে কতোটা পাগলামি করেছিলো। আর আজ অন্তি জানে এসব কিছুই বেকার। কোনো লাভ হবে না। বাবা কেনো আরশানকে দেখতে পারে না এই কারনটা বাবা কোনোদিনও বলে নি। তবে বাবা যে আরশানকে সহ্য করতে পারে না তা অন্তি বেশ ভালো করেই জানে।
এবারে আর মেয়েটা কোনো জেদ বা ফিরে পাওয়ার বৃথা চেষ্টা করলো না।

অন্তি যে আবার বাসায় ধরা খেয়েছে তা আরশান আরও কয়েকদিন পর জানতে পারলো।
ছেলেটার ভেতরটা হঠাৎ করেই ভেঙ্গে গেছে। বাসায় জানাজানি হয়ে বিষটা খুব বাজে দিকে চলে গেছে। আরশানের প্লানিং ছিলো হুট করে একদিন ওর বাবা মাকে অন্তির বাসায় পাঠাবে। অথচ এখনও মাকেই কনভিন্স করা হয়নি। তার আগেই অন্তি ঘরে বন্দি হয়ে আছে।

আরও বেশ কিছু দিন আরশান অন্তির ভার্সিটির সামনে অপেক্ষা করে মেয়েটার কোনো হদিস না পেয়ে বাধ্য হয়ে প্রিয়াকে পাঠালো অন্তিদের বাসায়। প্রিয়া অন্তির বাবাকে খুব ভয় পায়। তবুও আরশানের অনুরোধে যেতে রাজি হয়েছে।

অন্তির রুমে ঢুকতে যাবে এ সময় অন্তির বাবা প্রিয়াকে পিছন থেকে ডাক দিলো।
প্রিয়া ভয়ে ভয়ে অন্তির বাবার সামনে এসে দাঁড়াতেই হাসনাত সাহেব কড়া গলায় বললেন
-ফোনটা এখানে রেখে যাও প্রিয়া। আমি যেনো এই বিষয়ে তোমার কোনো সম্পৃক্ততা না পাই। আর পারলে ওকে বোঝাও।

মামার মুখে এমন কথা শুনে প্রিয়ার গলাটা শুকিয়ে গেলো। কাঁপা কাঁপা হাতে টেবিলের উপর প্রিয়া ফোনটা রাখলো। তারপর আর কিছু না বলেই এক প্রকার ছুটে এসে অন্তির রুমে ঢুকলো।

পুরো ঘরটা খুব পরিপাটি। বিছানার একটা কোনায় হাঁটুতে মাথা রেখে বসে আছে অন্তি। প্রিয়া অন্তির কাধে হাত রাখতেই মেয়েটা মাথা তুলে তাকালো। কেঁদে কেঁদে চেহারার কি অবস্থাটাই না করেছে।

প্রিয়া এদিক সেদিক তাকিয়ে ব্যাগ থেকে খুব সাবধানে একটা চিঠি বের করলো। তারপর খুব নিচু গলায় বললো
-দেখলি তো ভাইয়া কতো চালাক। ঠিক বুঝেছিলো আমার ফোনটা তোর রুমে ঢুকার আগেই কেউ নিয়ে নিবে। ইশ ভাইয়া কি ভবিষ্যত বলতে পারে?

অন্তি কোনো কথা বললো না। মাথা নিচু রেখেই বললো
-প্রিয়া বাবা আমার পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। এমনি কি আমার বিয়েও ঠিক করে ফেলেছেন। ছেলে যে কোনো দিন আমাকে দেখতে আসবে।

অন্তি আর কিছু বলতে পারলো না। কান্না করে দিলো।

প্রিয়া এই মুহূর্তে কি বলবে নিজেও জানেনা। এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে ঠিক হয়ে যাবে তা সে চিন্তাও করে নি। কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো
-কাউকে তো মামা কিছু বললেন না।
-আমাকে আজ সকালে মা বলেছে। ছেলে কে জানিস?
-কে?
-আমাদের মাধুর্য আছে না? ওর ভাই৷ উনি আরশানের সম্পর্কে সব জেনেও বিয়ে করতে চান। উনি ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিতে থাকেন। এসব নাকি নরমাল।

প্রিয়া আবার বেশ কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো
-ভাইয়ার চেহারাও নষ্ট হয়ে গেছে। মনে হয় ঠিক মতো খায় না। প্রায় ই ছুটির সময় উনার গাড়িটা ক্যাম্পাসের সামনে দেখি। অফিস ব্রেক টাইম টুকুও রিলাক্স করে না। তোকে খোঁজে। আমি কি ভাইয়াকে বলবো তোর বিয়ের কথা? আচ্ছা অন্তি তুই কি জানিস মামা কেনো ভাইয়াকে দেখতে পারে না?

-জানিনা
-তুই কি ভাইয়ার সাথে চলে যাবি?

অন্তি প্রিয়ার চোখে চোখ রাখলো। ওর যেনো সামনে সব কিছু ঝাপসা।

বিকালে অন্তি নিজের রুম থেকে বের হলো। সারাদিন মনে মনে অনেক প্রশ্ন জমিয়েছে। আজ যেনো সব উত্তর জানতে হবে তার।

বাবার সামনে যেয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়াতেই হাসনাত সাহেব রিমুটে চ্যানেল ঘুরাতে ঘুরাতে বললেন
-কিছু কি বলতে চাও অন্তি?

অন্তি কোন জবাব দিলো না। ওর গলাটা শুকিয়ে আসছে। চোখও ভিজে গেছে। আর শরাীরটাও কাঁপছে খুব। ধপ করে বাবার পায়ের কাছে বসে পড়লো অন্তি। হাসনাত সাহেবও ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন। তারপর অন্তির হাত ধরে বললেন
-ঠিক আছো তুমি?

অন্তি ভেজা চোখে তার বাবার দিকে তাকালো। তারপর বললো
-বাবা আমি কিছু কথা বলতে চাই। তোমার দোহাই লাগে আমার কথা গুলো শুনো। প্লিজ।

অন্তি তার বাবা কে চুপ থাকতে দেখে আবার বলতে শুরু করলো
-বাবা আরশান, মানে ও, ও খুব ভালো ছেলে। আমি ওকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। কখনও আমার ক্ষতি চায় নি। ওর বাবা নামকরা লোক। উনার নিজস্ব পরিচয় আছে। আর ও নিজেও প্রতিষ্ঠিত। চাকরি করছে একটা। আমার খুব খেয়াল রাখবে বাবা। প্লিজ বাবা ওকে একটা সুজোগ দাও। প্লিজ।

(কথা গুলো বলতে বলতে অন্তি কাঁপছে। কান্নার জন্য ভালো ভাবে কিছু বলতেও পারছে না। তবে এতোটা সাহস কি করে জোগাড় করলো মেয়েটা নিজেও জানে না)

অন্তির বাবা কিছু বলার আগেই অন্তির মা এসে অন্তির গালে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন
-ছি ছি! কি বেহায়া মেয়ে। লজ্জা করে না নিজের বাবাকে এসে এসব বলতে। ছি! ঘরে যা চুপচাপ।

অন্তির বাবা বললেন
-আহা কি করছো কি? আমাকে ওর সাথে কথা বলতে দাও। তুমি আর এসব নিয়ে কিছু বলো না। রূশ্যকে নিয়ে ও ঘরে যাও।

পিহু অন্তির বাবার পাশ থেকে এসে অন্তির পায়ের কাছে বসলো।

অন্তির বাবা অন্তির হাত ধরে টেনে তুলো সোফায় বসালেন। তারপর অন্তির দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলেন
-অন্তি তুমি আমার মেয়ে। আমার একমাত্র মেয়ে। আমার বড় সন্তান। তোমাকে নিয়ে আমার কতোটা স্বপ্ন ছিলো সেসব বলবো না। কারন তোমার আমার স্বপ্ন এক না। তুমি সুখী হউ এটাই আমি চাইবো।
যে ছেলেটা তোমার পচ্ছন্দ তাকে আমার পচ্ছন্দ না। এর একটা বিশেষ কারন আছে অন্তি।

অন্তি এবার ওর বাবার মুখের দিকে তাকালো।
তিনি আবার বলতে শুরু করলেন
-প্রায় চার বছর আগে হঠাৎ করেই যখন ছেলেটার কথা জানলাম আমি নিজে দেখা করতে গেলাম ওই ছেলের সাথে।
অদ্ভুদ বিষয় কি জানো অন্তি আমি মনে মনে পজিটিভ কিছু ভেবে গিয়েছিলাম। আমি মনে প্রাণে চেয়েছিলাম ও তোমার যোগ্য হোক।
ওর বাসার কাছাকাছি যেতেই ওর দেখা পেলাম। আমি চিনি না তবে যে লোক চিনতো সে দেখিয়ে দিলো।
আমি হেঁটে গেলাম বেশ কিছুক্ষন পর্যবেক্ষন করলাম। প্রায় পনেরো মিনিটের মতো ও একটা মেয়েকে থ্রেড করছিলো আর ওর সাথে আর একটা ছেলে চুপ চাপ দাঁড়িয়ে ছিলো।
আমি কাছাকাছি যেয়ে বললাম
“-তুমি কি আরশান?
-হ্যা (খুবই কর্কশ গলায় জবাব দিলো)। কিছু কি বলবেন?
-হ্যা, কিন্তু এই মেয়েটা?
-তা আপনার কি দরকার”

এরপর আমার আর কিছু বলতে মন চায় নি। অন্তি রাস্তা ঘাটে মেয়েদের টিজ করে, থ্রেড দেয়, বড় দের অসম্মান করে এমন ছেলে আমি কি করে তোমার জন্য পার্ফেক্ট মনে করবো। সেদিন কেমন গুন্ডা গুন্ডা লেগেছিলো, চেহারার বেশ পরিবর্তন এসেছে। পুনমের বিয়েতেও খুব একটা খেয়াল করি নি, বলতে পারো চিনি নি। চিনলে সাবধান হতাম। অবশ্য সেসময় আমার অমন তল্পিতল্পা গুটিয়ে চট্টগ্রাম যেয়েও যে বিশেষ লাভ হয় নি তা এতোদিনে বুঝলাম। একসময়কার ইভটিজার যতো ফিটফাট হয়েই থাকুক তার মনের মাঝের নুংরামো যে কোনো দিন যাবে না তা আমি জানি। এর পরও যদি তোমার ওকেই চাই তুমি যেতে পারো অন্তি, কিন্তু এই দরজায় আর কোনো দিন ফিরে আসবে না। তবে আমি বেঁচে থাকতে অমন ছেলের হাতে কোনো দিন দিবো না।
তোমার কি আর কিছু বলার আছে অন্তি?

অন্তি কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থেকে উঠে নিজের রুমে চলে আসলো। আর ওর পিছু পিছু পিহুও আসলো।

জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আরশানের দেওয়া চিঠিটা আবার খুললো

“অন্তি আমি তোমাকে হারাতে চাই না। কোন ম্যাজিক নেই কি ? তোমাকে নিজের করে পাওয়া যাবে ওই মন্ত্র পড়লেই এমন কিছু? আমি মনে হয় পাগল হয়ে যাবো অন্তি। প্লিজ তুমি চলে আসো। আচ্ছা আমি তোমায় আনতে গেলে কি আসবে আমার সাথে?

অন্তি আমি তোমার সাথে একটা সংসার পাততে চাই। অফিস শেষে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে তোমার হাসি মুখ দেখতে চাই। তুমি আমার চুলে বিলি কেটে সব ক্লান্তি দূর করে দিবে।
অামাদের এক ছোট্ট ঘর হবে। টুনা টুনিতে মিলে লান্ড ভন্ড করবো সব। তখন মা শব্দ শুনে এসে পাশের রুম থেকে ডাকলে আমরা এমন ভাব করবো যেনো কিছুই হয় নি। আমি তোমার সাথে শীতের সন্ধ্যা, গরমের ক্লান্তি, আর আমাদের বৃষ্টি সব সব উপভোগ করতে চাই।
অন্তি তুমি তো চুমু চেয়েছিলে। আমি দিবো। অনেক চুমু দিবো। ঘুম থেকে উঠে, অফিস যাওয়ার আগে, অফিস থেকে এসে, আরও অনেক অনেক তুমি না চাইতেই দিবো। তোমার কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ রাখবো না। যা চাই সব এনে দিবো। অন্তি আমি তো তোমার সব থেকে বড় চাওয়া তাইনা? আমাকেই তোমার করে দিবো। আর কিভাবে বোঝাবো তোমাকে আমার চাই।

আসবে তো অন্তি?”

উত্তরটা অন্তি নিজেও জানে না। চিঠিটা ছিড়ে ফেলে দিলো অন্তি। সে জানে তার বাবা কখনও মিথ্যা বলে না, কিন্তু সম্পূর্ণ সত্যিটাও তো জানা হলো না। একপাক্ষিক কথা শুনেই কি সবটা বিচার করা ঠিক হবে? কিন্তু আরশানকে আর কোথায় পাবে? দেখা তো হয় না। কথাও হয় না। অন্তির যে সবটা জানতে হবে।
#চল তবে শূন্যতা ধরে হাঁটি
Zannatul ferdaous zannat
part:19

অন্তিকে কাচুমাচু মুখে এদিক সেদিক তাকাতে দেখেই অরুণ বললো
-অয়ন্তি কিছু কি বলবে? তোমার কথা শোনার জন্যই কিন্তু আমি পরিবারের সবাইকে বলে আলাদা কথা বলার ব্যাবস্থা করলাম।

অন্তি এখনও চুপ। অরুন আবার বললো
-তোমার কি সত্যিই কিছু বলার নেই অয়ন্তি?

অন্তি এক হাতে আর এক হাত চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা বলতে যাবে এই সময় অরুণ বললো
-তুমি কি আরশানের কথা বলতে চাও? আমি সবটা জানি, অন্য কিছু বলতে চাইলে বলতে পরো।

অন্তি এবার অরুনের দিকে তাকালো। সবটা জেনেও একজন মানুষ কিভাবে বিয়ের কথা ভাবতে পারে? আচ্ছা অন্তি কি সবটা বুঝিয়ে বলবে? আর যদি না মানে তাহলে কি খুব করে হাতে পায়ে পড়ে কান্নাকাটি করবে।

অরুণ এবার ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বললো
-কি ভাবছো অয়ন্তি? আমার সত্যিই আরশানকে নিয়ে এতটুকু সমস্যা নেই। তোমরা ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত কাটালেও আমার আপত্তি নেই। বিয়ের আগে তোমার বয়সী মেয়েছেলে অনেক ভুলই করে৷ আই কেন হেন্ডেল ইট।
তা অয়ন্তি এমন কিছু কি হয়েছে? আপত্তি কর? যা তুমি বলতে পারছো না। খোলাখোলি বলতে পারো, বিয়ের আগেই মেন্টালি প্রিপেয়ার থাকবো। যদিও তুমি যেমনই হউ আমার সমস্যা নেই। আমি কিন্তু তোমায় দেখেই প্রেমে পড়ে গেছি। মাঝখানে এসে জুটেছে ওই আরশান। সে যাই হোক, আমি তোমার পরিবারের কাছে যোগ্য তাই ওকে নিয়ে আমার তেমন মাথা ব্যাথা নেই। তবে আমি চাই না তুমি আর ওর সাথে যোগাযোগ করো। আর চেষ্টা করেও লাভ নেই, আমি করতে দিবো না। আমাকে কি বেশি খারাপ মনে হচ্ছে অয়ন্তি?

লোকটাকে অন্তির খুব জঘন্য মনে হচ্ছে। একটা মানুষ এতোটা খারাপ কিভাবে হয়? একে কিছু বলে যে খুব একটা লাভ হবে না তা অন্তি বেশ বুঝতে পারলো।
অন্তি উঠে আসবে তখন অরুণ হাতের আঙ্গুল দিয়ে চুলে ব্যাক ব্রাশ করতে করতে বললো
– জানতে চাইলে না তো তোমার এতো এতো ফল্ট থাকতে আমার কেনো তোমাকেই চাই?

অন্তি আর রাগ ধরে রাখতে পারলো না। কপাল কুচকে আবার বসে পড়লো। রাগে থরথর করে কাপা ঠোঁটে বললো
-কেনো চাই? কেনো?
-রিলাক্স মিস অয়ন্তি। আমি বলছি।

একটু রহস্য রহস্য মুখ করে অরুণ বললো
-তোমায় আমি কোথায় দেখেছি জানো? তোমায় দেখেছি তোমার কাজিন এর বিয়েতে। ওইতো পুনম আপু৷ যদিও পুনম আমার ছোট, তবে তোমার আপু তো আমারও আপু তাইনা? সে যাই হোক, আমি কিন্তু তোমায় সরাসরি দেখিনি কখনও এর আগে। তবে তোমার হাজার হাজার ছবি আছে আমার কাছে। কিভাবে জানো? ইচ্ছে করছে না জানতে?

ভেজা গলায় অন্তি বললো
-এমন কেনো করছেন? প্লিজ আপনি বিয়েটা কেন্সেল করে দিন প্লিজ। দেখুন আমি এর আগে কখনও কারও কাছে এতোটা নিজেকে ছোট করিনি। আচ্ছা আপনার পা ধরে বললে কি আপনি আমায় এতটুকু দয়া করবেন।

(অন্তির চোখে পানি চলে এসেছে৷ সত্যিই একটা বাইরের মানুষের কাছে এতোটা নিচু হতেও খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু অন্তির আর কিই বা করার আছে)

অরুণ মুখে একটা গম্ভীর ভাব এনে বললো
-আহা অয়ন্তি। বি কুল। আমি জানতাম তুমি খুব শান্তশিষ্ট একটা মেয়ে। যা করো, যা বলো সব কিছুই খুবই ভেবে করো। এভাবে বলো না, মানায় না তোমাকে। এসব কেনো করছো? আরশানের জন্যই তো? কি হবে এসব করে বলো তো? ওকে না তোমার পরিবারের কেউ চায় না আমি, তাহলে?

একটু আগে এই লোকটার পায়ে ধরতে চেয়েছিলো ভাবতেই অন্তির কেমন গা ঘিনঘিন করছে। কি পেয়েছে কি লোকটা?

অরুণ কোমরের বেল্ট দুই আঙ্গুলে ঠিক করতে করতে বললো
-ভাবলাম উড বি এর সাথে কিছু মিষ্টি কথা বলবো। তা আর হলো কই? মেয়েদের এই এক সমস্যা বুঝলে অয়ন্তি। নাকি কান্না ছাড়া আর কিছু পারে না।

জানতো অয়ন্তি আমার ছোট বেলায় বাবা মা মারা যাওয়ার পর চাচা চাচীর কাছে মানুষ আমি। আমার চাচী আমাকে নিজের ছেলের মতো মানুষ করেছে। কখনও এতোটা কষ্টও পেতে দেয়নি। মাধুর্য তাদের নিজের সন্তান হয়ে যতোটা আদর পেয়েছে আমিও ঠিক ততোটাই পেয়েছি৷ সেই চাচী তোমাকে আমার জন্য পচ্ছন্দ করেছেন। বলতে পারো আমার নিজের মা তিনিই। তাই তুমি সব থেকে নিকৃষ্ট হলেও আমার সমস্যা নেই। তবে তোমার বোনের গায়ে হলুদে প্রথম তোমার একটা ছবি মাধুর্য আমাকে পাঠায়। আমার চোখ আটকে গেছিলো তোমাতে। আরও আরও ছবি চাইলাম। একের পর এক ছবি দিয়ে গেছে মাধুর্য। একটা ছবি আমার মাথায় গেঁথে গেছিলো অয়ন্তি। তোমার আধো খোলা শাড়িতে তোমার কোমর দেখা যাচ্ছিলো। বিশ্বাস করো ফরেন কান্ট্রিতে অনেক ফরেনার মেয়ে দেখেছি আঁটো শাট পোষাকে। কিন্তু জীবনের প্রথম তোমার কোমরই আমার সমস্তটা দুলিয়ে দিয়েছিলো। নোংরা মনে হচ্ছে আমাকে তাই না? আমি কিন্তু সেদিন থেকে তোমাকে আমার বউ এর চোখেই দেখেছি।
তুমি কিন্তু বেশ চালাক, তোমার যে একটা সম্পর্ক আছে তা নিজের বান্ধবীদেও শেয়ার করো নি। আই লাইক ইট। আমার পরিবারের কেউ জানেই না বিষয়টা। আমি কিন্তু দেশে এসেই তোমার পিছু করেছি। ইচ্ছে করে মাধুর্যের কেক এন্ড স্পেশাল উইশ শো অফ করেছি। তুমি ছাড়া তোমার অন্য বান্ধবীদের কিন্তু বেশ আগ্রহ ছিলো। বরং সবাইকে রেখে তুমি রেষ্টুরেন্ট ছেড়ে বেরিয়ে গেলে। আমার সন্দেহই ঠিক, সেদিন তোমায় প্রথম আরশানের সাথে দেখলাম। এই যে বিহন তোমার পিছু ছেড়েছে তা কি আর এমনি এমনি। সে যাই হোক, কটেজে দুটোরাত আরশানের রুমে কাটানো কি খুব জরুরী ছিলো?
এতোদিন পথে পথে প্রেম করতে মেনে নিয়েছিলাম, কিন্তু কটেজে ওভাবে দেখার পর মনে হলো এবার বিয়ের প্রস্তাব দেয়া উচিৎ। এতো কিছু ঘটবে আসলে আমি ভাবি নি। দুটো রাতই তো, নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু তখন তোমার বাবা আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, তোমার অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন।
এবার কিন্তু তোমার বাবা নিজে আমার বাড়িতে এসে প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন।
অন্তি শুকনো মুখে অরুণের দিকে তাকালো৷
অন্তিকে তাকাতে দেখেই অরুণ বললো

– বলতে পারো আমার তোমাকে চাই। তা তুমি যেমনই হউ। আমি নিজে থেকে এই বিয়ে কোনোদিন ভাংবো না অয়ন্তি। তবে তোমার পরিবার না চাইলে এগোবো না। দেখা যাক না তোমার আরশান কি করতে পারে? তোমায় নিজের করতে পারে কিনা?

অরুণ উঠে যেয়ে বসার ঘরে পরিবারের সবার সাথে কথা বলতে শুরু করলো। মুখে এমন একটা ভাব যেনো সব কিছু খুবই স্বাভাবিক।

এদিকে অন্তি ওইখানে বসেই রইলো। কেমন যেনো নিজেকে অসহায় লাগছে। এই লোকটা যে আজই পরিবার নিয়ে এই বাড়িতে আসবে অন্তি ভাবতেই পারেনি। একটু আগে যে লোকটাকে দেখলো তাকে অন্তির কাছে পৃথিবীর সব থেকে জঘন্য কিছু একটা মনে হচ্ছে। এই লোকটা কতোগুলা নোংরা কথা মিষ্টি ভাষায় বলে গেলো। অথচ সেদিন গায়ে হলুদে অন্তির শাড়ি এলোমেলো হওয়ায় আরশান উল্টে অন্তিকে বকেছিলো শাড়ি ঠিক করতে। আর কটেজে দুইটা রাত অন্তিকে কাছে পেয়েও আরশান অন্তির এতোটুকু ক্ষতি করার চেষ্টাও করেনি। মানুষ দুটোর চিন্তা ভাবনায় কতোটা পার্থক্য। কিসের জেদে এমন করছে এই লোকটা?

বিকালে অরুণরা চলে যাওয়ার পর অন্তি নিজের রুম থেকে আর বেরোয় নি। অনেক ভেবে চিন্তে অন্তি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে। আরশানকে ছাড়া অন্তি এক মুহূর্ত থাকতে পারবে না। এখন যদি অন্তি চলে যেতেও চায় তার বাবা তো বলেই দিয়েছেন চলে যাওয়ার জন্য দরজা একদমই খোলা। শুধু ফিরে আসারই পথটা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু এখানে থেকে গেলে যে সব শেষ হয়ে যাবে৷

প্রিয়া অন্তির সাথে দেখা করে এসেছে পাঁচ দিন হয়ে গেছে। এরপর আরশান আর অন্তির কোনো খবর পায় নি। আজ সকালে প্রিয়া আরশানকে ফোন করে জানিয়েছে কাল অরুণদের আসার কথা।
এরপর থেকে আরশানের টেনশন যেনো বহুগুণ বেড়ে গেছে। এই কদিন আরশান আর তার বাবা অনেক চেষ্টা করেছে আরশানের মা কে অন্তির বিষয়টাতে রাজি করাতে। কিন্তু অারশানের মা সৃজার কথা ভেবে দুটানা কাটাতে পারছেন না। একদিকে ছেলের সুখ তো অন্য দিকে একটা অসহায় মেয়ের সারাটা জীবনের নিশ্চয়তা, তিনি তো সৃজার পরিবারকে কথাও দিয়েছেন। মেয়েটাকে ছোট থেকেই এতো কষ্ট পেতে দেখেছেন যে এখন কি করবেন ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।

আরশানের এই অবস্থা দেখে আরশানের বাবা নিজে আরশানকে সাথে নিয়ে অন্তিদের বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। অন্তিকে উনার খুব পচ্ছন্দ। তাই উনার কাছে দ্বিতীয় বার ভাবার সময় নেই। আর তিনি নিজেই ভেবে নিয়েছেন সৃজাকে নিজ দায়িত্বে সুযোগ্য পাত্রের সাথে বিয়ে দিবেন।

চলবে….
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here