চুক্তির বিয়ে পর্ব ২

###__চুক্তি_বিয়ে__###”
পর্ব -২

ইয়া আল্লাহ আমার কপালে এ কি রাখছো বলে সোহা কাঁদতে লাগলো।
শাশুড়ি এসে ওকে ধরে উঠালেন। তারপর জড়িয়ে ধরে উনার রুম এ নিয়ে গেলেন।
সোহা বললো -আপনারা একি করলেন? আমাকে তো আপনারা এভাবে বলেন নি? আমি তো এরকম চুক্তি করিনি মা, আমি এসব পারবো না। আমাকে ক্ষমা করেন এগুলা থেকে মুক্তি দেন। বলে উনার পায়ের কাছে বসে কাঁদতে লাগলো।
শাশুড়ি চুপচাপ শুনলেন।
তারপর ওকে আদর করিয়ে পাশে বসিয়ে বললেন,
– মা, আমার একটা মাত্র ছেলে, তুমি এভাবে বলিও না। তুমি পারবে মা, তুমি যেভাবে হোক আমার ছেলেকে ভাল করে দাও। তুমি যা শুনছো তা ঠিক, আমার ছেলে একজন ডাক্তার, কিন্তু নিয়তির কি পরিহাস, আমার ছেলেই আজ ডাক্তারের সরণাপন্য।
– আপনি আমাকে খুলে বলুন মা কি হয়েছে উনার.?
– শুনবে তুমি? তার আগে কথা দাও মা যাই হোক তুমি আমার ছেলেকে ছেড়ে চলে যাবে না? বলো?
– আমি চেষ্টা করবো আপনি বলেন।
– সোহা মা তুমি যে এগ্রিমেন্ট এ সাইন করছো সেটা কি ভালভাবে পড়েছো?
– মা এসব বাদ দিন আপনি আগে বলুন।
আমার ছেলে ভিষন অসুস্থ মা, তাই আজকেও তোমাকে আনতে যেতে পারিনি। তোমার শশুর আজ হঠাৎ করে দেশে ঔষদ আনতে গেছেন। আমরা কি না চেষ্টা করছি, কিন্তু কিচ্ছু হচ্ছে না। বলে মহিলা কান্না শুরু করলেন। সোহার মনেও প্রভাব পড়লো উনার কান্না দেখে।
– বলুন মা কেমনে কি হলো, আগে শুনি।
তখন আবার নিচে থেকে কথা শুনা গেলো। উনি বললেন তোমার আসার দরকার নেই, আমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসছি বলে উনি তাড়াহোড়ো করে চলে গেলেন। সোহা ভাবতে লাগলো এ বাড়িতে আসার পর থেকে শুধু রহস্যময় লাগছে সব। কিন্তু মহিলাটি মানে শাশুড়ি কে মনে হলো ভাল মানুষ।
ও বসে বসে ভাবতে লাগলো বাড়িতে সবাই কত চিন্তা করছে আমার জন্য কত খুশি হয়ে আমাকে বউ সাজিয়ে বিদায় দিলো। ওরা তো জানলো না সোহা অগ্নি পরীক্ষার সম্মোখীন হয়েছে।
– কি ভাবছো মা? হঠাৎ এমন প্রশ্নে ও চমকে উঠলো। চেয়ে দেখলো ওর শাশুড়ি দাড়িয়ে আছেন।
– না মা, কি হয়েছে বাহিরে?
– ও কিছুনা তুমি এসব নিয়ে ভেবো না। চলো তোমাকে তন্ময় এর কথা বলি।
ও আর কিছু না বলে চুপচাপ উনার কথা শুনতে লাগলো। উনি বলতে লাগলেন,
– আমার ছেলে যখন ডাক্তারি ইন্টার্নিশিপ এ ছিলো তখন একটা মেয়ের সাথে প্রেম হয়, আমরা জেনে খুশি হই মেনে নেই ওদের সম্পর্ক কে। একটা মাত্র ছেলে, তাই চাকরি তে জয়েন দেওয়ার সাথে সাথে বিয়ে দেই সেই মেয়েটার সাথে। কিন্তু পরে বুঝলাম মেয়েটা উশ্রিঙ্খল ছিল। আমরা অনেক বুঝিয়েছি তন্ময় ও বুঝাতো, মাঝে মাঝে জগড়া করতো দুজনে ভিষন। কিন্তু আমার ছেলেটা ওকে খুব ভালবাসতো। একদিন কাউকে কিছু না বলে অনেক টাকা আর গহনা নিয়ে মেয়েটি চলে গেলো। ওর উদ্দেশ্য ও ছিল এটি। সম্পদ দেখে আমার ছেলে কে প্রেমে ফাঁসিয়েছে। তন্ময় সাথে সাথে ওকে আনতে গেছিলো, কিন্তু যখন আসলো একাই আসলো আর অনেক নিরব হয়ে গেলো। ২/৩ দিনের ভিতর পাগলামি বেড়ে গেলো। আর আজ তিনটা মাস হয়ে গেলো আমার ছেলের একটু ও কমলো না, আরও বদ্ধ পাগল হয়ে গেলো। মেন্টাল হসপিটাল এ পাঠাইনি আমরা, তার বদলে টাকার চিন্তা না করে ঘরেই নিবিড় পরিচর্যার ব্যবস্থা করেছি, ৩-৪ জন ডাক্তার নার্স রেখেছি। আমার ছেলের জীবন শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে, মা আমি তোমার পায়ে ধরবো, হাতে ধরবো তুমি যেওনা।” এই বলে মহিলা সোহার পা ধরতে গেলেন।

সোহা সরে গিয়ে বললো “কি করছেন মা। আমি তো আছি, আপনি চিন্তা করবেন না।” তাছাড়া সোহা চুক্তির কথাও ভাবতে লাগলো, চুক্তিতে লিখা ছিল, যেভাবেই হোক ছয়মাস পুরো করতে হবে। ও বললো আপনি আমায় তন্ময় সাহেবের পাশের রুম এ থাকার ব্যবস্থা করুন। আমি ওইখানে ই থাকবো। উনি খুশি হয়ে বললেন, আমি এক্ষুনি ব্যবস্থা করছি। উনার হাসিমাখা মুখ দেখে সোহা সব ভুলে গেলো। মায়েরা এমনই হয়, বাচ্চা যেমন ই হোক মায়ের কাছে তার বাচ্চাই বড়।

ও বেরিয়ে এসে তন্ময় এর রুমে ডুকলো, এই প্রথম নিজের স্বামীর দিকে তাকালো। স্বামী কেমন করে হয়? পাগল কি বিয়ে করতে পারে ও ভাবলো। যাক পরে ভাবা যাবে এসব, বলে ও এগিয়ে গেলো তন্ময়ের বিছানার দিকে।
ছেলেটা ঘুমিয়ে আছে, এত সুন্দর মায়াবী মুখ হয় কারও? মাথায় কুঁকড়াচুল, উন্নত নাসিকা, ফর্সা একজন মানুষ। কতো নিষ্পাপ লাগছে, শুধু খাওয়া ঘুম আর পাগলামির কারনে গায়ের রং মলিন লাগছে। চেহারায় মনে হচ্ছে ক্লান্তি আর প্রচন্ড কষ্টের চাপ পড়ে আছে। এরকম সুন্দর নিষ্পাপ চেহারার ছেলের সাথে কেউ এরকম করতে পারে ভেবেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো। সোহা তন্ময়ের মাথায় হাত বুলিয়ে ভাবতে লাগলো, যতো যাই হোক আমি যাবো না।
এমন সময় মহিলা রুম এ এসে ডুকলেন, সাথে এলিসা। বললেন, ” মা আজ থেকে তোমার যা লাগবে শুধু বলিও আমাকে ” আর কোন কাজ বা কিছু থাকলে এলিসা কে বলবে ও সাহায্য করবে।
সোহা বললো, ঠিক আছে মা, আপনি এখন আমাকে ওর সাথে একটু একা থাকতে দেন। আমি এই ঘরেই এখন কিছুক্ষন থাকবো। উনি চুপচাপ এলিসা কে নিয়ে চলে গেলেন ও ওইখানেইন ঘুমিয়ে পড়লো।
কিন্তু সকালে উঠে যা দেখলোএটার জন্য প্রস্তুত ছিলনা সোহা।

চলবে..

১ম পর্বের লিংক….

-মেহজাবিন মুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here