চুক্তির বিয়ে পর্ব ৩,৪,৫

###__চুক্তি_বিয়ে__###”
পর্ব – ৩+৪+৫

সোহা ঘুম থেকে উঠে দেখে তার পাশে তন্ময় ছুরি নিয়ে বসে আছে। চোখ দুটো লাল, রাগে মুখ থেকে একধরনের আওয়াজ বের হচ্ছে। সোহা এই দৃশ্য দেখে ভয়ে চোখ বন্ধ করে চিৎকার দিল। পাশের রুম থেকে এলিসা দৌড়ে আসলো, ততক্ষনে তন্ময় ওর হাতে কোপ বসিয়ে দিয়েছে, এলিসাও ম্যাম বলে জোরে চিৎকার দিয়ে গিয়ে সোহা কে ধরলো। ওদের চিৎকার শুনে মা আসলেন, দেখলেন তন্ময় আবার ও ছুরি হাতে এগিয়ে যাচ্ছে।
– না তন্ময়, বলে মা দৌড়ে গিয়ে তন্ময় কে ধরলেন। এলিসা কে বললেন গিয়ে সোহার রক্ত বন্ধ করতে। ডাক্তার রা ও আসলেন এ সময়। উনারা সোহাকে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। সোহা তখন ও ভয়ে কাঁপছিল, ওকে পাশের রুম এ এলিসা নিয়ে যাওয়ার পর সোহা বললো আমি থাকবো না, আমি চলে যাবো, চলে যাবো আমি। ও তন্ময়ের সেই ভয়ঙ্কর মুখ ভুলতে পারছে না।
এলিসা বললো, ম্যাম আপনি স্যার কে ভুল বুঝবেন না, উনি অনেক ভাল মানুষ। উনি পাগল হন নি, উনাকে পাগল করে দেওয়া হয়েছে। উনি এমন ছিলেন না।
এসময় শাশুড়ি এসে ওর পাশে বসলেন।
বললেন – মা, ও মেয়েদের দেখলেই ভয় পায়, ও মনে করে সব মেয়েরা ওকে মারবে, হঠাৎ করে তোমাকে পাশে দেখে ভয়ে আরও এমন করছে তুমি ভুল বুঝনা মা।
– তাহলে তো এই কাজ আমার জন্য আর ও কঠিন মা, সোহা বললো।
– তুমি পারবে মা, তুমি চিন্তা করিও না, তোমার বাজেট আরও বাড়িয়ে দেবো।
সাথে সাথে ওর বাড়ির কথা মনে পড়ে গেলো, কিভাবে ও এখানে আসছে, বাবা মা কতো খুশি হয়েছে মেয়ে টা লন্ডনে চাকরি পেয়ে গেছে, বিয়েও হয়ে গেছে, এখন আর তাদের কোন দুঃখ থাকবে না।

সোহা নিম্নবিত্ত ঘরের মেয়ে। বাবা দিনমজুর, পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। সোহা সবসময়ই পড়ালেখায় ভালো। ওর পড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে ওর বড় বোন পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে। কারন একসাথে সবার লেখাপড়া চালানো সম্ভব নয়।
সোহার মেধার জন্য ওর স্যার রা ওকে সাহায্য করেছেন। ক্লাশ নাইন থেকে ও টিউশনি করে। এতে ওর আর ছোট ভাইবোন গুলার খাতাকলম এর ব্যবস্থা হয়ে যেত। এরকম টিউশনি করে আর মেধাবৃত্তি পেয়ে সে গ্র্যাজুয়েট কমপ্লিট করেছে। এবং রেজাল্ট ও অনেক ভাল। মনে অনেক স্বপ্ন ছিল ভাল একটা চাকরি পাবে। বাবা মায়ের কষ্ট দূর করবে, বোনটার ও বিয়ে দেবে। কিন্তু চাকরি খুঁজতে গিয়ে ও বুঝেছে বাস্তবতা কত কঠিন। সবাই মুখে বড় বড় কথা বলে আর তলে তলে স্বার্থসিদ্ধির ধান্ধা।
সোহা অনেক সুন্দরী মেয়ে। উজ্জ্বল ফর্সা গায়ের রং, মায়াবী চেহারা, গভীর কালো চোখে একধরনের মায়া। যে কেউ এই মায়ায় হারিয়ে যেতে পারে। এটা সোহার জন্য সবচেয়ে বড় বাঁধা। তারপর ও সোহা হাল ছাড়েনি, ছোটবড় যেকোন একধরনের চাকরির জন্য ছোটাছোটি করছে। কিন্তু সবাই চাকরির বদলে খারাপ চোখে তাকায়। কিন্তু চাকরির জন্য তো নিজের ইজ্জত বিক্রি করতে পারেনা। চারিদিক যখন হতাশায় ডুবে গেছে ওর তখন সোহার একজন পরিচিত আপা বললেন, অমুক জায়গায় একজন বিখ্যাত ব্যক্তি আছেন। খুব ভাল মানুষ, উনার দেশে বিদেশে ব্যবসা, উনার কাছে গেলে কিছু একটা হতে পারে। আমি বলে দিছি উনার পি এস কে। তুমি যাও একবার, উনি আবার দেশে থাকেন না।
সোহা বললো, আমি আজই যাচ্ছি।
সোহা একটু ফ্রেস হয়ে একটু ভালো কাপড় পরে রেডি হয়ে গেলো। উনার অফিসে গিয়ে দেখে এত বড় অফিস, ও তো ভয়েই শেষ ঢুকতে পারবে কি না। আগে থেকে বলে রাখা দেখে ও ঢুকতে পারলো।
উনি মেয়েটা কে দেখে নিজের মেয়ের মতো এনে বসালেন। তারপর যতন করে বসিয়ে নাস্তা খাইয়ে ওর বায়োডাটা দেখলেন সব শুনলেন। আসলে তখন উনার মনে ছিলো অন্য চিন্তা। সোহা ভাবতে পারেনি এত বড়লোক একজন মানুষ এত ভাল আর উদার হতে পারে, তাই উনার আদর দেখে সোহা কেঁদে ফেললো।

উনি বললেন, দেখো মা সব মানুষ ভাল হয়না। আর কিছু কিছু ভালো মানুষের জীবন ও সুখের হয়না। আমিও তাদের মধ্যে একজন, তুমি যদি আমাকে বিশ্বাস করো, তাহলে আমি তোমাকে চাকরি দিতে পারি। কিন্তু তার আগে আমার কিছু কথা শুনতে হবে। আর এসব কথা এখানে বলা যাবেনা, তুমি যদি আমাকে বাবার মতো বিশ্বাস করো তাহলে এই আমার বাসার ঠিকানা তুমি কাল সকালে আমার বাসায় আসতে পারো।
সোহা বললো,- কি যে বলেন স্যার আমি আপনার মতো মানুষকে কিভাবে বিশ্বাস করবো না। আমি আগামীকাল আসবো ইনশাআল্লাহ।

পরদিন সোহা উনার বাসায় গেলো। বাসা দেখেই বুঝলো আসলেই খুব উচ্চবিত্ত মানুষ এরা। উনি ওকে নিজের মেয়ের মতো এনে বসালেন।
কাজের ছেলে নাস্তা নিয়ে আসলো, হয়তো আগে থেকেই বলা।
– আমি বাড়ি থেকে এখন খেয়ে এসেছি স্যার।
– এটা আমার অফিস নয় মা, তাই আমাকে আঙ্কেল ডাকতে পারো। আর খেয়ে আসলে কি হলো, এখন তো তোমাদের খাওয়ার সময়,
খাও বেশি বেশি করে খাও।
তারপর বললেন, তুমি কি লন্ডন যাবে?
– সোহা এ কথা শুনে চমকে উঠলো,
– কি বলছেন আঙ্কেল আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
উনি বললেন দেখো মা তোমার একটা চাকরির দরকার আর আমার তোমার মতো একটা মেয়ের দরকার।
তোমাকে আমি আমার ছেলের বউ করে নিয়ে যেতে চাই।
– কি বলছেন আপনি? সোহা দাঁড়িয়ে গেলো।
– বসো মা আমি বলছি তোমাকে সব।
সোহা বসলো, তবে আগের মতো স্বাভাবিক হতে পারলো না।
তিনি বললেন, আমার নাম তো জানই আমি মিনহাজ চৌধুরী, দেশে বিদেশে আমার বিজনেস, কিন্তু আমার ছেলে তা হতে চায়নি। ছোটবেলা থেকে ওর ইচ্ছা ছিলো ডাক্তার হওয়া। আমরা ওকে ডাক্তার বানালাম। কিন্তু কি ভাগ্য, কিছুদিন যেতে না যেতেই ও অসুস্থ হয়ে গেছে। ওর চিকিৎসার জন্য একজন নার্স প্রয়োজন। তাই তুমি যদি যেতে চাও।
– কিন্তু আমি তো নার্স নই।
– সমস্যা নেই, ওখানে অনেক নার্স আছে তুমি শুধু আমার ছেলের একটু খেয়াল রাখবে। আর এজন্য তোমাকে মাসে ২ লক্ষ টাকা করে বেতন দেবো।
সোহা এই কথা শুনে চোখ কপালে তুলে ফেললো।, এতো টাকা..!
– আমি যদি কিছু না করি, তাহলে এত টাকা কেন দিবেন?
– তোমার চাকরির দরকার চাকরি করবে কি না বলো?
– কিন্তু আঙ্কেল আমার বাবা মা রাজি হবেন না।
সেটাও আমি ভেবে রেখেছি। তোমার বাবা মায়ের কাছে আমি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবো।
– কি কথা বলছেন আপনি?
– হুমম তা শুধু চুক্তি পত্রে থাকবে। উনারা জানবেন না, পরে তুমি যদি ইচ্ছা করো আমার ছেলেকে বিয়ে করবে আমরা মেনে নেবো।
কিন্তু তোমাকে ছয় মাস সময় দেয়া হবে, এর ভিতরে তুমি আমার ছেলেকে সুস্থ করতে হবে। ছয়মাস পর্যন্ত চুক্তি করা থাকবে।
এখন তুমি ভাবো কি করবে

সোহা ভাবতে লাগলো কি করবে,
একদিকে ছোট ছোট ভাইবোন। অন্যদিকে ওর জীবন এর এতবড় একটা রিস্ক। মনে পড়লো ভাইটা কলেজে ভর্তি হবে বলেছে। ছোট বোন আর ভাইর হাসিমাখা মুখ আর আবদার। বড় বোনের ক্লান্তিমাখা হাসি। এখন ও বোনের বিয়ে হয়নি। এই বয়সে বাবার এত কিছু সামলানো কত কষ্টের।
ও আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করলো, “আপনার ছেলের অসুখ টা কি আগে বলেন।”
– তুমি গেলেই তা দেখতে পাবে।
– কান্নামাখা মুখ নিয়ে বললো আমি রাজি।
মিনহাজ সাহেবের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আসলে উনি জানতেন মেয়েটার যে অবস্থা রাজি হবেই।
উনি সমবেদনা ভরা গলায় বললেন – মা আমি তোমার ক্ষতি হতে দিবো না। তুমি চিন্তা করিও না।
তারপর বললেন, এই যে চুক্তিনামা, তুমি সাইন করে দাও, আমি তোমাকে এক্ষুনি অর্ধেক টাকা দিয়ে দেবো।
ও অবাক করা চোখে তাকালো। চুক্তিনামায় লিখা সোহা ছয়মাসের জন্য তন্ময় চৌধুরীর বউ হয়ে যাচ্ছে, বিনিময়ে ১২ লক্ষ টাকা পাচ্ছে। কি অদ্ভুত!! টাকার বিনিময়ে বউ!
উনি বললেন আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি রাজি হবে, তাই আগেই পেপার রেডি করে ফেলেছি।
সোহা সাইন করে এডভান্স ৬ লক্ষ টাকা নিয়ে বাড়ি আসলো। কিন্তু বাড়ি এসে ও কোন কথা না বলে নিজের ঘরে ঢুকে গেলো। টাকার কথা বাবাকে কিভাবে বলবে, মনে চিন্তার ঝড় চলছে।

চলবে…

– মেহজাবিন মুন

#”চুক্তি বিয়ে ”

পর্ব -৪

সন্ধার পরে ওর বাবা ঘরে এসে শুনলেন সোহা কারও সাথে কথা বলেনি, খায়নি। উনি সোহার রুম এ গিয়ে সোহাকে নিরব দেখে মনে করলেন মেয়েটা চাকরি পাচ্ছেনা দেখে হয়ত হতাশায় আছে।
তিনি সোহার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, মা রে, চাকরি হচ্ছেনা বলে কি মন খারাপ? মন খারাপ করিস না, আল্লাহ চান তো কিছু একটা হয়ে যাবে।
সোহা বলল, “না বাবা, আমি চিন্তা করছি না, কিছু একটা হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
সোহা মনে মনে ভাবছে, সব ঠিক হয়ে গেছে বাবা। তুমি শুধু দোয়া করো তোমার মেয়ে যেন সফল হতে পারে।
বাবা বললেন, তুই এখন ঘুমা মা আজ অনেক দখল গেছে তোর উপর, আজ চাকরি পাসনি বলে চিন্তা করিস না।
পরদিন সকালে সোহা তার বাবাকে বললো, বাবা কাজে যেওনা, আজ একজন মেহমান আসবেন।
– কে আসবে মা? আমাকে তো বললি না কাল?
– কাল যেখানে গিয়েছিলাম উনি আসবেন।
সকাল ১০টায় মিনহাজ সাহেব সোহাদের বাড়িতে আসলেন। তাদের খুব ছোট ঘর, নিম্নবিত্ত বলতে যা বুঝায়। কিন্তু তিনি কোন অহংকার না করে সোহার বাবার পাশে বসলেন। চা নাস্তা শেষে মিনহাজ চৌধুরী বললেন, ভাই সাহেব, আমি এসেই তো আগে নাস্তা খাওয়া শুরু করলাম। এবার আসল কথায় আসি, যদি কিছু মনে না করেন।
– না সাহেব, কিছু মনে করবো না আপনি বলেন। আর আপনাকে তো বসার জায়গাও দিতে পারিনি।
– এসব বলবেন না ভাই! আর আমাকে সাহেব বা স্যার বলার ও দরকার নেই, আমরা এখন থেকে বিয়াই হতে যাচ্ছি।
আপনি কি সোহা মা কে আমাকে দিয়ে দেবেন?
– কি বলছেন সাহেব? বুঝতে পারছি না.! সোহার বাবা অবাক হয়ে গেলেন উনার কথা শুনে।
মিনহাজ সাহেব বললেন, অবাক হওয়ার কিছু নেই ভাই, সোহা মেধা আর গুনবতী একটা মেয়ে। আমি ওকে আমার ছেলের বউ করতে পারলে তা আমার সৌভাগ্য হবে।
সোহার বাবা এটা শুনে আনন্দে কেঁদে ফেললেন। বললেন, আমি জানি আমার মেয়ে আমার কোন পূন্যের ফল।
কিন্তু ভাই আমার বড় মেয়েকে যে এখন ও বিয়ে দিতে পারিনি। তাছাড়া আমার সোহার স্বপ্ন ছিল চাকরি করবে, ভাই বোন গুলোকে পড়াবে।
– আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আমি আপনাদের সব খবর নিয়ে এসেছি, আপনার বড় মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা ও হয়ে গেছে। জামাই আমার কোম্পানি তে চাকরি করে, আর সোহার ও চাকরির ব্যবস্থা হয়ে গেছে যাতে সোহা আপনাদের পরিবারে সাহায্য করতে পারে। লন্ডনে আমার পরিচিত একজনের মাধ্যমে ভাল একটা কোম্পানি তে চাকরির ব্যবস্থা করছি।
– কি বলছেন? আমার সোহা লন্ডনে যাবে? উনি বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলেন।
– আমরা সবাই তো লন্ডনে থাকি, ঐখানে আমার ছেলে ডাক্তারি করে।
– সোহার বাবা বললেন, না ভাই, এত দূরে আমার মেয়ে কেমনে কি করবে? আমার দরকার নেই।
সোহা তার বাবার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে তার বাবাকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে বুঝালো, – বাবা তুুমি চিন্তা করোনা, উনি আমাদের জন্য এতকিছু করছেন। উনি খুব ভালো মানুষ, তাছাড়া বিয়েতো বড় নয়, আমি চাকরি করবো ওখানে গিয়ে। দেশের মানুষ খুব স্বার্থপর বাবা। এখানে মেধার কোন দাম নেই।
– কিন্তু তুই লন্ডনে গিয়ে থাকবি কিভাবে? যদি কিছু হয়?
– কিচ্ছু হবেনা বাবা। তুমি আরও গর্ব করে বলবে আমার মেয়ে লন্ডন চাকরি করে। তাছাড়া ভাইবোনদের ও ভবিষ্যতের একটা ব্যবস্থা হবে। তুমি না করো না বাবা।
সোহার মা ও বললেন আমার মেয়ের উপর বিশ্বাস আছে তুমি রাজি হয়ে যাও। সোহার বাবা অনেক্ষন পরে ফিরে এসে বললেন, ঠিক আছে ভাই সাহেব, আমি রাজি। কিন্তু আমার বড় মেয়ের বিয়েটা আগে হোক।
মিনহাজ সাহেব খুশি হয়ে বললেন, ঠিক আছে আমি সব ব্যবস্থা করছি। কিন্তু ভাই ছেলে আমার আসতে পারবেনা। তাই বিয়ের অনু্ষ্ঠান লন্ডনে হবে যেদিন সোহা যাবে। আর সোহার এডভান্স বেতনের ও ব্যবস্থা করেছি, তা সোহার কাছে পৌছে দেবো।
তারপর উনি বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসলেন। উনি চলে আসার সময় সোহা উনাকে এগিয়ে দিতে এসে বললো, আঙ্কেল আপনার কাছে আমার অনুরোধ, আপনি যা কিছুই ব্যবস্থা করেন কিন্তু আমি আমার টাকা থেকে খরচ করবো।
উনি হাসিমুখে বললেন, আমি জানি মা তুমি কেমন মেয়ে। তুমি তোমার মত করেই সব করো। আমি কিছু বলবোনা।

কিছুদিনের ভিতরে বোনের বিয়ে, বাবা-মা ভাই বোনের থাকা খাওয়ার সব ব্যবস্থা করলো সোহা। ওর ভাই বোনের পড়ালেখার জন্য কিছু টাকা একটা একাউন্ট করে রেখে দিল যাতে সময়মত ওরা তুলতে পারে। তারপর সোহা নতুন এক অজানার পথে পাড়ি দিল।
লন্ডনে আসার দিন ওর বাবা মায়ের ইচ্ছাতেই বউ সেজেছিল। উনারা জানেন আসার সাথে সাথে সোহার বিয়ে হবে। কত খুশি হয়ে কত ধুমধাম করে এয়ারপোর্ট এ সবাই এগিয়ে দিল। কিন্তু সোহা তো জানে চুক্তি বিয়ে আবার বিয়ে হয় কিভাবে? এই বিয়ের যে কোন দাম নেই, কোন স্বীকৃতি নেই। এমন কি কেউ তাকে আনতেও যায়নি এয়ারপোর্ট এ। অবশ্য এখানে আসার পর কথা আলাদা, যা ভাবছিল এর চেয়ে কঠিন কিছুর সম্মুখীন হতে হলো। কিন্তু সেই মহান মানুষ টা কোথায়? যে তাকে এতদূর পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। তাকে একবার জিজ্ঞেস করতে হবে কেন তার সাথে এমন করলেন? টাকা দিয়ে কি একটা মেয়ের বিশ্বাস কিনা যায়? উনাকে এত বিশ্বাস শ্রদ্ধা করলো আর বিনিময়ে কি পেলো.?
কিন্তু আমিও হাল ছাড়বো না, এর শেষ দেখেই ছাড়বো। সোহা চোখের পানি মুছে ফেললো। তারপর উঠে দাঁড়ালো তন্ময়ের রুমে যাওয়ার জন্য।
তন্ময়ের মা বাধা দিয়ে বললেন, এখন যেওনা মা, এখনও তন্ময়ের ঘোর কাটেনি, মাথা গরম। ওকে বেধে রাখা হয়েছে।
– না মা, আমাকে এখনই যেতে হবে, আমি এর শেষ কিভাবে হয় দেখতে চাই।

তন্ময় চুপচাপ শুয়ে ছিল। সোহাকে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠলো কিন্তু হাত পা বাধা থাকায় কিছু করতে পারলো না
সোহা ডাক্তার আর নার্সকে বললো, আপনারা রুম থেকে চলে যান। যেহেতু উনার হাতপা বাধা উনি আমাকে কিছু করতে পারবেন না।
সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পর সোহা গিয়ে তন্ময়ের পাশে বসলো। কিন্তু তন্ময়ের চোখ মুখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে।
সোহা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, দেখো আমি তোমাকে মারতে আসিনি, আমি তোমাকে ভালো করতে আসছি, আমার হাতে কি কিছু আছে তোমাকে মারার জন্য?
তন্ময় রাগ আর ভয়ের কারনে অদ্ভুদ শব্দ করতে লাগলো। কিন্তু সোহা ঘাবড়ালো না।,
– তুমি ঔষদ খেয়ে চুপচাপ ঘুমাও, তুমি ঘুমালে দেখবে ভালো হয়ে যাবে।
– না তুমি আমাকে মারবে, তুমি ঔষদ দিয়ে আমাকে মারতে চাও, আমি ঘোমাবো না, ঔষদ ও খাবো না। ও বিছানায় হাত পা চুড়া শুরু করলো।
– ঠিক আছে, ঠিক আছে খেতে হবে না ঘুমাতে হবে না। আমি পাশে বসে আছি, তুমি শুয়ে থাকো।
– না, তুমি যাও, তুমি আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাও।

সোহা দূরে একটা চেয়ার নিয়ে বসলো। তন্ময় খুব সতর্কভাবে চেয়ে থাকলো। যদি মেয়েটা এসে ওকে মেরে ফেলে..?

চলবে…

– মেহজাবিন মুন।

#”চুক্তি বিয়ে”

পর্ব -৫

সোহা দূরে বসে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, কি সুন্দর মায়াবী একজন মানুষ, আজ তার রোগী-হাসপাতাল নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা ছিল। কিন্তু আজ সে নিজেই রোগী হয়ে নিজেই বিছানায় পড়ে আছে। নিজেই অদ্ভুদ এক ভয়ে ভীত হয়ে আছে সর্বক্ষণ। কেমন যেন একটা টান অনুভব করলো তন্ময়ের জন্য।
কেন এমন হলো? আমাকে তা জানতে হবে।
আস্তে আস্তে সোহার মানুষটা আর তার পাগল হওয়ার পিছনের কারনটার প্রতি আগ্রহ বাড়তে লাগলো।
তন্ময় ও জেগে থাকতে থাকতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো।
তন্ময় ঘুমিয়ে যাওয়ার পর সোহা ও রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। বেরিয়ে এসে দেখে তন্ময়ের মা দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন।
সোহা উনাকে মা ডেকেছে তাই মায়ের মতই উনাকে সম্মান করে। উনার হাত ধরে নিজের রুম এ নিয়ে আসলো সে। উনাকে বিছানায় বসিয়ে বললো – ” আপনি কোন চিন্তা করবেন না মা, আমি উনাকে সুস্থ করে তুলবই। এখন আপনি কিছু কাজ করেন আমার জন্য।
– কি কাজ মা? তন্ময়ের মা জিজ্ঞেস করলেন।
– তন্ময়ের ঘরে একটা এলার্ম সিস্টেম এর ব্যবস্থা করেন যাতে প্রয়োজনে ডাকা যায়। আর ডাক্তার, নার্স ২৪ ঘন্টা থাকতে হবে না। আমি এখন থেকে সব মেনেজ করবো। উনাদের বলবেন ঔষদের চার্ট আর কি কি লাগবে আমাকে যেন দিয়ে যান। আর প্রাথমিক চিকিৎসার জ্ঞান আমার আছে, অসুবিধা হবেনা।
– মুখে হাসি নিয়ে তন্ময়ের মা বললেন সব ব্যবস্থা করছি মা আমি এক্ষুনি।
– হুমম, আর এখন আমার বাড়িতে কথা বলার ব্যবস্থা করুন। সবাই আমার জন্য হয়তো পেরেশান হয়ে আছে।
– আমি তো এ কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। তুমি কিছু মনে করনা মা আমি এক্ষুনি কথা বলার ব্যবস্থা করছি।
উনি নিজের মোবাইল টা দিয়ে বললেন কথা বলা শেষ করে রেডি হয়ে নিও,আমরা বাইরে যাবো। মোবাইল ফোন, আর যা যা প্রয়োজন তোমার তা কিনে নিয়ে আসবো।
– ফোন হাতে নিয়ে সোহা বললো মা আমি একটু একা কথা বলতে চাই।
– তুমি কথা বলো, আমি নিচে যাচ্ছি বলে উনি বেরিয়ে গেলেন।
আসার পর থেকে এটা সেটা ঝামেলার জন্য ফোন দিতে পারেনি, কিন্তু বাড়িতে কথা বলার জন্য সোহাও অস্থির হয়ে আছে। সোহার মা ফোন ধরলেন। সোহা তার মা কে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কেমন আছো মা.? বাড়ির সবাই কেমন আছে?
সোহার মা মেয়ের কন্ঠ শুনেই কেঁদে ফেললেন, -কেমন থাকবো, তোকে ছাড়া কি ভালো থাকতে পারি? আমরা সবাই পাগল হয়ে আছি তুই ফোন যে দিলি না? উনার কান্না দেখে সোহার ও কান্না চলে আসলো, কিন্তু এখন কান্নার সময় নয়। সোহা কান্না সামলে নিয়ে বললো, মা তুমি কাঁদছো যে? সব ঠিক আছে, আমিও ভাল আছি, তুমি বাবার কাছে ফোনটা দাও।
সোহার মা ওর বাবাকে ফোন দিলেন। বাবা ফোন নিয়ে প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন, মা কাল যাওয়ার পর কি বিয়ে হয়েছে? ঠিকভাবে পৌছেছিস তো? জামাই কেমন রে, নিশ্চয় অনেক ভাল.?
উনার কথা শুনে সোহা কান্না সংবরণ করতে পারছেনা, তাই মুখ চেপে বসে আছে। সোহাকে নিরব দেখে সোহার বাবা জিজ্ঞেস করলেন, – কি হলো সোহা কথা বলছিস না যে? সব কিছু কি ঠিক আছে মা?
– সব ঠিক আছে বাবা, হ্যা উনারা ধুমধাম করে আমাকে এয়ারপোর্ট থেকে এসে নিয়ে এসেছেন। বিয়েও হয়ে গেছে।
বাবা তুমি চিন্তা করোনা, আমি ভালো আছি।
– আমার মেয়েটার বর আর শশুরবাড়ীর সবাই ভাল হবে জানতাম। তা মা জামাই এর সাথে কথা বলিয়ে দিবি না?
কথা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য সোহা বললো- বাবা আপা কেমন আছে? উনার শশুরবাড়ীর সবাই ভাল তো? – হ্যা মা, মিনহাজ সাহেব অনেক ভাল একটা প্রস্তাব আনছিলেন। সবাই ভাল মানুষ ও খুব সুখে আছে।
– আর বাকিরা সবাই কি ঠিকমত পড়াশোনা করছে? মায়ের অসুখ কি কিছুটা কমেছে?
– ওরা পড়ছে মা। তুই চিন্তা করিস না। আর তোর মায়ের অসুখ এসব বুড়া বয়সে একটু হয়ই চিন্তা করিস না।
– না বাবা মাকে ঠিকমত ঔষদ খাওয়াইও। আর আমি সামনের মাসে মায়ের ভাল চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো। – তুই কি শুধু আমাদের চিন্তা করবি? তোর চিন্তা করবি না?
– করছি তো বাবা, করছি বলেই তো এখানে আসলাম।
– তুই কি কাঁদছিস, তুই কি আমাদের কাছে কিছু লুকাচ্ছিস?
– না বাবা তুমি চিন্তা করো না, আমি ভালই আছি। এখন রাখি বাবা পরে কথা বলবো বলে সোহা লাইন কেটে দিল।
এতক্ষণ সোহা কান্না চেপে রাখছিল, কত মিথ্যা বলছে বাবা মা কে। অথচ সোহা কোনদিন বাবা মায়ের সাথে মিথ্যা বলেনি। আজ কিভাবে বলবে তাদের মেয়ে কত বড় সমস্যায় আছে। সোহা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।
তন্ময়ের মা একটু আগে দরজায় দাঁড়িয়ে ওর শেষ কথা গুলো শুনলেন। সোহার এভাবে কান্নায় ভেঙ্গে পড়া দেখে নিজে স্থির থাকতে পারলেন না। রুমে ঢুকে সোহাকে জড়িয়ে ধরলেন। সোহাও উনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
তন্ময়ের মা ওকে শান্তনা দিলেন, দেখো মা, সবার জীবন আর ভাগ্য সমান হয়না। দেখ আমাদের তো কোন কিছুর অভাব নেই, কিন্তু আমরা কি সুখী? আমার ছেলের যে এ অবস্থা হলো, এত কিছু করার পরও আমার ছেলে ভাল হচ্ছেনা।
তুমি কেঁদনা মা, আমি সুখে দুঃখে সব বিপদে তোমার পাশে থাকবো। সোহা উনার কাধে মাথা রেখে এসব শুনছিল আর ভাবছিল কত ভাল মানুষ এরা তারপর ও কত কষ্টে আছে। এই মা কে কিভাবে ভুল বুঝবে, আর উনার কথা কিভাবে না শুনে থাকবে.?
সোহা রেডি হয়ে তন্ময়ের মায়ের সাথে মার্কেট এ গেল।
সোহার প্রয়োজনীয় জিনিস, মোবাইল ফোন আর সোহার জন্য কিছু কাপড় কিনে তারপর বাড়ী ফিরে আসলেন।

বাড়ীতে এসে ঢোকার পরই এলিসা দৌড়ে এসে তন্ময়ের মাকে বলল, ম্যাডাম আমার সাথে তাড়াতাড়ি চলুন একটা সমস্যা হয়ে গেছে। এলিসা এ বাড়ির সব কাজ দেখাশুনা করে। সব কাজের লোকের হেড সে, সবসময় সবাইকে কাজ দেওয়া, ঠিকমত কাজ করছে কিনা, তাদের বেতনের ব্যবস্থা সব এলিসা ই করে। এ বাড়ির একজন বিশ্বাসী মানুষ হিসেবে সব কিছুর ভার তন্ময়ের মা এলিসার উপর ছেড়ে দিছেন। তিনি এখন বিষয়টা বুঝতে পেরে সোহাকে বললেন, তুমি উপরে যাও সোহা আমি একটু পরে আসছি।
সোহা বললো – মা আমিও আসি?
– না তোমার আসতে হবে না, তুমি উপরে যাও।তারপর তিনি এলিসার সাথে তাড়াতাড়ি চলে গেলেন। ওরা চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পর সোহা জিনিস পত্র গুলো একটা ঝুঁপের আড়ালে রেখে ওদেরকে অনুসরণ করলো।
উনারা কোথায় যাচ্ছেন? কি সমস্যা হয়েছে, আমাকে সাথে নিয়ে গেলে কি হতো? এসব ভাবতে ভাবতে ওদের পিছু পিছু যেতে লাগলো। দেখল উনারা বাড়ির পেছনে একটা কটেজের দিকে যাচ্ছেন। কিন্তু আনমনা হয়ে চলার কারনে খেয়াল করেনি আরেকটা মেয়ে ওর পিছু পিছু আসছে।ও তাড়াতাড়ি সোহার পাশে এসে বললো, ম্যাম আপনি ওদিকে যেতে পারবেন না। নিষেদ আছে। আপনার এখন উপরে যাওয়ার কথা। সোহার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো, কি রহস্য গিয়ে দেখার আগে তাকে কেউ দেখে ফেলেছে, আর সে খেয়াল করলো বা। এ বাড়িতে কি সবাই সবাইকে চোখে চোখে রাখে। ও আর কিছু না বলে মেয়েটার সাথে উপরে চলে আসলো। মেয়েটা সব জিনিস নিয়ে এসে সোহার রুম এ রাখলো। সোহা রুমে এসে ফ্রেস হয়ে তন্ময়ের রুমে আসলো।

রুমে এসে দেখে তন্ময় কে তার বাবা ঔষদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন আর নার্স রা ওকে ধরে রেখেছেন।
সোহা মিনহাজ সাহেবের সামনে এসে বললো- আপনাকে তো বিশ্বাস করেছিলাম আঙ্কেল, আপনি কেন আমার সাথে এমন করলেন?
মিনহাজ সাহেব থমকে গেলেন। তিনি মাথা নিচু করে বললেন- আমাকে ভুল বুঝনা মা। এছাড়া আমার কাছে কোন উপায় ছিল না। তোমাকে দেখে মনে হয়েছে তুমি আমার ছেলেকে ভাল করতে পারবে।
– কেন? আমি ছাড়া কি আর কোন মেয়ে পান নি আপনি?
– ছিল কিন্তু তোমার চেহারার ছিলো না।
– আমার চেহারা! আমি তো কিছু বুঝতে পারছিনা।
– সময় আসলে সব জানবে মা।
সোহাকে দেখার পর থেকে তন্ময়ের পাগলামি আরও বেড়ে গেলো।
ডাক্তার বললেন – ‘ওকে এখন ইন্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়াতে হবে, এছাড়া আর কোন উপায় নেই।
সোহা ডাক্তার কে থামিয়ে দিল। জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে উনার? আগে বলুন কেন ইনজেকশন দিতে হবে?
তন্ময়ের বাবা সোহাকে বললেন, তন্ময় সকাল থেকে ঔষদ, খাবার কিচ্ছু খাচ্ছেনা। বলছে কে নাকি তাকে মেরে ফেলবে। এ কথা শুনে সোহা বললো, ঠিক আছে আমি দেখছি কি করা যায়। আপনারা আমাকে একটু সময় একা এখানে থাকতে দিন।
– মিনহাজ সাহেব চোখ মুছে বললেন, – তুমি বেশি রিস্ক নিচ্ছ সোহা, পারবে না তুমি, ডাক্তার ওকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে সেলাইনের মাধ্যমে খাবার দেবে।
– আমার কিছু হববে না আপনারা কোন চিন্তা করবেন না প্লিজ সবাই যান।
মিনহাজ সাহেব সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে আসলেন। সোহা রুমের দরজাটা ভেজিয়ে রেখে তন্ময়ের পাশে বসলো। তা দেখে তন্ময় রাগে আরও ফুঁসতে লাগলো। ওকে দেখলেই তন্ময় রেগে যায়, কিন্তু এখন হাত পা বাধা থাকায় কিছু করতে পারছে না। সোহা এসব বুঝেও না বুঝার ভান করে তন্ময়ের একটা হাত ধরে বললো, খাবার আর ঔষদ না খেলে যে তুমি ভাল হবেনা। সবাই তোমার ভালো চায় তন্ময়। তুমি খাবার টা খাও, দেখবে ভাল হয়ে গেছো।
– রাগে চিৎকার করে উঠলো তন্ময়, ” না…. তোমরা সবাই আমাকে মেরে ফেলতে চাও, তোমাদের সবাইকে নীরা পাঠিয়েছে আমাকে মারার জন্য আমি খাবো না। তুমি বেরিয়ে যাও।
– তন্ময় আমি তোমার বউ। বউ কি কখন ও স্বামীকে মেরে ফেলতে চায়?
সোহা দেখলো তন্ময় নিরব হয়ে গেছে। তাই ও আরও পাশে গিয়ে তন্ময়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। তারপর খাবার এনে সামনে বসে বললো খাও তন্ময়, আমি তোমাকে নিজহাতে খাইয়ে দেবো।
তন্ময় কিছু বললো না, কিন্তু খাবার খেলো না এটা দেখে সোহা নিজের মুখে খাবার নিয়ে বললো এই দেখো আমি খাচ্ছি, আমার কি কিছু হচ্ছে? নাও এবার লক্ষি ছেলের মতো হা করো।
– খেতে পারি, যদি তুমি আমার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দাও।
– দেব, তুমি আগে খাবার আর ঔষদ খাও।আমি তোমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দেব।
তন্ময় আর কিছু না বলে চুপচাপ খেতে থাকলো। খাওয়া শেষে তন্ময় বললো, তুমি আমাকে মারবে না তো? ওরা আমাকে মারতে চায়, তুমি আমাকে বাঁচাবে?
– হ্যা তন্ময় আমি সব সময় তোমাকে পাহারা দেবো, কেউ মারবে না তোমায়, নাও ঔষদ খাও। ঔষদ খাইয়ে সোহা তন্ময়ের হাতের বাধন খুলে দিল। কিন্তু তার একটু পরেই হঠাৎ করে তন্ময় সোহার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সোহাকে কিল ঘুসি মারতে লাগলো আর বলতে লাগলো, – “তুই আমাকে মারতে এসেছিস, তুই ডাইনী, তোকে নীরা পাঠিয়েছে আমাকে মারার জন্য, আমি আজ তোকে মেরে ফেলবো।” সোহা হঠাৎ আক্রমনে আর তন্ময়ের আচরনে অবাক হয়ে গেলো। কিছু বলার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছে। একটু পর আর সহ্য করতে না পেরে জোরে চিৎকার দিয়ে বিছানাতেই অজ্ঞান হয়ে গেলো। ওর চিৎকার শুনে তন্ময়ের বাবা আর ডাক্তার দৌড়ে আসলেন। ডাক্তার আর নার্স রা তন্ময়কে ধরে ইনজেকশন দিয়ে ধরে রাখলেন। আস্তে আস্তে তন্ময় ও নিস্তেজ হয়ে গেল। আর তন্ময়ের বাবা সোহাকে রুমে নিয়ে গিয়ে মুখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করলেন।
এসময় তন্ময়ের মা তন্ময়ের আর সোহার চিৎকার শুনে তাড়াতাড়ি এসে তন্ময়ের রুমে ঢুকে দেখলেন তন্ময় ঘুমিয়ে গেছে। তাই সোহার রুম এ এসে ঢুকলেন। সোহার এই অবস্থা দেখে চিন্তাক্লিষ্ট মুখে সোহার পাশে বসে তন্ময়ের বাবাকে বললেন – এদিকেও সমস্যা, ওদিকেও সমস্যা হচ্ছে। কিছুতেই নার্স রা ওকে সামলাতে পারছেনা। আমি যে কি করবো? এখানে নিয়ে আসলে সবসময় দেখতে পারতাম, কিন্তু এখানে আনলেও তো ঝামেলা হয়ে যাবে। তখন তো সোহাও একমুহুর্ত থাকবে না। সোহার এসময় জ্ঞান ফিরলো, ও চোখ বন্ধ করে এসব শুনছিল।
তন্ময়ের বাবা বললেন, – লুকিয়ে কি করবো? আজ বা কাল তো জানবেই, এখন জানিয়ে দিলে হয়তো মেয়েটাই একটা সমাধান করে দেবে।
– না আরও কিছুদিন যাক… বলে তিনি থেমে গেলেন।
মিনহাজ সাহেব আর তিনি সোহার জ্ঞান ফিরেছে দেখে কথা বলা বন্ধ করে দিলেন।
সোহাও তখন কিছু জিজ্ঞেস না করার সিদ্ধান্ত নিল মনে মনে। তারপর উঠে বসলো।
তন্ময়ের মা ওকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললেন, আমি না করেছিলাম মা ওর পাশে একা না থাকতে। এই পর্যন্ত তুমি দুইবার আক্রান্ত হলে। জানিনা ও তোমাকে দেখে এমন করছে কেন। অথচ আমরা ভাবছিলাম ও…
তুমি এখন বিশ্রাম নাও। এলিসাও এ সময় দুধ নিয়ে রুম এ আসলো। তন্ময়ের বাবা মা ওকে বিশ্রাম নেওয়ার কথা বলে চলে গেলেন। সোহা এলিসা কে বসিয়ে দুধের গ্লাস নিয়ে খেতে খেতে ভাবতে লাগলো যে “এ কোন রহস্যের সাগরে ডুব দিলাম, কি ঘটছে এখানে…. ”

চলবে

– মেহজাবিন মুন

২য় পর্বের লিংক……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here