ছন্দহীন পদ্য পর্ব -১৪+১৫

ছন্দহীন পদ্য
.
পর্ব_১৪
.
পরেরদিনই বিষয়টা জানতে পারে পদ্য। স্কুলে যাবার জন্য বের হয়েছে। বড়ো রাস্তায় এসে দেখতে পায়, মিরাজুল ইসলাম রোদে দাঁড়িয়ে আছেন। একটা সাদা চাদর গায়ে জড়ানো। সে সালাম করে চলে যাচ্ছিল৷ মিরাজুল ইসলাম তখন কাশতে কাশতে কাছাকাছি এলেন। পদ্য তাকিয়ে বললো, ‘শরীর খারাপ না-কি চাচা?’

‘হ্যাঁ জ্বর-কাশি আছে একটু’ তারপর একটু থেমে বললেন, ‘আস্তে আস্তে হাঁটো মা। তোমার সাথে কিছু কথা আছে। বাড়িতে বললে সবাই শুনবে। আমাদের ঘরে ডেকে নিলে তোমার চাচি শুনবে। তোমাদের ঘরে বললে তোমার বাবা-মা।’

পদ্য অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো, ‘কি বলবেন চাচা?’

তিনি ধীর পদে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বললেন, ‘পদ্য মা, তোমাকে আমি চিনি। তোমার মতো ভালো মেয়ে আর হয় না। তাছাড়া আমি নিজেও কথাগুলো শুনে বুঝেছি দোষটা অনিকের।’

পদ্য বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। তিনি মুচকি হেঁসে বলেন, ‘হ্যাঁ আমি গতকাল সন্ধ্যায় তোমাদের কথা শুনেছি। এখন হাঁটতে হাঁটতে আমার কথাগুলো মনযোগ দিয়ে শোনো মা।’

– ‘হ্যাঁ বলুন।’

– ‘তুমি নিশ্চয় এতক্ষণে বুঝে গেছো আমি অন্য পিতাদের মতো নই। অন্যকেউ হলে রাতেই চিল্লাচিল্লি শুরু করতো। আমি করিনি, উলটো চাই আমি যে জেনে গেছি, সেটাও যেন অনিক না জানে। জিজ্ঞেস করো কেন এমনটা চাচ্ছি।’

পদ্য তাকিয়ে বললো, ‘কেন?’

– ‘কারণ লজ্জা ভেঙে যাবে৷ লজ্জা ভাঙতে দেওয়া বিপদ। একবার ভেঙে গেলে শেষ। তখন আর কিছুই বাকি থাকে না। এখন সেও জানে তুমি বয়সে বড়ো, তাই কাউকে তার মনের কথা প্রকাশ করা লজ্জার।’

– ‘তা বুঝেছি চাচা। কিন্তু আমি তো এসবে নেই। আমাকে কেন বলছেন?’

– ‘হ্যাঁ, তা তো জানি তুমি এসবে নেই। কিন্তু মা, বাড়ির পাশে প্রেম-পিরিত অনেক জটিল বিষয়। মানুষ সেটা ভুলতে পারে না। যত তুচ্ছ করে দেখছো, বিষয়টা তত সহজ না। আমি সারারাত ভেবেছি। অনিক আসলে এই কারণেই শহরে থাকতে পারে না। সপ্তাহ যেতে না যেতেই চলে আসে। এটাই বাড়ির কাছে পিরিতের ফল৷ ভোলা মুশকিল হয়। তুমি লজ্জা পেও না। ব্যাপারটা সামাল দিতে হবে তোমাকেই। তাই তোমাকে এসব বলছি।’

– ‘আমার কি করতে হবে চাচা? আমি তো গতকাল ওকে বলেছি আশেপাশেই যেন আর না আসে।’

– ‘শুনেছি, এটা ভালো করেছো। কিন্তু তুমি বিষয়টা জেনে গেছো। সেটা এখন অনিক জানে। এখন তার ওইযে লজ্জা, সেটা আর নাই। এখন সামনাসামনি বলবে তোমাকে। ধীরে ধীরে তুমি নরম হতে পারো। সে মাফ চাইল। অথবা বললো এগুলো ভুলে গেছে। তুমি তখন আগের মতো চলাফেরা করবে। তখনই বিপদ হবে। সে ভুলতে পারবে না।’

– ‘আমার কি করতে হবে চাচা?’

– ‘তাকে টোটালি এড়িয়ে চলতে শুরু করো। না হলে মা লোকে জানলে তোমারও শরমের ব্যাপার হবে। যেহেতু তোমরা একসঙ্গে চলাফেরা বেশি করেছো। লোকে তোমাকে ছেড়েও কথা বলবে না। তোমার উচিত এরপর আবার যখন অনিক তোমাকে বুঝানোর চেষ্টা করবে। তুমি চ*ড় লাগাবে। মুখে থু থু দেবে। দরকার হয় জু*তাপে*টা করবে।’

– ‘কি বলেন চাচা এসব?’

– ‘হ্যাঁ মা, এই বুদ্ধি তোমাদের বয়সে মাথায় আসবে না। এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পারছো আমি গ্রামের আট-দশটা পিতার মতো না, বুঝতে পারছো তো? আমাকে বন্ধুর মতো মনে করতে পারো। আমি যে বুদ্ধি তোমাকে দিয়েছি সেটাই সবচেয়ে ভালো হবে। এই ব্যাপার তোমার চাচিকেও বলিনি। মহিলা মানুষ, দেখবে নিজের ছেলেকে রেখে তোমাকে দোষারোপ করতে শুরু করবে। দুই বাড়ির মাঝে দিনে কয়েকবার করে ঝগড়া-ঝাটি হবে। অনেক দিক ভেবে-চিন্তে তোমাকে বলেছি মা। অনিককে অন্যকেউ যতই শাসন করুক। কাজ হবে না। তুমি টাইট দিলে ওর কিছুই করার থাকবে না। তুমি ওকে বিন্দুমাত্র সুযোগ দেবে না। ধারে-কাছে গেলেই বলবে, লজ্জা করে না আপু ডাকো আবার এসব মুখে আনতে। এবং কল মেসেজ সবকিছু বন্ধ। আজীবনের জন্য ওর সাথে কথা বলো বন্ধ করো। না হলে তোমাকে বিপদে ফেলবে পাগলামি করে। একটা কথা মনে রাখবে মা। মেয়েরা এই জায়গায়ই ভুল করে। যে ছেলেকে ভালো লাগে না৷ এই ছেলে তোমাকে যদি পছন্দ করে। তাকে একটুও স্বপ্ন বা আশা দেখার সুযোগ দেবে না। শুরুতেই ভেঙে দিতে হয় তার স্বপ্ন। না হলে এই ছেলে এক সময় বিপদ হয়ে দাঁড়ায়। শ*ত্রু হয়। এ*সিড মা*রে। আর নারী জাতিরটার অভ্যাস হল পুরুষদের একটু আশা দিয়ে দিয়ে চারপাশে ঘুরানো৷ এভাবে বিপদ আনে নিজেরই।’

– ‘কিন্তু চাচা আমি আপনার ছেলেকে কোনো আশা দেইনি। কালই মাত্র বুঝেছি ওর ভেতরে অন্যকিছু। সঙ্গে সঙ্গে কড়া কথা বলেছি।’

– ‘চাচা এজন্যই তো মা অনেক খুশি হয়েছি। কাউকে বলিনি কেন? অনিকের মাও জানুক চাইনি। বাইরে এসে তোমাকে বলেছি। যাতে তোমাকে কেউ কিছু না বলে। কিন্তু মা তোমারও তো কম বয়স। কিভাবে অনিককে সামলাবে সেই বুদ্ধিও তো থাকতে হবে। তাই বললাম। এরপর সামনে এলেই সর্বোচ্চ অপমান করবে। যাতে কোনো প্রশ্রয়ই না পায়।’

– ‘আপনি ঠিকই বলেছেন চাচা। আমি এরকমই করবো।’

– ‘শুধু অনিক না মা। যেকোনো ছেলের ব্যাপারে। তুমি যাকে পছন্দ করো না। যদি দেখো সে তোমাকে অন্যচোখে দেখে।তাকে কোনো প্রশ্রয় দিতে নাই। কারণ এর শেষ ফলাফল হলো সে তোমার জন্য হু*মকি হবে, শ*ত্রু হবে।
আরেকটু ক্লিয়ার করে বলি। ধরো অনিক তোমার জন্য পাগল হয়ে গেল। শরম-লজ্জা ভুলে কাউকে না মেনে পাগলামি শুরু করলো। সবাই জেনে গেল৷ তখন কি হবে ভাবো? ভাবো তোমার জন্য বি*ষ খেতে চাচ্ছে। তখন এলাকার মানুষ কি বলবে? ঠিকই বলবে দেখতাম সারাক্ষণ এক সঙ্গে থাকতো। মেয়েটারও দোষ আছে। এক হাতে তালি লাগে না। বিষয়টা তোমার জন্যও খুবই অসুবিধা হয়ে দাঁড়াবে৷ চাচা এসব জানি। মেম্বার ছিলাম এলাকায় দুইবার মা। এলাকার সবার রান্নাঘরের পর্যন্ত খবর জানি। দশ বছরে কত বিচার করলাম। কত পচা কাজ দেখেছি, জেনেছি, বুঝেছি। এখন বুঝি কোন ঘটনা শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যাবে। এখনই যদি অনিককে শক্তভাবে তাড়িয়ে দিতে না পারো। ভবিষ্যতে অনিকের তো জীবন নষ্ট হবেই, সাথে তোমারও।’

পদ্য সেদিন প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়৷ সত্যিই তো লোকে তাকেও ছেড়ে কথা বলবে না৷ ব্যাপারটা জানাজানি হলে বিপদ হবে৷ অনিকও তখন বাচ্চা ছেলে না। অনার্সে পড়ে। সবাই বিষয়টা সিরিয়াসলি নেবে। পদ্য শুকনো ঢোক গিলে বলেছিল,

– ‘বুঝেছি চাচা। আমি ওকে আর আশেপাশেও আসতে দেবো না।’

মিরাজুল ইসলাম ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ‘যাও মা, আর কোনো অসুবিধা হলে চাচাকে বলবে।’

স্কুলে গিয়ে পদ্যের পুরোদিন কেটে যায় এই বিষয়টা ভেবে। অতীতের সকল ঘটনা নতুন করে ভাবতে গিয়ে অবাক হয়। কেন সে বুঝতে পারেনি আগে? অনিকের অনেক আচরণই তো ছিল সন্দেহ করার মতো। তবুও পদ্যের কখনও সেসব ভাবনা মাথায় আসেনি। অনিকেরও সবকিছু এত গোছানো ছিল যে বুঝলেও চিন্তা ঘুরিয়ে দিত তার অন্যদিকে। স্কুলে আসার পথে মিরাজুল ইসলামের কথাবার্তা শুনে পদ্য এই প্রথম বুঝতে পারে অনিক তার বাবার বুদ্ধিই পেয়েছে। ছুটির পর বাড়ি ফিরছে। পুকুর পাড়ে এসে দেখে উঠানে চেয়ারে মিরাজুল ইসলাম বসা। সেই সাদা চাদর গায়ে জড়ানো। তখন উনি দু’বার মেম্বার হয়ে চেয়ারম্যান হবার জন্য নির্বাচনে দাঁড়াবেন। সেই প্রস্তুতিই চলছিল। মতিন মাস্টারও পূর্ণ সমর্থন দেন তাকেই। পদ্য ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখে অনিক রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তার দিকে হাসি হাসি মুখে তাকাচ্ছে। পরনে ব্লু কালার গেঞ্জি। হাতে কালো ঘড়ি। মাথাভর্তি ঘন কালো চুল। ফরসা মুখে বেশ কিছু লাল লাল ব্রণ উঁকি দিচ্ছে। অনিক তাকে দেখেই ছাদ থেকে নেমে আসছিল। পদ্য দ্রুত পদে ঘরে চলে যায়। জানালা দিয়ে তখন তাকিয়ে দেখে মিরাজুল ইসলাম অনিককে দাঁড় করিয়েছেন। শান্ত গলায় বললেন, ‘অনিক কোথায় যাও?’

– ‘পদ্য আপুদের ঘরে, কেন আব্বা কোনো দরকার?’

– ‘দরকার না, তবে কথা হলো প্রতি সপ্তাহে বাড়িতে আসার কি খুব দরকার? এভাবে তো পড়ালেখা হয় না। শহরে গেছো। থাকবে, পড়বে। গ্রামে এত ঘন ঘন আসার কি আছে?’

– ‘আমার ইউটিউবের জন্য রেকর্ড করতে হয় আব্বা।’

– ‘এসব রঙঢঙ করে হইব? পড়ালেখায় মনযোগ দাও। পদ্য আপু, পদ্য আপু যে সারাদিন করো। সে দেখছো স্কুলে পড়ায়। এভাবে শহর-বাড়ি আসা-যাওয়া করলে জীবনে কিচ্ছু করতে পারবে না।’

– ‘বুঝেছি আব্বা, এখন যাই আমি?’

– ‘যাও।’

পদ্য পুরো ব্যাপারটা দেখেছে। অনিক আসছে দেখে সত্যিই বিরক্ত হচ্ছিল। বিছানায় বসে রাগে ফুঁসছে। ঘরে তখন কেউ নেই৷ মতিন সাহেব বাইরে। তার মা শাক তুলতে গিয়েছেন বাড়ির পেছনে। অনিক রুমে এসেই পাশে বসে ঠোঁট টিপে হেঁসে বললো, ‘ম্যাডামের রাগ কি এখনও কমেনি? ভয়ে তো সকালেও আসিনি। সারাদিন প্রচণ্ড মিস করেছি। কি যে অস্থিরতায় কেটেছে পুরোটা দিন। তোমাকে কিভাবে ম্যানেজ করবো ভেবেই পাচ্ছিলাম না।’

পদ্য কিছু না বলে স্থির চোখে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইল। অনিক ওর সামনে গিয়ে হেঁসে বললো, ‘কি হলো চুপচাপ কেন? তোমার রাগ কিন্তু আমি কমিয়ে দিতে পারি। একটা টেকনিক আমার জানা আছে’ বলে সে হাতের মুঠো খুলে বললো, ‘এই দেখো সুপারি, এখন তুমি সুপারি খাবে, এরপর আমি নিজের কথাগুলো বলবো। তুমি সুপারি মুখে চিবোতে চিবোতে শুনবে। সুপারি খাওয়া অবস্থায় মানুষ রাগ করতে পারে না। এই নাও খাও।’

পদ্য সুপারি হাতে নিয়ে ছুড়ে ফেলে বললো, ‘অনিক তোমাকে কিন্তু বলেছিলাম আমার ধারে-কাছেও না আসতে।’

অনিক ওর পাশে বসে বললো, ‘তুমি যদি চাও তাহলে আমি এখন থেকে নাম ধরে ডাকবো, আপু ডাকবো না। অথবা অন্যদের সামনে আপু ডাকবো, আমরা একা থাকলে আপু বাদ।’

পদ্য বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বললো, ‘কেন?’

– ‘কারণ ভালোবাসি। প্রচণ্ড ভালোবাসি। আমি জানি বয়সে বড়ো হলে সমাজ ব্যাপারটা ভালোভাবে নেয় না। কিন্তু পড়াশোনা করে জেনেছি রাষ্ট্র কিংবা আমাদের ধর্মে বয়স কোনো সমস্যা না। বিয়ে করা যাদেরকে হারাম। তাদের তালিকায়ও তুমি পড়ো না। বয়সে বড়ো বলে আপু ডাকি। এর বাইরে তো তুমি আমার রক্তের সম্পর্কের কেউই না।’

– ‘অনিক এসব বলতে তোমার লজ্জা করছে না? আমার ঘেন্না লাগছে শুনে৷ আর ধর্ম টানছো কোন মুখে তুমি? এই নোংরা মুখে এসব টানো কোন সাহসে? ধর্মের কথা যে বললে। আমাকে যদি বিয়ে করা জায়েজ হয়। তাহলে আমার কাছেই তো তোমার আসা ঠিক না। তোমার সামনে আমার পর্দা করতে হবে।’

অনিকের চোখ খুশিতে ঝিলিক দিয়ে উঠলো। সে মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে বললো, ‘ঠিক আছে, তোমার সামনেই আসবো না আর আমি। তবে কথা দাও আমাকে বিয়ে করবে? আমি অনার্স শেষ করেই বিয়ে করবো। করবে বলো? তাহলে আমি আর তোমার আশেপাশেই আসবো না। বিয়ের আগপর্যন্ত দূরে থাকবো।’

পদ্য ওর দিকে তাকিয়ে কিছু করতে পারে না। আরও কড়াভাবে কিছু কথা বলা দরকার। অপমান করা দরকার। মিরাজুল ইসলামের বুদ্ধিটা তার ভালো লেগেছিল। কিন্তু অনিক সামনে আসতেই সে এতটাও কঠোর হতে পারছে না। তবুও কৃত্রিম নিষ্ঠুরতা গলায় এনে বললো, ‘ঘেন্নায় তোমার মুখে আমার থু-থু দিতে ইচ্ছা করছে, এখনই আমার সামনে থেকে যাও। না হয় চা*ড় মারবো, জু*তাপে*টা করবো।’

অনিক আহত নয়নে দীর্ঘ সময় তার দিকে তাকিয়ে থেকে বলেছিল, ‘কেন? আমি কি বয়সে ছোট হয়ে অপরাধ করেছি? বয়সে ছোট হওয়া কি অপরাধ?’

– ‘যে মুখে আমাকে এতদিন আপু ডেকেছো, সে মুখে এসব বলতে লজ্জা করে না?’

অনিক মেঝেতেই হাঁটু গেড়ে বসা ছিল। আচমকা পদ্যের কোলে মাথা রেখে বললো, ‘ডাকবো না আর আপু, তুমি আমার পদ্য, আমার পদ্মফুল। প্লিজ আর রাগারাগি করো না।’

পদ্য চুল ধরে টেনে সরানোর চেষ্টা করে বললো, ‘অনিক বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু । মাথা তুলো, হঠাৎ আম্মু চলে আসবে।’

– ‘আসলে আসুক। পৃথিবীর সবাই জানুক। জানলে ভালো, এরপর মারুক, ধরুক না হয় বিয়ে পড়িয়ে দিক।’

– ‘বেয়াদব কোথাকার, তোমাকে চ*ড়-থা*প্পড় ছাড়া কিছুই দেবে না লোকে। তোমার কি বিয়ের বয়স হইছে?’

অনিক মাথা তুলে বললো, ‘এই বয়স-টয়স আবার কি পদ্য? মানুষ এত ছক অনুযায়ী চলতে চায় কেন? সবার জীবন কি একই সিলেবাস অনুযায়ী চলতে হবে? মানুষের জীবন হবে ছন্নছাড়া, নিয়মকানুন ছাড়া, সংবিধান, রীতি-নীতি ছাড়া। মানুষ আসলে কি কখনও ভেবে দেখেছো তুমি?’

– ‘পাকনামি আলাপ করো না এখন অনিক। ঘর থেকে বিদায় হও। দু’একটা বই পড়ে নিজেকে পণ্ডিত মহাজ্ঞানী ভেবো না৷ এখান থেকে বের হয়ে যাও বলছি।’

পদ্যের ডান হাত ধরে সে কাতর হয়ে বললো,

– ‘আচ্ছা চলে যাব। আসবো না আর। শুধু বলো আমাকে বিয়ে করবে? কয়েক বছর কেবল অপেক্ষা করতে হবে তোমার।’

পদ্য ঠিক বুঝতে পারছিল না কি করবে। মিরাজুল ইসলামের কথা তার পুরোপুরি মাথায় আছে। এবং সত্যিই বিশ্বাস করে কঠোর হওয়া ছাড়া উপায় নেই। তবুও ছেলেটাকে ভেতর থেকে নিজের অজান্তেই কেমন যেন সম্মান করে সে। চ*ড় কিভাবে মারবে? পদ্য শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে প্রস্তুত করে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ‘তোমার বেয়াদবি অনেক সহ্য করেছি অনিক। ঘর থেকে বের হও। আমার হাত ছাড়ো বলছি, ছাড়ো।’

অনিক হাত ছেড়ে সামনে দাঁড়িয়ে রসিকতা করে বললো, ‘দেখো আমি তোমার থেকে লম্বা। তারমানে আমি বড়ো৷ বয়স দেখা যায় না৷ সেটা অদৃশ্য। কিন্তু আমাদের দৈহিক গঠন দেখা যায়। সেটা দৃশ্যমান।’

– ‘তুমি কি যাবে অনিক?’

– ‘কোথায় যাব? কিছু তো বলো পদ্য। আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি। ডায়েরিতে যা পড়েছো সবই আমার মনের কথা।’

পদ্য বুঝতে পারছে। হৃদয়হীন হতে হবে৷ নিষ্ঠুরতার চূড়ান্ত কিছু না করলে হবে না। সে আচমকা প্রচণ্ড জো*রে চ*ড় মারলো অনিকের ডান গালে। অনিক গালে হাত দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল ওর দিকে। পদ্য রূঢ় গলায় বললো, ‘ডায়েরির কথা আবার মুখে এনেছিস বদমাশ, চরিত্রহীন, লম্পট। তুই আমার বিশ্বাসের সুযোগ নিয়েছিস। অসুস্থ ঘুমন্ত এক মেয়ের গায়ে স্পর্শ করেছিস, চুমু খেয়েছিস। আমার পরিবারের মানুষও বিশ্বাস করতো তোকে। আর তুই বিশ্বাসের সুযোগে কি করেছিস? দিনের পর দিন নোংরা মন নিয়ে স্পর্শ করেছিস। মুখে আপু বলে ভেতরে পুষেছিস নোংরা চিন্তা! এখনও বলছি, আমার সামনে থেকে যা। জুতা হাতে নেয়ার আগে যা।’

– ‘কি বলো এসব?’

– ‘এখান থেকে যাবি না-কি জু*তাপে*টা শুরু করবো লু*চ্চা কোথাকার।’

অনিক সেদিন ঘর থেকে বিমর্ষ, বিধ্বস্ত অবস্থায় বের হয়ে গিয়েছিল। পদ্যের এখনও চোখের সামনে স্পষ্ট ভাসে অনিকের সেই করুণ অসহায় মুখটা। বালিশে মুখ গুঁজে পদ্য কান্নায় কেঁপে কেঁপে উঠে। মানুষটার সঙ্গে কি নিষ্ঠুর আচরণই না করেছিল সে। কতক্ষণ এই বদ্ধ ঘরে শুয়ে স্মৃতি রোমন্থন করেছে নিজেই জানে না। বাইরে থেকে দরজায় নক দিচ্ছে কেউ। সে তাড়াতাড়ি চোখটা মুছে নিল। বিছানা থেকে নেমে ওড়না ঠিক করতে করতে দরজা খুলে দেখে বারান্দায় তার বাবার সঙ্গে আতাই ঘটক আর মিরাজুল ইসলাম দাঁড়িয়ে আছেন।

__চলবে…
লেখা: জবরুল ইসলামছন্দহীন পদ্য
.
পর্ব_১৫
.
ইভা বেশ পালটে গেছে। সচেতনভাবেই কি তার এই পরিবর্তন? বিছানায় উঠে বসে বালিশের পাশ থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে টাইম দেখলো। ছয়টা এগারো বাজে। ‘হাই’ তুলে পালঙ্ক থেকে নেমে বাথরুমে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। নিজের কাছেই ভালো লাগছে চেহারা। ঘুম ঘুম মুখ। খোঁপা বাঁধা চুল। তবুও একগোছা গালে এসে পরেছে। অনিক ভাইয়ের উপন্যাসের অনামিকা মেয়েটার চুল কি এমন? হতেও পারে। মেয়েটাকে কিছুটা তার মতোই মনে হয়। ইভা নিজেও এখন চায় পুরোপুরি অনিক ভাইয়ের “ছন্দহীন কবিতা” উপন্যাসের অনামিকার মতো হতে। সমস্যা হলো পুরো উপন্যাসটা সে এখনও পড়েনি। বইমেলায় অনিক ভাই এই বইটা বের না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। দীর্ঘ কলেবরের মোটা বইটি কেবল বের হয়েছিল। ত্রিকোণ প্রেমের উপন্যাসটা অর্ধেক লিখে বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন। তাকে একদিন ডেকে নিয়ে বললেন, ‘ইভা, তোমার এখন থেকে আর আমার সামনে বসে উপন্যাসের অংশ পড়া লাগবে না। তাছাড়া প্রেমের উপন্যাসটা এবার বের করবো না। সমকালীন উপন্যাসও লেখা শেষের পথে। সেটুকু হোয়াটসঅ্যাপে দেবো তোমাকে। তুমি হোয়াটসঅ্যাপেই জানালে হবে।’

শেষ, এরপর থেকে অনিক ভাই ধীরে ধীরে পালটে গেলেন। তার সঙ্গে আগের মতো কথা বলেন না। বইমেলা শেষে জব নিয়েছেন। টিউশনি বাদ। এভাবেই চলছিল। গতকাল তাকে খাবার টেবিলে বললেন, ‘ভাবছি আবার “ছন্দহীন কবিতা” উপন্যাসটায় হাত দেবো ইভা। লেখা শুরু করে তোমাকে আবার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাবো। তেমন তাড়া নেই। অফিস থেকে এসে প্রতিদিন রাতে অল্প অল্প করে লিখে পাঠাবো।’

ইভা আগ্রহ নিয়েই বলেছে পাঠাতে। উপন্যাসটার শেষ জানতে চায় সে।
এতদিন অপেক্ষায়ই ছিল। ভীষণ ইচ্ছা করে সমাপ্তিটা জানার। অনামিকাই পাবে নায়ককে। এটাই তার বিশ্বাস। সবকিছু মিলিয়ে এটাই মনে হচ্ছে ইভার।
ক’মাস থেকে সে উপন্যাসের ওই অনামিকার মতোই তোয়ালে নিয়ে রোজ ভোরে ঘুম থেকে উঠে ছাদে যায়। ব্যায়াম করে। হাঁটে। খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। পাখির কিচিরমিচির শুনে। অনামিকা একসময় বই পড়তো না। শেষে বই পড়া শুরু করে। কবিতা পড়ে। প্রশান্তির জীবন। ভোরে সূর্য উঠলে রোদে গিয়ে চোখবুজে হাত বাড়িয়ে দাঁড়ায়। এটা ছিল অনামিকার রৌদ্রস্নান। চোখবুজে থাকে চোখে সূর্যের আলোয় ক্ষতি হবে তাই। ইভাও এখন অনামিকার মতো জীবন-যাপন করার চেষ্টা করছে। অনামিকার পুরো জীবনটাই যেন ভীষণ টানে তাকে। দাঁত ব্রাশ করে হাত-মুখ ধুয়ে ছাদে চলে এলো সে। ছাদে পাশের বাসার কয়েকটা পায়রা ছিল। তাকে দেখেই উড়াল দিয়ে অন্যদিকে চলে গেল। ইভা তোয়ালে বিছিয়ে নিল। সেখানে লম্বা হয়ে শুয়ে দু’পা খাড়া উপরে তুলে রাখে। তারপর দু’হাত নিয়ে বারংবার দু’পায়ের আঙুলে লাগায়।

অনিক ঘুম থেকে উঠলো সাতটার দিকে। দাঁত ব্রাশ করে জল খেয়ে বাইরে খানিক হাঁটতে বের হলো। এসে গোসল করে অফিসে যাবে। তার রুটিন অনেকটাই পালটে গেছে। সেবার বাবা-মা এসে ভাই-ভাবীর সঙ্গে যোগ দিলেন। তাকে বিয়ের জন্য অনেক বোঝালেন। রাজি হলেই ইভার পরিবারে আলাপ দেবেন। সে না করে দিয়েছে। বলেছে দরকার হয় জব করবে। তবুও বিয়ে করবে না। তারপরই মেলার পর জবটা নিয়ে নেয়। এখন এভাবেই চলছে তার জীবন। এসবের সঙ্গে লেখালেখি আর বই পড়াও চলছে। তবে কয়েক বছর পর আবার জব ছেড়ে দিয়ে পুরোদমে লেখালেখিতে মনযোগ দেবার ইচ্ছা আছে। বাইরে থেকে এসে গোসল করে অফিসের জন্য রেডি হয়ে নাশতার টেবিলে যায়। নাঈম, আফরা, ইভা বসে আছে। সে চেয়ার টেনে বসতে যাবে তখনই নাঈম বললো,

– ‘কিরে তোর পদ্য আপুর তো বিয়ে লেগেছে, দাওয়াত কি পেয়েছিস?’

অনিক অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থেকে ধীরে ধীরে চেয়ারে বসে বললো, ‘না তো, তোমাকে কে বললো?’

– ‘আম্মা ফোন করেছিল। ঘর-জামাই করে বিয়ে দিচ্ছে। অনুষ্ঠান-টুনুষ্টান নাই।’

– ‘ও আচ্ছা।’

আফরা নাঈমের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘তার পদ্য আপু আলাদা করে বলার মানে কি?’

– ‘তাদের যা গলায় গলায় ভাব ছিল জানো না তো, তাই মানে বুঝতে পারছো না।’

– ‘ও আচ্ছা।’

অনিক আর কোনো কথা বললো না। নিঃশব্দে নাশতা করে রুমে ফিরে এলো। অফিসে যাওয়ার জন্য ক্রিম কালার ফুলহাতা শার্ট ইন করে পরেছিল। এখন যেন হাঁসফাঁস লাগছে। টেনে বের করে নিল শার্ট। টেবিলে বসে চেয়ারে পা রাখলো। মুষ্টিবদ্ধ ডান হাত আস্তে-আস্তে টেবিলে আঘাত করছে। সিগারেট কোথায়? টেবিল থেকে নেমে বালিশের পাশ থেকে লাইটার আর সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে একটা সিগারেট ধরায়। চেয়ারে ধরে দাঁড়িয়ে কয়েক টান দিয়ে মনে হয় কি যেন একটা হচ্ছে না। ভেতরের অস্থিরতা কাটছে না। এবার চারটা সিগারেট নিল ঠোঁটে। লাইটার চেপে জ্বালিয়ে নিল চারটাই। বিছানায় গিয়ে চিত হয়ে পড়ে ঘন ঘন টানতে লাগলো।

নাঈম ঘড়ি হাতে দিয়ে আফরাকে বললো, – ‘যাই তাহলে?’

আফরা তোয়ালে বারান্দায় মেলে দিয়ে এসে বললো, ‘কেন যে আমার জব ছাড়ালে, বাড়িতে একা এখন একদম ভালো লাগে না। সারাদিন তোমাকে মিস করি।’

নাঈম এক হাত ওর পিঠের দিকে নিয়ে বাহুতে ধরে বুকে টেনে এনে বললো, ‘এখন আমার ভালো ঘুম হয় দেখেছো? তুমি প্রতিদিন এসে বসের গল্প করে করে আমার ঘুম নষ্ট করতে। তোমার বসের নজর ভালো না আগেই জানতাম। তাছাড়া শুনি প্রেমের বিয়ে টিকে না। স্ত্রী চাকরি করলেও ডিভোর্স হয় বেশি। সবদিকেই রিস্ক। মিষ্টি বউটাকে হারানোর ভয় বেড়ে গিয়েছিল।’

আফরা ফিক হেঁসে বললো,

– ‘তুমি একদম মেয়েদের মতো। এরকমও কি মানুষ হয়?’

– ‘তোমার মতো কি বউ হয় সবার?’

– ‘যাও তো অফিসে যাও, এখন ঢং করা লাগবে না।’

নাঈম ওর কপালে চুমু দিয়ে বের হয়ে গিয়ে আবার ফিরে এসে বললো, ‘এই শোনো, আব্বা আমাকে কেন যেন গতকাল কলে বললো এখন থেকে ইভাকে অনিকের সাথে আরও বেশি মিশতে বলতে।’

– ‘কি যে বলেন তারা। ইভা কি গায়েপড়া মেয়ে না-কি? ওকে এসব বললে অপমানবোধ করবে না?’

– ‘বলেছিলাম আব্বাকে। আমাকে উলটো বললো, আরে বলদ, সরাসরি বলতে হয় না-কি। তোর বউকে বলবি ইভাকে চা-টা বা যেকোনো কাজে অনিকের রুমে বেশি বেশি পাঠাতে। এভাবে করলেই হবে। সবকিছু কি শিখিয়ে দিতে হয়।’

আফরা ঠোঁট উলটে বললো,

– ‘কি জানি তাদের মাথায় কি ঘুরছে।’

– ‘হয়তো ইভাকে তাদের অনেক পছন্দ হয়েছে।’

– ‘আচ্ছা যাও তুমি। দেরি হয়ে যাচ্ছে।’

নাঈম বের হয়ে চলে গেল। আফরা ইভার রুমে এসে দেখে সে আয়নার সামনে বসে সাজগোজ করছে। ওর বিছানায় বসে বললো,

– ‘কিরে আজ ভার্সিটিতে যাবি না?’

– ‘না, তবে একটু পর বের হব। এক বান্ধবীর ভাইয়ের বিয়ের দাওয়াত দিছে৷ না গেলে মা*রবে ধরে।’

– ‘ভালো, এখন তুই একা একা ঘুরাঘুরি শিখে গেছিস। আগে অনিক টিউশনি থেকে অবধি গিয়ে নিয়ে আসতো।’

– ‘সে তো অনেক আগের কথা আপু। তোমার দেবর প্রথম প্রথম আহ্লাদ দেখিয়ে টিউশনি থেকে আনতে যেতেন৷ হঠাৎ একদিন কি করেছেন জানো?’

– ‘কি?’

– ‘এক রিকশাওয়ালার নাম্বার দিলেন আমাকে। সে ওই রাস্তায়ই চালায় আরকি। তো আমি বের হওয়ার আগে কল দিলেই গিয়ে আনবে। উনি আর যেতে পারবেন না।’

– ‘তোকে ও তো এখন ওর রুমে বেশি যেতে দেখি না।’

– ‘ওমা আমি অকারণ উনার রুমে গিয়ে উঁকিঝুঁকি মারবো না-কি? আগে উনি ডাকতেন, সামনে বসে পড়তে বলতেন। বইমেলার আগে একদিন বললেন সেটাও আর লাগবে না।’

অনিক কেন এগুলো করেছে ইভা বুঝতে না পারলেও, আফরা বিষয়টা বুঝতে পারছে। তার শ্বশুর-শাশুড়ি আসার পর ওদের বিয়ের ব্যাপারে কথা উঠায়ই হয়তো অনিক ইভার থেকে নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নিয়েছে। খানিক পর ইভার কল এলো, রিসিভ করে, ‘আসছি আসছি, এইতো বের হচ্ছি’ বলে ফোন রেখে আফরাকে বললো, ‘গেলাম আপু।’

ইভা বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আফরা দরজা লাগিয়ে আসার পথে হঠাৎ শুনলো অনিকের বাথরুমে পানির শব্দ। ট্যাপ ছেড়ে রেখে অফিসে চলে গেল না-কি দেখার জন্য সে গিয়ে অবাক হয়ে যায়। বাথরুমের দরজা খোলা। অনিক হাঁটু গেড়ে বসে ট্যাপের নিচে মাথা ধরে আছে। ঘাড় বেয়ে তার অফিসের শার্ট ভিজে একাকার। আফরা এগিয়ে গিয়ে বললো, ‘কি হয়েছে অনিক? মাথায় পানি দিচ্ছ কেন?’

– ‘বমি পাচ্ছিল। বিছানা থেকে উঠে এসে এখন অনেক চেষ্টা করেও বমি আসছে না।’

– ‘হঠাৎ করে কি হলো? তুমি তো অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নাশতা করতে বসেছিলে। অফিসে যাওনি কেন?’

সে মাথা না তুলেই রূঢ় গলায় বললো, ‘রেডি হলেই কি অফিসে যাওয়া লাগবে? ইচ্ছা হইছে রেডি হয়েছি। পরে ইচ্ছা হইছে যাব না, তাই যাইনি। আমার জীবনে আমিই জমিদার, রাজা-বাদশা, প্রেসিডেন্ট..।’

‘পাগলের মতো কি বলছো এসব’ বলে
আফরা বাথরুমে ঢুকে ট্যাপ বন্ধ করে ওর হাত ধরে বললো, ‘এভাবে মাথায় পানি দিলে তো অসুস্থ হয়ে যাবে।’

অনিক লাল টকটকে চোখ তুলে তাকিয়ে বললো, ‘মাথা ঘুরছে ভাবি।’

– ‘চলো বিছানায় চলো। হঠাৎ মাথা ঘুরছে কেন?’

অনিক কোনো জবাব দিল না৷ আফরা তাকে নিয়ে এসে বিছানার দিকে তাকিয়ে আরেকবার বিস্মিত হয়ে বললো, ‘আরে এ কি অবস্থা! বিছানায় এত অ্যাশ কোত্থেকে এলো? আর চারদিকে জর্দার মতো এগুলো কি?’

অনিক বিছানায় লম্বা হয়ে পড়ে আচ্ছন্ন গলায় চোখবুজে বললো,

– ‘অ্যাশ পড়েছে সিগারেট থেকে। সিগারেট টানতে টানতে হঠাৎ মুখে পুরে চিবোতে শুরু করলাম। বালের সিগারেট টানতে ভালো, খেতে না, তাই মুখ থেকে ফেলে দিয়েছি। সেটাকেই বলছো জর্দার মতো।’

– ‘মাতালের মতো কি বলছো তুমি অনিক? আর মাথা না মুছেই বিছানায় শুয়ে গেলে কেন? উঠো, মাথা মুছে নাও। বিছানা পরিষ্কার কর‍তে হবে।’

– ‘রুম থেকে বের হয়ে যাও ভাবি। এত জোরে কথা বলো কেন? মাথা ধরার সময় কেউ জোরে কথা বললে তাকে আমার গ*লা টিপে মে*রে ফেলতে মন চায়।’

– ‘আশ্চর্য! তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছো কেন? কি হয়েছে তোমার।’

– ‘রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলছি না? কানের কাছে এত আশ্চর্য আশ্চর্য বলে চেঁচামেচি শুরু করেছো কেন?’

– ‘আমি রুম থেকে বের হয়ে গেলে বিছানা পরিষ্কার করবে কে? আর তুমি মাথা মুছে ঘুমাও।’

– ‘সব যেরকম আছে সেরকম থাকবে। বিদায় হও, আমার রুমে আমি রাজা।’

– ‘আচ্ছা তোমার কি হয়েছে বলো তো অনিক?’

বিছানা থেকে উঠে গেল সে। আফরার দিকে লাল টকটকে চোখে তাকিয়ে বললো ‘প্রশ্নের যন্ত্রণায় আর শান্তিতে ঘরে থাকা গেল না বা*ল। এজন্য বিয়ে-শাদির পক্ষে আমি নাই। রুমে একটা মেয়ে মানুষ মানেই প্যানপ্যান।’ কথাগুলো বলেই সে দরজা খুলে বাইরে চলে গেল। আফরা নির্বাক হয়ে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইল।
__চলবে…
লেখা: জবরুল ইসলাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here