#ছায়া_সঙ্গিনী
#পর্ব-১৯
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
সূর্য মামা তার তেজস্ক্রিয় রশ্মি নিয়ে, ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে পশ্চিম দিকে।তাই এবার আমাদের বের হবার পালা।যাত্রা ছোট আপু মানে রাহাত এর ছোট বোনের বাসায়।তাই তৈরি হয়ে জিহানদের রুমে এসেছি।জিহান ঘুমরো মুখে বসে আছে আমরা চলে যাচ্ছি বলে।জামান কিছুক্ষণ আগে স্কুল থেকে ফিরলো।জিহান এর বড় ভাই জামান। এবার পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে, বেচারা সেই সকাল স্কুল, কোচিং, প্রাইভেট পড়ে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরেছে। কিন্তু বিশ্রাম না নিয়ে আমাদের পিছু পিছু ঘুরছে যেন আমরা না যাই। ওদের এরকম কান্ড দেখে আমার খুব মায়া হলো তাই রাহাত কে বললাম,
– আজকে থেকে যাই ওরা এতো করে বলছে, আমার খুব খারাপ লাগছে ওদের ছেড়ে চলে যেতে।
রাহাত তখন ওদের কাছে গিয়ে আদুরে গলায় বললো,
– মামা আবার ছুটি পেলে তোমাদের মামি কে নিয়ে আসবো কেমন?জানো তো তোমাদের খালামণির বাসা থেকে আগামীকাল ঢাকায় ফিরে যেতে হবে।তোমরা মা শা আল্লাহ অনেক বিচক্ষণ বাবা আমার। তোমরা নিশ্চয়ই এখন বুঝতে পেরেছো মামার সমস্যা তাই না?
ওরা দুজন কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললো,
– আচ্ছা ঠিক আছে, তবে আবার আসবে কিন্তু।
তারপর রাহাত ওদের কপালে চুমু এঁকে দিয়ে, দুজনের হাতে পাঁচশত টাকার দুটো নোট গুঁজে দিয়ে বললো চকলেট খাবে কেমন?
তারা বড়দের মতো করে বলো, না না আমাদের টাকা লাগবে না। ওদের দুজনকে দেখে আমার শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল, আমার মামা,আন্টিরা যখন যাওয়ার সময় হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে বলতো চকলেট কিনে খেও তখন এরকম ভাবে নিতে চাইতাম না। কিন্তু পরে ঠিকই অনেক খুশি হতাম।আর পরিকল্পনা করতাম কি কি ক্রয় করা যায় এই টাকা দিয়ে। শৈশবের স্মৃতি সত্যি ভুলার মতো নয়।
_______
অতঃপর, ছোট আপুর বাসায় এসে পৌঁছালাম। আপুর এক ছেলে এক মেয়ে।বড় মেয়েটা খুব কম কথা বলে, আমি আসার পর শুধু সৌজন্য মূলক সালাম দিয়ে কেমন আছি জিজ্ঞাসা করেছে। এছাড়া আমি কিছু জিজ্ঞাসা করলে বলে না হয় বলে না। ঠিক এরকম ছোট বেলায় আমিও ছিলাম। খুব শান্ত সিষ্ট, এর অনেকে প্রশংসা করতো আবার অনেকে আম্মুর কাছে বিচার দিতো। কেন কথা বলি না চুপচাপ বসে থাকি। আম্মুর ফোনে কল এসে কেটে যেত তাও রিসিভ করে কথা বলতাম না। এতে আম্মু খুব বকাঝকা করতো। তা-ও কথা কম বলতাম। কথা কম বললে মানুষ অহংকারী মনে করে, অথচ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, চুপ থাকা পরিশ্রম বিহীন ইবাদত। আলহামদুলিল্লাহ।
আপুদের টিন সেট ঘর, কিন্তু টিন সেট হলেও খুবই সুন্দর। ঘরটায় সাতটা রুম!প্রত্যেকটা রুমে ফার্নিচার এ ভরপুর। একটা বিল্ডিং এর থেকে কোন অংশে কম নয়। শুনেছি দুলাভাই ব্যবসায় করেন, কিন্তু কিসের ব্যাবসায় আমার জানা নেই।
ছয় নাম্বার রুমটায় আমাদের থাকতে দেওয়া হয়েছে। খুবই সুন্দর রুমটা, গ্রামে এরকম ঘর হলে যান্ত্রিক শহরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তবে একটাই সমস্যা গ্যাস সংযোগ নেই এখানে। না হয় সব কিছু দিয়ে শহর থেকে বেটার।
রাহাত জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে, মৃদু বাতাস প্রবেশ করছে জানালা দিয়ে তাই আমিও জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমাকে দেখে রাহাত পিছনে চলে যায়, তার প্রশস্ত বুকের সাথে আমার পিঠ দূরত্ব বিহীন দাঁড়ায়। তারপর ধীরে ধীরে নিজের বাম হাতটা আমার পেটের উপর জায়গা করে নেয়। আমি জানালার গ্রিলে হাত রেখে বাহিরে তাকিয়ে আছি। চারিদিকে অন্ধকারে ডুবে আছে, চাঁদের আলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না তেমন। কাছের কয়েকটা গাছ দাঁড়িয়ে আছে,পাতা গুলো মৃদু দুলছে। রাহাত কথা বলা শেষ করে, আমার পিঠের চুল গুলো সাইটে সরিয়ে দেয়। তারপর, আমার গলায় তার ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। এবার দুই হাতে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
– তোমার কি মন খারাপ?
আমি মাথা নাড়িয়ে না বোঝালাম। আমাকে তার দিকে ঘুরিয়ে বললো,
– তাহলে কথা বলছো না কেন?
আমি এবার তার গলা জড়িয়ে ধরে বললাম,
– আমার ছোট্ট বেবি চাই রাহাত! দেবে আমাকে বেবি? আমার খুব ইচ্ছে, আমার বেবি কে গর্ভে ধারণ করে, একটা মায়ের আনন্দ কষ্ট গুলো অনুভব করার। দিবে সেই অনুভব উপলব্ধি করার অধিকার?
রাহাত আমার গাল দুটো ধরে বললো,
– আয়রা মেহেনূর? আমাকে কি তোমার নিষ্ঠুর,পাষান মনে হয় বলো তো? এভাবে কেন বলছো তুমি? আমার ইচ্ছে হয় না আধো আধো কন্ঠে বাবা ডাক শোনার, একটা ছোট্ট শরীর’কে আদরে আদরে ভরিয়ে দেওয়ার। তাহলে এভাবে কেন বায়না ধরতে হবে আমার কাছে? কোন সুন্দর উপন্যাসের মতো করে, চাইলে তুমি তো আমাকে সারপ্রাইজ দিতে পারতে। কোন এক দিনে আমি যখন ক্লান্ত হয়ে অফিস থেকে ফিরতাম তখন তুমি লজ্জা মাখা কন্ঠে বলতে এই নাও তোমার সারপ্রাইজ! তখন ডাক্তারের দেওয়া রিপোর্ট টা খুলে দেখতাম আমি! রিপোর্ট টা দেখে পৃথিবীর সমস্ত সুখ অনুভব করতাম আমি। তোমাকে আদরে আদরে পাগল করে দিতাম। তোমার শরীরের যে স্থানে তার অস্তিত্ব ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে সেখানে কান পেতে তার অস্তিত্ব বোঝার চেষ্টা করতাম আমি।আর কিছু বলতে হবে এই ব্যাপারে?
আমি মুচকি হেসে জরিয়ে নিলাম তাকে, তার লোমশ বুকে অধর দুটি ছুঁয়ে দিলাম। এই স্থানে যেন সর্ব সুখ নিহিত রয়েছে। এখানে থাকলে কোন কষ্ট ছুঁতে পারবে না আমায়।
সেও একই ভাবে জড়িয়ে নিলো আমায়। তারপর দুজন দুজনাতে মত্ত হয়ে গেলাম। সর্ব সুখের ভেলায় ভাসতে ভাসতে ঘুম নামক আরেকটি সুখে পারি দিলাম।
______
মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। খুব বড় দুঃস্বপ্ন দেখার কারণে। রাহাত গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে, তাই ডাকলাম না। তাছাড়া খারাপ স্বপ্ন কাউকে বলতে নেই।
আমি দ্রুত উঠে বসলাম।বাম পাশে থুতু নিক্ষেপ করে, আল্লাহ তা’আলার নিকট শয়তানের অনিষ্ট হতে আশ্রয় প্রার্থনা করলাম।
আবু কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“ভালো স্বপ্ন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে আর খারাপ স্বপ্ন হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং কেউ যদি ভীতিকর দু:স্বপ্ন দেখে তাহলে সে যেন বাম পাশে থুথু নিক্ষেপ করে এবং আল্লাহর নিকট শয়তানের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চায়। তাহলে শয়তান এই দু:স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করবে না।”
(সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৬৫৮৩)
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন:
“যদি তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে যা সে পছন্দ করে না, তাহলে তিনবার বাম দিকে থুথু দেবে। আর তিন বার শয়তান থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় চাবে (অর্থাৎ আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম পাঠ করবে।) আর যে পার্শ্বে শুয়েছিল, তা পরিবর্তন করবে। (অর্থাৎ পার্শ্ব পরিবর্তন করে শুবে)।”
(সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-২২৬১
আবূ হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন:
“তোমাদের কেউ যদি অপছন্দনীয় কিছু স্বপ্ন দেখে তাহলে সে যেন উঠে সলাত আদায় করে আর মানুষের নিকট সে (স্বপ্নের) কথা গোপন রাখে।”
(সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর: ৫৭৯৮ অধ্যায়ঃ হাদিস একাডেমি)
আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন:
“যখন কেউ ভাল স্বপ্ন দেখে-যা সে পছন্দ করে-তাহলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। সুতরাং সে যেন এ ব্যাপারে আল্লাহর প্রশংসা করে (অর্থাৎ আল হামদু লিল্লাহ পাঠ করে) এবং তা মানুষকে বলে। আর যদি অন্য কিছু দেখে-যা সে অপছন্দ করে-তাহলে তা শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং সে যেন এর অনিষ্ট থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং এটি কারো নিকট আলোচনা না করে। তাহলে তা তার কোন ক্ষতি করবে না।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৬৯৮৫, মুসনাদে আহমদ- ৭০৪৫)
অনেকে না বুঝে যার-তার কাছে স্বপ্নের বিষয় বলে বেড়ায়। এতে সে নিজেই নিজের ক্ষতির পথ প্রশস্ত করে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘স্বপ্নের ব্যাখ্যা যেভাবে করা হয়, সেভাবে তা বাস্তবায়িত হয়। তোমাদের কেউ যখন স্বপ্ন দেখে, সে যেনো আলেম বা হিতাকাঙ্ক্ষী ছাড়া কারো কাছে তা বর্ণনা না করে। (মুসতাদরাক হাকেম : ৪/৩৯১)
প্রখ্যাত স্বপ্নবিদ আল্লামা ইবনে সিরিন (রহ.) তাঁর বিখ্যান্ত ‘তাবিরুর রুইয়া’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন : ‘স্বপ্নের ব্যাখ্যাকারীদের জন্য কোরআনের তাফসিরের জ্ঞান, রাসুল (সা.)-এর হাদিস সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান, আরবি ও অনারবি বিভিন্ন ভাষার শব্দের বিবর্তন সম্পর্কে অবশ্যই জ্ঞান থাকতে হবে। স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানার জন্য বুজুর্গ, সূক্ষ্ম জ্ঞানের অধিকারী ও সুসাহিত্যিক হওয়া জরুরি। এ ছাড়া যিনি স্বপ্নের তাবির বা ব্যাখ্যাদানকারী হবেন, তাঁর সার্বিক অবস্থা ভালোভাবে জানা থাকতে হবে। সব সময় সত্য পথে চলতে হবে। তাহলে আল্লাহপাক বিশেষ অনুগ্রহে তাঁকে সঠিক পথ প্রদর্শন করবেন। তাঁর জবান (মুখ) সত্য ও নেক হতে হবে। এর ফলে আল্লাহপাক তাঁকে বিশেষভাবে সাহায্য করবেন। তাঁর চিন্তাও হতে হবে সৎ ও স্বচ্ছ। খাবার হতে হবে হালাল। মোটেও অনর্থক কথা বলা যাবে না এবং সব ধরনের পাপ থেকে নিষ্কলুষ হতে হবে। তাহলে তিনি জ্ঞানী ও নবীদের প্রকৃত উত্তরসূরি হিসেবে গণ্য হবেন। সুতরাং যার তার কাছে স্বপ্নের বিবরণ বলার থেকে বিরত থাকুন।
________
এক সপ্তাহ পর,
মাকে সঙ্গে করে ঢাকায় ফিরে এসেছি আমরা।এখন থেকে আমি রাহাত মা এখানেই কোয়ার্টারে থাকবো। রাহাত অফিসে চলে গেছে,আর আমি পেট ব্যথায় কঁকিয়ে উঠছি খনে খনে। তবে আজকে পেটের ব্যাথা থেকে মনের ব্যাথাটা বেশি!যার কারণে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে,,,,
#ছায়া_সঙ্গিনী
#পর্ব-২০
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
সন্ধ্যায় রেস্তোরাঁয় যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম আমরা ছয় জন।ঢাকায় কোয়ার্টারে আসার পর রাহাতের কলিগ এবং তাদের বউ’রা ট্রিট এর জন্য ধরে রাহাত কে। বিয়ে করেছে এতো মাস হয়ে গেছে অথচ তাদের মিষ্টি পর্যন্ত খাওয়ায়’নি রাহাত,সে নিয়ে তাদের অনেক অভিযোগ।তাই আজকে বের হওয়া।
অতঃপর,
ক্যান্টনমেন্ট এর কাছাকাছি একটা রেস্তোরাঁয় আসলাম।ওয়েটার মেনু কার্ড নিয়ে এলে, রাহাত তার কলিগ, হাসান আর সৈকত ভাই এবং তাদের স্ত্রী নাইমা আর মহুয়া ভাবীদের দিলেন তারা কি খাবেন অর্ডার করার জন্য। আমাকে কি খাবো জিজ্ঞাসা করলে আমি বললাম,
– ডিমের স্যান্ডউইচ আর ফ্রুট কাষ্টার্ড। রাহাত বললো আমি যা খাবো সেও তাই খাবে।
তারপর তারা খাবার অর্ডার করলো,
হাসান ভাইয়া,
– লাজানিয়া,ক্রয়স্যান্ট।
সৈকত ভাইয়া,
– ওনিয়ন রিং,প্যানকেক।
নাঈমা ভাবী,
– স্প্রিং রোল,মিটবল।
মহুয়া ভাবী,
– পিজা,ফ্রেঞ্চ ফ্রাই।
খাবার আনতে আনতে আমরা সবাই গল্প শুরু করি।কার বউদের সাথে কিভাবে পরিচয় হলো তারপর বিয়ে হলো এগুলো নিয়ে।এর মধ্যে সৈকত ভাইয়া আর মহুয়া ভাবীর বিয়েটা ছিল ইন্টারেস্টিং। সৈকত ভাইয়া যেমনটা বললেন,
– সৈকত ভাইয়া যখন ট্রেনিং এ কোন এক গ্রামে যায় এবং সেখানে তাঁবু বানিয়ে থাকে তখন ঐ গ্রামের সুন্দরী বালিকা মহুয়া কে দেখে পছন্দ হয় তার। কিন্তু সেনাবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী তাদের চাকরিতে জয়েন করার ছয় বছর পর বিয়ে করার অনুমতি দেওয়া হয়। সেই কারণে চাইলেও বিয়ে করতে পারে না মহুয়া কে। তবে গোয়েন্দা লাগিয়ে ঠিকই মহুয়ার খবর রাখে।এর চার বছর পর বিয়ে ঠিক হয়ে মহুয়ার। সেই খবর শুনে সৈকত ভাই বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় মহুয়া দের বাড়ি! মহুয়ার বাবা কিছুই রাজি নন। মহুয়ার বাবা তার পাটনার এক কাপড়ের ব্যবসায়ির সাথে বিয়ে ঠিক করে তিনি। পাত্রের বয়স ত্রিশের উর্দ্ধে! অথচ মহুয়ার বয়স পনেরো! মহুয়া প্রথম থেকেই এই বিয়েতে রাজি নয়।তাই বিয়ের প্রস্তাব পেয়ে এবং সৈকত কে দেখে পালিয়ে আসে সৈকতের সাথে! সৈকত বিয়ে করে নেয় মহুয়া কে! তবে সৈকতের পরিবার ছাড়া বিয়ের কথা কাউকে জানানো হয়নি।যখন সৈকতের অফিস থেকে বিয়ের অনুমতি দেওয়া হয়, তখন আবার নতুন করে বিয়ে করে তারা। বিয়ে করে অফিসে পেপার্স জমা দেয়।
এখন শুনেছি মহুয়া ভাবীর বাপের বাড়ির সবাই মেনে নিয়েছে বিয়েটা। আলহামদুলিল্লাহ।
______
ওয়েটার খাবার নিয়ে আসে, সবাই খাবার খেতে শুরু করলাম।প্রত্যেক স্বামী বউরা একে অপরকে খাইয়ে দিচ্ছে। পরিবেশটা খুবই আনন্দময় হয়ে উঠেছে। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটার মতো সুখ আর হয়না। একে অপরের প্রতি,মায়া, ভালোবাসা, বিশ্বাস,কেয়ার, শেয়ার সবকিছু থাকে তখন সুখের কমতি হয় না।
খাবার খাওয়া শেষে বসে বসে বিভিন্ন ধরনের মশলা চিবোচ্ছি তখন মহুয়া ভাবী বললেন,
– ওই লোকটা যে আর আসছে না?
নাঈমা ভাবী বললেন, কোন লোক?
– আরে ঐ যে খাবার দিয়ে যায়।
– একটু পর আসবে হয়তো।
তারা ফিসফিস করে কথা গুলো বলছিল তখন আমি শুনতে পেলাম।যাই হোক ওয়েটার আসে দশ মিনিট পর। তারপর রাহাত বিল দিতে গেলে মহুয়া ভাবী বলে উঠলো,
– ভাই এই লোক তো আমার বাকি খাবার দিলই না!আপনি এখনি টাকা দিয়ে দিচ্ছেন? এখন দিবেন না, দিলে আমার বাকি খাবার দিব না।
ওয়েটার সহ আমরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি, তখন ওয়েটার বললো,
– ম্যাম আমি তো আপনাদের অর্ডার করা সমস্ত খাবার সার্ভ করেছি।আপনারা তো মোট দশ আইটেম খাবার অর্ডার করেছেন,সব গুলোই তো দেওয়া হয়েছে।
মহুয়া ভাবী রেগে মেগে বললেন,
– কি বলছেন আপনি? আপনি তো আমার ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ই দিলেন না! আবার বলছেন সব দিয়েছেন?
এদিকে মহুয়া ভাবীর কথা শুনে আমরা বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। রাহাত ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বিল মিটিয়ে ওয়েটার কে বিদায় করলো। তারপর সৈকত ভাইয়া বললেন,
– মহুয়া তোমার পিজা আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই তো দেওয়া হয়েছে। তাহলে তুমি এসব কি বলছো? লোকটা এখন কি ধারণা করবে বলোতো?
– আমি এতো কিছু জানি না, তুমি দেখনি? আমাকে শুধু আলু ভাজি আর পিজা দিলো! ফ্রেঞ্চ ফ্রাই কখন কোথায় দিল?
মহুয়া ভাবীর এরকম কথার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমরা।তাই ফল স্বরুপ জর্জর করে হেসে দিলাম সবাই।আর সৈকত ভাইয়া মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলেন। নাঈমা ভাবী হাসতে হাসতে বললেন,
– ভাবী ঐ আলু ভাজি ই হচ্ছে গিয়ে আপনার ফ্রেঞ্চ ফ্রাই!
তখন মহুয়া ভাবীর মুখশ্রী বেলুনের মতো ফাঁকা হয়ে গেল। সৈকত ভাইয়া বললেন,
– যেই কারণে আমি এতো দিন তোমাকে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খাওয়াইনি। আমি জানতাম তুমি এগুলো কে আলু ভাজি বলবে আর আমাকে বলবে রেস্তোরাঁয় তোমাকে আলু ভাজি খাওয়ানোর জন্য নিয়ে আসি। এখন দেখছি আমার ই ভুল তোমাকে একবার খাইয়ে দেখানোর উচিৎ ছিল আমার।
বুঝলাম ভাইয়া রেগে গিয়েছেন, তাই বললাম থাক ভাইয়া বাদ দিন। আমার একজন স্যার বলতেন, মানুষ ভুল না করলে কি গরু ছাগল ভুল করবে?তাই মানুষ মাত্রই ভুল। তাছাড়া পৃথিবীতে আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তা’আলা এতো নেয়ামত সৃষ্টি করেছেন যা এখনো আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এবং আমরা কখনো চোখেও দেখেনি।তাই এরকম হওয়া স্বাভাবিক,বিষয়টা অস্বাভাবিক ভাবে না নিলেই হয়।
আমার সাথে সবাই একমত পোষণ করলেন। তারপর বাসায় ফিরে এলাম সবাই।
_______
এক সপ্তাহ পর,
মাকে সঙ্গে করে ঢাকায় ফিরে এসেছি আমরা।এখন থেকে আমি রাহাত মা এখানেই কোয়ার্টারে থাকবো। রাহাত অফিসে চলে গেছে,আর আমি পেট ব্যথায় কঁকিয়ে উঠছি খনে খনে। তবে আজকে পেটের ব্যাথা থেকে মনের ব্যাথাটা বেশি!যার কারণে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে আমার।
রাহাত অফিসে যাওয়ার ঘন্টা খানেক পর পিরিয়ড শুরু হয় আমার।পেট ব্যথা সবসময় ই হয় নতুন কিছু নয়। কিন্তু আমি যে কতো আশা করে ছিলাম,”আসবে আমার ঘরে একটা ছোট্ট সোনা, ভরিয়ে দিবে খুশির আলোয় তার জোছনা”।(দুটো বাক্য গান থেকে নেওয়া) সেই আশা মুহূর্তেই ভেঙে চুরমার হয়ে গেল আমার।
আমার একটা বান্ধবী বলেছিল, আর্মিদের কঠোর ট্রেনিং এর কারণে তাদের শারীরিক সমস্যা হয় যার ফলে অনেকের বেবি হয় না!
এসব কথা আজ খুব মনে পড়ছে আমার,তাই আরো বেশি কষ্ট হচ্ছে। আমি যে মাতৃত্বের স্বাদ নিতে চাই আল্লাহ।ইয়া আল্লাহ আমাকে তুমি দয়া করো, আমি ছাড়া তো তোমার অনেক বান্দা আছে কিন্তু তুমি ছাড়া তো আমার কোন মাবুদ নেই। তোমার এই পাপি বান্দা কে রহম করো আল্লাহ।
বালিশে পেটে চেপে ধরে কাঁদছি, শ্বাশুড়ি মা এসে বললেন,
– বউ তোমার মোবাইল বাজতাছে,ধরো না ক্যান?এই নাও।
আমি দ্রুত চোখের পানি মুছে, ফোন হাতে নিয়ে দেখি আপু কল করেছে বিদেশ থেকে। আমি কল বেগ করলাম।আপু কল রিসিভ করে বললো,
– কিরে কি করছিস তুই? কতোবার কল করলাম। রিসিভ ই করছিস না।
– আসসালামু আলাইকুম।
কেমন আছো আপু?
– ওয়ালাইকুমুস সালাম।
আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুই কি অসুস্থ আয়রা? কথা কেমন যেন শুনাচ্ছে!
– ঐ সব সময়ের মতো পেট ব্যথা করছে। সাফা আর মারওয়া কেমন আছে? কোথায় ওরা?
– আয়রা তুই কি প্রেগন্যান্ট নিয়ন্ত্রণের জন্য,,,
– না আপু সেরকম কিছু নয়, এমনিতেই পিরিয়ড শুরু হয়েছে।আপু আমার কি কখনো বেবি হবে না?
– হোপ!কিসব অলোক্ষুনে কথাবার্তা বলছিস তুই? ধৈর্য ধরে অপেক্ষা কর, আল্লাহ তা’আলা এর ফল দিবেন ইনশা আল্লাহ।
এসব নিয়ে একদম দুশ্চিন্তা করিস না। সাফা আর মারওয়া ওদের বাবার সাথে বাহিরে বের হয়েছে। শোন ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবি,এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করিস না। প্রথম প্রথম এরকম হয়, কয়েক মাস পর ঠিক হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।
– আচ্ছা আপু দো’আ কইরো তোমার কথা যেন সত্যি হয়।পরে কথা বলবো ভালো থেকো।
আল্লাহ হাফেজ।
– আচ্ছা তুই ও ভালো থাকিস, আল্লাহ হাফেজ।
_____
আমাকে অসুস্থ দেখে মা সব রান্না বান্না করেন। দুপুরে রাহাত আসে, আমাকে শুয়ে থাকতে দেখে পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
– কি হয়েছে আয়রা? শরীর খারাপ? তুমি কি কান্না করেছো?
আমি শুধু বললাম,পেট ব্যথা করছে সকাল বেলা থেকে।ও বললো ঔষধ খেয়েছি কিনা? আমি বললাম, এই সময় পেইনকিলার না খাওয়াই ভালো।ও ওঠে কোথায় যেন গেল, আমি আগের মতই শুয়ে রইলাম।এর কিছুক্ষণ পর গরম দুধ গ্লাসে করে নিয়ে এলো।এই সময় গরম খাবার খাওয়া উচিৎ। বিশেষ করে গরম পানি,দুধ, চা,কফি। এগুলো খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়, বিশেষ করে পেট ব্যথার জন্য।
আমাকে ধীরে ধীরে বসিয়ে দিয়ে, বললো নাও সবটা দুধ খেয়ে নাও ভালো লাগবে। আমি বললাম, তুমি খেয়ে আমাকে দাও কিন্তু সে মানলো না। তা-ও আমি কিছুটা খেয়ে বললাম নাও এবার খাও।ও একটু খেয়ে আবার আমাকে সবটা খাইয়ে দিল।
তারপর বললো, শাওয়ার নিয়েছো?
আমি মাথা নাড়িয়ে না বোঝালাম। সে বললো চলো শাওয়ার নিবে। আমি বললাম শাওয়ার না নিলে হয় না? ভালো লাগছে না উঠে গিয়ে শাওয়ার নিতে,,,,,
#চলবে,,, ইনশা আল্লাহ।
(