ছায়া সঙ্গিনী পর্ব -১৬

#ছায়া_সঙ্গিনী
#পর্ব-১৬
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

কাঠের আলমারি খুলে দুটো ঘড়ি বের করে আনলাম। তারপর রাহাতের হাতে আমার’টা দিয়ে বললাম,
– নাও তুমি নিজ হাতে পড়িয়ে দাও?

সে খুশি মনে পড়িয়ে দেয় আমার হাতে, তারপর আমিও তার হাতে তার’টা পড়িয়ে দিয়ে জরিয়ে ধরে বললাম নাও এখন নিশ্চয়ই আর কোন দ্বিধা নেই? তোমার ব‌উ সম্পুর্ণ রুপে তোমার।এখন সে চাইলেও তাকে আলাদা হতে দিও না কেমন?

রাহাত আমার কপালে তার অধর ছুঁয়ে বললো,
– ইনশা আল্লাহ, সারাজীবন এভাবেই জরিয়ে রাখবো আমার মাঝে। তুমি চাইলেও এই বাঁধন ছিন্ন হতে দিব না। আচ্ছা সব তো হয়েই গেল এবার চলো ফ্যামিলি প্ল্যানিং করি?

– মানে?

– মানে আমাদের কয়টা বেবি হবে সে বিষয়ে পরিকল্পনা আর কি।

– আমার একটা স্লোগান বরাবরের মতো পছন্দ বলবো?

– হুম শুনি কি তোমার সেই স্লোগান?

– “দুটো সন্তানের বেশি নয় একটি হলে ভালো হয়”।এই স্লোগান টাই আমরা ফলো করবো কেমন?

রাহাত মিছে রাগ নিয়ে বললো,
– আমার তো ইচ্ছে ছিল ফুটবল টিম গঠন করার! তুমি তো সবটাই বেস্তে দেওয়ার পরিকল্পনা করে বসে আছো।

ওর এরকম অদ্ভুত কথা শুনে ছোট চোখ গুলো আরো ছোট করে তাকালাম আমি।আর বললাম,
– প্রায় সব ছেলেদের এই স্বপ্ন থাকে,তাই এটা কমন। তোমার যদি এতই ফুটবল টিমের পিতা হতে ইচ্ছে হয় তাহলে অনাথ আশ্রম থেকে নিয়ে আস, তাহলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

– আচ্ছা একটা কাজ করি, আরো তিনটা বিয়ে করার সুযোগ আছে। সেগুলো করে নিলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে তাই না?

– একদম গলা টিপে মে*রে ফেলবো বুঝছো? দ্বিতীয় বার যদি এমন কথা বলতে শুনি। মেয়েরা মৃত্যুর পরও চায় না যে তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করুক।আর তুমি আমাকে বলছো এই কথা? তোমাকে ইচ্ছে করছে,,,

– কি বলো?

– জানি না।
একদম কথা বলবা না আমার সাথে।ছারো আমাকে এশার এর আযান হবে এখনি, আমি অযু করে আসি।

সে উল্টো আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গলায় স্লাইড করতে শুরু করলো। আমার এখন মেজাজ খুব গরম লাগছে ইচ্ছে করছে এখন ওর হাতে কামড় বসিয়ে দেই। কিছুক্ষণ নিরব থেকে তাই করলাম। আকস্মিক আক্রমনে ও আউচ বলে চেঁচিয়ে উঠলো, পরক্ষনেই আবার চুপ হয়ে গেল।যেন তার সাথে কিছুই হচ্ছে না। সবকিছু ঠিকঠাক,যেন কামড়ের বদলে আদর দিচ্ছি। কয়েক মিনিট পর ছেড়ে দিলাম,সে তার হাত একবার পরখ করে নিয়ে বললো,
– তুমি তো আমার থেকেও ভালো লাভ বাইট দিতে পারো! আমাকে একটু শিখিয়ে দাও দেখি? তাহলে তোমাকে ও এতো সুন্দর করে দিতে পারবো হা হা হা,,,

ওর কথা শুনে আমার রাগ কমার থেকে আরো বেরে গেল।তাই দিয়ে দিলাম একটা চিমটি,সেও আমাকে দিল‌। আমি আম্মু করে চেঁচিয়ে উঠলাম, অথচ আমি যতটা গভীরভাবে দিয়েছি সেই তুলনায় ও হালকা ছুঁয়েছে শুধু। তারপর আবার আমি দিলাম, তারপর রাহাত। এরকম করতে করতে দুজনের মধ্যে খুনসুটি ঝগড়া লেগে গেল।
________
দু’জনে নামায পড়ে এসে খাবার খেতে বসলাম,নামাযের সময় কারেন্ট চলে এসেছে।তাই এখন আলোকিত ঘর। রাহাত খেতে খেতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– তুমি ঠিক মতো খাবার খাও না? এরকম দিন দিন চিকন হয়ে যাচ্ছ!

আমি বললাম, হুম এখন তো আমি চিকন তারপর বলবে কালো হয়ে গেছ, এখন আর সুন্দরী দেখতে লাগে না। তারপর ধীরে ধীরে বলবে তুমি বুড়ি হয়ে গেছ! আমি জানি সব তোমার দ্বিতীয় বিয়ে করার ধান্দা এগুলো।

রাহাত কিছু বলতে যাবে তখন আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম,
– খাবার সময় কথা বলতে নেই, মনোযোগ দিয়ে খাবার খাও। না হয় কাটা বিধবে।

তারপর দু’জনের মাঝে নিরবতা চলে, কেউ কারো সাথে কথা বলি না। খাবার খাওয়া শেষ হলে সব কিছু গুছিয়ে রেখে দেই। তারপর মায়ের রুমে গিয়ে শুয়ে থাকি আমি।ও বিয়ের কথা কেন বললো?তাই ওর সাথে থাকবো না আমি হুহু।

কিছুক্ষণ পর একটা ছায়া দেখতে পেলাম, মুহূর্তেই ছায়াটা আমার কাছাকাছি চলে আসে। তারপর ফিসফিস করে বলে,
– তোমার ছায়া সঙ্গিনী চলে এসেছে ব‌উ।

তারপর আমাকে শুন্যে তুলে নিল ছায়া মানব রাহাত, আমার অর্ধাঙ্গ। যেতে যেতে কারেন্টের লাইট অফ করে সৌর বিদ্যুতের মিনমিন করা লাইট জ্বালিয়ে দিল। আমি ছোটাছুটি করছি আর বলছি,ছারো আমাকে। আমি তোমার সাথে থাকবো না হুহ। তুমি পঁচা একদম ভালো না।
সে বিছানায় আমাকে শুইয়ে দিয়ে বললো,
– সরি ব‌উ আর জীবনেও বিয়ের কথা বলবো না ইনশা আল্লাহ। এবার অন্তত শান্ত হ‌ও প্লিজ?

আমি চুপ করে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম।সে মন খারাপ করে বললো, আচ্ছা যাও তোমাকে বিরক্ত করবো না তবুও তুমি এখানে ঘুমাও। তারপর চলে যেতে নিলে হাত ধরলাম।ব্যাস আর কিছু বলতে হয়নি তাকে। আমার সম্মতি পেয়ে মুচকি হেসে পুরো আমাকেই তার আয়ত্তে দখল করে নেয়!

স্ত্রীকে ভালোবাসা প্রসঙ্গে হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম যারা তাদের স্ত্রীদের জন্য উত্তম। আর আমি আমার স্ত্রীদের জন্য তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি।
_______
গ্রামের বাড়ি তার উপর টিন সেট ঘর, বাথরুম বাহিরে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দরজা খুলতেই আমার সারা শরীর শিউরে উঠলো। ঘুম ঘুম চোখে এদিক সেদিক তাকাচ্ছি, মনে হয় যেন এই বুঝি কোন ভুত এসে হামলে পড়লো! দূরে সারি বেঁধে গাছপালা, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এগুলো একেকটা প্রেতাত্মা দাঁড়িয়ে আছে। না বাবা আমি কিছুতেই বাহিরে গিয়ে শাওয়ার নিতে পারবো না।যদিও এসব ভুত প্রেতাত্মা বলে কিছু নেই। তবুও জিন জাতি তো আছে! শুনেছি এদের মধ্যে মানুষের মতো ভালো খারাপ আছে।যদি খারাপ গুলো এসে আমার গাড় মটকে দেয়!ওরে বাবা না না কিছুতেই আমি এখন শাওয়ার নিব না।তাই দরজা লাগিয়ে দিলাম, আবার ভাবছি ফরজ গোসল না করলে তো আমি নামায পড়তে পারবো না, তাহলে? না না নামায কিছুতেই মিস দেওয়া যাবে না।
যাই রাহাত কে নিয়ে আসি। গেলাম রাহাত কে ডাকতে।ওরে ডাকতেই ও ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো,
– আবার কি হলো? একটু ঘুমাতে দাও না ব‌উ। এতো সময় যাবত তো ঘুমাতে দিলে না।

ওর এরকম কথায় বরকে যাই আমি, কি বললো ও আমি ওরে ঘুমাতে দেইনি না ও আমাকে ঘুমাতে দেইনি? এখন সব দোষ আমাকে দেওয়া হচ্ছে। ধারাও তোমাকে ঘুমাতে দিচ্ছি আমি,,,
হাত ধরে অনেক টানাটানি করলাম একটুও নাড়াতে পারলাম না। তাই গিয়ে পায়ে শুরশুরি দেওয়া শুরু করলাম। বেচারা পা নাড়াতে নাড়াতে শেষ,ওর পায়ে ভিশন শুরশুরি লাগে।তাই এই সুযোগ হাত ছাড়া করলাম না।ফল স্বরুপ উঠে বসে বললো,
– দুষ্টু ব‌উ কোথাকার। আমাকে তুলেই ছাড়লো।

আমি হাসতে হাসতে বললাম,
– এবার চলো কিছুক্ষণ পর আযান হবে।চলো না,,,,

টিউবওয়েল এর চারপাশে টিন দিয়ে বাথরুম তৈরি করা হয়েছে যাকে এখানে বলে গোসলখানা। রাহাত বড় বালতি তে পানি ভরে দিয়ে ঘরের দরজায় টুলে বসে থাকে, তারপর আমি নিশ্চিন্তে শাওয়ার নিয়ে আসি।এসে দেখি সে টুলে বসে বসে ঘুমাচ্ছে,যা দেখে আমি হাসতে হাসতে শেষ। ওরে ডেকে শাওয়ার নিতে পাঠিয়ে দিলাম। তারপর আমি দরজা বন্ধ করে ঘরে বসে আছি।ফুল স্পীডে ফ্যান চলছে মাথার উপরে, এদিকে শাওয়ার নেওয়াতে খুব শীত অনুভব হচ্ছে। কিন্তু চুল গুলো ভিজে থাকলেও সমস্যা, ঠান্ডা লেগে যাবে।
দিনকে দিন টাক বেল হ‌ওয়ার উপক্রম! এতো পরিমাণে চুল পড়ে। তবে লম্বা বলে মায়া হয় কাটতে। আমাকে রাহাত বলে, পাতলা চুলের কেশবতী হা হা হা,,,
________

সকালের নাস্তা তৈরি করছি আমি আর রাহাত মিলে। পেঁয়াজ মরিচ কুচি করে কেটে নিয়েছি। এগুলো ডিম দিয়ে প্রথমে ভেঙে গুঁড়ো করে বেজে নিব তারপর গতকালের ভাত একসাথে দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে উঠিয়ে নিব।
এটা হচ্ছে ভেজাল বিহীন ঝটপট রেসিপি হা হা হা,,,, তো আমি ভাজা করেছি আর রাহাত পাশে বসে আছে।তো ডিম ভাজি হয়ে এলে রাহাত আঙুলে কালি মাখিয়ে আমার নাকের ডগায় লাগিয়ে দিল! আমিও কি কম নাকি? আমার কলেজের স্যার বললেন যে একটু দেবে তোমরা তাকে আরেকটু বেশি দিবে!তাই স্যারের কথা রাখতে, আমি ডিম ভাজা গুলো নামিয়ে ভাতের পাতিলের নিচ থেকে দুই হাত দিয়ে কালি লাগিয়ে রাহাতের পুরো মুখশ্রী কালি মাখিয়ে দিলাম।এখন খুব শান্তি লাগছে আহা কি শান্তি আর শান্তি।
কিন্তু আমার এই শাস্তি বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারলাম না। পাশের বাড়ির এক জেঠি’শ্বাশুড়ি আসলেন খবর নিতে। গতকালের ঝর ঝাপটার মধ্যে ব‌উ শ্বাশুড়ি ঠিক আছি কিনা?দেখতে এসেছেন আর কি।এখন কথা হচ্ছে গিয়ে,ঐ বৃদ্ধা মহিলা রাহাত কে দেখে চোখ গুলো ছানাবড়া করে বললো,
– অমা ব‌উ!এই বেডা মানুষ কেডা? এমন ক‌ইরা কালি মাইক্ষা রাখছে কা?

আমি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছি,কি বলে এই মহিলা?বেডা মানুষ মানে কি বুঝাতে চাচ্ছেন উনি? শুধু তাই নয় মহিলা এখন চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছেন! এদিকে রাহাতের কোন কথাই শুনছেন না তিনি। আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি, এই কোন গ্রামে আসলাম আমি? মহিলার চোখে কোন সমস্যা আছে নাকি? না হয় কালি মাখা থাকলেও কি পরিচিত মুখশ্রী চিনতে পারে না? এটা কোন কথা হলো? মহিলা চেঁচামেচি শুনে মানুষজন দৌড়ে আসে। রাহাত আর কিছু না বলে, গিয়ে মুখ ধুয়ে আসে। আমি শুধু নিরব দর্শক হয়ে বসে বসে দেখছি গ্রামের মানুষজন দের কান্ড কারখানা। রাহাতের চাচা তো বোন রোজিনা হাসতে হাসতে শেষ।একজন ভাবী বললেন,
– চাচি আম্মা আন্নে আমাগো রাহাত রেই চিনতে পারলেন না।এ তো আমাগো রাহাত।

তখন মহিলা চোখ পাকায়া বলে,
– তয় কালি মাইক্কা রাখছিল ক্যান?এমনে কালি মাইক্কা রাখলে চিনবার পারুম কেমনে?

তখন একটা ছেলে বললো,
– ভাইয়ে মনে হয় সেনাবাহিনী দেইক্কা মুখে কালি মাইক্কা রাহে।

তাই বলে বাড়িতে কালি মাইক্কা রাহে হা হা হা,,, খুব হাসি পাচ্ছে আমার,,,,

#চলবে,,, ইনশা আল্লাহ।

(মতামত কি?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here