#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ
পর্ব -৪১
সৃষ্টিকর্তা মাঝেমাঝে মানুষকে বোধহয় সর্বোচ্চ অসহায় করে দেন, কেন দেন? কীসের জন্য দেন? তার কোনো উত্তর খুজে পেলেন না মিসেস মধুমিতা।স্থির দৃষ্টিতে টেলিফোনের দিকে তাকিয়ে থাকা স্বামীর দিকে একপলক চোখ বুলিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালেন মিসেস মধুমিতা।
বহু বছর আগে ঘটে যাওয়া একটা ভয়াবহ ঘটনা, একটা মানুষের বিশ্বাসঘাতকতা, একটা আপনজন হারানোর ব্যাথা আজও তার আপনজনদের হৃদয় খুঁড়ে আঘাত করে যাচ্ছে। জীবন গুলোকে এতো কেন ব্যাথাময় করে তুলছেন বিধাতা। ভাবতেই দিকহারা জলকণা গুলো ভাসিয়ে দিলো চিবুকটা। মিসেস মধুমিতা মনে মনে লক্ষবার প্রার্থনা করেন, ” তার সন্তানদের সকল যন্ত্রণা যেন সৃষ্টিকর্তা তাকে দান করেন।”
-” মধু! আমার মেয়েটা ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে মধু।আমি কি করবো মধু ,,,,,, কি করলে ওকে সব ভুলিয়ে দিতে পারবো, সব কষ্ট দূর করতে পারবো?
মি.মাহবুব এর অস্থির ভেজা কণ্ঠ শুনে চুপিসারে চোখ মুছে পেছনে ফিরে তাকালেন মিসেস মধুমিতা।মি. মাহবুব টলটলে চোখে তার দিকে তাকিয়ে আবারও বললেন,
-” টুকটুকি কে সব জানিয়ে আমরা ভুল করে ফেললাম নাতো মধু?”
-” সত্যি কখনো লুকানো যায় না মাহবুব। তাছাড়া একদিন না একদিন জানাতেই হতো।”
-” অবাক ঠিকই বলে মধু যে সত্য কারো কষ্টের কারণ হয় তা অপ্রকাশিত থাকায় শ্রেয়। আমার মেয়েটা খুব কষ্টে আছে মধু।”
বলেই নিরবে কেঁদে ফেললেন মি. মাহবুব।পুরুষ মানুষকে নাকি কাঁদতে হয় না, কিন্তু মি. মাহবুব এর তো হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে।সন্তানের কষ্টে কি কোন পুরুষ না কেঁদে থাকতে পারে, কই সে তো পারছে না।
মিসেস মধুমিতা এতটা সময় নিরব থাকলেও স্বামীর চোখে পানি দেখে ফ্যালফ্যাল করে কেঁদে দিলেন।
-” বাবা- মা কে কষ্ট দিলে সেই কষ্ট নাকি দিগুণ হয়ে ফেরত আসে।সৃষ্টিকর্তা আমার সন্তানদের যন্ত্রণা দিয়ে সেই কষ্ট আমাকে ফেরত দিচ্ছে মাহবুব।সব দোষ আমার মাহবুব, ওরা আমার পাপের শাস্তি পাচ্ছে।
বলে স্বামীকে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন মিসেস মধুমিতা।
কয়েকবার ফোন দেওয়ার পরও পুতুল ফোন না তোলাতে মিসেস প্রীতি হতাশ হয়ে ফোনটা রেখে দিলেন।টুকটুকির জন্য খাবার নিয়ে রুমের দিকে হাটা দেন।রাত নয়টা বেজে গেছে দুপুর থেকে মেয়েটা কিচ্ছু খায়নি ভেবে তাড়াতাড়ি রুমের দিকে এগিয়ে যান।টুকটুকি উল্টো হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে, কাছে এসে বুঝতে পারলেন টুকটুকি এখনো কাঁদছে। মিসেস প্রীতি খাবার গুলো সাইড টেবিলে রেখে চুপচাপ টুকটুকির পাশে বসে আদুরে গলায় বলল,
-” টুকটুকি ওঠতো, ছোট মা খাইয়ে দিই।”
ছোট মায়ের উপস্থিতি টের পেতেই টুকটুকি চট করে ঘুরে ছোট মায়ের কোমর পেঁচিয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো।মিসেস প্রীতি মাথাই হাত বুলিয়ে বললেন,
-” এতো কাঁদিস না তো, অসুস্থ হয়ে যাবি তো। গায়ে তো জ্বর মনে হচ্ছে। ” বলে গায়ে হাত দিতেই বুঝলেন টুকটুকির বেশ জ্বর শরীরে।
টুকটুকি কিছু শুনলো কিনা বোঝা গেলো না সে দিগুণ কেঁদে বলল,
– ” আমার জন্য সকলের কষ্ট ছোট মা, সকলের। ছোট মা আমাকে কখনো ঘৃণা করো না ছোট মা।আমি তোমাদের ছেড়ে থাকতে পারবো না ছোট মা।”
-” কি উল্টা পাল্টা বকছিস, চুপ করবি একটু, কান্না বন্ধ কর মা।ইশশ গা পুড়ে যাচ্ছে।”
মিসেস প্রীতি হন্তদন্ত হয়ে বোনকে ডাকলেন,
-” আপা! আপা! জলদি এদিকে আয় তো।”
গাড়ি থামাতেই মি ও মিসেস মাহবুব তড়িঘড়ি করে নেমে অর্কদের বাড়ির ভেতরে ঢুকে যান।সূর্যও দ্রুত নেমে মায়ের পিছু পিছু হাটতে শুরু করলো,কিন্তু হঠাৎই কিছু মনে পড়ায় নিঃশব্দে পিছু ঘুরে গাড়িতে এসে বসে পড়লো।
★★★
দু’বছর আগের ঘটনা জানুয়ারির কনকনে শীতে নিউ কামার দের ট্রেইন করার দায়িত্ব পড়েছিল সূর্যর। পুতুলের সাথে তখন চরম টানাপোড়ন সম্পর্ক চলছিল তার, হয় জব ছাড়ো নইলে আমাকে ছাড়ো টাইপ সম্পর্ক।শীতের সারারাত ফোনে পুতুলের হুমকি, কান্নাকাটি পেড়িয়ে ভোর পাঁচটায় প্রশিক্ষণের দায়িত্ব সামলানো তার নিত্যদিনের কাজ ছিল।
সেদিন রাতেও পুতুলের পাগলামি শেষে ঘুমিয়ে পরদিন ট্রেইনার দের নির্দেশনা দিচ্ছিল সূর্য।ট্রেইনিং টাইমে সাধারণত ফোন অফ থাকে সূর্যর।সকাল এগারো টা নাগাদ কল্লোল এসে জানাই পুতুল হসপিটালে।কল্লোলের কথা শুনতেই গতরাতের পুতুলের হুমকির কথা মনে পড়ে যায় সূর্যের।পুতুল বার বার বলেছিল, ‘অবাক তোমার এই নোংরা, বিশ্রী জবটা না ছাড়লে আমি সত্যি সত্যি মরে যাবো বলে দিলাম।’ কথাগুলো মনে হতেই সূর্য দিকশূণ্য হয়ে ছুটে যায় হসপিটালে।কিন্তু হসপিটালে তার জন্য যে কোনো অনাক্ঙাখিত সময় অপেক্ষা করছিল সেটা জানতে পারেনি সূর্য।
হসপিটাল করিডোর পেরিয়ে কাঙ্ক্ষিত কেবিনে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে বামহাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে ছোট মায়ের পা ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে পুতুল।তার উপস্থিতি টের পেতেই ছোট মা ঠোঁটে বিদ্রূপ হাসি টেনে বলল,
-” তোরই কমতি ছিল বাবু। আয় ভিতরে আয়।”
বলে পুতুলকে সরিয়ে নিজেই সূর্যের দিকে এগিয়ে এসে হন্তদন্ত হয়ে বলল,
-” বাবু পুতুলকে নিয়ে যা, তোর সাথে নিয়ে যা। ওর জীবনে আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।ও তোকে ছাড়া মরে যাবে, ওকে তুই এখনই নিয়ে যা।”
-“মাম্মা, সরি মাম্মা। আর কখনো এরকম হবেনা মাম্মা। প্লিজ আমাকে হ্মমা করে দাও মাম্মা।
-” একদম না,আমার কাছে আসবি না।তোদের মতো স্বার্থপরদের দরকার নেই আমার,সবগুলো স্বার্থপর। চলে যা আমার সামনে থেকে।অবাক ওকে নিয়ে চলে যা এখান থেকে।”
-“ছোট মা,,,,,,”
সূর্য কিছু বলবে তার আগেই মিসেস প্রীতি চিৎকার করে বললেন,
-” কিচ্ছু শুনতে চাই না আমি।তোরা এখনই, এইমূহুর্তে আমার সামনে থেকে চলে যা।
-” ছোট মা প্লিজ একটু,,,,,”
-” চুপ একদম চুপ, তুই তোর এই সাজসজ্জা নিয়ে আর কোনদিন আমার সামনে আসবি না।তোকে দেখলে আমার দমবন্ধ কষ্ট হয়, তোকে দেখলে তোর স্বার্থপর চাচার দেওয়া এক পৃথিবী কষ্টে আমার দমবন্ধ হয়ে আসে।”
বলে মিসেস প্রীতি সূর্যর ইউনিফর্ম টা টেনে ধরে বলল,
-” তোর পোষাক, তোর হাসি, তোর সকল গুন ওই স্বার্থপর মিহিরের থেকে পাওয়া।সবগুলো স্বার্থপর, চলে যা চলে যা আমার চোখের সামনে থেকে।”
★★★
কয়েক বছর আগে ছোট মায়ের বলা কথাগুলো এখনো জীবন্ত হয়ে সূর্যের কানে বাজে। এই এতো বছরে ভুলেও সে ছোট মায়ের সামনে পড়েনি। সেদিন হাইপার হয়ে ছোট মা অসুস্থ হয়ে যান।ছোট মায়ের সেই অসুস্থতা, পুতুলের অসহায়ত্ব সবকিছু তাকে একেবারে দমিয়ে দিয়েছিল। আর তারপর থেকে চাকরিটা ছাড়ার জন্য কম কসরত করেনি সে।কিন্তু ভাগ্য তার থেকে একদমই বিমুখ। এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী তাকে এখনো তিনবছর স্পেশাল ফোর্সে নিজ দায়িত্বে বহাল থাকতে হবে।
কথাগুলো ভেবে ভারি নিশ্বাস টেনে কাচঁ ভেদ করে সামনে তাকাতেই দেখলো বাবা-মা টুকটুকিকে নিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে।আর তার ঠিক পেছনে মেইন গেইটে দাড়িয়ে আছে ছোট মা। সেদিকে একপলক তাকিয়ে চুপচাপ ড্রাইভিং সিটে বসে থাকলো সূর্য।
বাবা-মা, টুকটুকি তিনজনকে পেছন সিটে বসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো সূর্য। গাড়িতে বসার পরও গাড়ি স্টার্ট না দেওয়ায় বিরক্তি নিয়ে মি.মাহবুব বললেন,
-” কিরে যাচ্ছিস না কেন? ঠ্যাটার মতো বসে আছিস কেন?”
বাবার কথা শুনে সূর্য ধম করে গাড়ি থেকে নেমে দরজা খুলে বাবাকে বের করে নিজে বাবার সিটে বসে বলল,
-” যার গাড়ি সে চালাবে, আমি চালাবো কোন দুঃখে!”
ছেলের কাজে মি. মাহবুব হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ড্রাইভি সিটে বসে গাড়ি চালু করলেন।
মিসেস মধুমিতা ও টুকটুকি চুপচাপ বাপ ছেলের বাকবিতণ্ডা শুনলো।সূর্য টুকটুকির পাশে বসে কপালে হাত দিয়ে জ্বর আছে কিনা দেখে নিল।তাপমাত্রা স্বাভাবিক দেখে বলল,
– ” এই, তুই আমার বোন হয়ে এতো ছাগল হলি কি করে বলতো। মাত্র দুইটা সাবজেক্টে ফেল করে জ্ঞান হারালি।তোকে তো ছাগল বললেও ছাগলের অসম্মান হবে।”
অন্যসময় হলে ভাইয়ার কথা শুনে রেগে বোম হয়ে ঝগড়া করতো টুকটুকি কিন্তু এখন তার নাকমুখ ভাসিয়ে কান্না পাচ্ছে।বাবা-মা, ভাইয়া এতো ভালবাসে কেন তাকে? সে কি এই এতো এতো ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য?ভেবেই ফ্যালফ্যাল করে কেঁদে ফেলল টুকটুকি।
টুকটুকিকে কাঁদতে দেখে সূর্য ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল,
-” আরে আমিতো মজা করলাম, আচ্ছা সরি সরি আর কিচ্ছু বলবো না।”
চলবে,,,
#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ
পর্ব -৪২
সকালের ঝকঝকে রোদ জানলা চিরে ভেতরে পড়ছে।পুতুল পিটপিট করে তার ভারি চোখের পল্লব খুলে জানলার দিকে তাকিয়ে বিছানা হাতরে ফোনটা বের করলো।নয়টা সাত বাজে, নোটিফিকেশনে মাম্মার মিসডকল দেখে নিয়ে আবারও জানলার দিকে উদাস হয়ে তাকিয়ে থাকলো পুতুল। আর একদিন বাদেই বাবার মৃত্যু বার্ষিকী, বাবার কথা মনে পড়লেই পৃথিবীর সকল রাগ,অভিমান, কান্না একসাথে গলা চেপে ধরে তার। বাবা থাকলে তার জীবনের এই কঠিন সময়টা কখনোই পার করা লাগতো না।বাবা যদি জবটা না করতো সবকিছু কত সুন্দর হতে পারতো।আর অবাকও হয়তো তার হতো।মাম্মা সবকিছু মেনে নিতো।মনে মনে বাবাকে উদ্দেশ্য করে একঝাঁক রাগ- অভিমান ছুড়ে নীরবে চিবুক ভাসালো পুতুল।
কান্নার ছন্দ পতন হলো কারো পায়ের শব্দে।চুপিসারে চোখ মুছে সামনে তাকতেই দেখলো তিতিয়া খাবার পেকেট হাতে চোখমুখ কুঁচকে রুমে ঢুকছে।পুতুলকে বসে থাকতে দেখে বলল,
-” উঠে পড়েছিস? শোন আমি পণ করেছি আর কোনদিন ও শালা ভুটকা ক্যান্টিন মামার মুখ দেখবো না।বেটা খচ্চর ডিম সিদ্ধ করেনি। কতবার বললাম মামা একটু কষ্ট করে দিননা।শালা কোনমতেই দিলো না,,,,,,”
তিতিয়ার কোনো কথায় এখন পুতুলের শুনতে ইচ্ছা করছে না।কিছুক্ষণ উদাস হয়ে চেয়ে থেকে বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো পুতুল।পুতুলকে উঠতে দেখে তিতিয়া দৌড়ে কাছে এসে ধরে বলল,
-” কী রে উঠলি কেন?”
-” ওয়াশরুমে যাবো, ধরতে হবে না পারবো আমি।”
বলে ধীর পায়ে হাটতে শুরু করলো পুতুল।তার পিছনে তিতিয়াও হাটতে শুরু করে।পুতুল জানে তিতিয়াকে নিষেধ করেলেও আসবে তাই কিছু না বলে চুপচাপ ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেল।
পুতুলের বাম হাতে কয়েকটা ওষুধ গুজে উঠে দাড়ালো তিতিয়া। মুখের মধ্যে খাবার চিবতে চিবতে বলল,
-” খাবার শেষে এগুলো খেয়ে নিবি।”
বলে ঝটপট তৈরি হতে থাকলো, কিছু একটা ভেবে পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” ঔষুধ গুলো এখনই আমার সামনে খাবি, ঝটপট খা।দশটায় শরিফ স্যারের ক্লাস দেরি হলে ঢুকতে দেবে না।”
বলে আবার তাড়াহুড়া করে বইপত্র গোছানো শুরু করে তিতিয়া।পুতুল জানে তিতিয়া তাকে ওষুধ গুলো না খাইয়ে যাবে না তাই চুপচাপ নাস্তা শেষ করে তিতিয়ার দেওয়া ট্যাবলেট গুলো গিলে নিলো।
বের হতে হতে তিতিয়া বলল,
-” টেবিলের উপর চিপস আছে খেয়ে নিস।দেড়টার মধ্যে চলে আসবো, নিচে নামিস না আসার সময় আমি খাবার নিয়ে আসবো।টাটা।”
তিতিয়া বেড়িয়ে যাওয়ার পাঁচ মিনিটের মাথায় পুতুল উঠে জামাকাপড় গুছিয়ে ব্যাগে ঢুকানো শুরু করলো।অবাক কে সে চাকরি ছাড়িয়ে তবেই বাড়ি ফিরবে তার আগে নই। সুইসাইড করার চেষ্টা করলে মাম্মা কষ্ট পাবে,এরকম কিছুই করবে না। তাই সে রাতে ভেবে ভেবে নতুন পরিকল্পনা করেছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তিতিয়ার বাইরে যাওয়া টা জরুরি ছিল।
ব্যাগপত্র গুছিয়ে ফোন হাতে বিছানায় বসলো পুতুল।দুজন ব্যক্তিকে মেসেজ করলো সে।তারপর টেবিলের উপর তিতিয়ার উদ্দেশ্যে একটা চিরকুট রেখে মৃদু হেসে ব্যাগ হাতে ধীরেধীরে বেরিয়ে পড়লো পুতুল।
রুমে ঢোকা মাত্রই ফোনের টুং শব্দে পুতুলের কথা মনে পড়লো মিসেস প্রীতির।টুকটুকিকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সকাল থেকে একবারও ফোন করা হয়নি মেয়েটাকে।কথাগুলো ভেবে ফোন খুলতেই ভেসে উঠলো পুতুলের মেসেজ,
“মাম্মা সামনে আমার ল্যাব ফাইনাল, আগামী সাতদিন তোমার সাথে কথা হবে না।ঠিকমতো খেয়ে নিবো মাম্মা, লাভ ইউ ”
পুতুলের পাঠানো বার্তা পড়ে ফোত করে নিশ্বাস ফেললেন মিসেস প্রীতি। বিগত কয়েক বছরে বহুবার এরকম করেছে পুতুল।যদিও জানেন এখন পুতুলের ফোন বন্ধ থাকবে তারপরও একবার কল দিলেন মিসেস প্রীতি। সবসময়ের মতো এবারও ফোনটা বন্ধই পাওয়া গেল।
” তোমার ভালবাসা ছোঁয়ার মতো সাহস আমার নেই অবাক, তবে আমার ভালবাসা ছুয়ে রঙিন করার সকল পথ তোমার কাছে আছে। ভালবাসার এই ধরা- ছোঁয়ায় আমি ক্লান্ত, খুব ক্লান্ত,,,,,, ভালো থেকো।”
তিতিয়ার সাথে কথা বলা শেষ করে ইনবক্সে পুতুলের মেসেজ টার দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো সূর্য। মেসেজ টা আরো দুবার পড়ে ঝটপট পুতুলকে কল দেয় সূর্য। কিন্তু ফোনটা বন্ধ দেখাচ্ছে, আরও কয়েকবার দেয়ার পরও একই অবস্থা। উপায় না পেয়ে তিতিয়াকে কল দিল,কিন্তু রিসিভ করছে না। না করারই কথা, ক্লাস শুরু হয়ে গেছে হয়তো।হঠ্যাৎ পুতুলের এরকম মেসেজ এর মানে কি হতে পারে? তবে মেসেজ টা পড়ে তার শুধু বাজে চিন্তারাই মাথায় ঘুরছে। তার আর কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে না সে, চটপট সিঁড়ি বেয়ে নেমে দৌড় লাগালো। চোখের পলকে গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল সূর্য।আর তার যাওয়ার দিকে বোকার মতো তাকিয়ে থাকলো দুজন ব্যক্তি, স্বপ্না আর মি. মাহবুব।
-” খালুজান, ভাই এমনে কই যায়?”
-” জানিনা, যাহ গাছে পানি দে।”
ফরিদপুর গামী চলন্ত বাস এর জানলা ভেদ করে গাছপালা মোড়া সাদা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে পুতুল।চোখ দুটো ঘুমের জন্য আকুল হলেও মন চাইছে জল প্রবাহ।কী করবে বা কী ঘটবে এসব কিছুই মাথায় নিচ্ছে না পুতুল।একটা কথায় মাথায় কাটার মতো বিধছে অবাক কে সে চাকরি ছাড়িয়ে তবেই এই হারিয়ে যাওয়ার অবসান ঘটাবে।হারিয়ে যাওয়া ঠিক নই সে যাচ্ছে কল্লোলের দাদুবাড়ি। যদিও দাদু বেচেঁ নেই, শুধুমাত্র কল্লোলের দাদিই থাকেন ফরিদপুরে।গতবছর আমের সময় সবাই তাকে তুলে নিয়ে গেছিল ফরিদপুরে।সেবারই দাদীর সাথে ভাব-খাতির হয়েছিল পুতুলের। সেই খাতিরের দমেই হারিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে ফরিদপুর ছুট দিয়েছে পুতুল।কিন্তু বাসে ওঠার পর থেকে মাম্মার জন্য কষ্ট হচ্ছে, মনে হচ্ছে একটু কথা বলতে।কিন্তু এখন কথা বললে যদি মাম্মা জিজ্ঞেস গাড়ির শব্দ কেন? যদি কিছু বুঝে যায়। এসব ভাবনার মাঝেই ফোনটা অন করে পুতুল।ফোন অন হতেই ঝপাং ঝপাং মিসডকল এলার্টে হইচই লেগে গেল।কিন্তু সেই শব্দের সাথে আরো একটা বিকট শব্দ আর ঝাঁকুনিতে সবকিছু ঝাপসা হয়ে গেল পুতুলের।
চলবে,,,,,