#জানি_তুমি_ফিরবে
[পর্ব – ৯]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
তিশা বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। তার পুরো শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। কারণ গতকাল রাতে সে সারারাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছে। তাই তিশা খাটের উপরে ঘুমিয়ে পড়ে। অনেক্ষন পরে তিশার ঘুম ভেঙে যায়। তিশা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে একটা বেজে গিয়েছে। তিশা তাড়াতাড়ি করে উঠে খাবার নিয়ে হাসপাতালের দিকে চলে গেলো। হাসপাতালে গিয়ে দেখে ধ্রুব ঘুমিয়ে আছে আর মিজান সাহেব বসে আছে।
তিশা ভিতরে যেতেই মিজান বলল — কিরে আসলি তুই?
— হুম বাবা। শরীরটা খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ছে তাই ঘুমিয়ে গেছিলাম। কখন যে এতো সময় পার হয়ে গেলো বুঝতে পারিনি।
— ঠিক আছে সমস্যা নাই মা।
— উনি কি আর উঠে নাই ঘুম থেকে?
— হুম উঠেছে আবার ঘুমিয়ে পড়ছে।
— ডাক্তার এসেছিলো?
— হুম ডাক্তার এসে দেখে গেলো। বলল চাইলে বিকালে বাসায় নিয়ে যেতে পারি।
— তাহলে নিয়ে যাওয়া ভালো হবে। বাসায় নিলে সবাই ওনার খেয়াল রাখতে পারবো ঠিক ভাবে।
— হুম তুই ঠিকি বলছিস। তাহলে আমি বিকালে চলে আসবো। তারপর আমি সহ ধ্রুবকে বাসায় নিয়ে চলে যাবো।
— আচ্ছা আপনি এবার বাসায় চলে যান। আমি আছি ওনার পাশে।
— ঠিক আছে মা। কোনো সমস্যা মনে হলে আমাকে ফোন দিস ঠিক আছে?
— ঠিক আছে বাবা।
তারপর মিজান সাহেব তার বাসার দিকে চলে গেলো। এবার তিশা গিয়ে ধ্রুবর পাশে বসে রইলো। কিছুক্ষণের মধ্যে ধ্রুবর ঘুম ভেঙে দিলো তিশা।
— উঠুন খাবার খাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। খেয়ে আবার ঘুমাতে পারবেন।
ধ্রুবকে ধরে তিশা তিশা একটু বসালো। তারপর ধ্রুবকে খাইয়ে দিলো। খাওয়া শেষ করে ওষুধ দিলো ধ্রুবকে।
ধ্রুব বলল — এখানে আমাকে আর কতোদিন থাকতে হবে?
— বাবা বলল আজকে বিকালে নিয়ে যাবে বাসায়।
— ওহ।
— হুম আপনি এবার ঘুমান।
তিশা এবার ধ্রুবকে আবার শুইয়ে দিলো বেডের উপরে। দেখতে দেখতে বিকাল হয়ে গেলো। মিজান সাহেব হাসপাতালে চলে এলো। তারপর ডাক্তারের সাথে কথা বলে ধ্রুবকে নিয়ে বাসায় চলে গেলো। ধ্রুবকে বাসায় নিয়ে তার রুমে শুইয়ে দিলো। কিছুক্ষণের মধ্যে ধ্রুবর বন্ধু জয় আর সিয়াম আসলো ধ্রুবকে দেখতে। তিশা ওদের দেখে নাস্তা আনার জন্য বাহিরে চলে গেলো।
সিয়াম — কিরে কি অবস্থা এখন তোর?
— এইতো একটু ভালো। তোদের কি অবস্থা? আর ওই দিকে কি অবস্থা?
— ভালোই। তাহিয়া তোকে ফোন দিয়ে পাচ্ছেনা। আমাকে বার বার ফোন দিয়ে তোর কথা জিজ্ঞেস করে।
— তুই কি তাহিয়াকে আমার এক্সিডেন্ট এর কথা বলে দিয়েছিয়া নাকি?
— আরে না বলিনি। আমি বলছি তোর ফোনে একটু সমস্যা হইছে। ফোন ঠিক হলে যোগাযোগ করবে।
— গুড। বলিস না কিছু।
— হুম বলিনি।
— নীলাকে ও বলেদিস নীলা যেনো তাহিয়াকে কিছু না বলে দেয়।
— ঠিক আছে তোর এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আর আজকে সকালে ওর জন্য কিছু টাকা পাঠিয়ে দিলাম।
–গুড।
এমন সময় তিশা সবার জন্য নাস্তা নিয়ে আসলো। তিশাকে দেখে সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলা অফ করে দিয়েছে। তারপর তিশা সবাইকে নাস্তা দিচ্ছে। এই দিকে সিয়াম কেমন ভাবে বার বার তিশার দিকে তাকাচ্ছে। তিশা সিয়ামের হাতে যখন চা দিচ্ছিলো তখন সিয়াম ইচ্ছে করেই তিশার হাত স্পর্শ করার চেষ্টা করলো। তিশা বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি করে নিজের হাত সরিয়ে নিলো। তিশা তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। সিয়াম তিশার দিকেই তাকিয়ে রইলো। জয় সিয়ামের ব্যাপারটা বুঝতে পেরেও চুপচাপ খাচ্ছে সে। তারপর তারা নিজেদের মধ্যে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে সিয়াম আর জয় বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলো। সিয়াম যাওয়ার সময় আশেপাশে তিশাকে খুজতে থাকে। সিয়াম খেয়াল করলো তিশা রান্না ঘরে কিছু একটা করছে। সিয়াম তিশার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বাসা থেকে বেরিয়ে চলে গেলো।
রাস্তায় যেতে যেতে জয় সিয়াম কে প্রশ্ন করলো — কিরে কাহিনি কি?
— কিসের কাহিনি?
— কিসের কাহিনি এখন জানিস না তাইনা? শালা ধ্রুবর বাসার কাজের মেয়ের দিকে এই ভাবে তাকিয়ে ছিলি কেন?
— এমনি। তেমিন কিছুই না।
— তাই নাকি? নাকি তুই শেষ মেশ এই কাজের মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলি?
— আরে দূর কিসের প্রেম হুম? কাজের মেয়ের সাথে আমাদের যায় নাকি? এদের শুধুই ইউস করার জন্যই যথেষ্ঠ। আবার প্রেম হাহা। এদের ৫০০/১০০০ টাকা দিলেই ওরা এমনিতেই চলে আসবে।
— তবে দোস্ত মেয়েটা কিন্তু জোশ। মেয়েটাকে আমার ও ভালো লাগছে।
— ধ্রুব ঠিক হয়ে গেলে ধ্রুবকে বলে এই মেয়েকে আমাদের ক্লাবে নিয়ে আসবো। তারপর বাকিটা আমরাই করবো। আর আশা করি ধ্রুব আমাদের কথা ফেলবে না।
— হুম।
তারপর দু’জন দুজনের বাসায় চলে গেলো। অন্যদিকে তিশা ধ্রুবর জন্য খাবার নিয়ে দেখে ধ্রুব হাটার জন্য চেষ্টা করছে। এটা দেখে তিশা তাড়াতাড়ি করে ধ্রুবর কাছে গিয়ে বলল — কি করছেন এটা আপনি?
— দেখতেই তো পারছেন!
— ডাক্তার কি বলছে মনে নাই? ডাক্তার বলছে পায়ের উপরে প্রেশার না দিতে। তাও আপনি সেটাই করছেন।
— আসলে আমি ওয়াশরুমে যাবো তাই।
— আপনাকে না আমি বলছি কোনো কিছুর দরকার হলে আমাকে ডাকবেন। আর যদি আমাকে না ডেকে একা একা হাটার চেষ্টা করেন তাহলে অন্য পা ও ভেঙে দিবো।
তিশার রাগী মুখ দেখে ধ্রুব অবাক হয়ে গেলো। কিন্তু এখন কেনো জানি ধ্রুব তিশার উপরে রাগ দেখাতে পারছেনা। এবার তিশা ধ্রুবকে নিয়ে ওয়াশরুমের ভিতর নিয়ে গেলো। তারপর তিশা বাহিরে চলে আসলো। কিছুক্ষণ পরে ধ্রুব ফ্রেশ হয়ে দরজা খুলে দরজায় নক করতে থাকে। তিশা শুনেও না শোনার বান করে দাঁড়িয়ে থাকে।
ধ্রুব বলল — এইযে আমার হয়েছে।
তিশা কোনো কথা বলছেনা।
ধ্রুব আবার বলল — কানে শোনেন না নাকি আজব তো? ওকে ঠিক আছে আমি একাই বের হয়ে যাচ্ছি।
তিশা ধ্রুবর এই কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে ধ্রুবর সামনে চলে আসে। আর বলতে থাকে — এক পা সামনে এগিয়ে আসলেই অন্য পা ভেঙে দেবো কিন্তু।
ধ্রুব কি বলবে বুঝতে পারছেনা। সে তো তিশার কথা শুনে অবাক হচ্ছে। সে এই প্রথম অসহায় ভাবে তিশাকে বলল — আপনাকে তো আমি অনেক বার ডাকলাম আপনি তো কোন রেসপন্স করলেন না।
— আমার তো নাম আছে একটা তাইনা? আমার নাম তো এইযে না। আমার নাম তিশা ওকে? তিশা বলে ডাকবেন।
— ঠিক আছে আমাকে এখন বের করুন এখান থেকে ।
— আচ্ছা।
তারপর তিশা ধ্রুবকে নিয়ে খাটের উপরে শুইয়ে দিলো। খাটের উপরে শুইয়ে দিয়ে তিশা ধ্রুবর পাশে এসে দাঁড়াতেই একটা ১৭/১৮ বছরের মেয়ে ধ্রুবর রুমে এসে ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। (এটাই সেই মেয়ে তাহিয়া)
তাহিয়া ধ্রবকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলল — তোমার এই অবস্থা কি করে হলো? আমাকে একটি বার ও জানালে না কেন? তোমার কিছু হলে আমি তো মরে যেতাম। আর আমাকে কেনো কিছু জানাওনি তুমি? আমি কি পর হয়ে গেছি খুব?
তিশা তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। মেয়েটা ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। তিশার মনের ভিতর ভয় চলে আসলো। তিশার মনের ভিতর হাজারো প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে।
অন্যদিকে ধ্রুব ভাবছে তাহিয়কে আবার কে বলল এসব? আর তাহিয়া আমার বাসার ঠিকানা পেলো কোথা থেকে? এখন কি করবো আমি?
চলবে??