জানি তুমি ফিরবে পর্ব -১০

#জানি_তুমি_ফিরবে
[পর্ব – ১০]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

তিশা মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। আর তাহিয়া ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। তিশা ধ্রুব আর তাহিয়ার এই অবস্থা দেখে সে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছেনা। তার চোখে পানি টলমল করছে। আর মনে মনে ভাবতে থাকে। ধ্রুব তাহলে তিশাকে এই মেয়ের জন্য ইগ্নোর করছে। এই মেয়ের সাথে যদি রিলেশন থেকে থাকে তাহলে আমাকে বিয়ে করার কি দরকার ছিল? আমাকে বলতে তো পারতেন উনি অন্য কাওকে ভালোবাসেন। তাহলে তো আর আমি ওনার প্রতি দূর্বল হতাম না। এমন খারাপ মানুষ আমি আর কখনো দেখিনি।

ধ্রুব তাহিয়াকে বলল — তোমাকে আমার এই অবস্থার কথা কে বলছে? আর আমার বাসার এড্রেস কোথায় ফেলে তুমি?

–তুমি না বললে কি হইছে আমি তো নীলা আপুর থেকে সব জানলাম তুমি আমাকে পর ভাবলেও আমি তো তোমাকে পর ভবিনা ভাইয়া।

তাহিয়ার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে তিশার মন একটু হালকা হলো। তিশার বুকের উপর থেকে মনে হচ্ছে একটা বিশাল বড় পাথর সরে গেলো। তিশা এতক্ষণ ধ্রুবকে নিয়ে যে-সব ভাবছে সব ভুল প্রমাণ হলো। তিশা অহেতুক ধ্রুবকে খারাপ ভাবলো। এবার তিশা একটু সামনের দিকে এগিয়ে গেলো।

ধ্রুব একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলল — পাগলি একটা। আসলে আমি ইচ্ছে করেই তোমাকে জানাতে না করছি সবাইকে। কারণ তুমি হয়তো কষ্ট পেতে তাই।

— ভাইয়া এই পৃথিবীতে তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে বলো? জন্মের সময় বাবাকে হারিয়েছি। যখন বড় হলাম তখন মাকেও হারিয়ে ফেললাম। এখন তুমিও আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছো ভাইয়া? তোমরা সবাই খুব খারাপ খুব খারাপ।

— আরে কান্না করছিস কেন? দেখ আমার তেমন কিছুই হয়নি। আমি ঠিক আছি।

এবার তিশা এগিয়ে গিয়ে তাহিয়ার মাথায় রাখতেই তাহিয়া তিশার দিকে তাকালো। তখন তাহিয়া ধ্রুবকে বলল — ভাইয়া এটা কে?

— এটা তোমার ভাবি।

— মানে? তুমি বিয়েও করে ফেলছ আর আমাকে সেটাও বলনি। তোমার সাথে আর কোনো কথা নেই ভাইয়া। তুমি খুব পঁচা।

— আরে আবার রাগ করিস কেন? আসলে আমি আমার বিয়ের কথা কাওকে বলিনি।

ধ্রুব এই প্রথম তিশাকে নিজের স্ত্রীর বলল। ধ্রুবর কথা শুনে তিশা অনেক খুশি হয়ে গেলো। এবার তাহিয়া ধ্রুবর থেকে সরে এসে তিশার সামনে দাঁড়িয়ে বলল — ভাবি তুমি তো খুব মিষ্টি দেখতে। নাম কি তোমার?

— আমি তিশা। তোমার নাম কি?

— খুব মিষ্টি নাম। তুমি যেমন মিষ্টি তোমার নাম টাও খুব মিষ্টি। আমি তাহিয়া।

— তোমার নাম ও খুব মিষ্টি।

— ভাবি আমার ভাইয়াকে কিন্তু দেখে রাখবেন। আমার পরিক্ষা আছে। আমি এখন চলে যাবো। পরে আবার এসে গল্প করবো। এখন তো বাসা ও চিনে ফেলছি।

— ঠিক আছে বোন।

এবার তাহিয়া ধ্রুবর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল — ভাইয়া আমি আশি ভালো থেকো। নিজের খেয়াল রেখো। সাথে আমার ভাবির ও খেয়াল রাখবে কিন্তু।

এই কথা বলে তাহিয়া বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলো। এবার তিশা ধ্রুবর পাশে বসে বলল — আচ্ছা তাহিয়া আপনার কেমন বোন? ওর কথা তো এর আগে এই বাসায় কখনো শুনিনি। মা বাবা ও তো বলে নাই কখনো!

— আসলে তাহিয়ার কথা আমার মা-বাবা ও জানেনা। শুধুই আমার বন্ধুরা জানে।

— ও আপনার কেমন বোন?

— ও আমার রক্তের না হলেও এখন রক্তের সম্পর্কের থেকেও অনেক বেশি আপন হয়ে গেছে।

— আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। আমাকে আপনি সব খুলে বলুন।

— ঠিক আছে তাহলে শুনুন।

ফ্ল্যাশব্যাক
____________

তাহিয়ার আম্মুর সাথে আমার একটা রেস্টুরেন্টে দেখা হয়। আমি রেস্টুরেন্টের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম তাহিয়ার আম্মু অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। তারপর আমি আর আমার বন্ধুরা তাকে নিয়ে একটা হাসপাতালে চলে গেলাম। অনার জ্ঞান ফিরতেই উনি তাহিয়া বলে একটা ডাক দিলো। তখন আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম — কে আন্টি আপনি? আপনার কি হয়েছিলো?

— জানিনা বাবা হঠাৎ করে আমার মাথা টা ঘুরিয়ে উঠলো। তারপর আর আমার কিছুই মনে নেই।

— ওহ আচ্ছা আপনার বাসায় কে আছে? তার সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

— বাবা আমার শুধুই একটা মাত্র মেয়ে আছে।

— ওহ আর আপনার হাসবেন্ড?

হাসবেন্ড এর কথা বলতেই মহিলার চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করলো। তখন আমি মহিলার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম — কি হলো আন্টি? আপনি কান্না করছেন কেন?

— আসলে বাবা তাহিয়ার বাবা তাহিয়া অনেক ছোট বেলায় মারা গেছে। তারপর থেকে আমি আমার মেয়েকে নিয়ে থাকি।

— ওহ আচ্ছা। ওর ফোন আছে? তাহলে নাম্বার দেন আমি কল করছি।

— বাবা আমরাতো অনেক গরীব। আমাদের খাওয়া দাওয়া ও হয়না ঠিক ভাবে আবার ফোন। ফোন কেনার ক্ষমতা আমাদের নাই বাবা। আমার মেয়েটা কাল থেকে কিছু খেতে পারছেনা। আবার দুই দিন পরে ওর পরিক্ষা। ওর স্কুলের বেতন ও এখনো দিতে পারিনি। তাই টাকার জন্য বের হলাম হঠাৎ করেই কি যে হয়ে গেলো।

— আচ্ছা চলুন আপনাকে আমি বাসায় পৌছে দিয়ে আসি।

— বাবা ডাক্তারের খরচ দেওয়ার মতো টাকা তো আমার কাছে নেই।

— এসব নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না।

ধ্রুব এবার সিয়ামকে বলল — ওষুধ গুলো নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি। আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলছি। তাড়াতাড়ি তুই ওষুধ নিয়ে আয়।

সিয়াম ঠিক আছে বলে ওষুধ আনতে চলে গেলো। ধ্রুব ডাক্তারের বিল পরিষদ করে তাহিয়ার আম্মুকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে একটা রিকশায় উঠে বসলো। সিয়াম ওষুধ নিয়ে আসলো। তারপর সিয়াম কে বাসায় চলে যেতে বলে ধ্রুব মহিলাটাকে নিয়ে তার বাসায় চলে গেলো। কিছুক্ষণ পরে মহিলার বাসার সামনে পৌছে গেলো ধ্রুব। ধ্রুব খেয়াল করলো ছোট একটা ঘর।

— বাবা এটা আমার বাসা।

তারপর ধ্রুব মহিলাকে নিয়ে দরজার সামনে গিয়ে দরজার মধ্যে শব্দ করতেই একটা মেয়ে বেরিয়ে আসলো। আর সেই মেয়েটি হলো তাহিয়া। তাহিয়া দরজা খুলে তার মায়ের সাথে অচেনা একটা ছেলেকে দেখে ভয় পেয়ে গেলো। আর তার মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে মাথায় ব্যান্ডেজ করা। তাহিয়া খুব ভয় পেয়ে কান্না করতে করতে তার মাকে বলল — আম্মু কি হয়েছে তোমার? তোমার এই অবস্থা কেন?

ধ্রুব বলল — এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে ওনাকে ভিতরে নিয়ে রেস্ট করতে দেওয়া উচিৎ।

— তারপর তাহিয়া দরজা থেকে সরে যায়। আর ধ্রুব রুমের ভিতরে ডুকে দেখে রুমে ঘুমানোর মতো একটা খাট ও নেই। ধ্রুব বুঝতে পারে তাহিয়া দের অবস্থা খুব খারাপ। মেজেতে বিছানা করা। তারপর সেখানেই শুইয়ে দিলো মহিলাকে।

তাহিয়া বলল — আমার মায়ের এই অবস্থা কি করে হলো ভাইয়া?

তাহিয়ার মুখে ভাইয়া ডাক শুনেই ধ্রুব কেমন যেনো নিজের মুখের ভাষা হারিয়ে ফেললো। ধ্রুবর মনের ভিতর কেমন যেনো একটা ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করলো। তারপর ধ্রুব তাহিয়াকে সব কিছুই বলল।

তাহিয়া ধ্রুবকে বলল — অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।

— ধন্যবাদ কেন দিচ্ছো বোন? ভাইকে কি কেউ ধন্যবাদ দেয়?

তাহিয়া বলল — আচ্ছা আপনি একটু বসুন আমি আপনার জন্য চা করে নিয়ে আসি।

— এখন লাগবেনা। আমি আবার আসবো তখন না হয় খাবো।

— ঠিক আছে। আসবেন কিন্তু আবার।

এবার ধ্রুব মহিলার কাছে গিয়ে বলল — আন্টি আমি একটু পরে আবার আসবো। এখন আশি।

এই কথা বলে ধ্রুব বেরিয়ে চলে গেলো। তাহিয়াদের বাসার পাশে গিয়ে ধ্রুব জয় আর সিয়াম কে ফোন দিয়ে আসতে বলে। কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই চলে আসে। তারপর তারা তাহিয়ার বাসার জন্য বাজার আর কিছু ফল কিনে। আর ভালো দেখে একটা খাট কিনে নেয়। তারপর এসব নিয়ে চলে যায় তাহিয়ার বাসার দিকে।

চলবে??

রি-চেক করা হয়নি ভুল হলে ক্ষমা করবেন। গল্পটা মাত্রই লিখে পোস্ট করলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here