জানি তুমি ফিরবে পর্ব -১১

#জানি_তুনি_ফিরবে
[পর্ব – ১১]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

ধ্রুব তাহিয়া দের বাসার জন্য খাট আর বাজার নিয়ে চলে গেলো। বাসার সামনে গিয়ে দরজার মধ্যে টোকা দিতেই তাহিয়া এসে দরজা খুলে দেখে ধ্রুব দাঁড়িয়ে আছে। তাহিয়া দরজা খুলে ধ্রুবকে বলল — ভিতরে আসুন।

— ভিতরে পরে যায় আগে এসব ভিতরে নাও।

— এসব মানে কি?

সিয়াম তাহিয়ার দিকে বাজারে বেগ টা এগিয়ে দিলো।

ধ্রুব বলল — এসব তোমাদের জন্য। এখানে কিছু বাজার আছে। আর তোমাদের জন্য একটা খাট নিয়ে আসলাম। আন্টি অসুস্থ ওনার নিছে ঘুমালে শরীর আরো বেশি খারাপ করবে। তাই আন্টির কথা চিন্তা করে একটা খাট নিয়ে আসলাম।

— এসব কেনো নিয়ে আসলেন? আমি বা আমার মা কেউ কি আপনাকে বলছি আমাদের এসবের প্রয়োজন? আমরা কারো করুণা চাইনা। আপনি এসব নিয়ে চলে যান। আমাদের জন্য আপনি অনেক করছেন তার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। এসব নিয়ে আপনি ফিরে যান।

তখন ভিতর থেকে তাহিয়ার আম্মু বলল — কিরে মা কার সাথে কথা বলিস তুই?

— মা একটু বাহিরে এসে দেখে যাও।

তাহিয়ার আম্মু বাহিরে এসে দেখে ধ্রুব দাঁড়িয়ে আছে। তখন তিনি বলল — আরে বাবা কখন আসলে তুমি? আর বাহিরে দাঁড়িয়ে আছো কেন ভিতরে আসো তুমি।

— এই তো মাত্র এলাম। আপনাদের জন্য সামান্য কিছু বাজার আর এসব নিয়ে আসলাম।

তাহিয়া বলল — দেখুন এসব নিয়ে আপনি চলে যান। আমরা মানুষের করুণা নিয়ে বেচে থাকতে চাইনা। আমরা গরীব হতে পারি ভিক্ষুক না।

তাহিয়ার কথা শুনে ধ্রুবর মন খারাপ হয়ে গেলো। ধ্রুব মন খারাপ করে বলল — আমি করুণা করতে আসিনি তাহিয়া। আর কোনো ভাই কি তার বোন কে করুনা করতে পারে? কোনো ছেলে যদি তার মায়ের জন্য কিছু নিয়ে আসে সেটা কি করুণা হয়ে যায়? এটা আমার পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য কিছু উপহার হিসেবে নিলে আমি খুশি হতাম। আর যদি এসব না নিতে চাও তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।

তাহিয়ার আম্মু বলল — বাবা তুমি ওর কথায় কিছু মনে করোনা। ও অনেক ছোট এখনো। তুমি এসব ভিতরে নিয়ে আসো।

তারপর সব কিছুই বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো। তাহিয়া বলল — ভাইয়া সরি ওই সময় এমন ব্যবহার করার জন্য আমি দুঃখিত।

— এই ভাবে তো হবে না। আমি এতো সহজে কাওকে ক্ষমা করিনা।

— তাহলে কি করতে হবে?

— তোমার হাতের রান্না খাবো। আমাদের সবাইকে তোমার হাতে রান্না করে খাওয়ালে ক্ষমা করতে পারি।

— ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার! ঠিক আছে আমি রান্না করতে যাচ্ছি।

তারপর তাহিয়া রান্না করতে চলে গেলো। তাহিয়ার আম্মু বলল — বাবা কি দরকার ছিলো এসবের? এমনি তুমি আমার জন্য অনেক কিছুই করলে। আবার এসব? অনেক ধন্যবাদ তোমাকে বাবা।

— আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে কেন ছোট করছেন? আমি না আপনার ছেলের মতো? ছেলেকে কেউ ধন্যবাদ দেয়?

এবার মহিলা ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। ধ্রুব সেই মহিলার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল — আন্টি তাহিয়ার স্কুলে কতো টাকা বাকি আছে?

–মাকে কেউ আন্টি বলে?

— আচ্ছা মা। এবার বলুন।

— ৫ হাজার টাকা।

— ঠিক আছে। এই নেন টাকা। আর এবার থেকে তাহিয়ার পড়াশোনার সব দ্বায়িত্ব আমার। কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে জানাবেন। কোনো কিছু নিয়ে দ্বিধা করবেন না। আমাকে সরাসরি বলতে পারেন।

— বাবা তোমাকে আমি কি বলব বুঝতে পারছিনা। তুমি সত্যিই খুব ভালো একটা ছেলে তোমার জন্য দোয়া রইলো জীবনে অনেক বড় হও তুমি।

— হুম মা দোয়া করবেন শুধু আমার জন্য। সেটাই চলবে।

এবার তাহিয়া খাবার রান্না শেষ করে সবাইকে ডাক দিলো। তারপর সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া শুরু করলো। ধ্রুব খাবার খেতে খেতে বলল — বাহ তাহিয়া তুমি তো খুব ভালো রান্না করতে পারো।

তাহিয়া একটা মুচকি হাসি দিলো। তারপর সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার বাসায় চলে গেলো। ধ্রুবও নিজের বাসায় চলে গেলো। ধ্রুব এই বিষয়টা তার বাসায় ও কাওকে কিছুই বলেনি। দেখতে দেখতে এই ভাবে অনেক দিন কেটে গেলো। ধ্রুব আর তাহিয়ার পরিবারের সম্পর্ক আরো ভালো হতে থাকে ধ্রুব সব সময় গিয়ে তাহিদের খোঁজ খবর রাখে। তাহিয়া ধ্রুবকে নিজের বড় ভাইয়ের মতোই ভালোবাসে। আর ধ্রুবও তাহিয়াকে নিজের আপন ছোট বোনের মতো ভালোবাসে।

ধ্রুব বসে বসে তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে এমন সময় ধ্রুবর ফোন বেজে উঠলো। ধ্রুব ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে তাহিয়া ফোন দিয়েছে। ধ্রুব তাড়াতাড়ি করে ফোন রিসিভ করলো। আর তাহিয়া কান্না করতে করতে বলল — ভাইয়া আম্মু যেনো কেমন করছে আমার খুব ভয় লাগছে তুমি একটু তাড়াতাড়ি আসো।

ধ্রুব ঠিক আছে বলে ফোন পকেটে নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে যেতে চাইলে জয় ধ্রুবকে আটকে দিয়ে বলল — কিরে কি হইছে এতো তাড়াহুড়ো করে কই জাস তুই?

— তাহিয়া ফোন দিলো ওর আম্মু নাকি কেমন করছে। তাড়াতাড়ি যেতে হবে আমাকে।

— চল আমরাও যাই।

— ঠিক আছে চল তাহলে।

তারপর সবাই এক সাথে তাড়াতাড়ি করে তাহিয়ার বাসার দিকে রওনা দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা সবাই পৌছে যায় বাসায়। ধ্রুব বাসায় যেতেই তাহিয়া ধ্রুবর কাছে এসে কান্না করতে করতে বলতে থাকে — ভাইয়া আম্মু কেমন যেনো করছে একটু দেখোনা প্লিজ।

এবার ধ্রুব তাহিয়ার আম্মুর কাছে গিয়ে বলল — কি হয়েছে আপনার? কেমন লাগছে আপনার?

— বাবা আমার বুকে ভিষণ ব্যাথা করছে। মনে হয় আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে বাবা।

— এসব কি বলছেন আপনি? আপনাকে আমি এক্ষনি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি কিছু হবেনা আপনার।

— না বাবা আমাকে আর হাসপাতালে নেওয়ার দরকার নেই। আমি তোমাকে কিছু কথা বলে যেতে চাই।

— পরে কথা বলতে পারবেন আগে আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।

— না বাবা আগে আমার কথা শোনো।

— কি কথা বলুন!

— বাবা আমার মেয়েটার আমি ছাড়া এই দুনিয়াতে আর কেউ নাই। আমি মরে গেলে আমার মেয়েকে তুমি দেখে রেখো প্লিজ। মেয়েটা জন্মের পর পর বাবাকে হারিয়েছে এখন আমিও আর থাকবোনা। মেয়েটা আমার একা হয়ে যাবে। ওকে একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দিয়।

তাহিয়া — আম্মু তুমি এসব কি বলছো চুপ করো। তোমার কিছু হবেনা। আমি তোমাকে কোথাও যেতে দেবনা।

ধ্রুব — আমি কথা দিলাম তাহিয়াকে আমি নিজের আপন বোনের মতো দেখে রাখবো। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না মা।

— অনেক ভালো লাগলো বাবা। এখন আমার আর কোনো চিন্তাই নাই। এবার আমি মরতে পারি। তুমি আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো। আমার মেয়েকে আমি তোমার হাতে তুলে দিয়ে গেলাম।

এই কথা বলার পরেই তাহিয়ার আম্মু শ্বাস নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলো। তিমি তার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন। চিরকালের জন্য চোখ বন্ধ করে ফেললো। তাহিয়া কান্না করতে থাকে। তাহিয়া ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কান্না করতে থাকে। ধ্রুব তাহিকে বুকে নিয়ে সান্ত্বনা দিতে থাকে।

এবার বাস্তবে ফিরে আসি।

ধ্রুব কথা গুলো এতক্ষণ তিশার কাছে বলছিলো। ধ্রুবর মুখে এমন কথা শুনে তিশা যেনো ধ্রুবর প্রতি আরো দুর্বল হয়ে পড়ছে। তিশা অবাক হয়ে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে রইলো। যেনো তিশার চোখের পলক নড়ছেনা। সে ধ্রুবর কথা গুলো শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলো। ধ্রুবর জন্য তার মনের ভিতর ভালোবাসা আরো বেড়ে গেলো।

তিশার চোখে ধ্রুবর চোখ পড়তেই তিশা লজ্জা পেয়ে নিজের চোখ সরিয়ে নিলো।

তিশা বলল — তো তাহিয়াকে তো বাসায় নিয়ে আসতে পারেন। আর বাসার সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন।

— আমার মা-বাবা জানে কিন্তু তারা এখনো তাহিয়াকে দেখে নাই। কারণ আমি তাহিয়ার পরিক্ষা শেষ হলে আমাদের বাসায় নিয়ে আসবো।

— হুম সেটাই ভালো হবে। আচ্ছা আমি আশি রান্না করতে হবে৷

তারপর তিশা রান্না করতে চলে যাবে এমন সময় তিশার মনে হলো ধ্রুব তিশার শাড়ির আঁচল টেনে ধরছে। তিশা লজ্জা পেয়ে গেলো।

চলবে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here