জেদ পর্ব -১০

#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট১০
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
হঠাত করে আরদ্ধকে দেখে চমকে উঠলাম আমি।আমার হাত থেকে কখন শাড়িটা পড়ে গেছে টেরও পাইনি। আরদ্ধ নেশাতুর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর এক পা এক পা করে আগাচ্ছে আমার দিকে।আরদ্ধকে সামনে আগাতে দেখে আমি ভয়ে পিছাতে লাগলাম।কিন্তু কতদূরই বা যেতে পারব!এক পর্যায়ে পিঠ ঠেকে গেল দেওয়ালে।আমি দু হাতে নিজেকে ঢেকে চোখ বন্ধ করে নিলাম।
বেশ কয়েক সেকেন্ড যাবত ও ভাবেই আছি আমি।চোখ খুলতে যাব ঠিক তখনি আরদ্ধ আমার কোমড় পেচিয়ে ধরে ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে দিল।
আমি চোখ বড় বড় করে আরদ্ধকে দেখছি।
আরদ্ধ একরাশ মাদকতা নিয়ে আমার ঠোট চুষছে।যেন খুব মিষ্টি কিছুর সন্ধান পেয়েছে সে।
আমার ঠোট ছেড়ে দিয়ে আরদ্ধ কুচিটা কোমড়ে গুজে দিল।আমি অবাক হয়ে দেখছি।কখন করল সে এসব!আমি কিছু জিজ্ঞেস করব তার আগেই বুকের মধ্যে আচলটা ঠিক করে দিয়ে বলল
-Now You’re looking like my queen.Stay here নড়বে না।
আমাকে দাড় করিয়ে রেখে আরদ্ধ আমাকে জুয়েলারি পড়াতে লাগল।আরদ্ধ একটা একটা করে জুয়েলারি চেক করছে আর বিরক্ত হচ্ছে।ওকে দেখে বেশ কনফিউজড লাগছে।
-কি হলো?সমস্যা কোন?
আমি জিজ্ঞেস করলাম।
আরদ্ধ মাথা না ঘুরিয়ে উত্তর দিল
-এই একটা সমস্যা।তোমাকে হেভি কোন জুয়েলারিতে মানায় না।আমি প্রতিবার তোমার জন্য জুয়েলারি কিনতে গিয়ে ঝামেলায় পরি।
-এই জন্যেই মেহরিন বলেছিল তোমার পার্টনারের ফ্যাশন সেন্স কম।
কথাটা বলেই আমি আচল ঠিক করতে মনযোগ দিলাম।আমি জানি আরদ্ধ আমার উপর রেগে যাবে এখন। মুখ ফুলিয়ে বসে থাকবে। রাগলে ওকে খুব কিউট লাগে।ফর্সা গালগুলো আপেলের মত লাল হয়ে ওঠে।তখন ওর রাগ ভাংগাতে আমার বেশ লাগে।
কথাগুলো ভেবে আমি আনমনেই হেসে দিলাম।আচল ঠিক করে মাথা তুলে তাকাতেই কেপে উঠলাম আমি। আরদ্ধ আমার দিকে তাকিয়ে ফুসছে।ওর মুখের চোয়াল শক্ত হয়ে আছে।দুহাত মুষ্টিবদ্ধ করে ও রাগ দমানোর চেস্টা করছে।
আরদ্ধকে এই মুহুর্তে প্রচন্ড ভয় লাগছে আমার।আমি কাপা কাপা পায়ে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম আমি।
-আরদ্ধ আমি…..
আরদ্ধ আচমকা আমাকে জাপটে ধরে ডান হাত দিয়ে আমার চোয়াল চেপে ধরে বলল
-তোমাকে না কতবার বলেছি আমাদের মাঝখানে অন্যকাউকে আনবা না!কে কি বলল কে কি ভাবল সেটা গোনার টাইম আমার নেই।I damnly don’t give a shit to them.একটা কথা ভালো করে শুনে রাখো আমার পাশে শুধু তোমাকেই মানায়।আল্লাহ ইনায়াতকে শুধু আরদ্ধর জন্যেই বানিয়েছেন।You’re meant to be mine.Only mine.
আরদ্ধ আমাকে ছেড়ে দিয়ে রাগে গজরাতে গজরাতে বের হয়ে গেল রুম থেকে। আমি হা হয়ে বসে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।বাব্বাহ কি এমনটা বললাম যে ছেলেটা এত রেগে গেল আমার উপর!আরদ্ধের চোখের এই রাগটাই আমি দেখেছিলাম যেদিন আমাকে প্রথমবার বলেছিল “ভালোবাসি”.
.
.
আরদ্ধর মুখ থেকে ভালোবাসি শোনাটা যতটা মোহনীয় ছিল তার চেয়েও বেশি কঠিন ছিল তাকে ভালোবাসা অনুভব করানোটা।প্রয়োজন আর প্রিয়জনের মধ্যকার পার্থক্য জানা ছিল না তার।তার যান্ত্রিকতায় ভরা জীবনে ভালোবাসার ছোয়া লাগানো যেন পাথরে ফুল ফোটানোর মতই কঠিন ছিল।শুরুতে এই পাহাড় কঠিন কাজটা নিজের অজান্তেই করে যাচ্ছিলাম আমি কিন্তু এত সহজে আরদ্ধের ভালোবাসা পাওয়া আমার সাধ্যে ছিল না।
আরদ্ধকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম তখন থেকেই ওর সবকিছুতেই যান্ত্রিকতার ছোয়া পেয়েছিলাম।কাজ করা থেকে শুরু করে কথা বলার ধরন পর্যন্ত যান্ত্রিক ছিল।আরদ্ধর আরেকটা ব্যাপার খুব অবাক লাগতো।সহজে রাগ করত না সে।কারও কোন ফাইলে কোন ভুল ত্রুটি হলে বা কোন মেইল সাবমিশনে লেট হলে আরদ্ধকে কখনোই রাগারাগী করতে দেখিনি আমি।শুধু হীমশীতল চোখে কয়েক সেকেন্ড নিষ্পলক তাকিয়ে থাকত সামনের ব্যক্তির দিকে।তাতেই যেন সেই বান্দার অন্তরাত্মা কেপে উঠত।শুরু থেকেই আরদ্ধকে আমার ব্যতিক্রম মনে হলেও আমি তার প্রতি কোন সফট কর্নার রাখিনি মনে।কাউকে ভালোবেসে না পাওয়ার কষ্ট টা আমার কাছে চরম অসহ্যনীয়।এই ব্যাথা আমি কখনো সহ্য করতে পারব কি না কে জানে! আরদ্ধ বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলে।শুধু বড়লোক বললেও ভুল হবে যেন।সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছে সে।তবে বাবার পরিচয় দিয়ে খুব একটা পছন্দ করে না সে।যোগ্যতা আর দক্ষতায় তার বাবার চেয়েও কয়েকধাপ এগিয়ে সে।ফ্লোরিডা থেকে পিএইচ ডি শেষে দেশে ফিরে আসার পর তার বাবা চেয়েছিল আরদ্ধ যেন তার কোম্পানি দেখা শোনা করে।কিন্তু আরদ্ধের জেদ ছিল নিজের কিছু করার।নিজের যোগ্যতায় প্রতিষ্ঠার এক বছরের মধেই তার কোম্পানিকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে এসেছে সে।রুপ,গুন,যোগ্যতা দক্ষতায় আরদ্ধএর মত আর একটা পার্ফেক্ট ছেলে আমি আমার সারাজীবনেও খুজলে পাব বলে মনে হয় না আমার।
অপর দিকে মধ্যবিত্ত ফ্যামিলিতে জন্ম নেওয়া সাধারন একটা মেয়ে আমি।বাবা মায়ের এক মাত্র মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও খুব একটা আদরের ছিলাম না।ছোট থেকেই বেশ কড়া শাসনে বড় হয়েছি আমি।মেয়ে হওয়ায় বাধ্যবাধকতা যেন একটূ বেশিই ছিল।বাবা মায়ের দায়িত্ব কমাতে একটা পাবলিক ভার্সিটী থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে জব করছি একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে।আমার মত হাজারো মেয়ের ড্রিম বয় আরদ্ধ ।হাত বাড়ালেই যেকোন বড়লোক বাবার হাই কোয়ালিফাইড সুব্দর মেয়ের সাথে ঘর বাধতে পারত সে।কিন্তু এত সব মোহ ফেলে আমার নেশায় মগ্ন হওয়া ব্যাপারটা আজীবন আমার কাছে এক অমিমাংসিত রহস্য।
.
.
দিন গড়াচ্ছিল আমার প্রতি আরদ্ধের রুক্ষ্মতার মাত্রা বাড়ছিল।অফিসে বাইরে,ক্যান্টিনে যেখানেই সুযোগ পেত দু চারটে কড়া কথা শুনিয়ে যেত।তখন ব্যাপারটা বুঝতে না পারলেও এখন বেশ বুঝতে পেরেছি।আমাকে অফিসের কোন মেল কলিগের সাথে কথা বলতে দেখলে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠত সে।তার সাথে ছাড়া অন্য কারও সাথে এক মুহুর্ত সময় কাটাই ব্যাপারটা যেন সহ্য হত না তার।উহু না তখনো সে আমাকে ভালোবাসে নি ।ভালোবাসা ,আবেগ,অনুভূতি এই শব্দগুলার সাথে দূর দূরান্তের সম্পর্ক ছিল না তার ।তবে আমাকে পাওয়ার একটা অদম্য ইচ্ছা জেগেছিল তার মনে।আমাকে নিজের করে রাখার জেদ চেপে বসেছিল তার মন ও মস্তিষ্ক জুড়ে।অফিসে আমার কাজের সাথে বাড়ছিল তার জেদের মাত্রাও।আরদ্ধ রেওয়াত কোন কিছু চেয়েছে আর তা পাবেনা সেটা কি করে হয়!সুযোগ বুঝে আমাকে একদিন সাইট ওয়ার্কের নাম করে নিয়ে গেল আমার সবচেয়ে উইক পয়েন্টে।নদীতে…….
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here