জেদ পর্ব -১১+১২

#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট১১
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
ভয় আর আতংক দুই মিলে এক অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করে আমার মধ্যে জলরাশির বিশালতা দেখলে।আরদ্ধ ব্যাপারটা খুব ভালো করেই বুঝেছিল “ফ্রাঞ্চাইরিজ কোম্পানির” লাঞ্চ মিটিং এ।
চায়না থেকে আগত বিজনেসম্যানেরা দুইদিনের জন্যে একটা রিসোর্ট বুক করেন।অফিসের গোলযোগের বাইরে একটা ক্লান্তিহীন পরিবেশে কাজ সম্পন্ন করার জন্যে রেওয়াত গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজকে ইনভাইট করা হয় তাদের সেই রিসোর্টে।বেশ সুন্দর করে সাজানো ছিল রিসোর্টটা।রিসোর্টের চারদিক দিয়ে বয়ে গেছে একটা কৃত্রিম খাল।সেই খাল পার করেই যেতে হবে রিসোর্টের মেইন ফটকে।খালের উপর বানানো ছোট্ট একটা কাঠের ব্রীজটাই রিসোর্টে যাওয়ার উপায়।কিন্তু মেরামত কাজের অবহেলা আর ভারী বস্তু বহনের কারনে দুই দিন আগে ধ্বসে পরেছে সাকোটি।গাড়ি কেন মানুষ চলাচলেরও অযোগ্য হয়ে পরেছে সেটি।তাই উপায়ান্তর না থাকায় নৌকা বিলাস করেই যেতে হবে ওপারে।নৌকাতে প্রথম বার পা রাখতেই যেন গা শিউরে উঠল আমার।নিজেকে সংযত রেখে বসে পরলাম ঠিক মাঝ বরাবর।পানি ভীতির কারনেই নৌকা ভ্রমন তো দূরে থাক কখনো পুকুর বা নদীর ধারে কাছেও যেতাম না আমি।অথচ সেই আমাকেই কিনা অজানা অচেনা একটা মানুষের সংগে এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার পাড়ি দিতে হচ্ছে।ভাগ্য যেন আমার সাথে ছিল।খাল পেরিয়ে মিটীংটা বেশ সুন্দর করে মিটীয়ে ফিরছিলাম আমরা।মনে মনে শুধু জপছি কখন নৌকা ওপারে পৌছাবে।কিন্তু কথায় বলে না!-“যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়।“নৌকা পাড়ে পৌছাতে না পৌছাতেই তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে ঘটল বিপত্তি।
কাদামাটিতে পা পড়ায় পিছলে গিয়ে পানিতে পড়েছিলাম।ভাগ্য ভালো শুধু হাটু অব্দি ডুবেছিল।কিন্তু তাতেই আমার আত্মারাম খাচাছাড়া হয়ে যাওয়ার উপক্রম।চিতকার করে আর কেদেকেটে একেবারে একাকার অবস্থা আমার।আরদ্ধ আমাকে দেখে যতটা না বিরক্ত হয়েছিল তার চেয়েও বেশি অবাক হয়েছিল।আমাকে পাড়ে টেনে তুলার পরেও পাগলের মত আচরন করতে দেখে পুরোই বোকা বনে গিয়েছিল সে।অবশেষে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিল এত চেচানোর কি আছে? হাটু জলে পরেছিলে।খালের মাঝখানে পরলেও তো ডুবতে না।এম্নিতেই ছোট এরিয়া তার উপর শুকনো মৌসুম চলে।
আরদ্ধর কথার জবাবে হালকা কাপুনি ছাড়া আমি সেদিন কিছু বলতে পারিনি। তবে গাড়ি থেকে নামার সময় বলেছিলাম
-হয়তো পানিতে ডুবে মরতাম না কিন্তু আমার পানি ভয় তার আগেই আমাকে মারর ফেলত।I am afraid of water.
কথাটা বলে এক সেকেন্ডের জন্যে আরদ্ধের চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।আরদ্ধের যন্ত্রসচল চোখে সেদিন প্রানের অস্তিত্ব অনুভব করেছিলাম আমি।আরদ্ধকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই আমি সেদিন বাসায় চলে এসেছিলাম।
আরদ্ধ সেই সুযোগটাকেই ভালো করে কাজে লাগিয়েছিল।
.
.
অফিসের কাজ শেষ করে ডেস্ক গুছাচ্ছি আরদ্ধ আমাকে কল করে তার কেবিনে ডাকল।রুমে ঢুকতে না ঢুকতেই এক গাদা ফাইল হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল
-মিস ইনা আপনার যদি সমস্যা না থাকে এই ফাইলগুলোর কাজ শেষ করে তারপর বাসায় যান।ফাইলগুলো আজকেই লাগবে আমার।
-বাট স্যার….
-প্লিজ….
আরদ্ধ অনুরোধ করলেও তার সুরে যে আদেশের একটা প্রগাঢ়তা ছিল সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছিলাম আমি।তাই কোন কথা না বলে ফাইল নিয়ে ফিরে আসলাম নিজের কেবিনে।
কাজ শেষ হল সন্ধ্যা নামার ঘন্টা খানেক আগে৷ফাইল জমা দিয়ে অফিস থেকে বের হব দেখি আরদ্ধ কেবিনে নেই।হয়তো চলে গেছে।আরদ্ধের টেবিলে ফাইলগুলো গুছিয়ে রেখে বের হয়ে আসলাম আমি।অফিসের বাইরে পা ফেলতেই আরদ্ধের গাড়ি এসে রাস্তা আটকে দাড়াল আমার।জানালার কাচ নামিয়ে বলল
-এভাবে যেতে থাকলে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।Better আপনি আসুন আমি আপনাকে ড্রপ করে দিচ্ছি।
ফোন থেকে মাথা না তুলেই বলল আরদ্ধ।আমি কিছুটা বিব্রত বোধ করলেও আরদ্ধের কথার যৌক্তিকতা বুঝতে পেরে গাড়িতে উঠে পড়লাম।প্রায় ঘন্টাখানেক পথ চলার পরেও যখন বাসায় পৌছাচ্ছিলাম না।আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আরদ্ধের দিকে তাকাতেই সে বলল
-একজন ক্লাইন্ট টেক্সট করেছেন।একটা ইম্পরট্যান্ট কাজে যেতে হবে।Don’t worry.We’ll be back in half an hour.
মিনিট পাচেক পরে গাড়ি থামল একটা বড় লেকের পারে।ঢাকা শহরে এসব পানির আধারের অভাব নেই।কিন্তু এই লেকটা যেন অন্যরকম সুন্দর।প্রসস্থতে কোন ছোট খাটো নদীর সমান। গাঢ় সবুজ কচুরীপানার মধ্যে বেগুনী ফুল লেকের শোভা বাড়াচ্ছে।ভরা মৌসুমের কারনে দুকুল কানায় কানায় ভরা। ।কাছে যেতেই দেখতে পেলাম লাল গোলাপে সাজানো ছোট একটা নৌকা ভাসছে।আরদ্ধ পাড়ে গিয়ে দাড়াতেই মাঝি নৌকা নিয়ে এগিয়ে এল।আরদ্ধ এগিয়ে গিলে নৌকায় উঠল।আমি পাড়ে দাঁড়িয়ে পানির দিকে তাকিয়ে কাপছি। আরদ্ধ আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল
-ওখানে দাড়িয়ে আছ কেন? Get in.
আমি কাপা কাপা গলায় বললাম
-আমি না গেলে হয় না?
-যদি হতো তাহলে তোমাকে নিয়ে আসতাম না।এখন কথা না বাড়িয়ে চলে আসো।
কথাটা বলে আরদ্ধ আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।আমি আরদ্ধের হাত ধরে নৌকায় উঠলাম।নৌকার একপাশে গুটিসুটি মেরে বসে আছি আমি।ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় এসে নৌকা থেমে গেল।আমি এক রাশ ভয় নিয়ে চোখ তুলে সামনে তাকালাম।আরদ্ধ দুহাত পকেটে গুজে উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে আছে।আমি কাপা কাপা গলায় বললাম
– কি হলো?নৌকা থেমে গেল কেন!
কিছু বলার আগেই মাঝি এক ঝাপ দিয়ে নৌকা থেকে পানিতে নেমে পড়ল। চোখের পলকেই সাতরে তীরে উঠে চলে গেল।এক পলকের জন্যেও ফিরে তাকাল না। আমার আত্মা যেন এবার খাচা ছাড়ার উপক্রম।তীব্র ভয় এসে গ্রাস করল আমাকে।চারদিকে রাগে ভয়ে কাপতে কাপতে বললাম
-মাঝি কোথায় গেল?আপনি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন?কি চান আপনি?
-তোমাকে?
শান্ত শীতল কন্ঠে আরদ্ধ জবাব দিল।আরদ্ধের কথা শুনে আমি হতবম্ব হয়ে গেলাম।
-দেখ ইনায়াত আমার ঘুরায় পেচায় কথা বলার অভ্যেস নেই।আমি যা বলার সোজাসুজি বলতে পছন্দ করি।তোমাকে আমি পছন্দ করি।তোমাকে আমার চাই। I want you.
.
.

আরদ্ধের কথা শুনে অবাক হয়ে আছি আমি।ছেলেটার কি মাথা খারাপ হল নাকি! অথৈ জলে এনে আমাকে এসব কি বলছে সে!
না এখন মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ কর‍তে হবে।উলটা পাল্টা কিছু বলা যাবে না।আমি নিজেকে সামলে বললাম
-দেখেন কাউকে ভালোলাগা আর ভালোবাসা এক জিনিস না।ভালোলাগা অস্থায়ী।আজ আছে কাল উবে যাবে৷ তখন আমাকে আর আপনার ভালো লাগবে না।
-তোমার কথায় ভুল নেই।কিন্তু এটাও তুমি অস্বীকার করতে পারবে না যে ভালোলাগা থেকেই ভালোবাসার শুরু হয়। আমার ভালোলাগা আমার জেদের মতোই দৃঢ়।আর আমি যখন কোন কিছুর জন্যে জেদ করি সেটা শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত টিকিয়ে রাখি।
– মি.আরদ্ধ এটা জরুরি না যে আপনি যাকে পছন্দ করেন তাকেও আপনাকে ভালোবাসতে হবে। I don’t love you.আপনার জেদের জন্য আপনি আমাকে বলির পাঠা বানাতে পারেন না।I cannot be with you.
আমার কথায় আরদ্ধ বেশ রেগে গেল।আমার কাছে তেড়ে এসে আমার দুই বাহু ধরে ঝাকিয়ে বলল
– কতটুক জানো আমাকে?কতটুক চিনেছ তুমি আমাকে?একটা মানুষকে না জেনেই কিভাবে বলতে পারো যে তাকে তোমার পছন্দ না? কি জানো কি তুমি আমার ব্যাপারে?
আরদ্ধের ওরকম বিহেব দেখে আমি আরও ভয়ে কুকড়ে গেলাম।আমাকে ভয় পেতে দেখে আরদ্ধ আমাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়াল।
-ইনা ছোট থেকেই আমি যেটা জেদ করি যেটা পূরন করি।তোমাকে পাওয়া আমার লাইফের সবচেয়ে বড় জেদ। আর সেটা যদি পূরন না হয় তবে আমার থাকার কোন মানে হয় না।
কথাটা বলতে না বলতেই আরদ্ধ একটা লোহার রড দিয় নৌকাটাতে ফুটো করে দিল।পরপর বেশ কয়েকটা ছিদ্র করতে লাগল সে।ছিদ্র ছাপিয়ে ঘোলা জল চুয়ে উঠছে নৌকায়। এভাবে চললে ১০ মিনিট ও লাগবে না তলিয়ে যেতে। আরদ্ধের দিকে তাকিয়ে দেখি সে নর্বিকার ভাবে শীতল চোখে তাকিয়ে আছে।আরদ্ধর ফর্সা ধবধবে চেহারাটায় বিষন্নতার গাঢ় ছায়া ভর করে আছে।ভয় এর তীব্রতা আমাকে এতোটাই গ্রাস করে ফেলেছিল যে হিতাহিত ভুলে আমি চেচিয়ে উঠলাম
-Ok আপনি যা বলছেন তাই হবে। বাট আমার কিছু সময় লাগবে।আর সেটা তখনি সম্ভব হবে যখন আমি এখান থেকে বেচে ফিরব। So for God’s sake আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করুন।
আমার কথা শুনে আরদ্ধ ধীর পায়ে আমার কাছে এগিয়ে এল।আমার কাছে বসে বলল
-সত্যি বলছ?
এবার যেন মেজাজ বিগড়ে গেল আমার।চট করে উঠে দাঁড়িয়ে চেচিয়ে বললাম
-আমার জানের উপর উঠে এসেছে আর আপনার মনে হচ্ছে এই রকম একটা মুহুর্তে আমি মিথ্যা কথা বলব!
আমার কথায় আরদ্ধ হাল্কা হেসে পকেট থেকে একটা ছোট বাক্স বের করল।আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে আমার ডান হাতটা টেনে নিল।অনামিকা আংগুলে একটা ডায়মন্ডের রিং পরিয়ে বলল
-ইনা আজ থেকে তুমি আমার। তোমার হাসি কান্না সুখ দুখ সব কিছুতেই আমি তোমার সাথে সমান ভাবে থাকব।আমি জানি এক না একদিন তুমি ঠিকই আমাকে মেনে নিবে। কারন জোর করে কারও অনুভুতি নিজের করে নেওয়া যায় না।তবুও যদি কখনও মনে হয় তুমি আমার সাথে থাকতে পারবে না তাহলে আংটিটা আমাকে খুলে দিও।আমি কোন প্রশ্ন ছাড়াই তোমাকে মুক্ত করে দিব।
আরদ্ধ উঠে দাঁড়িয়ে আমার কপালে একটা চুমু খেল।সেই প্রথম বার আরদ্ধ আমাকে স্পর্শ করল।ওরকম একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতেও আরদ্ধের অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ যেন আমার মনকে নাড়া দিয়ে গেল।এক মুহুর্তের জন্যে যেন ভুলে গেলাম আমি কোথায় আছি!কার সাথে আছি।আরদ্ধের যান্তিকতাকে ছাপিয়ে সেদিন প্রথম বারের মত তার মধ্যে একজন আবেগী মানুষের অস্তিত্ব খুজে পেয়েছিলাম আমি।
আরদ্ধ সরে দাড়াতেই আমি চোখ খুললাম।পাশে আরেকটা নৌকা এসে দাড়িয়েছে।আরদ্ধ আমাকে হাত ধরে টানছে সেটাতে যাবার জন্যে। কিন্তু আমি যেন জমে গেছি।নড়বার শক্তি টুকু পাচ্ছি না।এদিকে নৌকা প্রায় ডুবুডুবু অবস্থা।অর্ধেক নৌকা পানিতে তলিয়ে গেছে।আরদ্ধ উপায় না দেখে আমাকে পাজাকোলা করে তুলে নিল।
ভয়ের তীব্রতা হয়তো ফোবিয়া রোগীদের থেকে ভালো কেউ জানে না। গাড়িতে ফেরার পরেও যেন ভয় আমাকে ছাড়ল না।হাত পা কাপছে আমার ।আমার অবস্থা দেখে আরদ্ধ আমাকে দু হাতে জড়িয়ে ধরে বলল
-ইনায়াত আমি চাইলেও তোমাকে বলতে পারব না আমি তোমাকে ভালোবাসি।কারন ভালোবাসা শব্দটার সাথে আমি পরিচিত না।কীভাবে ভালোবাসতে হয় আমি জানি না।আমি চাই তুমি আমার লাইফে ভালোবাসার নতুন রঙ হয়ে আসো।আমাকে শব্দটার সাথে পরিচিত কর যাতে আমি সবটুকু দিয়ে তোমাকে ভালোবাসতে পারি।…….#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট১২
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
.

-ভালোবাসি।
আরদ্ধের কথায় ঘোর ভাংল আমার।জানালার মিষ্টি খোলা হাওয়ায় দাঁড়িয়ে চোখ বুজে জীবনের রঙ্গিনতম মুহুর্তগুলোকে স্মরন করছিলাম।আরদ্ধ পেছন থেকে এসে দুহাতে আমাকে জাপটে ধরে ঘাড়ে ঠোট ডুবিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল।
আরদ্ধের গরম নিশ্বাস আমার ঘাড়ে এসে পড়ছে।নিদারুন ভালোবাসার উষ্ণতায় ছেলেটা আমাকে ডুবিয়ে রেখেছে। অথচ এই ছেলেই কিনা একদিন আমাকে বলেছিল ভালোবাসা কি তা সে জানে না।
-আমি চলে গেলে কখনো ফেরাবেনা আমাকে ?
আরদ্ধ অভিমান মেশানো কন্ঠে বলল।
-উহু।
-কেন?
বিষ্ময় উপচে পরছে তার কথায় ।আমি আমার পুরো ভার তার উপর ছেড়ে দিয়ে বললাম
-কারন আমার তোমাকে কখনো খোজার দরকার হবে না।তুমি কখনো আমাকে হারাতে দিবে না।থাকতে পারবে আমাকে ছেড়ে?
আমার প্রশ্নের জবাবে আরদ্ধ ছোট একটা নিশ্বাস ফেলে বলল
-ইনা তুমি আমার লাইফে অক্সিজেনের মতই ইম্পরট্যান্ট ।তোমাকে ছেড়ে এক সেকেন্ডও আমি নিজেকে চিন্তা করতে পারি না।
আমি আরদ্ধের দিকে ফিরে হেসে তার ঠোটে ঠোট ডুবালাম।আরদ্ধ দুহাতে আরও শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে নিল।
.
.
বাসায় ফিরতে আজকেও একটু লেট হয়ে গিয়েছে।কিন্তু কাউকে কোন কৈফিয়ত দেওয়ার কোন ইচ্ছে করছে না।আরদ্ধ খুব যত্ন করে আমার জন্যে আজকের দিনটা সাজিয়েছে।ওর দেওয়া সারপ্রাইজ ,গিফট,সবকিছুর চেয়ে দামি ওর বাহুডোরে আবদ্ধ থাকা সেই মুহুর্ত গুলো আমার আজকের দিনটাকে বেশ স্মরনীয় করে তুলেছে।
বাসায় ফিরে কলিং বেল চাপতেই আম্মু এসে হাসিমুখে দরজা খুলে দিলেন।আম্মুর আচরন দেখে বেশ অবাক হলাম আমি।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি আসলেই দেরী হয়ে গেছে।সন্ধ্যা হয়েছে আরও ঘন্টা খানেক আগে।কিছুক্ষন পর চারদিক এশার আযানে মুখোরিত হবে।তবে রহস্য উদঘাটন করতে বেশি বেগ পেতে হল না আমার ।বাসার ভেতরে গিয়ে দেখি ইমতিয়াজ আংকেল আর ফ্যামিলি এসেছেন আমাদের বাড়ীতে।আমি কিছু বলার আগে মা বলে উঠল
-আজ তোর জন্মদিন তাই জন্যে তোর বাবা ইমতিয়াজ আংকেলকে বাসায় দাওয়াত করেছেন।আরায ও এসেছে।ও ওয়াশরুমে গেছে।
মার কথার জবাবে আমি হালকা।
-আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি ।
বলেই আমি রুমের দিকে পা বাড়াতে যাব পেছন থেকে বাবা বলে উঠলেন
-ইনায়াত তুমি না সকালে কুর্তি আর জিন্স পরে গিয়েছিলে অফিসে তো শাড়ী কোথায় পেলে?
বাবার কথায় আমি থমকে গেলাম।পেছন ফিরে বললাম
-অফিস শেষে পার্টি ছিল।তো সেখানেই চেঞ্জ করেছিলাম।
বাবা কিছু বলার আগেই আরাজ এসে বলল
-আমি ইন্সটাগ্রামে ছবি দেখেছি আংকেল ।ওর কলিগরা বেশ জাকজমকের সাথে ওর বার্থডে সেলিব্রেট করেছে।আমার বার্থডেতে আমার কলিগরা খালি ফুল দিয়েই হাওয়া হয়ে গিয়েছিল।I must say Ina you’ve got very supportive colleagues.
আমি হেসে মাথা নাড়ালাম।
-ওহ ইনা আমাকে তোমার রুম দেখাবে না?আন্টি বলল তুমি নাকি অনেক সুন্দর করে রুম গুছিয়ে রাখ!
আরাজের কথার কোন জবাব না দিয়ে আমার পিছু পিছু রুম পর্যন্ত চলে আসল।
-That’s so rude,Ina.আমি তোমাকে আংকেলের হাত থেকে বাচালাম আর তুমি কিনা থ্যাংকিউ না দিয়ে হন হন করে এখানে চলে এলে।
আমি আরাজের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললাম
-দেখ আরাজ আমি সকালেও বলেছি তোমাকে আবারও বলছি Don’t call me Ina.Call me Inayat.
-ও তাহলে ম্যাডাম এ জন্যে রেগে আছেন!ওকে ফাইন ।ভুল হয়ে গেছে ম্যাডাম ।আর হবে না ।এখন একটু হাসেন।Come on Inayat Its your birthday.তুমি ফ্রেশ হয়ে নেও চল আমরা কেক কাটব।
-আরাজ আমার প্রচন্ড টায়ার্ড লাগছে।আম সরি।বাট আমি কেক কাটতে পারব না ।
-বাট ইনায়াত আমি তোমার জন্যে কেক অর্ডার করেছি।Its on way .তাছাড়া আংকেল আন্টীকেই বা…..
-I’m extremely sorry Araz but আমার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।আমার পক্ষে আর দুই মিনিটও দাড়িয়ে থাকা পসিবল না।তুমি বাবা মা কে বলে দিও আমার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা।আমি মেডিসিন খেয়ে ঘুমাব।Hope they will understand If আমার হেলথ এর চেয়ে তোমাদের কাছে কেক কাটাটা বেশি ইম্পরট্যান্ট না হয়।
-Ok.you take rest.Health comes first.আমি সবাইকে বুঝিয়ে বলব ।অকে?বাই।
-বাই ।আর আরাজ?
-yeah?
-তুমি বিয়ের ব্যাপারে বড়দের সাথে কথা বলেছিলে?
একরাশ উদ্বেগ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমি।আরাজ পেছনে ফিরে বলল
-Leave that to me.You take rest.
আরাজ চলে যেতেই আমি দরজা লাগিয়ে দিলাম রুমের।
মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করছে।মনে হচ্ছে যেকোন মুহুর্তে মাথা বিস্ফোরিত হয়ে লিটল ম্যান এর মত ফেটে যাবে।কোণরকমে শাওয়ার নিয়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম আমি ।একটূ ফ্রেশ লাগছে কিন্তু মাথা ব্যাথা যেন পিছুই ছাড়ছে না ।ফার্ট এইড বক্স হাতড়েও কোন পেইন কিলার পেলাম না।আম্মুর কাছে থাকতে পারে।কিন্তু এখন রুম থেকে বের হতে ইচ্ছে করছে না।অগ্যতা লাইট অগ করে ঘুমাতে যাব তখনি ফোনটা বেজে উঠল।কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আরদ্ধ বলে উঠল
-তোমার ব্যাগের সাইড পকেটে পেইন কিলার আর প্যারাসিটামল রাখা আছে।আর মিড পকেটে দুটো ডোনাট রাখা আছে।খালি পেটে মেডিসিন খাবে না ।ডোনাট খেয়ে তারপর খাবে।রাত জেগো না বেশি তাহলে মাথা ব্যাথা বাড়বে আরও ।ওকে?
-আরদ্ধ?
-হুম…
-I love you.
-Love you too babe.Happy birthday my love.

.
.
আজ আরাজ আরদ্ধের সাথে দেখা করতে চেয়েছে।আরদ্ধকে আগেই বলে রেখেছিলাম যে আমার এক ফ্রেন্ড তার সাথে দেখা করতে চায়।আরদ্ধ ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করেছিল
-আমার সাথে?কেন?
-তেমন কিছু না জাস্ট ক্যাজুয়াল মিট আপ।
-ইনা আমার জানা মতে তুমি তোমার কোন ফ্রেন্ডকেই তোমার আর আমার ব্যাপারে কিছু জানাওনি।এনিওয়েজ তুমি যখন বলছ আমার কোন প্রব্লেম নেই।‘ll be there.
আরাজ আমাকে লোকেশন এড্রেস করে দিয়েছে আগেই।অফিস শেষ করে আমি এখানে চলে এসেছি।আরাজ আর আমি আরদ্ধের জন্যে অপেক্ষা করছি ।আরদ্ধ একটা ইম্পরটয়ান্ট মিটিং এ আটকে গিয়েছে তাই তার দেরী হচ্ছে।
১০ মিনিট পর আরদ্ধ এসে পৌছাল।তার পেছনে দুজন গার্ড।আরদ্ধ ঢুকেই আমাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এল আমার দিকে।আরদ্ধকে আসতে দেখে আরাজ উঠে দাঁড়াল।আরদ্ধ এসে আরাজের সামনে দাড়াল।আরাজ আর আরদ্ধ দুইজন মুখোমুখি হয়ে দাড়িয়ে ।হঠাত করেই আমার মনের মধ্যে অজানা একটা ভয় মাথা চাড়া দিয়ে উঠল।আরাজ শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরদ্ধের দিকে। আরদ্ধের চোখে মুখে বিরাজ করছে নিদারুন যান্ত্রিকতা।….
চলবে
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here