ঝরাপাতার দিনগুলো পর্ব ২৫

#ঝরা পাতার দিনগুলো
#পান্না হাবিব

পর্ব-২৫

“কিরে মিসেস ফয়সাল, ভালোবাসা কি কিছু ব্যাংকেও ডিপোজিট করতে এসেছিস””???!!!
পরিচিত কন্ঠ শুনে পাশে তাকিয়ে দেখি ভার্সিটি ফ্রেন্ড তমাল দাঁড়িয়ে আছে!!
-তুই এখানে কি করিস!!?? কি অবস্থা তোর ?
– আমি তো এই ব্রাঞ্চের সিনিয়র অফিসার হিসেবে আছি তিনমাস হলো।
-ওহ, খুবই ভালো।!!তাহলে এদিকে আয়, আমাকে হেল্প কর। একাউন্ট খুলতে আসছি।
-ফয়সাল ভাই কেমন আছে?
-ভালো আছে। ভাই তোরাই ভালো কাজ করছিস, অনার্স এর পর এমবিএ করে ফেলছিস। দেখ আমাদের নয় মাসের সেশন জটে থেকে মাত্র মাস্টার্স এ।
-তোর কিসের চিন্তা!!! হাহ হাহ হা.. ফয়সাল ভাই আছে না!! টিচার হয়ে গেছেন উনি, তোর তো সেই কপাল!!!
-আমি এখন মিসেস সাব্বির। ফয়সালের সাথে অনেক আগেই ব্রেকাপ হয়ে গিয়েছে।
শান্ত স্বরে সবচেয়ে কস্টের কথাটা বললাম আমি।
তমাল অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
অবাক তো আমিও হয়েছিলাম রে!!
-সরি দোস্ত!! আমি জানতাম না রে!!
-ইটস অকে। এখন আমাকে হেল্প কর। কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছি না। ৩.৩০মিনিটের সুবর্ন এক্সপ্রেস ধরতে হবে।
-পারবি না তো! একটু পরেই লাঞ্চ ব্রেক পরবে। কেউই থাকবে না ২.২০টা অব্দি।
-তুই আছিস কি করতে!! আর আমি তো ডিপোজিট করবো শুধু।
-এতো গুলো কেন? আর সুহা নুহা এগ্লা কে?
-এই তুই এতো প্রশ্ন করছিস কেনো?? দে না কাজ গুলো করে ভাই!! যাহ তোকে লাঞ্চ করাবো।
-লাঞ্চ লাগবে না, তুই কেন বিয়ে করলি না ফয়সাল ভাইকে সেটা যদি বলবি বলে প্রমিস করিস তাহলে করবো।
হা হয়ে গেলাম ওর কথা শুনে!! এই ছেলেটা ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে কি নাকি বলেছিলো আমাকে নিয়ে, সেজন্য কি মারটাই না খেয়েছিলো ফয়সালের হাতে!!
পরে জানতে পেরেছিলাম তেমন কিছুই বলেনি।
এর পর থেকে ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম আমরা।
কিন্তু কোনো কারণে ফয়সাল ওকে দেখতে পারতো না। এমনকি আমার সাথে নাকি ওর কিছু আছে সেটা নিয়ে ঝগড়াও করেছিলো!!!
-আচ্ছা বলবো।
এই কাজ গুলো শেষ করতে হয়তো আজকে বিকেল হতো। কিন্তু তমালের জন্যে খুব তারাতাড়ি শেষ করতে পারলাম। কমলাপুরের কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম।
-তো মিসেস ফয়সাল থুক্কু সাব্বির, এইবার বলেন আপনার কাহিনী কি!! আচ্ছা ওয়েট ওয়েট, এটা কোন সাব্বির বলতো, ঐযে তোর একটা কাজিন চিটাগং মেডিক্যালে পড়তো উনি?
-হুম, কিন্তু তুই চিনলি কিভাবে?
অবাক হয়ে বললাম আমি।
-না চিনার কি আছে, সেদিন.. পরে বলবো, আগে তোর কাহিনি বল।

কাউকেই ছোট না করে যতটুকু বলা সম্ভব বললাম আমি।
-বোঝায় যাচ্ছে ফয়সাল ভাই টিচার হওয়ার জন্যে তোকে ছেড়ে দিয়েছে। সরি, বাজে ভাবে বলছি আমি।
কিন্তু উনি যেই পরিমাণ পজেসিভ তোর প্রতি, এটা করার কোনো কারণ আমি দেখি না।
-বাদ দে, যা হয়েছে কপালে তাই ছিলো হয়তো।
এখন তুই কি বলতে চেয়েছিলি সেটা বল এখন।
-মনে আছে, একবার তুই ক্লাসে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলি? ঐযে, ল্যাবের কারেন্ট চলে গিয়েছিলো,
পচা মাছের গন্ধে তুই প্র্যাকটিকেল ক্লাসে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলি?
নাক চেপে ধরে বললাম মনে আছে। মনে হচ্ছে গন্ধটা এখনো পাচ্ছি আমি!!
কি বাজে গন্ধ ছিলো, ছি!! ছোট্ট একটা ল্যাবে গাদাগাদি করে ত্রিশজন স্টুডেন্ট। একে তো ভ্যাপসা গরম তার উপর গেছে কারেন্ট চলে!!
সবাই মাছ নিয়ে কাটাছেড়া করছিলাম আমরা। কারোও কারোরটা ছিলো খুবই পঁচা। কিছুক্ষন গা গুলানোর পরে আর কিছু মনে নেই।
আমার নাক চেপে ধরা দেখে তমাল হো হো করে হেসে উঠলো।
-মনে আছে, তো কি হয়েছে?
-একটা রিউমারও ছড়িয়েছিল।
– হুম আমি নাকি প্রেগন্যান্ট!!!!! হাস্যকর পুরা!!
-হুম, ক্লাসে ফাহাদ এমনি দুষ্টামি করে বলেছিলো প্রেগন্যান্ট হয় নাই তো!!
ফয়সাল ভাই এইজন্যই আসে নাই তোকে দেখতে!!
-কোনটার জন্য?
-তুই সারাজীবনই গাধি ছিলি মেহের!! এখনও তাই আছিস!! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো ও।
-দোস্ত, বলনা কি হয়েছে? অনুনয় করে বললাম আমি।
-আমাদের ল্যাবের পাশের ল্যাবেই ফয়সাল ভাইদের ক্লাস চলছিলো। তুই সেন্সলেস হওয়ার একটু পরেই ভাইয়া আসে। ফাহাদের বলা কথাগুলো শুনে তোকে দেখে আবার চলে যায়। ইভেন উনি হাস্পাতালেও আসে দুদিনপর!!!!

তমালের কথা শুনে মাথাটা ঘুরছে। আমি জানতাম ফয়সাল এসেছিলো হাস্পাতালে আমি সেন্সলেস থাকতেই। কিন্তু স্যার ম্যাম আছে দেখে চলে গিয়েছিলো। আর দুদিন ওর মিড থাকায় ও আসতে পারেনি।
-ওর তো মিড ছিলো তাই আসেনি।
-তোর মাথা। কোনো মিডই ছিলো না। তুই প্রমাণ চাইলে আমি দেখাতে পারি।

কি বলবো বুঝতে পারছি না। দুদিন পরে ফয়সাল যখন এসেছিলো তখন দুই কথার পরেই জিজ্ঞেস করেছিলো ব্লাড কেন দরকার হয়েছে।
আমি তখন নিজেই কিছু ভালোভাবে জানতাম না আসলে আমার কি হয়েছিলো।
ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারিনি বলে আবার ঝগড়া করে চলে গিয়েছিল!!!!
রক্তশুন্যতায় ভুগছিলাম আর শরির নাকি দুর্বল ছিলো অনেক। তাই ব্লাডের দরকার হয়েছিলো।
-তুই কি জানিস দুদিন তোর কাছে কে ছিলো?
তমালের প্রশ্নের উত্তরটা আমি জানি কিন্তু খুব করে চাইছিলাম উত্তরটা যেন ভুল হয়।
কাপা কাপা গলায় বললাম জেনি আর তুই।
একটা মুচকি হেসে তমাল বলতে শুরু করলো
-দুদিন তোর পাশে আঠার মতো সাব্বির ভাই লেগে ছিলো। ফয়সাল ভাই যখন এসেছিলো তখনো। ব্লাডটাও উনিই ম্যানেজ করেছিলো। আমরা তুই প্রেগন্যান্ট কিনা জানতে চাইলে উনি হাসতে হাসতে জবাব দিয়েছিলেন, “নাহ, আমার বাবা হওয়ার শখ এতো তারাতাড়ি নেই। অবশ্য যেভাবে ওর সাথে লেগে আছি হতে আর কতক্ষণ!!!। ”
বেচারা তোর জন্যে দুটো আইটেম মিস করেছিলো!!
তুই ঠিক মানুষের সাথেই আছিস রে মেহের!!
ফয়সাল ভাই তোর জন্যে না!!

মুচকি হেসে বললাম হয়তো!!!
আমিই মনে হয় ঠিক না কারোর জন্যে!!
আজকের ডিভোর্সের ঘটনা টা বললাম না আর।
ঘড়িতে ৩.০৫ মিনিট। এখন না উঠলে ট্রেন মিস করবো।
তমাল আমাকে ট্রেনে তুলে দিলো।
আমার চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত টা নিয়ে এই প্রথম কনফিউজড হয়ে গেলাম। কোথাও একটা গড়বড় আছে যেটা ধরতে পারছি না।

পরেরদিন ম্যামের বাসায় গিয়ে সব ডকুমেন্টস দিয়ে আসলাম।
ভিসার জন্যে ফুপা ফুপির কাছে ফোন আসবে, সুতরাং সারপ্রাইজ দেয়া যাবে না। আগেই জানিয়ে রাখা দরকার।
ফুপিকে বললাম সাব্বিরকে এখনই কিছু না বলতে।
সাব্বির রাতে ফোন দিলো আমাকে।
-তুই কার সাথে কোথায় যাচ্ছিস?
রাগ হলো খুব। ফুপি যে কিছু বলেনি বুঝতে পারলাম। কিন্তু জানলো কি করে ও!!!
-যার সাথে মনে চায় তার সাথে যাবো, তাতে তোমার কি!! তুমি তো ডিভোর্স দিয়েই দিবে তাই না?
ইশ, খোচা খেয়েও যদি একটু বলতো আমি তার বউ!!
-দিবোই তো। তোর মতো মেয়ের সাথে কি সংসার করার জন্য বিয়ে করেছি নাকি!!! তোকে বুঝাইতে চাইছি আপন জন চলে গেলে তার কস্টটা কেমন হয়!!!
ফয়সালের কোনো দোষ নেই!! বেচারাকে তো বলেছিলাম যে টিচার হিসেবে জয়েন করার আগে যেনো তোর সাথে কথা না বলে। এটাই ডিল ছিলো!!
ওর এপয়েনমেন্ট লেটার এসেছিলো বৃহস্পতিবার। যেদিন তোর সাথে ব্রেকাপ করেছিলো ও আমার কথা রাখার জন্যে!! শুক্রবার তোর আমার সাথে বিয়ে ছিলো।
খুব বেশি কিছু করতে হয়নি তোর টাওয়াল পরা ঘুমের একটা পিক দিয়েছিলাম আমি!!!!!
হাত থেকে ফোনটা পরে গেলো আমার। মাথা কাজ করছে না। আমার জন্যে ওর কে চলে গেছে কে জানে!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here