#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_৪৫
মেঘা আয়াজের দিকে তেড়েমেরে গিয়ে বলে,”আজব দুনিয়ার নিয়ম।সমাজের চোখে আমি বাচ্চা মেয়ে।
তবে ইসলামের দৃষ্টিতে আমি একজন সাবালিকা বালিকা। আর ইসলামের দৃষ্টিতে একজন মেয়ে সামনে থেকে এগিয়ে নিজের বিয়ের কথা বলতেই পারে।
এখানে বেহায়াপনার কিছু নাই।আর আমার বাপের পাপের শাস্তি সে পাবে।আমি আপনাকে বিয়ে করে তার
পাপের ছায়াতল থেকে বেড়িয়ে আসতে চাই।”
আয়াজ বলে,”দুনিয়াতে ছেলের অভাব পড়ে নাই।
আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না!মানে পারবো না!”
মেঘা তো পুরোই নাছোড়বান্দা সেও আয়াজকে বিয়ে না করে আজ দম নিবে না।
এদিকে পুরো বাড়ির মানুষের মাথায় হাত।যে মেয়েটা সারাদিন চুপচাপ থাকে। যার কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায় না।সেই মেয়ে আজ হঠাৎ এমন করে আয়াজকে বিয়ে করার জন্য পাগলামি করছে এটা কি মেনে নেওয়া সম্ভব?
মেঘার মা মেঘাকে বোঝাতে অনেক চেষ্টা করে তবে মেঘা তার মাকে একটা কথায় বলে,”অন্যের সংসার ভেঙ্গে যখন নিজের ঘর বাধছিলে তখন কি একবার ও চিন্তা করেছিলে এমন দিনের কথা?আমি তো তোমার মতো অন্যের সংসার ভাঙ্গছি না।একজন ডির্ভোস প্রাপ্ত ব্যক্তিকে বিয়ে করছি!সেদিন যখন ঐ পিচ্চি মেয়েটার কথা ভাবতে যাওনি।ঠিক তেমন আজ নিজের মেয়ের কথাটা ভুলে যাও।”
অয়ন খান মেঘার এমন ব্যবহারের জন্য নিজের হাত তোলে থাপ্পড় দেওয়ার জন্য।তবে তার আগেই আয়াজ মেঘার হাত ধরে সেখানে থেকে সরিয়ে নেয়।
এবার আয়াজ কর্কশ কন্ঠে বলে,”আপনার এমন ব্যবহার শোভা পায় না মামা।আপনি জীবনে যে ভুল করেছেন তার শাস্তি অবশ্যই পাবেন।আপনার সন্তানেরা যখন আপনাদের কাছে থেকে দূরে যেতে চাইছে।
তখন আমার উচিৎ তাদের সাহায্য করা।”
অয়ন খান কিছু বলতে যাবে তার আগেই আয়াজ আয়াশের দিকে তাকাই।আয়াশ আয়াজের চোখের ভাষা বুঝতে পারে।আয়াশ মেঘা আর আয়াজের হাত ধরে সোজা বাড়ির বাহিরে চলে যায়।
অয়ন খান তার বোন মমতা খান কে বলে,”আপা তোমার ছেলের এতো সাহস হয় কি করে?আমার মেঘা মা কে নিয়ে ও বাহিরে চলে গেলো।আজ ফিরে আসুক ওর খবর আছে।”
মমতা খান বলে,”তোরা দুজনে এখনো এতো উচুঁ স্বরে কথা বলছিস কি করে?তোরা যা করেছিস তার জন্য দেখছি তোদের মাঝে বিন্দু পরিমাণ অনুশোচন বোধ নেই!”
এবার মরিয়ম খান বলে,”বউমা তোমার ভাইয়ের এতো সাহস এসেছিল কোথায় থেকে?সে আমার বাড়ির নাতবউ কে খুন করার চেষ্টা করেছিল? ”
মমতা খান বুঝতে পারে তার ভাইয়ের এমন ঘৃণ্য কাজের জন্য সবার সামনে তার মাথা নত হয়ে গেছে।
অরিন এতো সময় চুপচাপ থাকলেও এবার মুখ খুঁলে বলে,”মা আজকের পর যদি তুমি মামার সাথে কোনোরকমের যোগাযোগ অথাবা সম্পর্ক রাখো। তাহলে আজকের ভুলে যেও অরিন নামের তোমার কোনো মেয়ে ছিলো।আমি মধ্যবিত্ত বাড়ির বউ হতে পারি।তার মানে এটা নয় যে বড়লোক আত্মীয়াদের সব বড় বড় পাপ মুখ বুজে সহ্য করবো।”
মমতা খান মেয়ের মুখের দিকে হ্যা করে তাকিয়ে আছে।
অরিন বলে,”এইভাবে তাকিয়ে লাভ নেই মা।
তোমার ভাইকে তো পুলিশের কাছে দিয়ে আসা উচিৎ।তবে পুলিশের কাছে দিয়ে লাভ নেই।
আমাদের দেশে তো গরিবের জন্য বিচার নেই।
ভাগ্যিস আজকের এই কাহিনী শোনার জন্য রোহান সহ আমার শ্বশুরবাড়ির কেউ নেই এখানে।
নয়তো আমার যে টুকু সম্মান আছে সবটা মাটিতে মিলিয়ে যেতো।”
অরিনের এবাড়িতে নিশ্বাস নিতেও দম বন্ধ হয়ে আসছিল। তাই তাড়াতাড়ি সে বাবার বাড়ি ছেড়ে প্রস্থান করে।
এদিকে অর্ণাকে নিয়ে শাহেদ মিয়াঁ বাড়িতে চলে আসছে।অর্ণার মুখ চোখের অবস্থা দেখে আয়না বেগম প্রশ্ন করে, ”কি রে মা তোর মুখ চোখের এই অবস্থা কেনো?
আয়াশ কি কোনো কারণে তোকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে?”
অর্ণা মামীর এমন কথা শুনে ছলছল নয়নে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
শাহেদ মিয়াঁ শক্ত কন্ঠে বলে,”আরে হায়না বেগম নিজের কথায় লাগাম টানো।মেয়েটার সাথে পুলিশসুলভ আচরণ না করে ঘরে নিয়ে যদি সম্ভব হয় বিশ্রামের ব্যবস্থা করো।প্রশ্নের তীরটা না হয় পড়ে নিক্ষেপ করবে।”
আয়না বেগমের বুঝতে বাকি রইলো না!
ঐ বাড়িতে কিছু তো বড় ধরনের হয়েছে।
যার জন্য তার স্বামীর কথার ধরণ বদলে গেছে।
এখন আর কথার জলঘোলাটে করার মানে হয় না।
অর্ণা কে সাথে করে আয়না বেগম ঘরে নিয়ে যায়।
অর্ণা ফ্রেশ হয়ে অল্পপরিমাণে খাবার খেয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকে।তার ইচ্ছা না থাকলেও খাবার খেতে হচ্ছে।
তার মধ্যে থাকা প্রাণটার জন্য।অর্ণার এতো চিন্তার মাঝেও নিজের পেটে হাত দিয়ে কারো অস্তিত্বের আভাষে মনটা ভালো হয়ে যায়।
তবে নিজের সাথে হওয়া এতো অন্যায়ের পর ও অর্ণা আল্লাহ উপর থেকে ভরসা একটু এদিকে সেদিকে হয়নি।তাই তো হয়তো এতো ধৈর্যশীল হয়ে আয়াশের মতো ছেলেকে জীবনসাথী হিসাবে পেয়েছে।
অন্যদিকে সুমু আর ভালো নেই!তার ভাইয়ের বউ সব সময় তাকে নানাভাবে মানুষিক হোক বা শারীরিক ভাবে হোক সব ভাবে অত্যাচার করে।সুমুর জীবটা অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।সুমুর বাবা মা আর সুমুর সাথে ভালো ব্যবহার করে না।তারা বলে,”এটা হয়তো তোর পাপের শাস্তির শুরু।আরো কতো শাস্তি তোর কপালে লেখা আছে তা কেউ জানে না।”
সুমু এখন বুঝতে পারে সে আয়াজের থেকে দূরে আছে বলেই তার পরিণাম এমন।যদি আয়াজ তাকে ডির্ভোস না দিতো তাহলে হয়তো এমন কিছুই হতো না।
সেদিন যদি নিজের ভুলের ক্ষমা চেয়ে আয়াজের পা জড়িয়ে ধরতাম তাহলে অবশ্যই আয়াজ আমাকে মাফ করে দিতো।কখনো ডির্ভোস দিতো না।
এসব বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তারপর আবারো বলে,”আয়াজ কোথায় তুমি?তোমার সুমু ভালো নেই!
সে তার পাপের ফল ভোগ করছে।”
এদিকে অয়ন খান মমাতা খান কে বলে,”আপা তোমার ছেলে আমার মেয়েটা কে সাথে করে কোথায় নিয়ে গেছে?এতো সময় লাগছে কেনো ফিরে আসতে?
আমার আত্মসম্মান বাঁচাতে যা ভুল আমি করেছি আমার মেঘা কোনো ভুল করে নাই।তাই আয়াশের যা শাস্তি আমাকে দিতে বলো আমার মেঘাকে না।”
মমতা খান নিজেই জানে না!তার ছেলে মেঘাকে সাথে করে কোথায় গিয়েছে। তাহলে তার ভাইয়ের কথার কি উওর দিবে সে?
এভাবে আরো কিছু সময় পার হয়ে যায়!
এবার বাড়ির সবার চিন্তা শুরু হয়ে যায়।
অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে।
ওদের কারো কোনো খবর নেই।”
একটুপর তিনজন বাড়িতে ফিরে আসে।
বাড়িতে আসার পর মেঘা আয়াজের হাত ধরে থাকে।
অয়ন খান মেঘার কাছে গিয়ে মেয়ের হাত ছাড়াতে চেষ্টা করতে শুরু করে।
তখন পেছন থেকে আয়াশ বলে ওঠে,”আরে মিস্টার খান সাহেব!আপনি কোন সাহসে আমার ভাইয়ের কাছে থেকে তার সদ্যবিবাহিত বউকে দূরে সরাতে চেষ্টা করছেন? ”
অয়ন খান বলে,”মানে কি?”
মেঘা বলে,”আয়াজ খান আজ থেকে আমার স্বামী। আয়াশ ভাইয়া আমাদের দুজনকে সাথে করে কাজী অফিসে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দিয়েছে।”
অয়ন খান বলে,”ফাইজলামি হচ্ছে আমার সাথে?
আমার মেয়ের বিয়ে এই আয়াজের সাথে আমি কোনোদিন ও মেনে নিবো না।”
আয়াজ বলে,”আপনি না মানলেও মেঘা আমার বউ।প্রথমে বিয়েতে আমার মতো ছিলো না।
পরে ভেবে দেখলাম কোনো মেয়ে সামনে থেকে এগিয়ে এসে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে।
তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না।
তাছাড়া আমি তো আর সারাজীবন একা থাকতে পারবো না।আমারো একজন সঙ্গীর দরকার।
তাই মেঘাকে নিজের করে নিলাম সারাজীবনের জন্য।
আজকের পর থেকে আপনি আমাদের দুজনকে একসাথে দেখবেন আর লুচির মতো ফুলবেন।
কিন্তু কিচ্ছু বলতে পারবেন না!”
মেঘা বলে,”বাবা এটাই তোমার আত্মসম্মানের শেষ পরিণাম। যাদের জন্য চুরি করলে তারা কেউ তোমার আপন হলো না।তোমাকে একা করে দিয়ে দূরে চলে যাচ্ছে!আর আজকের পর ভুল করেও আমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করবে না।আমার স্বামী তোমাদের সাথে আমার যোগাযোগটা মোটেই ভালো চোখে দেখবে না।”
এরপর আয়াজ মেঘা আর মরিয়ম খান কে সাথে করে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
ওরা চলে যাবার পর মমতা খান নিজের ভাই আর তার বউয়ের হাত ধরে বাড়ির বাহিরে বাহির করে দিয়ে বলে,”আজকের পর মনে করবো আমার কোনো ভাই নেই।মারা গেছে,অথবা কোনোদিন ছিলো না।
আর তোরা ভুল করেও আমাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবি না।আজকের পর তোর আর আমার সব সম্পর্কের শেষ এখানে।বলে ওদের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়।”
(কালকের পর্বে সবার জন্য সারপ্রাইজ আছে😇)
‘
‘#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_৪৬
অয়ন খানের মিথ্যা আত্মসম্মানের বড়াই তার নিজের সন্তানেরা ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়।
সেদিনের সেই ঘটনার পর আর কখনো তার ছেলে মেয়ে তার সাথে যোগাযোগ করে না।
অর্ণার সাথে কথা পাপের ফল সে পেয়েছে।
সেদিনের সেই ঘটনার পর তার বউ স্টোক করে মারা যায়।যেই বউয়ের জন্য সে তারিণ কে ছেড়ে দিয়েছিল। আজ সেই বউ তাকে মাঝপথে একা করে চলে গেছে।একটা পুরুষের জন্য সব থেকে বড় কষ্টের তার আগে বউ মারা যাওয়া। কারণ পুরুষেরা কখনো তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে না।
বউ থাকলে বুঝতে পারতো।
কিন্তু এমন শেষ জীবনে নিজের সহধর্মিণী ছাড়া একা জীবনপ্রবাহ করা সব থেকে বড় শাস্তি।
মেঘা মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে ছুটে এসে তাকে দেখে আবারো ফিরে চলে যায়।বাবার।পাশে দাঁড়িয়ে তাকে কোনো প্রকারের শান্তনা দেয় না।
অয়ন খান আজ একাকীত্বের রাজ্যে নিজের ভুলের জন্য আফসোস করছে।এখন সে তার সব পাপের শাস্তি স্বরুপ নিজের মৃত্যু প্রার্থনা করে।তবে কথায় আছে না।
মৃত্যু এতো সহজে হয় না।নিজের পাপের ফল এই দুনিয়াতেও ভোগ করতে হয়।অয়ন খান এখন নিজের মৃত্যু জন্য দিন গুনছে।
এদিকে সুমুর পরিণাম খুব খারাপ। তার ভাইয়ের বউ জোর করে তাকে একজন বুড়া লোকের সাথে বিয়ে দিয়েছে।সেই লোকের ছেলে মেয়ে গুলো সুমুর বয়সী। নিজের থেকে দ্বিগুণ বয়সী লোকের ঘরে এসে নিজের দাপট দেখাতে পারে না।নিজের রুপ রং এর আর কোনো মূল্য নেই।এখন সে বিবাহ করে জীবন্ত লাশ হয়ে গেছে।নিজের রাগ, জীদ,অহংকার সবটা তাকে ডুবিয়ে ছাড়ছে। আজ তার এই পরিণামের জন্য সে নিজেই দ্বায়ী।এটা প্রকৃতির প্রতিশোধ ছিলো।
কিছু সময় কিছু পাপের জন্য ভালো থাকার সব রাস্তায় বন্ধ হয়ে যায়।
সব সুখ গুলো একটা সময় ঝরা পাতার মতো ঝরে যায়।
আয়াজের সাথে মেঘার সম্পর্কে শুরুটা মধুর মতো ছিলো না।আয়াজ মেঘাকে বলে,”তুমি শিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ইচ্ছা করলেই আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারো।এই বিয়েটা তোমার জীদের কারণে হয়েছে।আর আমার মনের মাঝে সুমুর প্রতি একটা টান থাকবেই। ”
মেঘা সেদিন আয়াজের গলা টিপে ধরে বলেছিল,”এই বিয়েটা কি আপনার কাছে ছেলে খেলা মনে হয়?
সুমু ভুল করেছিল!তার ভুলের জন্য ডির্ভোস দিয়েছেন। আমার কী দোষ?আমার বাবা অয়ন খান এটাই কী আমার দোষ?যদি তার মেয়ে হওয়া আমার দোষ হয় তাহলে আর কিছু বলার নেই।আর বিয়ে আমাকে করেছেন তাই ঐ ডায়নির কথা আপনার মনে থেকে মিটিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমার।”
আয়াজ বুঝতে পারে মেঘার বাবার ভুলের জন্য সে তার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারে না।
মেঘাকে সে বিয়ে করেছে।তার সাথে সারাজীবন সুখে সংসার করা তার দায়িত্ব।আর হ্যাঁ সুমু তার প্রথম ভালোবাসা।
তার মানে এটা নয় যে তাকে মনে রেখে আরেক জনের হক নষ্ট করতে হবে।কিছু কথা থাকুক না আড়ালে নাই বা আসলো প্রকাশ্যে। এরপর ওরা নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে।সেই সম্পর্কটা একটা সময় স্বামী স্ত্রী সম্পর্কের পরিণত হয়।
অন্যদিকে অরিন বিয়ের প্রথমের দিকে বাচ্চা নিতে না চাইলেও পড়ে সে বাচ্চা নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।কারণ রোহানের ছোট বাচ্চাদের প্রতি খুব দুর্বলতা কাজ করে।তা দেখে অরিন বুঝতে পারে তার একটা বাচ্চার খুব দরকার।সময় থাকতে বাচ্চা নেই নি।এখন অরিন এই ডাক্তার তো সেই ডাক্তারের কাছে দৌড়ানি দিয়েছে বাচ্চার জন্য।অনেক কাঠখর পুড়িয়ে সে এক বাচ্চার জননী হতে পেরেছে।তার বাচ্চার জন্মের পর ডাক্তার তাকে সোজা বলে দিয়ে সে আর কোনোদিন দ্বিতীয় বাচ্চার জন্মদিতে পারবে না।অরিন আর রোহান তাদের একমাত্র মেয়ে বৃষ্টি কে নিয়ে বেশ সুখে দিন কাটিয়ে দিচ্ছে। অরিন যদি সে সময় নিচের স্বাধীনতায় মগ্ন না হয়ে একটু নিজের দিকে মন দিতো তাহলে হয়তো বাচ্চার জন্য এতো কষ্ট করতে হতো না।সে তার জীবনে অনেক কষ্টের দিন পার করার পর মেয়ে বৃষ্টি কে নিয়ে সুখেই আছে।অরিনের জীবনের কষ্টের দিন গুলো নতুন বসন্তের দিনের মতো কষ্ট গুলো ঝরিয়ে সুখের নতুন সজীবতা নিয়ে এসেছে।
এদিকে রাইসার জন্য আয়াশ নিজে একটা যোগ্যপুরুষ খুঁজে তাকে তার সাথে রাইসাকে সারাজীবনের জন্য বেঁধে দিয়েছে।রাইসা তার স্বামী আর সংসার নিয়ে খুব ব্যস্ততায় দিন পার করে।রাইসার জীবনের সব কষ্টের সমাপ্তি হয়েছে।কথায় আছে খারাপ সময়ের কষ্টের ছাপ যতোই গভীর হোক না কেনো!সুখের এক বিন্দু ছোঁয়াই পারে সব কষ্টের অবসান ঘটিয়ে দিতে।রাইসার জীবনের সব কলঙ্ক সময়ের সাথে গাছের পাতার মতো ঝরে গেছে।রাইসা যাকে জীবনসাথী রুপে পেয়েছে সে সমাজের মিথ্যার মোহে ভোলে নাই।সে রাইসার চোখে সত্যির প্রকাশ দেখেছিল। সেই সত্যির জন্য আজ রাইসার সুখের সংসার।
সবাই তো ভালো আছে।আচ্ছা আমাদের অর্ণা কেমন আছে?সেদিনের পর তার সাথে কী হয়েছিল অর্ণার সাথে?
আজ পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে।আজ শুক্রবার!
আয়াশ তার একমাত্র ছেলে রোদের হাত ধরে একটা কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
রোদ সুন্দর করে বলে,”বাবা আমরা প্রতি শুক্রবার আম্মুর সাথে এখানে দেখা করতে আসি তাই না!আমাদের দেখে আম্মু অনেক খুশি হয় তাই-না বাবা!”
আয়াশ রোদকে কোলে করে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,”হ্যা বাবাই!তোমার আম্মু তো তার নিজের বাড়িতে চলে গেছে।তোমার আম্মুর কাছে আমাদের সবাইকে একদিক যেতে হবে।আমরা প্রতি শুক্রবার তার সাথে দেখা করতে আসলে সে অনেক খুশি হয়।আমি যদি কোনোদিন তোমার আম্মুর কাছে চলে আসি তখন তুমি আসবে তো আমাদের দুজনকে দেখতে?”
রোদ তার ছোট হাত দিয়ে বাবার হাতের উপর হাত রেখে বলে,”প্রমিত বাবা আমি আসবো তোমাদের সাথে দেখা করতে।তবে আমি বড় হবো,আমার নাতিপুতি হবে তারপর তোমাকে আম্মুর কাছে আসতে দিবো তার আগে না।”
আয়াশ রোদের কথা শুনে হেসে ওঠে!সামনে অর্ণার কবর কে উদ্দেশ্য করে বলে,”দেখো অর্ণা তোমার ছেলের যা বুদ্ধি তোমার সে বুদ্ধি নেই।ছিলো না।যদি থাকতো তাহলে নিজের সুখের দিন এভাবে ঝরা পাতার মতো ঝরে যেতে পারতে না।তুমি খুব স্বার্থপর।
আমাদের ছেলেটা দেখো নাতিপুতির চিন্তা করে আর তুমি ছেলের বড় হবার অপেক্ষা করতে পারলে না?”
রোদ বলে,”বাবা,আম্মুর সাথে ঝগড়া করো না।আমি তো আছি তোমার সাথে।আমি তোমাল সাতে থাকবো প্রমিত সত্যি প্রমিত। ”
আয়াশ ছেলেকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে কবরস্থান ত্যাগ করে বাড়িতে ফিরে আসার জন্য।গাড়িতে বসে ছেলেকে কোলে করে কবরস্থানের দিকে তাকিয়ে থেকে
ড্রাইভার কে বলে গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়িতে যেতে।
আয়াশ পাঁচ বছর আগের অতীতের পাতায় ডুব দেয়।
অর্ণার সাথে নিজের মামা এতো খারাপ ব্যবহার করেছে যে আয়াশ নিজেই নিজের কাছে লজ্জিত বোধ করছিল
সে কোন মুখে অর্ণার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে?
অর্ণা কে কোন মুখে বলবে যা কিছু হয়েছে সবটা ভুলে যাও।আমি ইচ্ছা করলেই তো অর্ণার কাছে থেকে ওর বাবার পরিচয় জানতে পারতাম।
এই কাহিনীর সমাপ্তি অনেক আগেই হয়ে যেতো।
সুমু রাইসা সবার সাথে ঠিক-ভুলের বিচার করতে গিয়ে আমি অর্ণার অতীত জানার কথায় ভুলে গিয়েছিলাম।
কি করে আমি এতোটা অন্যমনস্ক ছিলাম অর্ণার বেপারে?
নিজের বউয়ের পরিচয় জানতাম না।
এতিম বলে হয়তো কখনো জানতে আগ্রহ হয়নি।
কেমন স্বামী আমি?বউ এতিম বলে তার পরিচয় না জেনে বসে ছিলাম।
আজ এতো কাহিনী হবার পর আয়াশ নিজেকে নিজে দোষী ভাবতে থাকে।এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায়।
আয়াশের লজ্জার কারণ তো অর্ণা জানতো না।
অর্ণা আয়াশের এভাবে বদলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছিল না।সে যতোই সবার মাঝে হাসিখুশিতে থাকুক না কেনো।মনের মধ্যে সারাক্ষণ নানারকম আজেবাজে চিন্তা মগ্ন থাকতো।
অবশেষে আয়াশ সিদ্ধান্ত নেই।
এভাবে অর্ণাকে এভোয়েড করার কোনো মানেই হয় না।
আমি অর্ণার কাছে যাবো।অর্ণার সাথে কথা বলে সবটা ক্লিয়ার করে নিবো।অর্ণাকে আমি বাড়িতে নিয়ে আসবো।
আমাদের বেবি আমাদের বাড়িতে এসে জন্মনিবে।
কিন্তু আয়াশের সেই রাতের সিদ্ধান্ত আর পরিণাম পায়নি। মাঝ রাতে হঠাৎ করে খবর আসে আয়াজের কাছে অর্ণার লেবার পেইন শুরু হয়েছে।অবস্থা খুব খারাপ।
আয়াশ সেই রাতের বেলা ছুটেছিল অর্ণার কাছে।সেখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারে অর্ণার আটমাসে পড়েছে মাএ।এমন সময় মানুষিক বিষাদের কারণে অর্ণার সাথে এমন অঘটনা ঘটেছে।
আয়াশ সেদিন সেখানে কারো কোনো কথা না শুনে অর্ণাকে ঐ অবস্থায় ঢাকাতে নিয়ে চলে আসে।
এখানে বড় একটা হসপিটালে ভর্তি করানোর পর ডাক্তারদের কাছে থেকে যা শুনতে পারে তাতে আয়াশের দুনিয়া বদলে যায়।
ডাক্তারেরা তাকে জানিয়ে দেয় আপনার বউয়ের অবস্থা খুব খারাপ। অনেক সময় পার হয়ে গেছে।এখন তার অপারেশন করতে হবে।মা ও বাচ্চা দুজনের জীবনে ঝুঁকি রয়েছে।বলা যায় না হয়তো দুজনের একজন কে বাঁচাতে পারবো নয়তো কাউকে নয়।সিদ্ধান্ত এখন আপনার হাতে।
আয়াশ সেদিন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে নাই।
বাড়ির এসে সবাই বলেছিল আমরা বাচ্চা কে চাই না আমাদের বাড়ির মেয়েটাকে সুস্থ করে বাঁচিয়ে দিন।
কিন্তু অপারেশন থ্রিয়েটারে অর্ণা ডাক্তারদের কাছে আবেদন করে তার বাচ্চাটাকে যেনো তারা বাঁচাই।
কারণ অর্ণা নিজে কোনোদিন ও বাবা মায়ের ভালোবাসা সম্পূর্ণ পায়নি।সে চাইছিল তার বাচ্চা বাবার ভালোবাসায় বড় হোক।
এরপর ডাক্তারেরা অনেক চেষ্টার পর ও অর্ণাকে বাঁচাতে পারে নাই।সেদিন তারা শুধু মাএ বেবিটা কে বাঁচাতে পেরেছিল।তবুও বাচ্চাকে অনেকদিন আলাদাভাবে মেশিনের সাহায্য রাখতে হয়েছিল।
অপারেশন থ্রিয়েটার থেকে ডাক্তার বাহিরে এসে বলে,”সরি আপনাদের রোগির হাতে সময় খুব কম আপনারা তার সাথে কথা বলতে পারেন।”
আয়াশ সেদিন দৌড়ে অটিতে ঢুকে অর্ণা কে জড়িয়ে ধরে বলে,”তুমি কিভাবে এতোটা স্বার্থপর হতে পারলে অর্ণা? আমাদের সুখের সময় তুমি কেনো চলে যেতে চাইছো?জানো তোমাকে আমার কতো কথা বলার আছে।এতোদিন তো লজ্জায় তোমার সামনে আসতে পারি নাই।সত্যি আমি জানতাম না তুমি কয়েকদিনের দূরত্ব সহ্য করতে পারবে না।তুমি প্লিজ আমার জীবন থেকে এভাবে ঝরা পাতার মতো ঝরে যেওনা।এখন তো তোমার জীবনে সুখের দিন।”
অর্ণা সেদিন বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে বলে,”সবার জীবনে কষ্টের শেষে সুখের সজীবতা আসে না।
আমি কোথায় ঝরা পাতার মতো ঝরে যাচ্ছি?
আমার সময় শেষ হয়ে এসেছে এই পৃথীবিতে।
তাই আমি নিজের দুনিয়াতে চলে যাচ্ছি।
আমার জীবনের সব সুখ দুঃখের সমাপ্তি আজ হচ্ছে।আমি তোমার জীবন থেকে #ঝরা_পাতার মতো ঝরে গেলেও তোমার জীবনটা আলোকিত করতে আমাদের ছেলেকে রেখে যাচ্ছি। প্লিজ আমি যা কিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছে সে সব কিছু আমার ছেলেটাকে দিও বলে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে অর্ণা!”
আয়াশ সেদিন অর্ণাকে জড়িয়ে ধরে প্রচুর পরিমাণে চিৎকার করে কান্না করে।বার বার বলে,”অর্ণা তুমি স্বার্থপর পর!আমার জীবনে যদি সারাজীবন না থাকবে তবে কেনো ঝরা পাতার মতো উড়ে এসেছিলে আমার জীবনে।কিছুসময় থাকার পর আবারো ঝরে গেলে?
সেদিনের পর আয়াশ আজ পর্যন্ত বেঁচে আছে শুধু মাএ তার কলিজার টুকরো রোদের জন্য।অতীতের পাতা থেকে বেড়িয়ে এসে চোখের কোণায় জমা জল টুকু চুপচাপ মুছে ফেলে।
আয়াশের জীবনে এখন একটাই গুপ্তধন তার ছেলে রোদ।সে রোদের সিগ্ধ মায়াবী চেহারা দেখে অর্ণাকে অনুভব করতে।রোদের জীবনের সব কিছু সুন্দর ভাবে পূরণ করে তাকে বড় করাটা আয়াশে উদ্দেশ্যে।
সত্যি জীবনটা বড় অদ্ভুত!সারাজীবন যে কষ্ট করে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল।
সেই কিনা তার সুখের দিন অবেলায় ঝরা পাতার মতো সবার জীবন থেকে ঝরে যায়।হ্যাঁ এটাই প্রকৃতির নিয়ম।তাই তো আমাদের ছোট এই জীবনে প্রতিটা সময় প্রতিটা সিদ্ধান্ত চিন্তা-ভাবনা করে নেওয়া উচিৎ।
এমন কোনো কাজ না করি যার জন্য মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আফসোস করতে হবে।জীবনটা খুব স্বল্প সময়ের।
তাই এই জীবনের সব কিছুই সুন্দর করে উপভোগ করা উচিৎ।
(আশাকরি গল্পটা আপনাদের সবার ভালো লেগেছে। আমি চেষ্টা করেছি গল্পের মাধ্যমে সবাইকে নানারকম শিক্ষণীয় কিছু শেখাতে।জানি না কতোটা বোঝাতে পেরেছি।ধন্যবাদ সবাইকে গল্পটা এতোদিন পড়ার জন্য)
“””””””””সমাপ্তি “”””””””
ভাই ending টা sad না দিয়ে happy ending হলে খুব ভালো হতো