ভালোবাসতে_বারণ পর্ব ১

প্রগন্যান্সি রিপোর্ট নিয়ে বসে আছে শুভ্রতা। এই সময়ে মন ভর্তি আনন্দ থাকার পরিবর্তে চোখ ভর্তি পানি তার। কারন, একটা মেয়ের বিয়ের আগে প্রগন্যান্সি রিপোর্ট হাতে পাওয়ার মতো অসহায়ত্ব বোধ হয় আর হতে পারে না। রাতে হালকা মাথা ব্যথা ও বমি বমি ভাব ছিলো, কিন্তু তাতে এতোটা চিন্তিত ছিলোনা সে। কিন্তু রিপোর্ট হাতে পেতেই যেনো মনের ভিতর সব কিছু ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে তার। পাসে বসে আছে তার ছোট বোন বৃষ্টি।

— এখন কি হবে আপু? বাবা কি বিষয়টা শুনলে মেনে নিবে তুই বল?

শুভ্রতা কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠে,
— আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা। কি থেকে কি হয়ে গেলো কিচ্ছু বুঝতে পারছি না আমি।

বৃষ্টি শুভ্রতার কাধে হাত রেখে বললো,
— শান্ত হ আপু। এতোটা ভেঙে পরলে চলবে না।

নিচের দিকে চেয়ে শুভ্রতা বলে উঠে,
— এমনিতেও বাবা প্রেম ভালোবাসা পছন্দ করেনা। তার উপর এখন,,,,,,,,,,,

— আদিত্য ভাইয়া কি জানে এই ব্যাপারে?

— এখনো জানেনা।

— তুই ভাইয়াকে একটা ফোন কর, ফোন করে দেখা করতে বল ইমিডিয়েটলি। তার পর দেখ ভাইয়া কি বলে।

নাস্তা করে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো আদিত্য। মুহুর্তেই হাতে থাকা ফোনটা বেজে উঠে তার। ফোনটা তুলতেই ওই পাস থেকে বলে উঠে,
— ভাইয়া কোথায় আপনি?

— এই তো অফিসের দিকে রওনা দিলাম। কেমন আছো বৃষ্টি?

— জ্বি ভাইয়া আলহাম্দুলিল্লাহ্। একটা কথা ছিলো ভাইয়া।।।

— হুম বলো,,,,,

— দেখা করতে পারবেন? খুব জরুরি।

— কেনো কি হয়েছে কোনো সমস্যা? শুভ্রতার কিছু হয়নি তো?

— আগে আসেন তো, সব বলছি। আমি ঠিকানা টেক্স্ট করে দিচ্ছি।

বৃষ্টির কথায় কিছুটা ঘাবড়ে যায় আদিত্য। বৃষ্টি আগে তার সাথে কথা বলতে কেমন লজ্জা লজ্জা ভাব থাকতো আর আজ কোনো বাধাহিন কথা বলছে। তাও আবার দেখা করতে বলছে?
,
,
,
মাথা নিচু করে বসে আছে শুভ্রতা। তার পাসে বৃষ্টি।
আদিত্য গিয়ে তাদের পাসে বসলো।
— কি হলো হটাৎ এমন জরুরি তলব?

— আপু আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চায়।

— এমন কি কথা যার কারণে,,,,, আচ্ছা আগে বলো কি অর্ডার দিবো?

— না ভাইয়া আমি তাহলে উঠে আপনারা কথা বলুন।

ওখান থেকে উঠে কিছুটা দুরে গিয়ে বসলো বৃষ্টি।

আদিত্য শুভ্রতার পাসে গিয়ে বসে,,,,
— আমি না বুঝতে পারছিনা কি এমন কথা যার কারনে এভাবে ডাকলে?

মুহুর্তেই শুভ্রতা আদিত্যকে ধরে কেদে দিলো।

— আরে কাদছো কেনো? কি আজব, আরে কি হয়েছে বলবেতো নাকি? না বললে আমি কিভাবে বুঝবো বলো তো?

কাদু কাদু গলায় শুভ্রতা বলে উঠে,
— আই এম প্রেগনেট।

আদিত্য কিছুটা তুচ্ছ হাঁসি দিয়ে বলে উঠে,
মজা না করে আসল কথাটা বলো।

— তোমার কি মনে হয় এমন একটা বিষয় নিয়ে আমি মজা করবো?

— তার মানে তুমি সত্যিই,,,,,,,,,

আবারো কেদে দিলো শুভ্রতা। কদু গলায় বলে উঠে,
— কি থেকে কি হয়ে গেলো কিচ্ছু বুঝতে পারছি না আমি। জানিনা কি করে মুখ দেখাবো সকল কে।

কিছুটা চিন্তায় পরে যায় আদিত্য। ওইদিন শুভ্রতাকে নিয়ে পার্টিতে যাওয়ার পর কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝে উঠতে পারেনি সে। তার পরিনাম আজ,,,,,,,,

এমনিতেও তার বাবার কাছে একটাই শব্দ ভালোবাসতে বারণ। ভেবেছিলো আস্তে আস্তে সব কিছু মেনেজ করে নিবে। কিন্তু হুট করে এমন একটা পরিস্থিতিতে পরতে হবে বুঝে উঠতে পারেনি সে। এখন যা করার ঠান্ডা মাথায় করতে হবে।

নিরবতা ভেঙে শুভ্রতা আলে উঠে এখন কি করবো আমি? বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে নিজেকে।

— আমার প্রতি বিশ্বাস আছে কি তোমার শুভ্রতা?

শুভ্রতা মাথা নেরে হ্যা সুচক জবাব দিলো।
— চলোনা আমরা বিয়ে করে ফেলি?
হুট করেই কথাটা বলে উঠে আদিত্যের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে উত্তর খোজার চেষ্টায়।

— যা হওয়ার হয়েছে শুভ্রতা। এখন আমাদের যা করার ঠান্ডা মাথায় করতে হবে। অচেতন মাথায় হুট করে কিছু করে ফেলা উচিত নয়। তুমি নিশ্চই আমার ছোট ভাই রিদের ব্যাপার টা জানো।

— হুম।

— তো বুঝতেই পারছো বাবা কতটা রাগি।

শুভ্রতা হুট করে কেদে বলে উঠে,
— আমার খুব ভয় করছে আদিত্য।

— ভয় পেও না। আমাকে ভাবতে দাও। আর তুমি এখন বাসায় যাও। আমি দেখছি কি করা যায়।
,
,
,
,
গল্পটার শুরু হয়, এক বৃষ্টি ভেজা গভির রাতের মাঝ পথ থেকে। গাড়ি করে বাড়ি যাচ্ছে আদিত্য। ভারি বর্ষন হচ্ছে। বৃষ্টি ফোটার শব্দে চার পাসটা ঝম ঝম করছে। মাঝে মাঝে আকাশটা কেপে উঠছে কঠিন বজ্রপাতে। কিছুটা দুরে একটা মেয়ে দাড়িয়ে। আদিত্য তার পাস দিয়ে যেতেই মেটা হাত বাড়িয়ে তাকে কিছু একটা বলতে চাইছে। হয়তো হেল্প চাইছে।
ছোট বেলায় দাদাি মা শুনাতো নানা রকম ভুতের গল্প। তার মাঝে গভির রাতে সুন্দরি মেয়ের আকার ধারন করে ছেলেদের রাস্তা আটকানো টাতো আছেই। কিন্তু এইসব ভুত প্রেতে বিশ্বাসি নয় সে।
গাড়িটা কিছুটা পিছিয়ে নিয়ে মেয়েটার পাসে দাড়ালো। গ্লাসটা নামিয়ে মেয়েটার কথা শুনতে চাইলে। ঠান্ডায় ও ভয়ে থর থর করে কাপছে মেয়েটা। মুখ দিয়ে খিছু বের করে আনাটাও হয়তো কষ্টসাধ্য। দেরি না করে মেয়েরাকে গাড়ি তুলে নেয় আদিত্য।
মেয়েটা বেশি কিছু বলতে পারেনি, তার আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
আদিত্য ভাবতে থাকে, অপরিচিত একটা মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া উচিৎ হবে কি না?
মেয়েটার অবস্থা দেখে কেমন একটা মায়া লেগে যায় তার।
বাড়ি নিয়ে যায় মেয়েটাকে। বাড়ির সবাই চলে গিয়েছিলো, জাফর আঙ্কেলের ছেলে রকির বিয়েতে। আদিত্যও গিয়েছিলো, একটা কাজে বাসায় ফিরতে হলো তাকে। বাড়ির হাসিনা খালাকে বলে মেয়েটার কাপর চেন্জ করে গরম কাপর পরানো হয়৷ রাতে জ্ঞান ফিরলেও প্রচন্ড মাথা ব্যাথায় ঘুমিয়ে পরে মেয়েটা। শুস্থ হতে প্রায় দু,দিন সময় লেগে যায় মেয়েটার। মেয়েটা আজ চলে যাচ্ছে নিজ বাসায়। মেয়েটার নাম জানতে পারে শুভ্রতা। এই দুদিন শুভ্রতার সাথে কাটানো মুহুর্তটায় এমটা অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করে আদিত্যের মাঝে।
মেয়েটার বাড়ি বেশি দুড়ে না। তার বাড়ির থেকে একটু দুরেই। আসিফ স্যারের মেয়ে। দির্ঘ ত্রিশ বছর শিক্ষকতা করে সকলে তাই আসিফ স্যার নামেই চিনে তাকে।
একটা ছোট্ট বন্ধুত্ব তৈরি হয় তাদের মাঝে। কিন্তু বন্ধুত্ব কখন যে ভালো লাগায় পরিনত হয় তা বুঝতেও পারেনি তারা।

এক বছর প্রেম করার পরও শারিরিক ভাবে মিলামিশা হয় নি তাদের। আদিত্য জানতো, ভালোবাসা হচ্ছে পরিত্র একটা জিনিস। এতে অপবিত্রতার কোনো স্থান নেই।
কিন্তু সেইদিন শুভ্রতাকে নিয়ে পার্টিতে যাওয়ার পর কি থেকে কি হয়ে যায় নিজেও বুঝতে পারেনি আদিত্য। তাদের অজান্তেই যেনো হয়ে যায় সব কিছু।

প্রেগ্নেন্সি রিপোর্টা বেগে নিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বাড়ির পথে চললো শুভ্রতা। পাসে বসে বৃষ্টি।

ঘরে গিয়ে কারো সাথে কোনো কথা না বলে সোজা নিজের রুমে চলে যায় শুভ্রতা। শুভ্রতার মা আদ্রিতা বেগম বৃষ্টিকে জিগ্গেস করলে কিছুনা বলে চলে যায় বৃষ্টি। এমনি শরির খারাপ।

আজ অফিসে গিয়েও সারাক্ষন শুধু শুভ্রতার কথা ভেবে ভেবে কেটে গেলো আদিত্যের। দুঃশ্চিন্তারভার
যেনো অস্থির করে তুলছে তাকে। দুঃশ্চিন্তায় কেটে গেলো সারাটা দিন। রাতে ছাদে এপাস ওপাস করছে আদিত্য। মাথাটা বড্ড ফাকা ফাকা মনে হচ্ছে। কিচ্ছু আসছেনা মাথায়।মনে হয় কিছু সময়ের জন্য মাথা হ্যং হয়ে আছে তার। এমনিতেও রিদের সমস্যাটা নিয়ে চিন্তিত সে তার উপর এখন আরের ঝামেলা।
,
,
,
সকলে মিলে খাবার টেবিলে বসে। সকলে হালকা পাতলা কথা বললেও শুভ্রতার মুখে কোনো কথা নেই। নিশ্চুপ হয়ে খেয়ে যাচ্ছে সে। শুভ্রতাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে আসিফ স্যার।

— কি রে মা আজ একটু অন্য রকম মনে হচ্ছে তোকে।
— না বাবা এমনি শরিরটা ভালো লাগছে না তাই।
,
,
,
আদিত্য নিচে এসে দেখলো, তার বাবা আজমল চৌধুরি হেসে হেসে কথা বলছে কার সাথে।
— আরে জাফর দোস্ত তৃষ্না যেহেতু এক মাসের মধ্যেই ফিরছে তাহলে আমাদের দিক খন ঠিক করে রাখা উচিৎ নয়?

— আমার এতে কোনো আপত্তি নেই। তোর ওই দিকটা ঠিক থাকলেই হলো।

— এদিকটা পুরু পাকা। আর আদিত্যের কথা ভাবতে হবেনা। আমার সোনার টুকরু ছেলে। আমার সম্মান হানি হবে এমন কোনো কাজই সে করবে না। তার উপর আমার পুরু বিশ্বাস আছে।

To be continue………

#গল্পঃ_ভালোবাসতে_বারণ
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
#পর্বঃ__১

প্রথম পার্ট হয়তো অতটা ইন্টারেস্টিং হয়নি। কিন্তু সামনে রিদ ও তৃষ্না ও তার ভাই রকি এদের নিয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠবে গল্পটা। কেন্দ্র বিন্দু থাকবে আদিত্য ও শুভ্রতা। হাজির হলাম নতুন গল্প নিয়ে। গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here