ভালোবাসতে_বারণ💔 পর্ব ১৭

#গল্পঃ_ভালোবাসতে_বারণ💔
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💔
#পর্বঃ__১৭

শুভ্রতার টেনশনে অস্থির হয়েছিলো আদিত্য। তার তার মাঝেই রকির এমন কথা শুনে আদিত্য প্রায় পাগল পারা।
আজমল চৌধুরি রুমে প্রবেশ করে,
— কি রে বাবা, কোনো খোজ পেলি?

— হ্যা বাবা। রকি তুলে নিয়ে গেছে। আমি এখন ওখানেই যাচ্ছি।

— তুই আয় আমি গাড়ি বের করছে, সবাই নিচে আছে।

— না বাবা কাওকে যেতে হবেনা। আমি ঠিকই নিয়ে আসতে পারবো। চিন্তা করো না বাবা, দোয়া করো আমাদের জন্য।

— দেখ কোনো বাবাই তার ছেলেকে এভাবে বিপদের দিকে ঠেলে দিতে পারেনা।

— প্লিজ বাবা। আর কাওকে নিয়ে গেলে, তা শুভ্রতার জন্যই রিস্ক। আমি আসি বাবা।

আজমল চৌধুরি কিছু না বলে চুপচাপ চেয়ে আছে আদিত্যের দিকে। গদ গদ করে নিচে গিয়ে গাড়িতে বসে আদিত্য।
আদিত্য এগুচ্ছে গাড়ি নিয়ে রকির বাংলোর দিকে। আজমল চৌধুরি চেয়ে আছে তার চলে যাওয়ার দিকে।
,,,,যুদ্ধ,,,,

একটা চেয়ারে বেধে রেখা হয়েছে শুভ্রতাকে। দু,পাসে দুজন দাড়িয়ে বন্ধুক তাক করে আছে তার দিকে। ছোটার জন্য আপ্রান চেস্টা করছে সে।
রকি এসে বসে তার মুখুমুখি।
,, দেখি দেখি, একটু ভালো করে দেখি, আদিত্যকে মুগ্ধ করেছে কে?

রকি শুভ্রতার গালে হাত দিতেই, মুখ ঘুরিয়ে নেয় শুভ্রতা। তার মাঝে প্রকাশ পায় রকির প্রতি একরাশ ঘৃনা।
,, আরেহ্ দেমাগ তো দেখছি কিছুতেই কম হয়না তোর। দেখা দেখা জীবনের শেষ দেমাগটা দেখিয়ে নে। হয়তো আর দেখাতে পারবি না। ইশ্, আফসোস হচ্ছেরে।

তার মাঝেই একটা কালো রংয়ের গাড়ি এসে দাড়ায় সেখানে।
,, আরে এইতো এসে গেছে তোর রিয়েল হিরু। ওয়েলকাম শুভ্রতার হিরু।

রকি আশে পাসে থাকা ছেলেগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
,,, কিরে দেখছিস বাড়িতে মেহমান আসলো, একটু আতিতিয়তা করবিনা?

রকির কথা শুনেই একটা ছেলে এগিয়ে যায় আদিত্যের দিকে।
ছেলেটার গলাটা এক হাতে চেপে ধরে রকির দিকে এগুতে থাকে আদিত্য।
— দেখ রকি যা হয়েছে আমাদের মাঝে, এর ভেতর শুভ্রতাকে নিয়ে আসার কোনো দরকার নেই। ওকে ছেরে দে তুই।

— আরে সালাহ্, তোর সাহসতো কম না। আমার এককানে এসে আমার সাথে উচু গলায় কথা বলছিস, তাও আবার তুইতোকারি করে। ভুল করে ফেলছিস তো তুই। শুভ্রতা তোর যেনো কি হয়? ওহ্ হ্যা, এটা নাকি তোর হৃদপিন্ড। যা তোর বুকের বা,পাসেই থাকে। এখানে আমার ছেলেদের উপর যতগুলো আঘাত পরবে তার চেয়ে দ্বিগুন আঘাত পরবে তোর বুকের বা,পাসটায়।

বলেই শুভ্রতার গালে একটা ঠাসিয়ে চর বসিয়ে দেয় রকি।
শুভ্রতার মুখ থেকে উচ্চারিত কষ্টের আওয়াজটা আদিত্যের কান অব্দি পৌছাতেই যেনো সব শক্তি হারিয়ে ফেলে সে।
একটা ছেলে এসে বুকে লাথি মারতেই পেছনে ছিটকে পরে আদিত্য।
মুহুর্তেই কয়েকটা ছেলে এসে মারতে থাকে আদিত্যকে।
ওদিকে ছোটার জন্য ছটপট করছে শুভ্রতা। তার জেনো মনে হচ্ছে একবার ছুটতে পারলেই ওই সব ছেলেদেরই সে মেরে আদিত্যকে বাচাবে সে।
ছটপটের সাথে রয়েছে, বার বার আত্য চিৎকার।

শুভ্রতার কান্না জড়িত চিৎকারে হা হা করে হাসতে থাকে রকি।।
— জোস জোস অনেক জোস। চিৎকার করো আরো জোরে। খুব ভালো লাগছে আরো জোরে চিৎকার করো। আজ তোর যতটা না কষ্ট হচ্ছে নিজের স্বামিকে মার খেতে দেখে। তার চাইতেও বেশি কষ্ট হয়েছিলো এই বুকটায়। অনেক বেশি কষ্ট হয়েছিলো। যখন আমার একমাত্র বোনের লাশ এই দু,হাতে ধরে বসেছিলাম। এর চাইতেও জোড়ে চিৎকার আমি করেছি সেদিন। কর কর আরো জোরে চিৎকার কর, ভালো লাগছে শুনতে।

— প্লিজ ওকে মেরোনা ভাইয়া, ওকে ছেরে দাও। মরে যাবে ও। ওই সবের মুল ঝামেলা আমি আমায় মেরে ফেলো তাও ওকে মেরোনা প্লিজ। তোমার দুটা পায়ে ধরছি ভাইয়া।

রকি শুভ্রতার চুলের মুঠি চেপে ধরে তার মুখুমুখি করে নেয়।
গায়ে হাজারও মারের আঘাতের মাঝেও আদিত্যের চোখ দুটু শুভ্রতার দিকে। হাত বাড়িয়ে এতো দুর থেকেও সে যেনো শুভ্রতাকে ছুতে চায়। বাচাতে চায় ওই রকির হাত থেকে। কিন্তু উঠে দাড়ানোর শক্তিটা যে তার নেই।

আকুতি মিনতি করতে থাকে শুভ্রতা,
,, ওকে ছেরেদিন প্লিজ। আমায় মেরে ফেলুন তাও ওকে আর মারবেন না।

চুলের মুঠি ধরে থাকা অবস্থায় রকি বলে উঠে,
— মরতে তো তোদের হবেই দুজন কে। একসাথে মরবি দুজন, কয়জনের কপালে জুটে সহ-মরন? দেখ কি ভাগ্য তোদের।

কাদতে কাদতে প্রায় দুর্বল হয়ে পরে শুভ্রতা। এই অবস্থায় চিৎকার করে কাদাটাও কষ্টকর।
শুভ্রতা ও আদিত্যের এমন মৃত্যু যন্ত্রনায় যেনো প্রশান্তি খুজে পাচ্ছে রকি। মুখ দিয়ে অচিরেই বেড়িয়ে আসছে এক বিজয়ি হাসি।

আচকাই একটা আঘাতে মাটিতে ছিটকে পরে রকি। রাগে মাটি খামচে ধরে আছে। চোখ দুটি লাল হয়ে আসছে তার। কার এতো সাহস যে রকির গায়ে হাত তুলবে? পেছনে ফিরে তাকাতেই রিদের চেহারাটা ভেষে উঠে তার চোখে।
রিদের পাশে দুটা ছেলে।
শুভ্রতার হাতের বাধনটা খুলে দেয় রিদ। ছেলেগুলো আদিত্যকে ফেলে ধেয়ে আসছে রিদের দিকে।
রিদ তার পাসে থাকা ছেলেগুলোকে বলে উঠে,
,, ভাইয়াকে আর ভাবিকে নিয়ে তোরা হসপিটাল চলে যা।

— কি বলছেন ভাই, আমরা আপনাকে এমন বিপদে ফেলে যেতে পারিনা।

— আমি বলছি যেতে তারাতারি যা, আমার জন্য চিন্তা করিস না। এই ভাইরাসটা শেষ করে আমি আসছি। যা তোরা দেড়ি করিস না।

শুভ্রতাকে নিয়ে গাড়িতে তোলে ছেলেগুলো। তার পর আদিত্যকে নিয়ে চলে যায় হসপিটালে।
রকির ছেলেগুলো এগিয়ে আসছে রিদের দিকে।
রিদের দু হাতে থাকা গুলি গুলো, এক এক করে চালাতে থাকে ছেলেগুলোর দিকে।
রকি হা করে চেয়ে আছে রিদের দিকে। রিদ সম্পর্কে সে যতটা যেনেছে এখন তার চাইতে বেশি কিছু দেখছে নিজ চোখে।
ছোট বেলায় রকিদের বাসায় বেড়াতে আসতো আদিত্য ও রিদ। তিন জন মিলে একসাথে খেলা করতো। রিদ ছিলো তাদের থেকে একটু ছোট। যেই ছেলেটা ছোট বেলায় সামান্য মুরগির রক্ত দেখে ভয় পেতো আজ সেই ছেলেটাই কিনা এতুগুলো ছেলেকে মেরে ফেলতে একবারও ভাবলোনা? পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া অবহেলাগুলো কতটা নিষ্ঠুর করে তুলেছে তাকে।

রকির দিকে বন্দুক তাক করতেই শব্দ করে হেসে উঠে রকি।
— কি রে ছোট, আদিত্যের ছোট ভাই বলে, আমিও তোকে নিজের ছোটভাই ভাবতাম। আর আজ কিনা তুই ই আমার গায়ে আঘাত করলি? কোনো ব্যাপার না। তোর ব্যবস্থা আমি আগেই করে রেখেছি।

রিদের চোখ পরে রকির বাবা জাফর সাহেবের দিকে।
— শুনলাম তুই নাকি ওকে মা বলে ডাকিস? তোর বাসায়ই থাকে? তোদের মাঝে নাকি খুব মা ছেলের ভালোবাসায় বিদ্যমান?

— দেখ দুর্বলতার সুজুগ না নিয়ে সামনি লড়াই কর জদি সৎ সাহ থাকে।

— রকি সব সময় কৌশলে খেলতেই পছন্দ করে।

হসপিটালে ছুটে যায় আজমল চৌধুরি। আদিত্যের অবস্থা খুবই খারাপ। আদিত্যকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইমার্জেন্সিতে তার সাথে সাথে যাচ্ছে আজমল চৌধুরি।
— বাবা তোর কিচ্ছু হবেনা বাবা।

— আমার কথাই ভাবছো শুধু? তোমার যে আরেকটা ছেলে আমায় বাচাতে গিয়ে এখন নিজেই ওদের সাথে লড়ছে তার কথা ভাবলেনা? রিদ নাহয় একটু ভুল করেছিলো তাই বলে তুমি ওকে এই তিনটা বছর নিজের থেকে দুরে সরিয়ে রেখেছো। ও ওর ভুলের শত্তি পেয়ে গেছে বাবা। আর দুরে ঠেলে রেখোনা ওকে। নিজের কাছে টেনে নিও বাবা।

আদিত্যকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে গেলো। আজমল চৌধুরি কিছুক্ষন দারিয়ে থেকে চলে যায় তার আরেক ছেলে রিদকে বাচাতে।
,
,
রকিকে ওখানে রেখেই দৌড়ে জাফর সাহবের কাছে গিয়ে মা ডাকা মহিলাটার হাত ধরে নিয়ে আসছে সে। জাফর সাহেব বাধা দিতেই, হাত থেকে ছুরিটা নিয়ে জাফর সাহেবের গলায় বসিয়ে দেয় রিদ।

— আমার মায়ের মতো মহিলাটির গায়ে আপনি হাত দিয়েছেন আঙ্কেল। ভুল করে ফেললেন তো আপনি,,,, সরি আঙ্কেল, পারলে মাপ করে দিবেন। আজ এই মৃত্যু মৃত্যু খেলা হতে আপনি কেনো বঞ্চিত থাকবেন? গুড বাই আঙ্কেল ভালো থাকবেন ওপারে।

রিদ চলে যাচ্ছে ওই মহিলাটাকে নিয়ে।
একদিকে বোন হারানোর শোক আর এখন বাবাকেও হারিয়ে পাগলামো যেনো দ্বিগুন বেরে গেছে রকির। মাটিতে পরে থাকা বন্দুকটা নিয়ে পর পর দু,রাউন্ড গুলি চালিয়ে দেয় রিদের বুকে। মাটিতে ঢলে পরে রিদ।

আজমল চৌধুরি গাড়ি থেকে নেমেই ছুটে যায় রিদের কাছে। রিদের বন্ধু রাফিনও হসফিটাল থেকে আজমল চৌধুরির সাথে আসলো। বাকিজন হসপিটালেই আছে।
রিদের এই অবস্থা দেখে রকির শরিরে একের পর এক গুলি ছুরছে রাফিন। তার পর রিদের কাছে গিয়ে হাটু গড়ে বসে সে ও।

মৃত্যুর আগের মুহুর্তেও বাবাকে এতো কাছে থেকে দেখে মুখটা হাসিতে ভরে যায় রিদের।
— বাবা, তুমি আমায় জড়িয়ে ধরলে বাবা? আমায় আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরোনা বাবা। শেষ নিশ্বাসটা তোমার কোলে মাথা রেখেই তয়াগ করতে চাই আমি।

— তোর কিচ্ছু হবেনা বাবা। এক্ষুনি তোকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি আমরা।

— তার আর দরকার নেই বাবা। আমার হয়তো আর বেশি সময় নেই। তার আগে জানতে চাই, তুমি কি আমায় ক্ষমা করেছো বাবা?

— তোর উপর আমার কোনো রাগ নেই বাবা। আফসোস হচ্ছে শুধু। কেনো তুকে ভুলটা ক্ষমা করে তা শুধরানোর সুজুগটা দিলাম না।

— আই লাভ ইউ বাবা। খুব বেশি ভালোবাসি তোমায়।

আজমল চৌধুরি আর কিছু হয়তো বলতে চেয়েও পারছে না। শুধু জড়িয়ে ধরে আছে রিদকে।
কিছুক্ষন হয়ে গেলো রিদের কোনো সারাশব্দ নেই। নিশ্চুপ হয়ে গেছে রিদ। তার পাসে বসে বাবা, বন্ধু, আর সেই কুড়িয়ে পাওয়া মা টার আত্নচিৎকার।
,
,
,
কিছুক্ষন হলো জ্ঞান ফিরলো শুভ্রতার। বাইরে কেও একজন ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করছে আদিত্যের কথা।
— দেখুন ২৪ ঘন্টা যাওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত কিছু বলতে পারছি না।

বেড এ বসে ছটপট করছে শুভ্রতা। নার্সগুলো ধরে রেখেছে তাকে। পারছেনা আদিত্যের কাছে ছুটে যেতে সে। তার একটাই চাওয়া, সৃষ্টিকর্তা তার প্রিয় মানুষটাকে যেনো তার কাছ থেকে কেড়ে না নেয়।

To be continue………….

বিঃদ্রঃ আমি আমার কোনো গল্পেই এমন গ্যাপ দিই নি। যতটা এই গল্পে দিচ্ছি। কিছু কারনে প্রতিদিন দিতে পারিনি এটা। আশা করি আগামি গল্পে এমনটা হবেনা ইনশাল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here