ভালোবাসতে_বারণ পর্ব ১১

#গল্পঃ_ভালোবাসতে_বারণ💔
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💔
#পর্বঃ__১১

সব শেষে শুভ্রতা ফিরে এলো তার নিজ বাড়িতে। ততোক্ষনে আসিফ স্যার চলে গেলো স্কুলে। নিজ বাড়িটাও খুব অচেনা মনে হচ্ছে আজ। তাকে দেখে এগিয়ে এলো বৃষ্টি। কিন্তু তাতে নেই কোনো উল্লাসের আভাস।

সোফায় বসে আছে রকি ও জাফর সাহেব। ব্যাগ নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো তৃষ্না। তৃষ্নাকে দেখে জাফর সাহেব এগিয়ে যায় তার দিকে।
— আরে তৃষ্না মা আমার। কাওকে কিছু না জানিয়ে হটাৎ? অনেক মিস করেছি মা তোকে। কিন্তু আদিত্য আসেনি কেনো?

কিছু না বলে সোজা উপরে চলে যায় তৃষ্না। পেছন পেছন যায় রকিও।
— কি হয়েছে তৃষ্না, তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো? কারো সাথে কিছু না বলে এভাবে চলে এলি। কোনো সমস্যা হয়েছে কি?

— না ভাইয়া, তুমি যাও তো আমার কিছু হয়নি।

— কিছু তো হয়েছে বল না।

— একটু টায়ার্ড লাগছে তো তাই।

— আচ্ছা তুই বিশ্রাম নে কিছুক্ষন।
,
,
ঘরে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় আদিত্য। আজমল চৌধুরি এসে বসে পাসে। মাথাটা ঘুরিয়ে বাবার দিকে চেয়ে আবার পূর্বে মতো শুয়ে আছে সে।
বাবার সাথে কোনো কথা না বলে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে যায় সে। বাবার জন্য জমে আছে মনে হাজারও অভিযোগ।

রুমে আধসোয়া হয়ে ফোন টিপছে তৃষ্না। রকি গিয়ে বসে তার পাসে।
— কি হয়েছে তৃষ্না, আসার পর থেকে তোকে কেমন মন মরা দেখাচ্ছে? এ্যানি প্রব্লেম?

— আদিত্য আমায় কখনো ভালোবাসবে না ভাইয়া,,,,, আমার কথা ভাবতেই যেনো ওর ঘৃনা হয়।

— ও আচ্ছা এই কথা? আরে ও এখনো শুভ্রতা মেয়েটাকে ভুলতে পারেনি হয়তো। শুভ্রতা তো শেষ, হয়তো তার অস্তিত্বও খুজে পাবে না আাদিত্য। ও এখন শুভ্রতার সম্পর্কে যা শুনবে তাতে শুভ্রতার জন্য তৈরি হবে তার মনে এক রাশ ঘৃণা। আর সেই সুজুগটাই তোকে নিতে হবে।

— আচ্ছা ভাইয়া জোর করে কি ভালোবাসা হয়?

— তুই কি চাস?

— আমি শুধু তাকেই চাই ভাইয়া।

— ব্যাস, তুই চাইছিস তুই পাবিও সেটা খুব জলদিই।

— আচ্ছা ভাইয়া, শুভ্রতা কি সত্যিই মারা গেছে? না কি কোনো ঝড় হয়ে আসবে আমাদের জীবনে।

একটু চিন্তায় পরে গেলো রকি। সেদিনের পর থেকে আগুনের কোনো দেখা নেই। ফোনও তুলছে না সে। হটাৎ কি হয়ে গেলো তার। সে কি কাজটা কমপ্লিট করলো? সেটাও তো জানায় নি একবার। নিজে গিয়েই দেখতে হবে বিষয়টা।

তাছারা রকির জীবনেও লেগে আছে এক অশান্তি। তার স্ত্রী পিপাশা দু বছরের সংসার ফেলে চলে গিয়েছে বাপের বাড়ি। ডিবোর্সের কথাবার্তাও চলছে তাদের মাঝে। রকির গুন্ডা গুন্ডা ভাব জেনো এই ২ বছরে একটুও বদলাতে পারেনি সে। এই রকম একটা লোকের সাথে সংসার করতে চায়না সে। সারাদিন রকির ধমকের উপরে থাকাটা আর সম্ভব হচ্ছেনা তার। মুক্ত একটা জীবণ চায় সে ও। তাই এই ডিসিশন।

বাইরে প্রচন্ড রোদ, শুভ্রতার মাথার উপর ফ্যানটা ঘুরছে নিজ গতিতে। বিছানায় বসে চোখ বন্ধ করে আছে সে। সব কিছু যেনো অসস্ষি লাগছে তার কাছে। জীবনে একটা ভুলের প্রাশ্চিত্ব তাকে এভাবে দিতে হচ্ছে। নিজের সব আপন জনকে পর করে দিলো এই একটা ভুল।
,
,
স্কুল থেকে ফিরতে আজ একটু দেড়ি হয় আসিফ স্যারের। সন্ধায় বাসায় ফিরে শুভ্রতাকে দেখেও না দেখার ভান করে সোফায় বসে পরে সে। দরজার পাসে দাড়িয়ে আছে শুভ্রতা। ভাবছে একটা ভুলে বাবা আমায় এতোটা পর করে দিলো?
চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে তার,
,, বাবা আমি কি তোমার সেই শুভি, যাকে একটিবার না দেখলে তোমার সব কেমন চোখ হারা মনে হতো। আমি কি তোমার সেই শুভি, স্কুল থেকে ফেরার পর পরই যাকে ডেকে বলতে এক গ্লাস পানি নিয়ে আয়তো মা। তাহলে আজ কেনো এতোটা পর ভাবছো বাবা। আমাকে কি একটিবার নিজের ভুল শুধরানোর সময়টা দেবে না?,,,

তার মাঝেই আসিফ স্যার বলে উঠে,
— বৃষ্টি, একগ্লাস পানি দে তো মা।

হয়তো বৃষ্টির রুম অব্দি কথাটা পৌছায় নি। শুভ্রতা এগিয়ে টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে বাবার সামনে দাড়ায়। তা না দেখার ভান করে সেখান থেকে উঠে চলে যায় আসিফ স্যার।
পানি হাতে দাড়িয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে শুভ্রতা।

রাতে খাবার দেবিলে আসিফ স্যার সহ সকলে। বসে বসে খাচ্ছে মুখে কোনো কথা নেই তার। শুভ্রতা গিয়ে বাবাকে খাবার বেরে দিতেই রেগে যায় সে,,,
— সমস্যা কি তোমার? একটু শান্তিতে খেতেও দিবেনা নাকি?

খাবারের প্লেট টা রেখেই উঠে চলে যায় আসিফ চৌধুরি।
,
,
,
কেটে গেলো দু,দিন। পরিবারের কাছ থেকে এতো অবহেলা যেনো আর সহ্য হচ্ছে না তার। পেটে হাত দিয়ে নিরবে চোখের জল ফেলছে শুভ্রতা।
— তোকে দুনিয়ায় আনতে কতো ত্যা সহ্য করতে হচ্ছে আমার। তুই কি এক মাত্র সমস্যা? তোর জন্যই কি এই সব?

আজ শুক্রবার,
আসিফ স্যারের আজ ছুটির দিন। সকালে ছাদে হাটাহাটি করছে আসিফ স্যার। তার কাছে গিয়ে দাড়ায় শুভ্রতা। আসিফ স্যার চলে যেতেই শুভ্রতা করুন কন্ঠে বলে উঠে,
— তোমার সাথে কিছু কথা আছে বাবা, প্লিজ।

— কি কথা জলদি বলো।

— এমন কেনো করছো বাবা? তুমি কেনো বুঝতে পারছোনা তোমাদের কাছ থেকে পাওয়া অবহেলা গুলো আমায় কুড়ে কুড়ে খায় প্রতিনিয়ত? কেনো বুঝতে পারোনা আমায়? একটিবার বুল শুধরানোর সুজুগটা কি দেবেনা বাবা?

— এতো বক বক শুনার সময় আমার নেই।

— আমার প্রতি এতোটা ঘৃনা হয় বাবা?

— আমার এতো সময় নেই যে তোমাকে নিয়ে ভাববো।

— বাবা একটু বুঝার চেস্টা করছো যে, আমার মনের মাঝে কি ঝড় বয়ে যাচ্ছে? একটিবার আমার দিকে তাকিয়ে দেখো, আমি কতটা সুখে আছি বাবা।

— এসবের জন্য দায়ি তুমি নিজেই।

— আচ্ছা বাবা, আমি মরে গেলেই কি তুমি শান্তি পাবে?

— তোমার যা ইআ্ছে করতে মন চায় তাই করো। আমার বয়স হয়েছে, প্লিজ আমায় একটু শান্তিতে মরতে দিও।

নিজের বাবার মুখে এমন কঠোর কথা কোনোদিন শুনতে হবে তা হয়তো কল্পনাও করেনি শুভ্রতা। একদিকে সবার কাছ থেকে এতো অবহেলা অন্যদিকে তার একাকিত্বের বোঝ। আর এই কঠিন লড়াইতে ই শুভ্রতা আজ একা।
সন্তান পৃথীবিতে আনার পর কি পরিচয়ে বড় করবে তাকে?
,
,
পাশাপাশি বসে আছে রিদ ও আদিত্য। শুভ্রতা হটাৎ করে চলে যাওয়াটা ছিলো আদিত্যের জন্য একটা বড় আঘাত। চেয়েছিলো এখানেই শুভ্রতাকে সব বুঝিয়ে বলবে সে।
— সরি ভাইয়া, জানতাম না ও এভাবে চলে জাবে। তুমি ফিরে আশা অব্দি তাকে আমি সেইফ রেখেছি। বাকিটা এবার তোমাকেই মানিয়ে নিতে হবে। তোমাকেই খুজে নিতে হবে তাকে।

— থ্যাংক ইউ রিদ।

ওদিকে রকি হেটে বেড়াচ্ছে ওই জঙ্গলটাতে। কিছুই খুজে পাচ্ছে না সে। না পাচ্ছে শুভ্রতার লাশের কোনো অস্তিত্ব। দক্ষিন দিকটা থেকে কেমন একটা অদ্ভুদ গন্ধ নাকে আসলো তার। মাস্ক পরে সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে রকি। একটু সামনে যেতেই আাগুন ও অন্নন্যদের আধ পচা লাশগুলো দেখতে পাচ্ছে সে।
রকির মাথায় পরে চিন্তার ভাজ। কে হতে পারে সে? কে করলো এমন? আদিত্যকে তো আগেই পাঠিয়ে দিলাম। তাহলে কে আছে এমন যে এই সব জানতো?
,
,
শুভ্রতার বাড়ির গেটের ভিতরে শুভ্রতা শুভ্রতা বলে চেচাতে চাচাতে প্রবেশ করলো আদিত্য। জানালা দিয়ে বাইতে তাকাতেই দেখে আদিত্য দাড়িয়ে ডেকে চলছে তাকে।
একটু পর দেখছে, বৃষ্টি ওখানে তাকে কি যেনো বলে যাচ্ছে।

— কেনো এসেছেন এখানে? আলগা দরদ দেখাতে এসেছেন এখানে? নাকি মরেনি বলে এবার নিজ হাতে মারতে এসেছেন তাকে? আপু খুব ভালো আছে প্লিজ চলে যান এখান থেকে। আর কষ্ট দিবেন না আপুকে।

তার পেছনে শুভ্রতা বলে উঠে,
— বৃষ্টি তুই ভুতরে যা, আমার ওর সাথে কিছু কথা আছে।

— কিন্তু আপু?

— বৃষ্টি তুই ভুতরে যা বলছি।

দেখেই বুঝা যাচ্ছে শুভ্রতার রাগ আজ মাথার উপর ঘুরছে। আর কথা না বাড়িয়ে ওখান থেকে চলে যায় সে।

— কি কেনো এসেছো এখানে?

— শুভ্রতা আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।

— সেই অধিকার তুমি অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছো। আমার জীবনটা অন্দকারে ঠেলে দিয়েছো তুমি।

— শুভ্রতা আমার কথাটা তো শুনো?

— কি বলতে চাও তুমি? সরি? নাকি আমায় এমন একটা পরিস্থিতিতে ফেলে অন্য মেয়েকে নিয়ে বিয়ের আগেই হানিমুনে চলে গিয়েছিলে ওইটা? তুমি আমাকে ঠকিয়েছো আদিত্য। দিনের পর দিন তুমি আমার ফিলিংস নিয়ে খেলেছো। কিন্তু আর নয় আদিত্য চৌধুরি। চলে যাও এখান থেকে। গেট আউট প্রম মাই হোম।

To be continue…………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here