ভালোবাসতে_বারণ পর্ব ১৬

#গল্পঃ_ভালোবাসতে_বারণ💔
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💔
#পর্বঃ__১৬

রাত তখন গভির,,,
রুমে ফ্লোড়ে বসে আছে তৃষ্না। হাতে অনেক গুলো ঘুমের ঔষধ। বেচে থাকার ইচ্ছে তিলে তিলে শেষ হয়ে গেছে তার। জীবনের সব চেয়ে বড় চাওয়াটাই যে অপুর্ন রয়ে গেলো।
,, সরি ভাইয়া, সরি আব্বু, পারলে ক্ষমা করে দিও আমায়। বড় একটা শ্বাস নিয়ে ঔষধ গুলো খেয়ে নিলো তৃষ্না। খাটের সাথে হেলান দিয়ে চক্ষুজোড়া বন্ধ করে আছে সে। অনুভব করে চলছে আদিত্যের বলা সেই কথা গুলো।
মাথাটা ঝিম ঝিম করছে তার। রাজ্যের সব ঘুম এসে যেনো হানা দিয়েছে ওই মায়াবি চক্ষুজোড়ায়। যেনো চির ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছে সে। এই ঘুম আর ভাঙার মতো না। চেয়েছিলাম এই শেষ ঘুমটা প্রিয়জনের হাত ধরে ঘুমাবো। চেয়েছিলাম একে অপরের ভবিষ্যত হতে, অবশেষে অতিত হয়েই রয়ে গেলাম। সত্যিই কি আমি তার অতিত? অতিত নিয়েও তো মানুষের কিছু চিন্তা থাকে। আমায় নিয়ে কি কোনো মাথা ব্যাথা আছে তার?

রাত তখন ২টা ছুই ছুই,,,
গভির ঘুমে আচ্ছন্য আদিত্য। আধ শোয়া হয়ে বসে আছে শুভ্রতা। চোখে ঘুমই আসছেনা তার। আদিত্যকে এতো কাছে পাওয়াটা যেনো এখনো অবিশ্বাস্য তার কাছে।
হ্যা, এটাই তার কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। কিছু মুহুর্তের জন্য হলেও মনে হয়েছিলো আদিত্য আর তার দুরুত্বটা আর এক হওয়ার মতো নয়। হারিয়ে ফেলেছে সে তার আদিত্যকে। এই সময়টায়, আদিত্যের দেওয়া সৃতিটুকুই ছিলো বেচে থাকার একমাত্র কারন।
আদিত্যের ফর্সা কপালটায় একটা চুমু খেলো শুভ্রতা। তার পর গানটা আরেকটা খেতে ইচ্ছে হলো তার। পুরু মুখটা চুমুতে ভরিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে তার। ছেলে মানুষি যেনো আকড়ে ধরেছে তাকে।
আদিত্যের পুরু মুখটায় বেশ কয়েকটা ভালোবাসার পরস একে দিলো সে। মাথার চুল গুলো বার বার হাতের আঙুল দিয়ে আচর কাটছে।

চোখ খুলে শুভ্রতার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আদিত্য।
— কি করছো, বসে বসে। এতো রাত হয়ে গেলো, এখনো ঘুমাও নি? তোমাকে না আমি রাত জাগতে মানা করছি?

— ঘুম আসছেনা কি করবো?

— তাই বলে এভাবে বসে থাকবে?

— ভালোইতো লাগছে আমার।

— এই অবস্থায় রাত জেগে জেগে, শরিরটা দুর্বল করার সখ জাগলো বুঝি? আসো ঘুমাও। যা বলার সকালে বলবে। সব কিছুর একটা উপযুক্ত সময় আছে।

আদিত্যের বুকে মাথাটা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে সে। এতেই যেনো সে পায় তার পুরুটা সুখের খোজ।
— আচ্ছা, এই সুখ কি আমার কপালে চিরকাল সইবে? জীবনের সব কষ্টের কি ইতি ঘটেছে? বলতে পারবো কি আজ আমি খুব সুখি? জানি না, বর্তমানে তার বুকে মাথা রেখেই যেনো আমার সব স্বপ্নের খোজ।
,
,
,
,
সকাল হয়ে এলো। স্নিদ্ধতার আলোয় ভরিয়ে দিয়েছে চার পাস। চার দিকে ভোরের পাখিটার কোলাহল। ব্যস্ত শহরটায়, সবাই ছুটাছুটি করছে এদিক ওদিক। কেও কেও হয়তো অপেক্ষা করে, কখন ভোর হবে এই ভেবে। কখন নিজের মানুষের মুখে অন্য জুটানোর কাজে নেমে পরবে এই ভেবে।
ব্রেকফাস্ট রেডি করে তৃষ্নাকে ডাকতে গেলো বাড়ির কাজে সাহাস্য করা মেয়েটি।
দরজা খুলতেই দেখে খাটের সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোড়ে বসে আছে তৃষ্না।
,, আপা, আপা, ও আপা, আপা,

কয়েকবার ডাক দিয়ে, কোনো সারাশব্দ না পেয়ে ভেতরে প্রবেশ করে তৃষ্নার কাছে গিয়ে দাড়ায় সে।
,, আপা, এভাবে নিচে বসে আছেন কেনো? রাতে ঘুমান নি? আপা, ও আপা। হায় আল্লাহ্ কি হলো আবার? আপা কথা কন না কেন? কি হলো আবার? হায় আল্লাহ্। ভাইজান,,,,,,,,,,,,,,,,

ডাক শুনে ছুটে আসে রকি।
— কি রে কি হয়েছে তোর? এই তৃষ্না উঠ, এভাবে বসে আছিস কেনো?

তৃষ্নার সারাশব্দ না পেয়ে তার কাধে হাত রেখে ঝাকুনি দেয় রকি। মুহুর্তেই ঢলে ফ্লোড়ে লুটিয়ে পরে তৃষ্না। শরিরটা বেশ ঠান্ডা হয়ে গেছে তার। পাসে পরে আছে হাই পাওয়ারি এক পাতা ঘুমের ঔষধ। হাতের পাল্স চেক করতেই উত্তেজিত কন্ঠটাও যেনো মুহুর্তেই নিরবতায় ছেয়ে গেছে। হাত পা দুটি যেনো অবস হয়ে আসছে রকির। কতটা মানুষকে মেরেছে সে। তার সামনে পরেছিলো কতো নিথর দেহ। কিন্তু আজ তৃষ্নার এই নিরবতা যেনো তার বুকের ভিতর সব কিছু ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
,
,
,
তৃষ্নার মৃত্যুর আজ তিন দিন পার হয়ে গেলো। মেয়ের শোকে কাতর হয়ে হয়ে তিন দিন কোনো কথা নেই জাফর সাহেবের মুখে। নিরবতায় স্থির হয়ে আছে সে।
রকির কথা নাহয় নাই বললাম। যত রকম পাগলামো করছে এই তিন দিনে। শুধু না পারছে তৃষ্নাকে আবার ফিরিয়ে আনতে। তৃষ্নার শোকে শোকে তার মাঝে প্রতিশোধের আগুনটাও দ্বিগুন আকার ধারন করছে।

কেটে গেলো আরো কয়েকদিন,,,
স্বপ্ন পূরণ হয়ে নতুন জায়গায় আগমন ঘটলেও মনটা ভিষন্ন হয়ে আছে শুভ্রতার। এতো বড় বাড়ি, তার উপর এরকম একটা কেলেঙ্কারি মাথায় নিতে সবার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে একটু দেরি হচ্ছে তার।
শুভ্রতার ভিষন্ন মন দেখে আদিত্য ভাবলো বাইরে থেকে কয়েকদিন সময় কাটিয়ে আসলে ভালো হয়। এতে ভয় ভিতি, লজ্জা কিছুটা হালকা হবে তার মাঝে।
,
,
শুভ্রতার আর আদিত্য নিজেদের মতো সময় কাটাচ্ছে এই কয়দিন। এই দু,এক দিন আদিত্যের ভালোবাসায় যেনো শুভ্রতা ভুলে গেলো তার অতিতের কষ্ট। তা যেনো ধিরে ধিরে ভুলে যেতেও শুরু করেছে সে।

আজ শুভ্রতাকে নতুন ভাবে প্রপোজ করবে আদিত্য।
শুভ্রতার পাশে গিয়ে বসে আদিত্য,,
— কেমন লাগছে এই নতুন জায়গা?

— নতুন জায়গা হোক বা পুরাতন, সুন্দর হোক বা অসুন্দর, প্রয় মানুষটা পাসে থাকলে সব সময় ই মন ভালো থাকে।

— তাহলে চলো।

— এতো রাতে কোথায়?

— সারপ্রাইজ আছে একটা। আগে চলো গেলেই দেখবে।

— কোথাও যাওয়ার জন্য একটা প্রস্তুতি থাকা দরকার। আর এখন সাজতেও সময় লাগবে।

— যেভাবে আছো ওভাবেই চলবে। চলোতো।

শুভ্রতার হাত ধরে টানতে টানতে নিচে নিয়ে যায় আদিত্য। গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলতে থাকে সে।
— আমরা কথায় যাচ্ছি?

— গেলেই বুঝবে।

একটা অন্ধকার ঘরে নিয়ে এলো শুভ্রতাকে। মনে একটু ভয় ভয় কাজ করছে শুভ্রতার।
— জয়গাটা এমন অন্ধকার কেনো?

শুভ্রতার কথা হয়তো আদিত্যের কান অব্দি পৌছায়নি। একটা নির্দিষ্ট যায়গায় শুভ্রতাকে দার করিয়ে হাত দিয়ে দুবার আওয়াজ দিতেই অবাক হয়ে যায় শুভ্রতা। দু হাতে গাল চেপে ধরে তাকিয়ে আছে আদিত্যের দিকে। চার দিকটা অপুরূপ সাজে সাজানো।
— তোমায় কাছে পাওয়ার পর থেকে একবারও ভালো ভাবে বলা হয়নি ভালোবাসি। আজ তোমায় বলতে চাই। নিজের সবটা দিয়ে বলতে চাই, ভালোবাসি। নেবে কি আমায় নিজের করে?

বড় গোলাফ টা হাতে নিয়ে ফুলের তোড়াটা নিজের ঠোটে চেপে ধরে দু হাত মেলে হাটু গড়ে বসে পরে আদিত্য।
শুভ্রতা হাসি মুখে হাত বাড়িয়ে আদিত্যের মুখ থেকে ফুলটা নিতে চাইলেই। হাত দিয়ে ইশারা করে আদিত্য।
,,হাত দিয়ে নয়, নিজের ঠেট দিয়েই আমার ঠোট থেকে ফুলটা নিতে হবে তোমার।

আদিত্যের কথায় চোখ বড় বড় করে তাকায় শুভ্রতা। নিমেসেই যেনো লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে সে।
,
,
দু,হাতে এদিক ওদিক করে পকেট চেক করেই কপালে হাত দেয় আদিত্য। হয়তো গাড়িতেই ফেলে এসেছে।
শুভ্রতা ফুলটা হাতে নিয়ে বলে উঠে,
— কি হলো কি খুজছো?

— তুমি একটু দাড়াও আমি এক্ষুনি আসছি।

বলেই দিত্য দৌড়ে নিচে চলে যায়।

নিচের ঠোট ফুলিয়ে শুভ্রতা ভাবতে থাকে,
,, কি এমন খুজছে। হটাৎ করেই দৌড় দিলো?

পুরু রুমের লাইট অফ হয়ে গেলেই কিছুটা ঘাবড়ে যায় শুভ্রতা। হটাৎই আও করে একটা চিৎকার দিয়ে উঠে সে।
,
,
,
আদিত্য উপরে এসেই দেখে পুরুটা সম্পূর্ন অন্ধকারে ঘেরা। লাইট অন করতেই দেখে পুরুটা রুমই খালি। শুভ্রতাকে না দেখে তন্ন তন্ন করে খুজতে থাকে সে। সারাটা হোটেি তন্ন তন্ন করে খুজছে আদিত্য। কোথাও শুভ্রতার কোনো হদিস নেই। শুভ্রতা কি ইচ্ছে করেই এসব করছে নাকি ও কোনো বিপদে পরেছে।
রাত পার হয়ে গেলো। শুভ্রতাকে খুজতে খুজতে এক প্রকার পাগল হওয়ার উপক্রম আদিত্যের। হটাৎই বেজে উঠে আদিত্যের ফোনটা।

— হ্যালো,,,,

— হ্যালো, আদিত্য চৌধুরি। রকি বলছি।

রকির কথা শুনতেই বসা থেকে দাড়িয়ে যায় আদিত্য।
— অবাক হওয়ার কিছু নেই। এমনি খবর নেওয়ার জন্য ফোন দিলাম।

— শুভ্রতা কোথায়?

— আরে বাহ্, বলার আগেই দেখি সব বুঝে গেলেন। আমাদের সাথেই আছে এখনো সেইফ আছে। কিন্তু কতক্ষন এভাবে সেইফ থাকবে বলচে পারছিনা। সময় খুবই কম, সোজা আমাদের পুরুনো বাংলোটাতে চলে আসে। আর হ্যা সিকিওরিটি আর বন্দুক আনার দরকার নেই। এমনি একটু সুখ দুংখের আলাপ করবো আর কি। আসেন তাহলে,,,,, বাইইইইইই,,,,,,,

To be continue…………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here