“ঝরা পাতার দিনগুলো পর্ব – ১২

গল্পঃ ঝরা পাতার দিনগুলো
।।
পর্ব – ১২
।।
সবচেয়ে আপন জায়গাটা ছিলো এই ক্যাম্পাসটা।
পাঁচ বছর কাটানো এই জায়গাটায় হয়তো আর আসা হবে না!! কত মধুর স্মৃতি, হাসি ঠাট্টা, কান্না, সপ্নগড়ার, সপ্নভাঙার সাক্ষী এই ছোট্ট ক্যাম্পাসটা!!
আপন মানুষগুলোকেও হারিয়েছি এইখানে এসে।
সুন্দর মুহূর্তগুলোর স্মৃতি বিশ্বাসঘাতকতার কস্টের নিচে চাপা পরে গিয়েছে।
সবকিছুকে ছাপিয়ে তাও কেন জানি হৃদয়ের কোথাও
একটা বিদায়ের করুন সুর বাজছে!!!
এই ক্যাম্পাসটা তো এইভাবে ছাড়ার কথা ছিলো না আমার!!!!
এই কথাটা মনে হলে আরোও বেশি কস্ট হচ্ছে।
কাউকেই বিদায় জানাইনি। তাহলে চোখের পানির স্রোত বয়ে যেতো!!
রাতে ২টা বড় বড় লাগেজ নিয়ে সি এনজি করে বের হলাম। রাত ১১.৩০টায় বাস।
সকালে আগে ভাইয়ার বাসায় গেলাম। ডিভোর্সের পর আমার জিনিসগুলো ফুপির বাসায় পরে থাকলে কি লাভ!!
মেজো ভাবি তো আমাকে দেখে একটু পর পর খোচা মেরে কথা বলছে। এখন তো ফয়সালের কথাও জানে। ভাগ্যিস ডিভোর্সের কথা জানে না। তাহলে হয়তো বাসাতেই ঢুকতে দিতো না!!
মেজো ভাইয়া অপরাধির মতো কাচুমাচু করছে। ডিভোর্সের কথা শুনলে কি করতো কে জানে!!
তারাতাড়ি বের হতে হবে। আবার গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে তো!!
পিচ্চি পাচ্চা গুলোর জন্যে কিছু নিয়ে বাড়িতে ঢুকলাম। এই বাড়িটাতে ঢুকলেই মনটা কেমন শান্ত হয়ে যায়। নিজের বাড়ি বলে হয়তো।
হাহ হা হা!!! নিজের কোনো কিছু বলতে কিছু আছে নাকি আমার!!!! দেখা যাবে কিছুদিন পর হয়তো এইখানেও আসতে পারবো না!!
বড় ভাইয়া আসছে বাড়িতে!!!
যাক একসাথে সবাইকেই দেখে যেতে পারবো।
আমিতো এসেছি আম্মু আব্বুর সাথে দেখা করতে।
আমার বড় ভাইয়া মাটির মানুষ। এই মানুষটার ঋণ আমি সারাজীবন দিয়েও শেষ করতে পারবো না।
বড় ভাইয়া একটা চাবি নিয়ে এসে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো
-যখন মনে চায় এই বাড়িতে চলে আসবি। আমরা বাড়িতে থাকি আর না কি তুই আয়সা পরবি।
মাথা ঝাকিয়ে সায় দিলাম।
-পরশু সকালে আমাদের ফ্লাইট।
-চার জন?
-নাহ, তিনজন।
ভাইয়ার অসহায়ের মতো দৃষ্টিটা সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই। তাই উঠে আম্মু আব্বুর করবের দিকে গেলাম।
কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেলাম ওখানেই। কতক্ষণ ছিলাম মনে নেই। ভাইয়ার ডাকে ঘুম থেকে উঠে উঠে দেখি সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গিয়েছে।
ভাইয়ার চোখে পানি দেখে বুকের ভেতর হাহাকার করে উঠলো।
নিজেকে সামলে নিয়ে হেসে বললাম
-আরে এতো দূরে যাবো, তাই একটু দেখা করতে আসছি।
-ঈদের পরের দিন তুই বাড়িতে আসছিলি তাই না?
ভাইয়ার প্রশ্নের কোনো উত্তর আমি দিতে পারিনি।
কারণ উত্তর দিতে গেলেই হাউ মাউ করে কান্না শুরু করে দিবো।
চলো বাড়ি যাই, বলেই ভাইয়ার আগে আগে চোখের পানি আড়াল করে চলে এলাম।
রাতে ভাইয়া খাওয়াই দিলো আমাকে। আগে তো ভাইয়ার হাতেই খেতাম। কি জানি কপালে আর আছে কি না এটা!!!
পরের দিন খুব ভোরে ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হলাম।
বাসায় যেতেই কানের কাছে ফুপির বকর বকর শুরু হয়ে গেলো!!
কালকে ফ্লাইট, মেয়েটার কোনো আক্কেল বুদ্ধি নাই। এখনো কিচ্ছু গুছায় নাই।
ফুপির কথার যন্ত্রণায় রুমে যেয়ে সব গুছানো শুরু করলাম।
কিছু একটার সাউন্ড পেয়ে পিছন ফিরতেই দেখি সাব্বির।
ব্ল্যাক কালার টি শার্টে এতো বেশি সুন্দর লাগছে ওকে!!! চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো। বার বার ঝাপসা হয়েই যাচ্ছে।
খুব ইচ্ছে ছিলো ওকে খালি গায়ে দেখার। কি কপাল আমার!!! সাড়ে পাঁচ মাস সংসার করেও হাসবেন্ডকে খালি গায়ে দেখতে পারিনি এখনো!!
-আম্মা আব্বা যাচ্ছে বললে না তো একবারও?
-তোমার সাথে আমার কখনো কথা হয়?
-কথা ঘুরাচ্ছ কেনো? তোমার ইচ্ছে ছিলো না সে জন্যে বলতাম না।
এতক্ষণে ওর দিকে ফিরে সামনা সামনি দাঁড়িয়ে বললাম
-আমার কি ইচ্ছে করে সেটা জানতে চেয়েছিলে কোনোদিন? খুব কি দরকার ছিলো এতো ঝামেলা করার?
আরও অনেক কিছু বলার ছিলো ওকে।
একবার ভালোবাসি বললেই হাসতে হাসতে চলে আসতাম তোমার কাছে। ভালোবাসো নাকি অপছন্দ করো বুঝতেই তো পারলাম না কখনো!!
ওকে খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।
বিরক্ত মুখে আমার সামনে থেকে চলে গেলো ও!!
কাকে কি বলবো আমি!! আমার প্রতি যার বিন্দুপরিমাণ ইন্টারেস্ট নাই!!!
একটাই প্রার্থনা করছি মনে মনে। আজকে রাতে যেনো ও এই রুমে না থাকে। তাহলে কি যে করে ফেলবো তার ঠিক নেই!!
সব কিছু লাস্ট চেক করে নিলাম। ফুপিদের কে সব টিকেট আর পাসপোর্ট দিয়ে আসলাম। রিশাদ ভাইয়াও জানুয়ারীর ২০ তারিখ চলে যাবে। অন্যদিনের মতো আজকেও সাব্বির নেই বাসায়। এতোটাই বিরক্ত লাগে আমাকে!!!
আর থাকতে হবে না বাইরে বাইরে। আজকে রাতটায় শুধ।
সন্ধ্যা হতে ছোট ভাইয়া আসলো বাসায়। ওকে নিয়ে রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলাম।
-কিরে কি হয়েছে বলতো??
অবাক হয়ে বললো।
-সুহা, নুহা আর আয়ানের জন্যে ডিপোজিট করেছি আমি। এই প্যাপার গুলো রাখ তোর কাছে। আমি চলে যাওয়ার পরে দিস।
-তুই এসে দিস। আর এতো টাকা কোথায় পেয়েছিস তুই!!!
-আমার কাবিনের টাকা।
-তো খরচ কেনো করছিস!! আর সাব্বির কই?
-জানি না কই। আমি আসলে ও বাসায় থাকে না।
মাথা নিচু করে বললাম আমি।
-কেনো???
থমথমে গলায় ও বললো।
উঠে গিয়ে সাব্বিরের ড্রয়ার থেকে ডিভোর্স প্যাপারটা নিয়ে আসলাম। বেশি খুজতে হয়নি। সবার উপরেই রাখা ছিলো।
নিচের দিকে তাকিয়ে ওর হাতে দিলাম। চোখ ফেটে পানি আসছে।
-কিছু বলিস না প্লিজ!!! একবার কান্না করা শুরু করলে আর থামাতে পারবো না!!
চোখভর্তি পানি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম আমি।
ভাইয়া আর কিছু না বলে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আমায়।
আমি হাউ মাউ করে কান্না শুরু করলাম ওকে ধরে।
ছোট ভাইয়াও কাঁদছে!!
অনেক্ষন পর নিজেকে সামলে বললাম ওকে
-আমি মনে হয় অনেক খারাপ তাই না রে!!
সেই ক্লাস সিক্স থেকে বাড়ির বাইরে বাইরে ছিলাম।
এখনো পর্যন্ত বাইরেই। আর এখন ফিরে যাওয়ার জায়গাও নেই আর মানুষও নেই যে কারো কাছে যাবো। জানিস আম্মু আব্বু থাকলে তাদের কাছে চলে যেতাম।
-আমি রাজি ছিলাম না তোর বিয়েতে। রাগ করে তাই ঐ দিনই সাভার চলে গিয়েছিলাম। তোর বিয়েতেও আসিনি।
কিন্তু মামুন ভাই কেনো এটা করলো!!!
-বাদ দে, আমার কপালে ছিলো এমন। আমি আর সাব্বির ছাড়া এখন শুধ তুই জানলি আমাদের ডিভোর্সের কথা।
-কাউকে বলিস নি কেনো? আর সাব্বিরকে তো এতো সহজে আমি ছারবো না!!
-যা করার আমি চলে যাওয়ার পরে করিস। ফুপিরা আগে আসুক তারপর করিস।
-আগে আসুক মানে তুই কই যাবি??
ওকে সব বুঝিয়ে বললাম।
-তুই এতো বড় হয়ে গিয়েছিস বুঝতে পারিনি রে!!
-কি করবো বল? কাউকেই তো পাশে পাইনি।
-তুই আর আসবি না দেশে?
অসহায়ের মতো বললো ও।
-জানি না রে। আমিও তো একটা মানুষ। সব কিছু সামলে নিতে সময় লাগবে। আর এইখানে আসলেই কোনো না কোনো ভাবে এদের সাথে দেখা হয়ে যাবে। কস্টের অতীতটাকে মনে করতে চাই না আমি।
৪ তারিখ কুয়ালালামপুর থেকে সিডনি ফ্লাইট আমার।
কাউকে কিছু বলিস না আমি কোথায় আছি, কেমন আছি, কি করছি এই ব্যাপারে। বাসার কাউকেও না।
-এমন কেনো করছিস বুঝতে পারছি। কিন্তু…
সত্যি কিছু সমাধান নেই এর। এবার তোর যা ভালো লাগে তাই কর। কারো কথা শুনতে হবে না।
-আমি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পর ফুপিরা আসলে সবাইকে বলিস। ফুপিরা ব্যাক করবে। আমি করবো না। কালকে ফ্লাইট আমাদের।
-কখন ফ্লাইট? কে যাবে সাথে? সাব্বির যাবে?
-জানি না রে। সাতটায় ফ্লাইট, তুই আসিস একটু!!
-তুই না বললেও আসতাম। আর আমাকে ফাসিয়ে যাচ্ছিস তুই সবকিছু বলার জন্যে!! কস্টের দিন গুলোতেই শুধু আমার কথা মনে হয় তোর!!
ছোট বেলায় তোর মাইরের অর্ধেক খাইতাম আমি।
বিছানায় জায়গা নিয়ে ঝগড়া করতি আমার সাথে!!
শুকনো একটা হাসি দিয়ে বললাম
জানিস সাব্বিরের সাথে এখনো পর্যন্ত এক বিছানায় ঘুমাইনি কোনোদিন!!
ছোট ভাইয়া আর কিছু বলতে পারেনি আমার দিকে তাকিয়ে!! চোখভর্তি পানি নিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলো শুধু।
ফুপি অনেক্ক্ষণ ধরে দরজায় নক করছে।
দরজা খুলে দিতে ফুপি রুমে ঢুকলো আর ভাইয়া আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বের হয়ে গেলো মাথা নিচু করে!!
.
“মেহের, সত্যি করে বলতো তোর আর সাব্বিরের মধ্যে সবকিছু ঠিক আছে??? ”
ফুপির এমন প্রশ্নে ব্যাগ গুছানো বাদ দিয়ে তার হাত ধরে টেনে নিয়ে সোফায় বসালাম।
-এই পাঁচ মাস পরে তোমার এই কথা মনে হলো কেনো?
আর একটু আগে মনে করতে পারলে না?মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলাম ফুপিকে
– তোর কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছি নারে। কি বলতে চাইছিস একটু স্পষ্ট করে বলনা!
-এইখানে বলাবলির কিছু নাই আম্মু। সবকিছু ঠিক না হলে করে নিতে হবে। আর তাও না হলে ছেড়ে যেতে হবে। জোড় করে সম্পর্ক করা যায় কিন্তু টেকানো যায় না।
-কি বলতে চাচ্ছিস তুই?
কান্না কান্না গলায় ফুপি জিজ্ঞেস করলো আমাকে।
ইচ্ছে করছিলো ফুপিকে বলি, তোমার এই বাদর ছেলেটাকে কান ধরে নিয়ে এসে একটু বলোতো আমাকে ভালোবাসতে! বিয়ের পর থেকে অনেক কস্ট দিয়েছে আমায়। এখন আবার ডিভোর্সও দিয়ে দিচ্ছে আমাকে!! জানুয়ারির ২৭ তারিখে পারমানেন্টলি ডিভোর্স হয়ে যাবে আমাদের!!!
-কিছুই হয়নি ফুপি। তোমার ছেলেটাকে আমি বুঝতে পারিনা। তাই একটু ঝামেলা হয়। এখন থেকে আর হবে না ইনশাআল্লাহ।
হওয়ার জন্যে তো আর আমি থাকবোই না এখানে, একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে মনে মনে বললাম।
চিন্তা করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
এতোক্ষনে ফুপির মুখে হাসি ফুটলো।
কিছুক্ষন চুপ থেকে ফুপিকে বললাম,
আচ্ছা আম্মু, একটা প্রশ্ন করি তোমাকে? সত্যি করে উত্তর দিবা? প্লিজ..
-কি জানতে চাস, বল আমায়।
-দেখো, বিয়ের কথা তো অনেক আগেই তোমরা বলাবলি করতে। তোমরা না, তোমার ছেলে আরকি।
এই ব্যাপারে তোমার সম্মতি ছিলো আম্মু? সত্যি করে বলো তো?
টেনশন নিও না, আমি কস্ট পাবো না।
মাথা নিচু করে ফুপি বললো
-না রাজি ছিলাম না।
-আর মেহনাজ আপুর বেলায়?
-তখনও রাজি ছিলাম না?
-কেনো? আমাদের স্টেটাস তোমাদের সাথে ম্যাচ হয় না বলে? আমি না হয় দেখতে শ্যামলা ,আপুদের মতো ফরসা না, কিন্তু মেহনাজ আপুর বেলায় কি সমস্যা ছিলো তোমাদের?
ফুপি চুপ করে শুনছে আমার কথা গুলো। মায়ের মতো এই মহিলাকে কস্ট দিতে চাইনি আমি। কিন্তু দুই ছেলের এই অবস্থার জন্যে তিনিই দায়ী।
তাহলে আর কি, আমি চলে গেলে তোমার ছেলেকে ফরসা একটা মেয়ে দেখে, স্টেটাস দেখে আরেকটা বিয়ে করিও। আমাদের আসলেই কোনো যোগ্যতা নেই তোমার ছেলেদের বউ হবার।
ফুপি কান্না করে দিলো আমার কথা গুলো শুনে।
-তুই যেমনটা ভাবছিস তেমনটা নয় রে মেহের। রিশাদ এর জন্যে আমি দায়ী। আর তোর ছোট ফুপু। ওর জন্যে তোর আম্মাকে কত কথা শুনিয়েছি আমি!!
তোর আব্বু আম্মু তোদের ভালোভাবেই মানুষ করতে পেরেছে। আমরা পারি নাই।
-বাদ দাও। তোমরা যোগ্যতার কদর করতে জানো না। মেহনাজ আপুর যোগ্যতা আছে বলেই এতো ভালো একটা জায়গায় বিয়ে হয়েছে।
-সত্যিই রে, ঐদিন যদি তোর ছোট ফুপির কথা না শুনতাম….!
-তাহলে আজকে তোমার ছোট ছেলেকে নিজের পছন্দে বিয়ে করাতে পারতে আরকি। আমার মতো শ্যামলা মেয়েকে আনতে হতো না।
-তুই ও অনেক সুন্দর। বাইরের সৌন্দর্যে কি আসে যায়। তুই অনেক লক্ষি একটা মেয়ে।
-কিন্তু যদি সুযোগ পেতে তাহলে আমাকে আর বউ বানাতে না আর কি।
-যাহ, ফাজিল মেয়ে একটা। খালি কথা পেচায়।
তোর সব গুছানো শেষ? তোর এতো জিনিস কেনো?
মাত্র তো অল্প কিছুদিন।
মনে মনে এই ভয়টায় পাচ্ছিলাম।
-আরে তোমরা চার তারিখে ব্যাক করবা আমি তো করবো না।
-কেন? কই যাবি তুই? সত্যি করে বলতো মেহের????
-আরে আমার একটা কনফারেন্সে এটেনড করতে হবে মালয়শিয়ার পেনাং স্টেটের একটা ইউনিভার্সিটিতে। কিন্তু আমাদের প্যাকেজ শুধু মাত্র কুয়ালালামপুর পর্যন্ত। তাই তোমরা চলে আসবা ৪ তারিখ। আর আমি আসবো ৭ তারিখ।
-ও, আগে বলিসনি তো!! সাব্বির জানে?
-হুম জানবেনা কেন? সবই জানে ও।
আল্লাহ আল্লাহ করছি মনে মনে যেনো সাব্বিরকে কিছু না বলে এই ব্যাপারে । সাব্বিরকে কিছু বললেই সব শেষ!!
কালকে আমাদের ফ্লাইট ,তাই রাতে রিতু আপু, আপুর হাসবেন্ড এলো বাসায়।
রাতে খাবার টেবিলে সবাই একসাথে বসলাম। রিশাদ ভাইয়া আর সাব্বিরও বসলো সাথে!!
এই প্রথম এই ফ্যামিলির সব মেম্বার এক টেবিলে খেতে বসেছে!!!
-কি মেহের, সাব্বির তোমাকে মান্থলি কতো টাকা দিতো যে তুমি একেবারে বাইরে যাওয়ার প্যাকেজ কিনে ফেললে!!!
এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে মাথায় ছিলো না।
-মুচকি হেসে বললাম, ওকেই জিজ্ঞেস করুন কতো দিতো। আর আব্বু আম্মুর জন্যে টাকা জমাইতে হয় না, এমনি এমনি ম্যানেজ হয়ে যায়।
সাব্বির অপরাধির মতো তাকালো একবার আমার দিকে। কারণ বিয়ের পর কাবিনের টাকা ছাড়া একটাকাও দেয় নি আমাকে।
বউ বলেই যে ব্যক্তি আমাকে স্বিকার করে না, তার থেকে টাকার আশা করবো আমি কোন দুঃখে!!
-জামাই ছাড়া ভালোবাসার কমতি পরবে না?
-হাসবেন্ড পরিবর্তন হয়, সাথে ভালোবাসাও পরিবর্তন হয়। কিন্তু এই ভালোবাসার কোনো পরিবর্তন নেই। আর সেই আসল ভালোবাসার সোর্সটায় তো আমি নিয়ে যাচ্ছি, তাহলে কমতি কেনো পরবে?
-হুম বুজলাম। কিন্তু হাসবেন্ড ছাড়া হানিমুনে যাচ্ছো কেমন না ব্যাপারটা??
– আমি মানুষটাই একটু কেমন কেমন জানি। এইগুলা ব্যাপার না ভাইয়া। তার যখন হানিমুনে যাওয়ার দরকার হবে, তখন সে আমাকে নিয়ে যাবে।
মুচকি হেসে বললাম আমি।
পরের দিন সকালে সাব্বির সি অফ করতে এলো আমাদের। ছোট ভাইয়াও এসেছে। সাব্বিরকে দেখতেই ওর চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো। কারোর সাথে কথাও বললো না।
সাব্বিরের দিকে তাকাতে পারছি না আমি। এমন ফিলিংস জীবনে প্রথমবার হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমার জীবনের সবথেকে দামি জিনিস ফেলে যাচ্ছি আমি।
সাব্বির একটু কিছু বললে কি করে ফেলবো আমি জানি না। তার জন্যে ভাইয়ার কাছ ঘেঁষে মাথা নিচু করে বসে আছি। আর একটু পর পর বাম হাত দিয়ে চোখ মুচছি।
ছোট ভাইয়া আমার ডান হাত শক্ত করে ধরে আছে।
সাব্বির বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে বুঝতে পারছি আমি।
-তোর সাথে দেখা হবে না আর?
ছোট ভাইয়া কান্নাভেজা গলায় জিগ্যেস করলো আমাকে।
কিন্তু আমি কোনো উত্তর দিতে পারলাম না। কান্না মাছের কাটার মতো গলায় অাটকে গিয়েছে। কথা বলতে গেলে হাউ মাউ করে কেঁদে ফেলবো আমি।
তুই সাব্বিরকে অনেক ভালোবাসিস তাই না রে?
অসহায়ের মতো আমি ভাইয়ার দিকে তাকালাম।
এইবার চোখের পানি আর রাখতে পারলাম না।
-তুই চলে যা, তুই না গেলে কান্না থামাতে পারবো না আমি।
কাঁদতে কাঁদতে বললাম ওকে।
একটু পর কপালে একটা চুমু দিয়ে ভাইয়া কাউকে কিছু না বলে চলে গেলো।
বাকিরা অবাক হলেও কিছু বললো না।
চেক ইন এর টাইম হয়ে গেলো।
ফুপা ফুপিকে নিয়ে সামনে এগিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম। এই পর্যন্ত সাব্বিরের সাথে একটা টু শব্দও করিনি। ভেবেছিলাম ওর সাথে একটা কথাও আর কোনোদিন বলবো না।
কিন্তু মানুষের মনতো!!!
ফুপা ফুপিকে ট্রলিটা দেখতে বলে আবার আগের জায়গায় ফিরে এলাম। খুব করে চাইছিলাম যেনো এসে দেখি সাব্বির চলে গিয়েছে।
কিন্তু আমাকে আরও কস্ট দেয়ার জন্যে বদমাইশ টা দু হাত পকেটে রেখে ঠোঁটের কোনায় হাসি রেখে দাঁড়িয়ে আছে।
ওর দিকে যেতে যেতে কি বলবো মনে মনে গুছিয়ে নিলাম।
কিন্তু ওর একদম কাছাকাছি দাঁড়াতেই সবকিছু কেমন জানি গুলিয়ে গেলো!!!!!
আমার সমস্ত চিন্তা চেতনার বাইরে গিয়ে ওকে জীবনে প্রথমবারের মতো জড়িয়ে ধরলাম!!
জড়িয়ে ধরেই বুঝতে পারলাম আমি সত্যি ওর জন্যে আনফিট।
কি বলার জন্যে এসেছিলাম সব ভুলে গিয়েছি!!!
-আমি আগে ভাবতাম তোমাকে জড়িয়ে ধরলে বুঝি হাইটে তোমার থুতনি পর্যন্ত আসতে পারবো। কিন্তু আর বাকি সব কিছুর মতো এই ব্যাপারেও আমি তোমার জন্যে আনফিট। তোমার থুতনি পর্যন্ত আসতে পারবে এমন কাউকে ভালোবেসো।
বলেই চোখভর্তি পানি নিয়ে ওকে ছেড়ে দিয়ে পিছন ঘুরে চলে আসলাম।
আর এই সময়টাতে সাব্বির একবারও ওর হাত প্যান্টের পকেট থেকে বের করেনি।
ভালোবাসার অপমানের কস্টের চেয়ে বেশি ভারি জিনিস বোধহয় আর কিছু নেই!!
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here