“ঝরা পাতার দিনগুলো পর্ব-10,11

গল্পঃ ঝরা পাতার দিনগুলো
– হাবিব
পর্ব-10,11
………………
ফোনের নোটপ্যাডে করা লিস্টটা আরেকবার চেক করে নিলাম। এই দুইমাসে অনেক কিছু করতে হবে। ঢাকা টু চিটাগং পুরো জার্নি এই লিস্ট করতেই কেটে গেলো।
সাব্বির আর কল দেয়নি। কিন্তু ফয়সাল কল দিয়েছিলো অনেক বার। কিছু একটা ঘাপলা আছে।
কিন্তু ধরতে পারছি না কেনো।
হলে এসে ফ্রেশ হয়ে ফোন হাতে নিতেই দেখি মেজো ভাইয়ার অনেকগুলো মিসডকল। ঈদের দিনের পর আজকে ভাইয়া কল দিলো!!!
আমার মেয়েকে কখনোই বিয়ে দিবো না আমি।
এটা কি ভাবলাম আমি!! নিজেই হেসে উঠলাম। হাসবেন্ডের সাথে কথা হয়না ভালো করে তার আবার বাচ্চা হবে!!!
হাবিজাবি চিন্তা করতে করতে ভাইয়াই আবার কল দিলো।
-আমি তো ভাবলাম আমার কথা বোধহয় ভুলেই গিয়েছ!!
– হা হা হা, ভুললে কি তোরে ফোন দিতাম নাকি!!
-হাসলে কিছুই মাফ হবে না। হে হে কইরা হাইসা লাভ নাই।
-হ, তুমি তো খুব ভালো একটা কাম করছ , প্রেম করবি ভালো একটা ছেলের সাথে কর, এমন ইন্টারন্যাশনাল প্রেমিক বানাইছস কেরে?
-কি করলাম আবার!! সব তো শেষই, আরকি বাকি আছে?
-তোমার এক্স আশিক এখন সবাইরে ফোন দিয়া বেরাইতেছে। বলতেসে তোর আর সাব্বিরের নাকি ডিভোর্স হয়ে যাবে আর তোরা নাকি বিয়ে করবি?
-কিহ!!!!!!! কি বললা তুমি?
কথার বদলে গলা দিয়ে ব্যাঙের মতো শব্দ বের হচ্ছে আমার।
-জি আফা। কিন্তু ডিভোর্স হওয়ার কথা কেন বলতেসে?
তোদের মাঝখানে কি সব ঠিকঠাক আছে? সত্যি করে বলতো তুই?
-সাব্বিরকে জিজ্ঞেস করো। ও ফয়সালের ব্যাপারে সবই জানে। ও যদি বলে ঠিক আছে তাহলে সব ঠিক। না হলে নাই।
-কেন তুই বলতে পারতেছিস না?
-বিয়েটা কি আমাকে বলে ঠিক করছিলা তুমি? বিয়েটা যেহেতু ওর মতামত অনুযায়ী ঠিক করেছ, তাহলে ওকেই জিজ্ঞেস করো সব ঠিকঠাক আছে কি নেই।
– এভাবে কেন বলতেছিস তুই? আমরা কি তোকে জোর করে বিয়ে দিয়েছিলাম?
-মতামত নিয়েছিলে আগে? বিয়ে তো ঠিক হয়েছিলো রাতে, আর আমাকে কখন বলেছিলে তুমি? তাও তুমি বলো নাই, ভাবি বলেছিলো আমাকে।
তুমি রাতের বেলা বললে হয়তো আজকে ফয়সালকে
ইন্টারন্যাশনাল প্রেমিক হতে হতো না!!
-দেখ শুধু শুধু কথা পেচাবি না।
-আমি কথা পেচাচ্ছিনা ভাইয়া। সাব্বিরকে ফোন করে জিগ্যেস করো ওর কোনো প্রবলেম আছে কি না, ও যেটা বলবে সেটাই।
– তোর বলতে সমস্যাটা কোথায় বুঝতে পারছি না আমি।
-যদি বলি কিচ্ছু ঠিক নাই তাহলে কি ডিভোর্স করিয়ে দেবে আমাদের?
ফোনটা কেটে দিলো। সত্যি কথা সবসময় শুনতে ভালো লাগে না। আমারও পুরাতন কথা মনে করতে ভালো লাগে না। ফয়সালের যা মনে চায় করুক, আমার তাতে কি আসে যায়।
“মেহের, চেম্বারে আসো একটু। ” ল্যাবভর্তি স্টুডেন্টদের সামনে এই কথা গুলো বলে ফয়সাল ক্লাস শেষ করে চলে গেলো!!
বেশিরভাগ স্টুডেন্টই মুখ চেপে হাসলো, আর কেউ কেউ তো ফিসফিস করে পাশের জনকে কিছু একটা বলতে শুরু করলো!!
আর আমার ফোনের অপরপাশে থাকা সাব্বির ফোনটা কেটে দিলো।
ঘড়িতে বাজতেসে দুপুর ১২.৩০ মিনিট। ওর ক্লাস নেয়া শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো ১১.৪৫ মিনিটে। সেই হিসেব করেই প্রতিদিন ল্যাবে আসি।
কিন্তু আজকে সবকিছু বড্ড গোলমেলে হয়ে গেলো!!!
লিফটে থেকে বের হয়েই ল্যাব।
তাই সাব্বির কেনো ফোন দিয়েছিলো ভালোভাবে শুনতেও পায়নি।
অনেকবার কল করলাম ওকে। কিন্তু বার বার ফেনটা কেটে দিলো।
মাথাটা ঝিমঝিম করছে খুব। আল্লাহ কবে জানুয়ারির ২ তারিখ আসবে???
চুপচাপ একটা টুলে বসে পরলাম। কান্না গলায় আটকে যাওয়ার প্রবলেম টা আবার শুরু হয়েছে।
“এখান থেকে চলে যান দিদি। পড়াশোনার চেয়ে নিজের মান সম্মান অনেক দামী। ”
ঝাপসা চোখে দিদির কথা শুনে তাকালাম,
-চলে যাবো দিদি। সব ছেড়ে চলে যাবো।
-ফয়সাল স্যার এমন কেনো করেন আপনার সাথে?
এতো আজেবাজে কথা শুনতেছি দিদি। এই মানুষটার সাথে আপনার সম্পর্ক ছিলো?
-কি করবো দিদি বলেন, পাঁচ বছর থেকেও যে ওর এই চেহারা টা চিনতে পারিনি!!!
হাতে সময় অনেক কম। এর মধ্যেই রিসার্চটা শেষ করতে হবে। সুপারভাইজার ম্যামের সাথে দেখা করতে গেলাম। ফয়সালের রুম বাইরে থেকে তালা মারা দেখে একটু শান্তি পেলাম।
-ম্যাম একটু হেল্প লাগবে
-হুম বলো।
-ম্যাম ডকুমেন্টস গুলো কি কি লাগবে আর থাকাটাকা নিয়ে যদি একটু ডিটেইলস বলতেন।
-পরশু এর মধ্যে এই ডকুমেন্টসগুলো চেম্বারে নিয়ে এসো। আমি সবসময় যে এজেন্সি থেকে সব এরেঞ্জ করি সেখানেই সব জমা দিবো। টেনশন নিয়ো না তুমি, আমি আগেই সব কথা বলে রেখেছি। আর ভিসা ফিটা নিয়ে এসো। টিকেটের টাকা ভিসা আসার পরে দিও।
খুশিতে চোখে পানি এসে গেলো।
-কান্নাকাটি করে লাভ নেই। সাব্বিরের সাথে খুশি থাকো এই আমি চাই।
এই কথা শুনেই হাসিটা চলে গেলো।
-ম্যাম সেটা মনেহয় আমার কপালে নেই।
সব কিছু ম্যামকে খুলে বললাম।
সব শুনে ম্যাম স্পিচলেস হয়ে গেলেন!!!
-তুমি অনেক স্ট্রং মেহের। এতো সহ্যক্ষমতা সবার থাকে না। কি করতে চাও সেটা নিয়ে তোমাকে কিছু বলার নেই আমার। তোমার যেটা ভালো মনে হয় সেটাই করো, অবশ্যই নিজের দিকটা আগে ভেবে নিও।
-ম্যাম একটা রিকুয়েষ্ট করি?
-তুমি হলে এমন একজন পারসন যাকে আমার সবথেকে ক্রিটিকাল মোমেন্টে পেয়েছি। তুমি আমাকে সাপোর্ট না দিলে দুই বেবি নিয়ে এইখানে চাকরি করতে পারতাম না। আর এই চার কোটি টাকার প্রজেক্টও পেতাম না।
পুরো রিসার্চটা করলে তুমি, অথচ ঠিকই আমার নামে পাঠিয়েছ। আর আরেকজন হলো ৭ বছরের ফ্রেন্ড। আমার প্রেগ্ন্যাসির সময় আমার কাছে আসা রিসার্চটা নিজের ডিপার্টমেন্টে নিয়ে নিলো!!!!
যখন কিছুই করতে পারলো না পুরো রেসপনসেবলিটি আমার উপর দিয়ে দিলো!!!
যার ফলাফল আমি আজকেও ভুগছি। তুমি সেদিন আমাকে হেল্প না করলে এতো তারাতাড়ি প্রফেসর হতে পারতাম না মেহের!!
তুমি কেনো আমাকে রিকুয়েষ্ট করবে!! গাধি মেয়ে একটা। বল কি লাগবে তোমার।
মুচকি হেসে ম্যাম কে বললাম
-ম্যাম আমি যে বাইরে চলে যাবো এই কথাটা কাউকে বলিয়েন না প্লিজ।
-এই কথাটা আমি তোমাকে বলতাম। কিন্তু তুমি কি তোমার ফ্যামিলিকেও বলতে চাচ্ছো না?
-আপাতত না ম্যাম। আমার ফ্যামিলির সবাই অনেক সহজ সরল। কাকে না কাকে বলে ফেলবে। তার থেকে আগে যাই ওখানে, তারপর আস্তেধীরে জানাবো।
-হুম ঠিক আছে।
-ম্যাম একটা ইনফরমেশন জানার ছিলো।
-আবার শুরু করেছ?
এবার আর হাসি আসে নি। কারণ এই প্রশ্নটার উত্তরের সাথে অনেক কিছু নির্ভর করছে।
-ম্যাম, আমি যতদুর জানি ফয়সাল একটা প্রব্লেমের জন্যে টিচার হতে পারতো না। আর ওর জন্যে ঐরকম লবিং করার মতো কেউ ছিলোও না। আপনি কিছু জানেন এই ব্যাপারে?
-কি বলো তুমি!! আমি তো শুনেছি চিটাগং মেডিক্যালের কোন নেতা ওকে নিয়ে ডিরেক্ট প্রাণী সম্পদ মন্ত্রীর কাছে গিয়েছে। আর ওর জন্যে নাকি তিনজন মন্ত্রীর ফোন এসেছে!!
নাহলে কি আর এতো তারাতাড়ি কারোর নিয়োগ হতে পারে!!
ভিসি স্যার তো ওকে নিজে স্যরি বলছে ওকে আগে কেন টিচার নিতে পারেনি সেজন্য…. আগের যে টিচাররা ওর নামে মিথ্যা ব্লেম দিসিলো…
ম্যামের লাস্ট কথা গুলো আমার মাথায় আর ঢুকছে না। চারপাশের সব কিছু ঝাপসা লাগছে।
চিটাগং মেডিক্যালের নামকরা একজন অাউটস্ট্যানডিং স্টুডেন্ট এবং নেতা আছে যার কথা গত তিন বছর ধরে আত্নীয়দের কাছে শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম । যে কিনা বর্তমানে আমার হাসবেন্ড।
সাব্বিরের সাফল্যে খুশি হবো নাকি ফয়সালকে হারানোর জন্যে কস্ট পাবো?????
সাব্বিরের সাথে যেদিন আমার বিয়ে হয়েছিলো সেদিনও এতোটা কস্ট পাইনি যতটা আজকে পেয়েছি।
আপনজনদের থেকে সব কিছু সহ্য করা যায় শুধুমাত্র বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া।
সাব্বির এটা করতে পারলো!!!
ফয়সাল যদি পারে তাহলে সাব্বিরের আর কি দোষ।
আনমনেই হেসে উঠলাম আমি।
ম্যাম অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন!!!
-তুমি ঠিক আছো মেহের?
-জি ম্যাম। আমি ঠিক না থাকলে কে আর থাকবে বলেন। ম্যাম আমি কি দেখতে সুন্দর?
হঠাৎ এমন প্রশ্নে ম্যাম আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। বোঝার চেষ্টা করলেন যে আমি সিরিয়াসলি এই প্রশ্নটা করেছি না।
“ম্যাম বলেন না প্লিজ”??
-আমাদের সমাজের নিয়ম অনুযায়ী তুমি খুব সুন্দরী সেটা বলা যাবে না যেহেতু তুমি ফর্সা নও, মোটামুটি দেখতে। কিন্তু সমাজের মানুষ যেটা কখনও বলবে না সেটা হলো তোমার স্নিগ্ধতা।
-এ্যাঁ….। এমন কথা কখনোও শুনিনাই ম্যাম।
-এসব কথা বয়ফ্রেন্ড ছাড়া কেউ বলবেও না তোমাকে। কেনো ফয়সাল তোমাকে এই টাইপ কিছু বলেনি কখনোও?
– স্নিগ্ধতা নিয়ে তো কিছু বলেনি।
-আরে গাধি, আমিতো তোমাকে বিষয়টা ক্লিয়ার করতে চেয়েছি।
শোনো, তোমার ফেসের দিকে তাকালে সবার আগে কি দৃষ্টিগোচর হয় জানো?
তোমার থুতনির খাজ। এইরকম খুব রেয়ার। তোমার চোখে অনেক মায়া আছে। সবথেকে বড় কথা তুমি খুব ভালো একটা মেয়ে। এর জন্যেই তো তোমাকে আমার দেবরের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি তো ফয়সালের জন্যে তখন রাজি হলে না।
-ইশ, ঠিকই বলছিলেন ম্যাম। বিয়েটা করে ফেললেই ভালো ছিলো। তাইলে এই ফয়সাল আর সাব্বির, কোনোটারই ঝামেলা থাকতো না।
হঠাৎ করেই মনে হলো ম্যামের রুমের দরজার পর্দাটা নড়ে ওঠলো।
ভয় হলো খুব। পাশেই তো ফয়সালের রুম।
ম্যাম আমি তাহলে এখন যাই?
-ঠিক আছে। ভালো থেকো আর কালকে সব নিয়ে আব এসো।
ফোনের দিকে তাকিয়ে ম্যামের রুম থেকে বের হয়ে দুই কদম এগুতেই কেউ হাত ধরে হ্যাচকা টান দিলো!!
টাল সামলাতে না পেরে কারো গায়ের উপর পরলাম।
চেহারা না দেখেও শুধু স্মেল নিয়েও বলতে পারি কে এটা!!
আগে এই স্মেলটার কারণে বার বার আমি ওর সাথে গা ঘেঁষে বসতে চাইতাম।
কি করবো বুঝে ওঠার আগেই জোড় করে ওর চেয়ারে বসিয়ে দিলো। তারপর ওর রুমের দরজাটা আস্তে করে আটকে দিয়ে আর একটা চেয়ার টেনে আমার সামনে বসলো।
এই দিনটার স্বপ্ন কতো যে দেখেছিলাম!!!
আমি হুট হাট ওর চ্যাম্বারে এসে ওর একদম সামনে টেবিলে বসে রোমান্স করবো!!
আজকে সব সুযোগই আছে শুধু কাছের মানুষ দূরে চলে গিয়েছে। যে দুরত্ব মাপার কোনো স্কেল নেই।
আমার দুহাত শক্ত করে ধরে প্রায় ফিসফিস করে ফয়সাল বলতে শুরু করলো।
-সাব্বিরের সাথে কথা হয়েছে আমার। তোমাদের ডিভোর্সের পর আমি আর তুমি বিয়ে করবো। আমি জানি তুমি এখনো ভার্জিন। সো কোনো সমস্যা হবে না।
-আমি ভার্জিন সে জন্যেই কোনো সমস্যা নেই? যদি
ভার্জিন না হতাম তাহলে কি করতে? আর তুমি এমন ফিসফিস করে কেনো কথা বলছো?
-ফালতু কথা বলবে না মেহের। সাব্বির আমাকে বলেছে তুমি ভার্জিন। সে তোমার সাথে কিছু করেনি। আর খুব তারাতাড়ি তোমাদের ডিভোর্স হয়ে যাবে। আর তুমি কোথায় যাওয়ার কথা বলছো?
মনে মনে যে ভয়টা পেয়েছিলাম সেটাই হয়েছে।
-লুকিয়ে লুকিয়ে মানুষের কথা শুনতে লজ্জা করে না তোমার? এই হাত এমন করে শক্ত করে যদি বিয়ের পরের দিনও ধরতে আমি তোমাকে মাফ করে দিতাম।
কিন্তু তুমি করলে? ফোনটাও অফ করে রেখেছিলে।
তোমার বাসার মানুষগুলো এরকম কেনো? আমাকে থাকতে দিলে কি হতো?
-এক জিনিস নিয়ে বার বার কথা বলবে না। যেটা চলে গেছে সেটা নিয়ে কথা বলার কোনো মানে হয় না। এখন নতুন করে জীবন শুরু করবো সেটাই ফাইনাল।
– যতক্ষন তোমার সাথে রিলেশন ছিলো, ততোক্ষন তোমার কথা শুনতে আমি বাধ্য ছিলাম, কিন্তু এখন না। এখন আর একটা উল্টো পালটা কথা বললে আমি চিৎকার করবো।
-মেহের প্লিজ!!! আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আর কখনো এমন হবে না।
-আবার হবে না মানে কি? তোমার সাথে আমার কথা বলতেও আমার ঘৃণা করে। কেনো ঘৃনা করি জানতে চাও না তুমি?
কিছুক্ষণের জন্য ফয়সাল স্তব্ধ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
-সাব্বিরের সাথে কতোদিনের খাতির তোমার? ও যে তোমার আত্নীয় হয় জানতাম না তো!!!
কি ডিল হয়েছিলো তোমাদের? গার্লফ্রেন্ড আর ভার্সিটির টিচার এক্সচেঞ্জ?
হেসে জিজ্ঞেস করলাম, সাব্বির আমার সাথে কিছু করেনি তাই না?
হিজাব টা তুলে ঘাড়ের দাগ গুলো দেখিয়ে বললাম, তাহলে আমার এইগুলো কি!!!
আস্তে করে আমার হাতটা ও ছেড়ে দিলো।
সবশেষ ওর দুর্বল জায়গাটায় আঘাত করলাম আমি।
এর পরের কথাগুলো ওর কি হবে সেটাও আমি জানি।
রিলেশনে থাকার সময় ওর সবথেকে বড় প্রব্লেম ছিলো কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে আজেবাজে সন্দেহ করতো।
এখনও মনে আছে, আমাদের থার্ড এনিভার্সারির দিন ও খুব ঠান্ডা মাথায় বলেছিলো আমি যে টিউশন করিয়ে ওকে টাকা দিতাম ঐ স্টুডেন্টের বাবার সাথে আমার নাকি কিছু আছে!!!!
কোনো সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ হয়তো এমন বলতে পারে না।
রাগের জন্যে ফয়সালের কপালের দুপাশের শিরা ঢিপঢিপ করছে।
-তোর তো আমার সাথে থাকার সময়ই অন্যজনের সাথে রিলেশন ছিলো। এ আর নতুন কি!!! এমনি এমনি তো আর ছাড়িনি তোকে। ঐ ম্যামের সাথে তোর কিসের এতো খাতির আমি বুঝি না মনে করিস????
বেশি ভালোবাসতাম তাই ভাবছিলাম যা হইছে হোক, আবার সব নতুন করে শুরু করবো।
কিন্তু তুই?
আমি বাদ দিয়ে দুনিয়ার সব মানুষের সাথে শুয়ে বেরাইছস।
আরও কতো গালি!!!!!
চুপচাপ কিছুক্ষন শোনার পর ও থামতেই বললাম
-শেষ হয়েছে বলা? নাকি আরও বাকি আছে?
-কি ভাবছিস, এতো সহজে সব পেয়ে যাবি?
হুমহ, সাব্বির তোকে সত্যিই ডিভোর্স দিবে।
-দিলে দিক, তাতে তোমার কি? আমার যা খুশি তাই করবো।
বলেই ওর পাশ কেটে দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম।
পিছন থেকে শুনতে পেলাম
“কোন নাগরের সাথে যে কই যাবি, দাড়া সাব্বিরকে বলতেছি আমি।”
শুনে শুধু একটা মুচকি হাসি দিলাম।
রাতে ম্যামকে একটা কল দিলাম ।
-ম্যাম একটা দরকার ছিলো। আপনি কি ফ্রী আছেন?
-হুম বলো।
-ম্যাম কুয়ালালামপুর থেকে সিডনি কি ডিরেক্ট ফ্লাইট পাওয়া যাবে?
-কুয়ালালামপুর থেকে কেনো?
-ম্যাম আসলে আমার অনেকদিনের ইচ্ছে ছিলো আমি আমার আব্বু আম্মুকে নিয়ে দেশের বাইরে বেরাতে যাবো। এখন নিজের আব্বু আম্মু তো নাই, কিন্তু আমার শশুর শাশুড়ী আমাকে বাবা মায়ের মতোই আদর করে। তাই উনাদের নিয়ে একটু অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে মালয়শিয়াতে যেতে চাচ্ছিলাম আর কি।
দেন ওখান থেকে সিডনি ফ্লাইটে চলে যাবো।
-হুম বুঝলাম। ব্যাবস্থা করা যাবে কিন্তু তাদের তো কিছু ডকুমেন্টস লাগবে।
-ম্যাম তাহলে আমি এখন রাতের বাসে চলে যাই কালকে রাতে সব নিয়ে ব্যাক করবো?
-ঠিক আছে। সাবধানে যেও, তোমার সময় খুব কম না হলে বলতাম দিনে যাও।
-ইটস অকে ম্যাম।
ফোন রেখে তারাতাড়ি রেডি হয়ে বের হলাম।
সকাল ৯টায় দরজা খুলে ফুপি আমাকে দেখে সেকি খুশি!!
-হুম বুঝি বুঝি সব বুঝি। বুড়ো বয়সে এইসব প্রেম দেখা লাগবে এখন!!
ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম ফুপির দিকে।
-কিসের প্রেম??
-কেনো এই আজকে সাব্বিরের জন্মদিন আর তুই কিছু না জানিয়ে চলে আসছিস সারপ্রাইজ দিতে!!
একটা শুকনো হাসি দিয়ে বললাম ঠিকই বলছো। তোমাদের জন্যেও একটা সারপ্রাইজ আছে!!
-কি আমরা দাদাদাদি হবো!!
-ধুর, বলার মুডটাই দিলা শেষ করে
বলেই উপরে চলে গেলাম।
কিন্তু সাব্বিরতো নেই রুমে। কই গেলো এই টাইমে!!
বিছানায় একটা কাগজ দেখতে পেয়ে হাতে নিলাম।
আমাদের ডিভোর্স প্যাপার!!!!!
জন্মদিনে আমাকেই উল্টো গিফট দিলো।
পেপারটা হাতে নিয়ে বিছানায় চুপচাপ বসে আছি। ফর্মে সুন্দর করে গোটাগোটা অক্ষরে সাব্বির নিজের নাম ঠিকানা লিখে রেখেছে। শুধু আমার ঘর গুলো বাকি।
বাংলাদেশের ইসলামি নিয়ম অনুযায়ী এই প্যাপারটা উকিল নোটিশ সহ ইস্যু করার তারিখ থেকে তিন মাসের মধ্যে যদি আমি কোনো রেসপন্স না করি তাহলে ডিভোর্স হয়ে যাবে। আর তার পরে একটা পারমানেন্ট সার্টিফিকেট ধরিয়ে দেবে।
অনেকটা তালাকের মতো। তালাকে যেমন তিন মাসের মধ্যে ঠিক না হলে আর সুযোগ থাকে না, তেমন।
রেসপন্স করে যদি সলভ হয় তাহলে আলাদা কথা।
চোখের পানিতে কাগজটা অলরেডি অনেক খানি ভিজে গিয়েছে।
কি করবো বুঝতে পারছি না।
একটা পেন নিয়ে আমার ডিটেইলসর ফাঁকা ঘরগুলো ফিলাপ করতে শুরু করলাম। হাত দিয়ে ধরে লিখতে অনেক সময় লাগছে। কাপুনির জন্য ঠিকঠাক মতো লিখতেও পারছি না!!!
সাব্বিরের জন্মদিনে আমার তরফ থেকে গিফট!!!,
এটা দেখলেই আশা করি উকিল নোটিশ সহ কোন কিছু আমাদের বাসায় পাঠাতে হবে না!!
কেউ জানাজানির আগেই পালাতে হবে।
একটা ছবি তুললাম ফর্মটার।
যত্ন করে প্যাপারটাকে ওর ড্রয়ারে রেখে দিলাম। আমি দেশে থাকতে এতোগুলো মানুষের কস্ট দেখতে পারবো না। আমি যাওয়ার পর যা হবার হোক। তবে একজন আছে যাকে আমি এতোদিন যা যা হয়েছে সব কিছু আমি বলতে পারি। আমার অবর্তমানে অন্তত মিথ্যা কোনো কিছু যেনো বলতে না পারে।
সময় নষ্ট করা যাবে না। সাব্বির আসার আগেই বাসা থেকে চলে যাবো। ওর সামনে যাওয়ার আগে ছাড়া আর পরতে চাই না। কস্টের দিনগুলো ফাল্গুনের ঝরা পাতার দিনগুলোর মতোই ঝরে যাক। যা আর কখনোই ফিরে আসবে না।
আমাদের বাসায় যেতে হবে একটু। উফ্, কখন করবো এইগুলো!! কস্ট নিয়ে পরে থাকলে কি হবে।
ফুপিকে তার রুমে পেলাম।
-এই তোমাদের কিছু জিনিস লাগবে আমার, দাওতো একটু তারাতাড়ি।
-কি জিনিস লাগবে?
ডকুমেন্টস গুলো সব নিয়ে ফুপিকে বললাম
-তোমার ছেলে কই?
-রুমে নাই?
-না, নাইতো।
-জানি না তো তাহলে!! ওর তো বাসায় থাকার কথা এখন। ও তো এখন প্রায় সময় বাসায়ই থাকে।
হুম সেটা তো থাকবেই। আমি তো বাসায় নেই এখন। বাসায় থাকলেই তো উনি সারাদিন বাইরে বাইরে থাকবেন। মনে মনে কথা গুলো একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে গেলাম।
– কি রান্না করছো আম্মু? ক্ষুধা লাগছে আমার।
ফুপির পাশে জড়িয়ে ধরে বললাম।
-ক্ষুধা লাগছে বলে এমন জড়িয়ে ধরে বসে থাকলে খাবি কিভাবে শুনি? চল, খাবি চল ।
-আচ্ছা একটু পরে যাই। আর একটু এভাবে থাকি।
আদুরে গলায় বললাম।
জানো ,তোমার কাছে আসলে কেমন আম্মু আম্মু একটা স্মেল পাই । এর জন্যে তোমার কাছে কাছে থাকতাম সারাদিন।
ফুপি আঁচলে চোখ মুছলেন।
বাবা মায়ের আদর বোধহয় আমার কপালে নেই। তাইতো বাবা মায়ের মতো এই মানুষগুলোকেও ছেড়ে চলে যেতে হবে!!!!
মাথা তুলে বিরক্ত স্বরে বললাম কথায় কথায় এমন ফ্যাচ ফ্যাচ করে কান্না শুরু করো দেখেই না কিছু বলতে ইচ্ছে করে না তোমাকে।
আসো দেখি কি রান্না করছো তুমি, সব খেয়ে শেষ করে ফেলবো। তারপর বিশ্বমুটকি হবো।
কথা গুলো বলে হাত ধরে টানতে টানতে রান্নাঘরে নিয়ে গেলাম।
-আম্মু একটু খাওয়াই দাওতো। আমি হাতের কাজ গুলো শেষ করি। একটু পরেই আমি চলে যাবো।
ফুপি মুখ টা হা হয়ে গেলো আমার কথা শুনে।
আরে আস্তে হা করো, মশা ঢুকবে।
-তুই আসছিস কেনো তাহলে? কি এমন ইমারজেন্সি কাজ ছিলো শুনি?
-তুমিই না বললে সাব্বির কে সারপ্রাইজ দিতে আসছি। প্রেম দেখানো কতো ইম্পরটেনট একটা জিনিস!! সেটাকে তুমি ছোট করে দেখছো কেনো!!!
দেখো না রিতু আপু আর ভাইয়া কি সুন্দর প্রেমের ঠেলায় প্রতি বছর বাহিরে কয়বার হানিমুনে যায়!!
প্রেম না থাকলে কি আর সম্ভব এগুলা???
-হুম, বাইরের দেশ তো অনেক সুন্দর!!!! সৌদি আরব যে কি সুন্দর!!!! হজ্জের উছিলায় বাইরে ঘুরার ইচ্ছে তো পুরন হলো!!!
ফুপির চেহারাটা মলিন হয়ে গেলো। ফুপির খুব ইচ্ছে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার। টাকা পয়সার অভাব নেই কিন্তু নিয়ে যাওয়ার মতো কেউ নেই!!!
রিতু আপু এতো দেশে যায়, কিন্তু ফুপিকে নিয়ে যাওয়ার সময় নেই!! রিশাদ ভাইয়ার কথা তো বাদই, সাব্বির ফুপির সাথে কথাই বলে না ফ্রিলি!!
ইনশাআল্লাহ, এইবার একটু হলেও পুরন করতে পারবো।
-আম্মু রিশাদ ভাইয়া কই? দেখলাম না যে?
রিশাদ ভাইয়ার কথা জিগ্যেস করতেই ফুপির হাসি এক কান থেকে অপর কান পর্যন্ত ছড়ালো!!!
কমাস আগেও কেউ জিগ্যেস করলে মলিন মুখে এড়িয়ে যেতো।
-আর বলিস না, জার্মান এ নাকি ওর কোন ফ্রেন্ড থাকে, সেখানের এক ইউনিভার্সিটিতে নাকি এডমিশন নিবে। কয়েকদিন ধরে ভিসা টিসা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতেছে। আহারে, ছেলেটাও আমার থেকে দূরে চলে যাবে। কি খাবে দাবে ওখানে কে জানে!!
শেষ কথা গুলো দুঃখের হলেও ফুপির মুখ আত্নতৃপ্তির হাসি।
-ও, তাহলে ভাইয়ার সাথে আর দেখা হলো না।
-রিতু আসছে তো বাসায়
-আমি চিটাগং যেয়ে পৌছানোর পরে বলতা।
-তোর আব্বু একটু অফিসে গিয়েছে। কি কাজ জানি এসেছে আবার, তোর আব্বুকে নাকি লাগবে আবার।
সাব্বিরের সাথে দেখা করবি না? ও তো বাসায় নেই।
-ওর সাথে তো বাসায় দেখা করবো না, স্পেশাল জায়গায় করবো, একটা চোখ মেরে বললাম আমি।
-তুই……
হাসতে হাসতে উঠে হাত ধুয়ে আপুর রুমে গেলাম।
রিতু আপু মলিন চেহারায় জানালার গ্রিল ধরে বাইরে তাকিয়ে আছে।
আপু সুখে নেই। একজন দুঃখী মানুষই আরেকজন দুঃখী মানুষের কস্ট বোঝে।
-ভাইয়ার সাথে কি হয়েছে আপু?
চমকে উঠে আমার দিকে তাকিয়ে একটা মলিন হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো
-কখন আসছিস? কেমন আছিস তুই?
-সকালে আসছি। যেমন দেখছো ঠিক তেমনই আছি।
-মানুষের বাইরেরটা দেখে ভিতরটা কখনোই বোঝা যায় ন।
– কে বললো? সব মানুষের যায় না। কিছু কিছু মানুষের যায়। যেমন হলো তুমি। যাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে,
সে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে হুমকির সম্মুখীন। ভরসার জায়গাটা হয়তো আগের মতো নেই!!
রিতু আপু আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো!!
-আমি ভালো নেইরে মেহের, ভালো নেই!!!
ও অনেক চ্যাঞ্জ হয়ে গিয়েছে!!! নতুন কারো সাথে সম্পর্কে জরিয়েছে। ডিভোর্স দিয়ে দিবো!!
চারদিকে এমন ডিভোর্সের ছড়াছড়ি কেনো!!!
একদিক গড়ে তো আরেকদিক ভাঙে।
আপুকে সামনা সামনি বসিয়ে বললাম,
-তোমার রান্না করা ভাত কি প্রতিদিন একরকম সিদ্ধ হয়?
কপাল কুচকে মাথা ঝাকিয়ে আপু বললো, ” এখানে ভাত আসলো কোথা থেকে ? তুই ফাজলামো করতেছিস কেন? আমার সংসার ভেঙে যাচ্ছে আর তুই ভাত রান্না করতেছিস????”
বিরক্ত হয়ে বললাম
-আরে মুর্খ মেয়েমানুষ, সামান্য একটা ভাত প্রতিদিন একরকম করে রান্না করতে পারো না, আর তুমি কি করে আশা করো যে একটা জলজ্যান্ত মানুষ বছরের পর বছর একরকম থাকবে?
কম বেশি সবাই বদলে যায়, বদলে যায় তার ভালোবাসার ধরন, শুধু ভালোবাসার মানুষটা বদলায় না।
কি বুজলা?
-বুঝছি, কিন্তু এখন তাহলে কি করবো?
বুজবো কিভাবে যে এখনো আমিই তার ভালোবাসার মানুষ আছি ?
-তোমার ফোনটা দাও তো একটু।
ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো, “কি করবি?”
-যাই করি না কেনো তুমি দয়া করে কিছু বইলো না।
এটা ভাইয়ার নাম্বার?
-হুম।
-ওওওওরে প্রেম, জান লিখে সেইভ করা!!!!
-যাহ্, ফাজিল মেয়ে একটা!!!
ভাইয়ার নাম্বারে কল দিয়ে কান্না কান্না গলায় বললাম
-ভাইয়া, আমি মেহের। রিতু আপু মনে হয় বাঁচবে না আর!!!
আপনি কই ভাইয়া? একটু তারাতাড়ি আমাদের বাসায় আসেন প্লিজ!!!!
-কি হয়েছে ওওর। হ্যালো…!! হ্যালো…!!
আমি সুন্দর করে ফোনটা কেটে দিয়ে সিমটা অফ করে দিলাম।
আপু চোক বড় করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে!!
-তোমার রসগোল্লার মতো চোখ দেখে তো আমার মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে!! আচ্ছা তুমি আর একটা বেবি নিচ্ছো না কেন। তাহলে তো এই উছিলায় মিষ্টি খেতে পারতাম। কোনো উপলক্ষ ছাড়া মিষ্টির আসল টেস্ট আসে না।
“মেহের আমি প্রেগন্যান্ট!!!! আর তুই প্রথম জানলি কথাটা!!! ” প্রায় ফিসফিস করে অবাক হয়ে কথাটা বললো আপু!!!
আজকে মিষ্টি না খেলেও কোনো আফসোস নেই আমার!!
আপুকে একটা হাগ দিয়ে বের হয়ে এলাম। অনেকদিন পর খুশিতে চোখে পানি এসে গেছে!!
রান্নাঘরে গিয়ে ফুপিকে বললাম,
-আম্মু মিষ্টি আছে বাসায়?
-না রে, আমার ডায়াবেটিস, তোর বাবারও।
রিশাদ আর সাব্বিরও তেমন একটা মিষ্টি খায় না।
তাই বাসায় আনাও হয়না তেমন।
এজন্যেই তো মুখে ভালো কোনো কথা নাই, বিরবির করে বললাম আমি।
মিষ্টি দিয়ে কি হবে? খাবি তুই?
-খালি আমি না, আজকে সবাই খাবে। আর শোনো ভাইয়া আসতেসে দুপুরে, রিতু আপুকে মনে হয় নিয়ে যাবে। ভালো কিছু রান্না করো।
বলেই আব্বুকে ফোন করলাম। পাশ থেকে ফুপি এক গাদা প্রশ্ন করছে।
-হ্যালো, আব্বু…. সব থেকে ভালো দেখে মিষ্টি নিয়ে আসো তো।
-কেনো কি হয়েছে? তুই কখন এলি?
-রিতু আপুর অানডা বাচ্চা হবে। তারাতাড়ি নিয়ে এসো কিন্তু!!!
ফোন কেটে দিতেই দেখি ফুপি বাচ্চাদের মতো চেয়ারে বসে হাউ মাউ করে কান্না শুরু করে দিয়েছেন!!!
এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে কান্না করতে করতে রিতু আপুর হাসবেন্ড ঢুকলো বাসায়!!!
তার পিছন পিছন সাব্বির!!!
বুলেটের গতিতে কিভাবে আসলো এরা!!!!!!
বাসার আসেপাশেই ছিলো মনে হয়।
“রিতু….রিতু….?????” হেচকির জন্যে বেচারা কথাও বলতে পারছে না ঠিকমতো!!
ইশারায় আপুর রুমটা দেখিয়ে দিলাম।
দিগুণ শব্দে কাদতে কাদতে সাব্বিরসহ আপুর রুমের দিকে দৌড়ে গেলেন!!!!
ভাইয়ার বুকে রিতু আপুর আছড়ে পরার শব্দটা বোধহয় আমি এখান থেকেই তৃষ্ণার্ত মন নিয়ে শুনতে পেলাম।
কিংবা হয়তো মনের ভুল।
ঘড়ির দিকে তাকালাম। এখন না বের হলে ট্রেন মিস করতে হবে। আরও কিছু কাজ করাও বাকি আছে।
কাউকে কিছু না বলে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে এলাম। আসল কথা হলো, সাব্বিরকে জড়িয়ে ধরতে মনে চাইছে খুব।
আমারওতো ইচ্ছে করে সমুদ্র সৈকতে ঢেউ ভাঙার মতো করে কারো বুকে আছড়ে পরতে!!
!!
চলবে …………
গল্পঃ ঝরা পাতার দিনগুলো
।।
পর্ব- ১১
।।
“কিরে মিসেস ফয়সাল, ভালোবাসা কি কিছু ব্যাংকেও ডিপোজিট করতে এসেছিস””???!!!
পরিচিত কন্ঠ শুনে পাশে তাকিয়ে দেখি ভার্সিটি ফ্রেন্ড তমাল দাঁড়িয়ে আছে!!
-তুই এখানে কি করিস!!?? কি অবস্থা তোর ?
– আমি তো এই ব্রাঞ্চের সিনিয়র অফিসার হিসেবে আছি তিনমাস হলো।
-ওহ, খুবই ভালো।!!তাহলে এদিকে আয়, আমাকে হেল্প কর। একাউন্ট খুলতে আসছি।
-ফয়সাল ভাই কেমন আছে?
-ভালো আছে। ভাই তোরাই ভালো কাজ করছিস, অনার্স এর পর এমবিএ করে ফেলছিস। দেখ আমাদের নয় মাসের সেশন জটে থেকে মাত্র মাস্টার্স এ।
-তোর কিসের চিন্তা!!! হাহ হাহ হা.. ফয়সাল ভাই আছে না!! টিচার হয়ে গেছেন উনি, তোর তো সেই কপাল!!!
-আমি এখন মিসেস সাব্বির। ফয়সালের সাথে অনেক আগেই ব্রেকাপ হয়ে গিয়েছে।
শান্ত স্বরে সবচেয়ে কস্টের কথাটা বললাম আমি।
তমাল অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
অবাক তো আমিও হয়েছিলাম রে!!
-সরি দোস্ত!! আমি জানতাম না রে!!
-ইটস অকে। এখন আমাকে হেল্প কর। কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছি না। ৩.৩০মিনিটের সুবর্ন এক্সপ্রেস ধরতে হবে।
-পারবি না তো! একটু পরেই লাঞ্চ ব্রেক পরবে। কেউই থাকবে না ২.২০টা অব্দি।
-তুই আছিস কি করতে!! আর আমি তো ডিপোজিট করবো শুধু।
-এতো গুলো কেন? আর সুহা নুহা এগ্লা কে?
-এই তুই এতো প্রশ্ন করছিস কেনো?? দে না কাজ গুলো করে ভাই!! যাহ তোকে লাঞ্চ করাবো।
-লাঞ্চ লাগবে না, তুই কেন বিয়ে করলি না ফয়সাল ভাইকে সেটা যদি বলবি বলে প্রমিস করিস তাহলে করবো।
হা হয়ে গেলাম ওর কথা শুনে!! এই ছেলেটা ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে কি নাকি বলেছিলো আমাকে নিয়ে, সেজন্য কি মারটাই না খেয়েছিলো ফয়সালের হাতে!!
পরে জানতে পেরেছিলাম তেমন কিছুই বলেনি।
এর পর থেকে ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম আমরা।
কিন্তু কোনো কারণে ফয়সাল ওকে দেখতে পারতো না। এমনকি আমার সাথে নাকি ওর কিছু আছে সেটা নিয়ে ঝগড়াও করেছিলো!!!
-আচ্ছা বলবো।
এই কাজ গুলো শেষ করতে হয়তো আজকে বিকেল হতো। কিন্তু তমালের জন্যে খুব তারাতাড়ি শেষ করতে পারলাম। কমলাপুরের কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম।
-তো মিসেস ফয়সাল থুক্কু সাব্বির, এইবার বলেন আপনার কাহিনী কি!! আচ্ছা ওয়েট ওয়েট, এটা কোন সাব্বির বলতো, ঐযে তোর একটা কাজিন চিটাগং মেডিক্যালে পড়তো উনি?
-হুম, কিন্তু তুই চিনলি কিভাবে?
অবাক হয়ে বললাম আমি।
-না চিনার কি আছে, সেদিন.. পরে বলবো, আগে তোর কাহিনি বল।
কাউকেই ছোট না করে যতটুকু বলা সম্ভব বললাম আমি।
-বোঝায় যাচ্ছে ফয়সাল ভাই টিচার হওয়ার জন্যে তোকে ছেড়ে দিয়েছে। সরি, বাজে ভাবে বলছি আমি।
কিন্তু উনি যেই পরিমাণ পজেসিভ তোর প্রতি, এটা করার কোনো কারণ আমি দেখি না।
-বাদ দে, যা হয়েছে কপালে তাই ছিলো হয়তো।
এখন তুই কি বলতে চেয়েছিলি সেটা বল এখন।
-মনে আছে, একবার তুই ক্লাসে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলি? ঐযে, ল্যাবের কারেন্ট চলে গিয়েছিলো,
পচা মাছের গন্ধে তুই প্র্যাকটিকেল ক্লাসে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলি?
নাক চেপে ধরে বললাম মনে আছে। মনে হচ্ছে গন্ধটা এখনো পাচ্ছি আমি!!
কি বাজে গন্ধ ছিলো, ছি!! ছোট্ট একটা ল্যাবে গাদাগাদি করে ত্রিশজন স্টুডেন্ট। একে তো ভ্যাপসা গরম তার উপর গেছে কারেন্ট চলে!!
সবাই মাছ নিয়ে কাটাছেড়া করছিলাম আমরা। কারোও কারোরটা ছিলো খুবই পঁচা। কিছুক্ষন গা গুলানোর পরে আর কিছু মনে নেই।
আমার নাক চেপে ধরা দেখে তমাল হো হো করে হেসে উঠলো।
-মনে আছে, তো কি হয়েছে?
-একটা রিউমারও ছড়িয়েছিল।
– হুম আমি নাকি প্রেগন্যান্ট!!!!! হাস্যকর পুরা!!
-হুম, ক্লাসে ফাহাদ এমনি দুষ্টামি করে বলেছিলো প্রেগন্যান্ট হয় নাই তো!!
ফয়সাল ভাই এইজন্যই আসে নাই তোকে দেখতে!!
-কোনটার জন্য?
-তুই সারাজীবনই গাধি ছিলি মেহের!! এখনও তাই আছিস!! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো ও।
-দোস্ত, বলনা কি হয়েছে? অনুনয় করে বললাম আমি।
-আমাদের ল্যাবের পাশের ল্যাবেই ফয়সাল ভাইদের ক্লাস চলছিলো। তুই সেন্সলেস হওয়ার একটু পরেই ভাইয়া আসে। ফাহাদের বলা কথাগুলো শুনে তোকে দেখে আবার চলে যায়। ইভেন উনি হাস্পাতালেও আসে দুদিনপর!!!!
তমালের কথা শুনে মাথাটা ঘুরছে। আমি জানতাম ফয়সাল এসেছিলো হাস্পাতালে আমি সেন্সলেস থাকতেই। কিন্তু স্যার ম্যাম আছে দেখে চলে গিয়েছিলো। আর দুদিন ওর মিড থাকায় ও আসতে পারেনি।
-ওর তো মিড ছিলো তাই আসেনি।
-তোর মাথা। কোনো মিডই ছিলো না। তুই প্রমাণ চাইলে আমি দেখাতে পারি।
কি বলবো বুঝতে পারছি না। দুদিন পরে ফয়সাল যখন এসেছিলো তখন দুই কথার পরেই জিজ্ঞেস করেছিলো ব্লাড কেন দরকার হয়েছে।
আমি তখন নিজেই কিছু ভালোভাবে জানতাম না আসলে আমার কি হয়েছিলো।
ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারিনি বলে আবার ঝগড়া করে চলে গিয়েছিল!!!!
রক্তশুন্যতায় ভুগছিলাম আর শরির নাকি দুর্বল ছিলো অনেক। তাই ব্লাডের দরকার হয়েছিলো।
-তুই কি জানিস দুদিন তোর কাছে কে ছিলো?
তমালের প্রশ্নের উত্তরটা আমি জানি কিন্তু খুব করে চাইছিলাম উত্তরটা যেন ভুল হয়।
কাপা কাপা গলায় বললাম জেনি আর তুই।
একটা মুচকি হেসে তমাল বলতে শুরু করলো
-দুদিন তোর পাশে আঠার মতো সাব্বির ভাই লেগে ছিলো। ফয়সাল ভাই যখন এসেছিলো তখনো। ব্লাডটাও উনিই ম্যানেজ করেছিলো। আমরা তুই প্রেগন্যান্ট কিনা জানতে চাইলে উনি হাসতে হাসতে জবাব দিয়েছিলেন, “নাহ, আমার বাবা হওয়ার শখ এতো তারাতাড়ি নেই। অবশ্য যেভাবে ওর সাথে লেগে আছি হতে আর কতক্ষণ!!!। ”
বেচারা তোর জন্যে দুটো আইটেম মিস করেছিলো!!
তুই ঠিক মানুষের সাথেই আছিস রে মেহের!!
ফয়সাল ভাই তোর জন্যে না!!
মুচকি হেসে বললাম হয়তো!!!
আমিই মনে হয় ঠিক না কারোর জন্যে!!
আজকের ডিভোর্সের ঘটনা টা বললাম না আর।
ঘড়িতে ৩.০৫ মিনিট। এখন না উঠলে ট্রেন মিস করবো।
তমাল আমাকে ট্রেনে তুলে দিলো।
আমার চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত টা নিয়ে এই প্রথম কনফিউজড হয়ে গেলাম। কোথাও একটা গড়বড় আছে যেটা ধরতে পারছি না।
পরেরদিন ম্যামের বাসায় গিয়ে সব ডকুমেন্টস দিয়ে আসলাম।
ভিসার জন্যে ফুপা ফুপির কাছে ফোন আসবে, সুতরাং সারপ্রাইজ দেয়া যাবে না। আগেই জানিয়ে রাখা দরকার।
ফুপিকে বললাম সাব্বিরকে এখনই কিছু না বলতে।
সাব্বির রাতে ফোন দিলো আমাকে।
-তুই কার সাথে কোথায় যাচ্ছিস?
রাগ হলো খুব। ফুপি যে কিছু বলেনি বুঝতে পারলাম। কিন্তু জানলো কি করে ও!!!
-যার সাথে মনে চায় তার সাথে যাবো, তাতে তোমার কি!! তুমি তো ডিভোর্স দিয়েই দিবে তাই না?
ইশ, খোচা খেয়েও যদি একটু বলতো আমি তার বউ!!
-দিবোই তো। তোর মতো মেয়ের সাথে কি সংসার করার জন্য বিয়ে করেছি নাকি!!! তোকে বুঝাইতে চাইছি আপন জন চলে গেলে তার কস্টটা কেমন হয়!!!
ফয়সালের কোনো দোষ নেই!! বেচারাকে তো বলেছিলাম যে টিচার হিসেবে জয়েন করার আগে যেনো তোর সাথে কথা না বলে। এটাই ডিল ছিলো!!
ওর এপয়েনমেন্ট লেটার এসেছিলো বৃহস্পতিবার। যেদিন তোর সাথে ব্রেকাপ করেছিলো ও আমার কথা রাখার জন্যে!! শুক্রবার তোর আমার সাথে বিয়ে…
চলব?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here