গল্প : ঝরা পাতার দিনগুলো
লেখক: হাবিব
পর্ব – ৫&৬
।।
পরেরদিন সুপারভাইজার ম্যামের ফোন পেয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ডিপার্টমেন্টে গেলাম। ম্যামের চেম্বারের আগের রুমটার বাইরের নেম প্লেটে চোখ পরতেই পা আর চলছে না আমার!!!
Md Faysal Ahmed
Lecture, Department of Aquaculture
৫ বছর ধরে একসাথে যে সপ্নটা আমি আর ফয়সাল মিলে দেখেছিলাম সেটা সত্যি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সপ্ন দেখা মানুষদুটো আর একসাথে নেই।
ভাগ্যিস রুমটা তালা দেয়া বাইরে থেকে। না হলে তো এখনই দেখা হয়ে যেতো, হয়তো!!
ম্যামের রুমে যেয়ে ভেতরে ঢুকার পারমিশন চাওয়ার আগেই ম্যাম বলে উঠলেন, আরে মেহের যে, এসো এসো, বসো। তারপর কি খবর তোমার।
আমি নিচের দিকে চুপচাপ তাকিয়ে আছি।
-আমি জেনির কাছে সব শুনেছি। এইখানে তো তোমার কোন ফল্ট আমি দেখছি না। সে এখন আমাদের কলিগ হয়ে গিয়েছে। তাকে তো এখন কিছু জিগ্যেসও করা যাবে না।
-দরকার নেই ম্যাম। আপনি আমার জন্যে এতোটুকু করতে চেয়েছেন সেটাই অনেক বেশি ম্যাম।
-ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, তোমার কাজিন আই মিন তোমার হাসবেন্ড এর ব্যাপারে জিগ্যেস করি?
-সিউর ম্যাম।
-কি করে ও।
-চিটাগং মেডিকেল থেকে পাশ করেছে ম্যাম। এখন এফসিপিএস পার্ট ওয়ান এ ভর্তি হয়েছে। এই মাসেই ঢাকা শিফট হয়ে যাবে।
– খুব ভালো। মন খারাপ করে না মেহের। কার ভাগ্যে আল্লাহ কি লিখে রেখেছে আমরা কেউই জানি না। আর লাইফ পার্টনার তো আমরা চাইলেও সিলেক্ট করতে পারি না। মানুষের কথায় কান দিও না। তোমাকে সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকে ব্রেভ গার্ল হিসেবেই জানি।
-জি ম্যাম
-রিসার্চ টা ভালো মতো শেষ কর। আর কারোরটার কথা জানি না বাট তোমার পেপার পাব্লিকেশন করার জন্য যত ধরনের হেল্প তোমার লাগবে আমি করবো। কাজের মাধ্যমে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দাও। দেখবে সবাই তখন ফয়সালের কথা ভুলে যাবে।
-জি ম্যাম
-আর ফয়সাল যদি কোন ঝামেলা করার ট্রাই করে সোজা আমার কাছে আসবে। মনে থাকবে?
-হেসে দিয়ে বললাম, জি ম্যাম
– অকে।তাহলে কাল থেকে ল্যাবে কাজ শুরু করে দাও।
অকে ম্যাম বলে বের হয়ে এলাম চেম্বার থেকে। কিন্তু বলা যতটা সহজ, বাস্তবে কি এতোটাই আসলে?
কারণ ফয়সালের রিসার্চ এখনো শেষ হয়নি তো।
ল্যাবে তো দেখা হবেই ওর সাথে। এতোটা মনের জোর কি আছে আমার?
ম্যামের চেম্বার থেকে বের হয়ে দেখি ফয়সালের রুমের দরজা খোলা!!!
বুকের ভেতর এমন লাগছে কেন!! চোখ বন্ধ করে আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে এসে লিফটে ঢুকে পরলাম।
আজকে না হয় দেখা হয়নি। কিন্তু অন্যদিন কি করবো!!!
আরো ২দিন পর ল্যাবে গেলাম। ইতোমধ্যে সব স্যার ম্যাম স্টাফরা জেনে গেছে আমার বিয়ের কথা।
ল্যাবে ঢুকে দেখি ল্যাব এটেনডেন্ট দিদি ছাড়া কেউ নেই।
দিদিকে দেখে শুকনা একটা হাসি দিলাম। দিদিও প্রতিউত্তরে একটা হাসি দিলেন। অন্যদিন হলে দিদির সাথে কথার ঝুরি মেলে দিতাম। চুপচাপ নিজের কাজ করতে শুরু করি।
ঠিকভাবে কোন কাজই করতে পারছি না, যেটা আমার সাথে কখনোই যায় না।সব কাজ সুন্দর করে গুছিয়ে করতে পারতাম বলে স্যার, ম্যাম ল্যাবের স্টাফ সবাই আমাকে খুব পছন্দ করতো।
পিঠে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে তাকিয়ে দেখি দিদি দাঁড়িয়ে আছে।
-মা রে, মন খারাপ করে কি হবে বলো। নিজের জীবন আগে। কোন হেল্প লাগলে বলো?
– না দিদি ঠিক আছি আমি।
– এতোদিন ধরে এখানে আছো তুমি, তোমাকে খুব ভালোই চিনি। যেটা হয়েছে, সেটা হয়তো ভালোর জন্যেই হয়েছে। আর ম্যাডামই কেমন, এখনি তোমাকে কাজ করতে বলছে কেনো
– না দিদি, আসলে কাজে থাকলে হয়তো ভালো থাকবো তাই। আপনি যান, পারবো আমি।
– একটু পর থার্ড ইয়ারের ক্লাস হবে এইখানে।
– আচ্ছা সমস্যা নাই, এক কোনায় আমার কাজ আমি করতে পারবো।
-আপু ফয়সাল স্যারের ক্লাস।
-ও।
আর কিছু না বলে তারাতাড়ি কাজ করতে শুরু করি। যেভাবেই হোক ক্লাস শুরু করার আগে বের হতে হবে।
কিন্তু ভাগ্য বলে একটা কথা আছে।
সব জুনিয়র গুলো হুরমুর করে ঢুকে গেলো!!
লাস্ট পারসন টাকে দেখে গলায় মনে হচ্ছে সব আটকে গেছে।
ফয়সাল ঢুকতেই আমি কি করবো সব ভুলে গিয়েছি!!
ওদের দিকে উল্টো হয়ে সেইফটি ক্যাবিনেট এর দিকে বসে আছি।
সেই ভরাট গলার স্বর!! মাথা, কান সব ভোঁ ভোঁ
করছে।
-ঐ আপুটাকে চিনো তোমরা?
– জি স্যার। আমদের উড বি ম্যাম।
পোলাপানের চাপা হাসির শব্দ শুনতে পেলাম
-না। সে এখন মিসেস সাব্বির। তার পছন্দের মানুষের সাথেই তার বিয়ে হয়েছে।
সব পিন ড্রপ সাইলেন্ট হয়ে গেলো!! মনে হচ্ছে মাথা ঘুরে পরে যাবো আমি!! টলতে টলতে বের হচ্ছি,
” মেহের তুমি ঠিক আছো? তোমার হাসবেন্ড কে ফোন করবো?”
ছুরি দিয়ে আঘাত করে লবন ছিটে দিবে কি না জিগ্যেস করছে।
রুমে এসে শুয়ে পরলাম ভীষণ কান্না আসছে, ভীষণ।
সারা শরিরে কাঁপুনি উঠে গিয়েছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে!!!
জেনি ছুটে এসে জিগ্যেস করলো, মেহের কি হয়েছে তোর? আল্লাহ,জর দেখি অনেক!! গায়ের উপর কাথা জরিয়ে দিল আমার।
-মেহের কাদতেছিস তুই!!!!!!!
কি হয়েছে বল আমায়?
কান্নার আর কাপুনির চোটে মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। আমাকে জাপটে ধরে বসে আছে জেনি। এই মেয়েটা না থাকলে হয়তো মরেই যেতাম আমি!!
ফোন বাজতেই জেনি দেখে সাব্বির ফোন দিয়েছে!!
আমি তখন কথা বলার অবস্থায় নেই।
ও ফোন রিসিভ করলো
-আমি আজকে রাতের ট্রেনে চলে যাচ্ছি ঢাকায়।
-ভাইয়া আমি জেনি। মেহেরের রুমমেট। মেহেরের অনেক জ্বর ভাইয়া। সাথে সারা শরিরে কাপুনি।
-কখন থেকে?
-সকালেও তো ভালো ছিলো। ল্যাবে গিয়েছিল। ওখান থেকে আসতেই দেখি এই অবস্থা।
– ও আচ্ছা।ঠিক আছে ওকে বইলো আমি চলে যাচ্ছি। বলেই ফোন কেটে দিলো!!!!
জেনি অবাক হয়ে একবার ফোনের দিকে আবার আমার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল, তুই এই সব জানোয়ার দের মাঝে বেচে থাকবি কিভাবে? চলে যা এইখান থেকে।
চোখ মেলতেই অচেনা একটা রুমে নিজেকে আবিস্কার করলাম। আশে পাশে তাকিয়ে এটা যে হাসপাতাল বুঝতে পারলাম। কিন্তু কেউ নেই কেনো?
উঠে বসার চেষ্টা করতেই, পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো, হুম আর অসুস্থ হওয়ার নাটক করতে থাক। তাহলে আমারও আর এখান থেকে যাওয়া হবে না। আর আমি এইখানে থেকে থেকে তোর নষ্টামি দেখি। এইতো চাস তুই, তাই না?
“কিরে মেহের তুই তো সেই ভি আইপি হয়ে গিয়েছিস”
তাকিয়ে দেখি জেনি ঢুকেছে কেবিনে।
-কেন কি হয়েছে?
-ভাইয়া তোকে কিছু বলে নি?
চুপচাপ থাকতে দেখে নিজেই বলতে শুরু করলো, না মানে তুই চিটাগং মেডিকেলের কেবিনে শুয়ে আছিস তাই বলছি আর কি। কেবিন পাওয়া তো অনেক ঝামেলার ব্যাপার তাই বলছিলাম আর কি।
-কি হয়েছিল আমার?
-টানা দুদিন ধরে জ্বর সাথে খিচুনি। আমি তো অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
-কিহ, ২ দিন!!!
-জি আপা। ২ দিন। ভাইয়া না থাকলে যে কি করতাম আমি। সেদিন বিকেলে ফোন রাখার একটু পরেই আমাদের ভার্সিটির এম্বুলেন্স এসে হাজির। তোকে হাস্পাতালে আনতে আনতে ভাইয়া সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলো।
– ও।
– খালি ও!! ভাইয়ার সাথে তোর ঝামেলাটা কি রে?
-জানি না আমি। ভালো লাগছে না। হলে যাবো।
-জানিস এইখান কার বড় বড় সব ডক্টর, প্রিন্সিপাল সবাই এসেছিলেন তোকে দেখতে।
-তুই আমাকে এসব কেন বলছিস? আমি জানতে চেয়েছি কিছু? রিলিজ দিবে কখন আমাকে? হলে যাবো আমি।
ঢং দেখাইতে আসছে এইখানে। বিলাই সাজে সবার সামনে। আর আমার সামনে আজরাইল।
“এইখানে থাকতে কেনো মন চাইবে। নাগর তো ভার্সিটিতে। শুধু শুধু আমার যাওয়াটা নষ্ট করলো।”
সাব্বিরের কথা শুনে জেনি হতভম্ব হয়ে একবার আমার দিকে তাকায় আবার সাব্বিরের দিকে।
য়
বিকেলের দিকে হলে চলে আসি। পরের দিন সকালেই সাব্বির ঢাকায় চলে গেলো। কেন জানি সাব্বির কে খুব মিস করছি।
শশুর শাশুড়ী প্রতি বেলায় ফোন করে খোজ খবর নেয়। কি হবে আমার জীবনে?? সাব্বির যদি ডিভোর্স দিয়ে দেয় কোথায় যাবো আমি? মানুষের কথা শুনতে শুনতে তো মরেই যাবো। আমার কথা না হয় বাদই দিলাম, আমার ভাইবোন গুলোকে তো সারাজীবন কথা শুনতে হবে। মানুষ এইরকম কেন?
অনেক দিন পর প্রিমাকে ফোন দিলাম।
-কি বান্ধবি সাব্বির কে পেয়ে তো আমার কথা ভুলেই গিয়েছিস?
-উল্টো ফুলটো কথা বলিস না তো প্রিমা।
-কেন এখনো মান অভিমান ভাংগে নাই?
-সে কি আমার বয়ফ্রেন্ড ছিলো নাকি যে মান অভিমান থাকবে। আছে তো জেদ শুধু । পেটটা ভরা জেদ নিয়ে ঘুরে বেরায়।
-কি বলিস!!
-বাদ দে, তোর কি খবর বল।
-ফয়সাল ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছে?
-হুম।
-কিছু বলে নাই?
-বলছে।
-কি?
-বলছে যে আমি আমার পছন্দের মানুষের সাথেই নাকি বিয়ে করেছি।
-ঠিকই তো বলছে।
-প্রিমা মেজাজটা খারাপ করিস না। দুষ্টামি করার মুডে নাই আমি। ফোন রাখ। বাই।
প্রিমা এই কথা বললো কেন? কিছু তো একটা ঝামেলা আছেই। না হলে হঠাৎ করে সাব্বিরই বা বিয়ে করার জন্য এইরকম মরিয়া হয়ে যাবে কেন। আর ঠিক যে টাইমটায় ফয়সালের সাথে ব্রেকাপ তখনই বিয়েটা হলো। কিছু তো ঝামেলা আছে।
“মনে হয় সাব্বির ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসে।” জেনির কথাটা খেয়াল করিনি।
-কি বললি? খেয়াল করি নাই রে
-নাহ কিছু না
-আরে বলনা। অন্যমনস্ক ছিলাম শুনতে পাইনি।
-আমার কেনো জানি মনে হয় সাব্বির ভাইয়া তোকে অনেক ভালো বাসে।
ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই বললো
-না মানে তুই তো ২দিন যাবত বেহুশ ছিলি। এই টাইমটায় হসপিটালে আমি কিন্তু ছিলাম না। সাব্বির ভাইয়া ছিলো। ২৪ ঘন্টা তোর পাশে বসে ছিলো। কিন্তু দুপুরের কথার সাথে উনার কাজের কোনো মিল পাচ্ছি না। এই কথা কেনো বললো তখন। তোর উপর কি কোনো কারণে বিরক্ত?
– কি জানি।
চুপচাপ থাকতে দেখে আর কিছু বললো না জেনি।
আমি জানি আমার প্রতি সাব্বিরের ফিলিংস আছে।
কিন্তু সেই জিনিসটাই তো আমি সবথেকে বেশি ভয় পেতাম। যেটা কখনোই চাইনি সেটাই হচ্ছে এখন। সাব্বিরের প্রতি তো আমারও ফিলিংস ছিলো। যার জন্যে,…… মনে পরতেই চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।
পরেরদিন ল্যাবে গেলাম। গিয়ে দেখি ফয়সাল কাজ করছে। ঠিক করলাম যত কিছুই হোক আর বেহুশ হওয়া চলবে না। বি ব্রেভ মেহের বি ব্রেভ। লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে কাজ শুরু করলাম।
“তো মেহের হাসবেন্ড এর সাথে তো মনে হয় ভালোই আছো?”
মানুষকে সবার সামনে অপমান করার বদঅভ্যাসটা ফয়সালের এখনো গেলো না।
-না স্যার ভালো নেই, কারণ হাসবেন্ড এর চেয়ে বয়ফ্রেন্ড কে বেশি ভালোবাসতাম তো তাই। আর সেই বয়ফ্রেন্ডই স্যার যখন আমার বিয়ে ঠিক হইছে তখন ছেড়ে চলে গিয়েছে। তাই একটুও ভালো নেই স্যার।
ফয়সাল থতমত খেয়ে গেলো আমার উত্তর শুনে।
আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি। মনেহয় এর পরের উত্তর গুলো আরও ভয়াবহ হবে এই ভেবে বোধহয়।
মনের ভিতর খুবই শান্তি লাগতেছে কথা গুলো বলতে পেরে। ফুরফুরে মেজাজে ঐদিনকার মতো কাজ শেষ করে রুমে আসলাম। অনেক গুলো প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে। কিন্তু কি থেকে কি শুরু করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
প্রিমাকে ফোন দিলাম।
-কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিবি। কোনো ধানাই পানাই করবি না।
প্রিমা যে ভয় পেয়ে গেছে সেটা আমি এখান থেকেই দেখতে পাচ্ছি
-আচ্ছা বল কি জানতে চাস।
-তোর সাথে সাব্বিরের লাস্ট কবে কথা হইছে?
-অনেক দিন আগেইতো মনে হয়। না মানে কথা হয় নি তো কোনো।
প্রিমার যে কথা হইছে সাব্বিরের সাথে সেটা আমি আমি জানতাম না। বান্ধবিটা আমার অনেক সহজ সরল। আমার ট্রিকি কোয়েশ্চেনটা ধরতে পারেনি।
-কি কথা হয়ছে বল আমাকে প্রিমা?
-আচ্ছা তুই ভাইয়াকে দেখতে পারিস না কেন? তোদের সবই তো ঠিক ছিলো। ভাইয়া তোকে অনেক পছন্দ করে।
– আমাদের ২ ফ্যামিলির মাঝে অনেক ঝামেলা আছে রে। অনেক কথা। এসে বলবো। আগে তুই বল, কি নিয়ে কথা বলছিস তুই সাব্বিরের সাথে?
-ঐ রকমকিছুই না। জিজ্ঞেস করছিলো যে তোর আর ফয়সাল ভাইয়ার রিলেশন কেমন। তোরা সিরিয়াস কি না রিলেশন নিয়ে, এই গুলোয়।
-আর কিছু জিজ্ঞেস করে নি?
-না। আর লাস্ট একটা কথা বলছে শুধু।
-কি। মেহনাজ আপুর জন্যে নাকি উনার ভাইয়ার লাইফটা শেষ হয়ে গিয়েছে।
চমকে উঠে ফোনটা হাত থেকে পরে গেলো আমার। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে অনেক। তাহলে এটা রিভেঞ্জ ছিলো!!!!!
আমার এতো কস্ট কেনো হচ্ছে। কান্না আসতেসে কেন। আমার তো রাগ হওয়ার কথা।
।।
চলবে ………
গল্প : ঝরা পাতার দিনগুলো
হাবিব
পর্ব – ০৬
।।
আস্তে আস্তে দিন পার হচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে কস্ট গুলো কেমন জানি হালকা হয়ে যাচ্ছে। টাইম উইল চ্যাঞ্জ এভরিথিং মনে হয় এর জন্যেই বলে। শুধু কিছু প্রশ্নের উত্তর জানা বাকি।নিজেকে নিজের কাছে অনেক ছোট মনে হয় মাঝে মাঝে। নিজের খরচ চালানোর জন্যে আবার টিউশনি শুরু করতে হয়েছে। বিয়ের আগে তো ভাইয়া পাঠাতো। হয়তো ভেবেছিলো সাব্বির অথবা শশুরবাড়ি থেকে পাঠাবে।
আমি কি এতোই অবহেলার পাত্রি? যার জন্যে সাব্বির লাস্ট ১ মাসে একটা ফোনও দেয়নি? খরচ দিবে তো দূরে থাক। ভাগ্যিস বিয়েতে সালামি হিসেবে কিছু টাকা পেয়েছিলাম। না হলে কার কাছে চাইতাম।
কোরবানি ঈদের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ পরেছে ১২ দিন। হলও বন্ধ হয়ে যাবে। বাসায় যেতে হবে।
কাউকে কোনো কিছু না বলে আমাদের গ্রামের বাড়ি চলে এলাম। বাড়িতে বড় ভাবি আর ভাবির ৩টা ছেলে মেয়ে ছাড়া কেউ থাকে না।বড় ভাইয়া জবের জন্যে কুমিল্লা থাকে। আম্মু আব্বু থাকতে তারা থাকতো। আম্মু মারা যাওয়ার পর আব্বু মাত্র ২ মাস বেচে ছিলো।
এতো বড় বাড়ি অথচ থাকার মতো কেউ নেই। অথচ এই বাড়িতে একদিন আমরা ৪ বোন আর ৩ ভাইয়ের কোলাহলে গমগম করতো। আর আজ!!!
বিশাল বাহিরের উঠান পেরিয়ে বাড়ির ভিতরের উঠানে ঢুকতেই বড় ভাইয়ার ৪ বছর বয়সি মেয়েটা ছোট ফুপি বলে দৌড়ে এসে জাপটে ধরলো।
– সোহা আম্মু কেমন আছো তুমি?
-ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? তুমি নাকি আমাদের
বাড়িতে আর আসবে না?
-কে বললো? বলে ওকে নিয়ে ঘরের ভিতর ঢুকলাম।
-আম্মু বলছে।
“ফুপি!!!” তাকিয়ে দেখি নুহা, বড় ভাইয়ার ৭ বছর বয়সি বড় মেয়েটা, আর কোলে পিচ্চি ছেলেটা আয়ান।
-জি আম্মু। আমার আব্বুটা কেমন আছে, বলেই ৪ মাস বয়সি গোলটু টাকে কোলে নিলাম।
“ওমা!! মেহের দেখি!!” দেখি বড় ভাবি হাস্যজ্জ্বল হয়ে এগিয়ে আসছে।
-একাই আসছো? সাব্বির আসে নাই?
-না ভাবি একাই আসছি।
-ঈদের আগে এসে নিয়ে যাবে বুঝি?
একমুহূর্তের জন্যে থমকে গেলাম। আমার মনেই ছিলো না যে এখন থেকে কোনো ঈদ আর এইবাড়িতে করা হবে না। আমি তো এতো কিছু
– ভাবি এখন থেকে যে শশুরবাড়িতে ঈদ করতে হবে আমি ভুলে গেছিলাম।
ভাবি আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। আমার অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো, আহারে,আচ্ছা থাক, চলেই যেহেতু আসছো এইখানেই এবার ঈদ কর। এমনিতেই এইবার বাড়ি পুরো খালি। আগের বার তো আম্মা, আব্বা তুমি ছিলা। এইবার তো আম্মা নাই, আব্বাও নাই। তোমারও হুট করে বিয়ে হয়ে গেলো।
-তোমরাই তো জোর করে বিয়ে দিয়ে দিলা।
-মেয়ে মানুষের জীবনটাই এমন মেহের। আমার বিয়েও তো আম্মা যেদিন মারা গেলো তার পরের দিনই হলো। ভাইয়ারা একটাদিনও ওয়েট করে নাই।
আমিও মন খারাপ করে বললাম, হুম ভাবি ঠিকই বলছো।
-তারপর কি খাবা বলো। কি রান্না করবো।
ভাবির কথা শুনে চোখে পানি চলে আসছে। আগে আম্মু থাকতে এই প্রশ্ন করতো।
-এইরকম ইমোশনাল ভাবে তাকিয়ে আছো কেন? খুশি হয়ে লাভ নাই। বাচ্চা গুলারে তুমি রাখবা।
-নো প্রব্লেম ভাবি। তোমার যা মনে চাই তাই রান্না কর। এইগুলাতো আমার হাতের নিচে ঘুইরা বেরাবে।
আচ্ছা বলে ভাবি হাসি মুখে চলে গেলো।
কে কখন চ্যাঞ্জ হয় কিছুই বলা যায় না। আম্মুর সাথে বড় ভাবির সম্পর্ক কখনোই ভালো ছিলো না। সেই ভাবি আজকে আমাকে কতটা কেয়ার করতেছে।
ফ্রেশ হয়ে তিন পিচ্চিকে নিয়ে উঠানের পাশে বড় আমগাছের নিচে গিয়ে বসলাম। ফোনের রিংটোনের শব্দে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গিয়েছে। নুহার দিকে তাকাতেই ও হাসি দিয়ে বললো যাইতেছি কিন্তু একটা চকোলেট দিবা। মাথা ঝাকাতেই ফোকলা দাতে হাসি দিয়ে নুহা ফোন আনতে গেলো।
নুহা ফোন নিয়ে আসতে আসতে ফোন টা ২বার বেজে কেটে গেলো। সাব্বির কল দিয়েছে!! ও কল দিলেই কেনো জানি ভয় লাগে। কল ব্যাক করার আগেই আবার কল দিলো। ফোন রিসিভ করেই উল্টা পাল্টা কথা শোনার জন্যে দাত মুখ খিচে রেডি হলাম।
-ভালো আছিস বাবু?
এতো আবেগি গলায় আমার নিকনেম ধরে অনেক দিন পর কেউ ডাকলো। সাব্বির আজকে যতই বাজে কথা বলুক আমি মন খারাপ করবো না। এটার জন্যে সব মাফ। সবার ছোট ছিলাম বলে সবাই আদর করে বাবু ডাকতো। বড় হবার পরে আম্মু আব্বু আর মেজো ভাইয়া ছাড়া কেউ ডাকেনি। এখন মেজো ভাইয়াও আর ডাকে না।
-কিরে কথা বলবি না?
-হুম বলো। ভালো আছি।
-কি করিস?
-কিছু না। সোহা নুহা আর আয়ানকে নিয়ে বসে আছি।
-তুই তোদের গ্রামের বাড়িতে? খানিকটা বিস্ময় আর রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললো ও
-হুম। তোমাদের বাড়িতে যেতে হবে ভুলে গিয়েছিলাম।
-হুম তুই তো অনেক কিছুই ভুলে যাস। ভুল করে ফয়সালের সাথে ল্যাবেও একা একা কাজ করিস।
ওর সাথে এই মুহুর্তে তর্ক করা মানে একটা গরুর সাথে তর্ক করা।
-হুম গিয়েছিলাম।
-ঈদের ৩দিন পরে উকিলের কাছে যাবো। ঢাকায় চলে আসিস।
গলায় কান্না আটকে আসছে। খুব কস্টে বললাম কেনো?
-তোকে ডিভোর্স দিবো তো তাই।
-আচ্ছা। কাবিনের টাকা টা দিয়ে দিও।
সাব্বির ফোনটা কেটে দিল। লাস্ট কথাটা শুনতে পেয়েছে কিনা যে জানে।
বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আম্মু আর আব্বুর কবরের মাঝখানে বসে অনেক গল্প করলাম তাদের সাথে। এতোদিন কার ভিতরে চেপে রাখা কথা শেয়ার করলাম। ইচ্ছে করছে একটা বালিশ নিয়ে তাদের মাঝখানে শুয়ে পড়ি। ঠিক ছোটবেলায় যেমন করে থাকতাম। খুব কি দরকার ছিলো এইভাবে আমাকে একা করে দিয়ে চলে যাওয়ার। পিঠে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে দেখি মেজো ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।
-মেজো ফুপি অনেক অসুস্থ। তোকে ঢাকায় যেতে হবে এখনি। ওদের বাসায় তো কেউ নেই। সাব্বির আর শব্দ ছাড়া।
-আচ্ছা
ভাইয়া তো জানে না। ঐ বাসায় আমার আর বেশিদিন যেতে হবে না।
মেজো ফুপির বাড়িতে আমি বিয়ের দিন ছাড়া কখনও যাই নি। মেহনাজ আপু, তার পর আমাকে নিয়ে ছোট ফুপির বলা কথার জন্যে কোনদিন এই বাড়িতে আসতেও ইচ্ছে করেনি। কিন্তু এখন এটা আমার শশুড়বাড়ি। ইচ্ছে আর অনিচ্ছার কোন মূল্য নেই এখানে। অবশ্য সাব্বিরের কথামতো বেশিদিন আসতে হবে না এইখানে।
দোতলা বাড়িটা অনেক বড়। বিয়ের দিনতো পুরো বাড়িটা দেখা হয়নি। মেজো ভাইয়া আমাকে দিয়ে চলে গিয়েছে। যাওয়ার আগে অবশ্য আমি এইখানে না এসে আমার বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য ফুপা ফুপির কাছে সরি বলেছে। সবাই কেমন জানি পর পর হয়ে গেছে।
ফুপুদের অবস্থাও আমাদের মতো। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। মেয়ের শশুড়বাড়ি ৩০মিনিট দুরত্বে। কিন্তু এই এই দুরত্বটা বছরে দু একবারের বেশি অতিক্রম করার সময় তাদের হয় না। কিন্তু বছরে তিন থেকে চার বারের বেশি তারা ফরেন ট্রিপ দিয়ে আসেন ১০ থেকে ১৫ দিনের জন্য । রিশাদ ভাইয়া থেকেও নেই। আর সাব্বির যতদিন চিটাগং ছিলো ততোদিন এইখানে আসলে সারাদিন রিতু আপুর এইখানেই থাকতো। আমাদের ভাইবোনদের কে ফুপি ফুপা অনেক বেশি আদর করতেন। সেইজন্য মাঝে মধ্যে ছোট ভাইয়া আর সেজো আপু এসে ফুপির বাসায় থাকতো।
ফুপির রুমে গিয়ে দেখি ফুপি সত্যিই অনেক অসুস্থ। একেবারে বিছানায় পরা। খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে। রাগে গজগজ করতে করতে বললাম
-নিজের মেয়ে তো আর মনে কর না। করলে তো আগেই ফোন করে বলতে পারতে যে তুমি অসুস্থ, তাই না। আমি না হয় ভুল করে বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি? দুষ্টু মহিলা।
-তুই চলে আসছিস না, এইবার ঠিক সুস্থ হয়ে যাবো।
-বাড়ি ঘর বানাইছো বড় ঠিকই। কিন্তু পুরো জংগল বানাই রাখছো।
-এখন থেকে এটা তোর সংসার। তোর যেভাবে মনে চায় তুই সেভাবে সাজিয়ে নিস।
-আম্মু রিশাদ ভাইয়া কোথায়? এই পর্যন্ত একবারও দেখি নাই।
কথাটা শুনেই ফুপির মুখটা মলিন হয়ে গেলো। ফুপির কতো কস্ট হয়। এমন হীরের মতো ছেলের জীবনটা নিজের হাতে ধরে শেষ করেছেন বলেই হয়তো।
-আচ্ছা আম্মু উপরতলায় একটা রুম দেখলাম বাইরে থেকে বড় একটা তালা মারা। আবার আর একটা দেখলাম বাইরে থেকে লক করা।
-আর বলিস না। দুটাই রিশাদের রুম।
-উনি দুই রুম দিয়ে করে কি? আর তালা মারা কেন?
-তালা যেটাই মারা সেটাতে আগে থাকতো। রুমে কাউকে ঢুকতে দেয় না। আর যেটা লক করা সেটাতে এখন থাকে মাঝে মাঝে।
-কি বলো! কাউকে ঢুকতে দেয় না? তাহলে রুম পরিস্কার কে করতো।
-কি জানি। রুমের কি অবস্থা সেটা একমাত্র আল্লাহ আর সেই বলতে পারবে।
-তাহলে আমি শিউর যে রুমে আর থাকার মতো অবস্থা নাই তার জন্যে আর এক রুম দখল করছে। আচ্ছা কতদিন ধরে ঢুকতে দেয় না রুমে?
– ৬ বছর।
– ৬ বছর!!!! আমার মুখ হা হয়ে গেলো!!
তোমরা কেউ ঢুকতে চাও নি রুমে?
-যে পরিমাণ চিল্লাচিল্লি করছিলো। এর পর থেকে আর কেউ সাহস করে নাই।
-আম্মু সাব্বির এইখানে থাকে না কেন? সারাদিন রিতু আপুর বাসায় কি? বিয়ে করা বউ রেখে বোনের বাসায় কি?
-রিশাদ একবার সাব্বিরের গায়ে তুলেছিলো।অনেক মেরেছিলো ওরে। এরপর থেকে সাব্বির আর এই বাড়িতে থাকতে চায় না।
-তোমাদের এইটা বাড়ি না সার্কাসখানা? এতো বড় বাড়ি বানাইছো কেন?
– বাড়ি বানানোর সময় কি আর জানতাম এমন যে হবে। তুই এক কাজ করিস ৬টা বাচ্চা কাচ্চা নিবি। সারা ঘর দৌড়াদৌড়ি করবে। তখন আরও মজার মজার সার্কাস হবে।
– মাত্র ৬টা? ধুর আম্মু কি যে বলো না তুমি। আমি তো ভাবছি একটা ফুটবল টিম বানাবো। আর শুনো, বাচ্চা কাচ্চা যা হবে সব কিন্তু তোমাকে বড় করতে হবে। আমাদের ভাইবোনদের বাচ্চা কাচ্চার ঝামেলা দেখে আমি এমনিতেই বিরক্ত হয়ে গেছি।
ফুপি আচ্ছা বলে কি সুন্দর করে হাসতেসে!!!
এই হাসির জন্যে হলেও একটা বাচ্চা পয়দা করতে ইচ্ছে করলো। কিন্তু যার এই বাড়িতে স্থায়িত্বই আর অল্প কয়দিন, তার আর যাই হোক সংসার করার চিন্তা মাথায় আনা উচিত না।
দুদিনে এই বাড়ির হাব ভাব মোটামুটি বুঝে নিয়েছি। সংসারের কাজ ভালোই পারি। পুরো বাড়িটাকে গুছিয়ে মানুষ বানানো শেষ। শুধু রিশাদ ভাইয়ার রুম থুক্কু ময়লার ভাগাড়টা পরিস্কার করা বাকি। একটু মাইর টাইর না হয় খাইলামই ।আরতো বেশিদিন থাকবো না এইখানে। কিন্তু চাবি ছাড়া ঢুকেবো কি করে। চিন্তা করতে হবে। থিংক মেহের থিংক। ফ্রেন্ডরা বলতো দুনিয়ার যতো আকামের বুদ্ধি সব নাকি আমার মাথায় আছে। আর এইটা তো শুধু রুমে ঢুকতে হবে।
ফুপি এখন মোটামুটি সুস্থ। আমি সারাদিন ফুপির পিছন পিছন ঘুরে বেরাই। মাঝে মাঝে জাপটে ধরি পিছন থেকে। ভালোই লাগে। কেমন জানি আম্মু আম্মু একটা স্মেল পাই। ইচ্ছে করে জড়িয়ে ধরে রাতে ঘুমাই। রুমে তো ফ্লোরে থাকা লাগে। শুরুতে মাঝে মধ্যে খাটে নিয়ে যেতো। কিন্তু এখন সকালে উঠে ফ্লোরেই ঘুমাইতেছি। খাটাইশ সাব্বির।
রিশাদ ভাইয়ার সাথে দেখাই হচ্ছে না। কখন যে রুমে ঢুকে আর বের হয় টেরই পাই না। উনার জন্যে টেবিলে খাবার বারা থাকে সবসময়।কখন খায় আল্লাহ জানে।
আজকে খাবার সব উঠিয়ে রেখেছি। দেখি কি করে এবার।
বিকাল ৪টার দিকে রিশাদ ভাইয়ার আম্মা আম্মা বলে চিৎকারে ছুটে গেলাম। আমাকে দেখে চুপ হয়ে গিয়েছে। ইশ কি সুন্দর হয়েছে দেখতে!! সেই আমি ক্লাস ফাইবে থাকতে লাস্ট দেখেছিলাম। তখন ভাইয়া বুয়েটে চান্স পেয়ে আমাদের গ্রামের বাড়িতে এসেছিল। কতো আদর করতো আমাকে।আমি আর ভাইয়া মিলে ক্রিকেট খেলতাম, আমের ভর্তা খেতাম, ভাইয়া গাছে উঠে আম চুরি করতো আর আমি নিচে দাঁড়িয়ে পাহারা দিতাম। কত সুন্দর সুন্দর মেমোরি আছে ভাইয়ার সাথে । মেহনাজ আপুর সাথে কি সুন্দর মানাইতো, ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
সুন্দর করে একটা হাসি দিয়ে জিগ্যেস করলাম
-কিছু লাগবে ভাইয়া?
“না কিছু লাগবে না, তুমি যাও ” বলেই হনহন করে হেটে চলে গেলো।
নাহ এতো সহজে তো দমে গেলে চলবে না। আমার সাথে কেনো জানি মনে হচ্ছে রাগ দেখাবে না।
আধাঘন্টা পরে ট্রেতে করে খাবার নিয়ে ভাইয়ার সেই বিখ্যাত রুমের সামনে গিয়ে নক করলাম। ভাইয়া দরজা খুলে আমাকে দেখে অবাক হয়ে গেলো। আমি উনাকে ঠেলে কিছু বলার আগেই রুমে ঢুকে গেলাম। কিন্তু রুমে ঢুকে বিশ্রী গন্ধকে উপেক্ষা করে চারপাশে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম।
পুরো রুম জুরে মেহনাজ আপুর ছবি। শুধু আপুর না। সাথে আপুর হাসবেন্ড আর বাচ্চা সহ।
।।
।।
চলবে ……