টুকরো স্মৃতির অতলে পর্ব -১১

#টুকরো_স্মৃতির_অতলে❤️
#পর্ব_১১
লেখনীতেঃআহানিতা

‘ প্রথমবার যার প্রতি আমার অনুভূতি জম্মেছিল তাকে আমি কখনো বলেই উঠতে পারিনি যে তাকে আমি ভালোবাসতাম।তাই তাকে শেষ পর্যন্ত হারাতেই হয়েছিল।অন্য একজন তাকে খুব করে ভালোবাসত।আমার থেকেও শত গুণ বেশি।সে জায়গায় আমার ভালোবাসাটা হয়তো অতি নঘন্যই ছিল।তার পরিবার সেই ছেলেটিকেই তার জীবনসঙ্গী হিসেবে বেঁছে নিয়েছিল। তাতে প্রথম দিকে আমি ভেঙ্গে পড়লেও পরে নিজেকে বেশ করেই বুঝিয়ে নিয়েছিলাম আমি।তারপর আস্তে আস্তে তোমার সাথে পরিচয়।তোমার প্রতি প্রথম দিকে আমার কোন আগ্রহ না জম্মালেও একটা সময় পর মনে হলো তুমি ব্যাতীত আর চলছেই নাহ।তারপর একটা সময় পর ধীরে ধীরে ফিল করলাম তুমি আমার প্রতিটা নিঃশ্বাসেই জড়িয়ে যাচ্ছো।তারপরই তোমাকে হারানোর চিন্তায় তীব্র যন্ত্রনা নিয়ে রোজ ঘুরে বেড়িয়েছি।প্রথম বার অনুভূতি প্রকাশ করতে না পেরে যেমন হেরে গিয়েছিলাম এবারও যদি সেভাবেই হারতে হয় সেই ভয়!এবার ও যদি আবার ভেঙ্গে পড়ে নিজেকে শক্ত রাখতে হয়?সেই ভয়!ভালোবাসি।ভালোবাসি তোমায় আহি।ভালোবাসবে কি আমায়?’

রায়হানের কন্ঠ শুনেই বাম দিক ঘুরে মিনমিন করে তাকালাম।ভার্সিটির গেইটের পাশে ফুটপাতে আহি আর রায়হান দাঁড়ানো।আমি মেঘার হাত খামচে ধরেই ইশারা করলাম সেইদিকে।সঙ্গে সঙ্গে সে ও তাকাল সেদিকে।রায়হান আবার ও করুণ চোখে তাকিয়ে বলে উঠল,

‘ আমায় দেখে কি দয়া মায়া কিছুই জম্মে না তোমার?সত্যিই কি এতটুকুও দুঃখ হয় না আমার জন্য?দিনের পর দিন একটা ছেলে তোমায় ভালোবাসি ভালোবাসি বলেই যাচ্ছে নিজের আত্নসম্মান বোধ ভুলে।আর তুমি?তুমি নির্দয়ের মতে প্রতিবারই আমায় ফিরিয়ে দিচ্ছো আহি?সত্যিই কি মায়া জম্মে না আমার জন্য?এটুকুও না?’

আহি ভ্রু জোড়া কুঁচকে তাকাল কেবল।তারপর লম্বা শ্বাস ফেলেই বলল,

‘ আমার মনে হয় আপনি আমার থেকে দূরে থাকলেই ভালো হয় মিঃ ছ্যাঁকাখোর।বারবার এভাবে নিজের আত্নসম্মান ভুলে ভালোবাসি বলার দরকার নেই।ধন্যবাদ।যদি জানতাম এই একই কথাটাই বলার জন্য ডেকেছেন তবে কোনকালেই আসতাম নাহ আমি।’

রায়হানের মুখে এবার অল্প রাগের ছোপ দেখা গেল।আহি কথাগুলো বলেই পাশ কাঁটিয়ে চলে যেতে নিতেই আহির বা হাতটা চেপে ধরল রায়হান।তারপর গম্ভীর চাহনিতে তাকিয়েই বলে উঠল,

‘ এত কিসের অহংবোধ তোমার?কেন আমাকে মানতে এত সমস্যা?কেন রোজ রোজ আমায় এড়িয়ে যাও?কি কারণ?কি কারণে এত কঠিন শাস্তি?’

আহি মৃদু হেসেই বলল,

‘ কোন শাস্তিই নয় মিঃ রায়হান।হাত ছাড়ুন।’

রায়হান হাত ছেড়ে দিল সঙ্গে সঙ্গেই।করুণ চাহনিতে তাকিয়ে আবারও বলল,

‘ কেন আমায় ভালোবাসা যায় না? ‘

‘ ভালোবাসি না বলেই হয়তো ভালোবাসা যায় না। ভালোবাসলে কি আর কোন কারণ লাগত?ভালোবাসা তো বিনা কারণেই হয়ে যায়।’

রায়হান তাচ্ছিল্যমাখা হাসি হাসল। তারপই বলল,

‘ এত সুন্দর ভাবে অপমান বোধ হয় দুনিয়ায় তোমার থেকে ভালো কেউ করতেই পারে নাহ আহি।’

আহি হালকা হাসল।তারপরই বলল,

‘ আমি যদি আপনাকে ভালোবাসি বলি? বেশি খুশি হয়ে যাবেন কি?’

‘ মানে?’

‘ ঠিক এই পর্যন্ত কয়বার ভালোবাসি বলেছেন রায়হান?আমি তো একবারও বলিনি আপনাকে ভালোবাসি।তবুও বারবার নিজেকে নিচু করে এসব বলছেন কেন? নিজের মানটা কেন উঁচু রাখছেন নাহ আপনি?একটা মেয়ের সামনে রোজ এভাবে নিজের মান সম্মানের ফালুদা কেনই বা বানাচ্ছেন? ‘

রায়হান হাসল।তারপরই বলল,

‘ ঐ যে তোমার উত্তরের বিপরীত উত্তর।ভালোবাসি বলেই হয়তো।ভালোবাসি বলেই হয়তো নিজের মান সম্মান খোয়াতে দ্বিতীয়বার ভাবছি নাহ আমি।’

আহি হাসল কেবল। তারপরই বলল,

‘ আগামীতে আমার সামনে আর আসবেন নাহ।প্লিজ! ‘

রায়হান বিস্ময় নিয়ে তাকিয়েই বলল,

‘ কেন?আসলে কি সমস্যা? ‘

আহি মিনমিন চোখে তাকিয়েই বলল,

‘ অনেক সমস্যা।আপনি বুঝবেন নাহ।’

কথাটা বলেই গুঁটিগুঁটি পায়ে এগিয়ে চলল সামনে।রায়হান তাকিয়ে রইল আহির যাওয়ার পানে। আমি আর মেঘা এতক্ষন ওদের আলাপ শুনে এবার ফিক করে হাসলাম।আহিও যে রায়হানকে ভালোবাসে তা বেশ ভালোই জানি।কিন্তু মেয়েটা স্বীকার করছে নাহ।করছে নাহ বললে ভুল, স্বীকার করতেই চাইছে নাহ ও।কিন্তু রায়হান কি এখনো বুঝে নি আহি ওকে ভালোবাসে?বেচারা!আমি আর মেঘা হেসেই পা বাড়ালাম।রায়হানের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই রায়হান হাত এগিয়ে মেঘার দিকে তাকিয়েই বলল,

‘ কনগ্রাচুলেশন এন্ড থেংক্স হারামি।এত তাড়াতাড়ি মামা পদ দখল করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।যদিও সুযোগ হয় নি, আরো অপেক্ষা করতে হচ্ছে।’

মেঘা হাসল।আমি তড়তড়িয়ে বললাম,

‘ আরেহ আরেহ, আমি তো আম্মি হচ্ছি।তুই জাস্ট মামা।বুঝ আমার গুরুত্ব।’

রায়হান তৎক্ষনাৎ সজোরে চাটি মারল আমার মাথায়।ওর লম্বা চওড়া, হ্যাংলা পাতলা শরীরের দিকে মাথা তুলে তাকিয়ে বিরক্তি দেখালাম আমি।কপাল কুঁচকে বললাম,

‘ কথায় কথায় হাত চলে কেন তোর?বেয়াদপ।বিয়ের পর তো বউরে আসতে যাইতে মেরে মেরেই মাইরা ফেলবি।’

মেঘা খিলখিলিয়ে হেসেই বলে উঠল,

‘ এই জন্যই মারের ভয়ে আহি যে তোকে ভালোবাসে এটা স্বীকার করছে নাহ বুঝলি?বেচারিকে যদি আসতে যাইতে মাথায় চাটি মেরে খুন করে দিস? বেচারি সেই ভয়েই আজ পর্যন্ত স্বীকার করল নাহ তোকে যে সে ভালোবাসে।নাকের ডগায় কি সুন্দর ঘুরিয়ে যাচ্ছে। আহা!’

রায়হানের মুখটা এবার মলিন হয়ে এল।পরক্ষনেই আবার চকচক করে উঠল।ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিয়েই বলে উঠল,

‘ আহি আমায় ভালোবাসে স্বীকার করছে নাহ?মানে?ও আমাকে ভালোবাসে নাকি?’

আমি দাঁত কেলিয়ে হেসেই বললাম,

‘ বলতো ভালোবাসে নাকি?’

ও নির্বিকার ভাবেই উত্তর দিল,

‘ অবিয়েসলি নাহ।’

আমি আর মেঘা দুইজনই এবার হেসে উঠলাম এক সাথে।আর রায়হান তখন বেকুবের মতো তাকিয়ে ছিল কেবল।আমাদের দিকে তাকিয়েই ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিয়ে বলে উঠল,

‘ হাসছিস কেন এভাবে?কি এমন বললাম?’

আমি অনেক কষ্টে হাসি থামিয়েই স্থির হয়ে দাঁড়ালাম।তারপর বললাম,

‘ বলদ!আহি তোকে ভালোবাসে। আজ থেকে নাহ।অনেক আগে থেকেই।তুই বলদ এখনো বুঝে উঠতে পারলি নাহ?সত্যিই তুই একটা গর্দভ!’

রায়হান আহাম্মকের মতো চেয়েই বলল,

‘ এতটা শিউর হয়ে কিভাবে বলছিস?ও তো সবসময় ভালোবাসে না বলে। তবে?’

আমি ভাব দেখিয়েই বললাম,

‘ মেয়েরা উল্টোপথে হাঁটতে পছন্দ করে।উল্টো কথা বলতে ভালোবাসে। বাকিটাতো বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব তোর। নাকি?’

কথাটা বলেই হাসলাম। তারপর উল্টোদিকে ফিরে হাঁটা ধরলাম।রায়হান সেভাবেই আহাম্মকের মতো চেয়ে রয়েছে।আমি আরেকবার তাকিয়ে হাসলাম।রিক্সা ডেকে মেঘাকে উঠিয়ে দিয়ে নিজেও আরেকটা রিক্সা ডেকে উঠে বসলাম।উদ্দেশ্য বাসায় যাওয়া।

.

বাসায় এসেই হিমেলের রুমে হালকা উঁকি দিয়েই আবার হাঁটলাম।হিমেল তার মহা গুরুত্বপূর্ণ এডমিশন টেস্ট এর পড়া পড়তে ব্যস্ত।কোথাও চান্স না পেলে সোজা তার পা ভাঙ্গা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আব্বু আম্মুর কাছ থেকে।তারপর বেঁছে বেঁছে হাত, মাথা, কোমড় সব ভাঙ্গা হবে।সেই ভয়েই এখন দিন রাত তাকে পড়ার টেবিলে দেখা যায়। কত মনোযোগী ছাত্র!সারাক্ষন পড়ে!আহা।আমি দু পা পিঁছিয়ে পর্দা সরিয়ে আবারও উঁকি দিলাম।কিছু বলব নাহ ভেবেও এবার বলে উঠলাম দাঁত কেলিয়ে হেসে,

‘ এই? ভালো করে পড়ছিস তো?কয়দিন পর কিন্তু তোর এডমিশন টেস্ট।কোথাও না টিকলে কিন্তু সোজা বাসার বাইরে নয়তো স্ট্যাম্প নিয়ে মারামারি।মাথায় আছে তো?’

হিমেল আমার দিকে বিরক্তিকর চাহনিতে তাকালাম। আমি অদ্ভুত এক আনন্দে হেসে উঠলাম।একটা অন্য রকম আনন্দ পাওয়া যায় ওকে প্রতিদিন এডমিশনের কথা মনে করিয়ে প্যারা দিতে।আহা!হিমেল বোধ হয় এর থেকে চিন্তিত দ্বিতীয় কোন বিষয়ে হয় নাহ।ও আমার দিকে তাকিয়েই তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল,

‘ তোকে বিয়ে দিয়ে বিদায় দিলেই ভালো হতো।উফ!অর্ক ভাইয়া ও নাহ।বিয়ে করবে করবে করেও আবার থেমে বসে।আসলে কি বলতো?তোর মতো ডাইনিকে দেখেই ভয় পেয়েছে ভাইয়া।এই জন্যই বিয়ে করবে করবে করেও বারবার ভাবছে করবে কিনা। তোর মতো পেত্নীকে বিয়ে করে তার বাকি জীবনটা যে ত্যাজপাতা হবে উনি বেশ বুঝে গিয়েছেন বুঝলি?’

আমি ওর থেকে দ্বিগুণ বিরক্ত হলাম।কপাল কুঁচকে ওর দিকে তীক্ষ্ণ চাহনিতে তাকিয়েই কিছু বললাম নাহ। সোজা পা বাড়িয়ে বেরিয়ে আসলাম সেইখান থেকে।সঙ্গে সঙ্গেই কলিং বেল বাঁজল।আমি বিরক্ত নিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে পা বাড়ালাম।দরজা খুলতেই অপরিচিত একটা লোককে পার্সেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই ভ্রু জোড়া কুঁচকে তার দিকে তাকালাম।ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়েই প্রশ্ন ছুড়লেন,

‘ মেহেরিন মেহুল কে?আছেন?’

আমি ভ্রু জোড়া আরো কিছুটা কুঁচকে নিলাম এইবার।পরমুহুর্তে ভ্রু শিতীল সোজা করে মৃদু হাসার চেষ্টা করে বললাম,

‘ জ্বী।আমিই মেহেরিন মেহুল।কেন?’

উনি নির্বিকার ভাবে বললেন,

‘ আপনার নামে একটা পার্সেল এসেছে।’

আমি ভ্রু জোড়া সেভাবে কুঁচকেই তাকালাম।উনি পার্সেলটা এগিয়ে দিয়ে সৌজন্যতার হাসি হাসল।আমি হ্যাবলার মতো তাকিয়ে পার্সেলটা হাতে নিলাম কেবল।তারপর ভাবতে লাগলাম, কে পাঠাল পার্সেলটা?কি আছে এর ভেতর?কেনই বা পাঠাল?

.

পার্সেলটা খুলেই হতবাক হয়ে চেয়ে রইলাম আমি।কালো রংয়ের লাল টকটকে পাড়ের শাড়ি।সাথে কালো আর লাল কাঁচের চুড়ি আর নুপুর।তার নিচেই একটা খাম। আমি খামটার দিকে বিস্ময় নিয়ে কিছুটা সময় চেয়ে থেকে তীব্র কৌতুহল নিয়ে খামটা ছিড়ে বসলাম।সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে আসল কয়েক খানা চিরকুট।আমি হতবিহ্বল চাহনিতে তাকিয়েই প্রথম চিরকুটটা মেলে ধরলাম,

‘মেহুলতা,

সেইদিন তীব্র হতাশা নিয়েই বাড়ি ফিরেছিলাম আমি যেইদিন তুমি রাতের অন্ধকারে ছাদে একা দাঁড়িয়ে ছিলে।সেইদিন তোমার পরনে শাড়ি ছিল।জানি নাহ সেইদিন কেন তুমি শাড়ি পরেছিলে।কোন নির্দিষ্ট কারণ ছিল কিনা তার।তবে সেইদিন তোমায় সত্যিই খুব কাছ থেকে দেখার ইচ্ছে ছিল মেহুলতা।দিনের সবটুকু কাজ শেষ করে তীব্র ক্লান্তি নিয়ে যখন রাতে তোমার বাসার সামনে উপস্থিত হই তোমাকে ছাদে কিংবা বেলকনি কিংবা জানালার একধারে দেখার আশায়, তোমাকে দেখতে পেলেই যেন আমার ক্লান্তির অবসান ঘটত।তুমি কি বুঝতে তুমি কারো ক্লান্ততার অবসানে যথেষ্ট?জানো?সেইদিন শাড়িতে যখন ছাদে দাঁড়িয়ে তুমি আকাশ দেখায় মগ্ন?আমি তখন তীব্র নেশা নিয়ে তোমার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম।ইশ!সেইদিন বোধ হয় নতুনভাবেই খুন হয়েছিলাম আমি তোমার প্রেমে।শোনো?একবার কি আমার সামনে শাড়ি, চুড়ির রিনিঝিনি আওয়াজ,নুপুরের শব্দ, বেলিফুলের সুভাস আর কালো কাজলের হাজার মায়া নিয়ে উপস্থিত হবে আমার সামনে?আমার দিকে লাজুকতা নিয়ে না তাকাতে পারলে নেই।মাথা নিচু করে, লজ্জ্বারাঙ্গা মুখটা নিয়ে একবার বলবে কি তুমি “ভালোবাসি”?

ইতি,
তুমি যাকে ভালোবাসো।’

আমি স্তব্ধ হয়ে চাইলাম কেবল।প্রত্যেকটা লাইন পড়ার সময় অদ্ভুত শিহরনে কেঁপে উঠল আমার ভেতরটা।কি অদ্ভুত অনুভূতি। মুখচোখ নিজে থেকেই বোধ হয় লাল হয়ে উঠল।সত্যিই কি লজ্জ্বারাঙ্গা হয়ে যাচ্ছি আমি তবে?লজ্জ্বা পাচ্ছি?খুশি কি আনন্দে চোখজোড়া বন্ধ রেখেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটালাম।অদ্ভুত ভালো লাগায় আমার মন ছুঁয়ে গেল যেন।চোখ মেলে কাঁপা হাতে দ্বিতীয় চিরকুটটাও মেলে ধরলাম এবার,

‘মেহুলতা,
জানো? তোমায় না পাওয়ার তীব্র কষ্টে তীব্র অসুখ করেছে আমার।আচ্ছা তুমি এতোটাই কি নিষ্ঠুর?আমার দুঃখ, কষ্ট কিছু ই কি চোখে পড়ে নাহ তোমার?এই যে দীর্ঘদিন হয়ে গেল তোমায় আমি দূর থেকে দেখেই বুক চেপে ধরেছি, নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার মতো অনুভূতিতে মাতাল হয়েছি, নিজের চোখজোড়াকে দূর থেকে দেখে চলে আসাতেই বাধ্য করেছি তুমি তার এটুকুও টের পাও নি মেহুলতা?এটুকুও নাহ?’

আমি এবার তৃতীয় চিরকুটটা মেললাম,

‘ মেহুলতা?আচ্ছা তুমি কি শুনতে পাও আমায়?অনুভব করো আমায়?কল্পনায় দেখতে পাও কি আমায়?জানো?আমি কিন্তু তোমায় রোজ দেখি কল্পনা কিংবা বাস্তব।আমি কিন্তু তোমায় রোজ শুনতে পাই।আমি কিন্তু তোমায় রোজ অনুভব করি মেহুলতা।সে অনুভবে মাতাল হয়েই পাগলপ্রায় এখন।বলোতো? এর কি কোনই সমাধাণ নেই?এই অনুভূতি কি কোনভাবে ভোলা যায় মেহুলতা?’

আমি চোখ বন্ধ করলাম।এভাবে বেরিয়ে আসল একের পর এক আরো বেশ কয়েকটা চিরকুট।সবগুলোর উল্টোপিঠেই তারিখ সহ মাস লেখা ছিল।শেষের চিঠিটা নিয়েই আগে উল্টোপাশ দেখলাম। তারিখটা আজকের।তার মানে চিঠিটা আজ লিখেছেন?আমি হালকা নিঃশ্বাস ফেলেই অপরপাশ উল্টে পড়লাম,

‘ মেহুলতা,

সকালবেলা আধো ঘুম ভাঙ্গতে না ভাঙ্গতেই যখন প্রিয় মুখটা চোখের সামনে উপস্থিত দেখি তখন কি আনন্দানুভূতি হয়? নাকি হৃদয়ে অদ্ভুত অনুভূতিতে হৃৎপিন্ড লাফিয়ে উঠে?শোনো, আমার সামনে এলোমেলো অগোছাল চুল নিয়ে হাজির না হলেই কি হতো না মেহুলতা?এভাবে একটা যুবকের হত্যা করতে পারলে তুমি?ঠিক সেই মুহুর্ত, যখন কানে তোমার কন্ঠ এল, চোখ খুলেই যখন মাথায় সাদা ওড়না পেঁছানো আর এলেমেলো চুলে তোমায় দেখলাম। তুমি জানো খুন হয়েছি আমি সেই মুহুর্তে?উহ!এত সাতসকালে এভাবে চমকে না দিলেই কি পারতে নাহ?দীর্ঘ একবছরের অপেক্ষার পর যখন তুমি আমার সামনে সেইদিন হাজির হলে বোধ হয় তার থেকেও দ্বিগুণ আনন্দিত হয়েছি আমি। আচ্ছা তুমি কি এমনই?অপর পাশের মানুষটার কথা কি এটুকু ও ভাবো না তুমি?এতই পাষাণ!শোনো?একবার আসবে আমার সামনে?বলবে “ভালোবাসি”?

আমি এবার কাঁপা হাতে সবগুলো চিরকুটই ঠেলে সরিয়ে রাখলাম।হাত পা কাঁপছে।এত অনুভূতি কি সওয়া যায়?অনুভুতিরাও কি লাজুক হলো তবে?লজ্জ্বায় এভাবে মিশে যেতে মন চাইছে কেন।উনি আমায় পাষাণ বলে নিজেই কি পাষাণ হয়ে গেলেন না?এভাবে আমায় লজ্জ্বায় না পেলে তীব্র অানন্দানুভূতি দিয়ে খুন না করলেও তো পারতেন।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here