#ডার্ক ডায়মন্ড
#আফরিন ইভা
#পর্ব-১৫
_______________
-মীরা চোখ বন্ধ করে আবার তাকালো, মীরা স্পষ্ট দেখতে পেলো ছবির সেই কালো হুডি পড়া অর্ধ মানব টা, বাতাসের বেগে দ্রুত দৌড়াচ্ছে।
মীরা তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় ভ্যামপায়ার টা চোখের আড়াল হয়ে গেলো।
মীরা চারদিকে তাকিয়ে বেশ কিছুক্ষণ খুঁজলো কিন্তু কোথাও পেলো না।
-সান্ড্রা মীরার কাঁধে হাত রাখলো।
-মীরা কারো স্পর্শে চমকে উঠলো, পাশে তাকিয়ে দেখলো সান্ড্রা ।
-সান্ড্রা মীরার ভয়ার্ত মুখ দেখে জিজ্ঞেস করলো কোনো প্রবলেম মীরা?
– মীরা মুখে হাসি ফুটিয়ে সান্ড্রার দিকে তাকিয়ে বললো কিছু না।
-সান্ড্রা মুখে হাসি ফুটিয়ে ড্রাইভে মনোযোগ দিলো।
– মীরা ভার্সিটির গেইটে প্রবেশ করে চারদিকে তাকাচ্ছে, মীরার অদম্য মন কাউকে যেনো দু’চোখ দিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। বার-বার সে-ই ভ্যামপায়ার কে-ই মনে পরছে মীরার।
মীরা হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিলে কেউ একজন ধরে ফেলে।
মীরা চোখ বন্ধ করে রেখেছে ভয়ে।
মীরা চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো ভার্সিটির নিউ প্রফেসর এন্ড্রে মেথিস। সেই চোখ সেই নাক, যাঁর প্রেমে পড়েছে মীরা বার-বার।
যে একতরফা প্রেম মীরা চাইলেও ভুলতে পারছে না কিছুতেই।
সেই রুদ্র ভাইয়ের প্রেমে মীরা এখনো হারায় বার-বার।
.
মীরা তারাতাড়ি মেথিস থেকে সরে দাঁড়ালো। মেথিস কে মীরা সরি বললো।
-মেথিস মীরার দিকে এক নজর তাকিয়ে ইট’স ওকে বলে চলে গেলো।
-মীরা মুগ্ধ হয়ে মেথিসের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।
মীরা রুদ্র ভাইয়ের কথা মনে করে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে বললো, রুদ্র ভাই আপনি না হলেও সেই অজান্তেই আমাকে জ্বালাতে এসেছেন ভিনদেশে।
আপনার মতো দেখতে কারো একজন কে আপনি মনে করেই ভালোবাসতে ইচ্ছে করে বার-বার।
আসলে আমাদের মতো মেয়ে মানুষ গুলো বড্ড অবুঝ।
তাঁরা কাঁচের টুকরোর মতো ভেঙে গেলেও নিজেকে গড়তে চায় বার-বার।
মীরা মুখে অভীমানে আবিষ্ট হয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে চলে গেলো ক্লাস রুমে।
__________________
-সানা মীরার হাত টেনে নিজের সাথে বসালো।
-মীরাও চেয়েছিলো যেনো সানার সাথে যে করেই আজ দেখা হয়ে যাক।
-মীরা সানা কে কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় কেবিন ক্রুজ এসে ক্লাসে ঢুকলো।
-মীরা একটা জিনিস খেয়াল করলো কেবিন ক্রুজ খুবি রাগী বদমেজাজী। একে একে সবার সাথে খারাপ ব্যাবহার করছে।
-কেবিন ক্রুজ মীরার সামনে এসে দাঁড়ালো।
-মীরা খেয়াল করলো কেবিন ক্রুজ মীরার সাথে খুবি ভালো আচরণ করছে।
সবার সাথে এক কিন্তু মীরার সাথে আরেক।
বিষয়টা মীরা কে বড্ড বেশি চিন্তায় ফেলে দিলো।
-কেবিন ক্রুজের পরপরই নিউ প্রফেসর এন্ড্রে মেথিস এসে ক্লাসে প্রবেশ করলো।
-সবাই দাঁড়িয়ে মেথিস কে সম্মান জানালো।
-মেথিস সবার সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বললো।
-মেথিস কে মীরার কাছে কেমন যেনো লাগছে।
চেহারায় হুবহু মিল থাকলেও রুদ্র ভাইয়ের আচরণের কোনো ছোঁয়া মেথিসের মধ্যে নেই।
-মীরা কিছুতেই কিছু বুঝতে পারছেনা। মেথিস কে কী তাঁর চারিত্রিক গুণাবলীর জন্য ভালো লাগছে, না-কি রুদ্র ভাই ভেবে ভালো লাগছে কিছুই যেনো বুঝে উঠতে পারছে না।
– নিউ প্রফেসর মেথিস আজ সবাই কে একটা খুশির সংবাদ দিয়ে গেলো, ভার্সিটি থেকে আগামী সপ্তাহে সবাই একসাথে ট্যুরে যাবে।
.
এই সংবাদ শুনে মীরা সহ সবাই খুশি হলো
_________________
ক্লাস শেষে মীরা সানা কে বললো সানা তোমার সাথে আমার খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা কথা আছে।
– সানা মীরার চিন্তিত মুখ দেখে বললো, মীরা তোমাকে খুব বিচলিত দেখাচ্ছে। আমি তোমার ফ্রেন্ড, তুমি নির্ভয়ে বলতে পারো।
.
মীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সানার হাত ধরে বললো, সানা আমি গ্র্যান্ডপার সাথে দেখা করতে চাই।
উনাকে আমার কিছু কথা জিজ্ঞেস করবার আছে।
.
সানা চিন্তিত মুখে মীরা কে বললো, ঠিক আছে, গ্র্যান্ডপা আজ ফ্রী আছে চাইলে উনি তোমাকে সময় দিতে পারবেন।
.
মীরা মুখে হাসি ফুটিয়ে সানার সাথে সানা দের প্যালেসে গেলো।
মীরা গ্র্যান্ডপার রুমের সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো।
মীরার কেমন ভয় ভয় লাগছে।
কিন্তু এদিকে মীরার যে দম বন্ধ হয়ে আসছে। কিছু কথা জানবার আছে গ্র্যান্ডপার কাছ থেকে।
মীরা আর দেরি না করে গ্র্যান্ডপার রুমে প্রবেশ করলো।
মীরা তাকিয়ে দেখলো গ্র্যান্ডপা একটা ছবিতে হাত বুলচ্ছে। আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।
.
-মীরা অবাক হলো, একে তো গ্র্যান্ডপা কাঁদছে তাঁর উপর আবার ঐ যে ঐদিন কার ছবি টার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কাঁদছে।
যে ছবিটায় দু’টো ভ্যামপায়ার, একটা মেয়ে ভ্যামপায়ার আর একটা ছেলে ভ্যামপায়ার।
মীরা বুঝতে পারছে না, ঐ দিন এ ছবিটা কেনো জানি মীরা কেও বার-বার বড্ড বেশি ভাবিয়েছিল।
মীরা গ্র্যান্ডপা বলে ডেকে উঠলো।
–
গ্র্যান্ডপা সাথে সাথে পেছনে তাকিয়ে চোখ মুছে ফেললো।
-মীরা গ্র্যান্ডপার চোখের জল দেখতে পেয়েও না দেখার ভানে থাকলো।
মীরা গ্র্যান্ডপার কাছে এগিয়ে গেলো।
গ্র্যান্ডপার দিকে তাকিয়ে কিছুটা বিচলিত স্বরে বললো, গ্র্যান্ডপা আমার কিছু কথা জানবার ছিলো।
হয়তো আপনাকে এই অসময়ে বিরক্ত করতে চলে এলাম।
– গ্র্যান্ডপা মীরার দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হেঁসে ইংলিশে বললো,কি যে বলো আমার কাছে আসতে তোমাকে সময় হিসেব করতে হবে কেনো। সানার গ্র্যান্ডপা মানেই তোমার গ্র্যান্ডপা। এখন বলো কি জানতে চাইছো?
” গ্র্যান্ডপার কথায় মীরা যেনো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
মীরা দম নিয়ে বলতে লাগলো, গ্র্যান্ডপা আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আমি নিজেকে যা মনে করছি মোটেই আমি তা নয়।
– গ্র্যান্ডপা স্থির হয়ে মীরার দিকে তাকালো।
” মীরা আবার বলতে শুরু করলো, তাছাড়া আমার কেনো জানি মনে হয় কেউ আমার জন্য প্রতীক্ষায় আছে, যাকে আমি দেখতে পাচ্ছি না কিন্তু ঠিকই অনুভব করতে পারছি। কেউ যে সারাক্ষণ আড়াল থেকে আমাকে দেখে যাচ্ছে তা ঠিকই আমি আমার তৃতীয় চোখ দ্বারা বুঝতে পারি। ”
– গ্র্যান্ডপা আবার নিজের মুখ খুললো, এবং বলতে শুরু করলো, কে শুধু তোমাকে আড়াল থেকে দেখছেই না রক্ষাও করছে। আবার কেউ কেউ হয়তো তোমার ক্ষতিও করতে চাইছে, কিন্তু পারছেনা।
-গ্র্যান্ডপার কথায় মীরা অবাক হলো।
মীরা ভাবছে গ্র্যান্ডপা এতোসব বুঝলো কি করে!
তাহলে তো উনি নিশ্চয়ই কোন সাধারণ মানুষ নন।
“মীরার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে গ্র্যান্ডপা মুখে রহস্যময় হাসি ফুটিয়ে বললো, চিন্তা করো না, সময় হলে তুমিও বুঝতে পারবে এতোসব বুঝলাম কি করে?
– মীরা ঢোক গিলে গ্র্যান্ড পা কে শুধু ঐ অর্ধ মানবের ছবিটা দেখিয়ে এটুকুই জিজ্ঞেস করলো, গ্র্যান্ড পা ছবির মানব টা কি হয় আপনার?
– গ্র্যান্ডপা মীরার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে জবাব দিলো ও আমার গ্রেন্ডসন।
– মীরা আর কিছু বলতে যাবে এমন সময় গ্র্যান্ডপা হাত দিয়ে ইশারায় মীরা কে থামতে বললো।
– মীরা তবুও বলতে চেষ্টা করলে, গ্র্যান্ডপা মীরার দিকে তাকিয়ে বললো, এখন আসতে পারো।
এখন আমি আর তোমাকে সময় দিতে পারবো না।
– মীরাও আর কিছু না বলে গ্র্যান্ডপার দিকে একনজর তাকিয়ে চলে এলো।
_______________________
-মীরা মন খারাপ করে বসে আছে রুমে।
অর্ধ মানবটা কে মীরা বাস্তবেও দেখেছে ভেবে মনে মনে অবাক হচ্ছে।
গ্র্যান্ডপার বলা কথাগুলো নিয়ে ভাবছে মীরা।
মীরা এটা ভেবেই অবাক হচ্ছে, উনি একজন মানুষ হয়ে কিভাবে একজন ভ্যামপায়ারের গ্র্যান্ডপা হতে পারেন সেটাই ভাবাচ্ছে মীরা কে।
তাছাড়া গ্র্যান্ডপার শেষের কথাগুলো মীরার বুকে এসে লাগলো।
যা ব্যাথার সুচ হয়ে গাঁথল।
মীরা শেষের কথাগুলো শুনে এটাই বুঝতে পারলো গ্র্যান্ডপা তাঁর গ্র্যানসন সম্পর্কে কিছুই বলতে চাইছেন না।
গ্র্যান্ডপা কোনোই বা বললো কেউ একজন আমার জন্য আড়াল থেকে যেমন উপকার করছে, আবার কেউ একজন আমার ক্ষতিও চাইছে এমনকি প্রাণও নিতে চাইছে।
কথাগুলো মনে পড়ে মীরার গলা শুকিয়ে আসছে।
– সান্ড্রা মীরার রুমে আসলো।
– মীরা সান্ড্রা কে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
– সান্ড্রা মীরার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো মীরা মা’ই ডটার্স তুমি কি আবারও ভয়ানক কোনো স্বপ্ন দেখেছো?
– সান্ড্রার কথায় মীরা না বোধক মাথা নাড়লো।
– সান্ড্রা মীরা কে অভয় দিয়ে ইংলিশে বললো মা’ই ডটার্স ডোন্ট ওয়ারী, সময় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমিয়ে পড়।
.
– মীরা সান্ড্রার কথায় আর দেরি না করে শুয়ে পরলো।
শরীরটা আজ যেমন ক্লান্ত মনটাও বড্ড বেশি এলোমেলো।
মীরা ভাবছে একটা কথাই, শুধু সবাই বলছে সময় হলেই বুঝবে। কিন্তু কিছুতেই মীরা ভেবে পাচ্ছে না সময়টা ঠিক কখন হবে, আর সবাই মীরার সময়টা সম্পর্কে কিভাবে জানে সেটাই মীরা কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না। আস্তে আস্তে মীরা চোখ বন্ধ করে গভীর ঘুমপুরিতে হারিয়ে গেলো।
.
-হঠাৎ ধস্তাধস্তির শব্দ মীরার কানে এসে বাজতে লাগলো।
মীরা চোখ মেলে তাকাতে চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই পারছে না।
.
শব্দের বেগ আরো বেশি বাড়তে লাগলো, এবার মীরা আর চোখ না মেলে থাকতে না পেরে চোখ মেলে বারান্দার দিকে তাকালো।
-মীরা বারান্দায় তাকিয়ে যা দেখলো চোখ দু’টো ছানাবড়া করে ফেললো।
– মীরা ঘুম ঘুম চোখে চোখ বন্ধ করে আবার চোখ খুলে তাকালো, মীরা স্পষ্ট দেখতে পেলো, দু’টো অবয়ব খুব তোরজোর করে ধস্তাধস্তি করছে।
চলবে—–
বিদ্রঃ খুব শীঘ্রই অবয়ব গুলোর সাথে পরিচয় করাবো।
৪তারিখ আবার গল্প আসবে ইনশাআল্লাহ।
অনেকদিন পর গল্প দিলাম সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন আশা করি। সবাই গ্রুপে এড হয়ে নিবেন।