ডার্ক হাউজ পর্ব -০৭ ও শেষ

ডার্ক_হাউজ
পর্ব_৭_এবং_শেষ
লেখা_মৌসুমি আক্তার

ডায়রিটা হাতে নিয়ে আমি খুলে পড়া শুরু করলাম।

” তুই আমার জন্য অনেক অপেক্ষা করেছিস তাই না মৌ। আমি আসতে পারিনি আমি আসার মতো অবস্থায় ছিলাম না। আমি কেন আসতে পারিনি জানিস আমার জীবনের সবথেকে ভয়ঙ্কর জিনিসটা সেদিন আমি দেখেছি। তাসনিমকে আমি আমার নিজের প্রাণের থেকেও বেশি ভালবাসতাম কিন্তু তাসনিম আমাকে কখনোই ভালোবাসেনি। তাসনিম আমার সাথে সম্পর্ক থাকা অবস্থায় রেজওয়ানের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে। শুধু সম্পর্কে জড়িয়েছে সেটা হলেও স্বাভাবিক ছিল আমি যখন তাসনিমকে ওর বাসায় আনতে যায় তখন ওর রুমের বাইরে একটা ছেলেদের জুতা দেখতে পায়। তারপর ওর জানালার একটা ছিদ্র দিয়ে উঁকি মেরে দেখি দুজনের খুব বিশ্রী রকম ঘনিষ্ঠ অবস্থা। আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গিয়েছিল। জানিস আমি বিয়ের পোশাকে দাঁড়িয়ে যখন আমার হবু স্ত্রীকে এমন জঘন্য অবস্থায়ে দেখছিলাম তখন আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। এটুকু হলেও ঠিক ছিল কিন্তু ওরা বলাবলি করছিল যে আমাকে বিয়ে করে তাসনিম আমার সম্পত্তি ওর নামে করে নিয়ে তারপর আমাকে ডিভোর্স দিয়ে রেজওয়ানের সাথে চলে আসবে। ওদের সম্পর্ক নাকি অনেক আগে থেকেই ছিল শুধুমাত্র আমাকে ঠকাবে বলে ওরা দুজনে প্ল্যান করে তাসমীন আমার সাথে সম্পর্কে জড়ায়। ওরা দুজন এতটাই ধূর্ত ছিল যে আমি যদি ওদের সম্পর্কের কথা কখনো জেনে গিয়ে দূরে সরে যায় তাই তাসনিম আগে থেকেই ওর সব প্ল্যান করে রেখেছিল। বিশ্বাস কর আমি যখন অনুভব উপলব্ধি করতে পেরেছি তুই আমাকে ভালবাসিস কিন্তু আমি যে তোর কাছে ফিরে যাবো সে মুখ আমার ছিলনা। কি বলে তোর ভালোবাসার সম্মতি আমি দিতাম? কারণ আমি যে অপবিত্র। আমার শরীর অন্য একটা মেয়েকে দিয়ে দিয়েছিলাম? আমি মাঝরাস্তায় এলে আমার ফোনে একটা ভিডিও পাঠায় রেজওয়ান ভিডিওতে তাসনিমের মুখ বুঝা যাচ্ছেনা আমার মুখ সম্পূর্ণ ক্লিয়ার বুঝা যাচ্ছে। এমন ভাবে এডিটিং করা যেখানে সম্পূর্ণ আমাকে ফাঁসানো হয়েছিল। ওই কয়েকদিনে আমি সম্পূর্ণ ডিপ্রেশনে চলে যায়। ওদের দাবি থাকে আমি যেন তাসনিম কে বিয়ে করি কিন্তু আমি জানি, যে আমাকে ভালবাসে না তাকে বিয়ে করব কিভাবে আমি। আর যার অন্যের সাথে সম্পর্ক আছে তাকে কিভাবে আমি বিয়ে করি। আমি তোর রুমের সাইডে যে আমাদের আরেকটা ফ্ল্যাট আছে ওই ফ্ল্যাটে কিছুদিন থাকা শুরু করেছিলাম কেন জানিস? আমার সাথে হুটহাট তাসনিম রেজওয়ান দেখা করতে আসত আর আমার সাথে জঘন্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করত বাবা-মার সাথে থাকলে ওরা হয়তো বিষয়টা জেনে যাবে অনেক কষ্ট পাবে।ওরা প্রচুর টাকা নিতো।একটা সময় আমাকে নিঃস্ব করে দেই। আমার কাছে আর কোনো টাকা ছিলো না। একদিন রাতে ওরা আমার ফ্লাটে এসে সমস্ত লাইট অফ করে দেয় দিয়ে আমাকে মৃত্যুপুরীর ভয় দেখায়। তাসনিম, রেজওয়ান আমাকে বলে দেখ এই অন্ধকার কত সুন্দর লাগছে যখন তুই মরে যাবি কবরে এই রুমের মতোই হয়ে যাবে তার আগে তুই তোর সমস্ত সম্পত্তি আমাদের নামে লিখে দে। আমি আমার মা-বাবা আত্মীয়-স্বজন সবাইকে ফাকি দিয়ে কিভাবে সম্পত্তি লিখে দিতাম বল আমি এটাতে রাজি না হওয়ায় ওরা আমাদের সমস্ত পরিচিত বন্ধুদের মাঝে ভিডিওর কিছু কিছু অংশ শেয়ার করে দিয়েছিল। বন্ধু মহল আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করত আমি সবসময়ই গুটিসুটি মেরে অন্ধকার ঘরের মাঝে বসে থাকতাম। তখন আমার ইচ্ছা করছিল বাঁচতে ভীষণ ভাবে বাঁচতে ইচ্ছে করছিল আর চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে করছিলো আমি তোকে ভালোবাসি। আমি তখন আমার মা বাবাকে বলেছিলাম ওর সাথে আমাকে আজকেই বিয়ে দাও কিন্তু ওরা লেট করতে চাই লেট করার মত টাইম আমার হাতে ছিল না। আমি জানি তোর সাথে আমার বিয়ে হলে আমাকে ঠিকই বাঁচিয়ে নিতে পারতি। হয়তো আমার গালে দুইটা থাপ্পড় মারতি তবুও তুই আমাকে ক্ষমা করে দিতি আমি জানি। ডাইরিটা তুই আমার রুমে যখন আসবি তখনই পাবি আমি জানি ডায়রি পড়লে তুই সব বুঝবি। ডায়রি কেন লিখলাম জানিস আমি মুখে এসব কথা তোকে বলতে পারছিলাম না তাই লিখলাম যাতে এগুলো পড়লে তুই অন্তত আমাকে বুঝতে পারিস।

ডায়রি পড়ার পর আমি হুহু করে কেঁদে উঠলাম অর্ণব কতটা অসহায় অবস্থায় ছিল কতটা ছটফট করেছিল বাঁচার জন্য। কিন্তু ডাইরিতে তো আর কিছু লেখা নেই। তারপর অর্নব সুইসাইড কিভাবে করলো কিছুই তো জানতে পারলাম না।

আমি এগিয়ে গিয়ে তাসনিমের দুই গালে দুটো চড় মারলাম মেরে বললাম ডাইনি কালনাগিনি এত লোভ তোর সম্পত্তির। এতটা ভাল মানুষের অভিনয় করে থাকিস তুই এতটা জঘন্য তুই আমি তোকে পুলিশে দিব। বলে যখন আমি ওখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করি তখন তাসনিম পেছন থেকে টেনে ধরে আমার গলা চেপে ধরে। আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে যাবে এমন অবস্থায় হঠাৎ করে অর্নব এর আত্মা এসে হাজির হয়। পুরো মুখ সাদা ধবধবে ফর্সা শরীর টা কালো কুচকুচে দেখা যাচ্ছে সাদা ধবধবে মুখ মনে আচ্ছা আটা লাগানো চোখ আগুনের মতো হাতের নখ বড় বড়।

ধারালো নখ দিয়ে তাসনিমের দুই গাল কেটে দেই।গালে হাজার হাজার আঁচড় দেই। মুখ কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ে।

আমি অর্ণবকে দেখে বলি অর্ণব তুমি কি আমাকে মেরে ফেলতে চাও। অর্নব বলে আমি তোকে মারতে চাই না আমিতো তোকে এই ডাইনির হাত থেকে বাঁচাতে এসেছি।

তাহলে তুই কেন সুইসাইড করেছিল তুই কেন আমার কাছে এলিনা।

আমি কেন সুইসাইড করবো। আমাকে এরা মেরে ফেলেছে।আমি রাতে শুয়ে ছিলাম এরা দুজন আমার ফ্লাটে এসে সমস্ত রুমের লাইট অফ করে পুরো ফ্লাট অন্ধকার করে ফেলে। তখন ওরা আমাকে বলে এই ডার্ক হাউজ থেকে আসল ডার্ক হাউজে চলো। তখন ওরা দুজন আমাকে আত্মার ভয় দেখিয়ে বলে আমরা ডার্ক হাউজের মানুষ তোকে নিতে এসেছি। বলে আমার গলায় রশি দিয়ে আমাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়।এরাই আমাকে মেরেছিলো।

তাইতো আমি কাউকে মারে নি শুধু তোর সাথে বারবার দেখা দিয়েছিলাম যাতে তুই বুঝতে পারিস আমার সাথে খারাপ কিছু ঘটে ছিল কিন্তু তুমি তো আমাকে ভয় পাচ্ছিলে। রেজওয়ানকে আমি হসপিটালে মেরে এসেছি আর বাদ আছিস তুই তাসনিম।অর্ণব তাসনিমের চোখেমুখে নাক সমস্ত শরীর তার ধারালো নখ দিয়ে কেটে দেয় তাসনিম রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করতে থাকে। শুকনো মরিচের গুঁড়া ও লবণ দিয়ে তাসনিমের রক্তাক্ত শরীরে লাগিয়ে দেয় অর্নব। তাসনিম আমার কাছে বারবার প্রাণভিক্ষা চায়। অর্নব এর কাছে বারবার প্রাণ ভিক্ষা চায় কিন্তু অর্নব তাসনিমের প্রাণ ভিক্ষা দেয়না তাসনিমের গলা ধরে উঁচু করে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে দেই।

কাঁদতে কাঁদতে অর্ণবের আত্মা বিলীন হয়ে যায়। অর্নব এর আত্মা হয়তো এবার মুক্তি পেয়ে গেছে।

হঠাৎ স্টোর রুম থেকে রেদওয়ান বেরিয়ে আসে। রেদওয়ান এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি বলি তুমি। রেদোয়ান বলে আমি সব জানি আমাকে কিছুই বলতে হবেনা অর্ণব আমাকে ঘরের একটা রুমে আটকে রেখেছিল আমি কোথাও গেছিলাম না। আমি সব কিছুই জানি তাসনিম আর ভাইয়া তাদের পাপের শাস্তি পেয়ে গেছে। ভালোবাসার মানুষের সাথে বেইমানি করলে প্রত্যেকেরই এমন শাস্তি হওয়া উচিত। পৃথিবীতে সব কিছুরই বিচার হয় শুধু মন ভাঙার বেঈমানির কোন বিচার হয় না। তাদের এমন ভয়ানক শাস্তি উচিত। আমি জানি অর্নব কে তুমি ভালোবাসো কিন্তু অর্নব আজ নেই তাই ওর ভালবাসা তোমার মনের সারাজীবন সম্মানের স্থানে থাকুক।

তবে আমি চেষ্টা করবো তোমাকে অর্নবের মতো ভালোবাসতে না পারলেও তোমাকে ভালোবাসার চেষ্টা করব। তোমার জীবনে যাতে ভালোবাসার অভাব না হয় সে চেষ্টাই আমি করব। অর্ণবকে ভুলে যেতে হবে না তবে আমার ভালোবাসায় ভালো রাখার চেষ্টা করব। অর্ণব বেঁচে থাকুক তোমার আর আমার মাঝে স্মৃতি হয়ে।

সমাপ্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here