#তনুশ্রী
#লেখক:হৃদয় আহমেদ
#পর্ব_১৭।।শেষ পর্ব।।
১৯৮৪ সাল! পেড়িয়ে গেছে ছয় ছয়টা বছর। ভোররাতে তনুর ঘুম ভেঙে যায়। প্রতিরাতেই সে অনুভব করে পাশে কেউ আছে! তবুও চোখ বুলায় তনু। ফাঁকা! তূরের স্হান কেউ নিতে পারেনি! আজানের ধন্যি কানে আসতেই বিছানা ছাড়ে তনু। কলপাড় থেকে অজু করে সালাত সেরে নেয়। কুরআন করীম তিলাওয়াত করে ঢলে পড়ে কান্নায়। আজ তনু পূর্ন যুবতী! তেরো বছরের দায়েই তো তূর কখনো হাত দেয়নি! তূরের সাজা হয় পুরো ছয় বছর। ইশয়াখ আর মইনুলের হয় দ্বিগুন। ইশা নিজের অত্যাচারের সাক্ষী দিয়েছে তাই মইনুলের সাজা বেড়েছে। তাদের রাখা হয়েছে কাল কুঠুরিতে। তনু দিন গনে! মনে পড়ে সেই রাতের কথা! তূর তাকে যেতে বারণ করেছিলো! হাহ্! দীর্ঘশ্বাস নিয়ে গায়ে শাল জড়িয়ে বাইরে আসে তনু্। সকলে ঘুমোচ্ছে! শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে জুঁই! নিজের স্বামিকে ফিরে পেয়ে সে কতটা অনিন্দিত তা তার চোখমুখ দেখলেই বোঝা যায়। চঞ্চলই সুবল! বাকি দুইজন শাশুড়ীর স্বামী বেঁচে নাই। ভাগ্যকক্রমে সুবল পালিয়ে বাচে। রাস্তায় ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেয়ে সৃতিশক্তি হাড়ায় সুবল। জুঁই গ্রাম ঘরতে গিয়ে দেখেছে সুবলকে। তির্থের কারনে কাউকেই কিছু বলতে পারেনি! এতদিনে মুখ খুলেছে। সুবলের জানা নেই সে আদেও সুবল কিনা। কিন্তু রিমি তাকে দেখেই বুকে বলেছেন এই মইনুলের ছোট ভাই! সুবল এখন এখানেই থাকে! তনু মুচকি হেঁসে চলে পাশ কাটে। অন্দরমহলের নিচে নামে তনু।
শিতকাল! চারিদিকে সাদা চাদর মোড়ানো। দু হাত দূরে কি তা দেখা যায় না। সা সা করে ঠান্ডা বাতাস বইছে! তনুর ছোট চুলগুলো ওড়ে সেই বাতাসে। তনু বাইরে আসে। সূর্যমুখী গাছগুলো মৃত প্রায়! গাছে ফুল নেই। তবুও তনু এখানে থাকতে ভালোবাসে, ভালোলাগে। চারিদিকে চক্ষদ্বয় মেলে তাকিয়ে আছে তনু। পেছন থেকে কেউ হাটে। শব্দ মস্তিষ্ক পর্যন্ত যেতেই তড়িৎগতিতে পেছন ফেরে তনু। কারো অবময় শুধু প্রকাশ পায়। অবময়টি থামে। তনু ভ্রু কুঞ্চন কুঁচকে প্রশ্ন করে,
– কে ওখানে? ‘
উত্তর আসে না। তনুর মস্তিষ্ক দপ করে ওঠে। হেটে চলে একটু। অবময় স্পষ্ট হয়। সঠিক সামনে আসতেই তনুর মাথায় বাজ পড়ে! একা একাই মুখে হাত চলে আসে। ঠোটদ্বয় ফাকা ও বড় হয়। অর্থাৎ তনু অবাক! দৃষ্টি চকিত! শীতে বোজা ডাগরডোগর চোখগুলো প্রান পেয়ে নিজের উজ্জীবিত রঙে মেতে ওঠে। ওষ্ঠদ্বয় নামি অস্ফুটস্বরে বলে তনু,
– তূ…র! আপ..নি? ‘
ফরসা ত্বক কেমন শুকনো! ঠোঁটে কালো আবরণ! কোনায় খানিক রক্তের দাগ! মুখ ফেটে গেছে! প্রচন্ড শিতে শরীরে শুধু একটা পাঞ্জাবি গায়ে দাড়িয়ে তূর।কন্ঠস্বর অচেনা তূরের,
– কেমন আছো? ‘
প্রশ্নের উত্তর মুখ দিয়ে বেরোয় না। বরং দু পা পিছিয়ে দাড়ায় তনু্। শিতেও চোখপ শিশির তনুর। গরম শিশির বেয়ে পড়ে মুখশ্রী বেয়ে। তনু বুকে শুরু হয়েছে ঝড়! নাম না জানা এই ঝড়ে তনু তোলপাড়!
– পেচোচ্ছো যে?
– এটা সত্যিই আপনি? আমি সপ্ন দেখছি না তো?
– বিশ্বাস হয় না?
– না!
তনু ছট দেয়। পেছন থেকে হাত ধরে ফেলে তূর। ঝিলিক মেরে ওঠে তনুর পুরো শরীর বেয়ে। তূর টেনে সামনে আনে।নিজের রুক্ষ সুক্ষ্ম হাত দিয়ে আলতো ছোঁয় তনুর গাল। তনু কেঁপে ওঠে। লোকটি শুকিয়েছে অনেক! তবুও ঠিকঠাক! বলিষ্ঠতা বিদ্যমান!
– আমায় জিজ্ঞেস করবে না আমি কেমন আছি?
– কেমন আছেন?
মিনমিন করে বললো তনু। তূর হেঁসে ফেলে,
– ভালো ছিলাম না! যদি জানতাম তোমার ভালোবাসায় জড়িয়েছি তাহলে আমি পুলিশকেই ধরা দিতাম না! পালাতাম তোমায় নিয়ে। মানুষ কল্পনাতেই সুন্দর তাইনা? ‘
– আজ আপনি মুক্ত?
– জ্বি বউ! আমিকি দেড়ি করেছি?
– অনেক! সেই অপেক্ষা করতে বললেন আর আজ এলেন! ‘
– আমার করা সমস্ত পাপের শাস্তি পেয়েছি। চাইছি বরংআার মাফ সৃষ্টিলর্তার কাছে। তিনি মাফ করে দিলেই আমার এক বৃহদাকার পাথর কমে যায়। এ ভার বয়ে বেড়ানো কঠিন বড্ড! ‘
– তবুও কি একটু দেড়িই হয়নি?
– ওকে আই’ম সরি।
– ইট’স ওকে!
তূর চমকে যায়। যে মেয়েটার কথা শুদ্ধ ছিলো না সে ইংরেজি বলছে? তার চোখে তনু এখনো সেই তেরো বয়সি কিশোরী একটা মেয়ে! চকিত কন্ঠ তূরের,
– তুমি ইংরেজি শিখলে কবে?
– আম্মার কথায় আজমল পন্ডিত আমাদের পড়ায়। সবাই পড়ে। আর এখন আম্মাও শুদ্ধ ভাষা বলতে পারে! ‘
– তোমায় চুমু দিতে মন চায়। ‘
তনু লজ্জামাখা মুখ নিয়ে একবার তূরের ঠোঁটের দিকে তাকায়। কোনে একটু রক্ত! ঠান্ডায় ঠোঁট ফেটেছে! তনু উত্তরে হাত টেনে ঘরে নিয়ে যায়। রান্নাঘর থেকে সরিষার তেল এনে ঠোঁটে, মেখে মুখে মাখিয়ে দেয়। রিমি তখন সিঁড়ি বেয়ে নামছিলেন। তনুকে একটা ছেলের সাথে দেখেই রিমি সন্দিহান কন্ঠ ছোড়েন,
– তনুউউ!
হাত কাঁপিয়ে মাথা ফেরায় তনু। ভেসে ওঠে তূরের মুখ। রিমির মুখ ফোটে হাসি। তিনি ছুটে এসে বুকে জড়িয়ে নেন ছেলেকে! তারও চোখে নোনাজল ভরা!
– কখন আসলি?
– এইতো!
– কেমন আছিস আব্বা?
– ভালো। তোমরা?
– এইতো দেখছিস।
– কে শেখালো শুদ্ধতা?
– তনু শিখাইছে।
তনুর তিন শাশুড়ী আর চম্পা নেমে আসেন।তূরকে দেখেই সকলে একসাথে বলে,
– কেমন আছো?
– ভালো।
সুবলও নেমে আসে। তূরের মুখে ফোটে স্নিগ্ধ হাসি। বলে,
– চাচাজান? কেমন আছেন? ‘
সুবল চেনে না। জুঁই বলে,
– তোমারে কইনাই? এটা তূর।
– ওহ্হো মনে পরেছে। কেমন আছো?
– এইতো ভালো।
রিমি বলেন,
– তনু ওকে ঘরে নিয়ে যাও। গোসল সেড়ে পরিষ্কার হয়ে আসুক। ‘
– জ্বী আম্মা! ‘
তনু তূরকে ঘরে নিয়ে যায়। তোয়ালা আর পাঞ্জাবি পাজামা দিয়ে পাঠিয়ে কলপাড়ে। তনু বিছানায় বসে। সকালটা আজ অন্যরমক না?
তোয়ালে পড়েই ঘরে আসে তূর। কাপর হাতে। তনু দেখেই পিছনে ফেরে। বলে,
– লজ্জা সরম নাই?
পেছন থেকে জড়িয়ে নেয় তূর। তনু অবাক হয়।
– কে তুমি যুবতি?
– তনুশ্রী বলছিলাম♥
____________________সমাপ্ত____________________
স্যাড এন্ডিং দিতে চাইনি। ভালো লাগলো?❤️