তবুও তুমি পর্ব -০৩

#তবুও তুমি
~পর্বঃ০৩~
~লেখায়ঃ ফাহমিদা মুশাররাত~
.
.
সেদিন ইশা ফিরে এসেছিল একবুক হতাশা নিয়ে। কিন্তু এতোসব কিছুর পরেও সে আজও সিগ্ধকে ভুলে যেতে পারেনি।

বর্তমান……….
কলেজ থেকে বেরোতে যাবে তখন ইশার চোখ যায় রাফিয়া একটি ছেলের সাথে কথা বলছে। ইশা রাফিয়ার দিকে এগিয়ে আসে।

“কিরে তুই এখানে কি করছিস? আর তোকে আমি সেই কখন থেকে খুঁজে চলছি?” (ইশা)

“তেমন কিছু না! তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম এজন্য এখানে এসে দাঁড়িয়েছি!” (রাফিয়া)

দুজন কথা বলতে বলতে চলে গেল।

ইশা কলেজ থেকে বের হওয়ার পর খেয়াল করলো একটা ছেলে তাদের পিছু নিয়েছে। কিছু দূর যাওয়ার পর ইশা থেমে যায়। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখতেই দেখলো ছেলেটা তাদের পিছনে নেই। এভাবে প্রায় কয়েকবার করার পরও ইশা ছেলেটিকে দেখতে পায় নি। আজকাল ইশা প্রায়ই এমনটা খেয়াল করে। পরে আবার নিজের মনের ভুল ভেবে চলে যায়।

★★
প্রথম ক্লাসটা সিগ্ধের। এজন্য ইশা সিগ্ধের ক্লাস না করার বাহানা করে ক্যান্টিনে চলে যায়। পরে আবার কি ভেবে চলে আসে সেখান থেকে। ক্যান্টিন থেকে ক্লাসের সামনে আসতেই দেখতে পায় সিগ্ধের চোখ লাল হয়ে রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে। ইশা ক্লাসের সামনে যেতেই-

“এটা ক্লাস রুম কারোর বাবার নিজস্ব হোটেল না যে যখন খুশি আসবেন?” (সিগ্ধ রেগেমেগে বলল)

“সরি স্যার!” (ইশা)

“আমি এখানে পড়ানোর উদ্দেশ্যে এসেছি কারোর রং তামাশা দেখতে নয়! আসুন!” (সিগ্ধ)

ইশা আগের দিনের মতোই এক কোণায় বসতে যাবে তখনি সিগ্ধ বলে উঠল,

“ঐখানে কি এখানে এসে বসুন! ঐখানে বসে বসে কালকের মতো করবেন তা আমি কিছুতেই মেনে নেব না!” (সিগ্ধ)

ইশা সিগ্ধকে মনে মনে এক বস্তা গালি দিয়ে সিগ্ধের বলা মতো বসে পড়ল।

“আপনার ঝাড়ি মারা শেষ হলে বই খুলে পড়ায় মনোযোগ দিল! ” (সিগ্ধ)

“আমি উনাকে ঝাড়ি মারলাম না কি করলাম উনি বুঝলেন কি করে? ” (ইশা মনে মনে বলল)

ক্লাস শেষ হওয়ার আগে ক্লাসে দেরি করে আসার শাস্তিসরূপ ইশাকে সিগ্ধ একগাদা পড়া দিয়ে গেল। ইশাকে বাধ্য হয়ে মেনে নিতে হলো। আর বলে গেল কাল কলেজে আসার পর যেন সবার আগে তার সাথে দেখা করে।

★★
সকাল বেলা ফোনের রিংটোনের শব্দে ইশার ঘুম ভেঙে যায়। কয়েকবার কেটে দেয়া সত্ত্বেও আবারো সেই কল আসে। এবার বাধ্য হয়ে ইশা কল রিসিভ করে,
“শালা উগান্ডা, হনুমান আক্কেল জ্ঞানের মাথা খেয়ে বসে আছিস। দেখছিস না বারবার ফোন কেটে দিচ্ছি? আরেকবার দিলে একেবারে গোবর পঁচা পানিতে চুবিয়ে মারব! রাখ!”
কিছুক্ষণ বকাঝকা করা শেষ করে ইশা কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।

রাফিয়া, আবিদ, রাফি আর রিয়া ক্যাম্পাসের ভেতর বড় গাছটার নিচে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। ইশা হুড়মুড় করে তাদের পাশে এসে বসে পড়ে। ইশাকে এভাবে বসতে দেখে সবাই ভ্রু উঁচিয়ে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

“কি ব্যাপার বল তো তুই এরকম আতঙ্কে আছিস কেন?” (রিয়া)

“আরে আর বলিস না এই টিচারটা এসে আমার জীবনটা তেজপাতা করে দিয়েছে!” (ইশা)

“কোন টিচারের কথা বলছিস!” (আবিদ)

“কাল কি চোখের মাথা খেয়ে বসেছিলি নাকি, দেখতে পাস নি!” (ইশা)

“ও এবার বুঝেছি, তুই সিগ্ধ স্যারের কথা বলছিস!” (রাফিয়া)

“তা নয় তো কি আমার জামাইয়ের কথা বলছি নাকি!” (ইশা রেগেমেগে বললো)

” তোর জন্য এটাই ঠিক আছে!”(রাফি)

“তা যা বলেছিস!” (রিয়া)

তারপর সবাই মিলে ইশাকে নিয়ে হাসতে শুরু করে। এতো সব কথার মাঝে ইশা ভুলেই গেল যে সিগ্ধ কাল তাকে তার সাথে দেখা করতে বলেছিল!

ক্লাস শুরু হতে না হতেই সিগ্ধ গম্ভীর মুখে আসে কিন্তু অবাক করার বিষয়, ইশা খেয়াল করলো আজ তাকে সিগ্ধ কিছু বলছে না। হঠাৎ করে সিন্ধ আশাকে উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করে,

“মিস ইশা কাল যে পড়াগুলো দিয়েছিলাম শিখেছেন?” (সিগ্ধ)

“এইরে এবার কি বলি আমি তো বইও ধরে দেখিনি। তারমধ্যে আজ দেখাও করি নি! এবার কি হবে?”(ইশা কথাগুলো মনে মনে বললো)

” কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না!”(সিগ্ধ জোরে চেচিয়ে উঠলো)

সিগ্ধের চেচামেচি শুনে ইশা খুব ভয় পেয়ে যায়। ক্লাসের সবাই খুবই চুপচাপ একেবারে যাকে বলে পিনপতন নীরবতা। ইশাকে চুপ করে থাকতে দেখে সিগ্ধের রাগ আরো বেড়ে যায়। বাহিরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি আসতে বলছি!

“কিন্তু…….
” লিভ নাও!”(ধমকের স্বরে)

“এক্ষুনি আপনি আমার সাথে দেখা করতে আসবেন যদি কথার নড়চড় হয় তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। ” (সিগ্ধ)

ইশা ভয়ে ভয়ে সিগ্ধের পিছু পিছু যায়। ইশা অফিস কক্ষে ডুকতেই সিগ্ধ ইশাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।

“সমস্যা কি তোমার এতো করে বলা সত্ত্বেও কেন কথা শুনতে চাও না কেন হ্যাঁ! আমাকে এখন আর আগের মতো ভালো লাগে না তাই না, নতুন কাউকে পেয়েছিস নাকি?” (সিগ্ধ ইশার দিকে মুখের বরাবর মুখ নিয়ে কথাগুলো বললো)

“স্যার লাগছে আমার!” (ইশা)

“লাগুক! তা নাহলে তুই বুঝবি কি করে আমার কথার অবাধ্য হওয়ার শাস্তি কতটা ভয়ংকর! ” (সিগ্ধ)

ইশা এবার ভয়ে আর ব্যথায় তার চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে দেয়। ইশার চোখে পানি দেখে সিগ্ধ ইশাকে ছেড়ে দেয়। ইশাকে ছেড়ে দিতেই সে খেয়াল করলো জোরে চেপে ধরার কারণে ইশার হাত লাল হয়ে গেছে। সিগ্ধ এবার রাগকে কন্ট্রল করে ইশার দিকে এগিয়ে যায়। ইশার দিকে এগিয়ে যেতেই……….

চলবে……..!
[ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here