তবুও তুমি পর্ব -০৪+৫

#তবুও তুমি
~পর্বঃ০৪~
~লেখায়ঃফাহমিদা মুশাররাত~
.

সিগ্ধ নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে ইশার দিকে এগিয়ে যায়। ইশার দিকে এগিয়ে গিয়ে ইশার হাত ধরতে নেয়। ইশা এক ঝটকায় সিন্ধকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দেয়।

“ইশা তোমার হাতে লেগেছে আমাকে দেখতে দেও!” (সিগ্ধ ইশার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে)

“একদম আমার কাছে আসার কিংবা আমাকে টাচ করার চেষ্টা করবেন না।” (ইশা)

“ইশা দেখ আমি….(সিগ্ধ)

” আমি কোন কথা শুনতে চাই না! চিন্তা করবেন না চলে যাবো আপনার জীবন থেকে, ঠিক আগের মতো!”(ইশা)

ইশা চোখ মুছতে মুছতে অফিস কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়। সিগ্ধ বারবার ডাকা সত্ত্বেও পিছনে ফিরে তাকায়নি পর্যন্ত।

★★

বাসায় ফিরে ইশা সারাদিন মনমরা হয়ে বসে থাকে। বিকেলে রাফিয়া আর রিয়া আসে তার সাথে দেখা করতে।

“কি হয়েছে বলতো, তুই আজ ক্লাস না করে চলে এলি যে, কিছু হয়েছে কি?” (রাফিয়া)

“আরে ধুর কি হবে!” (ইশা)

“তাহলে এরকম মনমরা হয়ে বসে আছিস কেন? আন্টি বলল তুই নাকি সারাদিন কিছু খাস নি?”(রিয়া)

” না, এমনি খিদে নেই তাই আরকি!”(ইশা)

“আচ্ছা চল আজ একটু বাহিরে গিয়ে ঘুরে আসি কেমন!” (রিয়া)

“হুম, মন্দ বলিস নি। এতে যদি ইশার মনটাও একটু ভালো হয়!” (রাফিয়া)

তারপর তিনজন মিলে ঘুরতে বের হয়। ফুসকা খায় নদীর পাড়ে বসে। নদীর পাড় ইশার খুব প্রিয়। এজন্য রাফিয়া আর রিয়া মিলে তাকে এখানে নিয়ে আসে। ঘুরতে এসে ইশার মেজাজটা ফুরফুরে হয়ে যায়।

দূর থেকে কেউ একজন তাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।

অনেকক্ষণ যাবত ঘোরাঘুরি শেষ করে তিনজন মিলে বাড়ি ফিরবে এমন সময় একটি ছেলে এসে সেখানে উপস্থিত হয়। ছেলেটি এসেই ইশাকে উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করে,

“হাই আমি নীল! ” (ছেলেটি)

“তো? আমি কি জানতে চেয়েছি আপনি নীল না সাদা?” (ইশা ভ্রু উঁচিয়ে বলে)

“না আসলে আমি বলতে চাইছি আমি আজ অনেক দিন ধরে আপনাকে লক্ষ্য করছি। আপনাকে প্রথম এই নদীর তীরেই দেখেছি। আসলে….(ছেলেটি)

” ধূর মিয়া আপনার আসলে নকলে আমি কিছু জানতে চেয়েছি? রাস্তা থেকে সরুন, যেতে দিন!”(ইশা)

“আমি আপনাকে ভালোবাসি!” (ছেলেটা)

কথাটা শোনা মাত্রই ইশার চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে যায়।

ইশার চেহারা দেখে রাফিয়া আর রিয়া বুঝতে পারে। তারা একে অপরকে বলতে থাকে,

“ভাই মানসম্মান বাঁচিয়ে রাখতে চাইলে পালা ভাই, পালা!” (রাফিয়া আর রিয়া)

“কি বললি তুই? আবার বল তো দেখি?”(ইশা ছেলেটির দিকে এগিয়ে যেতে বলল)

” আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? আমি আপনাকে ভদ্র ভাবে বলেছি আপনিও আপনার ভদ্রতা বজায় রেখে কথা বলুন!”(ছেলেটি)

“ভদ্রতা, ভদ্রতা শেখাচ্ছিস আমাকে ভদ্রতা? বের করছি তোর ভদ্রতা! ” (ইশা পা থেকে জুতা খুলতে খুলতে বলে)

ইশাকে জুতা খুলতে দেখে ছেলেটি সেখান থেকে দৌড়ে পালায়। আর পালানোর আগে বলে গেল, “তোমাকে আমি দেখে নেব!”

“যা যা তুই আমার কিছু করতে পারবি না। পারলে করে দেখা!”(ইশা)

★★

ঘোরাঘুরি শেষ করে তিনজন মিলে বাড়ি ফিরে আসে। ইশা বাসায় এসে বিছানায় ঘাঁ এলিয়ে দেয়। তখন ইশার রুমে ইশার মা আসে।

” মা কিছু বলবে?”(ইশা)
“তোকে তোর বাবা ড্রয়িং রুমে ডাকছে!” (ইশার মা)

“তুমি যাও আমি আসছি!” (ইশা)

ড্রয়িংরুমের গিয়ে ইশা তার বাবার পাশে বসতেই তার বাবা তার মাথায় হাত রেখে বলে,

” ইশা মা, দেখ তো ছেলেটিকে তোর পছন্দ হয় কিনা?”(ইশার বাবা ইশার মাথায় হাত রেখে বলল)

ইশা ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে তার বাবার দিকে। ইশার এরূপ ছাউনির সাথে তিনি খুব ভালো করেই পরিচিত।

“দেখ মা, মেয়েরা বড় হলে বাবা মায়েদের অনেক কর্তব্য বেড়ে যায়। মেয়ে হয়ে যখন জন্মেছিস একদিন না একদিন বিয়ে তো করতেই হবে তাই না! তাছাড়া ছেলেটাও খুব ভালো আজকাল এমন ছেলে পাওয়া ভাগ্যর ব্যাপার। তুই ছেলেটাকে একবার দেখ পছন্দ হলে…….(ইশার বাবা)

” বাবা আমি রাজি! তোমরা যেমন ছেলেকে বিয়ে করতে বলবে আমি তেমন ছেলেকেই বিয়ে করবো!”(ইশা)

“মা, তবুও একবার দেখ ছবিটা!” (ইশার বাবা)

“না, দেখতে হবে না তোমাদের উপর আমার বিশ্বাস আছে!” (ইশা)

তারপর ইশা সেখান থেকে চলে আসে নিজের রুমে আসে আর হাঁটু গেঁড়ে ফ্লোরে বসে পড়ে। তারপর কিছু একটা ভেবে ফোন খুঁজতে থাকে। অনেক খোঁজার পর ফোনটা বালিশের নিচে পায়। বের করে দেখে অনেক গুলো কল তাও আননোন নাম্বার থেকে। ইশা ফোনটা হাতে নিতেই আবারো কল আসে। যেন লোকটি জানতো ইশার হাতেই ফোন। কল রিসিভ করতেই ওপার থেকে এমন কিছু শুনতে পায় যা…………………..

চলবে…….!

[ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]

#তবুও তুমি
~পর্বঃ০৫~
~লেখাঃ ফাহমিদা মুশাররাত~

.

ফোনটা হাতে নিতেই আবারো কল আসে। ইশা কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠল,

“কোথায় ছিলে তুমি? কতবার কল দিয়েছি দেখেছো?” (ওপাশ থেকে)

“কে আপনি আর কাকে চাচ্ছেন?” (ইশা ভেজা কন্ঠে বলে)

“ইশা আমি সিগ্ধ। প্লিজ আমার কথাটা একটু………(সিগ্ধ)

” কি শুনবো কি বলতে চান? ও হ্যাঁ ভালো করেছেন ফোন দিয়ে। আপনার জন্য একটা গুড নিউজ আছে!” (ইশা)

“কি গুড নিউজ?” (সিগ্ধ)

“বাবা আমার জন্য পাত্র ঠিক করেছে। খুব শীগ্রই আপনার জীবন থেকে সারাজীবনের জন্য চলে যাবো! আর আরেকটা কথা আপনার দাওয়াত রইলো, আসতে ভুলবেন না কিন্তু!”(ইশা কথাটা তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে)

” ইশা দেখ….(সিগ্ধ)

ইশা কথাটি শেষ করেই অপর পাশের থেকে কোনো জবাব না শুনেই লাইন কেটে দেয়।

★★

পরেরদিন ইশার জন্য তার বাবার পছন্দ করা ছেলের বাড়ি থেকে তাকে দেখতে আসে। দেখতে এসে ইশাকে তাদের পছন্দও হয় এবং আংটি পরিয়ে যায়। কিন্তু কোনো কারণে ব্যস্ত থাকায় ছেলে আসে নি। তাকে অনেকবার করে বলা হয়েছে ছেলের সাথে দেখা করে তাকে ভালো ভাবে জেনে নিতে। সে এতেও রাজি হয়নি।

পাত্রপক্ষ চলে যাওয়ার পর ইশা তার বাবাকে বলল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা সেরে ফেলতে তা নাহলে তার মত পাল্টে যেতে পারে। ইশার বাবা মা এতে রাজি হয়ে যায়। কারণ ইশা বিয়ে করতে কোনোভাবেই রাজি হচ্ছিল না। এবার রাজি হয়েছে যদি মত পাল্টে যায় তাহলে আর তাকে কখনো বিয়েতে রাজি করানো সম্ভব হবে না। তাছাড়া তারা এমন ছেলেকে হাতছাড়া করতে চায় না।

দু’পক্ষের আলোচনা সাপেক্ষে সামনের সপ্তাহে বিয়ের দিন তারিখ পাকাপোক্ত করা হলো।

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসলো। এই কয়েকটা দিন ইশা ফোন অফ করে রেখেছিল যাতে করে তাকে সিগ্ধ আর কল দিতে না পারে।
এমনকি এই কয়েকটা দিন সে কলেজেও যায় নি।

★★

বিয়ের দিন……………

চারিদিকে মেহমানদের সমাগমে ভরে গেছে। ইশা তার বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে এছাড়া তার ছোট একটা ভাইও আছে।

একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা। আয়োজনে কোনো কমতি তারা রাখেনি। বিয়েতে ইশার সব বন্ধু বান্ধবীরা এসেছে এমনকি তাদের মাঝে ইশা সিগ্ধকেও একবার দেখতে পায়। সিগ্ধকে দেখতেই কোথায় যেন সে শূন্যতা অনুভব করে। তার বারবার মনে হতে থাকে, “কোনো ভুল করছি নাতো?”

এতো সব মানুষের মাঝে সিগ্ধকে সে শুধু একবারই দেখতে পায়। তারপর শত খুঁজেও আর পায় না।

কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করে দেয় প্রথমে পাত্র এবং পরে পাত্রী কে কবুল বলতে বলা হয়। বিয়ে শেষে দুজনকে একসাথে বসানো হয়। কিন্তু ইশা এখন পর্যন্ত একবারের জন্যেও ঘুরে পাশের মানুষটির মুখ দেখে নি।

বিদায় শেষে ইশাকে নিয়ে আসা হয় তার শ্বশুর বাড়ি। নতুন বউ এসেছে বলে চারিদিকে হৈ হুল্লোড় শুরু হয়ে যায়। ছোটরা সবাই “নতুন বউ এসেছে , নতুন বউ এসেছে” বলে হৈচৈ করতে থাকে। রাতে ইশাকে ফুল দিয়ে সাজানো একটি রুমে নিয়ে বসানো হয়। ইশাকে লম্বা একটি ঘোমটার পরিয়ে তারা চলে যায়।

কিছুক্ষণ পর ইশা দরজা লাগানো শব্দ শুনতে পায়। দরজা লাগানোর শব্দ শুনে ইশার অজান্তেই এক প্রকার ভয় কাজ করতে থাকে। এতো দিনে তার একবারের জন্যেও মনে হয়নি লোকটি কেমন হবে? সে কি তাকে বুঝবে নাকি সিগ্ধের মতো তার মনটাকে ভেঙে দেবে। এসব ভাবতে ভাবতে ইশা ঘোমটার নিচ থেকে লোকটির আবছায়া দেখতে পায়। দেখতে পায় লোকটি তার দিকেই এগিয়ে আসছে। লোকটি যত কাছে আসছে ততই ইশা নার্ভাস ফিল করতে থাকে। লোকটি তার কাছে এসে বসে এবং ঘোমটা উঠাতে গিয়েও উঠায় নি। কিছু একটা ভেবে সে সেখান থেকে চলে যায়।

প্রায় এক ঘন্টা পর হাতে একটা পকেট নিয়ে ফিরে আসে। তারপর ইশার ঘোমটা সরিয়ে ফেলতেই ইশা সামনের লোকটিকে দেখে খুব বড় ধরনের শখ খায়!

চলবে……!

[ভুল ভ্রান্তি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here