তুই যে শুধুই আমার পর্ব ৮

#তুই_যে_শুধুই_আমার [ ❤You are only mine❤ ]
#সিজন_২
#Part_8
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat [ Tanzin Islam Ishika ]

সায়রা মুখ থেকে কাগজটা ফেলে সামনে তাকিয়ে দেখে আরুশ হা হয়ে তাকিয়ে আছে,, তা দেখে সায়রা ভাব নিয়ে বলে,,

সায়রাঃ নেন আপনার প্রুফ শেষ,, কাগজ আমি নষ্ট করে ফেলেছি যার ফলে আপনি এখন চাইলেও প্রুফ করতে পারবেন না আমি কোন কাগজে আদো সাইন করেছিলাম,, হুহ আমার সাথে আসছে পাঙ্গা নিতে,, ভেংচি মেরে,,

সায়রাঃ গুড বাই,, জিনদেগিতে যাতে আপনার সাথে আমার দেখা না হয়,,

এই বলে সায়রা চলে যেতে নিতে আরুশের কথায় ৪২০ ভোল্টেজের শোক খায়,,, আর সেখানেই থমকে দাড়ায়,,

আরুশঃ কাগজটা কপি ছিল,, রিয়েলটা আমার কাছে এখনো আছে,,

সায়রা ৩২০ এংগেলে ঘুরে বলে,,

সায়রাঃ কিইইইইইইই,,, এইটা হতে পারে না আপনি মিথ্যা বলছেন,,

আরুশঃ একদম না,, আমি আগে থেকেই জানতাম তুমি এই জবটা ছাড়তে চাইবে তাই আগেই থেকে তোমার এই সিগন্যাচার করা কাগজের ২০ টা কপি করে রাখি আর রিয়েলটা সরিয়ে ফেলি,, যাতে তুমি অরিজিনাল কাগজটা নষ্ট করতে না পারো,, বাট তুমি যে এমনে কাগজটা নষ্ট করবে তা আমার ভাবনার বাইরে ছিল,,, কাগজটার দিকে তাকিয়ে,,

আরুশঃ দেখেই গা গুলিয়ে আসছে,, ইয়াক,, নাক ছিটকে,,,

সায়রা হাবলার মত দাড়িয়ে আছে,, মুখের ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছে,, কি করবে কিছুই বুঝতেছে না,, তা দেখে আরুশ সায়রার সামনে গিয়ে বলে,,

আরুশঃ তা মিস সায়রা এতক্ষন যে তামাশা করলেন তার শাস্তি পেতে রেডি তহ,,

আরুশের এই কথা শুনে সায়রা মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে,,
সায়রাঃ আবার শাস্তি,,

আরুশঃ হু,, তা রেডি তহ শাস্তিটা নিতে,,

সায়রা এইবার হাত পা ছড়িয়ে বসে এএএএএ করে কান্না করা শুরু করে দেয়,, তা দেখে আরুশ ভেবা চেকা খেয়ে যায়,, আরুশ বুঝে উঠতে পারছে না সায়রার কান্নার কারন,, সে উত্তেজিত হয়ে বলে৷

আরুশঃ আরেহ আরেহ কান্না করছো কেন,,

সায়রাঃ আপনি খুব পঁচা খালি আমায় শাস্তি দেন,, এএএএএ,, এএএ,, ন্যাকা কান্না করতে করতে,,

আরুশ এইবার হাটু গেড়ে বসে বলে,,

আরুশঃ বেশ করি,, ভুল করো কেন তাইলে,,

সায়রাঃ ভুল করি ঠিক আছে,, কিন্তু আপনি কি করেন,, আপনি তহ ভুলের তুলনায় শাস্তি ইটনা বড় দেন,, ছোট খাটো ভুলের জন্য আপনি আমাই ওই হাতির নাতির ঘরের পুতিদের ধরাইয়া দেন,, আমার মত পিপিলিকা জানের মত বাচ্চা ওই হাতির পুতি গো কেমনে সামলাইতে পারে বলেন,, এএএএএএ,, আবার ন্যাকা কান্না শুরু করে,,

আরুশ কানে হাত দিয়ে ধমক দিয়ে বলে,,
আরুশঃ এই মাইয়া চুপ,, পেয়েছে এক ভাঙ্গা রিকোর্ডার,, এইটা তোমার গলা নাকি মাইক,,

সায়রাঃ আম্মু বলে হাতির গলা,, দাঁত কেলিয়ে,,

আরুশঃ ওই একটু আগে না কানতাসিলা এখন কেমনে হাসতাসো,,অবাক হয়ে,,

সায়রাঃ উপস সরি ভুলে গেসিলাম,, ওয়েট,, এএএএএএএ,, আম্মু স্যার পঁচা,, এএএএএ,, 😭

আরুশঃ ওই মিয়া তোরে বলতে বলেছিল কে এই কথাটা,, সামলা এখন ঠ্যালা,, এই মাইয়া নির্ঘাত তোর কানের ৪২০ বাজাইবো,, মনে মনে,,

সায়রাঃ এএএএএএএ,,😭

আরুশঃ শ্যাট আপ,, আরেকটা আওয়াজ না,, ধমক দিয়ে,,,

ধমক শুনে সায়রা এইবার সত্যি সত্যি কেঁদে দেয়,, তা দেখে আরুশ আরেক দফা ভেবাচেকা খায়,,, এই মেয়ে যে কি আল্লাহ মালুম,,

আরুশঃ আরেহ বাবা কান্না করছো কেন,,

সায়রাঃ আপনি আমায় ধমক দিলেন কেন,, আমাকে আজ পর্যন্ত কেউ ধমক দেই নি,,

আরুশঃ আচ্ছা সরি আর দিব না ধমক এখন কান্না থামাও,,

সায়রাঃ না থামাবো না,, কান্না থামাতেই আপনি আবার আমায় বকবেন আর শাস্তি দিবেন,,

আরুশঃ না দিব না,, না বকবো আর না শাস্তি দিব,, এইবার কান্না থামাও,,

সায়রাঃ কিভাবে বিশ্বাস করবো আপনি সত্যি বলছেন,,

আরুশঃ তুমি কিভাবে করবা শুনি,,

সায়রাঃ পিংকি প্রমিস করেন,, কাদো কাদো হয়ে,,

আরুশঃ পিংকি প্রমিস!!! এইটা আবার কি,,

সায়রা আরুশের হাতটা ধরে সামনে আনে তারপর ওর অনামিকার আঙুলের পাশের ছোট আঙুলটিকে নিজেরও একই আঙুলের সাথে পেঁচিয়ে বলে,,

সায়রাঃ এইটা বলে পিংকি প্রমিসস,, এইবার করেন প্রমিস যে আপনি আমায় এখন আর বকবেন না আর না কোন শাস্তি দিবেন,,

আরুশ এইবার এক গাল হেসে বলে,,

আরুশঃ আচ্ছা যাও করলাম প্রমিস,, বকবো না তোমায় আর না শাস্তি দিব,,

সায়রা এইবার হাতটি ছেড়ে ফালিয়ে উঠে বলে,,
সায়রাঃ ইয়ে বেঁচে গেসি,, মি. উগান্ডা আমায় শাস্তি দিবে না,, এই বলে জিহ্বাতে এক কামড় দিয়ে বলে,, আব ইয়ে মানে আমি এখন গেলাম,, আপনি থাকেন বাইইই,,

এই বলে সায়রা দৌড়ে রুম থেকে চলে যায় আর আরুশ সেই দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বলে,,

আরুশঃ পাগলি,,


এইভাবেই দিন যেতে থাকে,, সায়রার পাগলামি গুলোর সাথে আরুশ খাপ মানিয়ে নিয়েছে,, আর সায়রা শাস্তির সাথে,,
আরুশ একটা জিনিস অনেক ভালো করেই খেয়াল করেছে যে সায়রা যতই দুষ্টুমি করুক না কেন ও কাজের প্রতি অনেক এক্টিভ,, নিজের কাজ অনেক মন দিয়ে করে,, বাট একটু লেট লতিফ,, সব সময় দব কিছুতে লেট করে আসে,, যা আরুশের সহ্য হয় না,, ও টাইমলি সব কাজ করতে পছন্দ করে কিন্তু সায়রার এই লেটনেস ওর একদম পছন্দ না,,তাই তহ সে এর জন্য সায়রাকে শাস্তি দিতে থাকে,,
যাতে সে আর লেট না করে,, কিন্তু আমাদের সায়রা তহ আমাদেরই,, সেও নাছোড়বান্দা,, সে লেট করবেই,, দুনিয়ায় উলোট পালোট হয়ে গেলেও সে লেট করা ছাড়বে না,, কিন্তু এই এক ছোট বিষয় যে একদিন এত বড় হয়ে যাবে তা কে জানতো,,

সেইদিন,,
অফিসে একটা ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং ছিল,, আর এই মিটিং এর জন্য প্রেজেন্টেশনের মূল দ্বায়িত্ব পড়েছিল সায়রার উপর,, সায়রাকে সেই প্রেজেন্টেশনটি তৈরি করতে বলা হয়েছিল আর তাকেই সকলের সামনে তা প্রদর্শন করতে বলা হয়েছিল,, মিটিংটি ইম্পর্ট্যান্ট হওয়ায় আরুশ বার বার সায়রাকে ওয়ার্ন করে দেয় যে তারাতারি আসতে,, সায়রাও আসাস দেয় সে লেট হবে না,,
কিন্তু ভাগ্য ক্রমেই সেইদিন তারাহুড়া করে অফিসে যাওয়ার পথে সায়রার এক্সিডেন্ট হয়ে যায়,, স্কুটিটি একটা কারের সাথে অনেক জোরেই বাড়ি খায়,, যার ফলে সায়রা স্কুটি সহ ডান দিকে কাধ হয়ে পড়ে যায়,, সায়রার ডান হাতটা অনেক বাজে ভাবে ছিলে যায়,, মাথার ডান সাইডেও অনেক জোরেই আঘাত পায়,, কিন্তু হেলমেট পড়ার কারবে মাথাটা ফাটে নেই,, শুধু আঘাত পেয়েছে,, ডান সাইডের পা টা তেও অনেক বাজে ভাবে কেটে গেছে,,
গাড়ির ড্রাইভা তহ গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়,, রাস্তার মানুষ সায়রা ধরে রাস্তার ফুট পাতে বসায় আর স্কুটিটি ঠিক করে দাড় করায়,, স্কুটির তেমন ক্ষতি হয় নি,, ডান সাইডের মিরোর টা ভেঙে গেছে আর বাম সাইডে গাড়ির ধাক্কার ফলে ট্যান্ট পড়ে যায়,,
সায়রার মাথাটা কেমন যেন ভনভন করছে,, তাই সে নিজেকে সামলিয়ে পানির বোতলটা নিয়ে মুখে চোখে পানি দেয়,, হাতের কাটা জায়গাতেও একটু পানি দিতে ধুয়ে নেয়,,
তারপর হাতের ঘড়ির দিকে টাইম দেখতে নিলে দেখে ঘড়ির কাঁচটা ভেঙে গেছে,, সায়রা অনেক কষ্টে টাইমটা দেখলো,, ১০.২০ বাজে,, সায়রা তারাতারি উঠে দাড়ায়,, কিন্তু দাড়াতে গিয়ে আবার পড়ে যেতে নেয়,, তখন আশে পাশের মানুষ ওকে ধরে,, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চাইলে সায়রা মানা করে দেয়,, তার এখন আগে অফিসে যাওয়া লাগবে,, সায়রা অনেক কষ্টে দাড়ায়,, তারপর একটা রিকশা করে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়,, আর ব্যাগ থেকে ফোন করে জান্নাত ও আসিফকে ( সায়রার ফ্রেন্ড) সব বলে আর এইটাও এই জায়গায় থেকে ওর স্কুটি নিয়ে রিপায়ের দোকানে দিয়ে আসতে,, সে এখন অফিসে যাচ্ছে,, আর আসিফ যেন ওকে একটু পর অফিস থেকে পিক করে নেয়,,
সায়রার অফিসে আসতে আসতে ১০.৩৪ বেজে যায়,, সে রিকশা থেকে নেমে কোন মতে উপরে যায়,, তারপর মিটিং রুমে গিয়ে দেখে সব ফাঁকা,, রুমে কেউ নেই,, সায়রার বুঝতে দেরি নেই যে তার দেরি এর জন্য ক্লাইন্টরা চলে গিয়েছে,, অফিসেও তেমন লোক দেখছে না সায়রা,,
সায়রা আরুশের কেবিনের দিকে গিয়ে দেখে বেশির ভাগ সবাই ওইখানেই,, আরুশ চোখ বন্ধ এক হাত মাথায় দিয়ে চেয়ারের উপর ভর করে বসে আছে,, মুখ একদম লাল বর্ন ধারন করেছে,,
সায়রা রুমে যেতেই সবার নজর ওর দিকে যায়,, সায়রা আরুশের সামনে গিয়ে বলতে নেয়,,

সায়রাঃ স্যার আ’ম সরি,, আমি আসলে,,

সায়রা কন্ঠ শুনে আরুশ চোখ খুলে সায়রা দিকে তাকায়,,, চোখ দুটো একদম লাল হয়ে আছে,, যেন এখনই চোখ দিয়ে আগুনের শিকা বেড়িয়ে আসবে,, সায়রা সেই চোখ দেখে কিছু বলতে পারলো না,, ভয়ে চুপ হয়ে গেল,,, আরুশ তখন নিজের চেয়ার থেকে উঠে এসে সবার সামনে সায়রার গালে কষিয়ে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেয়,, আর চিল্লিয়ে বলে,,


#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here