তুই যে শুধুই আমার পর্ব ৬+৭

#তুই_যে_শুধুই_আমার [ ❤You are only mine❤ ]
#সিজন_২
#Part_6_And_7
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat [ Tanzin Islam Ishika ]

দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে যায়,,, এই কয়েকদিনে আরুশ সায়রাকে দিয়ে কাজের বেটি রহিমার মত কাজ করিয়েছে,, সারাদিন সায়রাকে এই কাজ ওই কাজ দিয়ে জ্বালিয়ে মেরেছে,, কখনো এই ফাইল তহ কখনো ওই ফাইল,,, কখনো এই প্রেজেন্টেশন তহ কখনো ওই প্রোজেক্ট,, ওর প্রত্যেকটা কাজে খুঁত যেন আরুশকে ধরতেই হবে তা হলে ওর পেটের চকলেট হজম হবে না,, মানে এক কথায় সায়রার এর লাইফ হেল বানিয়ে ছেড়েছে,, কিন্তু আমাদের সায়রাও কম কিসে,, সেও বিভিন্ন ভাবে আরুশের কাজ থেকে প্রতিশোধ নিয়েই ছেড়েছে,,
যেমন সেইদিনের ঘটনাতে আশা যাক,,

রাস্তায় জ্যাম থাকায় সায়রা অফিসে আস্তে ১ মিনিট লেট করেছিল,, সায়রা যেই না অফিসে ঢুকেছে তখনই আরুশের ডাক পড়ে ওর কেবিনে,,, সায়রা এর তহ এইবার যায় যায় অবস্থা,, ওই জানে শাস্তিটা কি,, শাস্তিটা হচ্ছে ওই হাতির নাতির ঘরের পুতি মানে ওই মোটা মোটা ফাইল,,
এই কয়েকদিনে সায়রা শাস্তি পেতে পেতে হাপিয়ে উঠেছে,, এখন শাস্তি নামটাই ওর কাছে একটা এনাকোন্ডার মত,, যেকোনো টাইমে এই এনাকোন্ডাটা ওর উপর ঝাঁপিয়ে পরে আর আইলার মত সব তজনজ করে যায়,,
সায়রা দোয়া দুরুদ পড়তে পড়তে আরুশের কেবিনের দিকে যায়,, কেবিনে গিয়ে নোক করে বলে

সায়রাঃ মে আই কাম ইন স্যারররররররর,, একদম মধুর সুরে,,

আরুশঃ ইয়েস কাম ইন,,

সায়রাঃ স্যার আমি ইচ্ছা করে লেট করি নি,, রাস্তায় এত চকলেট থুক্কু জ্যাম ছিল যে কি বলবো,, অনেক কষ্টে ওই গুলো ঠ্যালে উগান্ডায় থুক্কু সাইডে সরিয়ে তারপর আসছি,, চোখ বন্ধ করে এক দমে কথাগুলো বলে ফেললো,,

আরুশ ছোট ছোট চোখ করে বলে,,
আরুশঃ কথা শেষ হয়েছে,,

সায়রাঃ আব ইয়ে মানে হ্যাঁ,,,

টেবিলের উপর ৪ টা ইয়া বড় বড় ফাইল দেখিয়ে বলে,,
আরুশঃ তা এখন এই ফাইল গুলো নিয়ে গিয়ে কাজ করা শুরু করে দাও আর আজকে তুমি ১ ঘন্টা ওভারটাইম করবে,,

সায়রাঃ এএএএএএএএ,,

আরুশঃ হোয়াট এএএ,,

সায়রাঃ স্যার মাত্র ১ মিনিট এই তহ এইদিক ওইদিক হয়েছে,, তার জন্য শাস্তি কেন দিতাসেন,, কাদো কাদো হয়ে,,

আরুশঃ ১ মিনিট বুঝি মিনিট না,,

সায়রাঃ উফফ ঘারত্যাড়া,, বির বির করে,,

আরুশঃ মিস সায়রা,,

সায়রা এইবার লাফিয়ে উঠে বলে,,
সায়রাঃ ইয়েস স্যার,,

আরুশঃ যান গিয়ে কাজ করা স্টার্ট করুন,,

সায়রাঃ স্যার শাস্তি একটু কম করা যায় না,,, আমার মত নিরিহ সুইট ইনোসেন্ট মাসুম বাচ্চা মাইয়ার উপর একটু দয়াশীল হন,, একটু তহ দয়াবান হন,,

আরুশঃ আচ্ছা যাও একটা ফাইল কমিয়ে দিলাম,, এখন যাও কাজ করো,, আর হ্যাঁ আগে যে প্রেজেন্টেশন করতে দিয়েছিলাম সেটা কেবিনে দিয়ে যেও,,

সায়রাঃ কিসের প্রেজেন্টেশন,, কোথাকার প্রেজেন্টেশন,, কোথায় প্রেজেন্টেশন,, কি প্রেজেন্টেশন,, কোন প্রেজেন্টেশন,, কেমন প্রেজেন্টেশন,,,

আরুশ এইবার মাথায় হাত দিয়ে বসে,, কার পাল্লায় সে পড়লো,, এই মাইয়া জীবনেও সোজা কথার সোজা উওর দিতে জানে না,, সব সময় ত্যাড়া উত্তর ওর দিতেই হবে,,
আরুশের এখন রাগ হচ্ছে,, মুখ চোখ লাল লাগছে,, হাত মুষ্টি বদ্ধ করে আছে,,তা দেখে সায়রা ভয়ে ঢোক গিলে বলে,,

সায়রাঃ আব হ্যাঁ মনে পড়েছে কিসের প্রেজেন্টেশন,,কালকেই তহ দিয়েছিলেন,, আমার কেবিনেই আছে,, আমি এখনই পাঠিয়ে দিচ্ছি,,

এই বলে এক দৌড়,, আরুশ এইবার মাথা তুলে দেখে সায়রা নেই,, সে আর কিছু না বলে পানি খেতে নিলে সায়রা দরজা দিয়ে উঁকি মেরে বলে

সায়রাঃ স্যারররর,,

হঠাৎ এমনে স্যার বলাতে পানি আরুশের নাকে মুখে উঠে যায়,, সে কাশতে শুরু করে,,, কিন্তু পরক্ষণেই নিজে সামলিয়ে বলে,,

আরুশঃ আবার কি চাই,,

সায়রাঃ আব ইয়ে মানে,,,

আরুশঃ স্পিক আপ ডেমিট,,

সায়রাঃ ফাইল গুলো নিতে আসছিলাম,,

এই বলে কেবিনে এসে ফাইল নিয়ে আরেক দৌড়,, আর আরুশ হাবলার মত তাকিয়ে থাকে ওর যাওয়ার দিকে,, পরক্ষণেই রাগ মিশিয়ে পেট ফেটে হাসতে থাকে,, সায়রার এমন খামখেয়ালি স্বভাব দেখে আরুশ ওর নিজের হাসি দমিয়ে রাখতে পারেনি,,,

এইদিকে সায়রা কাজ করতে করতে হাপিয়ে উঠেছে,, না পারছে সইতে আর না পারছে কি বলতে,,

সায়রাঃ শয়তান বেটা,,, মিথিলা আন্টির ৫ নং জামাই,, আমার উপর এত জুলুম করোস তোর কোন দিন ভালো হইত না,, আমার মত নিরিহ অসহায় বাচ্চার মাইয়ার উপর এত অত্যাচার আমি সইতাম না,,, কোন মতেই না,, এত অত্যাচার সহ্য করলে আমায় আমার চকলেট অবলা নারী কইবো,, না আমি এইটা সহ্য করুম না,, কোন মতেই না,, কিন্তু একটা করতেই হইবো,,

তখন পিওন সায়রার কেবিনের সামনে গিয়ে আরুশের জন্য কফি নিয়ে যাচ্ছিল তা দেখে সায়রা বলে উঠে,,

সায়রাঃ আইডিয়া,,


🍂
কিছুক্ষণ আগেই পিওন আরুশের কেবিনে কফি দিয়ে গিয়েছে,, আরুশ একটা ফাইল চেক করতে করতে কফিতে চুমুক দেয়,, চুমুক দেওয়ার সাথে সাথে ওর মুখ চোখ কুচকে আসে,, মুখে কফিটা কেমন যেন পিছলা পিছলা আর আঠালো লাগছে,, আর কেমন একটা উটকো গন্ধ আসছে,, আরুশ এইবার কফির মগ সামনে নিয়ে কফিতে তাকিয়ে দেখে কেমন চিপচিপা হয়ে আছে,,, আর তার মধ্য থেকে কেমন এক গন্ধ আসছে,, আরুশ তারাতারি মুখের কফিটি ফালিয়ে দেয়,,
আর “ওয়াক,, ওয়াক” করতে থাকে,, সায়রা এতক্ষন দরজার বাইরে তাকিয়ে সব দেখছিল আর আরুশের এমন অবস্থা দেখে দৌড়ে নিজের কেবিনে গিয়ে পেটে হাত দিয়ে জোরে জোরে হাসতে থাকে,,


🍂🍂কিছুক্ষণ আগেই🍂🍂

সায়রা পিওনকে দেখে হন্তদন্ত হয়ে পিওনের পিছে যায় আর বলে,,

সায়রাঃ রহিম কাকা একটু শুনেন,,

রহিমঃ হ্যাঁ মা বলো,,

সায়রাঃ এই ফাইলটা একটু কষ্ট করে নিশি ম্যামকে দিয়ে আসতে পারবেন,, আমি এই যেতাম বাট স্যার এতটি ফাইল দিসে যে আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব না,, আপনি একটু দিয়ে আসবেন,,

রহিমঃ আইচ্ছা আগে স্যাররে কফিটা দিয়া আহি,,

সায়রাঃ না না কাকা এখন এই ফাইলটা দিতে হবে,, তা না হলে ম্যাম রাগ করবে,, আপনি কফিটা আমার কেবিনে রেখে যান আগে ফাইলটা দিয়ে আসেন,, পরে না হয় কফিটা দিয়ে এসেন,, প্লিজজ না কইরেন না,,

রহিম কাকা কিছু ভেবে তারপর বলে
” আচ্ছা দাও ”

রহিম কাকা যেতেই সায়রা নিজের টেবিলের উপরে থাকা ফেবিকলের গ্লু এর বোতলটা নিয়ে পুরোটা কফিয়ের মধ্যে ঢেলে দেয়,, পড়ে একটা কলম দিয়ে ভালো মতো নেড়ে চেড়ে দেয়,, যেহেতু চামচ নেই তাই কলম দিয়েই কাজটা করলো,,
( যেমনটা আপনাদের লেখিকা করে🐸 স্কুলে কোন চামচ না পেলে কলমকে চামচ হিসাবে কাজে লাগাতাম🐸)

অতঃপর ভালো মত মিশিয়ে পাশে রেখে দেয়,, পরে রহিম কাকা এসে কফি নিয়ে যায়,, আর সে কফিই আরুশ খায়,,


💕💕বর্তমানে💕💕

সায়রা নিজের কেবিনে বসে শব্দ করে হেসেই চলেছে,, হেসে হেসে হামাগুড়ি ও খাচ্ছে,, আশে পাশে অনেকই সায়রার কেবিনের পাশ গিয়ে যাওয়ার সময় ওর হাসির আওয়াজ শুনে ওর দিকে ভ্রু কুচকিয়ে তাকিয়ে আছে,, কিন্তু সায়রার সেইদিকে কোন হেলদুল নেই,, সে আপন মনে হেসেই চলেছে,,
এমন সময় আরুশ ওর কেবিনের সামনে গিয়ে পিওনের কাছে যাচ্ছিল,, সায়রার হাসির আওয়াজ শুনে থমকে যায় আর সায়রা কেবিনে যায় এই এত হাসির রহস্য ভেদ করতে,, গিয়ে দেখে সায়রা আনমনে হেসেই চলেছে,, আর বলছে,,

সায়রাঃ একদম উচিৎ শিক্ষা পেয়েছে মি. উগান্ডা,,

আরুশের আর বুঝতে দেরি নেই যে তার কফির হাল এমন বেহাল কে করেছে,, আরুশ কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল,, তারপর এক মুচকি হাসি হেসে গম্ভীর গলায় বলে,,

আরুশঃ মিস সায়রা,,

আরুশের কন্ঠ শুনে সায়রা হাসি থামিয়ে হতদন্ত হয়ে দাড়িয়ে যায় আর আমতা আমতা করে বলে,,

সায়রাঃ ইয়েস স্যার,,

আরুশঃ কাম টু মাই কেবিন,,

এই বলে আরুশ চলে যায়,, সায়রাও পিছে পিছে যেতে থাকে আর মনে মনে বলতে থাকে,,

সায়রাঃ এই মি. উগান্ডা কিছু বুঝে গেল না তহ,, আরেহ ধুর কেমনে জানবো,, অফিসে কত মানুষ আছে যে কেউ করতে পারে আমাকেই একা কেন ধরবে,, হয়তো অন্য কাজে ডেকেছে,,, হুম এইটাই হবে,, মনে মনে,,

সায়রা আরুশের কেবিনে আসতেই বলে,,

সায়রাঃ কি হয়েছে স্যার,,, এইভাবে ডাকলেন যে,,

আরুশঃ না তুমি তহ এই কয়েকদিন ধরে অনেক কাজ করছো আর অনেক নিষ্ঠা দিয়ে কাজ করছো তাই ভাবলাম তোমাকে কিছু উপহার দেওয়া যাক,,

সায়রাঃ সত্যি স্যারর,,

আরুশঃ হুম,,

সায়রাঃ তাহলে জলদি আমার উপহারটা দেন না স্যার,,

আরুশঃ ওয়েট,,
এই বলে আরুশ কফির গ্লাসটা হাতে নিয়ে সায়রার সামনে এসে বলে,,

আরুশঃ এই নাও তোমার উপহার,, আ সুইট কফি,, এতে তুমি এনার্জি পাবে আর পরবর্তী কাজটি আরও ভালো ভাবে করতে পারবে,,

সায়রা কফির মগটি দেখেই বুঝে যায় এইটা ওই কফির মগ যেটাতে সে গ্লু মিশিয়ে ছিল,, তা দেখে সে ভয়ে বলে

সায়রাঃ না না স্যার কোন দরকার নেই,, আমার কোন উপহারেরই দরকার নেই,, আমি এমনেই ঠিক আছি,,

আরুশঃ তা কিভাবে হয়,, উপহার তোমায় নিতেই হবেই,, তা খাও,,

সায়রাঃ না না আমি খাব না,,

আরুশ ওর কোন কথা না শুনে মুখ চেপে কফি ওর মুখে দিয়ে দেয় আর সায়রার মুখ চেপে ধরে যাতে বের না করতে পারে,, কিন্তু সায়রা যত যাই হক এই কফি খাবে না মানে না,, তাই সায়রা এমন অভিনয় করলো যে সে কফিটা খেয়ে ফেলেছে,, আরুশও মনে করে সে কফি খেয়ে ফেলেছে তাই সে সায়রা মুখ ছেড়ে দেয়৷ আর ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথে সায়রা মুখের কফিটি আরুশের হাতের উপর ফালিয়ে দেয়,,
তা দেখে আরুশ নাক ছিটকায়,, আর হাত ঝারতে থাকে,,

আরুশঃ ইউউ স্টুপিট,, কি করলে এইটা,, বলে টিস্যু গিয়ে হাত মুচতে থাকে,,

সায়রাঃ যা করেছি বেশ করেছি,, হুহ,,

সায়রা রাগে ফুসছে কেন না আজ পর্যন্ত ওর সাথে এমন কেউ করে নি,,, তাই সে বলে উঠে।

সায়রাঃ আমি এই জব আর করবো না,, আমি এখনই রিজাইন দিচ্ছি,,

আরুশঃ ভুলে যেও না তুমি স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়তে পারবে না,, কমসে কম ৭ বছরের আগে তহ নাই,,

সায়রাঃ মানি না এইসব আমি,,

আরুশ কথাটা শুনে একটা ফাইল থেকে একটা কাগজ বের করে সায়রার হাতে দিয়ে বলে,,

আরুশঃ মানতে তুমি বাধ্য,, কাগজে তোমার সিগনেচার আছে যে তুমি সব মেনেই এই অফিসে জয়েন করেছ,, আর তুমি পরে চাইলেও অশ্বিকার করতে পারবে না,, আর এইটা কথার প্রুভই হলো এই কাগজটি,,

সায়রা সব শুনে রাগে ফুসতে থাকে আর হাতে থাকা কাগজটা মুড়িয়ে মুখে নিয়ে চিবুতে থাকে,, তা দেখে আরুশ হা হয়ে যায়,, করছে কি মেয়েটা,,
সায়রা কাগজটা চিবিয়ে গিলতে নিয়েও পারলো না,,, বরং তার ভিতর থেকে সব গুলিয়ে আসলো তাই সে থু মেরে কাগজটি মাটিতে ফালিয়ে বলে,,

সায়রাঃ গিলতে পারলাম কেন,, টিভিতে দেখি কাজগ কেমনে গিলে ফেলে,, আমি পারলাম না কেন,, সে যাই হোক কাগজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে এইটা মেইন ফ্যাক্ট,, মনে মনে এই কথা গুলো বললো সায়রা,,
তারপর সামনে তাকিয়ে দেখে আরুশ হা হয়ে তাকিয়ে আছে,, তা দেখে সায়রা ভাব নিয়ে বলে,,

সায়রাঃ নেন আপনার প্রুফ শেষ,, কাগজ আমি নষ্ট করে ফেলেছি যার ফলে আপনি এখন চাইলেও প্রুফ করতে পারবেন না আমি কোন কাগজে আদো সাইন করেছিলাম,, হুহ আমার সাথে আসছে পাঙ্গা নিতে,, ভেংচি মেরে,,

সায়রাঃ গুড বাই,, জিনদেগিতে যাতে আপনার সাথে আমার দেখা না হয়,,

এই বলে সায়রা চলে যেতে নিতে আরুশের কথায় ৪২০ ভোল্টেজের শোক খায়,,,


#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here