তুই যে শুধুই আমার পর্ব ২২

#তুই_যে_শুধুই_আমার [ ❤You are only mine❤ ]
#সিজন_2
#Part_22
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

🍁

রিসাব আর ইমা বেগমের মুখের পানি ছিটা পড়তেই তারা জ্ঞান ফিরে পায়। কাজীকে আগেই জ্ঞান ফিরানো হয়েছে। জ্ঞান ফিরার পর তাকে বিদায় করে দেয়া হয়েছে।
ইমা বেগম আর রিসাব জ্ঞান ফিরার পর উঠে দাড়ায় সামনে তাকিয়ে আরুশকে দেখে তারা চমকে উঠে।
আরুশ দুই হাত নিজের পেন্টের পকেটে ঢুকিয়ে আরামসে দাড়িয়ে আছে। চেহারাতে নেই তার কোন রকম চিন্তাভাবনা। একদম স্থির আর সূক্ষ্ম তার দৃষ্টিকোন।
ইমা বেগম কি যেন মনে করে সায়রার রুমে দিকে দৌড়ে যায়। গিয়ে দেখে রুম ফাঁকা। তিনি আবার ফিরে এসে এই কথা রিসাবকে জানান। রিসাব এই শুনে রেগে গিয়ে বলে।

রিসাবঃ সায়রা কোথায় মি. খান??

[[ হসপিটালে রিসাব যখন আসল ঘটনা জানতে চায় তখন সায়রা ওকে আরুশের সম্পর্কে সব জানায়। সেই থেকে রিসাব আরুশের সম্পর্কে সব জানে আর চিনে ]]

আরুশঃ That is none of your business.

রিসাবঃ It is my business. কেন না সে আমার হবু বউ।

এই কথা শুনার সাথে সাথে আরুশ হু হু করে হেসে উঠে। রিসাব আর ইমা বেগম অবাক চোখে তাকে দেখতে থাকে। আরুশ কোন মতে নিজের হাসিটা দমিয়ে বলে।

আরুশঃ Haha nice joke😆.

রিসাবঃ মানে!!😒

আরুশ নিজের পকেট থেকে একটি পেপার বের করে রিসাবের হাতে দেয়।

আরুশঃ Read it. ভাব নিয়ে😎

ইমা বেগম আর রিসাব কাগজটা খুলে দেখে এইটা সায়রা আর আরুশের রেজিস্ট্রির পেপার। দুইজনই স্তব্ধ হয়ে যায়। তা দেখে আরুশ বলে।

আরুশঃ সায়রা এখন আমার। So stay away from her. তোমাকে যদি ওর আশে পাশেও দেখি না তাহলে তোমার হাড় পর্যন্ত কেউ খুঁজে পাবে না।

রিসাবঃ ইউউউউ!!

আরুশঃ জাস্ট শার্ট আপ!! আমি যা বলছি তা শুনো। চুপচাপ নিজের দেশে ফিরে চলে যাও। আদার ওয়াইস আমার সায়রার দিকে নজর দেওয়ার ফল তোমায় হাড়ে হাড়ে ভুগতে হবে।। তুমি যে কেন এইখানে এসেছিলে তা আমার অজানা নয়।

রিসাবঃ মা,,, মা,,,নে। কিছুটা তোতলিয়ে।

আরুশ কিছুটা মুচকি হেসে। তারপর রিসাবের কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে।

আরুশঃ যা বুঝেছো ঠিক তাই।। তোমার বেপারে ফুল ইনফরমেশন আছে আমার কাছে। তাই বলছি চলে যাও তা না হলে আমি ঠিক কি কি করতে পারি তা তোমার কল্পনারও বাইরে।

এই বলে আরুশ স্বরে এসে ইমা বেগমের সামনে দাড়িয়ে বলে।

আরুশঃ শ্বাশুড়ি মা আমাদের জন্য দোয়া কইরেন যাতে আপনাকে খুব জলদি নানী বানাতে পারি। না জানি আপনার মেয়েকে মানাতে কত সময় লাগে। যদি আপনার দোয়া সাথে থাকে তাহলে ইনশাল্লাহ দুইদিনেই পটে যাবে। 😎

ইমা বেগমঃ অসভ্য ছেলে!! আমার মেয়ে কোন দিন তোমায় মানবে না। তুমি একজন খুনি। তুমি আমার স্বামীকে হত্যা করেছ।।

আরুশঃ আপনারা দুইজনও না। মা মেয়ে একদম সেম। কোন কথা না শুনেই নিজের রায় জানিয়ে দেয়। উফফ কি যে করি!! কখন যে সত্যিটা সামনে আসবে আর আমি এইসব থেকে নিস্তার পাই। সে যাই হোক এখন আমি যাই কেমন আপনার মেয়ে বাসায় একা। নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে। বউকে কি আর এত সময় একা রেখে আসা যায় বলুন। আমি যাই কেমন! বাই শ্বাশুড়ি মা।।

এই বলে আরুশ চলে যায় আর ইমা বেগম হ্যাঁ হয়ে তাকিয়ে থাকে। এ কেমন মেয়ের জামাই পেল সে। অন্যদিকে রিসাব রাগে ফুসছে। আজ পর্যন্ত কেউ তার সাথে এমন ভাবে কথা বলে নি। তার তহ মনে চাচ্ছে এখনই আরুশকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিতে।


🍁

আরুশ রুমে এসে দেখে পুরো রুম অন্ধকার। সে লাইট জ্বালাতেই দেখে সায়রা ফ্লোরে শুয়ে আছে। ফ্লোরে বসে কাঁদতে কখন যে সায়রা ঘুমিয়ে পড়ে তার খেয়াল নেই।
আরুশ সায়রা কাছে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিয়ে বেডে শুয়ে দেয়। মুখে পড়ে থাকা চুল গুলো আলতো করে কানের কাছে গুছিয়ে দেয়। তারপর সায়রা এক গালে হাত রেখে কাতর কন্ঠে বলে।

আরুশঃ তোমার ভুল খুব জলদি ভাঙবো আমি। কিন্তু তার আগে কিছু রহস্যের সমাধান যে বাকি আছে। সেই রহস্যের সাথেই লুকিয়ে আছে আমার নির্দোষতার প্রমান। এর আগে তোমায় কিছু বুঝাতেও তুমি বুঝবে না। কিন্তু আমার হাতে যে সময় খুব কম।তাই যা করতে হবে খুবই জলদি। একটু সময় দাও।

এই বলে আরুশ সায়রা কপালে এক ভালবাসার স্পর্শ একে উঠে পড়ে আর ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।
ওয়াশরুম থেকে এসে সায়রার পাশে শুয়ে পড়ে আর সায়রাকে নিজের বাহুর মাঝে আবদ্ধ করে নেয়।


🍁


কোন এক এলার্মের আওয়াজে সায়রার ঘুম ভেঙে যায়। সায়রা পিটি পিটি করে চোখ খুলে নিজেকে এক অন্য জায়গায় আবিষ্কার করে। সে উঠে বসে চারদিক পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারে যে এইটা আরুশের রুম। সে ভাবতে থাকে সে এইখানে কিভাবে আসলো, ভাবার এক পর্যায় এসে সায়রার কালকের সকল কথা মনে পড়ে। সাথে সাথে সায়রা চট করে নাম নিজের দিকে তাকায়। দেখে না সব ঠিক আছে। তা দেখে সায়রা এক স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।
ঠিক এমন সময় সায়রার কানে আরুশের কন্ঠ ভেসে আসে।

— চিন্তা কর না আমাদের মাঝে কিছু হয় নি। আমি এতও খারাপ যে কোন বাচ্চা মেয়ের ঘুমের ফায়দা নিব।

সায়রা আরুশের এমন কথা শুনে রেগে সামনে তাকায়, তাকিয়ে দেখে আরুশ ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে। গাঁয়ে ব্ল্যাক গেঞ্জি আর সাথে ব্ল্যাক টাউজার। বা হাতে থাকা টায়োলটা দিয়ে সে চুল গুলো মুচছে। শ্যাম বর্নের ছেলেদের যে কালো রং এ এত ভালো মানাতে পারে তা আরুশকে না দেখলে সায়রা জানতোই না।
সায়রা তা হা হয়ে তাকিয়ে আছে। তা দেখে আরুশ মুচকি হেসে সায়রার সামনে এগিতে যায় আর ওর মুখের সামনে তুরি বাজিয়ে বলে।

আরুশঃ I know I am much handsome. কিন্তু তাই বলে কি আমায় এমনে চোখ দিয়ে গিলে খাবে নাকি?? আমার বুঝি লজ্জা লাগে না।

সায়রা আরুশের এমন কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় সে তারাতারি নিজের চোখ সরিয়ে বলে।

সায়রাঃ এহহ আসছে আবার হ্যান্ডসাম!! কালা বান্দর লাগতাসে😕। প্রথম বার এমন কালা বান্দর দেখছি তহ তাই এমনে দেখতেছিলাম নাইলে আপনার মত বান্দরকে দেখার আমার বিন্দু মাত্র শখ নেই।😕

আরুশঃ কি আমি কালা বান্দর!!

সায়রাঃ হ্যাঁ।

আরুশ হুট করে সায়রাকে বিছানার সাথে চেপে ধরে বলে।

আরুশঃ তাহলে দেখ এই কালা বান্দর কি কি করতে পারে। ডেভিল স্মাইল দিয়ে।
বলে মুখ সামনে আনতে গেলে সায়রা বলে উঠে।

সায়রাঃ দাঁত ব্রাশ করেন নি বুঝি!! গন্ধ আসতাসে😣😖 দূরে যান। দূরে যান বলছি।। ইয়াক বমি আসতাছে।

সায়রা এর এমন কথায় আরুশ আবার আহামক বনে যায়।
–এই মাইয়া সব সময় আমার রোমেন্সে গন্ধ খুঁজে নিয়ে আসে। উফফ কাকে যে বিয়ে করলাম। মনে মনে।

আরুশ যখন এইসব ভাবছে তখন সায়রা সুযোগ বুঝে আরুশকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয় আর উঠে পড়ে। তারপর দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। আর আরুশ আবুলের মত শুয়ে থাকে।


🍁


দেখতে দেখতে বেশ কিছুদিন কেটে যায়। এই কয়েকদিনে আরুশ সায়রাকে গৃহ বন্দী করে রেখেছে। অফিসে যাওয়ার সময় ফ্লাট লক করে যায় সে যাতে সায়রা পালাতে না পারে। আর সায়রাকে সে হুমকি দিয়ে রেখেছে সায়রা যদি নিজের ক্ষতি করতে চায় তাহলে তার পরিবারকে এর মাশুল দিতে হবে। সায়রা বেচারি কি বাই করবে পরিবারের কথা ভেবে সেও চুপ হয়ে আছে। সায়রা এখন দরকার ছাড়া আরুশের সাথে টু শব্দ ও করে না। আরুশ অনেক চেষ্টা করে ওর সাথে কথা বলার বাট পারে না। এইভাবেই চলছে তাদের জীবন।

সেইদিন রাতে🌚

আরুশ বাসায় এসে দেখে সায়রা বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। আরুশ কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে সে সায়রার পাশে দাড়ায়। নিজের পাশে কাউরো অস্তিত্ব বুঝতে পেরে সায়রা পাশে তাকাতেই আরুশকে দেখতে পায়। আরুশকে দেখা মাত্র সায়রা সেখান থেকে চলে যেতে নিলে আরুশ পিছে থেকে ওর হাত ধরে টান দেয়। সায়রা থমকে দাড়ায়।

আরুশঃ আজ তোমার থেকে কিছু চাইবো দিবে কি??

সায়রা এইবার ভ্রু কুচকিয়ে আরুশের দিকে তাকায়। যার অর্থ “কি”। আরুশ তা বুঝতে পেরে বলে।

আরুশঃ একটা সুযোগ চাই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করার। জাস্ট ওয়ান চান্স। আর এইটা প্রমাণ করতে আই নিড ইউ।

সায়রাঃ মানে!! অবাক হয়ে।

আরুশঃ যা বুঝেছ ঠিক তাই। আমার নির্দোষতা প্রমাণ করতে তোমাকে আমার প্রয়োজন। জাস্ট ওয়ান চান্স এন্ড আই প্রমিস যদি এই চান্স আমি নিজেকে প্রমাণ না করতে পারি তাহলে তোমার থেকে আজীবনের জন্য দূরে চলে যাব আর মুক্ত করে দিব আমি নামক বন্দক থেকে। শুধু একটা বার ভরসা করে আমি যা বলি তা করো।। করুন কন্ঠে।

সায়রা কেন জানি আরুশকে না বলতে পারলো না। সে মাথা হেলিয়ে সমত্তি দেয়।

সায়রাঃ আপনার কাছে কিন্তু শুধু এই একটা মাত্র সুযোগ আছে। এই সুযোগ যদি নিজেকে প্রমাণ না করতে পারেন তাহলে আপনি আজীবনের জন্য আমায় মুক্তি দিতে বাধ্য।

আরুশঃ আমি জানি।

সায়রাঃ বলেন কি করতে হবে!!

____________________________________________________________________________________________________________

🍁



#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here