তুই যে শুধুই আমার পর্ব ২১

#তুই_যে_শুধুই_আমার [ ❤You are only mine❤ ]
#সিজন_2
#Part_21
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

🍁

আজ রিসাবের সাথে সায়রার বিয়ে। কিছুক্ষণ আগেই জান্নাত এসে সায়রাকে রেডি করিয়ে গিয়ে গিয়েছে। সায়রা নিজের রুমে মন মরা হয়ে বসেছে আছে। সে যত যাই বলুক না কেন যে সে আরুশকে ঘৃণা করে কিন্তু মনের এক কোনে যে আরুশ এখনো রয়েই গেছে। যা সে চাইলেও হুট করে সরাতে পারবে না।
একটু জান্নাত হাতে একটা শরবতের গ্লাস নিয়ে রুমে আসলো। গ্লাসটা সে সায়রার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো।

জান্নাতঃ নে খেয়ে নে। সকাল থেকে কিছু খাস নি।

সায়রাঃ ভালো লাগছে নারে। নিয়ে যা আমি কিছু খাব না।

জান্নাতঃ বললেই হলো। শরীর খারাপ হলে বুঝবি পরে।

জান্নাত জোর করে ওকে জুসটা খাইয়ে দিল। তারপর রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। সায়রা সেই আগের মতই বসে রইলো। বেশ কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে সায়রার মাথা ঘুরতে শুরু করলো। চোখ দুটো বুজে আসতে লাগলো। সায়রা বিছানায় মাথা রাখতেই ঘুমিয়ে পড়লো।
সায়রা ঘুমিয়ে জেতেই জান্নাত আর আয়ান রুমে আসলো। পিছেই আরুশ। জান্নাত সায়রার সামনে এসে সায়রাকে আলতো করে ডাকতে লাগলো। কিন্তু সায়রা কোন রেসপন্স করলো না। সবাই বুঝতে পারলো ঘুমের ঔষধে কাজ করেছে। সায়রা এখন গভীর নিদ্রায় তলিয়ে আছে। আরুশ এইবার সামনে এসে কিছু না বলে সায়রাকে কোলে তুলে নেয়। আর ওকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
ইমা বেগম, রিসাব মাটিতে ঘুমিয়ে আছে। পাশেই সোফায় কাজি সাহেবও ঘুমিয়ে আছে। তাদেরকেও ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়েছে। যার ফলে সবাই এখন ঘুমে। আর কাজ করেছে আমার অপ্রিয় জান্নাত।

জান্নাতঃ আয়ান আমি কিছু ভুল করলাম না তহ!!

আয়ানঃ না একদম না। তুমি যা করেছ তা একদম ঠিক।

জান্নাতঃ তাও ভয় হচ্ছে খুব।

আয়ানঃ ভয় তহ আমারও করছে। সায়রা ঘুম থেকে উঠে কি না কি করে কে জানে।

জান্নাতঃ হুম। মাফ করে দিস ইয়ার। কিন্তু যা করেছি তোর ভালোর জনই। নিজের চোখের সামনে তোকে কষ্ট পেতে কিভাবে দেখতাম বল। তুই যে নিজ ইচ্ছায় এই বিয়ে করছিস না তা আমি জানি। আর তার উপর ভাইয়া যা করছে তা কোন অযৌগিক কিছু না। সত্যি যাই হোক তোর ভাগ্য যে ভাইয়ার সাথে জড়িত। এখন কি হবে তা উপর ওয়ালাই ভালো জানে।


🍁

সায়রার মুখে পানির ছিটা পড়তেই সায়রা আদো আদো করে চোখ খুলে তাকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু করতে সক্ষম হয় না। বেশ কিছুক্ষণ লাগে তার ঘুমের রেশটা কাটাতে। ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাতে থাকে। তারপর চোখ উঠিয়ে সামনে তাকাতেই সায়রা চমকে উঠে। কেন না সামনে বরং আর কেউ নয় আরুশ দাড়িয়ে আছে। সায়রা চারদিক ভালো করে তাকিয়ে দেখতে থাকে। আর বুঝার চেষ্টা করতে থাকে সে কোথায় আছেম। চারদিক দেখে সে স্তব্ধ হয়ে যায়। এইটা তহ আরুশের রুম। সে অবাক হয়ে আরুশের দিকে তাকায়। আরুশের মুখে এক প্রশান্তির হাসি। যা দেখে সায়রা গা জ্বলে উঠে৷

সায়রাঃ আমাকে এইখানে সাহস কিভাবে হয় আপনার?? আজ আমার বিয়ে জানেন না। সরেন যেতে দিন আমায়।

আরুশঃ বরকে ফেলে কোথায় যাবে সায়ুপাখি?

সায়রাঃ মানে!!

আরুশঃ মানে আজ আবার তোমার আমার বিয়ে।

সায়রাঃ আপনি ভাবলেনও কি করে আপনাকে আমি বিয়ে করবো?? আমি মরে যাব তাও আপনাকে বিয়ে করবো না।

আরুশঃ বিয়ে তহ তোমায় আমাকে করতেই হবে। তা না হলে এর পরিনতি কি হবে তা তুমি ভাবতেও পারবে না।।

সায়রাঃ যা ইচ্ছা তা করুন। আপনার মত অমানুষকে আমি বিয়ে করতে পারবো না। আপনি আমার বাবার হত্যাকারী। আর একজন হত্যাকারীকে আর যাই হোক বিয়ে করা যায় না।

এইসব শুনে আরুশের মাথায় রক্ত চড়ে বসে। সে নিজের হাত মুষ্টি বদ্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। তারপর নিজেকে সংযত রেখে চোয়াল শক্ত করে বলে।

আরুশঃ শেষবারের মত ভালো ভাবে জিজ্ঞেস করছি পেপারে সাইন করবে কিনা??
টেবিলের উপর কাগজটা হাতে নিয়ে।

সায়রাঃ নায়ায়ায়া।।

আরুশ এইবার নিজের রাগ সংযত রাখতে পারলো না। খুব জোরে সায়রার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল সে৷ তারপর চিল্লিয়ে বলে উঠলো।

আরুশঃ সাইন কর বলছি!! তা না হলে তোর সাথে ঠিক কি কি হবে তা তুই ভাবতেও পারবি না।

সায়রাঃ করবো না আমি সাইন!!আপনার যা ইচ্ছা তা করতে পারেন!!

নিজের গালে হাত রেখে কাদতে কাদতে বললো সায়রা।।থাপ্পড়ের ফলে সায়রার গাল লাল হয়ে গিয়েছে সাথে বেশ ফুলেও গিয়েছে।।
কিন্তু আরুশ সেই সব তক্কোয়া না করে সায়রার চুলের মুঠি ধরে বলে।

আরুশঃ কেন সাইন করবি না শুনি?? রিসাবকে বিয়ে করবি বলে??

সায়রাঃ যদি বলি হ্যাঁ! তাকেই বিয়ে করবো আমি।

আরুশঃ তাহলে তা তুই ভুলে যা!! কেন না #তুই_যে_শুধুই_আমার।। তুই আমার ছাড়া আর কাউরো হতে পারিস না। আমার বাদে অন্য কাউরো হওয়ার চিন্তা ভাবনা করলে তোকে জ্যান্ত পুতে দিব।

সায়রাঃ আমি আপনার কেউ না শুনেছেন!! আমি আপনার কেউ নই আর না আপনি আমার কেউ!! আমি কোনদিনও আপনার হবো না!! তাই আপনার ইচ্ছা তা করুন।

আরুশঃ তুই ভালো করেই জানিস আমি কি করতে পারি আর কিনা। তাই যা বলছি তা কোর। তা না হলে এই লোক দেখানো বিয়ের আগেই তোকে আমি আপন করে নিতে বাধ্য হবো।। আর তা যে অবৈধ হবে না তা তুইও জানিস আর আমিও। কিন্তু তা যে এই সমাজ জানবে না। তাদের চোখে যে এইটা অবৈধ হবে। তখন নাম তোরই খারাপ হবে। তোর পরিবারকে দেখলে সবাই ছি ছি করবে।।

সায়রাঃ করবো না আমি সাইন। পাগল হয়ে গিয়েছেন নাকি আপনি। কিসব যা তা বলছেন। মানি না আমি ওইসব। আমাদের মধ্যে আগে কিছু থেকে থাকলেও বর্তমানে আমাদের মধ্যে কিছু নেই। আছে শুধু ঘৃণার সম্পর্ক। তাই এইসব পাগলামো বন্ধ করেন।

আরুশঃ বাহ রে।। বললেই হলো যে আমাদের মাঝে কিছু নেই। ভুলে যাস না তুই আমার বউ। কিন্তু তার প্রমাণ আজ নেই বলে এই ভাবিস না যে সত্যিটা পাল্টে যাবে। এই বিয়াটা আমি শুধু লোক দেখানোর জন্য করছি আর প্রমাণ করার জন্য তুই লিগালি আমার ওয়াইফ বুঝলি!! তা না হলে এই বিয়ের কোন দরকারই ছিল না।। তুই তহ আগে থেকেই আমার।

সায়রাঃ মানি না আমি সেই বিয়ে। মানি না আপনাকে স্বামী। কেন না যাকে আমি ঘৃণা করি তাকে নিজের স্বামী হিসাবে আমি কোন মতেই মানতে পারবো না। যে নাকি আমার বাবার হত্যাকারী তাকে আর যাই হোক স্বামী বলে মানা যায় না।

আরুশঃ সায়রা শেষ বারের মত বলছি সাইন করে দে। তা না হলে আমি যা করতে চাচ্ছি না তা করতে আমি বাধ্য হবো।

সায়রাঃ এছাড়া আর পারেন কি আপনি। আপনার কথায় যদি কেউ অবাধ্য হয় তাহলে তার সর্বনাশ যে নিশ্চিত। আর তার জীবন্ত প্রমান আমার বাবা।

আরুশঃ যা জানো না তা নিয়ে কথা কেন বল। তুমি যে আসল সত্যিটা জানো না।

সায়রাঃ থাক আপনাকে আর আসল সত্যিটা বলতে হবেনা। বরং আসল সত্যিটা কি তা আমি বলছি, আর সত্যি এইটাই যে আপনার জন্য আজ আমার বাবা আমার পাশে থেকেও নেই।। আমার কাছে থেকে অনেক দূরে।। আজ আপনার জন্য আমার উপর বাবার ছাঁয়া নেই।

আরুশঃ তোমায় এখন সত্যিটা বললেও তুমি বিশ্বাস করবে না।। তাই এখন তোমায় তা বলতেও আমি ইচ্ছুক নই। যখন সময় হবে তুমি আপনা আপনি সত্যিটা যেনে যাবে। এখন চুপচাপ সাইন করো।

সায়রাঃ করবো না।

এইবার আরুশ আরও রেগে যায়। সে সায়রার চুলের মুঠি আরও শত করে ধরে বলে।

আরুশঃ ভেবে বলছিস তহ। যদি তুই এখন সাইন না করিস তাহলে শুনে রাখ আমি তোর আর তোর পরিবারের মান সম্মান সব ধূলোয় মিশিয়ে দিব। সমাজে তুই আর কাউকে মুখ দেখাতে পারবি। কলঙ্কিত হবি তুই সকলের কাছে। আর এইদিকে তোর বাবার চিকিৎসাও অফ হয়ে যাবে। চিকিৎসার অভাবে তোর বাবা এমনেই মরে যাবে। কেউ তোদের সাহায্য করবে না। এমন কি ফিরেও তাকাবে না। ওই রিসাবও না।
আর আমাদের মধ্যে যে পবিত্র সম্পর্কটি আছে তা সকলের কাছে অপবিত্রতে পরিনত করতে আমি বাধ্য হবো।

সায়রাঃ না আপনি এইসব করতে পারেন না!! আপনি এত নিচে নামতে পারেন না!!

আরুশঃ তুই ভালো করে জানিস আমি কি করতে পারি তা তুই ভালো করেই জানিস। তাই সাইন জলদি সাইন কর।

সায়রা নিচের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ নিজের চোখের জল ফেলেই চলেছে। মানুষ এতটা নিচ হতে পারে তা সায়রার জানা ছিল না।
সায়রা এখন ভালো করেই জানে যে এখন যদি আরুশের কথা অনুযায়ী সাইন না করে তাহলে আরুশ যা বলছে সে ঠিক তাই করবে। আর সায়রা যাই হোক নিজের বাবাকে হারাতে পারবে না। বাবার জন্য যদি নিজের জান দিয়ে দিতে হয় তাহলেও সে খুশি খুশি দিয়ে দিবে। সেখানে নরমাল একটা সাইন তহ কিছুই না।
সায়রা নিজের চোখের জল মুছে রেজিস্ট্রার পেপার হাতে নিয়ে সাইন করে দেয়,, সাইন করার সাথে সাথে আরুশ পেপারটি নিয়ে নেয়। আর এক বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়।

আরুশঃ আগে সাইনটা করে দিলে এত ড্রামা করা লাগতো না। সে যাই হোক কনগ্রেচুলেশন মিসেস খান। তুমি এখন আবার পুরো পুরি ভাবে আমার হয়ে গিয়েছ। এখন কেউ চাইলেও আমাদের আলাদা করতে পারবে না।

সায়রাঃ আমাকে পাওয়ার জন্য এত নিচে না নামলেও পারতেন। সেই যাই হোক যদি মনে করে থাকেন এই কাগজের জোরে আমি আপনাকে স্বামী মানতে বাধ্য হবো তাহলে আপনি ভুল। কেন না আমি আপনাকে স্বামী হিসাবে মানি না আর না কোন দিন মানবো। আমার সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই এক্সেপ্ট ঘৃণার।

আরুশঃ ভালবাসা হোক আর ঘৃণারই হোক আমাদের মধ্যে যে সম্পর্ক আছে এইটা মেইন ফ্যাক্ট। আর তুমি চাইলেও কি আর না চাইলেও কি তুমি আমার। আর আজীবন আমারই থাকবা। তাই আমার থেকে দূরে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে ঝেরে ফেলে দাও। #তুই_যে_শুধুই_আমার কথা একদম মাথায় গেথে নাও। এতেই তোমার মঙ্গল।

এই বলে আরুশ দরজা লাগিয়ে হনহনিয়ে চলে যায়। আর সায়রা নিচে বসেই কাদতে থাকে। সে ভেবে পাচ্ছে না কিভাবে সে এমন অমানুষকে ভালবাসতে পারলো যে কিনা তার ফ্যামিলিকে বর্বাদ করতে দ্বিমতও প্রকাশ করছে না। সায়রা আর যাই হোক আরুশকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে না। কিছুতেই না।



#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here