#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব_১১
বর্ষণকে উঠে আসতে দেখে শাফিন জিজ্ঞেস করলো, কি হলো ভাইয়া! আপনার কি কিছু লাগবে?
বর্ষণঃ না তেমন কিছুনা। একা একা বসে থাকতে ভালো লাগছিলনা তাই এখানে আসলাম।
শাফিন বর্ষণের কথা শুনে মনে মনে ভাবছে,, তো কাবাবের হাড্ডি হতে কে বলেছিল! ভালোই যখন লাগবেনা তখন এখানে আসতে কে বলেছিল। পুরো আনন্দটাই মাটি করে দিলো!
নৃত্যের জন্য তৃতীয় নাম ঘোষণা করতে গিয়ে রিঙ্কু স্যার তো অবাক ।প্রতিযোগির নাম দেখে ভুত দেখার মতো চমকে ওঠে স্যার। এটা কি করে সম্ভব! একবার লিস্টের দিকে তাকাচ্ছে একবার বর্ষার দিকে তাকাচ্ছে। তারপর রিঙ্কু স্যার ঘোষণা করলেন, এবার নৃত্য পরিবেশন করবেন আমাদের ডিপার্টমেন্টের প্রথম বর্ষের ছাত্রী মেঘলা ইসলাম বর্ষা।
ঘোষণা শুনে বর্ষার তো প্রাণটা প্রায় যায় যায় অবস্থা। বর্ষা তো অংশগ্রহণ করেনি তাহলে ওর নাম লিস্টে এলো কি করে! বর্ষা শাফিনের দিকে তাকিয়ে বলে শাফিন ভাইয়া আমার নাম টা কে দিয়েছে? আমি আগেও বলেছি নৃত্য করতে পারবো না আর এখনো বলছি এটা আমার পক্ষে একদমই সম্ভব নয়।
বর্ষার নাম ঘোষণার সাথে সাথে সবাই হৈচৈ শুরু করে দিয়েছে। সবাই খুব খুশি আর আগ্রহ নিয়ে বসে আছে বর্ষার নৃত্য দেখবে বলে। সবার এতো আগ্রহ দেখে স্যারেরাতো খুবই খুশি।
বর্ষা স্টেজে উঠছেনা দেখে স্যার বর্ষার কাছে গিয়ে বললো এনি প্রবলেম বর্ষা?
বর্ষাঃ আমি নৃত্য করবোনা বলে লিস্টে নাম দেইনি বাট নাম আসলো কি করে?
স্যার বুঝতে পেরে বললো ওকে বর্ষা তুমি একটু সময় নিয়ে নিজেকে তৈরি করো আমি ততক্ষণে সামলে নিচ্ছি ওদিকটায়। যেহেতু ঘোষণা করে দিয়েছি এবার তুমি পারফর্ম না করলে আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর বদনাম হয়ে যাবে। তুমি একা একা পারফর্ম করতে না চাইলে কারও সাথে করতে পারো।নদী আছে শাফিন আছে এছাড়াও অনেকে আছে যার সাথে ভালো লাগে পারফর্ম করতে পারো।
শাফিনের সাথে পারফর্মের কথা শুনে বর্ষণের তো রাগে চোখমুখ লাল হয়ে আছে। বর্ষা দেখে ভয় পেয়ে যায়।কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
বর্ষাঃ স্যার আমি সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসেনি আর আমার ড্রেসআপও নৃত্যের জন্য পারফেক্ট নয়। আ’ম সরি😔
বর্ষার কথা শুনে শাফিন বললো তুমি এভাবে কেনো বলছো তুমি যে ড্রেসআপই করোনা কেনো সেটাতেই পারফেক্ট।এভাবেই পারফর্ম করতে পারবে অনেক সুন্দর লাগবে।
বর্ষণ রেগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে। এটা হলো বর্ষণের রাগ কন্ট্রোলের প্রচেষ্টা মাত্র।
কারণ বর্ষণ ক্যাম্পাসে আসার পর থেকে শাফিন কে ফলো করে যাচ্ছে। বর্ষণ আর বর্ষাকে একসাথে দেখে শাফিন যে খুশি হয়নি সেটা বর্ষণ খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। শাফিন বর্ষার প্রশংসা করেছে বর্ষা হেসে হেসে তা সায় দিয়েছে সেটা ও বর্ষণের নজর এড়ায়নি।
নবীনদের ফুল দিয়ে বরণ করার সময়, শাফিন অন্য কাউকে নিজ হাতে ফুল দিয়ে বরণ না করলেও বর্ষাকে ঠিকি এক গুচ্ছ গোলাপ আর রজনীগন্ধা দিয়ে বরণ করেছে।যেখানে বাকিরা একটা ফুলের ভাগিদার সেখানে বর্ষা পেলো এতোগুলা ফুল! এটাও বর্ষণকে নিজে চোখে দেখে মেনে নিতে হবে? এটা কি স্বাভাবিক কিছু? এখন আবার বর্ষার নৃত্যের পার্টনার হবে কিনা শাফিন?! সেটা কি আদৌ সম্ভব! বর্ষণের চোখের সামনে সেটা কি বর্ষণ হতে দিতে পারে?
নদীকে ডেকে একটু দুরে নিয়ে বর্ষণ কিছু একটা বললো। তরপর স্টেজের পাশে এসে আবার দাঁড়ালো।
হঠাৎ মিউজিক বেজে উঠলো..
বর্ষণ স্টেজে মিউজিকের তালে তালে নৃত্য করছে। বর্ষা সেটা দেখে তো নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা।বর্ষা নদীকে বলছে এই পেতনী আমায় চিমটি কাট তো! এটা কি আমি ঠিক দেখছি?
নদী বর্ষাকে জোরেসোরে একটা চিমটি কাটে।বর্ষা আউচ!! বলে চিল্লিয়ে বলে এই শাঁকচুন্নি এতো জোরে চিমটি কাটতে বলেছি নাকি।নদী তখন দাঁতের পাটি বের করে বলে চিমটি যখন কাটতেই বললি তখন আস্তে কেটে লাভ কি বল।আর তুই ঘোরের মধ্যে আছিস জোরে চিমটি না কাটলে তো বাস্তবে ফিরতিনা। ওদের দুজনের কথার মাঝেই –
বর্ষণ নৃত্য করতে করতে স্টেজের একপাশে চলে আসে যেখানে বর্ষা দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষার কাছে এসে হাত বাড়িয়ে দেয় বর্ষণ। বর্ষাও বর্ষণের হাত ধরে স্টেজে চলে আসে।
বর্ষাকে স্টেজে দেখে সবাই তো বর্ষা বর্ষা বলেই চলেছে আর করতালি দিয়ে উৎসাহিত করছে।
বর্ষণ আর বর্ষা স্টেজে নৃত্য করছে বাকিরা মুগ্ধ হয়ে সেই নৃত্য দেখছে। বর্ষার নাচে পারদর্শী সেটা সবাই না জানলেও অনেকেরই তা জানা কিন্তু বর্ষণের নৃত্য দেখে তো সবাই হা হয়ে আছে।
একে তো চকলেট বয় তার উপর এতো সুন্দর নৃত্য সবাই যেনো রুপকথার রাজ্যে ডুবে আছে।
অন্যদিকে বর্ষার সাথে অন্য কাউকে নাচতে দেখে শাফিন তো জ্বলছে আর লুচির মতো ফুলছে।কারণ শাফিন ভেবেছিলো এই নৃত্যে বর্ষার সাথে জুটিটা তারই হবে কিন্তু সেটা আর হলোনা। শাফিনের সব আশায় এক গ্লাস পানি ঢেলে দিয়েছে বর্ষণ।
শাফিন বর্ষার নাচের পার্টনার হবে বলে সবার অজান্তেই বর্ষার অনুমতি ছাড়াই লিস্টে নাম লিখে দিয়েছে।
কিন্তু শাফিন তো আর জানেনা বর্ষণ কি জিনিস। শাফিনের এই নিছক প্ল্যান যে বর্ষণের মাস্টার মাইন্ডের কাছে নিতান্তই তুচ্ছ সেটা হয়তো শাফিন জানতো না।
গান বেজে যাচ্ছে…
🎶 ধাধিনা নাতিনা ধাধিনা নাতিনা
ধাধিনা নাতিনা ধাধিনা নাতিনা
ধাধিনা নাতিনা ধাধিনা নাতিনা ভোরের দরজা হাট
নাতিনা ধাধিনা শুনছি নতুন শতাব্দীতার ডাক (২)
আজকে ভালো যেটা হয়তো কালকে ভালো নয়
আজকে যেটা দোটানাতে কালকে সে নিশ্চিয়
জীবন মানে ওঠা পরা জীবন ভাঙা গড়া
ভাঙতে গড়তে উঠতে পড়তে সময় চলে যায়
মন্দ ভালো সাদা কালোয় জীবন বয়ে যায়
ধাধিনা নাতিনা ধাধিনা নাতিনা ভোরের দরজা হাট
নাতিনা ধাধিনা শুনছি নতুন শতাব্দীতার ডাক।
পুরোটা লিখলাম না গান 😊
তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করছে বর্ষা আর বর্ষণ। অন্যদিকে তাদের কোনো খেয়াল নেই। বর্ষা তো এক মনে বর্ষণে মুগ্ধ। অন্য দিকে খেয়াল থাকবে কি করে।
নৃত্য শেষে স্টেজে দাঁড়িয়ে আছে বর্ষণ আর বর্ষা। সবার অনেক বাহবা পেয়েছে তা। অবশ্য পারফর্ম টাও করেছে দারুণ। এক কথায় বাহবা পাওয়ার মতোই পারফর্ম করেছে তারা।
রিঙ্কু স্যার গিয়ে বর্ষণের সাথে করমর্দন করে তাকে বুকে জরিয়ে ধরে। আর অনেক ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতায় ভরিয়ে দেয়। কারণ আজ বর্ষণ এভাবে বর্ষাকে নিয়ে পারফর্ম না করলে হয়তো বর্ষা পারফর্ম ই করতোনা। যেটা ডিপার্টমেন্ট এর জন্য খুব অসম্মানের।
তারপর এক এক করে বাকি সবাই পারফর্ম করলো।
বর্ষা শাড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছে।এমনিতে শাড়ি পড়তে পারে না তার উপর আবার নৃত্য। অবশ্য নৃত্যের সময় কয়েকবার পরতে পরতে বেঁচে গেছে বর্ষণের জন্য।বর্ষণ সামলে নিয়েছে সব।
বর্ষাঃ নদীকে ফিসফিসিয়ে বলছে তুই এদিকটা সামলা আমি শাড়ির পিনগুলো ঠিক করে লাগিয়ে আনি।
নদীঃ এখন দোতলায় যাবি একা? ওদিকটা তো একদম ফাঁকা। কেউ নেই এখন আমি আসবো?
বর্ষাঃ আরে না, তোকে আসতে হবেনা আমি এক্ষুনি চলে আসবো।
নদী বললো যাহ্ তবে জলদি ফিরে আসিস।
বর্ষা দোতলায় চলে যায় এদিকটা একদম ফাঁকা।বর্ষা নদীকে আসতে নিষেধ করলেও এখন মনে মনে ভাবছে শুধু শুধু নদীকে সাথে করে আনলামনা। এদিকটায় এমন ফাঁকা জানলে নদীকে সাথে করেই নিয়ে আসতাম।
শাড়ির পিন ঠিক করে পিছনে ঘুরতেই কেউ বর্ষার হাত ধরে টেনে পাশের রুমে নিয়ে যায়। বর্ষা চিৎকার করবে তার আগেই মুখ চেপে ধরে।
#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hrita_Hridi
#পর্ব_১২
বর্ষার হাত ধরে টেনে পাশের রুমে নিয়ে দেওয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরেছে। একহাতে মুখ চেপে ধরেছে যেনো আচমকা চিৎকার চেচামেচি করতে না পারে বর্ষা।
বর্ষার হাত এতো শক্ত করে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরেছে যে, হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করতে গিয়ে আরও ব্যাথা পেতে হচ্ছে ওকে।
রুমের জানালা বন্ধ থাকায় খুব আলো না থাকলেও এতোটাও অন্ধকার নেই যে, কাউকে চেনা যাবেনা।
সামনে থাকা মানুষটাকে খুব ভালো ভাবেই দেখতে পাচ্ছে বর্ষা।
বর্ষা দেওয়ালের সাথে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে সামনে থাকা ব্যক্তির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বললো তুমি!?
বর্ষণ তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বললো, কেনো অন্য কাউকে আশা করেছিলি বুঝি?
বর্ষাঃকি বলছো ভাইয়া! আমি অন্য কাউকে আশা করতে যাবো কেনো ? আর অন্য কাকে আমি আশা করবো বলো?
বর্ষণঃ রেগে চোয়াল শক্ত করে বলে, কেন?তোর শাফিন ভাইয়া!
বর্ষাঃবুঝতে পেরেছে বর্ষণ খুব রেগে আছে এখন কিছু বলতে যাওয়াটা বোকামি হবে। তাই শাফিনের বিষয়ে কিছু না বলে বললো, ভাইয়া হাতটা ছাড়ো আমার লাগছে।
বর্ষণঃ হাতটা আরও শক্ত করে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে রাগে ফুসতে ফুসতে বলে তোকে কতোবার বলেছি বল! কারো সাথে না মিশতে।কোনো ছেলের সাথে মেশা, কথা বলা তো নয়ই।অন্য কোনো ছেলের মুখে প্রশংসা শুনতে তোর খুব ভালো লাগে তাইনা?
অন্য পুরুষ তাকিয়ে থাকবে, প্রশংসা করবে বাজে অফার করবে এটাতে তুই খুশি তাইনা? অন্য কেউ তোর সাথে নৃত্য করবে, টাচ করবে এই জন্য নাম লিস্ট করিয়েছিস?
বর্ষাঃ এসব কি বলছো ভাইয়া! এমনটা কিছুই ন…
বর্ষণঃ বর্ষাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
বর্ষাঃ চুপচাপ ওখানে দাঁড়িয়েই কান্না করতে থাকে।আর কান্না করাটাই তো স্বাভাবিক। বর্ষা তো এসব ইচ্ছাকৃত ভাবে করেনি। ইনফ্যাক্ট নৃত্যের বিষয়টা বর্ষা জানেও না।
বর্ষাঃ কান্নাকাটি করার পরে ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য। কেননা চোখ মুখের যে অবস্থা হয়েছে এভাবে কারও সামনে যাওয়া যাবেনা। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখলো নদী ওয়েট করছে। কিরে তুই এখানে?
নদীঃ হুম, বর্ষণ ভাইয়া বললো তোর নাকি হেল্প লাগবে তাই পাঠিয়ে দিলো।
বর্ষাঃ না আমার কোনো হেল্প লাগবেনা। আমি ঠিক আছি চল।
নদীঃ সে তো দেখতেই পাচ্ছি কেমন ঠিক আছিস। চোখমুখের কি অবস্থা করেছিস।এদিকে আয় আমি ঠিক করে দেই। বলেই নদী বর্ষাকে আগের মতো করে সাজুগুজু করিয়ে দেয়।
বর্ষাঃ কিরে পেত্নী তুই কি সবসময় এগুলো সাথে করে নিয়ে ঘুরিস?
নদীঃ হুম।ভাগ্যিস সাথে নিয়ে ঘুরি তা না হলে তো এখন আবার তোকে পার্লারে নিয়ে যেতে হতো😏
বর্ষা নদী কথা বলতে বলতে স্টেজের কাছে চলে আসে। বর্ষা তাকিয়ে দেখে বর্ষণ চুপচাপ বসে আছে।অনুষ্ঠান শেষে বর্ষণ গাড়িতে বসে আছে। নদীর সাথে কথা বলতে বলতে গাড়ির পাশে এসে নদীকে বিদায় দিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।
বর্ষা গাড়িতে উঠতেই গাড়ি নিয়ে ছুটে চলে বর্ষণ। সারাটা সময় ধরে একটা কথাও বলেনি বর্ষার সাথে।
বাসায় এসে সোজা নিজের রুমে চলে যায় বর্ষণ। বর্ষাও কোনো কথা না বলে সোজা উপরে চলে যায়।বর্ষা এক ঘন্টা ধরে সাওয়ার নিয়ে বের হয়।
সবাই একসাথে লাঞ্চ করছে। বর্ষা আর বর্ষণ কোনো কথা বলছেনা। রমা বেগম জিজ্ঞেস করেছে কেমন কাটলো সারাদিন , অনুষ্ঠান কেমন হলো। বর্ষা জবাব দিলেও বর্ষণ কোনো জবাব না দিয়ে চুপচাপ খেয়েই চলেছে।
খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে গিয়ে বর্ষণ ঘুমিয়ে পরে।
বর্ষার খাওয়া শেষ হলে রমা বেগম জিজ্ঞেস করলো৷ কিরে বর্ষা! বর্ষণের কি মুড অফ নাকি।
বর্ষা রমা বেগমকে ভার্সিটির সব কথা খুলে বলে। রমা বেগম বললো এবার বুঝতে পারছি আমার ছেলের মুড অফের কারণ।
রাতের খাবার খাওয়ার সময়ও বর্ষণ কোনো কথা বলেনি।
বর্ষাও রাতের খাবার খেয়ে দেরি না করে ঘুমিয়ে পরে। সারাদিনের ব্যাস্ততায় শরীরটা বড্ড ক্লান্ত।
বর্ষা সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামবে তখন শুনতে পায় বর্ষণ নিপুকে ডেকে কফি দিতে বলছে।
বর্ষা নিচে নেমে রমা বেগমের পাশে দাঁড়াতেই বর্ষার হাতে কফির মগ ধরিয়ে দিয়ে বললো যাহ্ গিয়ে বর্ষণকে দিয়ে আয়।
বর্ষাঃ আমি যাবোনা।নিপু কোথায়? তুমি নিপুকে পাঠাও।
রমাঃ নিপু থাকলে কি আর তোকে পাঠাতাম?নিপু একটু বাইরে বেরিয়েছে আর আমার হাতে কাজ আছে তাই যেতে পারবোনা।
বর্ষাঃতোমার কি কাজ আছে সেটা আমায় বলো আমি করে দিবো। তোমার ছেলের কফি তুমি নিজে গিয়ে দিয়ে আসো।
রমাঃ না মা তোমায় আর এসব কাজ করতে হবে না। শেষে আবার কি বিপত্তি ঘটিয়ে বসবে আল্লাহ জানে। তুমি লক্ষি মেয়ের মতো কফিটা দিয়ে আসলেই হবে।
বর্ষার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বর্ষণকে কফি দিতে যেতে হচ্ছে বলে মনে মনে কতো যে কথা শোনাচ্ছে নিপুকে আর বর্ষণকে। তা শুধু আল্লাহ ই ভালো জানে। মনে মনে কথা শোনাতে শোনাতে বর্ষণের রুমে যায়। গিয়ে দেখে বর্ষণ নেই। বর্ষা তো মহা খুশি। কফির মগটা টি টেবিলে রেখে ঘুরে দাঁড়াতেই। বর্ষণের সামনে পরে যায়।
বর্ষণ সাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে বর্ষাকে নিজের রুমে দেখে রেগে যায়। বর্ষাকে ধমক দিয়ে বলে তুই কেনো আমার রুমে?
বর্ষাঃ মামনী বলেছিলো ক ক কফিটা ত তো তোমায় দি দিতে। নিপু বাসায় নেই বাইরে গিয়েছে তা-ই এসেছি বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে বর্ষা।
বর্ষণঃ নিপু নেই তো কি হয়েছে? তোকে কফি আনতে হবে? আমার কফি লাগবেনা তুই যা।
বর্ষা কফি নিয়ে ফিরে যাচ্ছে হঠাৎ বর্ষণ হাত ধরে বললো কোথায় যাচ্ছিস?
বর্ষাঃ কেনো? তুমি তো চলে যেতে বললে তাই চলে যাচ্ছি।
বর্ষণঃ যাবি যা কফি নিয়ে যাচ্ছিস কেনো?
বর্ষাঃ তুমি তো বললে কফি লাগবেনা। তাই নিয়ে যাচ্ছি।
বর্ষণঃ বেশি পাকামো করিস তাইনা! কফি মগ রেখে যা।
বর্ষা মগ রেখে চুপচাপ চলে আসে।বর্ষা বুঝতে পেরেছে বর্ষণ খুব বেশিই রেগে আছে। এই সময় বর্ষণকে আর না রাগানোই ভালো। আজ শুক্রবার তাই ভার্সিটি ও বন্ধ। সারাদিন গল্প গুজবে কেটে গেছে বর্ষার।
শনিবার সকালে নাস্তা করে রুমে বসে আছে বর্ষা। ভেবেছে আজ ভার্সিটি যাবেনা।
বর্ষার এটা ভাবার যথেষ্ট কারণ ও রয়েছে। বর্ষণ তে বর্ষার উপর রেগে আছে তাই বর্ষা তাকে বলতে পারবেনা ভার্সিটিতে নিয়ে যাওয়ার কথা আর দ্বিতীয়ত বর্ষা তো একা একা ভার্সিটি গেলে বর্ষণ তাকে পানি ছাড়াই গিলে খাবে!
নিপু এসে বর্ষা রেডি হয়নি দেখে বললো জলদি রেডি হয়ে নাও বর্ষণ ভাইয়া গাড়িতে ওয়েট করছে।
এটা শুনে বর্ষা তো লাফিয়ে উঠে দুই মিনিটে রেডি হয়ে নিচে দৌড়ায়।
গাড়িতে উঠে বসতেই, বর্ষণ একবার বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলে ক্লাস কয়টায় আর এখন কটা বাজে?
বর্ষা আমতা আমতা করে বলে না মানে ভেবেছিলাম আজ যাবোনা তাই লেট হয়ে গেছে।
বর্ষণঃ হোয়াট! যাবিনা মানে? ক্লাস ফাঁকি দিতে চাস? ফাঁকিবাজ কোথাকার?
বর্ষা তো বর্ষণের এমন কথা শুনে অবাক হয়ে গেছে। যে কিনা গতোকাল ও এতো বকাঝকা করলো সে ই কিনা আজ এসব বলছে?
চলবে…..
(