#তুমি_আমার_অধিকার(পর্ব:৪)
#লেখীনিতে_নাফিসা_আনজুম
,,
এই সাদিয়া আপুর সাহস কি করে হয় আমার রোহান ভাইয়ের পাশে বসার। আর রোহান ভাই ও না, ড্রাইভারের পাশে বসলেই তো হতো।নাহ সাদিয়ার পাশেই বসতে হবে।
এদিকে, রোহান সাদিয়াকে পাশে বসতে দেখে বললো,
কি ব্যপার সাদিয়া তুই ,,
রোহানের বাবা বললো, সাদিয়া বাড়িতে যাবে রোহান তুমি তো ঐ পার্শে যাবে সাদিয়াকে নামিয়ে দিয়ে যাবা।
রোহান কিছু না বলে কাকে যেনো ফোন করলো,,
গাড়ি চলছে আপন গতিতে রোহানের শুধু রুহির কান্নামাখা মুখটাই মনে পরছে। এই পিচ্চি পাগ*লিটাকে কিভাবে বোঝাবো ওকে আমি কতটা ভালোবাসি।
সন্ধ্যায় রোহান ঢাকায় পৌঁছিয়ে রুহিকে ফোন করে বলল, কি ব্যপার রুহি তুই এখনো খাস নি কেনো।
আসলে রোহান আর সাদিয়াকে একসাথে যেতে দেখে রুহির খুব খারাপ লাগছিলো তাই খেতে ইচ্ছে করে নি। কিন্তু সেটা রোহান ভাই কিভাবে জানলো,,
তোকে কে বললো আমি খাই নি,,
যেই বলুক না কেনো, তুই এখনো না খেয়ে আছিস কেনো এক্ষুনি খেয়ে নিবি।
হুমম আচ্ছা,,
রোহান ফোন কেটে ভাবতে থাকে এই মেয়েটাকে নিয়ে আমি কি করবো। নিজের খেয়ালটাই রাখতে পারে না। আমার ওপর এতোটা দূর্বল কেনো ও। ওকে তো নিজেকে রক্ষা করা শিখতে হবে তা না হলে আমার অনুপস্থিতিতে ও ভেঙ্গে পরবে। আর কোনো মানুষেরি কারো ওপর এতোটা দুর্বল হওয়া উচিত না যেনো সেই মানুষটা মুখ ফিরিয়ে নিলে নিজে উঠে দাঁড়াতে পারে না।
এর মাঝে কেটে গেছে আরো কয়েকটা দিন। রুহি রিপার আর একমাস পর পরিক্ষা, তাই ওরা পরাশুনা নিয়ে খুব বিজি। সাদিয়াও চলে এসেছে ও এখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছে। আজকাল সাদিয়া প্রায় সবসময়ই নিজের ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে আর মুচকি মুচকি হাসে।
রুহি সবসময় দেখে সাদিয়া বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে কারো সাথে কথা বলে,, মাঝখানে একটু জায়গা ফাঁকা থাকায় বুঝতে পারে না কার সাথে কথা বলছে।
আজ রুহির জন্মদিন, রুহি ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঘোরাঘুরি করছে আর অপেক্ষা করছে কখন রাত বারোটা বাজবে কারন রোহান বাড়িতে থাকলে ওকে সবার আগে উইশ করতো আর আজ যখন বাড়িতে নেই তাহলে অবশ্যই ফোন করেই বলবে।
বারোটা বেজে দুই মিনিট দরজায় কে যেনো কড়া নাড়ছে, রুহি এক মূহুর্তের জন্য ভেবে নিয়েছে রোহান ভাই এসেছে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখে তৌকির (রুহির ছোটো ভাই)। তৌকির ঘরে ঢুকে বোনকে একটা ঘরি গিফ্ট দিয়ে বললো হ্যাপি বার্থডে আপু।
রুহি ভাইকে জরিয়ে ধরে বলে থাংকু মাই ডিয়ার ভাই,, মনে ছিলো তোর।
তোর জন্মদিন আর আমার মনে থাকবে না এটা কি করে হয়
রুহির খুব আদরের ভাই তৌকির, আর তৌকির ও বোন বলতে পাগল। সবকিছুতেই তৌকির বোনের দিকটা আগে ভাবে। তৌকির বাড়ির সবার ছোট হওয়ায় সবাই ওকে খুব আদর করে।
এর মাঝেই রুহির বাবা ,মা, রিপা আর রোহানের বাবা মা রূহির ঘরে এসে ওকে উইশ করে । কেটে যায় আরো কিছুক্ষণ একে একে সবাই চলে যায় রুহি ফোন হাতে নিয়ে দেখে বারোটা চল্লিশ বাজে অথচ রোহান একবারো ফোন করে নি। বাধ্য হয়ে রুহি নিজেই রোহানকে ফোন করে কিন্তু রোহানের ফোন ব্যাস্ত। রুহির মনটা খারাপ হয়ে যায় এতো রাতে কার সাথে কথা বলছে রোহান ভাই। আমার জন্মদিনের কথা কি ওর মনে নেই। রুহি আরো কয়েকবার ফোন দেয় কিন্তু তবুও ব্যাস্ত। রুহি মন খারাপ করে বেলকোনিতে গিয়ে দাঁড়ায় হটাৎ চোখ যায় সাদিয়ার বেলকোনিতে। ও কার সাথে যেনো ফোন এ কথা বলছে। রুহি আবার রোহানকে ফোন দেয় সিওর হওয়ার জন্য যে ও যা ভাবছে সেটাই কি সত্যি, কিন্তু রুহি খুব করে চাচ্ছে এটা যেনো সত্যি না হয়, কিন্তু রুহির চাওয়া ভুল প্রমান করে দিয়ে সেটাই সত্যি হলো রোহানের ফোন এখনো বিজি তার মানে রোহান সাদিয়ার সাথেই কথা বলছে।
রুহি কাঁদতে কাঁদতে ঘরে আসে,, এমন কেনো করলি রোহান ভাই। কেনো আমাকে ভালোবাসলি না, আমি এতো দিন ভুল ভাবতাম। তোর কেয়ার তোর শাসন সব দেখে ভাবতাম তুই আমাকেই ভালোবাসিস কিন্তু না তুই আমাকে কখনো ভালোইবাসিস নি। তুই আমাকে বোন ছাড়া আর কিছুই ভাবিস নি।
ঠিক আছে বাসতে হবে না ভালো, আমি আর তোর কোনো কথাই শুনবো না।
,,
পরেরদিন সকালে রুহি চোখ মেলে তাকাতেই দেখে রোহান ওর ওপর কিছুটা ঝুঁকে আছে তা দেখে রুহি এক লাফে উঠে বসে,
তুই, তুই আমার ঘরে কেনো এসেছিস,,
তোর ঘরে কি আসা বারন নাকি,
হ্যা, তুই আসবি না আমার ঘরে, তোর গার্লফ্রেন্ড এর ঘরে যা তুই আমার ঘরে কেনো এসেছিস,
ঠিক আছে আসবো না, কিন্তু রেগে যাওয়ার কারন কি, এই যে তোর বার্থডে গিফট আর আজকে আমরা সবাই মিলে ঘুরতে যাবো , আর তোর জন্য আরো একটা সারপ্রাইজ আছে।
রুহি গিফ্ট এর প্যাকেটটা নিয়ে এক ঝাটকায় নিচে ফেলে দেয়, আমি চাই না তোর কোনো গিফট, তোর থেকে কিচ্ছু নেবো না আমি।
রোহান বুঝতে পারছে না রুহি হটাৎ এমন করছে কেনো, ও তো কখনো আমার ওপর এভাবে রাগ দেখায় না। রোহান ভাবলো হয়তো ওর মাথায় পেইন করছে তাই এখন ওকে রাগানো ঠিক হবে না পরে এসে কথা বলে নিবে। আর সারারাত জাগার কারনে রোহানের শরীরটাও খারাপ লাগছে তাই ও রুহিকে আর কিছু না বলে নিজের ঘরে চলে যায়।
রোহান যাওয়ার পর রুহি নিচে পরে থাকা ভেঙে যাওয়া কাঁচের চুড়ি আর একজোড়া নূপুড় দেখে আবারো কেঁদে ওঠে, আমি তো তোর কাছে কোনো গিফট চাই নি, তুই কেনো আমার হলি না। কেনো ভালোবাসলিনা আমাকে।
বিকেলে রোহান রেডি হয়ে নিচে যায়, সকালে সবাইকে বলে রেখেছিলো যে আজ সবাই মিলে ঘুরতে যাবে। রুহির বাবা কাজে ব্যাস্ত থাকায় শুধু উনি যেতে পারবে না এছাড়া বাকিরা যাবে। রোহান নিচে গিয়ে দেখে সবাই আছে কিন্তু রুহি নেই,,
এই মেয়েটার আবার কি হলো, কখনো তো এমন করে না, ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনলে তো ওই সবার আগে বের হয়। রিপা কে বলি ওকে ডাকতে,,
রিপা ,,
জি দাভাই
রুহি কোথায় রে,,
তুই দাঁড়া আমি এক্ষুনি দেখে আসছি,,
নাহ, তুই গাড়িতে গিয়ে বস আমি দেখছি,
ঠিক আছে,,
রোহান এসে দেখে রুহির ঘরের দড়জা লাগানো,এই রুহি , রুহি
কি হয়েছে চিল্লাস কেনো,
রেডি হয়েছিস,
আমি তো কোথাও যাচ্ছি না,
পাঁচ মিনিটের মধ্যে তোকে রেডি হয়ে নিচে দেখতে চাই,
শুনতে পাস নি তুই,বললাম না আমি কোথাও যাবো না।
রুহি আমাকে রাগাস না,আমি বলছি তুই যাবি মানে তোকে যেতেই হবে, আর না গেলে তোকে আমি বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাষায় দিয়ে আসবো। বলে রোহান নিচে চলে আসে।
এই রোহান্না কি ভাবে নিজেকে, ও যা বলবে আমাকে তাই শুনতে হবে নাকি,আমি যাবো না, না গেলে যদি আমায় সত্যি সত্যি নদীতে ভাষায় দেয়। তার থেকে ভালো যাই,,
রুহি একটা সাদা থ্রিপিস পড়ে নিচে আসে, ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া, এই সাধারন সাজেও যেনো মেয়েটাকে বড্ড মায়াবি লাগে। আমি যে বারবার তোমার চোখের মায়ায় পরে যাই পরি আমাকে এতোটা পাগল না করলেও পারতে,,,
গাইবান্ধার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বুড়িগঙ্গা নদী আর সেখানেই যাচ্ছে রুহি রা,জায়গাটা বালাসিঘাট নামে পরিচিতো, আগে সাধারন থাকলেও জায়গাটা এখন অসাধারন হয়ে গেছে, রুহি আগেও একবার এসেছিলো এখানে, অনেকদিন পর আজ আসছে,,
এখানে আসতেই রোহান ভাই এর বন্ধু নয়ন ভাইয়াকেও দেখতে পেলো রুহি।
রোহান এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল সব রেডি তো,
হ্যা ভাই সব রেডি,,তোদের আসার অপেক্ষায় করছিলাম
তারপর রুহিকে দেখে বললো, এই রুহি হ্যাপি বার্থডে (নয়ন)
ধন্যবাদ ভাইয়া (রুহি)
রোহান এসে সবার উদ্দেশ্যে বললো , মা , চাচি তোমরা এখানে থাকো আমরা একটু নৌকা করে ঘুরে আসছি,,
ঠিক আছে বাবা সাবধানে যাস (সাহেদা)
এরপর একটা নৌকায় নয়ন , সাদিয়া রিপা আর তৌকিরকে তুলে দিলো রুহি উঠতে গেলে,,
তোকে কি উঠতে বলেছি আমি,,
কেনো,আমরা যাবো না,
যাবো তবে অন্য নৌকায়,,
রুহি মনে মনে ভাবছে আমাকে অন্য নৌকায় নিয়ে গিয়ে আবার সত্যি সত্যি ফেলে দেবে নাকি,না আমি কিছুতেই অন্য নৌকায় যাবো না। তাই বুদ্ধি করে বলে, হয় আমাকে এটাতেই যেতে দিবি না হলে আমি যাবোই না,
এতো জেদ করিস কেনো তুই বিরক্তিকর,,
কিহ আমি বিরক্তিকর, হ্যা এখন তো আমাকে বিরক্ত লাগবেই এখন যে তোর মনে অন্য কেউ আছে।
রোহান রুহির হাত ধরে একটা ছোট্ট নৌকায় ওঠে,, যে নৌকাটা পুরোটাই ,,,
চলবে,,
সকালে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু পোস্ট করতে গিয়ে ভুল করে কাট হয়ে সম্পুর্ন গল্পটা কেটে গেছে।তাই আবারো লিখতে হলো। কাল বোনার্স পার্ট আসতে পারে। তবে সম্পুর্ন আপনাদের মতামতের ওপর। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ❌❌কপি করা নিষেধ ❌❌