তুমি আমার অধিকার পর্ব -০৭

#তুমি_আমার_অধিকার(পর্ব:৭)(বোনার্স পার্ট)
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম

দেখুন মিস্টার রোহান, আপনার স্ত্রি অপারেশন করলে সুস্থ হবে ঠিকি কিন্তু তার সৃতি চলে যেতে পারে। যদি ব্রেইন টিউমার হতো তাহলে ওনাকে বাচানো খুব মুশকিল হয়ে যেতো, কিন্তু যেহেতু টিউমারটা ব্রেইনে নয় সেহেতু উনি ঠিক হবে। তবে ওনার সৃতিশক্তি দূর্বল হবে। ওনাকে কোনো ভাবেই চাপ দেওয়া যাবে না। কিংবা জোর করে কিছু মনে করার চেষ্টা করা যাবে না।

রোহান ডাক্তারের কথা শুনে খুব চিন্তায় পরে গেলো। রুহি যদি সব ভুলে যায়,তাহলে কাকে নিয়ে বাঁচবে রোহান।

ডাক্তার আবারো বললেন, আমি এসব কথা আপনাদের আগে থেকেই জানিয়ে রাখলাম, যদিও বাকিটা ওপর আল্লার ইচ্ছে উনি চাইলে ভালো ও রাখতে পারে। কিন্তু আমার অবিঙ্গতা থেকে আমি যেটা বুঝলাম সেটা বললাম।
আর ওনার অপারেশনের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা লাগবে।

চিন্তার ওপর চিন্তা, এখন পাঁচ লক্ষ টাকাও তো রোহানের কাছে নেই,,

সেদিনের মতো রোহান আর রুহি ওখান থেকে চলে আসে, রুহি তো শুধু কান্না করেই চলছে আর বলছে, আমি অপারেশন করবো না রোহান। আমি ভুলে যেতে চাই না কিছু,,

রুহি তুই ভুলে গেলেও আমাদের সাথে তো থাকবি, কিন্তু অপারেশন না করলে তোর যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমিও বাঁচবো না। কিন্তু তুই বেঁচে থাকলে আমি আমার বেঁচে থাকার শক্তি পাবো। তাহলে বল তুই কি চাস,,

তার মানে তুমি আমাকে অপারেশন করাবে,,

হ্যা, তোকে অপারেশন করতেই হবে রুহি সোনা,,

কিন্তু এতো গুলো টাকা তুমি কোথায় পাবে,

রোহান রুহিকে জরিয়ে ধরে বললো, আমার বউয়ের জন্য আমি সব করতে পারি। তুই শুধু মনে সাহস রাখ। মুখে রুহিকে সাহস দিলেও ভেতরে ভেতরে চিন্তার শেষ নেই রোহানের।

রোহান মনে মনে ভেবে দেখলো, এখন যদি ও নিজের বাবার কাছে টাকা চায় তাহলে সারাজীবন মা একটা খোঁটা দেবে যে আমার টাকায় নিজের জীবন পেয়েছিস রুহি। যদিও এখন রুহিকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু বউ শাশুড়ি হলে কথা উঠতেই পারে। তাই বাবার কাছে থেকে টাকা নেবে না। তাহলে কি রুহির বাবা,,
কিন্তু ওনার কাছে এতো গুলো টাকা থাকবেই বা কি ভাবে,,,,যাই হোক আমি নিজে আগে চেষ্টা করে দেখি।

রুহিকে বাসায় রেখে রোহান খাবার নিয়ে আসতে গেলো। এখানে এসে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে উঠেছে রোহান আর রুহি,, নিচে গিয়ে বাড়িতে ফোন করলো রোহান। রুহির বাবার সাথে সাথে কথা বলে বললো ওর বাইকটা বিক্রির ব্যবস্থা করতে। অনেক প্রিয় ছিলো বাইকটা। কিন্তু তবুও ভালোবাসার মানুষটির জন্য যে কোনো কিছু করতে রাজি রোহান।

রোহানের বাইক বিক্রির কথা শুনে রুহির বাবা চিন্তায় পরে গেলেন। রুহির মা ও অনেকটা ভেঙ্গে পরলেন।রোহান পরিষ্কার করে কিছুই বলে নি, শুধু বলেছে বাইক টা বিক্রি করে যেনো টাকাগুলো ওর কাছে পাঠায়।
রোহানের মা এসব শুনে, রোহানকে ফোন করে বললেন, রোহান তুমি নিজের বাইক কেনো বিক্রি করতে চাচ্ছো,

রোহান প্রথমে বলতে না চাইলেও, মায়ের জোড়াজুড়িতে বাধ্য হয়ে সবটা খুলে বললেন, সাহেদা বেগম বুঝলেন যে ছেলে এই বাইক কেনার জন্য কতটা কষ্ট করেছে, নিজে ছাড়া এই বাইক কাউকে ধরতে দেয় নি, সেই বাইক বিক্রি করতে চাচ্ছে রুহির জন্য। কতোটা ভালোবাসলে প্রিয় জিনিসের মায়া ত্যাগ করে। তাই আর কিছু না ভেবে তিনি রোহানের বাবাকে বলে রুহির অপারেশনের সব খরচ দিয়ে দেয়।
,,

রাতে রুহি রোহানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে,
রোহান ভাই আমি ভুলে গেলে আমাকে সব মনে করিয়ে দেবে তো,,

হ্যা রে পাগলি,,তোকে সব মনে করিয়ে দেবো।

কিন্তু তবুও যদি মনে না পরে, তাহলে,,

তবুও যদি মনে না পরে তাহলে, নতুন করে ভালোবাসতে বাধ্য করবো তোকে। কিন্তু তবুও তুই শুধুই আমারি থাকবি।

কেটে গেলো আরো দুইদিন,, আজ রুহির অপারেশন। সকাল থেকে মেয়েটা রোহানকে জরিয়ে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে। আমি তোমাকে ভুলবো না রোহান ভাই। দেখো, আমার সব মনে থাকবে। আমি কিচ্ছু ভূলে যাবো না।

রোহান কিছুই বলছে না, রুহির কপালে গালে,মুখে অজস্রবার চুমু দিচ্ছে শুধু। আর জরিয়ে ধরে মনে মনে বলছে তাই যেনো হয়। আমার রুহি আমাকে ভুলে গেলে আমি মেনে নিতে পারবো না।

ওটি তে যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত রুহি রোহানের হাত ছাড়ে নি। রুহিকে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানোর সাথে সাথে রোহান কেঁদে ওঠে, কাঁদছে রোহান পাগলের মতো কাঁদছে। আশেপাশের সবাই তাকিয়ে আছে রোহানের দিকে।

রোহানের পাগলামি দেখে ইতিমধ্যে অনেকের চোখে পানি এসে গেছে। কতোটা ভালোবাসলে বউকে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানোর সাথে স্বামি কেঁদে ওঠে।রোহান কাঁদছে আর বিলাপ বকছে,,

প্লিজ রুহি আমাকে ভুলে যাস না, তুই রাগ করবি অভিমান করবি আমি সব মেনে নেবো, তোর যখন যা চাই আমি তাই তোকে এনে দেবো কিন্তু তবুও তুই আমাকে ভুলে যাস না।

দেড় ঘন্টা পর রুহিকে ওটি থেকে বের করে আলাদা রুমে রেখেছে। রুহির ঙ্গান এখনো ফেরে নি। রোহান বারবার জালানা দিয়ে দেখেছে, স্যালাইন চলছে, ঠোঁট মুখ কেমন শুকনা লাগছে রুহির।

রাত বাজে এগারোটা রুহির ঘুমন্ত মুখটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রোহান। হঠাৎ মনে হলো রুহি একটু নড়েচড়ে উঠলো, রোহান সাথে সাথে ডাক্তারকে ডেকে নিয়ে আসে। ডাক্তার রুহিকে দেখে বলে,
আপনি ধৈর্যহারা হবেন না‌ রোহান। আপনার স্ত্রীর ঙ্গান ফিরেছে কিন্তু তাকে কোনোভাবে উত্তেজিত করা যাবে না।

ঠিক আছে ডাক্তার,,

ডাক্তার চলে গেলে রোহান রুহির পাশে আবারো বসে,, রুহি আসতে আসতে চোখ মেলে তাকায়,,,

রোহান খুশি হয়ে রুহিকে জড়িয়ে ধরে,,

রুহি শুধু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রোহানের দিকে,,

রোহান রুহির কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে বলে, আমাকে ভুলে যায় নি আমার রুহি। ওর সব মনে আছে।

রোহান কে অবাক করে দিয়ে রুহি বলে,,
কে আপনি,,

এই কথাতেই যেনো রোহানের হাত পা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তাহলে কি সত্যি আমার রুহি আমাকে ভুলে গেছে। আর কখনো কি আমাকে চিনতে পারবে না।

হসপিটালে তিনদিন থেকে বাড়ি ফেরার সমস্ত ব্যাবস্তা করে রোহান। এই তিনদিন রুহিকে খাইয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে সমস্ত কাজ রোহান করেছে। রুহি শুধু সেদিন এ কথা বলেছিলো,,’কে আপনি” এছাড়া রুহি আর কোনো কথাই বলে নি।

ডাক্তার বলেছে, ওনার কিছুই মনে নেই, তবে পুরনো কিছু দেখলে আসতে আসতে অনেককিছুই মনে পরবে। কিন্তু কখনো জোর করা যাবে না। এতে সৃতিশক্তি ফিরে আসার বদল উনি মানসিক ভারসাম্য হারাতে পারে।

এজন্য রোহান একদম চাপ দেয় নি রুহিকে, রুহি কিছু না বলে চুপ করে আছে রোহানও নিজের মতো সব করে যাচ্ছে। তবে রোহান মাঝে মাঝে রুহিকে হাসানোর জন্য, আজগুবি কিছু যেমন হটাৎ করে পরে যাওয়া, আবার ফোনে হাসির ভিডিও দেখানো এমন অনেক কিছুই করেছিলো কিন্তু রুহি একটুও হাঁসে নি।
রোহান রুহিকে এখনো আগের কোনো ছবি দেখাইনি, যদি রুহি মনে করার চেষ্টা করে তাহলে বিপরীত হতে পারে। কিছুদিন পর যখন রুহি হাসবে বা কাঁদবে তখন আসতে আসতে মনে করানোর চেষ্টা করবে।

একদিন পর, রুহি আর রোহান বাড়ি ফিরে আসে, রোহান এখনো রুহির সৃতি হারানোর কথা বাড়িতে জানায় নি। গাড়ি থেকে নেমে দেখে ওদের বাড়িটা সুন্দর করে সাজানো, বাড়িতে ঢুকতে যাবে এমন সময় সাহেদা বেগম বলে ওখানেই দাড়া রোহান।

মায়ের কথায় রোহান কিছুটা ভয় পেয়ে যায়, মা কি তাহলে রুহিকে মেনে নেবে না,,,

চলবে,,,

খুশি তো সবাই, রুহিকে মা*রি‌ নি। আর আমি মা র তাম না ওকে। তোমরা শুধু শুধু আমাকে ভুল বুঝেছিলে। রোহান রুহির বিয়ের পরের হালাল প্রেম তো মাত্র শুরু। কিন্তু রোহানের মা যে কি বলে সেটাই দেখার,, ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। ❌❌কপি করা নিষেধ ❌❌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here